#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-২০
জিমি বিছানায় উবুড় হয়ে শুয়ে আছে। কিছু ভালো লাগছে না তার মনটা বিষন্নতায় টইটম্বুর হয়ে আছে। সবাই তাকে অভিমান করে দূরে ঠেলে দিলো? একবার তার কথাটা শোনার প্রয়োজন বোধটুকু করলো না? এতোটাই কি খারাপ সে। শরীরও আর কুলাছে না। বড্ড ঘুম পাচ্ছে তার কিন্তু ঘুমাতে ইচ্ছে করছে না। তার কি এভাবে এতগুলো কষ্ট নিয়ে শান্তি করে ঘুমাতে পারবে তার উহুম সে কখনো পারবে না। জিমি উঠে বসলো কয়েক মিনিটে ছক কষে নিলো কি করা উচিত তার। এখনি তার বাসা থেকে চলে যাওয়া উচিত কেউ তাকে একটুও ভালোবাসে না সবাই অভিমান করে দূরে ঠেলে দিলো? বকলেও না হয় মানা যেত কেউ বকেছে না। জিমি রেডি হয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য ড্রাইংরুম ক্রস করতে যাবে তখনি লিলি বেগম গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
-‘ কোথায় যাচ্ছো?’
জিমির অভিমান যেনো আরো গড় হলো হঠাৎ কেনো জানি না কান্না পেলো? কিন্তু সে কাঁদবে না। অভিমান করে বলল
-‘ যেখানেই যায় বলে ইচ্ছুক নই!’
লিলি ভ্রু কুচকে বলল
-‘ হ্যাঁ এখন তো আমাদের কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করো না তুমি বড় হয়ে গেছো তো তুমি আমাদের কে কেনো কিছু বলবে? যায় হোক খাবার টা খেয়ে রেস্ট নিয়ে যেখানে খুশি যাও তোমাকে বাঁধা দিবো না’
-‘ আমি ম-র-লে কার কি যায় আসে উল্টো তোমরা আমার মতো খারাপ মেয়ে ম-র-লে বাঁচো’
লিলি এসে জিমির ঠাস করে চ-ড় মা’র’লো। জিমি চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। মা/র/ছে এবার একটু শান্তি পাইছে। জিমির দাদি এসে বলল
-‘ বউ তুমি ছেমড়িডারে মা’র’লা ক্যান?’
-‘ মা আপনারা আর জিমিকে লাই দিয়েন না। জিমি অনেক বার বারছে মুখে মুখে কথা বলছে আগের বার বাইক রেসে নাম দিলো আমাদের না জানিয়ে কিছু যদি হয়ে যেতো আমি তখনও কিছু বলি নাই আবার এখন ও না-কি সিআইডি এটাও লুকালো আমরা কি ওর কেউ না? কখনো আপন ভাবতে পারেনি ও আমাদেরকে এতোটাই পর আমরা’
জিমি এবার আর কান্না আটকাতে পারলো না ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলল
-‘ আম্মু তোমরা আমাকে ভুল বুঝছো আমার কথাটা এবার শুনো তারপর না হয় জাজ করো’
-‘ তোর কথা কি শুনবো হ্যাঁ? নিশ্চয়ই মিথ্যা বলবি? বলতো আমাদের থেকে আর কি কি লুকাইছিস? কি হলো কথা বলছিস না কেনো?’
-‘ আর কিছু লুকানোর নাই আম্মু’
-‘ তুই যে স্টুডিওতে আরজে ওটা কি মিথ্যা? কখনো তো আমি ওসব শুনি নাই’
-‘ না ওটা মিথ্যা না কিন্তু সত্যি ও না!’
-‘ মানে?’
-‘ আসলে ওটা সবুজের স্টুডিও আমি মাঝেমধ্যে ওখানে….’
জিমি কথাটা শেষ করতে পারলো না লিলি মাথায় হাত দিয়ে বসে বলল
-‘ আর কত মিথ্যা বলবি আমাদেরকে?
জিমি মাথা নিচু করে নিলো হ্যাঁ সে অনেক মিথ্যা বলেছে। কিন্তু মিথ্যা না বলেও যে উপায় ছিলো না। জিমির মা যে সিআইডি তে কখনো সাপোর্ট করতো না। নিজের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে জন্য সে এটা লুকিয়ে রেখে ছিলো। জিমি ভা-ং-ঙ্গা গলায় বলল
-‘ তুমি বললে আমি এখনি চাকরিটা ছেড়ে দিবো আম্মু তবুও রেগে থেকেও না প্লিজ আর কখনো মিথ্যা বলবো না তোমাকে’
লিলি তেতে উঠে বলল
-‘ মিথ্যা বলার আর কি বাকি রেখেছিস? আর এই চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে কি করবি? আবার নতুন কিছু করে আমাদের মিথ্যা বলবি?’
-‘ আম্মু আমাকে ভুল বুঝছো বাবার খু*নি কে খুঁজে বের করার জন্য এতো কিছু যদি তোমাকে আগে এগুলা বলতাম তাহলে তুমি আমাকে কখনো সাপোর্ট করতে না’
জিমির দাদি বলে উঠলো
-‘ বউ ছেমরিডার লগে এমন করতাছো ক্যান? ছেমরিডা কত কষ্ট করে আমাগো জন্য আর তুমি ছেমরিডারে এমনে কানডাইতেছ? আমার ছোট পোলাডা যে একখান অ-মা-নু-ষ হইবো এইডা আগে কেডা জানতো? আগে জানলে জন্মের সময় গলা টি*পে মে*রে ফ্যালাইতাম তবুও আমার এই দিন দেখনলাগতো না’
কথা বলতে বলতে তিনি কেঁদে ফেললো। লিলি বেগম কিছু বলতে পারলেনা এটা সত্যি জিমি তাদের জন্য অনেক বেশিই কষ্ট করে। কলিং বেল বেজে উঠলো। এখন এই সময় কে আসবে? লিমন গিয়ে দরজা খুলে দিলো। মিলি, জাকি আর সামি এসেছে। জিমি তার চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক থাকার প্রয়াস চালালো। মিলি জিমির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুড়তে যাবে তখনি লিলি বাঁধা দিয়ে বলল
-‘ এই ব্যাপারে আর কোনো কথা হবে না। জিমি খেয়ে নে কাল থেকে তো নাওয়া খাওয়া তো নাই যা খেয়ে নে মিলি আমার সাথে রুমে আয়’
মিলি, লিলির সাথে রুমে গেলো। জিমি এখন খেতে ইচ্ছে করছে না। কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদলো অনেকক্ষণ। অস্পষ্ট স্বরে বাবার কাছে পাহার সমান অভিযোগ পেশ করলো। জিমি আগে বুঝতে পারি নাই সবাই এতোটা রিয়াক্ট করবে। এতোটা তাকে কষ্ট পেতে হবে। তার জীবনের কষ্টের অবসান কি ঘটবে না? কবে আসবে সেই দিন? আদেও আসবে কি? জিমির মাথাটা ভার ভার লাগলে প্রচন্ড মাথা ব্যাথাটা বেরেছে। এখন ইচ্ছে না থাকার সত্ত্বেও তাকে ঘুমাতে হবে। জিমি উঠে মাথা ব্যাথা আর একটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে শুয়ে পড়লো।
______________
-‘ জিমিকে কিছু বলার দরকার নাই। যা হবার তো হয়ে গেছে এটা নিয়ে এতো ঘ্যাঁটার দরকার নাই’
-‘ তাই বলে তোমার মেয়ে পার পেয়ে যাবে সবসময়? কিছু বলবা না তুমি তাকে?’
-‘ আমি কি বলবো জিমিকে? ঔটুকু মেয়ে আমাদের জন্য এতো কিছু করছে যাতে আমরা একটু ভালো থাকতে পারি যেনো একটু শান্তিতে থাকতে পারি। আর আমরা ওর ওপরেই জু/লু/ম করবো? এখনকার ওর মতো মেয়েরা চোখে রঙিন চশমা পড়ে ঘোরে বাবা-মার কাছে কত-শত আবদার করে আর জিমি আমাদের জন্য নিজের সবটা উজার করে দিয়েছে!’
মিলি চুপ করে রইলো। লিলির বলা প্রতিটা কথায় সত্যি তাদের জন্য কতই না কষ্ট করে যাচ্ছে মেয়েটা। মিলি কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে এসে ড্রাইংরুম এসে জিমিকে না দেখতে পেয়ে বলল
-‘ জিমি কোথায়?’
জাকি বলল
-‘ রুমে গিয়ে দরজা দিলো তো’
মিলি এক্সট্রা চাবি নিয়ে এসে জিমির রুমের দরজার লক খুলে জিমির রুমে ডুকলো দেখলো। জিমি এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে চোখের কার্ণিশে পানি জমে আছে। মিলি জিমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। কপালে চু-মু খেলো।
-‘ তোকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলি বোন। সরি ফর এভরিথিং।’
চলবে