প্রেমকুঞ্জ পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

1
1582

#প্রেমকুঞ্জ 💓
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
| বিংশ পর্ব | ( প্রথমাংশ )

“সকালে আজ একটা কান্ড ঘটালো তবে। শ্রেয়া পালিয়েছে! কার সাথে পালিয়েছে তাও এর মধ্যেই জানা গেছে। এলাকার সেই মাস্তান, বখাটে ছেলে মামুন! যদিও লোকজনের মুখে শুনলাম মামুন নাকি এখন খু*নের আসামি! তার উপর খু*নের মামলা আছে। কিন্তু শ্রেয়া তার চিঠিতে স্পষ্ট ভাষায় লিখলো মামুন নাকি খু*ন করেনি। তাকে ফাঁসানো হয়েছে।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকাল নীলুফার! শ্রেয়া আজ ভোরে পালিয়েছে। কখন গেলো কারো জানা নেই। বোধহয় বাবা সকালের ফজরের নামাজ পড়তে যখন বের হলেন ঠিক তখন বাবার পর পর’ই বের হয়ে গেছে সে। হাতে শ্রেয়ার চিঠি মুষ্টিবদ্ধ করে নিল নিলু। ছাদে এই একা দাঁড়ানো সে। দুপুর গড়িয়ে গেছে। মা কিছুক্ষণ আগেও চেঁচামেচি করেছিলেন। হাই হুতাশ করে কাঁদছিলেন এখন তিনি বেহুঁশ। চাচি সামলাচ্ছেন তাকে। এতোক্ষণ মা’র পাশেই বসে ছিল নিলুফার। এখন উঠে ছাদে এসে একটু দম নিচ্ছে। নাহলে সেখানে দম ফেলার ফুরসত কোথায়?

“বাবা সবে নামাজ পড়ে ঘরে ঢুকছেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছে না তার মেয়ে আজ ভোরেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। এখনো কতোটা শান্ত তিনি। আমার বেশ মনে হচ্ছে শ্রেয়া পালানোর আগে নির্ঘাত বাবা’র সাথে দেখা করেছে। সত্যি কি তাই হতে পারে।

তিতির প্রায় এলাকা ও এলাকা, বাস স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে রেললাইন অবদি খুঁজে এসেছে। কোন হদিস মিলে নি। এমনকি ইরার বড় ভাই অবদি খোঁজার বন্দোবস্ত করছে। এক্ষেত্রে তিনি খুব সাহায্য করছেন। ঘন্টা খানিক আগে ইরার সাথে এসে গেলেন। এক কাপ চা খেয়ে বললেন, “এই বয়সের মেয়েরা এমন একটু হয়। চিন্তার কিছু নেই। আমি খোঁজ লাগিয়েছে। মনে হচ্ছে ছেলেটাই ফুসলে নিয়ে গেছে। আপনারা চিন্তা করবেন আমি চেষ্টা করছি। আল্লাহ কে ডাকুন, ভয় তো একটাই ছেলের মতলব যেন খারাপ না হয়। এভাবেই তার উপর খু*নের‌ মামলা চলছে। ভয় তো শুধু এখানেই!

এছাড়াও আরো ভালো ভালো কথা বলে গেলেন বাবা কে। তাকে দেখে একজন ভালো মস্তিষ্কের মানুষ বলে ধরে নেওয়া যায়। কথাবার্তা, আচার আচরণ সবখানেই একজন ভালো মানুষ হিসেবে দেখা যায় তাকে। মনে হচ্ছে তিতির আর ইরার জন্য’ই সবটা করার। বোনের যে বাড়িতে বিয়ে হবে সেই বাড়ির মানসম্মান মানে তারও মান সম্মান!

খুব খাটাখাটুনি করছে ফরহাদ সাহেব। এই পর্যন্ত পাঁচ বার বাসায় এসে ফিরতি গেছেন। ভোর থেকেই খুঁজে যাচ্ছেন তিনি। খাওয়া দাওয়া কিছু করেছেন বলে মনে হচ্ছে না। তার গায়ের পাঞ্জাবি টা ভিজে একাকার। বেশ ক্লান্ত লাগছিল তাকে। তিতিরের সাথে মিলে সমান ভাবে খুঁজে গেছে। শুধু কি তাই! তার যত বন্ধুবান্ধব ছিল তারা অবদি এসে বাড়ি অবদি ঘুরে গেল। একে একে সবাই পাগলের মতো খুঁজে যাচ্ছে শ্রেয়া।

নিলুফার দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার তখন’ই বোঝা উচিত ছিল। কয়েকমাস আগে টেবিলের কাছে ফুল গুলো দেখে যখন শ্রেয়া কে জিজ্ঞেস করল তখনই মুখের রং বদলে গেল তার। নিলুফার তখন সবটা আন্দাজ করল কিন্তু দ্বিতীয় বার আর জিজ্ঞেস করল না।

এরপর কয়েক মাস পর তিতির দেখল শ্রেয়া কে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোন ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে। সন্দেহ তখন ঠিক বলেই মনে হলো। যেই ভুলটা এই বয়সে সবাই করে শ্রেয়াও সেটাই করল। প্রেমে পড়ল, কিন্তু পড়ল তো কার এই রাস্তায় বটাখে আর মাস্তান ছেলের উপর। বাড়িতে ফিরেই তিতিরের বকাঝকা আর মায়ের ধমকানি শুনতে হলো শ্রেয়ার। ইচ্ছে মতো সবাই বকল তাকে। চুপ থাকার মধ্যে আমি আর বাবা ছিলাম। ঘরের সবাই একসাথে বকলে তো আর চলে না।

রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ল মেয়েটা। গোটা একটা দিন নিজেকে আটকে রাখলো ঘরের মাঝে। তিতিরের রাগ শ্রেয়ার উপর থেকে কমলো মামুন কে ছেড়ে দিল না। ভালো মতোই বলল, যেন শ্রেয়ার সাথে আর কোন কথাবার্তা না বলে। মা’র বিলাপ তো দিনরাত’ই চলতে থাকল। শেষমেষ আমি গিয়ে খাবারের থালা হাতে নিয়ে দরজা ধাক্কালাম। দুটোদিন খায় নি মেয়েটা। এখনো কি না খেয়ে থাকবে নাকি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। হাল ছেড়ে বসার টেবিলে খাবার রেখে ঘরে গেলাম। খানিকক্ষণ বাদে এসে দেখি শ্রেয়ার ঘরের দরজা খোলা। আড়াল থেকে দেখলাম বাবা খাইয়ে দিচ্ছে শ্রেয়া কে। বাবা আর মেয়ের মাঝে আর ঢুকলাম না।

অতঃপর একসময় সব কিছু মোটামুটি ঠিক হলো। ফরহাদ সাহেব ও হুট করে একটা চাকরি জোগাড় করে নিলেন। হয়তো আমার খোঁচা আর ভালো লাগছিল না তার। কিন্তু ভুল এইখানেই হলো। আমরা হয়তো ভেবেছিলাম সব শেষ কিন্তু আসলে কিছুই শেষ হলো না!

——-

শ্রেয়া আর মামুনের দেখা সাক্ষাৎ তবুও চলতো চিঠির মাধ্যমে। শ্রেয়া কে রোজ কলেজে দিয়ে আসতো মা আর নিয়েও আসতো মা। তবুও এর মাঝে তাদের চিঠির আদান প্রদান ঠিক’ই হতো। রাস্তায় আর কখনো কথা বলতে দেখা যায় নি তাদের। মামুন ইন্টার অবদি পড়াশোনা করেছে। এরপর ছেড়ে দিয়েছে, ছেড়ে দিয়েছে বলতে এর আগেও পড়াশোনা করতে চাইতো না। কোনোমতে মা বাবার ঠেলাঠেলিতে পাশ করলো। খুব ভালো নাম্বার পেয়েই পাশ করলো বটে। বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলেকে এরপর বাইরে পাঠাবে পড়াশোনার জন্য কিছু খারাপ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে সবটাই গোল্লায় গেলো। কাজের কাজ কিছুই হলো না। বলতে গেলে মামুনের আর্থিক অবস্থা দারুন ভালো ছিল। পরিবারের সে ছিল তৃতীয় সন্তান। বড় দু বোনের পরেই সে। কিন্তু তবুও মানুষের মতো মানুষ কেউই করতে পারল না।

এলাকার মাস্তান নামেই মামুনের ডাক দিল বেশ। কিন্তু এই এলাকার মাঝেই তারেক ভাইয়ের সাথে তার দ্বন্দ্ব বেশ পুরনো। আগে সবকিছুই তারেক ভাইয়ের হাতে ছিল। কিন্তু মামুন আসার পর সব যেন হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছিল। যদিও তারেক ভাই প্রস্তাব পাঠিয়েছিল মামুনের কাছে, মিলেমিশে কাজ করার। মানে হাত মেলানোর ব্যাপার আর কি। কিন্তু মামুন তাঁতে রাজি হয় নি। কারণ তারেক ভাইয়ের কাজ খুব ভয়াবহ। নোংরা সকল ধরনের কাজ টাকার বিনিময়ে করতে রাজি সে।

ঝামেলা তো ছিল পুরনো দিনের। এর মাঝেই আরো একজন এসে জুটল এক চোখ কানা নান্দু’র সাথে ঝামেলা লেগে গেলো মামুনের। এক চোখ কানার কারণ ছিল একবার কোন এক ঝামেলায় পড়ে তার একটা চোখ ঝলসে দেওয়া হয়েছিল। এরপর থেকেই লোকটার নাম হলো এক চোখ কানা নান্দু! কিন্তু মামুন আর এক চোখ কানা নান্দু’র এই ঝামেলার সুযোগটা তখন হাতছাড়া করলো না তারেক ভাই। উঠে পড়ে লাগলো মামুন কে রাস্তা থেকে সরানোর জন্য। সেদিন রাতে তারেক ভাই নিজেই এলো কার্য হাসিল করতে। মামুন কে মাঝরাতে ফোন করে ডেকে নিয়ে চোখ কানা নান্দু কে ছুরি দিয়ে আঘাত করে খু*ন করল তারেক ভাই! আর সেই সময়ে মামুন সেখানে গিয়েই ফেঁসে গেল। নান্দু কে মরে পড়ে থাকতে দেখে পালাতে গিয়ে লোকেরা দেখে ফেলল মামুন কে। মুহূর্তেই ছড়িয়ে গেল ঘটনা। শ্রেয়ার পরিবারের কানেও কথাটা যেতে দেরি হলো না। সবাই তো কথা বলাবলি করতে লাগলো কিন্তু শ্রেয়ার মন মানলো না।

সেই এক সন্ধ্যে রাস্তা দিয়ে যাবার পথে হঠাৎ করেই দেখা হলো মামুনের সাথে। আড়াল থেকে মামুন ডাকল শ্রেয়া কে। প্রথমে মামুন কে চিনতে পারল না শ্রেয়া। মুখের ধরণ যেন বদলে গেছে তার। মামুন আজ ১৫ দিন হলো গা ঢাকা দিল। পুলিশ খুঁজছে তাকে। শ্রেয়া অবাক চোখে তাকিয়ে রইল মামুনের দিকে। বলে উঠল,

“আপনি এখানে?

#চলবে….

#প্রেমকুঞ্জ 💓
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
| বিংশ পর্ব | ( শেষাংশ )

“আপনি এখানে?

মামুন চোখের পাতা ফেলে ফেলে তাকিয়ে রইল শ্রেয়ার দিকে। শ্রেয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মামুনের দিকে। আশপাশ মানুষের আনাগোনা থাকায় মামুন বলে উঠে, “একটু ওদিক এসে কথা বলবে!

মামুনের কথায় সায় দিল শ্রেয়া। একটু আড়াল হয়েই দাঁড়াল তারা। একটা বাড়ির সামনে ঝোলানো লাইটের আলোয় দুজন দুজনকে দেখছে। শ্রেয়া আবারো বলে উঠল,

“আপনি এখনো এখানে কি করছেন, পুলিশ খুঁজছে আপনাকে। আপনার উচিত এই এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া।

“তোমার সাথে দেখা হবার আশায় ছিলাম।

“পাগল নাকি আপনি!

মামুন হাসল। শ্রেয়ার হাত পা কাঁপছে এর মধ্যেই কিন্তু মামুনকে কি শান্ত লাগছে। কিছু যে হয়েছে এটা বোঝাই মুশকিল। শ্রেয়া বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কেউ না দেখে ফেলে ওদের। মামুন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“শ্রেয়া! খু*ন টা আমি করি নি। আর যা কিছুই করি না কেন, কখনো কাউকে খু*ন করার কথা ভাবতে পারি না।

“আমি জানি, কিন্তু পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কেন?

“আমাকে ফাঁসানো হয়েছে শ্রেয়া, আর যারা ফাঁসিয়েছে তাদের হাত অনেকদূর অবদি আছে। পুলিশ আমাকে ধরে ফেললে কেউ ছাড়াতে পারবে না।

“কতোদিন থাকবেন এভাবে।

“জানি না।

“তাহলে এখনো এখানে কি করছেন!

“বললাম না তোমার সাথে দেখা হবার আশায় ছিলাম, আগামীকাল চলে যাবো আমি।

“কোথায় ?

“আমার দাদু বাড়ি, এখান থেকে অনেক দূরে।

“আবার আসবেন কবে?

“জানি না! যদি আসি তাহলে আবার তোমার সাথে দেখা হবে। কি হবে তো!

“আপনি কি সত্যি আর এখানে আসবেন না!

“এভাবেই ১৫ দিন ধরে গা ঢাকা দিয়ে আছি। এখানকার পরিস্থিতি এইভাবেই ভালো না। যদি কখনো ভালো হয় তাহলে আসবো!

শ্রেয়ার দম মুহূর্তে’ই বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম! তবে কি মামুন সত্যি সত্যি একেবারের জন্য ছেড়ে চলে যাবে তাকে। শব্দ করে শ্বাস ফেলে দু পা এগিয়ে এসে শ্রেয়ার হাত ধরল মামুন। খুব শক্ত করে তার হাত ধরে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। শ্রেয়ার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। সেই অশ্রুফোটা এসে পড়ল মামুনের হাতে। শ্রেয়া কাঁদছে এটা বুঝতে পারল সে। তাই হাত ছেড়ে দিল তৎক্ষণাৎ। শ্রেয়ার দিকে না তাকিয়েই হেসে বলল,

“আচ্ছা আমি যাই তাহলে এখন। সাবধানে থেকো!

অতঃপর পা বাড়াল মামুন। কয়েক পা আগানোর পর’ই কম্পিত গলায় শ্রেয়া বলে উঠল,

“আপনার সাথে নিয়ে যাবেন আমায়!

মামুন অদ্ভুত দৃষ্টিতে শ্রেয়ার দিকে ফিরল। তার অশ্রু মাখা মুখটা এতোক্ষণে দেখল মামুন। এই আঁধারের মাঝে শ্রেয়ার এই মুখখানি দেখে মামুনের কাছে মনে হলো, “শ্রেয়া হচ্ছে এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী, যাকে কাঁদলেও অসাধারণ লাগে। এই অশ্রু মাখা মুখটা দেখার জন্য ইচ্ছে করে হলেও তাকে কাঁদাতে দুবার ভাববে না সে!

মামুন কিঞ্চিত হেসে বলল, “ভেবে বলছো!

“আমি সত্যি যাবো আপনার সাথে।

“রাস্তা কিন্তু জটিল! সহজ হবে বলে ভেবো না।

শ্রেয়া ছুটে এলো মামুনের কাছে। হুট করেই জড়িয়ে ধরল মামুন কে। মামুন আগাল না। শ্রেয়া কে ছাড়িয়ে দিয়ে বলল, “ভোর বেলা বড় রাস্তার মোড়ে থাকবো আমি। সারারাত আছে ভাবার জন্য। ভেবে তারপর’ই এসো। না আসলে তেমন কোন বড় ক্ষতি হবে না।

অতঃপর মৃদু এসে চলে গেল সে। শ্রেয়া তার দিকেই তাকিয়ে রইল। মামুন যেন আঁধারের মাঝে হারিয়ে গেল!

——-

সারারাত দু চোখের পাতা এক করল না শ্রেয়া। জেগেই রইল! মাঝরাতেই ব্যাগ ট্যাগ গুছিয়ে রাখল সব। শেষ রাতে চোখ দুটো লেগে এলো তার। অতঃপর ফজরের আজানের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল শ্রেয়ার। ব্যাগ হাতে নিয়ে তৈরি হলো সে। বাইরে থেকে টুকিটাকি আওয়াজ পাচ্ছে। নিশ্চয়ই বাবা উঠেছেন। নামাজ পড়তে বের হবে নিশ্চয়ই। তখনই বাবা’র সাথে বেড়িয়ে পড়বে সে। এই আশায় রইল শ্রেয়া।

অতঃপর বাবা যখন নামাজের জন্য ঘর থেকে বের হলেন, তার পিছু পিছুই বের হয়ে গেল শ্রেয়া। কিন্তু খুব কঠিন মুহুর্তে তখন পড়ল যখন বাবা’র সামনে পড়ে গেল সে। থতবত খেয়ে তাকিয়ে রইল শুধু। বাবা ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করলেন,

“কোথায় যাচ্ছিস মা!

“বা…বাবা!

“এতো ভোরে ব্যাগ নিয়ে কোথায় বের হলি তুই?

শ্রেয়ার মুখ থেকে কথা বেরুচ্ছে না। কাঁপছে সে। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদতে শুরু করল। বাবা এগিয়ে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

“কোথায় যাচ্ছিস মা! কাঁদছিস কেন এভাবে?

“ব… বাবা আমি মা…মামুনের কাছে যাচ্ছি!

“মামুন, যাকে পুলিশ খুঁজছে?

“বাবা ও খু*ন করে নি! ওকে ফাঁসানো হয়েছে, তারেক ভাই নামে যে মাস্তান আছে ও ফাসিয়েছে ওকে।

বাবা অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন মেয়ের দিকে। তার মেয়ে এই ভোরে রাস্তায় ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। বাবা হেঁসে বললেন, “আমাদের ছেড়ে চলে যাবি তুই, তোর দুঃখ হবে না।

“বাবা এভাবে কেন বলছো তুমি! আমি তো আবার চলে আসবো।

“চলে আসবি তাহলে চলে যাচ্ছিস কেন? বাড়ি ফিরে যা মা।

“বাবা আমি…

“নামাজে দেরি হয়ে যাচ্ছে, তুই বাড়ি যা।

“বাবা এভাবে বলো না, ও আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে বড় রাস্তার মোড়ে। আমায় যেতে হবে।

“তুই সত্যি চলে যাবি।

“বাবা!

বাবা আর কিছু বললেন না। মাথায় টুপি টা ঠিক করে হাঁটা ধরলেন মসজিদের উদ্দেশ্য। শ্রেয়া ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে। শরীর কাঁপছে তার। কি করবে, বাড়ি ফিরে যাবে, মাঝরাস্তায় এসে শেষে কি না ফেরত চলে যাবে সে!

বড় রাস্তার মোড়ে গায়ে একটা মোটা চাদর বিছিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মামুন। অপেক্ষা শ্রেয়ার। কেন জানি মনে হচ্ছে আজ শ্রেয়া আসবে না। আসবে না জেনেও এভাবে অপেক্ষা করা কি ঠিক। নামাজে যাওয়ার জন্য মানুষ বেড়িয়েছে। মানুষের আনাগোনা এখন কম বলেই এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছে সে। কিন্তু এরকম শান্ত পরিবেশ তো আর থাকবে না। চায়ের দোকান গুলো খুলে পড়বে খানিকক্ষণের মধ্যে। না আর দাঁড়ানো ঠিক হবে না। পা বাড়িয়ে যেতে নিতেই পেছন থেকে কারো দৌড়ে আসার শব্দ ভেসে এলো তার কানে। শ্রেয়া আসছে! ব্যাগ হাতে দৌড়ে আসছে সে। আজ তার পড়নে সবুজ রঙের একটা শাড়ি। বেশ মিষ্টি লাগছে তাকে!

——-

নিলুফার এখনো ছাদে দাঁড়িয়ে। সন্ধ্যা নেমে যাচ্ছে, খানিকক্ষণ পরেই রাত নেমে যাবে। সবাই বলাবলি করবে, মেয়ে পালিয়েছে ১ দিন পেরিয়ে গেলো কিন্তু মেয়ের খোঁজ পাওয়া যায় নি!
দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। মানুষের কাজ তো বলাবলি করা। এছাড়া আর কি পারবে তারা। কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে শ্রেয়া বেশ সাহসী কাজ করেছে। ইশ! এতো দিন এই সাহসী মেয়েটা কে ‌ভিতু মনে হতো তার। আর যাই হোক নিজের ভালোবাসার জন্য ঘর ছাড়লো সে। কিন্তু নিলুফার নিজে, নিজে কি করলো! সে তো পারলো না তার ভালোবাসার মানুষটির জন্য ঘর ছাড়তে, শ্রেয়া পেড়েছে। সত্যি বেশ সাহস আছে মেয়েটার! হয়তো শ্রেয়া পালিয়ে যাওয়াতে নিলুফার’ই খুশি হলো আর কেউ না!

#চলবে….

[ রি চেক করা হয়নি, ভুল গুলো ক্ষমার চোখে দেখার অনুরোধ রইল! ]

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে