প্রেমকুঞ্জ পর্ব-১৩+১৪

0
828

#প্রেমকুঞ্জ 💓
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
| ত্রয়োদশ পর্ব |

শ্রেয়া চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতর থেকে মামুন বেরুতেই ছুটে হাটা ধরল সে। তার কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ে পড়ছে। দ্রুত গতিতে হাঁটছে সে। পিছন ফিরে চাইছে না একবারের জন্য। হাতের বাংলা বই টাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে মাথা নিচু করে হন হন করে হাঁটছে। হঠাৎ করেই পেছন থেকে কারো দৌড়ে আসার শব্দ পাচ্ছে। তার বুকের ধরপড়ানি বেড়ে গেছে। পায়ের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে সে। হঠাৎ করেই তার সামনে এসে মামুন দাঁড়াল। পায়ের গতি মুহূর্তেই থেমে গেল।‌ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল শ্রেয়া! মামুন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। শুকনো ঢোক গিলল শ্রেয়া। হাত পা কাঁপছে তার। হাঁটতে গিয়েই হুট করেই নিচে পড়ে গেল সে। মামুন ছুটে এগিয়ে এলো। শ্রেয়া চোখ তুলে তাকাল মামুনের দিকে। এই প্রথমবার চোখাচোখি হলো তাদের মাঝে। শ্রেয়ার মনে হচ্ছে এখন বোধহয় সে মা’রা যাবে! মামুন হাত বাড়িয়ে দিল তার কাছে। সেই হাত উপেক্ষা করে নিজেই উঠে দাঁড়াল। হাত খানিকটা ছিলে গেছে। র”ক্তও বের হচ্ছে। পায়ের অংশেও বোধহয় ব্যাথা পেয়েছে। অনুভব করতে পারছে সেটা!

শ্রেয়া দ্রুত গতিতে মামুনের পাশ দিয়ে চলে যেতে নিল। তখনই ডেকে উঠল মামুন। সাথে সাথেই দাঁড়িয়ে গেল শ্রেয়া। পেছন ফিরে দেখল মামুনের একহাতে তার বাংলা বই আর অন্য হাতে শুকিয়ে যাওয়া সেই ফুল! ফুলের কয়েকটা পাপড়ি পড়ে আছে রাস্তায়। মামুন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে শুকিয়ে যাওয়া ফুলটার দিকে। ফুলটা কি তার’ই দেওয়া!

শ্রেয়া ছুটে এসে বই টা কেড়ে নিল। হাতের ছোঁয়া পেল মামুন। ফুল কেড়ে নেবার সাধ্য হলো না। বই নিয়েই ছুটতে লাগলো সে। মামুন সেখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে তার!

—–

কয়েকদিন ধরেই নিলুফারের দেখা পায় নি ফরহাদ। শ্রেয়াকে পড়ানোর সময় যখন তাদের বাড়িতে যেত তখনো দেখত নিলুফারের দরজা বন্ধ। ভার্সিটিতে তো দূর ঘর থেকেই বের হয় নি সে। শ্রেয়া’র কাছে জিজ্ঞেস করেছিল। সে বলল,

“আপা’র শরীর ভাল না। তাই ঘরে একলা থাকে

ফরহাদ” “ওহ” বলেই চুপ হয়ে যেত। জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করতো, কি হয়েছে? শরীর কি খুব খারাপ! ডাক্তার দেখিয়েছ? অসুস্থ হলে ঘরে একা কি করে। বাইরে বের না হলে সুস্থ হবে কিভাবে? জিজ্ঞেস করার মতো এতো কিছু তাকতেও কিছু বলল না। চুপ হয়ে গেল!

রোজ’ই দরজার প্রতি নজর রাখে, দরজার প্রতি নজর দেবার জন্য’ই শ্রেয়ার ঘর থেকে বসার এসে পড়ায়। এতো কিছু যার জন্য তাকে দেখার সৌভাগ্য হচ্ছে না তার, এর চেয়ে কষ্টের কি বা হতে পারে!

ফরহাদ আজ বেশ আশা নিয়েই দরজায় কড়া নাড়ল। আজ বোধহয় দেখবে নিলুফারের ঘরের দরজা খোলা। নিলুর মুখটা দেখার সৌভাগ্য আজ বোধহয় হবে তার।

প্রতিবার’ই উষা এসে দরজা খুলে দেয়। ফরহাদ পা বাড়িয়ে এসে বসার ঘরে সোফায় বসে। প্রথম নজর থাকে নিলুফারের ঘরের দিকে। নিলুর মা এসে একবার দেখা করে যান। এর মাঝেই শ্রেয়া বই খাতা নিয়ে হাজির। নিলুর মা শ্রেয়ার ব্যাপারে আচ্ছা করে কতো গুলো বকা দিয়ে যান। ঊষা যতক্ষণ না অবদি চা নাস্তা নিয়ে আসে ততোক্ষণ বসে থাকে উনি। ঊষা গরম চা আর এক প্লেট বিস্কিট নিয়ে আসে। কিন্তু ফরহাদ শুধু চা খায়। এক কাপের বদলে দু কাপ! বিস্কিট ছুঁয়েও দেখে না সে!

বরাবরই এটা হয়ে আসছে। কিন্তু আছ সবকিছুরই ব্যতিক্রম করে দিয়ে দরজা খুলল নিলুফার! ফরহাদ কে দেখে একগাল হাসল সে। সেই হাসি দেখে ফরহাদ’র অস্থির মন শান্ত হয়ে গেল। চারদিকে’র পরিস্থিতি যেন মুহূর্তে’ই তার জন্য বদলে যায়! নিলুফারের মিষ্টি গলার স্বর আশ্রয় নেয় তার কানে!

“ফরহাদ সাহেব! আসুন ভিতরে আসুন!

ফরহাদ ঢোক গিলে বাড়ির ভেতর পা দেয়। কেন জানি মনে হচ্ছে আজ তার মন কথা শুনেছে। তবে কি অন্য কিছুই আবদার করা উচিত ছিল মনের কাছে। এই যে, আবরারের সাথে নিলুফারের বিয়েটা না হয়ে তার সাথেই হোক! কিন্তু এটা কি স্বার্থপরতা হতো না। শুধু তো সেই সুখে থাকতো নিলুফার তো না! কিন্তু নিজের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য এতো টুকু স্বার্থপরতার কি সত্যি বড় অন্যায় হয়ে দাঁড়াত। বোধহয় হতো আবার নাও হতো। কথায় বলে প্রেমে আর যুদ্ধে সব জায়েজ কিন্তু এটা শুধু মুখেই মানায়।

নিলুফার শ্রেয়ার ঘরের দিকে তাকিয়ে একবার তাকে ডেকে রান্না ঘরে ঢুকে গেল। ফরহাদ চোখ তুলে তাকাল নিলুফারের ঘরের দিকে। খোলা দরজা দেখে আজ তার মন বড় খুশি! শ্রেয়া দ্রুত’ই চলে এলো বই খাতা নিয়ে। ব্যতিক্রম আরেকটা ঘটল। নিলুর মা আজ বাড়িতে নেই। থাকলে এতোক্ষণে চলে আসতো। এছাড়া ঊষাকেও দেখা যাচ্ছে না। ফরহাদ জিজ্ঞেস করেই ফেলল,

“আন্টি কে দেখছি না যে!

“মা! মা তো আজ ঊষা কে নিয়ে চাচিদের বাড়িতে গেছে।

“ওহ আচ্ছা! কিন্তু তোমার গলার স্বর শুনে এমন লাগছে কেন? কিছু হয়েছে?

শ্রেয়া কিছু বলল না। নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বসল। তার শরীর পুড়ো কাঁপছে। ফরহাদের কথা শুনে রান্না ঘর থেকে নিলুফার বেরিয়ে এলো। শ্রেয়া কে দেখে তার গায়ে হাত রাখতেই চমকে উঠল সে। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।

ফরহাদের আর পড়ানো হলো না। নিলুফার শ্রেয়া কে ঘরে নিয়ে গেল। একটা প্যারাসিটামল খাইয়ে শুইয়ে থাকতে বলল। দুটো মোটা মোটা কাঁথা দিল তার গায়ে। একটা ছোট কাপড় ধুইয়ে এনে তার কপালে দিয়ে গেল। সন্ধ্যার মধ্যে জ্বর না নামলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে। এদিকে বিছানায় শুতেই শ্রেয়া ঘুম!

নিলুফার শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বের হলো শ্রেয়ার ঘর থেকে। ফরহাদ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মনে হলো ঘরের কোন বউ কাজ করছে, পুরো সংসারটাকে একা সামলাচ্ছে সে। নিলুফার এসে বসল ফরহাদের সামনে।

“এখন কেমন আছে শ্রেয়া!

“ঠিকঠাক! চিন্তা করবেন না। এরকম ওর প্রায়’ই হয়, যখন খুব বেশি ভয় পায় তখন’ই এমনটা হয়।

“ওহ আচ্ছা। আমি আজ তাহলে উঠি!

“এই না উঠবেন কি? মা আমাকে বার বার বলে দিয়ে গেছে আপনি আসলে যেন চা করে খাওয়াই। আমি চুলোয় চা বসিয়ে রেখেছি। এখন আপনি চলে এলে এই চায়ের জলাঞ্জলি কোথায় দেবো শুনি!

ফরহাদ কিছু না বলে গুটিসুটি মেরে বসে রইল। নিলুফার উঠে দাঁড়িয়ে বলল, বসুন আমি চা নিয়ে আসছি!

নিলুফার যেতেই হুট করেই হাসি ফুটল ফরহাদের ঠোঁটের কোনে! কেন জানি বেশ খুশি লাগছে তার। নিলুফারের গলার স্বর আজ অনেক দিন পর’ই শুনতে পেল সে। খানিকক্ষণ বাদে দুটো চায়ের কাপ হাতে নিয়ে হাজির হলো নিলুফার। ফরহাদের কাছে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল,

“আপনি নাকি শুধু চা’ই পছন্দ করেন তাই শুধু চা’ই আনলাম। এক কাপ শেষ করুন আরেক কাপ আনবো!

ফরহাদ সহজ স্বাভাবিক ভাবে চায়ের কাপ তুলে নিল। আড়চোখে তাকাল নিলুফারের দিকে। নিলুফার চায়ের কাপে মুখ দিচ্ছে। আজ হঠাৎ রবিঠাকুরের একটা কথা মনে পড়ছে। ইচ্ছে করছে রবিঠাকুরের বলা কথা গুলোর মতোই জিজ্ঞেস করতে,
“বলো তো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দূরত্ব কোনটি জানো?

নিলুফার তখন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকতো। অতঃপর হয়তো জবাব দিতো, জীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত!

ফরহাদ তখন হাসতো।‌ হেসে বলতো, না হয়নি! এটা সঠিক উওর না। সবচেয়ে বড় দূরত্ব হলো যখন আমি তোমার সামনে থাকি, কিন্তু তুমি জানো না যে আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।”

নিলুফার তখন অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতো তার দিকে। না অবাক চোখে তাকাত না। কারণ নিলুফার অবাক হতে শিখে নি। সে খিলখিলিয়ে হাসতো।‌ সেই হাসির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো ফরহাদ! এই হাসিটার জন্য’ই বোধহয় রবীন্দ্রনাথ এই কথা গুলো লিখেছিল!

নিলুফার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ফরহাদের দিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে বলে, ফরহাদ সাহেব কি ভাবছেন!

“কিছু না।

“না আপনি নির্ঘাত কিছু ভাবছিলেন। কি ভাবছেন বলুন তো! কিভাবে আমাকে নিজের প্রেমে জালে ফেলা যায় সেই কথা।

ফরহাদ হাসল। নিলুফারও হেসে উঠলো তার সাথে। ফরহাদ এক কাপ চা শেষ করে রাখতেই নিলুফার আরো দু কাপ চা নিয়ে এলো। এবার সাথে করে আনল বিস্কিট! ফরহাদের হাতে চায়ের কাপ দিয়ে বলল, এখানে আরো কিছুক্ষণ থাকার অজুহাত নিয়ে এলাম আপনার জন্য। চায়ের সাথে এবার বিস্কিট! চা শেষ হয়ে গেলে বিস্কিট খাবার অজুহাতে আরো কিছুক্ষণ থেকে যাবেন। কি থাকবেন না!

ফরহাদ অবাক হলো কিন্তু মুহূর্তেই মুচকি হাসল। নিলুফারের কথায় এখন অবাক হওয়া ছেড়ে দিয়েছে সে। নিলুফার নিজে হাসল। অতঃপর বলে উঠল,

“রাগ করবেন না ফরহাদ সাহেব। কথাটা আমি কিন্তু মজা করেই বলেছি।

ফরহাদ নিশ্চুপে চায়ের কাপে চুমুক দিল। নিলুফার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল, তা আপনার কৌতুহল হচ্ছে না।

“কোন বিষয়ে?

“এই যে আমি এতো দিন ঘর থেকে বার হয় নি, আমাকে এতো দিন দেখলেন না তাই!

“ফরহাদ আবারো চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল, শ্রেয়া বলল আপনি নাকি অসুস্থ!

নিলুফার আর চায়ের কাপে চুমুক দিল না। অর্ধেক খাওয়া চা রেখে দিল সে। অতঃপর গম্ভীর স্বরে বলল,
“মিথ্যে! আমি অসুস্থ নই!

“তাহলে..

“ভূতে ধরেছে আমায়, তাই ঘর থেকে বের হয় নি। যদি বের হতাম তাহলে সেই ভূত অন্য কে মেরে ফেলতো।

ফরহাদ সহজ স্বাভাবিক গলায় বলল, ওহ!

নিলুফার গম্ভীর হয়ে বলল, আপনি বিশ্বাস করেন নি!

ফরহাদ মৃদু হেসে তাকাল নিলুফারের দিকে। ঢোক গিলে বলল, না করি নি।

“এখন করেন নি কিন্তু যখন সত্যি সত্যি কিছু করবো তখন ঠিক’ই করবেন। আচ্ছা আপনার চা খাওয়া শেষ হয়েছে।

“হয়েছে, উঠে যাচ্ছি আমি।

“আপনাকে উঠতে বলেছি আমি।

“না!

“তাহলে উঠছেন যে…

“কারণ আমার সময় শেষ, এখন একটু বেরুতে হবে। সন্ধায় এসে একবার শ্রেয়া কে দেখে যাবো তার জ্বর কমেছে নাকি।

“মিথ্যে বলছেন, আমাকে দেখার অজুহাতে আসবেন।

ফরহাদ হাসল। হেসে উঠে গেল। নিলুফার সেখানেই বসে থাকল। ফরহাদ কে কেমন অসহ্য লাগছে তার কাছে। কোন কারণ ছাড়াই অসহ্য!

সন্ধ্যার সময় ঠিক’ই এলো ফরহাদ! নিলুফার তখন শ্রেয়ার ঘরের দরজার আড়ালে ছিল। মা ছিল ফরহাদের সাথে শ্রেয়ার ঘরে। শ্রেয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছিল। জ্বর কমেছে তার অনেকটা। এখন ঘুমোচ্ছে। ফরহাদ শুনে খুশি হলো। কিছু ফল আনলো শ্রেয়ার জন্য। ফল কেন আনলো। কিসের আত্মীয়তা দেখাতে এসেছে এখানে। নিলুফারের নিদারুণ রাগ হলো। মা ফরহাদ কে বসতে বলল। কিন্তু ফরহাদ বসল না। চলে গেল! নিলুফার তৎক্ষণাৎ দরজার আড়াল ছেড়ে নিজের ঘরে চলে এলো!

—–

তখন রাতের ৮ টা হয়তো বাজে। নিলুফার আজ ছাদে উঠেছে। ফরহাদ নিলুফার কে দেখেই হাতের সিগারেট ফেলে দিল। তার ধারণা নিলুফার এখানে আসবে না। আবারো ফেরত যাবে। কিন্তু না, নিলুফার এলো। ছাদের গ্রিলে হাত রেখে দাঁড়াল। ফরহাদ খানিকটা অস্বস্তি বোধ করল। নিলুফার কিঞ্চিত হেসে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,

“আজকের চাঁদ টা খুব সুন্দর না!

ফরহাদ চাঁদের দিকে তাকাল। মুচকি হেসে বলল, হুম!

“কেন সুন্দর জানেন?

ফরহাদ অবাক হয়ে তাকাল। নিলুফার হেসে বলল,
“কারণ আজ আমার দুঃখের দিন! আমার যেদিন আমার দুঃখ থাকে সেদিন প্রকৃতি নতুনত্বে সেজে উঠে। কেন বলতে পারেন?

ফরহাদ নিলুফারের কথার অর্থ বুঝল না। শুধু অবাক হলো। এই মেয়েটা বার বার কথার ছলে অবাক করে ফরহাদ কে। দীর্ঘশ্বাস ফেলল নিলুফার! ফরহাদের কেন জানি মনে হচ্ছে নিলুফার আজ বেশ কষ্টে আছে! কোন কথা ছাড়াই দুজন চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল খানিকক্ষণ! ফরহাদ কিছুক্ষণ পর পরই আড়চোখে তাকাতে থাকে নিলুফারের দিকে। তার খোলা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে! কিন্তু নিলুফার চোখ বন্ধ করে বাতাসকে অনুভব করতে থাকে। শরৎ কাল চলছে, এখনকার বাতাসের অনুভূতিটাই অন্যরকম হয়! হঠাৎ করেই চোখ মেলে তাকাল নিলুফার। ফরহাদ সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিল। নিলুফার বলে উঠল,

“রাগ করবেন না ফরহাদ সাহেব! মনটা খারাপ ছিল বলেই এখানে একটু আসলাম। আপনার অসুবিধা করলাম বোধহয়! যাচ্ছি আমি!

ফরহাদের মুখ থেকে চট করে বের হয়ে গেল,
“কোথায় যাচ্ছেন?

নিলুফার ফরহাদের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
“বাইরে যাচ্ছি একটু!

বলেই নিলুফার চলে এলো। ঘরে এসে একটিবার দেখল নিজেকে আয়নাতে। অতঃপর কাঁধে ঝোলানো ব্যাগটাকে নিয়ে বের হয়ে পড়ল সে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে কলম দিয়ে চুল গুলো খোঁপা করল নিলুফার! বাইরে এসে ফরহাদ কে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে থমকে গেল নিলুফার! ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,

“আপনি এখানে?

“একা বার হবেন আপনি। শ্রেয়া কে সাথে নিবেন না। রাত অনেক গভীর!

“শ্রেয়ার জ্বর ঘুমোচ্ছে! তিতির এখনো আসে নি তাই আমাকে একাই যেতে হবে!

বলেই যেতে নিল নিলুফার। ফরহাদ কিছু বলার প্রয়াস করতেই নিলুফার নিজেই পিছু ফিরল। বলে উঠল,

“ফরহাদ সাহেব আপনার বাইক টা আছে।

ফরহাদ অবাক চোখে তাকিয়ে রইল নিলুফারের দিকে।

——

ফরহাদ বাইক চালিয়ে যাচ্ছে নিজ গতিতে। তার কাঁধে হাত রেখে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে নিলুফার! কতোক্ষণ পর পরই রাস্তার দিক নির্দেশনা দিচ্ছে। দেখতে দেখতে গন্তব্যে পৌঁছে এলো। ফরহাদ বাইক থেকে নেমে তাকিয়ে রইল বাড়ির দিকে। পুরো বাড়ি আজ সাজানো, মনে হচ্ছে কোন অনুষ্ঠান আছে এই বাড়িতে! নিলুফার নামল বাইক থেকে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বাড়িটার দিকে। নিলুফার নিজ থেকেই বলে উঠল,

“বিয়ে বাড়ি এটা! আবরারের বিয়ে। জানেন তো আবরার কে?

বলেই ফরহাদের দিকে তাকাল নিলুফার। মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলল ফরহাদ। ঠিক কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না সে। নিলুফার হঠাৎ করেই হেসে উঠল।‌ নিলুফারের হাসির শব্দ শুনে ফরহাদের বুক কেঁপে উঠলো। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে তার। এই মেয়ের হাসি মানেই অন্য কিছু। তবে কি এই দুঃখের কথাই বলছিল নিলুফার!

বাড়ির দিকে আঙুল তুলে নিলুফার বলে উঠল,
“ফরহাদ সাহেব! দেখলেন তো পুরো বাড়ি আজ কি সুন্দর করে সাজানো! বিয়ে বাড়ি বলে কথা।

ফরহাদ অস্বস্তির মাঝে পড়ে গেল। নিলুফার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আজ ওর বাসর, কিন্তু অন্য কারো সাথে।

স্থির চোখে তাকিয়ে রইল ফরহাদ। নিলুফার হেসে বলল, কি হবে বলো তো এখন যদি ওর বাড়ির ভেতরে চলে যাই। ফরহাদ অবাক কন্ঠে বলে উঠল,

“সর্বনেশে কান্ড হবে!

“সাড়ে সর্বনাশ তো তখন হবে যখন ওখানে গিয়ে বিষ খাবো। কেমন হবে বলুনতো।

দম বন্ধ হয়ে গেল ফরহাদদের। নিলুফার ভাসা ভাসা চোখে তাকিয়ে রইল ফরহাদের দিকে। হুট করেই হেসে উঠে তাকে ধাক্কা দিয়ে বলল, আরে সত্যি ভাবলেন নাকি। নাহ না এমন কিছু করব না। আমি এতোটা অবলা নই। অতঃপর হেসে তাকিয়ে রইল বাড়ির দিকে। একটা বেলকনির দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, ওই যে দেখেছেন ঘরটা, ওই ঘরটা হচ্ছে আবরারের। এখন বলবেন আমি জানি কিভাবে, আমি অনেকবার এসেছিলাম এখানে। দাঁড়িয়ে প্রহর গুনেছিলাম অনেকবার! চাঁপা শ্বাস ছেড়ে বলল,
দেখবেন আর কিছুক্ষণ পরেই ঘরের বাতি টা বন্ধ হয়ে যাবে। অদ্ভুত কাকে চাইলো আর কে এসে তার ঘর জড়ো করছে।

নিলুর কথা শুনে ফরহাদ’র শরীর শিউরে উঠল। কথাবার্তা মোটেও ঠিক বলছে না সে। নিলুফার কে আর এখানে রাখা যাবে না। ফরহাদ বাইকে উঠে বলে উঠল, উঠে পড়ুন। অনেক দেরি হয়ে গেছে। বাড়ির সবাই চিন্তা করবে।

নিলুফার হাসল! হেসে বাইকে চড়ল! ফরহাদের কাঁধ শক্ত করে ধরে বলল, নিন! চলুন। ইচ্ছে করছিল তাকে একটিবার দেখার। তাই দেখতে চলে এলাম। আপনি রাগ করছেন ফরহাদ সাহেব! আরেকটা কথা বলল আপনাকে! ফরহাদ সাহেব!

ফরহাদ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল নিলুফারের দিকে। নিলুফার মুচকি হেসে বলল, জানেন তো ফরহাদ সাহেব, ও কিন্তু আমায় চুমু খেয়েছিল। এই তো এই ঠোঁটের মাঝে। তো এখন, এখনো কি ভালোবাসবেন আপনি আমায় । না বাসবেন না। কারণ আমি এখন কলঙ্কিনী!

বলেই জোরে জোরে হাসতে লাগল নিলুফার। ফরহাদ বুঝতে পারছে নিলুফার আজ খুব কষ্ট পেয়েছে। খুব! এতো কষ্ট পেয়ে সে কি বলছে নিজেও জানে না। কিন্তু এখন কি করা উচিত তার। নিলুফারের কষ্ট তাকেও কষ্ট দিচ্ছে। কিন্তু এ কষ্টের ভাগ কি করে নেবে সে!

———

আবরার ঘরের দরজা বন্ধ করে তাকাল বিছানার দিকে।‌ বধূ বেশে এখানেই বসে আছে পূর্ণা। দীর্ঘশ্বাস ফেলল আবরার। কাকে সে চেয়েছিল আর কাকে পেল। ভাগ্যের এই পরিহাস কখনো চায় নি সে।

বেলকনির দিকে যেতেই পূর্ণা ঘোমটা খুলে বলল, “ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন!

“একা থাকতে চাই আমি!

আবরার মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বেলকনির কাছে যেতে নিল। পূর্ণা আবারো বলে উঠল,

“আপনি আমাকে অবহেলা করছেন।

“সবটা জেনেই বিয়ে করেছিলে তুমি।

“হ্যাঁ আমি সবটা জানি কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না। আমি শুরু থেকেই বিয়ে করতে চেয়েছি আপনাকে।

“তো, আমি তো চাই নি। তুমি চাইলেই বিয়েটা ভেঙে দিতে পারতে।

“না পারতাম না। আমি ভাগ্যের কাছে একবার সুযোগ দিয়েছে আর সেটা পেয়েছি।

আবরার কিছু না বলেই চলে যেতে নিল। পূর্ণা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“আপনি কি ভাবছেন আবরার। আমার সাথে বিয়ে না হলেই কি তার সাথে আপনার বিয়েটা হতো। এই চিনেন আপনার মা কে আপনি। না তিনি কখনো ওই বিয়ে দিতেন না। বরং অন্য জায়গায় সম্বন্ধ দেখতেন। শুধু কি তাই! বিয়েতে না করলে আমার আপার কি হতো! আপনার বোন কি ছেড়ে দিত তাকে। কখনো না, মন কষাকষি লেগেই থাকতো।

“অজুহাত চাই নি আমি।

পূর্ণার গলা ভার হয়ে যাচ্ছিল। অশ্রু এসে জমছে চোখের কোনে। শব্দ করে শ্বাস ফেলে সে বলল,
“আবরার আমি ভালোবাসি আপনাকে। নিজের ভালোবাসা নিজের করে নেওয়া কি অন্যায়!

আবরার উওর দিল না। এসে দাঁড়াল বেলনকির দিকে। খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। খাটের কোনে বসে কাঁদতে লাগল পূর্ণা! কোথায় হয়তো খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছে সে!

#চলবে….

#প্রেমকুঞ্জ 💓
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
| চতুর্দশ পর্ব |

সময় পেরিয়ে গেলো। শ্রেয়ার মেট্রিক পরিক্ষা শেষ হয়ে গেল। পরিক্ষায় অবশ্য ভালো নম্বর পেয়েই পাশ করলো সে। এখন খোঁজ চালাচ্ছে কলেজের ব্যাপারে। তিতির এবার ভার্সিটিতে ভর্তি’র জন্য তোড়জোড় করছে। তিতিরের কাছে মনে হচ্ছে সময় সত্যি অনেকখানিই পেরিয়ে গেছে। ইরার সাথে দেখা হলো না আজ বেশ কয়েকদিন। ভেবেছিল যত’ই কম দেখা ততোই ভালো। ভুলে যেতে পারবে তাকে। কিন্তু না তা তো সম্ভব হচ্ছে না। আরো তাকে না দেখবার অস্থিরতা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তাকে। আজ বহু দিন পর ইরার দেওয়া সেই পাঞ্জাবি টা বের করল তিতির। যেই ভাঁজে রাখা ছিল এখনো সেই ভাজেই আছে। ইরা আর আসে নি এটা নিতে! দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাঞ্জাবি তে হাত বুলিয়ে আবারো রেখে দিল তিতির! কয়েকটা টিউশনি পড়ায় এখন। দিন বেশ চলে যাচ্ছে। বাবা’র ব্যবসা টাও এখন অনেক এগিয়েছে। তিতির ভাবছে বাবার ব্যবসায় হাত দিয়েই তা আরো বড় করবে। ক্ষতি কি ব্যবসা করতে। ভালোই তো হবে, অন্যের দ্বারস্থ করা লাগবে না।

তিতির বাসা থেকে বের হতেই খানিকক্ষণ পর ঘরে ফিরল নিলুফার। দিন ভালোই যাচ্ছে তার। তাকে দেখে কেউ বলতে পারবে না তার মনের ভিতর আদৌও কতোটা কষ্ট। ফরহাদ হয়তো জানে তবুও বার বার নিলুফার কে দেখে অবাক হয়। কতোটা শান্ত ভাবেই থাকে এই মেয়েটা। ফরহাদের মনে হয় আল্লাহ তায়ালা তাকে আরেকটা সু্যোগ দিয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগানো উচিত তার। তবুও নিলুফার কে আরো সময় দিতে চায়। এতো তড়িখড়ি’র কিছু নেই। নিলুফার কে স্বাভাবিক মনে হলেও ভেতর থেকে সে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক নয় এটা বেশ ভালোই বুঝতে পারে ফরহাদ!

——-

ইরা দরজা ধাক্কাল! শ্রেয়া দরজা খুলে তাকিয়ে রইল ইরার দিকে। মেয়েটা কে কেন জানি চেনা চেনা লাগছে তার কাছে। কোথাও হয়তো আগে দেখেছে তবে মনে করে উঠতে পারছে না। ইরা ক্লান্ত গলায় বলল, তিতির আছে!

পরক্ষণেই মনে পড়ল এই মেয়েটা তিতির ভাইয়ের বান্ধবী। শ্রেয়া মাথা নাড়িয়ে না করল।‌ ভেতর থেকে নিলুফার উঁকি মেরে ইরা কে দেখে বলল,

“আরে ইরা যে ভেতরে আসো। অনেকদিন পর এলে যে। তোমার তো কোন দেখাই নেই!

ইরা ভেতরে পা রেখে বলল,
“ভালো আছো আপা!

“হুম ভালোই আছি! তোমার খবর বলো। শ্রেয়া ঊষা কে বল তো চা বানাতে।

“আপা একটু পানি খাওয়াবে আমাকে, খুব তৃষ্ণা পেয়েছে!

“তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব দৌড়াদৌড়ি করে এসেছ। কিছু কি হয়েছে?

“না আপা কিছু হয় নি। এটা বুঝি শ্রেয়া। বাহ অনেক বড় হয়ে গেছো তো আমি তো ওকে চিনতেই পারি নি। খুব সুন্দরীও হয়েছে দেখছি!

নিলুফার হাসল। শ্রেয়ার কেমন লজ্জা লজ্জা পেতে লাগলা। সে দৌড়ে রান্না ঘরে চলে গেল। ঊষা’র হাতে পানির গ্লাস পাঠালো!

নিলুফার প্রায় অনেকক্ষণ ধরেই গল্প করল ইরার সাথে। ইরা কে বেশ চিন্তিত লাগছিল তার কাছে। কিছু একটা হয়েছে আন্দাজ করতে পারছে কিন্তু সেটা কি? ইরার কোন কথাই বলছে না। একটু পর পর’ই দরজার দিকে তাকাচ্ছে।‌ হয়তো তিতিরের অপেক্ষা করছে সে। নিলুফার ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলল,

“তিতিরের আসতে সময় লাগবে ইরা! কিছু বলার থাকলে আমাকে বলে যেতে পারো। আমি বলে দেবো!

ইরা প্রথমে বেশ বিচলিত হলো। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাঁধের ব্যাগ থেকে একটা চিঠি বের করে নিলুফারের হাতে দিয়ে বলে,

“আপা দয়া করে এটা একটু তিতিরের হাতে পৌঁছে দেবেন। খুব জরুরী।

“মনে হচ্ছে জীবন মরণের প্রশ্ন!

ইরা চমকে উঠে। নিলুফার হেসে উঠে বলে, না এমন ভাবে বলছো তাই বললাম!

“আপনি ঠিক ধরেছেন আপা। আমি আজ আসছি!

বলেই উঠে চলে যায় ইরা। নিলুফারের হাতে ইরার চিঠি খানা। লোভ হচ্ছে পড়ে দেখার কিন্তু এটা তো সম্ভব না। চিঠিপত্র টা বইয়ের ভাজে রেখে দিল নিলুফার!

——-

শ্রেয়া হুট করেই এখন শাড়ি পড়ে। ইদানিং তার হাব ভাব ও অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। কেমন জানি মনে হয় মেয়েটা হুট করেই অনেকটা বড় হয়ে গেছে। নিলুফার প্রায়’ই আড়াল থেকে দেখে শ্রেয়াকে। অনেকক্ষণ ধরেই আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে থেকে মিটিমিটি হাসতে থাকে সে।

শ্রেয়ার শাড়ি পড়ে বের হতে যাচ্ছিল বাসা থেকে। তখন’ই পেছন থেকে মা ডেকে উঠে বলে,

“কোথায় যাচ্ছিস?

“বান্ধবীর বাসায়।

“বান্ধবীর বাসায় এখন কি তোর!

“মা এতো কথা বলো না তো! কাজ আছে তাই যাচ্ছি। সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসবো!

বলেই বের হয়ে যায় শ্রেয়া! মা কতোক্ষণ তাকিয়ে থাকে দরজার দিকে। তার মনে হচ্ছে ছেলে মেয়েরা বড় হয়েই গেলে আর মা বাবার কথা শুনতে চায় না। তারা চায় শুধু স্বাধীনতা!

—–

বড় রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে শ্রেয়া। মামুন কি আজ আসবে এখানে! হতে পারে আসবে। প্রতিদিন’ই তো বন্ধুদের আসে এখানে। ব্যতীক্রম হলো না আজ! মামুন আজও বন্ধুদের নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে যাবার পথে থেমে গেল। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল শ্রেয়ার দিকে। হাতের সিগারেট কখন যে শেষ হয়ে তার হাতের কাছে চলে এলো সেই খেয়াল নেই তার। হুট করেই আগুনের ছ্যাঁকা খেয়ে লাফিয়ে উঠল সে। সাথে বন্ধু বান্ধব সব হেসে উঠল। বিরক্তি মুখে শ্রেয়া চলে এলো সেখান থেকে!

মামুন দৌড়ে শ্রেয়ার পিছন পিছন যেতে থাকল। শ্রেয়া বুঝতে পেরে পিছন ফিরার সাথে সাথেই থেমে গেল মামুন।‌ চোয়াল শক্ত করে খুব জোরে বলে উঠল,
“আমার পিছন পিছন কেন আসছেন!

মামুন থতমত খেয়ে গেল। কিছু না বলে শ্রেয়ার পাশ দিয়ে চলে গেলো সে। শ্রেয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“ভিতু একটা লোক কোথাকার!

——

সন্ধ্যে বেলায় ছাদে এসে দাঁড়াল ফরহাদ। নিলুফার আগে থেকেই ছিল সেখানে। ফরহাদ কে দেখে বলে উঠল,

*ফরসাদ সাহেব যে!

ফরহাদ হেঁটে এক পাশে এসে দাঁড়াল। নিলুফার হেসে বলল, কি সিগারেট খেতে এসেছেন নাকি আমায় দেখতে!

ফরহাদ কিছু বলতে পারল না। মাথা নিচু করে নিল। নিলুফার হেসে বলল, তাহলে দ্বিতীয় টাই কি ধরে নেবো আমি!

ফরহাদ হাসল। নিলুফার বলে উঠল,
“তা ফরহাদ সাহেব আপনি এতো অলস কেন?

“মানে!

“আচ্ছা এই ধরুন না, আমায় বিয়ে করতে চান। তা এখনো কি চান!

ফরহাদের মুখে কথা আটকে গেল। নিলুফার খিলখিলিয়ে হাসল। বলে উঠল,

“হ্যাঁ বিয়ে তো করতেই চান। তা না হলে কি আমাকে দেখতে আসতেন। তা আমাকে বিয়ে করতে হলে তো আমার মা বাবার কাছে প্রস্তাব দিতে হবে। তখন কি আমার মা বাবা একটা বেকার ছেলের সাথে আমার বিয়ে দেবে বলুন তো। একটা চাকরি কেন যোগাড় করছেন না আপনি!

ফরহাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আমার এসব ভালো না নিলুফার!

নিলুফার ভ্রু কুঁচকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, আপনার মুখে আমার নাম শুনে অনেকটাই চমকে উঠলাম। তা একা একা প্র্যাকটিস করতেন নাকি।

ফরহাদ হাসল। নিলুফার এসে ফরহাদের সামনে দাঁড়িয়ে হেসে বলল, তবে আমি এই কথা নিশ্চিত বলছি না আপনার চাকরি হয়ে গেলেই আপনার সাথে আমার বিয়ে হবে। কারণ সত্যি এমনটা হয় না। চাকরি হয়ে গেলেই প্রিয় মানুষটি হারিয়ে যায়। আপনি কি তাহলে সেই ভয়েই চাকরি করতে চান না ফরহাদ সাহেব!

বলেই নিলুফার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল ফরহাদের দিকে। ফরহাদ ঢোক গিলে তাকিয়ে রইল। হুমায়ূন আহমেদের একটা কথা বেশ মনে পড়ছে আজ!

“জীবন গল্প – উপন্যাস নয়। জীবনে কুৎসিত সব ব্যাপারগুলি সহজভাবে ঘটে যায়। অপরূপ রূপবতী একটি মেয়ে হাসতে – হাসতে কঠিন – কঠিন কথা বলে।

এই রূপবতী মেয়ে হচ্ছে নিলুফার, যে কঠিন কঠিন কথা গুলোও হাসতে হাসতে বলে ফেলে। এই ক্ষমতা কেবল তাদেরই থাকে!

——-

তিতির বাসায় ফিরল অনেক রাত করেই! নিলুফার তখন’ই এসে হাজির হলো তার ঘরে। তিতির খানিকটা বিরক্ত হয়েই বলল,

“কি হয়েছে আপা!

“ইরা এসেছিল আজ!

“ওহ!

“তোকে একটা চিঠি দিয়ে গেছে!

“ভালো!

“আমি রেখে গেলাম টেবিলের উপর। পড়ে দেখিস! এটা নাকি তার জীবন মরণের প্রশ্ন!

কথাটা শুনেই থমকে গেল তিতির! কি আছে তাহলে চিঠিতে! নিলুফার ঘর থেকে বের হয়ে যেতেই চিঠির পাতা খুলে বসল তিতির। অতঃপর…

#চলবে….

[ রি চেক করা হয়নি ভুল গুলো ক্ষমার চোখে দেখার অনুরোধ রইল! ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে