প্রিয় স্বর্ণলতা – Momin Shuvo

0
443

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০

৩০/০৭/২০২০
কষ্টনীড়, শূন্যতাপুর।

প্রিয় স্বর্ণলতা,
আমার প্রত্যাশা জুড়ে সারাক্ষণ শুধু তোমার ভালো থাকা। তুমি ভালো আছো ভেবেই নিজেকে একরাশ স্বস্তি দিই। তুমি জেনে হয়তো খুশি হবে যে, ভাঙা মন নিয়ে আমি বেশ সানন্দেই দিন অতিবাহিত করছি। আমোদে কাটিয়ে দিচ্ছি বিরহজীবন। শুধু এটা ভেবে যে, আমার অন্তরের কুটুম খুব ভালো আছে। আচ্ছা লতা, তোমার কী মনে পড়ে? কোনো এক গ্রীষ্মের খাঁ খাঁ দুপুরে হস্তদন্ত হয়ে আমি বাড়ি ফিরছিলাম রেললাইন ফেরিয়ে সেই মেঠোপথ ধরে। আমার রোদ্রতাপে মলিন হওয়া শুকনো মুখ, রাস্তার উড়ে আসা ধুলোয় উষ্কখুষ্ক চুল। কপাল বেয়ে তিরতির করে ঘাম ঝরে পড়ছিলো। আমার ভেতরে ছিলো বাড়ি ফেরার তাড়া। আশেপাশে কে আছে, ছায়া মাড়িয়ে কে যায় অত দেখার সাধ ছিলোনা মনে। চারিপাশের এত উষ্ণতার মাঝে দখিনা বাতাসের মত হিমেল স্পর্শ হয়ে দেখা দিলে দক্ষিণের সেই সরু রাস্তা ধরে আসা তুমি। তোমার মাথার লম্বা ঘন কালো চুল গুলো উড়ছিল বাতাসে। উড়ছিলো গলায় জড়িয়ে থাকা ওড়নার দুপাশ। একিসাথে উড়ছিলো আমার মন। অপলক দৃষ্টিতে যখন তোমার আসার পানে চেয়েছিলাম তখন আমার বুকের মাঝে কুলকুল করে শীতল বায়ু বইছিলো। হিম হয়ে যাচ্ছিলাম। ক্লান্তি, অবসাদ আর তিক্ততা দূর হয়ে আমার মাঝে বিরাজ করছিলো প্রশান্তির আমেজ।
তুমি আমার অমন তাকিয়ে থাকা দেখে ফিক করে হেসে দিয়েছিলে। জানার অনেক ইচ্ছে ছিলো সেই হাসির রহস্য কি ছিলো। মোহনীয় সেই হাসিতে লুটে নিলে আমার ধ্যান, মন, জ্ঞান সর্বস্ব। অফিস ফেরার পথে রোজ সেই হাসি কেনার খরিদ্দার হতাম। বিনিময় দিতাম আমার ক্যাবলা চাহনি। তুমি ভীষণ মজা পেতে তাইনা? আমার অমন বোকাবোকা চেহারা দেখে। আমার চেহারার মতোই বোকা ছিলাম আমি জানো? তিন তিনটে বছর কেটে গেলো তোমার প্রেমে ডুবে থেকে। আমি কভু বলার সাহস অব্ধি জোগাড় করতে পারলাম না। আমার স্বর্ণলতা বেড়ে উঠলো ধীরেসুস্থে। মাধ্যমিক পাশ করে গেলো সেই ৩য় বছরের মাথায়। অফিস ফেরার পথে আর দেখা হতোনা। বিষন্ন মন নিয়ে রোজ বাড়ি ফিরতাম। তোমার সেই চাঁদবদন খানি না দেখতে পাওয়ার যন্ত্রণা আমাকে ভীষণ পোড়াচ্ছিল। নিজেকে রোজ হাজার বকুনি দিতাম। পণ করতাম আর একটিবার যদি তোমার দেখা পাই, হারাতে দিবোনা কখনো। মেলায় কেনা নীল ডায়েরীর মতোন তোমায় নিয়ে সাজিয়ে রাখবো আমার বুকের লাইব্রেরী তে। তারপর অনেকদিন কেটে গেলো। শরীরের ব্যামোয় বিছানায় পড়ে ছিলাম বেশ ক’মাস। গায়ে যখন একটু জোর পেলাম, বিকেল বেলায় সাইকেল চেপে পোস্ট অফিস গেলাম আমার অফিসে একখান চিঠি পাঠাবো বলে। পিয়ন আমায় বললো, আপনার নামে একটা চিঠি এসেছে সে বেশ ক’দিন হলো। নীল খামে ভরা সেই চিঠিতে কি লেখা ছিলো সেসব তুমি জানো। তোমার চিঠির জবাব দেওয়ার সময় ফুরিয়েছে ডাকবাক্সে পড়ে থেকেই। যখন আমি হাতে পেলাম তখন হয়তো তুমি কারো ঘরের ঘরণী। সদ্য বিবাহিত জীবনে আমার কাল চিঠি পাঠিয়ে তোমার দুঃখ বাড়ানোর সাহস আমি করিনি লতা। তাই তো আজ অনেক বছর পর তোমায় চিঠি লিখলাম। খুব বেশিদিন হয়তো বাঁচবোনা লতা। শেষ বেলায় একটা অনুরোধ করবো তোমায়। বড্ড সাহস জোগাতে হয়েছে তার জন্যেও। শুনবে কী অনুরোধ আমার? বলছি তোমার ঠোঁটে লেপ্টে থাকা অমন হাসি আমি আর একটিবার দেখতে চাই। সর্বস্ব তো আগেই বিলিয়েছি। এবার না হয় জীবন…

আজ আর নয় প্রিয়। বকুল ফুলের লুকিয়ে রাখা সুরভী তোমায় পাঠালাম, পাঠালাম এই বুকের খাদে আটকে থাকা এক মাতাল দীর্ঘশ্বাস। তুমি আয়নায় নিজেকে দেখার কালে আনমনে ভেবে নিও, অমন বোকাসোকা একটা চাহনি…

ইতি
তোমারই বোকারাম।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে