প্রিয় শানকুমার – ইনায়াত হাসান ইনায়া

0
574

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_2020
চিঠি নং: এক

প্রিয় শানকুমার,

তুমি আমার “আত্মার সাথের জোড়া, আমার অর্ধাঙ্গ, আমার ভবিষ্যৎ জীবন সঙ্গী!”
“তাতে কি হয়েছে তুমি একটা অদৃশ্য অনুভূতি, আমি কোনদিন তোমাকে দেখিনি, এখনো চিনিই না, ভালো করে কিছুই জানি না তোমার সম্পর্কে…”
কিন্তু তাও আমি সবসময় তোমাকে ভালোবাসে যাচ্ছি এবং যাবো। আল্লাহর কাছে প্রতিটি মোনাজাতে তোমাকে চেয়ে যাচ্ছি এবং চেয়ে যাবো। আমার এই ভালোবাসার শুরু কিন্তু ক্লাস নাইন এর সেই ইসলাম শিক্ষা ক্লাস থেকে। আর এখন আমি অনার্সে পড়ুয়া একটা মেয়ে। তুমি অদৃশ্য এক মায়া আর ভালোবাসা। যার নাম আমি নিজেই ‘শান’ রেখেছি। আবার ভালোবেসে মাঝেমাঝে শানকুমারও ডাকি।
পাচঁ বছর আগে সেদিন স্যার ইসলাম শিক্ষা পড়াতে গিয়ে বলেছিলেন,
“যে যেমন আল্লাহ তার সাথের জোড়াও তেমনি মিলায়। তাই ভালো এবং নেক কাউকে জীবনে পেতে হলে আগে তোদের নিজেদেরকে তেমনি ভাবে গড়তে হবে।”
“ব্যাস! শুরু হয়ে গেল তোমার সাথে পথচলা। আমার কল্পনায় সৃষ্টি হলো একজন আদর্শ জীবনসঙ্গির অবয়ব। যার নাম আমি রাখলাম শান। তখন থেকে যেন সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস বেড়ে গেল, ভাগ্যের উপর বিশ্বাসী হতে শুরু করলাম।
কথায় আছে না,
“বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর”
আস্তে আস্তে নিজেকে আর নিজের সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম।
যখন জানলাম আমার সমস্ত রূপ, সব সৌন্দর্য শুধু তোমার জন্যেই বরাদ্দ করা।
তখন থেকেই নিজের সৌন্দর্য আর রূপকে সঞ্চয় করে রাখতে শুরু করলাম। তাদেরকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করা শুরু করলাম, আব্রুর মধ্যে আনার চেষ্টা করলাম। যাতে করে তোমার হক আর তোমার জিনিস কেউ দেখতে না পারে।
“চোখের কাজল, ঠোঁটের লিপস্টিক, হাতের মেহেদী এবং শাড়ি পরার প্রবল শখ সবকিছু বাদ দিলাম। কেন জানি ইচ্ছে হয় না। মনে হয় যার জন্য এই সাজ সেই তো এখনো জীবনে এলোনা। দেখানোর মানুষটাই তো নেই। যে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখবে আমায়। তাহলে আর এতো সাজসজ্জা করে কি লাভ!”
“কোন পরপুরুষের দিকে ভুলেও নজর তুলে তাকাই না। পাছে যদি তুমিও অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকাও!”

“মাঝেমাঝে খুব বেশি মিস করি তোমাকে। যখন খুব বেশি বৃষ্টি হয়, যখন অন্য কাউকে দেখি ট্র‍্যাভেলিং করতে তখন আমারও মন চায় তোমার সাথে পুরো পৃথিবীটা ঘুরে বেড়াতে। তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে। তখন তোমাকে প্রচণ্ড মিস করি…
নিজে নিজে খুব কষ্ট পাই।তারপর তোমায় প্রচুর বকাবকি করি। তোমার জন্যে শাস্তি ঠিক করি। এই সবই আমার ভালোবাসার পাগলামি।
“স্নিগ্ধ অনিলের ছোঁয়াতে, আমার প্রিয় করমচা ফুলের সুবাসে, আমার প্রতিটি প্রত্যুষে, নিঃসঙ্গ নিশীথে আমি তোমাকে পাই আমার অনুভবে!”
আমার যে করমচা ফুল এতো প্রিয় এটার কারণও কিন্তু তুমিই। কারণ এই ফুলটার বৈশিষ্ট্য একদম তোমার ই মতো। করমচা ফুলের রং হলো সাদা, আমার প্রিয় রং। আর আমার কাছে সাদা মনেই ‘শ্বেত, শুভ্র এবং পবিত্র’ একটা ব্যপার।
ঠিক যেমন শান মানেই একটা নির্ভেজাল পিউর অনুভূতি, একটা পিউরিটি, একটা পবিত্রতা, একটা খুব গভীর পবিত্র এবং শুদ্ধতম অনূভুতি…
তুমি কোথাও নেই কিন্তু সবখানে আছো, আমার অনূভুতি হয়ে।
আই কান্ট সি, কান্ট টাচ বাট আই কেন ফিল ইউ ইচ এন্ড এভরী সেকেন্ড ইন মাই লাইফ!

এই চিঠি আমার ভালোবাসার সাক্ষী। তোমার উপস্থিতি ছাড়াই তোমাকে ভালোবেসে যাওয়া এতগুলো বছরের স্মৃতিস্বরূপ এই চিঠিগুলো লিখি। যাতে তোমাকে পরবর্তীকালে দেখাতে পারি কিভাবে তোমার অপেক্ষায় ছিলাম…

ইতি তোমার
জীবনসঙ্গিনী

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে