#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
চিঠি নং-০১
প্রিয় মৌ,
কেমন আছিস দাদু।আশা করি ভালোই আছিস।হয়ত আমাকে বাড়ি থেকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসার জন্য তোর মন খারাপ।মন খারাপ করিস নারে দাদু।আমিও যে তোদের ছাড়া ভালো থাকতে পারি না।তারপরও ভালো থাকার অভিনয় করে যেতে হয়।আচ্ছা তোর বাবা কেমন আছে?ভালো আছে তো আমার ছেলেটা?।জানিস আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ও হয়ত বাহ্যিক দিক দিয়ে ভালো আছে কিন্তু আমি জানি ও কখনো আমাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারে না।আচ্ছা তুইই বল নিজের প্রানটা যদি নিজের থেকে দূরে থাকে তবে কেউ কি ভালো থাকতে পারে।আমি যে একসময় ওর বলতে গেলে প্রানই ছিলাম রে।হয়ত এখন আর নেই।
আচ্ছা তোর মা কেমন আছে রে? তুই কি এখনো মায়ের উপর রাগ করে আছিস?শোন,রাগ করে থাকিস নারে বোন।মায়ের উপর কখনো যে রাগ করতে নেই।মা যে অমূল্য সম্পদ।মা কখনো খারাপ হয় না।সবসময় মায়ের সেবা করিস।
আমার পাগল ছেলেটা কি তোকে এখনো মা ডাকে।জানিস এই ডাকটার উপর একসময় আমার অনেক লোভ ছিলো।দশ বছর সাধনার পরে যে আমি আমার সেই অমূল্য ধনটাকে পেয়েছিলাম।তার মুখে যেদিন প্রথম মা ডাক শুনেছি সেদিন মনে হয়েছিল আমি যেন স্বর্গ সুখ অনুভব করছি।এই ডাকটার যে অনেক ক্ষমতা।এই ডাক শুনতে না পারলে কোন নারীরই যে নারী জীবন স্বার্থক হয় না।কেউ হয়ত সহজে শুনতে পারে কেউ হয়ত সহজে পারে না।আহা কতদিন যে তার মুখে এই মা ডাক শুনি না।একসময় সকলে বলতো আমার ছেলের কারনে আমি জীবনে অনেক সুখ পাব।আসলেই সেই সুখই তো এখন আমি পাচ্ছি এই বৃদ্ধাশ্রম নামক এক অলিখিত কারাগারের পঞ্চাশ ফুট রুমের মধ্যে আবদ্ধ থেকে।
জানিস দিদি তোর বাবা কখনো নিজের হাতে ভাত খেতো না।আমার হাতে না খেলে নাকি তার তৃপ্তি হয় না।এখন হয়তো তার তৃপ্তির জন্য আমার হাতে খাওয়ার প্রয়োজন নেই।কিন্তু তাকে নিজের হাতে খাওয়াতে না পারলে যে আমি এখনো যে তৃপ্তি ভরে খেতে পারি না।দরকার নেই আমার তৃপ্তি ভরে খাওয়ার। তুই অন্তত মা হয়ে আমার ছেলেটাকে দেখিস তার খেয়াল নিস।
আমার শরীরটা ইদানিং তেমন ভালো যাচ্ছে না।একা একা বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই যে ভালো।কিন্তু আমার যে কই মাছের প্রাণ। হয়ত এবারও মরব না।তারাতারি মরতে পারলে অনেক শান্তি পেতাম।কিন্তু আমার কপালে হয়ত তা নেই।
যাক অনেক কথাই বললাম।আজ আর না।তোরা সবাই ভালো থাকিস।আর আমার ছেলেটাকে দেখে রাখিস।আমার চিন্তা করিস।আমি মারা যাওয়ার আগে পারলে একবার আমাকে দেখে যাস।তাহলে আমি মরেও শান্তি পাব।
ইতি
তোর দিদিমা