#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
~চিঠিঃ-০৫
প্রিয় নেহাল,
কেমন আছিস জিজ্ঞেস করে তোকে অপ্রস্তুত করবোনা আজ আর, তোর তো খারাপ থাকার কোনো কারণ নেই। আজ আমার কথা জানাতেই তোকে লিখতে বসেছি। লোকমুখে শুনেছি প্রথম প্রেম নাকি কখনো ভোলা যায়না, তাই বুঝি তোকে আজো ভুলতে পারলাম না? আচ্ছা, তোর কি মনে পড়ে আমাদের একসাথে কাটানো সেই দিনগুলোর কথা, নাকি সবই ভুলে গেছিস আজ?
যে তুই আমাকে নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসতিস, যার সবটা জুড়ে শুধুই আমি ছিলাম, সেই তুই কি করে পারলি বল আমার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিতে? যখন তোকে প্রশ্ন করেছিলাম-কেন এই বিচ্ছেদ ? তুই বলেছিলি-“আমার এই ছন্নছাড়া জীবনের সাথে তোকে বাঁধলে যে, তোর ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে,আমি চাইনা আমার কারণে তোর বাকি জীবনটা অনিশ্চয়তায় ডুবে যাক।” কতো সহজ ছিল তোর কাছে কারণ টা নারে?আমাকে তুই একবার সুযোগ ও দিলিনা এইটা বলার যে,”আমি কি চাই, কিসে আমার খুশি?”
আমার থেকে নিজেকে এমনভাবে সরিয়ে নিলি তুই, আমি শত চেষ্টার পর ও আর তোকে খুঁজে পেলাম না। আচ্ছা তোর কেন মনে হয়েছিল,”যে মেয়েটা ছন্নছাড়া তোকে ভালোবাসতে পারে,সেই মেয়েটা ছন্নছাড়া তোর সাথে সারাজীবন সংসার করতে পারবেনা?” তুই বলিস আমাকে সুখী করতে তুই আমাকে ছেড়েছিলিস, জানিস তুই আমি এখন কতোখানি সুখী?
এখন আমি বিশাল সংসারের কর্তৃী, দুই সন্তানের জননী হয়েছি। ইঞ্জিনিয়ার স্বামী আমার,টাকা পয়সার কোন অভাব নেই, অভাব আছে তো শুধু একটাই তা হলো ভালোবাসার। কি ভাবছিস, আমার স্বামী আমাকে বুঝি কষ্ট দেয়? না রে মানুষটা আমাকে প্রচুর ভালোবাসে, কিন্তু আমি? আমি যে পারিনি তোর জায়গাটা অন্য কাউকে দিতে! আমি জানিনা,আমি প্রতিনিয়ত সবাইকে ঠকিয়ে চলেছি কিনা! আমি কি করতাম বলতে পারিস? আমার হৃদয়ের সবটা জুড়ে শুধু তোর বসত, সেখানে অন্য কেউ কোনদিন ঢুকতে পারবেনা। এতে যদি আমি স্বার্থপর,ঠকবাজ হয়ে থাকি তাহলে তাই,তবে আমার পক্ষে তোর জায়গাটা অন্য কাউকে দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই রে!
এই নিয়মমাফিক সংসার টিকিয়ে রাখতে, সামাজিক সম্পর্ক গুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে, আজ আমাকে হতে হয়েছে পারদর্শী অভিনেত্রী। তবুও এই এতো এতো ব্যস্ততার মাঝেও আমি এক মুহুর্তের জন্য তোকে ভুলতে পারিনি? কেন পারিনি তার কারণ আমার অজানা,আচ্ছা তোর কি জানা আছে? মাঝে মাঝে মনে হয় এইসব দায়িত্বের বাঁধা থেকে নিজেকে মুক্ত করে নেই, কিন্তু চাইলেই কি আর সব বাধা থেকে মুক্তি মেলে? আমার ও তেমনি মুক্তি পাওয়া হয়নি।
সুখে থাকতে, সুখে রাখতেই তো বিচ্ছেদ উপহার দিয়েছিলি তুই, তবে আজো সেই সুখকেই কেন খুঁজে পেলাম না বলতে পারিস ? জানিনা রে, কোনদিন সেই সুখ আমার কপালে জুটবে কিনা যে সুখের অযুহাতে তুই আমাকে পর করেছিস। আমার কথা না হয় বাদই দিলাম, আচ্ছা তুই নিজে কি পেরেছিস সুখী হতে? যতই তুই বলিস না কেন সুখে আছিস আমি জানি, আমাকে ছাড়া সুখী হওয়ার ক্ষমতা তোর নেই।
এর থেকে তো ভালো হতো যদি কুড়েঘরে থাকতাম, প্রকৃতির অন্তনীলে তোর সাথে আমাকে জড়িয়ে রাখতাম। অন্তত তোর স্পর্শে নিজেকে রাঙিয়ে সুখী মানুষের দলে নাম লেখাতে তো পারতাম! না হয় আধপেটা খেয়েই থাকতাম, সকল অভাবকে তোর ভালোবাসার পরশে এক নিমেষে হারিয়ে দিতাম। এমনটা কেন ভাবতে পারলি না তুই নেহাল? আমাকে আজীবন সুখে রাখতে গিয়ে আজ সুখকেই জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিস তুই। আকাশ জুড়ে যখন মেঘের ঘনঘটা বিচরণ করে, আমার অন্তরালের জমে থাকা মেঘগুলো থেকেও বৃষ্টিপাতের শুরু হয়। নিজেকে সবার থেকে লুকিয়ে রাখতে রাখতে আজ আমি যে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।
মাথার নিচের বালিশটা হয়তো টের পায় আমি কতোটা দুর্বল হয়ে গেছি আজ। অথচ জানিস, সবাই বলে আমি নাকি ইমোশনলেস! কি করবো বল-সব ইমোশন কি দেখানো যায়? নিয়তির এই বুঝি চাওয়া ছিল, তাই তো সম্পর্কের এই সমীকরণ মেলাতে পারলাম না আমরা। তিলতিল করে এমন এক অতল গভীরে হারিয়ে যাচ্ছি আমি যেখান থেকে হয়তো একদিন খুব স্বাভাবিক ভাবেই বিলীন হয়ে যাবো। আর যতদিন না তা হচ্ছে, ততদিন এই সাজানো গোছানো অভিনয় করেই কাটবে তোর-আমার জীবন।
কখনো কোনো একদিন হঠাৎ করেই হয়তো দেখা হয়ে যাবে রাস্তার মাঝে, চোখে চোখ পড়তেই অজানা আশঙ্কায় তা আপনা আপনিই সরে যাবে। তুই হেটে চলবি তোর গন্তব্যে আমিও বিপরীতে ধাবমান! সেদিন আর কেউ কাউকে পেছন ফিরে চেয়ে দেখবো না। জিজ্ঞেস করা হবেনা আর কেমন আছিস? সকল সম্বোধনের ইতি ঘটিয়ে চলমান পৃথিবীর বৃত্তে একটু একটু করে এগিয়ে যাবো দু’জন দু’জনের মতো!
যদি পুণর্জন্ম বলে কিছু থাকে তবে সেই জন্মে আমাকে নিজের করে নিস,প্লিজ! অন্তত সেই জন্মে তুই আমাকে সুখী করতে আমার থেকে নিজেকে আর দুরে সরিয়ে নিসনা!
ইতি
“তোর স্বর্ণলতা”