#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
~চিঠিঃ-০২
প্রিয় উকিল সাহেব,
প্রায় বছর ছয়েক পর আপনাকে নিয়ে লিখতে বসেছি এই নিস্তব্ধ রাতে।কাগজে কলমে আপনাকে নিয়ে আঁচড় কাটিনা,তার মানে কিন্তু এই নয় যে আপনাকে আমি ভুলে গেছি।আপনি আমার মন গহীনে এখনো আগের মতই আঁচড় কাটেন প্রতিটি মুহুর্তে।
অনেক কিছুই বদলেছে আজ,সে খোঁজ কি রাখেন আপনি?জানিনা আমার কথা আপনার কতোখানি মনে পড়ে,তবে আমার প্রতিটি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে আজো আপনিই জড়িয়ে আছেন। জানেন-ইরু এখন অনেক বড় হয়েছে, বুঝতে শিখেছে বাস্তবতার কঠোর মানেগুলো। ইরু এখন আর সেই ছোট্টটি নেই,এখন অনেক শক্ত হয়েছে মন। এক মুহুর্ত আপনাকে না দেখলে যে ইরু চোখের জলে বুক ভাসাতো, সেই ইরু আজ আপনাকে না দেখেই প্রতিটা দিন অতিবাহিত করতে শিখে গেছে। জানেন উকিল সাহেব-ইরু এখন দায়িত্ব নিতে পারে, আপনার দেখা সেই মায়াবী পাগলী মেয়েটার আজ মস্ত বড় সংসার।সেই সংসারের কর্তী হয়েছে সে।কথায় কথায় প্রতিবাদী হয়ে ওঠা ইরু এখন হাজারো চিন্তাধারার মানুষের সাথে মানিয়ে নিতে শিখেছে।গন্ডা গন্ডা ভুল দেখলেও ইরু আজ আর প্রতিবাদ করেনা।
আপনি বলতেন যে-“এই ইরু,কবে বড় হবে তুমি বলতো, এতো অল্পতেই রেগে যাও কেন? ”
মাঝে মধ্যে আপনার সেই কথাগুলো মনে হলে খুব করে হাসি পায়,কেন জানেন? কারণ ইরু এখন রাগ করতেই ভুলে গেছে!যখন রাগের মূল্য দেওয়ার মতো কেউ থাকেনা তখন কি আর রাগ করে লাভ হয় বলুন? আপনার মতো করে কেউ আর রাগ ভাঙায় না যে! ইরুর এখন আর অভিমান ও হয়না! জানেন উকিল সাহেব- যে ইরু শুধু আপনাকে নিজের সাথে বেঁধে রাখতে চাইতো, যার অন্য কোন পিছুটান ছিলনা,অনেকের মাঝে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ছিলনা,সেই ইরু আজ শক্ত হাতে একটা যৌথ পরিবার কে বেঁধে রেখেছে।অনেকের মাঝের সেই একজন হয়ে উঠেছে যার জন্য সবাই হাসতে পারে,নতুন করে বাঁচতে শেখে৷ ইরু নিজে হাসতে ভুলেছে ঠিকই তবে হাসতে শিখিয়েছে অনেক কে।
আপনি সেদিন বলেছিলেন-” ইরু,পাগলামী করো না,এসব তোমার আবেগ,কিছুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে”। খুব ভালো হতো জানেন-যদি কথাগুলো আপনার বলার মতোই সহজ হতো!ভালো হতো যদি আমার আপনার জন্য অনুভূতিটা শুধুই আবেগ হতো! ভালো হতো যদি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর আমি আপনাকে ভুলে যেতে পারতাম!তবে কি জানেন-সবটা আপনার চাওয়ার মতো হয়নি। ইরু পাগলামী ছেড়েছে, তবে আপনাকে ভুলতে পারেনি। যদি আবেগ ই হবে তবে কেটে কেন গেলনা?কেন এই অযাচিত আবেগ আমার অন্তঃপুরে এতো বেশি পীড়া দেয়?উত্তর চাইছিনা আপনার কাছে, কারণ আমি জানি এর উত্তর আপনার জানা থাকলেও আপনি দিতে ব্যার্থ্য।আপনি যে বাঁধা সমাজের কাটাতারে,যেখানে আমার ভালোবাসা তুচ্ছ আবেগ ছাড়া আর কোন নামই পাবেনা।
আচ্ছা উকিল সাহেব-বয়সের বাঁধাটা কি এতই বেশি ছিল?একবার কি চেষ্টা করা যেতনা?সারাজীবনই তো সমাজের জন্য করেছেন,একবার কি এই ইরুর আবেগ কে সুযোগ দিতে পারতেন না?জানি আজ এসব প্রশ্নের হয়তো কোন মানে হয়না।তবুও খুব জানতে ইচ্ছে করে জানেন-
“আপনি কি আমাকে একটুকুও ভালোবাসতেন না? ” এর ও উত্তর চাইছিনা। ইরু এখন অভিনয় করতে পারে,আপনি বলতেন-
“তুমি মিথ্যেটাও ঠিক করে বলতে পারোনা ইরু।” অথচ সেই ইরু আজ নিজেকে নিয়ে হাজারো মিথ্যের সান্ত্বনা দিয়ে পাহাড় সাঁজিয়ে বসে আছে। ইরু আজ কষ্ট লুকিয়ে দ্বিধাহীন ভাবেই হাসতে শিখেছে। আপনি বলেছিলেন-
“ইরু তুমি অনেক ভালো মেয়ে,তোমাকে যে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পাবে সে সত্যিই খুব সৌভাগ্যবান হবে,দেখে নিও”।
ইরু যদি এতই ভালো ছিল,তবে তাকে জীবনসঙ্গিনী করে সেই সৌভাগ্যমান মানুষটা আপনি কেন হতে পারলেন না উকিল সাহেব?উত্তর চাইনা আমার, শুধু বলার ছিল আপনাকে।
আপনি বলেছিলেন-” ইরু কখনো হার মেনে নিও না,চাইলেই সব ইচ্ছের পূর্ণতা মেলেনা”।
উকিল সাহেব-ইরু আজ নিজেকে এতোটাই তৈরী করে নিয়েছে যে হার ও তার সামনে আসতে লজ্জা পায়।তবুও দেখুন, নিয়তির কি খেলা ইরু পৃথিবীর সমস্ত হারের উর্ধ্বে উঠে যাওয়ার পরও,আপনার কাছে হেরে বসে আছে। এই হার যে ইরুকে শক্তি দেয়, ইরুকে লড়াই করার নতুন উদ্যমে উদ্দীপিত করে। আপনি চিন্তা করবেন না উকিল সাহেব-“ইরু হারবে না”।
আবেগের সাথে নিত্য দন্দ্বযুদ্ধ করে হলেও ইরু জিতবে। ইরুকে কে যে আপনার জন্য জিততে হবে!ও যে আপনারি মতোন। ইরু অনেক ভালো আছে উকিল সাহেব,শুধু এই ভালো থাকার মানেটা ইরুর অজানা।ইরু আশা করেনা,ইরুর ভালোবাসা চায় আপনিও সারাজীবন ভালো থাকুন।
ইতি
“ইরু নামের সেই মেয়েটা”