#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
প্রিয় আমি,
জীবনটা কত আজব, তাই না? কত সূক্ষ্ম কৌশলে নির্মমভাবে আমার নিজেকে ভুলিয়ে রাখে। যে আমি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাবত দুনিয়ার সকলকিছু নিয়ে মেতে থাকি, দিনশেষে কি একবারও সেই নিজেকে নিয়ে ভাবি আদৌ?
ক্যাম্পাস থেকে বাসায় এসেছি সেই মার্চে! যে দিপ্তী দিনে একবার বাইরের হাওয়া গায়ে না লাগালে অস্থির হয়ে উঠতো, সেই দিপ্তী কিভাবে আজ ১৩০ দিন চার দেয়ালের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে! এতগুলো দিন বন্দী থেকে থেকে কেমন জানি ডিপ্রেসড হয়ে যাচ্ছি, তাইনা?
ক্যাম্পাসটাকে, ক্যাম্পাসের মানুষগুলোকেও খুব মনে পড়ে! নওরীন আপুর সাথে কারণে-অকারণে ঝগড়া-হাসাহাসি করা, কোনো এক মন খারাপের রাতে লামির সাথে রিকশায় ঘোরা, অসময়ে মুনা-হাফসার সাথে পানিপুরি খাওয়া, অনেক রাতে বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে এম.এইচ. হলের রাস্তাটায় হাঁটতে হাঁটতে গলা-ফাটানো গান গাওয়া, বঙ্গমাতা হলের ৩০৮ নম্বর রুমের রাতভর আড্ডাগুলো- সবকিছু বড্ড মিস করি!
প্রিয় মানুষটার চেহারা দেখি না আজ কতদিন! টারজানের সামনের পিচ ঢালা রাস্তাটা দিয়ে কোনো এক বৃষ্টিস্নাত দিনে তার উষ্ণ হাতটি ধরে না হাঁটার অতৃপ্তি যেন কত কালের!
শান্ত-নিরিবিলি সবুজ পাহাড়ের চূড়ায় উঠে মেঘের রাজ্যে নিজেকে বিলীন করা হয় না কতদিন! কতদিন আকাশ ভরা জোছনার নিচে ফেনীল সমুদ্রের গর্জনে নিজের আত্মাকে সপিনা!
একই শহরে আছি, তবুও অদিতি, তিথি, তমা, প্রমা, মৌ এর সাথে দেখা হয়না আজ কতদিন!
রাজ্যের স্বপ্ন নিয়ে বাঁচা এই চোখ দুটোতে যেন আজ ছানি পড়ে এসেছে। দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিধ্বনিত হয়ে আসা এই কন্ঠ আজ যেন বাকরুদ্ধ!
কিন্তু এতটা ভেঙ্গে পড়লে চলবে কিভাবে শুনি? ভয়ার্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতের পরই তো আসে নতুন দিনের আভা! আর তো মাত্র ক’টা দিন! পৃথিবী সুস্থ হয়ে উঠলেই আবার সবার সাথে দেখা হবে, বহুদূরে কোথাও ট্যুরে যাওয়া হবে। আবার মেতে উঠা হবে এই নিষ্ঠুর জীবনকে কাঁচকলা দেখিয়ে। আর ততদিন পর্যন্ত এযাত্রায় সপরিবারে বেঁচে থাকার যুদ্ধুটাকে তো চালিয়ে যেতে হবে, তাইনা?
ইতি,
আমার আমি।