প্রিয় আব্বু – Muziba Samihat

0
487

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০

প্রিয় আব্বু!

আমার হৃদয় জ্বলছে জলন্ত মোমের ন্যায়। জ্বলতে জ্বলতে একসময় কয়লায় পরিণত হচ্ছে। আবার ব্যস্ত শহরের কোলাহলে কিছুটা নিভে যাচ্ছে। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ পাড়ি দিচ্ছে এক প্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে। আমি আজ একা হয়ে এই সমুদ্রবিলাস করছি। এখানে নেই কোনো আনন্দ, নেই কোনো অনুভুতি। শুধুই আছে অপলক দৃষ্টি। কোথায় যেন একনজরে তাকিয়ে আছি। সমুদ্রে নাকি তুমি হীনা ভাবনায়? ঠিক জানি না।
আব্বু! জানি না কেমন আছ সেই অচেনা দূর প্রদেশে?
কতটা দিবস আজ তুমিহীনা!
ভাবনার আড়ালে মনে হচ্ছে ; এই বুঝি তুমি আমার পাশে বসে আছ। হালকা কাশি দিয়ে আমাকে আদুরী বলে গানের সুর তুলছ। আমি তাকাতেই তুমি হাওয়া হয়ে যাও। আমার সাথে এ কেমন লুকোচুরি আব্বু? এ কেমন লুকোচুরি!
নির্ঘুম শত শত মাইল দূর হতে কে বাজায় ভায়োলিন ক্লিষ্ট করুণ বেহালার সুর?
তুমি?
এটা কি তুমিই আব্বু?
তুমি যদি নাই বা হও; তাহলে কেন আমার বারংবার মনে হচ্ছে আদুরী বলে প্রবল গতিতে কেউ সুর তুলছে চিরচেনা একটি গানের। আমি সেই সুরকেন্দ্র তওয়াফ করতে থাকি। আব্বু! তোমার একটুখানি পরশ পাবার আশায়।

আব্বু! তুমি হীনা এই ব্যস্ত শহরে আমার প্রতিটি রজনী কাটছে গম্ভীরমুখে। সকাল-বিকাল-সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতের বিছানায় বেদনাতুর মন শোয়ালে ক্লান্ত পিঠ ঠেকালেই আব্বু তোমায় স্বপ্নে দেখি।
স্বপ্নেই তোমার সাথে প্রতিত্তোর করি –
আমি ভালো আছি আব্বু। তুমি আছ তো আমার কাছে আব্বু? কত কাছে? এই স্পর্শ, এই হাত কি সত্যিকার তোমার স্পর্শ আব্বু?
তুমি আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার মুখ গুমরো করে ফিরে যাও সেই অচেনা প্রদেশে। যেখানে এই আমিটার প্রবেশের অনুমতি নাই। আমার অভিমান হয় ভীষণ। সেদিন আর খাওয়া হয় না। তুমি জানতে আব্বু! কেউ আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চলে গেলে আমি তাদের খুব করে বকি। আর তুমি এজন্যই আমাকে বকতাড়ুয়া বলে ডাকতে। তাহলে কেন আজ তুমি মুখগুমরে বসে থাক? কেন আমার প্রশ্নের উত্তর দাওনা?
আব্বু ও আব্বু! তুমি কেন আসো না ফিরে?
কতদিন রঙিন ঘুড়ি আকাশে উড়ানো হয় না। জানো আব্বু! সেই বকুল তলায় নাটাই হাতে তোমার আদুরী আজও অপেক্ষা করে তুমি আসবে বলে। বড় ফাঁকি দিচ্ছ আমার সাথে।
তুমি আবার ফিরে আস। কথা দিচ্ছি আমি একটুও বকাবকি করবো না। জারুলতলায় বসে দু’জনে রঙিন রঙিন গল্প করব। ডায়েরি হাতে নিয়ে এলোমেলো শব্দ লিখে দু’জনেই হাসিতে মেতে উঠবো। আর আমাদের হাসাহাসি দেখে বৃদ্ধ রহিমকাকু পাগলবসুর দল বলে আখ্যায়িত করবে। হাহা কি মজাটাই না হবে তখন!

আব্বুরে কতদিন তোমাকে স্পর্শ করি না। অথচ ভালোবাসি, বলা হয় না। অথচ তোমাকে স্মরণ করতে করতে নিষ্ঠুর ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়, তবুও তুমি আসো না। বড় নিষ্ঠুর হয়ে গেছ যে তুমি!
বিবেকের জানালায় তোমার এই নিষ্ঠুরতার প্রশ্নেরা ঝাপটা দিয়ে যায়। মনে চায়…
এই সোনালী রোদ্দুর পেরিয়ে চলে যায় সেখানে; যেখানে তুমি চুপিচুপি আমার সাথে লুকোচুরি খেলেই যাচ্ছ। তোমাকে ধরে কান টেনে দিয়ে বলব, এই যে বুড়োর ছেলে আমাকে কেন এত জ্বালাচ্ছ?
কিন্তু তা আর বলা হবে না। তোমার সাথে অভিমানে আমার দিনের প্রভাত কেটে যায় । বিকেলবেলা ডায়েরি হাতে নদীপাড়ে গা এলিয়ে বসি ঠিক তোমার মত করে। তোমায় নিয়ে লিখতে বসি। আমার কলমের কালি শেষ হয়ে যায়। তবুও আমার অভিযোগের বাণী শেষ হয় না।
জানো আব্বু! তুমি হীনা এই শহরে অনেক মানুষ আছে। তবুও এরা আমার বন্ধু হয় না। বিশ্বাস জন্মে না। এই শহর অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে তুমি নাই বলে। আমাকে নিয়ে যাও আব্বু তোমার শহরে। আমি চেয়ে আছি তোমার পথপানে। অপেক্ষায় আছি আমি, সেই চিরচেনা অবারিত প্রান্তর অভিমুখে তুমি আসবে বলে।
তুমি এসে ছুঁয়ে দাও কপোল, নিয়ে যাও তোমার সেই অচেনা প্রদেশে। ভালো থাকব আমরা দু’জন। হাসিতে আবারো মেতে উঠবো।
আব্বুরে! “এই ব্যস্ত শহরে তুমি হীনতায় বারংবার তোমার সেই একটি বাক্য মনে পড়ে; “দূর ফেলে আসা দিনে ভালো থেকো স্বপ্নের স্মৃতিরা।”

ইতি
তোমারই বকতাড়ুয়া আদুরী।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে