#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
~চিঠিঃ- ০৭
প্রিয় অর্ধাঙ্গিনী,
কেমন আছো তুমি আমাদের কে ছেড়ে? তোমাকে প্রতিমুহূর্তে মিস করছি, আচ্ছা- অভিমানের পালা ভুলে আমাকে কি একটু মনে করার সময় তোমার হচ্ছে? নাকি আজো তোমার অভিমান তেমনটাই রয়ে গেছে?
মনেপড়ে তোমার কলেজ ক্যাম্পাসের সেই দিনগুলো? আমাদের সেই যে প্রথম দেখা হয়েছিল, সিনেম্যাটিক অভিজ্ঞতা ছিল একেবারেই। বন্ধুর সাথে ক্যাম্পাস ঘুরতে গিয়ে তোমার নয়নজোড়া তে আঁটকে গেলাম আমি, সেই যে আটকে গেলাম আজ অব্দি সেই মায়াবী বাঁধন থেকে নিজেকে এক মুহুর্তের জন্যও সরাতে পারিনি। আমার চোখে চোখ পড়তেই তুমি বুঝে নিলে আমি তোমাকে দেখছি, সেই যে লজ্জায় তোমার মাথা নিচু করে নেওয়ার দৃশ্যটি আজো আমি বন্দি করে রেখেছি আমার হৃদয়ের ক্যানভাসে। তারপরই শুরু হলো আমার নিয়মিত তোমাদের ক্যাম্পাসে যাওয়া, তোমার ব্যাপারে সব খোঁজ খবর ও জোগাড় করে ফেললাম কয়েক দিনের মাথায়।
রোজ প্রস্তুতি নিয়ে যেতাম তোমাকে নিজের মনের কথা বলার জন্য, তবে বলবো বলবো করে সেটা বরাবরের মতো না বলাই রয়ে যেত। তোমাকে দূর থেকে দেখলে সাহস নিয়ে বুক ফুলিয়ে দাড়াতাম, যত তুমি আমার নিকটে এগিয়ে আসতে, তত আমার সাহস একটু একটু করে কমতে থাকতো। আমার সামনে তুমি যখনই হুটহাট করে চলে আসতে, আমি যেন লজ্জাবতী গাছের পাতার মতো চুপসে যেতাম। কিছু বলার সাহস তো দুর, তোমার সমুখে দাড়ালেই হাটু কাঁপা শুরু হয়ে যেত।
তোমার ফ্রেন্ড সারকেলের এক কাছের বান্ধবীকে হাত করে জেনে নিলাম তোমার পছন্দের তালিকা। খুব অবাক হয়েছিলাম জানো- এতো মিষ্টি একটা মেয়ে তাও আবার কাঠগোলাপ পছন্দ করোনা এটা শুনে! হলুদ গোলাপ তোমার প্রিয় ফুলের তালিকায় সবার উপরে, এটা শোনার পর একটু হিমুর মতো ধারণা করার চেষ্টা করেছিলাম হয়তো তুমিও আমার মতো হুমায়ুন স্যার এর ভক্ত। কিন্তু না, আমার সে ধারণা একেবারেই সঠিক ছিলনা।
হুমায়ুন স্যার তোমার পছন্দের তালিকায় থাকলেও তুমি রবী ঠাকুরের একজন বিশাল ভক্ত শুনে কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম। আরো অবাক হয়েছিলাম যখন জানলাম চোখের বালি উপন্যাসের বিহারীলাল কে তুমি স্বপ্নের নায়কের আসনে বসিয়ে রেখেছো। বেশ ভয় পেয়েছিলাম! আমি যে বিহারীলালের মতো ছিলাম না, তোমার থেকে না শুনবো এটা ভাবতেই শিউরে উঠছিলো আমার ভেতরটা। সকল ভয়ের মাঝেও কোথাও জানো একটু বেশিই ভালোলাগা কাজ করছিলো এটা ভেবে, যাকে আমি মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবেসে আসছি সেই মেয়েটা অন্য সকলের মতো না, তার পছন্দের তালিকা যতটা ইউনিক মেয়েটার ভালোবাসা না জানি তাহলে কতটা অন্যরকম হবে।
তারপরই শুরু হলো তোমার দৃষ্টি আকর্ষণের প্রচেষ্টা। তিন মাস একা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার পর, অবশেষে আমি তোমাকে একগুচ্ছ হলুদ গোলাপ সমেত প্রথম চিঠিটা পাঠিয়ে দিলাম। কি আসবে তোমার জবাব? আদৌ কি আমার ভালোবাসা পূর্ণতার মুখ দেখতে পাবে? এইসব নানা ধরনের চিন্তার ভীড়ে সন্ধ্যাবেলা ১০২° জ্বর এসে গেছিল আমার। পরদিন জ্বর গায়ে নিয়েই গেলাম তোমার ক্যাম্পাসে, হৃদয় সেদিন এতো দ্রুত বিট করছিলো ভাবতেও পারবেনা তুমি। অপেক্ষার প্রহর যেন শেষই হচ্ছিলো না আমার। একসময় তো ভেবেই নিলাম তোমাকে বুঝি আর নিজের করে পাওয়া হলোনা! কিন্তু না, আমার সকল চিন্তার জট কে মস্তিষ্ক থেকে বিদেয় করিয়ে তুমি এসে দাড়ালে আমার সমুখে।
বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা- আমি যেন তখন কোন অজানাই পাড়ি দিয়েছিলাম তোমাকে নিয়ে, কয়েক সেকেন্ড এর ব্যাবধানে তোমার সাথে হারিয়ে গেছিলাম দূর অজানায়। হঠাৎ করেই তোমার ডাকে সম্বিত ফিরে পেলাম, আমার সকল ভয়ের অবসান ঘটিয়ে তুমি আমাকে তোমার মনের কথাগুলো বলে ফেললে এলেমেলো ভাবে। তোমার কথার ধরণেই বুঝেছিলাম আমার মতো তোমার জন্যও সে কাজ ছিল একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা।
এরপরই তো শুরু হলো আমাদের সেই দুষ্ট-মিষ্টি প্রেমের অলিখিত উপন্যাসের। রোজ ক্যাম্পাসে দেখা করা, নদীর পাড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আমার কাঁধে মাথা রেখে, তোমার বলে চলা গল্প শুনে বিকেল কাটিয়ে দেওয়া, যেন হয়ে গেল নিত্য দিনের অভ্যাস। সময় যতটা গড়াতে থাকলো আমাদের ভালোবাসাও ততটাই গাঢ়ত্বে রুপ লাভ করছিলো। একটা সময় সেই দিনটিও আমাদের জীবনে এসে উঁকি দিলো, যেদিন আমি তোমার উপরে আমার অধিকার পেলাম, আকান্তই তুমি আমার হয়ে গেলে।
মিষ্টি সংসারের স্বপ্ন দেখতাম রোজ, সেরকমই গল্পের মতোই সেজে উঠলো তোমার আমার টোনাটুনির সংসার। খুনসুটি, ঝগড়া, কখনো মান অভিমানের পালায় রাতভর কেউ কারো সাথে কথা না বলা, আবার সকাল হলেই এক কাপ কফিতে দুজনের ভাগ বসানোর পাল্লাতে সকল কটাক্ষ ক্ষণের অবসান। সময়গুলো এতোটাই বিস্তৃত ভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলো যেন আমরা বুঝতেও পারছিলাম না। তারপরই সেই সুখের ক্ষণ উপস্থিত হলো, তোমার কোল আলো করে আমাদের অংশ আমাদের সোনাবাবুটা এই পৃথিবীর বুকে কান্নাধ্বনিতে মুখরিত করে তুললো সবকিছু ।
সবসময় চেষ্টা করতাম তোমাদের কে কিভাবে সুখী রাখতে পারি, তার জন্য কাজকে এতোটাই বেশি গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে ফেলেছিলাম যে, আমি আমার সোনার সংসারকে ভুলতে বসেছিলাম প্রায়। এমন ও দিন চলে এলো আমি তোমাকে চোখের দেখাও দেখতে পেতাম না। হয়তো বা কাজের মধ্যে ডুবে থাকতাম নয়তো, কাজের চাপকে একটু বিরতি দিতে ঘুমের দেশে পাড়ি দিতাম।
এতোগুলো ব্যস্ততার মাঝে আমি বুঝতেই পারিনি কখন একটু একটু করে তুমি আমার থেকে দূরে সরে গিয়েছো। বুঝতে পারিনি যে মেয়েটার সব কাজে আমাকে লাগতো,সে মেয়েটা আমাকে ছাড়া সকল কাজ একা কিভাবে করবে! দেখতে পারিনি, যে মেয়েটার প্যারাসিটামল খেতে গিয়ে তিনবার বিষম লেগে যেত, সেই মেয়েটার ঔষধের কৌটোটা ভরে গেছে! বুঝতে পারিনি আমি ঐ কোমল হৃদয়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে, আর সে ক্ষত হয়তো আমারই অবহেলার ফলে হয়েছিল।
সারাজীবন আমাকে আগলে রাখবে কথা দেওয়া সেই তুমিই যে আমাকে এই সংসার নামের অথৈ সমুদ্রে একা ভাসিয়ে দিয়ে চলে যাবে তা যে আমি কল্পনার চোখেও দেখতে পায়নি! খুব রাগ হয় আজ নিজের উপর তোমার অভিমান ভাঙাতে পারিনি বলে, আমার উপর না হয় তোমার এতো অভিমান জমে আছে তাই কথা বলোনা, কিন্তু আমাদের পিচ্চিটা! ওর জন্যও তো তুমি অভিমান কে ছুটি দিতে পারো নাকি?
জানো তুমি, আজ আমি কাজের ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়েছি, তোমার বিচ্চু ছেলেকে সামলাতেই আমার দিন পার হয়ে যায়। আর বাকি সময়টা তোমার সাথে এই যে খাতা কলমে বসে কথা বলে মনকে সান্ত্বনা দিতে থাকি। যতই অভিমান করে দুরে চলে যাওনা কেন মনকে তো আমার সাথেই জড়িয়ে রাখতে হবে নাকি? তোমার ও মনের উপর একমাত্র অধিকার শুধুই আমার, কারণ তুমি যে আমার অর্ধাঙ্গিনী!
ইতি
“তোমার অযোগ্য সঙ্গী”