প্রিয় অভিমান পর্ব ৬

0
1335

#প্রিয়_অভিমান

পার্ট : ৬

লেখা : নিশাত সিদ্দিকা
.
তাকিয়ে দেখি কাব্য ভাইয়া আমাকে একটা বিরাট বড় পার্লারের সামনে নিয়ে এসেছে ,কিন্তু উনি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন কি করতে চাইছেন উনি আমার সাথে ,
আমি বিস্ফোরিত চোঁখ নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালাম কাব্য ভাইয়ার দিকে,
উনি আমাকে তাকাতে দেখে বলে উঠলেন,
,ভেতরে চলো কাজ আছে ,
উনার কথায় আমার কোনো হেরফের হলো না ,
আমি যে ভাবে ছিলাম সেভাবেই তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম,
আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে তাকতে দেখে কাব্য ভাইয়া আবার বলে উঠলেন,
‘কি হল এভাবে রসগোল্লার মতো চোঁখ বানিয়ে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন,
তারপর ঝুকে আমার কানের কাছে মুখ এনে রসিকতার সুরে বলে উঠলেন,
হাঁটতে পারছো না, পায়ে ব্যাথা করছে, কোলে উঠতে চাও?
সেটা মুখ ফুটে বললেই পারো এতো হেজিটেট
করছো কেনো,
আমি তো তোমার নিজের মানুষই,
আমার কাছে এতো লজ্জা কিসের,
বলেই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মিটমিটিয়ে হাসতে লাগলেন,
উনার কথা শুনে আমার মেজাজ গরম হয়ে গেল ,চোঁখ রাঙিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
‘আমি এখানের ভিতরে কেন যাবো,আমাকে বাসায় না নিয়ে গিয়ে তুমি এখানে কেন নিয়ে আসলে ,
তোমার প্রয়োজন হলে তুমি যাও,
আমার চোঁখ রাঙ্গানো দেখে উনি রেগে গিয়ে বলে উঠলেন,
একদম আমাকে চোঁখ রাঙাবে না ,আমি কিন্তু ভুলে যাবো আমরা পাবলিক প্লেসে আছি,
উনার কথা শুনে মনের সব সাহস বেলুনের মতো চুপসে গেল,
আমি কিছু না বলে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম,
আমাকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে উনি স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠলেন,
তোমাকে এখানে একটা জরুরি কাজের জন্য নিয়ে এসেছি,
আমি অবাক হায়ে উনার মুখের মুখের দিকে তাকিয়ে শুনতে লাগলাম উনার কথা,
কাব্য ভাইয়া থেমে আবার বলে উঠলেন,
আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে একটা নাটক বানাচ্ছি সেখানে একটা কনের রুল আছে ,যাকে এই রুলটা প্লে করতে দিয়েছিলাম সে আজ জানিয়েছে যে সে এটা করতে পারবে না,এই অল্প সময়ে এখন হিরইন পাবো কোথায় তাই এই রুলটা তোমাকে প্লে করতে হবে,তোমাকে কনে সাজানোর জন্য এখানে নিয়ে এসেছি।
উনার কথা শুনে আসমান ভেঙে আমার মাথায় পরলো,বিচলিত মুখে উনার দিকে তাকালাম,
আমার তাকানো দেখে কাব্য ভাইয়া বলে উঠলেন,
ভয় পাবার কোনো কারন নেই মাএ দশ মিনিটের একটা শট আমি কিন্তু তোমাকে ভার্সিটির অনুষ্ঠানে নাটকে অংশগ্রহন করতে দেখেছি,
তুমি যদি আমার এই উপকারটা করো তাহলে আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আর কখন তোমার ভার্সিটিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাকবো না,
উনার কথা গুলো আমি এতক্ষন নিরব স্রোতার মতো শুনলাম,
ভেবে পাচ্ছি না কি বলবো ,এই কাব্য ভাইয়াটা বারবার কেন যে আমায় ফাসিয়ে দেয়,
প্যারা দেওয়ার জন্য উনি কি পৃথিবীতে আর কাউকে পান না শুধু আমাকেই পান।
আমি যে উনার কোন জন্মের শত্রু তা উনিই ভালো জানেন।
আমাকে কিছু না বলতে দেখে উনি অসহায় মুখে আবার বলে উঠলেন,
প্লিজ সুহা রাজি হয়ে যাও !! এতে কিন্তু তোমার ও লাভ আছে।
উনার অসহায় মুখ দেখে আমার খুব খারাপ লাগল,
আহারে বেচারা হয়তো সত্যি বিপদে পরেছে আর তাছাড়া এটা করলে আমিও উনার হাত থেকে বেঁচে যাবো,
উনাদের বাড়িতে তো আর জীবনেও আসবো না,আর উনি তো আমাকে কথা দিচ্ছেন ভার্সিটিতে ও আর যাবেন না।
তাহলে তো এই রাগী রাক্ষসটার মুখমুখি আমাকে আর কখনও হতে হবে না।
এই একটা সুযোগ আছে নিজেকে বাঁচানোর ।
বুদ্ধিমানেরাই তো সুযোগকে কাজে লাগায়,
আর আমি একজন বুদ্ধিমতি ,আমারও উচিত সুযোগকে কাজে লাগানো।
.
আমি উনার দিকে তাকিয়ে ভাব নিয়ে বলে উঠলাম,
আমি রাজি তোমার কথায়,তুমি কিন্তু তোমার কথা রেখো।
আমার কথা শুনে উনি দুর্বোধ্য হেসে মাথা নাড়ালেন,
.
ভেতরে বসে আছি দুই তিন জন মেয়ে মিলে আমাকে সাজাচ্ছে ,একদম নব বধূর সাজে,
ভীষন বিরক্ত লাগছে তবুও সব কিছু নিরবে সহ্য করছি ,এটা ভেবে মনকে শান্তনা দিচ্ছি আজকেই শেষ এর পর থেকে এই অসহ্য প্রাণিটাকে কখনও দেখতে হবে না,
আমাকে আর কোনো ভাবেই বিরক্ত করতে পারবে না।
মেয়ে গুলো অনেক যত্ন নিয়ে সাবধানে আমাকে সাঁজাচ্ছে দেখে মনে হচ্ছে একটু ভুল হলে কেউ ওদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেবে।
আমি কাঠের পুতুলের মতো বসে আছি ,
এই সাঁজগুজের প্রতি আমার কোনো আগ্রহই লাগছে না।
কাব্য ভাইয়া আমার জন্য বাইরের রুমে ওয়েট করছেন।
মন চাইছে গিয়ে গলা টিপে উনাকে মেরে ফেলি।
.
টানা এক ঘন্টা পর আমাকে সাজানো শেষ হলো ,
মেয়ে গুলো আমাকে সাঁজিয়ে দিয়ে বলতে লাগল,
‘আপনাকে কোনো অপ্সরির থেকে কোনো অংশে কম লাগছে না,
আপনাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে,
যে আপনাকে চয়েজ করছে এবং আপনার সাঁজগুজের জন্য এসব জিনিস কিনেছে তার পচ্ছন্দ সত্যি অসাধারন এবং প্রশংসার যোগ্য।
ওদের কথায় আমি কিছু বললাম না শুধু একটু মৃদু হাসলাম।
আয়নাতে নিজেকে দেখে নিজেই চিনতে পারছি না,
বাহ্! বধূবেশে আমায় তো অন্য রকমের সুন্দর লাগছে,
নিজের সৌন্দর্য দেখে নিজেই আশ্চার্য্য হলাম,
বধূবেশে হয়তো সব মেয়েদেরই এমন সুন্দর লাগে,
তাই হয়তো আমাকেও এমন অবাক করা সুন্দর লাগছে।
ভারী গয়না ,গাঢ় খয়েরি রংয়ে লেহেঙ্গা আর সাঁজগুজে মনে হচ্ছে কোনো রুপকাথার রাজ্যের রানী ।
.
বাইরের রুমে এসে দেখি কাব্য ভাইয়া আমার লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচিং করে গাঢ় খয়েরি রংয়ের পান্জাবী পরে চিন্তিত মুখ নিয়ে বসে আছেন,
খয়েরি পান্জাবীতে উনাকে ভীষন সুদর্শন লাগছে ,
ফর্সা মুখ, গালে কুঁচা কুঁচা চাপ দাঁড়ী ,ঘন ব্রু যুগলের নিচে গভীর এক জোরা চোঁখ।
বেবি পিংক কালারের এক জোরা ঠোঁট সব মিলিয়ে অসাধার একজন পুরুষ ।
পার্লারে কর্মরত কয়েক জন মেয়ে হা হয়ে কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,আরো অনেকে আড় চোঁখে বারবার তাকাচ্ছে।
কাব্য ভাইয়ার এমন সাঁজগুজের মানে আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না,
আমাকে দেখা মাএ উনি দাঁড়িয়ে গেলেন ,
কাব্য ভাইয়া অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন,
.
কাব্য সুহা কে দেখে হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য হয়ে পরল,
ওর মনে হচ্ছে সয়ং কোনো পরি আকাশ থেকে নেমে ওর সামনে দাড়িয়ে আছে।
ওর মিষ্টি পরিটাকে বধূবেশে ওর কল্পনার চাইতেও বেশী সুন্দর লাগবে নিজেই ভাবতে পারে নি।
সুহার এমন সৌন্দর্য দেখে বিভোর হয়ে আশেপাশের সব কিছু ভুলে গিয়ে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে সুহার দিকে তাকিয়ে রইল,
কাব্য যেন চোঁখের পলক ফেলতে ও ভুলে গেল।
.
উনার এমন তাকানো দেখে আমার অস্বস্তি লাগল,
আমি উনার একটু কাছে গিয়ে হালকা কেঁশে উঠালাম,
আমার কাঁশির শব্দ শুনে উনার ধ্যান ভাঁঙ্গল,
উনি হকচকিয়ে উঠে একবার নিচের দিকে তাকিয়ে আবার ব্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন,
তখন আমি উনার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে সন্দেহের চোঁখ নিয়ে বলে উঠালাম ,
‘তুমি এভাবে সেঁজেছো কোন মতলবে,
আমার প্রশ্ন শুনে উনি ব্রু নাচিয়ে জবাব দিলেন,
নাটকের একটা ইম্পর্ট্যান্ট ক্যারেক্টার আমাকে করতে হবে,
অভিনয় কি শুধু তুমি একা জান নাকি আমিও যে অভিনয়ে পারদর্শি সেটা আজ তোমাকে দেখিয়ে দেবো।
আমি উনার কথায় বিস্ময় নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলাম,
বাবাহ্ কাব্য ভাইয়া নাটকও বানাচ্ছেন আবার সেই নাটকে বিশেষ চরিএে অভিনয় ও করছেন উনার কি ট্যালেন্ট মাইরি।(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে