Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"প্রিয় অভিমান পর্ব-২০+২১

প্রিয় অভিমান পর্ব-২০+২১

#প্রিয়_অভিমান 🥀🥀
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-২০|

আহিল রেস্টুরেন্টে বসে দু কাপ কফি শেষ করে তৃতীয় বারের মতো কফিতে চামচ নাড়ছে। আর বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। অধীর আগ্রহে রুহানির জন্য অপেক্ষা করছে। আহিল চামচ রেখে হাত ঘড়িতে সময় দেখল অলরেডি ৩৫ মিনিট চলে গেছে কিন্তু রুহানির আসার নাম নেই। কল করেও পাচ্ছে না। ফোন সুইচড অফ বলছে।

আহিল আবারও রুহানির নাম্বারে ডায়েল করল। কিন্তু কর্কশ কন্ঠে একজন মহিলা বারবার একি কথা বলায় আহিল বেশ বিরক্ত হলো।
রুহানি দরজার সামনে এসেই বরাবর টেবিলে আহিলকে দেখতে পেল। দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে ভেতরে গেল৷ রুহানি হন্তদন্ত হয়ে এমন ভাবে ভেতরে ঢুকল যেন এক প্রকার দৌড়ে এসেছে। আহিল রুহানিকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল।

রুহানি চেয়ার টেনে বসে নেকামো করে বলল,
“সরি সরি একটু লেট হয়ে গেল। আসলে এত জ্যাম ছিল।”

আহিল মুচকি হেসে বলল,
“ইট’স ওকে। তেমন লেট হয় নি।”

রুহানি মনে মনে বলছে,”প্রায় চল্লিশ মিনিট লেট করেছি তবুও বলছে তেমন লেট হয় নি। ন্যাকা।”

“কি খাবে বলো?”

“আমার কিছু খাওয়ার ইচ্ছে নেই। তবে কফি খেতে পারি।”

“আচ্ছা, অর্ডার করছি।”
আহিল কফির অর্ডার করে দিল। রুহানি চুপ করে বসে আছে। আহিল ওর দিকে চেয়ে আছে। রুহানির কেমন অস্বস্তি লাগছে তাই মাথা নিচু করে বসে আছে। নখ দিয়ে নখ খুটছে। দুজনেই চুপ।

আহিল নীরবতা ভেঙে বলল,
“তুমি কি আমার উপর রেগে আছো?”

রুহানি চোখ তুলে বলল,
“কেন বলুন তো?”

আহিল ছোট্ট করে শ্বাস ফেলে বলল,
“আমি জানি তুমি আমার উপর অসন্তুষ্ট। এই যে আমার সাথে ঠিক মতো কথা বলছো না। ওইদিন তোমাদের বাড়িতে গেলাম সেদিনও কথা বললে না। আমি তোমাদের বাড়িতে গিয়েছি কিন্তু তোমার মধ্যে কোন উচ্ছলতা নেই, চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেলে তারপর আর বের হলে না?”

রুহানি তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
“উচ্ছলতা প্রকাশ করার কি কথা ছিল? উচ্ছলতা প্রকাশ করার মতো কি করেছেন?”

আহিল থমকে গেল। তারপর নিজেকে সামলে বলল,
“তুমি, তোমার পরিবার অনেক খারাপ সিচুয়েশনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছো। সে সময় আমার তোমার পাশে থাকা উচিত ছিল কিন্তু আমি থাকতে পারি নি। রুহানি আমি এসবের কিছুই জানতে পারি নি। আমি যখন জানতে পেরেছি তখন জাস্ট স্তব্ধ হয়ে গেছি। কিছু ভাবতে পারছিলাম না। অনেক কষ্ট হচ্ছিল, আপসোস হচ্ছিল। তবুও তোমার আমার উপর রাগ-অভিমান করা স্বাভাবিক।”

“আমি আপনার উপর রাগ-অভিমান কিছুই করি নি। যখন আমাদের নিজের লোক পেছনে থেকে ছুরি মেরেছে সেখানে তো আপনার কিংবা আপনার পরিবারের সাথে আমাদের তেমন সম্পর্ক গড়ে উঠে নি। হ্যা একটা সম্পর্ক গড়ার কথা ছিল কিন্তু হয় নি।”

“হয়নি হবে। রুহানি, আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব সব ঠিক করার। আমার উপর ভরসা রাখো।”
আহিলের কথা শেষ হতেই কফি চলে এলো। রুহানি কোন উত্তর দিতে পারল না।

রুহানি কফিটা হাতে নিয়ে এক চুমুক দিল। অপেক্ষা করছে সঠিক সময়ের।
রুহানি কিছু বলতে চাইছে সেটা আহিল খেয়াল করছে।
“রুহানি যা বলতে চাও নির্দ্বিধায় বলতে পারো।”

রুহানি আহিলের চোখের দিকে তাকাল। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আমি এই কয়েক মাসে জীবনের অনেক কঠিন সময় দেখেছি। জীবন কি বুঝতে পেরেছি। যা কখনো করি নি তাই করেছি। ভেঙে চুরমার হয়ে গেছি। এতটা খন্ড তৈরি হয়েছে নিজেকে খুঁজে পাই নি। পুরনো রুহানি কোথাও হারিয়ে গেছে। সেই আমি আর নেই। তাই আমার স্বপ্নগুলোও আগের মতো নেই। আমার সবটা জুড়ে এখন আমার পরিবার। তাই আমি বিয়ে করতে চাই না।”

রুহানির শেষ লাইন শুনে আহিল স্তব্ধ হয়ে রইল। রুহানি চোখ তুলে আহিলের দিকে তাকাল। আহিলের চোখগুলোও যেন থমকে গেছে।

আহিল নিজেকে স্বাভাবিক করে ঢোক গিলে বলল,
“তুমি যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছো আর এখন যে পরিস্থিতিতে আছো তাতে তোমার এমন ভাবনা স্বাভাবিক কিন্তু এখানে আমার দোষটা কোথায়? রুহানি তুমি বর্তমান অবস্থা ভাবছো, ভবিষ্যত ভাবছো না। সব সময় পরিস্থিতি এক থাকবে না। তাই প্লিজ এসব বলো না। আমার বাবা-মা খুব শীঘ্রই তোমাদের বাসায় যাবে বিয়ের তারিখ দিতে।”

.

আহিল রুহানিকে গেটের সামনে নামিয়ে দিতেই রুহানি ভেতরে গিয়ে দাঁড়াল। আহিল যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে রুহানি বাইরে বের হলো। রুহানির বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করছে না। বাড়িতে গেলেই হাজারো প্রশ্ন করবে যে কারণে রুহানির বিরক্ত লাগছে। এতশত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে চায় না।
রুহানি রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। সন্ধ্যা নেমে আসছে তাই রাস্তা অন্য সময়ের চেয়ে যথেষ্ট নীরব। হালকা বাতাস বইছে। রুহানির জামার সাথে খোলা চুলগুলো উড়ছে। রুহানি চুল বেঁধে নিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটছে।
মানুষের কিছু কষ্ট থাকে, যা কাউকে বলা যায় না, বললেও বুঝে না। সে কষ্টগুলো বুকের ভেতর চেপে রাখতে হয়। তা একান্তই ব্যক্তিগত কষ্ট। রুহানি যেন সে কষ্টগুলোই স্নিগ্ধ বাতাসের সাথে উড়িয়ে দিচ্ছে।
রুহানি ফুটপাতের ওপর গিয়ে বসল। আনমনে কিছু ভাবছে। আহিলকে বিয়ে করার ব্যাপারটা ওর মন মানছে না। রুহানি একা একা বসে আছে। সময় সময়ের মতো বয়ে চলেছে। হটাৎ পায়ের শব্দ পেয়ে হুড়মুড়িয়ে দাঁড়িয়ে গেল ও।

ফালাক চোখ লাল করে দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখগুলো যেন জ্বলন্ত আগুনের লেলিহান শিখা। চুলগুলো এলোমেলো। কেমন বিধ্বস্ত লাগছে৷ ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। মনে হচ্ছে ওর সামনে ওর চিরশত্রু দাঁড়িয়ে আছে। যাকে খুন করতে এসেছে।

রুহানি ফালাকের অবস্থা দেখে ভেতরে ভেতরে ভয় পেলেও দু পা এগিয়ে জিজ্ঞেস করতে গেলে কি হয়েছে কিন্তু তার আগেই ফালাক রুহানির কপালে পিস্তল ঠেকাল। রুহানি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। নড়তে পারছে না। কিছু বলতেও পারছে না। কথাগুলো গলায় এসে আঁটকে আছে। বের হচ্ছে না। শুধু ঢোক গিলছে। কপালে চিকন ঘামের রেখা ফুটে উঠেছে। চোখ বন্ধ করে নিল।

ফালাক রুহানির কপালে আরেকটু শক্ত করে ধরে ভাঙা গলায় বলল,
“কেন রুহানি, কেন? এত বড় ধোঁকা কেন দিলে? আমার অপরাধটা কোথায় ছিল?”

রুহানি স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে কাঁপা গলায় বলল,
“কি করেছি আমি?”

ফালাক রুহানির কথা শুনে ক্ষেপে গিয়ে ওকে রাস্তার ধারের দেয়ালে চেপে ধরে বলল,
“আবার বলছো কি করেছো? তুমি জানো না কি করেছো? তুমি কি ভেবেছো আমি তোমার কোনো খোঁজ রাখি না?”

রুহানির তখন মাথায় একটা কথায় এলো ফালাক হয়তো আহিলের কথা জেনে গেছে।

“আমাকে কুকুরের মতো তোমার পেছনে ঘুরিয়েছো। কাউকে কখনও ভালোবাসবে না, বিয়ে করবে না এসব বলে এভয়েড করেছো। আমি সারাক্ষণ চেষ্টা করে গেছি তোমার মনে আমার জন্য অনুভূতি তৈরি করার জন্য। আর তুমি তলে তলে অন্য একজনকে নিয়ে সংসার গড়ার স্বপ্ন বুনে যাচ্ছো? কেন করলে এটা তুমি? তুমি যদি বলতে ফালাক আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি, বিয়ে করব তাহলে কষ্ট হলেও মেনে নিতাম কিন্তু তুমি এতদিন আমার সাথে যা করলে তা আমি কি করে ভুলব? তোমার প্রতি রোজ একটু একটু যে ভালোবাসা বেড়েছে তার কি করব?”

ফালাক কাঁদতে কাঁদতে রুহানির কপাল থেকে পিস্তল সরিয়ে নিল। রুহানি চোখ খুলে ফালাকের দিকে তাকাল। ফালাক চোখের পানি মুছছে।
“ফালাক আমি মিথ্যা কিছু বলি নি। তখন ওর সাথে আমার কোন সম্পর্ক ছিল না। আর এখনো নেই। আহিলের সাথে ফ্যামিলি থেকে বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে।”

ফালাক রুহানির দিকে চেয়ে শক্ত কন্ঠে বলল,
“মানলাম তখন কিছু ছিল না। কিন্তু বলেছিলে তো বিয়ে করবে না কোনদিন। তাহলে এখন? এখন কেন ফ্যামিলির কথায় বিয়ে করতে রাজি হলে? আমি তো তোমাকে বিয়ের কথাই বলেছিলাম তখন আমাকে কেন রিজেক্ট করলে? উত্তর দেও রুহানি।”

রুহানি মাথা নিচু করে বলল,
“বিয়ে তো আমি এখনো করতে চাই না কিন্তু ফ্যামিলির কথা ভেবে হয়তো বিয়েটা আমাকে করতে হবে।”

ফালাক রুহানির কথা শুনে হেসে ফেলল। আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে হাসছে। রুহানি বিস্ময় নিয়ে ফালাকের দিকে চেয়ে আছে।
ফালাক হাসি থামিয়ে বলল,
“আহিল! নামকরা ব্যবসায়ী। একবার বিয়ে করে নিলে তোমার পাশাপাশি তোমার ফ্যামিলির লাইফ সেট। তাই তো তোমার আর তোমার ফ্যামিলির বিয়ের জন্য এত তোরজোর। টাকার জন্য? সুখ-শান্তির জন্য? আত্মসম্মান নিয়ে না বড্ড বড়াই করতে? আজ কি হলো রুহানি? টাকার কাছে হেরে গেল তোমার আত্মসম্মান? যদি টাকাই মেইন ইস্যু হয় তবে আমাকে বলতে রুহানি। তোমার জন্য সব ছেড়ে দিতাম।”

“ফালাক, তুমি এসব কথা কি করে বলছো? টাকার কাছে আমি নিজেকে বিক্রি করে দিচ্ছি?”

ফালাক চেঁচিয়ে বলল,
“হ্যাঁ, টাকার কাছে তুমি নিজেকে বিক্রি করে দিয়েছো। টাকার জন্য তুমি হুট করে বিয়ের প্রতি পজেটিভ ধারণা এনে ফেলেছো ভাবা যায়? তোমাকে আমি সবার চেয়ে আলাদা ভেবেছিলাম বাট তুমি টাকার জন্য যেকোনো কাজ করতে পারো। হোটেলে গিয়ে নাচতে পারো, কারো সাথে থাকতেও পারো।”

রুহানি ফালাকের কথা শুনে চোখ বন্ধ করে নিল। ওর কান ঝিম ধরে যাচ্ছে। ফালাক ওর সম্পর্কে এমন কথা বলতে পারল? ওর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।

ফালাক রুহানির দুবাহু চেপে ধরে বলল,
“কত টাকা চাই তোমার? আমাকে বলো আমি সব দেব। তবুও আমার তোমাকে চাই। টাকার জন্য যেখানে আহিলের সাথে থাকবে সেখানে না হয় আমার কাছে থাকবে। ভালো নাহয় নাই বাসলে। আমার টাকাকেই ভালোবাসলে। বলো কত টাকা চাই?”

রুহানি ঝারা দিয়ে ফালাককে সরিয়ে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“আমাকে তোমার নষ্ট গলির মেয়ে মনে হচ্ছে? টাকা দিয়ে আমার দর দাম করছো? তুমি আমাকে এই ভালোবেসেছিলে?”
রুহানির কান্নার কারণে হেঁচকি উঠে যাচ্ছে।

“ভালোবাসার কথা তোমার মুখে মানায় না। তুমি শুধু টাকার ভাষা বুঝো, তাই টাকার ভাষায় তোমাকে চাইছি। কি করব ভালোবেসে ফেলেছি খুব। তাই তুমি যে ভাষা বুঝো সে ভাষায় তোমাকে নিজের করতে চাইছি।”

রুহানি ফালাকের কথা শুনে বসে পড়ল।
“আমি এই কয়েক মাস অনেক কষ্ট করেছি। কিন্তু কখনো কারো কাছে মাথা নত করি নি। নিজের সম্মান বিসর্জন দেই নি। আর তুমি বলছো আমি টাকার কাছে নিজেকে বিক্রি করে দিচ্ছি?”

“তো কি করেছো বলো? তোমার বাবা-মা আহিলের টাকার জন্য তোমার বিয়ের জন্য অস্থির হয় নি? তুমি ডেটে যাও নি আহিলের সাথে? আমাকে কেন ফিরিয়ে দিয়েছিলে? কারণ আমি ভালোবাসার কথা বলেছিলাম তোমার ফ্যামিলির সব সমস্যা, দুঃখ লাঘব করব বলি নি। টাকার কথা বলি নি। তাই তোমার আমার চেয়ে আহিলকেই ব্যাটার মনে হয়েছে।”

রুহানির দম বন্ধ হয়ে আসছে।

অতিরিক্ত কান্নার জন্য হিঁচকি এখন খিঁচুনিতে রুপ নিচ্ছে৷ শ্বাস নিতে পারছে না। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে খুব। রুহানি টেনে টেনে শ্বাস নিচ্ছে। ফালাক রুহানির এই অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেল। রুহানি ব্যাগ থেকে পানি বের করার চেষ্টা করছে কিন্তু হাত কাঁপছে।

ফালাক বিচলিত কন্ঠে বলল,
“রুহানি কি হলো তোমার? এমন করছো কেন?”

রুহানি অস্ফুট স্বরে বলল,
“পানি!”

ফালাক রুহানির খোলা ব্যাগে পানির বোতল দেখতে পেয়ে তাড়াতাড়ি রুহানিকে খাইয়ে দিল। অন্য সময় পানি খাওয়ার পর আস্তে আস্তে ঠিক হলেও এখন হচ্ছে না। ফালাক রুহানির অবস্থা দেখে দ্রুত উঠে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলল। রুহানির কাছে এসে রুহানিকে কোলে তুলে গাড়ির দিকে দ্রুত গতিতে যাচ্ছে। রুহানি ওর কোলে জ্ঞান হারাল।

.

ফালাক চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে। ওর প্রাণ যেন বেরিয়ে আসছে। রুহানির মা আর ভাইও চলে এসেছে। রুহানির ফোনে কল করায় ফালাক রিসিভ করে সব জানিয়েছে। কিছুক্ষণ পরে আহিলও চলে এলো। আহিলকে দেখে ফালাক কেমন করে তাকাচ্ছে।
আহিল চিন্তিত ভঙ্গিতে রুহানির মা’কে বলল,
“কি হয়েছে আন্টি? রুহানির হুট করে কি হলো?”

” আসলে বাবা ও অতিরিক্ত কান্নাকাটি করলে কিংবা স্ট্রেসে থাকলে এমন হয় কিন্তু আজ কি হয়েছে জানি না।”

ফালাক সবটা বলে নি শুধু বলেছে ওর এমন অবস্থা দেখে হসপিটালে নিয়ে এসেছে।

কিছুক্ষণ পরে রুহানির জ্ঞান ফিরলে আহিল ওর পাশে বসে বলল,
“সব ঠিক হয়ে যাবে রুহানি। আমি তোমাকে ভালো ডক্তর দেখাব।”

“আমি বাসায় যাব আহিল।”

“আচ্ছা, এখুনি আমরা তোমাকে বাসায় নিয়ে যাব।”

ফালাক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুহানির দিকে চেয়ে কয়েক পা পিছিয়ে ঘুরে বের হয়ে গেল রুম থেকে। রুহানি ফালাকের যাওয়ার সময় পেছনের অংশ দেখল।

.

রুহানি দুদিন পর ভার্সিটিতে গেল। দূর থেকে ফালাককে দেখতে পেল। ফালাকের বলা কথাগুলো মনে পড়ল। ফালাক তখনও ওকে দেখে নি। রুহানি দাঁড়িয়ে আছে। ফালাকের চেহারা যেন দুদিনেই বদলে গেছে। কেমন হিংস্র হিংস্র ভাব। শুভ রুহানিকে দেখে ফালাককে বলল,
“রুহানি আমাদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকেই দেখছে।”

ফালাক চোখ মুখ শক্ত করে বলল,
“আজকের পর থেকে ওর নাম আর আমার সামনে নিবি না।”

সোহান হালকা হেসে বলল,
“রাগ করছিস কেন? ভালো বাসিস তো।”

“কিসের ভালোবাসা? আমি ওকে ভালোবাসি না। এতদিনের ভুল শোধরে নিয়েছি।” সোহানকে ধাক্কা মেরে বারান্দা থেকে বের হয়ে গেল। রুহানি সবটাই দূর থেকে দেখল।

ফালাক রুহানির দিকে না চেয়েই ওকে পাশ কাটিয়ে গাড়ির দিকে গেল। গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গাড়ি স্টার্ট দিল।

চলবে…….

#প্রিয়_অভিমান🥀🥀
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-২১|

মুখে ভুলে যাওয়ার কথা বললেই কি ভুলে যাওয়া এত সহজ? যাকে মনের গভীরে জায়গা দিয়েছে, তিল তিল করে তার অবস্থান পোক্ত হয়েছে তাকে কি এত সহজেই মনের গভীরে থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়? যায় না। ফালাকের ক্ষেত্রেই সেটাই ঘটেছে।
ফালাক আটতলা বিল্ডিংয়ের নিজের ফ্লাটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকার আশেপাশের বিল্ডিংয়ের আলোয় পরাজিত। প্রতিটি বাড়িতে আলো জ্বলছে। আকাশেও এক ফালি চাঁদ দেখা যাচ্ছে। ফালাক হাজার চেষ্টা করেও রুহানিকে ভুলতে পারছে না। ফ্লাটে এসেছে দুঃখ বিলাস করতে। এই দুঃখী চেহারা নিয়ে বাড়িতে যায় নি। তাহলে বাবা-মায়ের হাজারো প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। শুধু জবাবই না তাদের টেনশন আর রাতের ঘুম কাড়ার কারণও হবে। অফিসের পাশের এই ফ্লাটে ফালাক প্রায়শই আসে সময় কাটাতে। অফিসে প্রচুর কাজ ফিরতে গেলে অনেক রাত হবে তাই বাড়িতে ফিরতে পারবে না বলে জানিয়েছে মা’কে।

ফালাক নিজের কষ্ট উড়াবে এই বারান্দায় দাঁড়িয়ে। শুনেছে সিগারেট খেলে নাকি কষ্ট ভুলে থাকা যায়। সিগারেটের ধোঁয়ায় কষ্ট উড়ায়। তাই আজ সিগারেট কিনে এনেছে। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করল। এই প্রথম সিগারেট খাবে। খাওয়া নিয়ে কিছুটা সংশয় আছে ওর। অভ্যাস নেই, এছাড়া কখনো কাউকে কাছ থেকে খেতে পর্যন্ত দেখে নি। তাতে কি ফালাক তো আজ খাবেই।
প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট নিয়ে মুখে দিল। আগুন জ্বালানোর পর কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে। কিন্তু ফালাক পরল বিপদে। ধোঁয়া বের করতে পারছে না। মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের হবার বদলে ভেতরে ঢুকে গেছে। ফালাক সিগারেট ছুড়ে ফেলে দিয়ে কাশতে শুরু করল। বিশ্রী অনুভূতি হচ্ছে। একন জঘন্য জিনিস এর আগে দেখে নি। ফালাক দ্রুত রুমের ভেতরে গিয়ে জগ থেকে পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিল।

তারপর বুকে হাত দিয়ে বিরবির করে বলল,
“এগুলো মানুষ খায় কিভাবে? ওয়াক! ছিহ! এত বাজে জিনিস। এটা তো আমার কষ্ট কমানোর বদলে বাড়িয়ে দিল। না জানি কতগুলো ধোঁয়া পেটের ভেতর গিয়ে বসবাস করছে। শান্তিতে বসবাস করছে না হাঙ্গামা করছে কে জানে?”

ফালাক আরেক গ্লাস পানি খেয়ে সিগারেটের প্যাকেট ঝুড়িতে ফেলে দিল। বিরক্ত আর রাগ দুটোই লাগছে। আগে জানলে সিগারেট ছুয়েও দেখত না।
ফালাক শুভ্র সাদা দেয়ালের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। পুরো দেয়াল জুড়ে রুহানির ছবি। ফালাক যত ছবি পেয়েছে ওর সব দেয়ালে এক সাথে পাশাপাশি বাঁধিয়ে রেখেছে। রুহানিকে দেখে হটাৎ করেই বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হলো। স্বপ্ন ভাঙার ব্যথা।

.

রুহানি নিজের রুম জুড়ে পাইচারি করছে। অস্থির অস্থির করছে। এদিক থেকে সেদিক হেঁটে বেড়াচ্ছে আর চুলে হাত বুলাচ্ছে। রুহানির মা দরজায় নক করল। রুহানি জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
“হ্যা মা এসো।”

রুহানির মাকে দেখে খুব খুশি মনে হচ্ছে। খুশি যেন তার চোখ মুখ থেকে ছড়িয়ে পড়ছে।
রুহানি জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকাল।
রুহানির মা রুহানির দৃষ্টি অগ্রাহ্য করে বলল,
“এখনো জেগে আছিস কেন? ঘুমিয়ে পড়। আর হ্যা শোন আগামীকাল ইন্সটিটিউট থেকে তাড়াতাড়ি আসিস। আহিলের বাবা-মা আসবে।”

রুহানি অবাক হয়ে বলল,
“ওরা কেন আসবে?”

রুহানির মা আলতো হেসে বলল,
“কেন আবার? হয়তো বিয়ের কথা বলতে আসবে। আমি আর তোর বাবা ভেবেছিলাম আমাদের সাথে সাথে তোর কপালও পুড়েছে। এগুলো ভেবে তোর বাবা কত কেঁদেছে। কিন্তু দেখ সব ঠিক হয়ে গেছে। তোর বাবা তো ভীষণ খুশি। বলছে এখন মরে গেলেও দুঃখ নেই। আমরা আর ক’দিন তুই আর রুহান ভালো থাকলেই মরেও শান্তি পাব।”
রুহানির মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,”শুয়ে পড়।”

রুহানি মাথা নাড়িয়ে ছলছল চোখে বলল,”হুম।”

.

রুহানির ঘুম আসছে না৷ কি হতে কি হয়ে যাচ্ছে। সব কিছু এত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে যে কিছুই করতে পারছে না। রুহানি বিছানায় উঠে বসে।
“হে আল্লাহ, কোন গোলকধাঁধায় ফেসে গেলাম? কি হচ্ছে এ-সব? কি করব আমি? জীবনের কঠিন সময়েও এতটা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি নি, তাহলে এখন এমন কেন হচ্ছে? আমার আহিলের সাথে কথা বলতে হবে। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। তাহলে মানসিক যন্ত্রণায় মরে যাব।”
রুহানি বেড সাইড টেবিল থেকে নিজের ফোনটা হাতে নিল আহিলকে ফোন করার জন্য।

.

রুহানি ইনস্টিটিউট যাওয়ার আগে আহিলের সাথে দেখা করে কথা বলবে। তাই সেদিনের সেই রেস্টুরেন্টে বসে আছে। আজ রুহানি আহিলের আগে এসে বসে আছে। কিন্তু আহিলের খবর নেই। খবর থাকার কথাও না। আজ ও সময়ের আগেই চলে এসেছে।

কিছুক্ষণ পরে আহিল ভেতরে এসে রুহানিকে দেখে বসতে বসতে বলল,
“সরি, সরি, আমি হয়তো লেট করে ফেলেছি।”

“না ঠিক আছে আপনি সময় মতোই এসেছেন। আমিই একটু তাড়াতাড়ি এসেছি।”

আহিল রুহানির কথা শুনে বলল,
“আগে আগেই চলে এসেছো। গুরুত্বপূর্ণ কিছু?”

রুহানি আমতা আমতা করে বলল,
“আসলে তা নয়, আমাকে ইন্সটিটিউট যেতে হবে তাই তাড়াতাড়ি চলে এসেছি৷ কথা শেষ করে সময় মতো যেতে হবে তাই।”

“হ্যাঁ তাহলে বলো কি বলতে চাও? কোন সমস্যা?”

রুহানি ইতস্তত করছে। কিভাবে বলবে বুঝতে পারছে না। কোথায় থেকে শুরু করবে।

রুহানি নিজের জড়তা কাটিয়ে বলল,
“দেখুন বিয়ে কোন ছেলেখেলা নয়। এত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে হুট করে আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। আমার পরিবার আমাকে জোর করছে, আমার কথা শুনতেই চাইছে না। কারণটা আপনি ভালো করেই জানেন। কিন্তু আমি এভাবে বিয়ে করতে পারব না। আমার সময় প্রয়োজন। আপনি হয়তো পুরনো কথা টানতে পারেন কিন্তু যেখানে পুরনো আমিটাই নেই সেখানে পুরনো কথা টানা বোকামি। পরিস্থিতি, আমার চিন্তাভাবনা সব কিছু এখন আলাদা তাই আমি নতুন করে ভাবতে চাই বিয়েটা নিয়ে। আমার রিকুয়েষ্ট আপনি আমার কথাগুলো বুঝবেন। এসব আমার জন্য মোটেও সহজ নয়। প্রতিনিয়ত মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করছি। আর পারছি না। তাই বাধ্য হয়ে আপনাকে বললাম। এখন আপনিও যদি আমার পরিবারের মতো না বুঝেন হয়তো বিয়েটা আমি করে নেব কিন্তু আমি আর আমি থাকব না।”

আহিল রুহানির কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“বুঝেছি আমি রুহানি। তবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে বিষয়টা আমি যেমন ভাবছি তেমন নয়। বেশ ঘোলাটে।”

রুহানি আমতা আমতা করে বলল, “তেমন কোন ব্যাপার নয়। আসলে আমার জীবনে ঝড় না এলে আমি জীবনের আসল মানে বুঝতাম না। বুঝতে পারতাম না জীবন কতটা মিনিংফুল। হয়তো অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে কিন্তু মানুষ হতে পেরেছি। এটা আমি অনুভব করতে পেরেছি। এই বদলে যাওয়া নতুন আমি সব কিছুর মাঝেই মানে খুঁজি। নিজের ভালোমন্দ খুঁজি। নিজের পছন্দ অপছন্দ প্রায়োরিটি দেই। তাই আমার সময় প্রয়োজন। হুট করে আমি বিয়ে করতে পারব না।”

আহিল এই রুহানিকে দেখে অবাকের উপর অবাক হচ্ছে। কেমন অবলীলায় নিজের ভালো লাগা মন্দ লাগা বলে যাচ্ছে।

“ঠিক আছে। তুমি সময় নেও। আমি বাড়িতে বুঝিয়ে বলল। তবে আমার মনে হচ্ছে তোমার উত্তর হ্যাঁ হবে না।”

রুহানি চোখ তুলে আহিলের দিকে তাকাল। তারপর বলল,
“কথা দিতে পারছি না। আমার উত্তর হ্যাঁ না দুটোই হতে পারে। আপনি চাইলে ব্যাপারটা এখানেই শেষ করে দিতে পারেন।”

“অপেক্ষা করব। আমি এত দ্রুত ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলি না।”

রুহানি আশ্বস্ত হলো। আহিল ব্যাপারটা বুঝেছে। রুহানি নিজেকে বুঝার জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছে।

.

রুহানি সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরেই রুহানের ঘরে গেল। রুহান পড়তে বসেছে। সামনেই এসএসসি পরীক্ষা। রুহানির উপস্থিতি টের পেয়ে রুহান বই রেখে ঘুরে তাকাল।
“আপু, কিছু বলবে?”

রুহানি ঠোঁট কামড়ে সময় নিয়ে বলল,
“ওরা এসেছিল?”

“না আপু। আহিল ভাইয়া কোন এক কাজে আঁটকে গেছে। বলেছে অন্য সময় আসবে।”

রুহানি স্বস্থির নিশ্বাস নিল। এর চেয়ে ভালো খবর যেন আর হয় না। রুহানি চেয়ার টেনে রুহানের পাশে বসে বলল,
“পড়াশোনা ঠিক মতো করছিস তো? মাঝে একটা মাস তারপর পরীক্ষা। ভালো রেজাল্ট করতে হবে। আমি রনকের সাথে কথা বলেছি পরীক্ষা পর্যন্ত ও তোকে পড়াতে আসবে।”

রুহানি স্মিত হেসে রুহানির হাতের উপর হাত রেখে বলল,
“আপু একদম চিন্তা করো না। আমার প্রিপারেশন খুব ভালো। দিনরাত পড়াশোনা করছি। ইনশাআল্লাহ খুব ভালো রেজাল্ট হবে। দেখে নিও আমি তোমাদের মুখ উজ্জ্বল করব।”

রুহানি রুহানের হাতের উপর আরেক হাত রেখে বলল,
“অবশ্যই। আমার ভাই টপ করবে।”

“আপু আমার কথা বাদ দেও। আগামী মাসে তোমার থার্ড ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা। তুমি তো পড়াশোনা ঠিক করে করছোই না।”

“করছি, তুই দেখিস না। আর আমি টেনেটুনে পাশ করে গেলেই হলো কিন্তু তোকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে।”

“আপু, আমি একটা কথা বলতে চাই। আমি উচ্চ মাধ্যমিকে অন্যত্র ভর্তি হতে চাই।”

“কেন? তোর স্কুলেই তো উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত আছে। তাহলে অন্য জায়গায় কেন ভর্তি হবি?”

“আপু আমি নিজের মতো বাঁচতে চাই। যেমন আমি তেমন করে থাকতে চাই। আমি এমন এক জায়গায় এডমিশন নিতে চাই যেখানে আমাকে সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হবে না। যেখানে কারো কটু কথা শুনতে হবে না৷ যেখানে আমি মাথা উঁচু করে যেতে পারব, সবার সাথে নির্দ্বিধায় কথা বলতে পারব। কোন ভয় থাকবে না। নতুন করে বাঁচতে পারব। রিকশায় চড়ে কিংবা পায়ে হেঁটে গেলেও কারো হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে না। প্লিজ আপু। আমার স্কুল ছাড়াও অনেক ভালো ভালো স্কুল-কলেজ আছে। যেখানে কম টাকা খরচ করেও ভালো রেজাল্ট করা যায়। শিক্ষার মান ভালো। আমি অবশ্যই ভালো একটা কলেজে চান্স পেয়ে যাব আর সেখান থেকে ভালো রেজাল্ট নিয়ে বের হয়ে ভালো ভার্সিটিতে এডমিশন নিতে পারব।”

রুহানি ওর কথাগুলো ভালো করে ভেবে দেখে বলল,
“আচ্ছা, আমার ভাই যা বলবে তাই হবে। এখন পড়তে বস।”

রুহান হালকা হেসে আবারও বইয়ে মনোযোগ দিল।

রুহানি নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ল। কেমন হালকা হালকা লাগছে। মনে হচ্ছে ভারী কিছু মাথার উপর থেকে নেমে গেছে। রুহানি চোখ বন্ধ করে নিজেকে কল্পনা করছে বউ সাজে। কিন্তু কিছুতেই বর হিসেবে আহিলকে সহ্য করতে পারছে না। রুহানি চোখ খুলল। সিলিংয়ের দিকে চেয়ে আছে। ফালাকের মুখটা ভেসে উঠছে। রুহানির চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। বুঝতে পারছে না ওর সাথে কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে।

রুহানি রেডি হয়ে সকাল সকাল নুশার বাড়িতে হাজির।

নুশা ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল আর তখনই রুহানিকে রুমে ঢুকতে দেখে বেশ অবাক হলো। রুহানি ওর বিছানার উপরে গিয়ে বসে পড়ল। ওর চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে রাতে ঘুম হয় নি। মুখটা কেমন ফ্যাকাসে। লাল চোখগুলো ছলছল করছে। নুশা দ্রুত ওর পাশে বসে ওর হাত ধরে বলল,
“কি হয়েছে রুহানি? তোকে এমন বিধ্বস্ত লাগছে কেন?”

রুহানি নুশার দিকে চেয়ে কেঁদে ফেলল। নুশা হুট করে ওর কান্না দেখে ঘাবড়ে গেল। কি বলে শান্তনা দেবে, কি করে কান্না থামাবে তার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

নুশা অনেক চেষ্টা করে ওর কান্না থামাতে সক্ষম হলো। রুহানি কান্না থামাতেই নুশা জিজ্ঞেস করল,
“এখন বল কি হয়েছে?”

রুহানি চোখের পানি মুছে বলল,
“আ’ম ইন লাভ!”

রুহানির কথা শুনে নুশা এতটা অবাক হলো যে হতবাক হয়ে আছে।
বিস্ময় কাটিয়ে বলল,”আহিল!”

রুহানি মাথা নাড়িয়ে না করল।

নুশা ভেবেছিল আহিল। কিন্তু রুহানি না করল।
“তাহলে কে সেই ভাগ্যবান?”

রুহানি ইতস্তত করে বলল,”ফালাক!”

নুশা ওর কথা শুনে কয়েক হাজার বোল্টের শকড খেল। রুহানি নুশাকে সব খুলে বলল। নুশা সব শুনে রিয়েক্ট করতে ভুলে গেল।
“বাহ! ডুবে ডুবে আমার বান্ধবী পানি খাচ্ছে আর আমি জানিই না।”

“মজা করিস না। এখন বল কি করব? ফালাক আমার উপর প্রচন্ড রেগে আছে। কি করে ওর সাথে কথা বলব? ও আমার সাথে কথাই বলবে না আমি শিউর।”

“আগে ভার্সিটিতে চল। চেষ্টা তো করতে হবে। আগেই হাল ছেড়ে দিস না।”

.

নুশা রুহানিকে নিয়ে ভার্সিটিতে গেল। ওরা দুজন ফালাককে খুঁজছে। কিছুক্ষণ খোঁজার পর পেয়েও গেল। নুশা ফালাককে ডাকল।
ফালাক নুশার ডাক শুনে ওর দিকে তাকাতেই সাথে রুহানিকে দেখতে পেল। রুহানিকে দেখে ওর চেহারার রং পালটে গেল। নুশার ডাকে সাড়া না দিয়ে চলে গেল। রুহানি নুশার দিকে কাঁদো কাঁদো ফেস করে তাকাল।

চলবে…….!

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ