#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
চিঠি নং – ১
প্রিয় অনুরাগ,
সে বছর বর্ষণমুখর এক সন্ধ্যায়, বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপে হয়ে আপনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। তবে তার আগে আপনার একলা থাকার সেই ছোট্ট ঘরের দরজায় কাঁপা কাঁপা হাতে কড়া নেড়েছিলাম বেশ কয়েকবার। ক্ষাণিক পরে দরজা খুলে আমাকে এমন অবস্থায় দেখে খুব অবাক হয়েছিলেন। কিন্তু পরমুহূর্তেই ভ্রু কুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘কি সমস্যা তোমার? আর এসব পাগলামির মানে কী? কেন এমন করছো? তোমাকে কতবার বলবো, আমি বাস্তববাদী মানুষ। আমার কাছে এসব পাগলামীর কোন মূল্য নেই। যাও, বাড়ি ফিরে যাও।’ আপনার সেই অবজ্ঞা, অবহেলায় আমার ভেতরটা তখন ব্যথায় জর্জরিত হয়ে যাচ্ছিল। যে ব্যথা আমি আজও আমার ভেতরে পুষে রেখেছি অতি যত্নে। জানেন, আমি সেই ব্যথার একটা নাম দিয়েছি। সেই ব্যথার নাম “ভালোবাসার অসুখ”। যে অসুখ কখনো ভালো হবার নয়।
সেদিন আমাকে ফিরে যেতে বললেও, আপনি কিন্তু তখনও ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন। আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম আপনার নিঃশ্বাসের অস্থিরতা। অনেকটা সাহস করেই সেদিন আপনার চোখে চোখ রেখে তাকিয়েছিলাম। আর এক মুহূর্তেই আমার মনে হচ্ছিল, আমার সামনে এই আপনি, এক বিশাল সমুদ্র। যার গভীরতায় আমি তলিয়ে যাচ্ছি। আমার চোখদুটো ক্রমশ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল। আমি তখন কাতর কণ্ঠে বলেছিলাম, ‘আমাকে ভালোবাসুন, প্লিজ!…আমাকে ভালোবাসুন। একটুখানি ভালোবাসুন।’ কান্নার দমকে আমার গলা ধরে আসছিল। নিজেকে সামলাতে বড্ড কষ্ট হচ্ছিল। আপনি তখন অনুরোধের সুরে বলেছিলেন, ‘প্লিজ! ফিরে যাও। তুমি যা চাও, তা কখনো পূরণ হবার নয়। এ জীবনে ভালোবাসাটা আমার দ্বারা আর হয়ে উঠবেনা।’ আমি কাঁদতে কাঁদতে আপনার পায়ের কাছে বসে পড়েছিলাম। তবুও আপনি নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। আপনার নীরবতা দেখে আমি ভেবেছিলাম, এই বুঝি ভালোবাসার পাখি হয়ে আমার মনের খাঁচায় ধরা দিবেন। কিন্তু আমাকে আশাহত করে, কণ্ঠে দৃঢ় ভাব এনে বলেছিলেন, ‘এভাবে পাগলামি করোনা। এসব পাগলামির কোনো মানে হয় না। আমাকে নিয়ে ভাবা বন্ধ করো। নিজেকে নিয়ে ভাবো। নিজের পরিবারের কথা ভাবো। কিছুদিন পর দেখবে, সব ঠিক হয়ে গেছে। তখন এসব ভেবে তোমার নিজেরই খারাপ লাগবে।’ আমি কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলেছিলাম, ‘আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দেবেন না প্লিজ! আমি অপেক্ষা করবো। সারাজীবন অপেক্ষা করবো।’ আপনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার জন্য অপেক্ষা করোনা মেয়ে। আমার ভেতরটা রিক্ততায় ভরা। তোমাকে দেবার মতো আমার যে কিছুই অবশিষ্ট নেই।’ আপনার বলা এই শেষ কথাগুলো শুনে আমার যে তখন কী হলো। অভিমানের ডালপালায় ভর করে ছুটে চলে এসেছিলাম। মনে মনে বলেছিলাম, আর কখনো আপনার সামনে যাবো না, কখনো না। আপনি আমার কেউ নন, কেউ নন। কিন্তু তখনো আমার ভেতর থেকে কে যেন বলছিল, ‘আপনিই আমার প্রিয় একজন।’
কবে, কীভাবে, কখন আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি তা আমি জানিনা। শুধু জানি আমি আপনাকে ভালোবেসেছি। নিজের সবটা উজার করে ভালোবেসেছি। আর সবসময় বাসবো। জানেন, কেউ যখন আমাকে বলে, ‘তোমার বয়ফ্রেন্ড নেই।’ আমি তখন তার দিকে উদাস হয়ে তাকিয়ে থাকি। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, নিজেকে সামলে নিয়ে বলি, ‘না, নেই। তবে আমার একজন ভালোবাসার মানুষ আছে। যাকে আমি আমার সমস্ত সত্তা দিয়ে অনুভব করি। প্রতিদিন, প্রতিরাত, প্রতিমুহূর্তে।’
আপনি হয়তো ভেবেছেন, আপনাকে ঘিরে আমার সব অনুভূতিগুলো একসময় শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আমি তো জানি, আমার এই অনুভূতিগুলো কখনো শেষ হবে না বরং দিন দিন তা বেড়েই চলবে। আর আমার ভেতরটা তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবে। কি করবো বলুন, আমি তো চেষ্টা করি আপনাকে ভুলে যাওয়ার। কিন্তু চাইলেই কি কাউকে ভুলে যাওয়া যায়? শুধু ভুলে থাকার চেষ্টা করা যায় মাত্র। তাই হয় তো আমার অবচেতন মন এখনো আপনার কথা ভেবে বারবার বলে ওঠে, “দিবস রজনী আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি।”
সেদিন আমাকে ফিরিয়ে দেবার আগে একটিবার যদি বলতেন, ‘কি চাও তুমি?’ তখন হয় তো বলতাম, ‘চাওয়ার তো কিছু নেই। শুধু মনে রাখবেন, এই ছোট্ট বাংলাদেশের কোনো এক শহরের অতি আবেগপ্রবণ একটা মেয়ে আপনাকে ভালোবাসে, ভীষণ ভালোবাসে…
ইতি
আপনার ভালোবাসায় কাতর এক প্রাণ
রাগিণী