প্রিয় মধুবালা – মাসুদ রানা তাসিন

0
443

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
চিঠি নং : ২

প্রিয় মধুবালা,

কেমন আছিস তুই? কেমন কাটছে দিনগুলো? কেমন যাচ্ছে নতুন দিগন্তের সূচনায় সংসার জীবন?

মধুবালা একবারের জন্যও কি মনে হয়নি কেন ছেড়ে দিলাম তোকে? এই প্রশ্ন কি একবারও মনে আসেনি, আসেনি বিবেকের কাছে? হৃদয় মাঝে কি দেয়নি দোলা?

তোকে যখন ছেড়ে দিয়েছি, তখন হয়তো অনেকটা ভয় পেয়ে ছেড়ে দিয়েছি। কেনো জানিস? তুই ছাড়লে যদি খুব বেশি কষ্ট পাই। তাহলে তো প্রতিনিয়ত তোর ছেড়ে দেওয়ার যন্ত্রণা কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে। সেই বেদনা সহ্য করার ভয়ে তোকে ছেড়ে দিয়েছি।

আমার অবহেলায় খুব কষ্ট পেয়েছিস। সব দুঃখ মুখ বুঝে সহ্য করেছিস। জানতাম সব আমি, সেজন্য তো ছেড়ে দিয়েছি। যাতে সেই অবহেলা সহ্য করতে না হয় আমার।

সেদিনের সেই বকুল তলার কথাগুলো মনে পড়লে হাসি পায় এখন খুব‌। সেই দিনগুলো কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখা। মাঠের কোণায় বসে ফুচকা খাওয়া। কিংবা অভিমান করে দুই একদিন কথা না বলা। সেইদিন দিন গুলো যখন তুই আবার চাইলি ফিরে, আমি যে নিরুপায় বড্ড একঘেয়েমিতে ভরে গিয়েছিলাম যেন। সব আবদার পূরণ করা সম্ভব হয়ে উঠেনি আর যেন। তাইতো তোকে ছেড়েই দিয়েছি।

মনে পড়ে রোদেলা দুপুরে আমার বুকে মাথা গুঁজে হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ার দিনগুলো। তখন তো স্বপ্ন সাজাতাম রোজ। ব্যালকনির কার্ণিশ বারান্দায় কালো, সাদা গোলাপের গাছ গুলো যেন আজো তার সাক্ষী হয়ে আছে। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন কোন অসুখে ধরলো আমায়। এ যেন আমার অন্য রুমালে মুখ মুছার অসুখ। তাইতো দিন থাকতে চলে গেলাম অন্য ডালে‌। তুইতো ছিলি বসে আমার আশায়। যখন তুই বারান্দায় আমার পথ চেয়ে, আমি তখন ক্লান্ত হয়ে চুমুক দিচ্ছি ব্ল্যাক কফিতে। সেই অসুখ এমন ভাবে বাঁধলো মনে তাইতো তোকে দিলাম ছেড়ে‌।

রোজ রাতে যখন দেওয়ালের ওপারে তুই আর এপাশে আমি‌‌। তখন আমার ভাঙা কাঁচের ঝনঝনানিতে ব্যস্ত হতিস তুই। কিন্তু আমার করা অবহেলায় থাকতিস সরে দূরে।‌ তাইতো হঠাৎ করেই ছেড়ে দিলাম তোকে।

তবুও হয়তো কিছু প্রশ্ন থেকে যেতেই পারে? কেনো জানিস? আমার তো আর অন্য কেউ ছিল না মনে‌। এই প্রশ্ন যদি করিস তবে তোকে মনে করিয়ে দিতে চাই। হুমায়ূন ফরিদী ও সুবর্না মোস্তফা দম্পতির কথা। সুবর্ণা মোস্তফাকে একবার প্রশ্ন করেছিল কেউ। এতো ভালোবাসা থাকতেও কেন সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন? তিনি প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন যে আগে সম্পর্কের মাঝে বন্ধুত্ব, ঝগড়া, অভিমান ছিল। কিন্তু এখন আর সেটা নেই। তাইতো দূর থেকে দাঁড়িয়ে অটুট বন্ধুত্ব রাখি। এক সম্পর্কে না হয় বিচ্ছেদ করি।

মনে পড়ে শেষ কদিন তোর সাথে বোঝাপড়া ভালো ছিল না। তাইতো দূর থেকে ভালোবাসতেই তোকে ছেড়ে দিলাম মাঝপথে।

আমার বুকের পাঁজর ছিঁড়ে দিয়ে। তুই যাতে অন্য কারো বুকে মাথা রাখিস সেই জন্যে দিলাম ছেড়ে। আমি না হয় তোকে ভুলে কাটিয়ে দেই জীবন নামক গাছটির সাথে।

সেদিন রাস্তায় যখন হাঁটছিলি, মুখে হাসি ছিল অনবরত। সুখ সমুদ্রের পানিতে ডুবে সাঁতার কাটছিস বেশ। আমি না হয় ভ্যাপসা স্মৃতির দূরবীণে চোখ রাখবো। নিজের শরীরে আঘাত সহ্য করে।

তোকে ছেড়ে দিয়ে একবারের জন্যও ভাবিনি। হারলাম না জিতলাম শুধু ভেবেছি সময়ের সাথে সাথে কতো অবুঝ হয়েছে মনটা।

তবুও শেষ বেলা ফুরাবার আগে বলছি অবশেষে। ভালো থাকিস আমার এক টুকরো ভালোবাসা সঙ্গে করে। তোর ভালোবাসা আমার বুকের পাঁজর নামক জীবনীর আঁকে বাঁকে ঘুরে। হয়তো হবে না দেখা কোন এক কুয়াশাচ্ছন্ন রোদের ছায়ায় অনিমেষ হৃদয় ছুঁয়ে। তবুও ভালোবাসি তোকে তাইতো চাই ভালো থাকিস। ভালোবাসা ভালো থাকুক এই কামনা করে শেষ করছি আজ। হয়তো আমার কাছে থেকে এটাই শেষ স্মৃতি হবে তোর কাছে। কিছুক্ষণের মাঝেই যে বিদায় নেবো বসুন্ধরা নামক মায়ের বুক ছেড়ে। সুদূর জান্নাতের দরজাতে ক্যান্সার নামক ব্যাধির কাছে হেরে। ভালোবাসা মানে যে পেতেই হবে কাছে এমন কোন ইয়ত্তা নেই। ভালোবাসা ভালো থাকার মাঝে যে সুখ নিহিত।

ইতি,
তোর অপ্রিয়,
মাসুদ রানা তাসিন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে