প্রিয় ভুল
লেখা: মাহবুবা মিতু
পর্ব: ৩১
(অনুগ্রহ করে অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করবেন না)
মীরার প্রাণের স্বামী মহামতি রাজিব পৌঁছে ফোন করেছিলো ওকে। মীরা নিজের অসুস্থতাকে আড়াল করে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেছিলো ওর সাথে ।
যেতে কতক্ষণ লাগলো?
রাতে কিছু খেয়েছে কি-না?
কোথায় উঠেছে?
হোটেলে রুম একা নিয়েছে নাকি ঐ ভদ্রলোকের সাথে রুম শেয়ার করেছে?
এরকম আরো অনেক অসংলগ্ন কথা জিজ্ঞেস করে মীরা পরিস্থিতির স্বাভাবিকতা প্রমাণে। রাজিবও মুখস্থ পড়ার মতো সব গুলো উত্তর ঠিকঠাক দেয় মীরাকে। সবজান্তা মীরাও মিলিয়ে নেয় উত্তর গুলো।
কথার এক ফাঁকে রাজিব বলে – ব্যাস্ততার জন্য সবসময় কথা বলা যাবে না, সময় সুযোগ বুঝে ও নিজেই কল করবে মীরাকে। মীরার কল করার দরকার নেই। মীরা অনুগত স্ত্রীর মতো বলেছিলো-
: ” কোন সমস্যা নাই, তুমি সময় মতো খাওয়া দাওয়া করো, আর আমাকে ম্যাসেজ দিয়ে রেখো”
: ” ঠিক আছে ” -রাজিব বলেছিলো। মীরা পরে কি বলেছিলো তা শোনার সময় হয়নি রাজিবের। কিংবা অসুস্থ মেয়েটার খবর নেওয়ারও না।
মীরার সাথে কথা বলায় কত্ত অনাগ্রহ ওর। সময় কত দ্রুত বদলায়। একটা সময় এই রাজিবই রাত জেগে কথা বলতো মীরার সাথে। মীরার পরদিন দুপুরে ঘুমানোর সুযোগ থাকতো। কিন্তু রাজিবের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টানা কাজ করতে হতো। কত্ত বলতো মীরা-
: ” ফোন রাখো, ঘুমাও তুমি, সকালে কাজে যেতে হবে তোমায়। আমি দিনে ঘুমাতে পারবো তোমার তো সেই সুযোগ নাই”
রাজিব বলতো-
: ” তোমার সাথে কথা বলতে ক্লান্তি আসে না আমার, কথা না বললেই বরং সারাটা দিন এলোমেলো লাগে। দমবন্ধ হয়ে আসে”
এখন বোধহয় উল্টে গেছে সব। মীরার সাথে কথা বললেই বরং দম বন্ধ লাগে রাজিবের। তাইতো ফোনটা রাখতে এত তারাহুরো ওর।
ডিজুস সিম ছিলো দুজনেরই আর সেই সময় রাতে ডিজুস-ডিজুস কল ফ্রী ছিলো। দিনে তেমন কথা হতো দুজনে। সব কথা মনের বাক্সে তোলা থাকতো রাতের অপেক্ষায়। সেই দিন, সেই রাজিব কোথায় গেলো? রক্ত মাংসের খাঁচাটা ওর পাশে থাকে কেবল। ওর ভিতরকার আত্নটা, প্রেমিক মনটা জীবণের দৌড়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
হঠাৎ কিছুদিন আগে সিলেট ভ্রমণের দিনগুলোর কথা মীরার মনে পরে। রাত-দুপুরে কি কান্ড টা-ই না করেছিলো রাজিব হোটেল রুমটায় । কাছে পাবার আকুলতা, ছুঁয়ে দেবার তৃষ্ণায় ব্যাকুল হয়ে থাকতো ও।ঐ সবটাই কি রাজিবের শরীরের ক্ষুধা ছিলো? ওতে কি ভালোবাসা ছিলো না? এসব ভাবতেই মাথা ঝিম ধরে যায়। বসা থেকে আলগোছে শরীরটাকে এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পরে ও। কিছুক্ষণের মধ্যে তলিয়ে যায় ঘুমের রাজ্যে। ভাগ্যিস ঘুম বলে কিছু রয়েছে, ইদানীং ঘুমটাকে বড় ভালেবাসে মীরা। কারন ততটুকু সময়ই কষ্ট ভুলে থাকা হয় ওর। বাকীটা সময় বেতন ভুক্ত কর্মচারীর মতো দায়িত্ব নিয়ে নিয়মিত যন্ত্রণা ভোগ করে ও। এতটুকু ফাঁকি দেবারও জো নেই।
মীরার মাথায় সেলাই হয়েছে চারটা। ঐখানকার চুল টুকু কেটে ফেলায় কেমন যেন অদ্ভুদ দেখাচ্ছে ওকে। ওর মনের অদ্ভুত অবস্থাটার চেহারায় ফুটিয়ে তোলার সবটুকু দায়িত্ব নিয়েছে ঐ ক্ষতটা৷
হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর মাজেদা খালা ওকে স্যুপ তৈরি করে দিয়েছেন। সেটা খেয়ে ওষুধ খেয়েছে মীরা বাধ্য মেয়ের মতো। স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নিয়েছে যে মনে মনে তার আবার অবাধ্যতা কিসে?
কথাগুলো ভেবে আড়ালে কাঁদে মাজেদা খালা। তার ইচ্ছে হয় ঐ মা*গীকে মাছ কাটার মতো টুকরো টুকরো করে কাটে। কিন্তু এটা অলীক ভাবনা ছাড়া কিছুই না। মীরার জন্য তার মনটা খুচখুচ করে। টুম্পা দু-একবার ঘেঁষে ছিলো মাজেদা খালার কাছে। উদ্দেশ্য ঘটনা কি তা জানা। মাজেদা খালা ওকে পাত্তা দেয় নি। আগে থেকেই দেয় না। ওদের দুজনের বনাবনি হয় না। সরল মাজেদা খালা একেক সময় কি সব কথা বলে শুনে টুম্পা হাসলেই তিনি তেলে-বেগুনে জ্বলে যান। তাই তাকে সামলে চলে টুম্পা। তবে আজকের ঘটনা অন্য।
রাত বাড়তেই হঠাৎ মাজেদা খালার দরজায় নক করে টুম্পা। তিনি তখন নূহাকে ঘুম পাড়াচ্ছিলেন। দরজা ফাঁক করে মৃদু কন্ঠে বলে-
: ” আসবো খালা? ”
ওকে দেখে লম্বালম্বি তিনটে ভাঁজ পরলো তার কপালে যা তার বিরক্তির প্রকাশ করছে। এসব পাত্তা না দিয়ে স্মিত হেসে ঘরে ঢুকে টুম্পা তার অনুমতির অপেক্ষা না করেই ।
পা টাকে ভাঁজ করে বসার জায়গা করে দেয় খালা। খালার পা ভাঁজ করে বসতে জায়গা করে দেয়াটা জানান দিচ্ছে পরিস্থিতি অনুকূল। এটা দেখে টুম্পা তার পায়ের কাছে বসে। এদিক সেদিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে –
: ” খালা এ বাড়িতে আমি যা আপনিও তা-ই, আমদের জন্য মীরাপু অনেক করেছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার কি হয়েছে জানার জন্য আমার মন অস্থির হয়ে আছে, ঘটনা কি তা কি আমার জানার অধিকার নেই?”
মাজেদা খালা কিছু সময় থুম মেরে বসে থেকে হঠাৎই হাউহাউ করে কেঁদে দেন। অঝোরে পানি পরে তার চোখ দিয়ে৷ টুম্পা অবস্থা বেগতিক দেখে তার কাছে গিয়ে তাকে স্বান্তনা দেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত হতে বলেন। জিজ্ঞেস করে – কি হয়েছে খালা?
উত্তরে তিনি কেবলই কাঁদে।
সরল এ মানুষটা অল্প কয়েক মাসেই ভালোবাসা দিয়ে এ বাড়িতে শক্ত জায়গা করে নিয়েছে। যার দরুন তাকে তার আগে আসা টুম্পা ও মনে মনে সমীহ করে। আর এই যে কান্না, এটা যেন সেই নিঃস্বার্থ ভালেবাসারই বহিঃপ্রকাশ।
তাকে স্বাভাবিক হতে সময় দেয় টুম্পা। এতদিন দূরে থাকায় মনে মনে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় ওর। খালার এত কান্না নিরবে যেন দিয়ে দিচ্ছে মীরাপুর মনের ক্ষয়ক্ষতির প্রমান। কারখানায় যে কিছু হয় নি তা টুম্পা খুব জানে। করন ও ঢাকায় এসেই সোজা কারখানায় চলে গিয়েছিল । শুধু মাত্র রাজিবের অনুপস্থিতি ছাড়া তেমন কিছুরই বদল নেই। সব ঠান্ডা, স্বাভাবিক। কি হলো তাহলে? কেনই বা মাথা ফাটালো মীরাপু, কেনই বা কাঁদছেন খালা৷
বেশ কিছু সময় পর মুখ খুলেন খালা। টুম্পার কাছে লুকানোর কিছুই নেই তা জানপন তিনি। তারা তিনজন যখন একসাথে খেতে বসে তখন খোলামেলা আলোচনা হয় সব ব্যাপারে। তবে রাজিবের বিয়ের ব্যাপারটা বলবে কি না তা বুঝতে পারেন না তিনি। তবে টুম্পার জানবার আকাঙ্খাকে ও উপেক্ষা করতে পারেন না। টুম্পাকে তিনি শুধু বলেন-
: ” অনেক খারাপ কিছু হইছে খালার লগে, তয় আমি তুমারে কইতে পারমু না। খালা নিজেই বলবো নে তোমারে কাল সকালে। আমি পাগল মানুষ কি বলতে কি বলি”
শেষের কথাটা যে তিনি টুম্পাকে ইঙ্গিত করে বলেছেন তা টুম্পা ঠিক বুঝেছে। টুম্পা তার আরো কাছে গিয়ে বলে-
: ” আপনি না বললেও আমি ঠিক বুঝতে পারছি কত বড় বিপদ ঘনিয়ে এসেছে আপুর জীবণে। আমরা যদি এখনো কথা ছোড়াছুড়ির খেলা খেলতে থাকি তাহলে….”
: ” কথার খেলা না মা, ঘটনাডা হের ব্যাক্তিগত। তিনি তোমারে জানাইতে চান কি না তিনিই জানেন।
আগ বাড়ায়া আমি কিছু কইতে চাই না, তবে এইডা সত্য আমাগো এহন তার পাশে থাকা লাগবো”
এরপর বেশ কিছু সময় কথা হয় দুজনের। এত দেরি করে ঢাকায় ফিরবার কারনও জানায় ও মাজেদা খালাকে৷ টুম্পার ছোট ভাই এক মেয়েকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে এসেছে। তা নিয়ে অনেক হুলুস্থুল হয়েছিল ওদের বাড়িতে। এমন অবস্থায় ওর থাকাটা জরুরি ছিলো । সবকিছু ঠিকঠাক করে আসতেই এত দেরি হলো।
টুম্পা উঠে নিজের ঘরে যেতে নেয় । খাবার দাবাড় সবই পরে আছে টেবিলে। কারোরই ক্ষুধা কিংবা খাওয়ার মন নেই। বিপদে যে মুখে খাবার তুলে দিয়েছিলো, দিয়েছিলো ভরসার আশ্রয় তার বিপদ দেখে খাবার খাওয়ার মন কিংবা ক্ষুধা থাকার কথা না।
নিজের ঘরে যাওয়ার আগে টুম্পা মীরার ঘরে উঁকি দেয় একবার। দেখে মীরা কেল-বালিশে মুখ গুজে কাঁদছে। ধীর পায়ে মীরার কাছে যায় টুম্পা। খাটের ঐ পাশে গিয়ে ওর কাছ ঘেঁষে বসে। অবাক চোখে দেখে টুম্পা আত্মসম্মান আর দৃঢ়তার পাহাড় মীরা কিভাবে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে ধ্বংসস্তুপের মতো। টুম্পা পেছন থেকে মীরার মাথায় হাত রাখে, ধ্যান ভঙ্গের মতো চমকে পেছন ফিরে মীরা। টুম্পাকে দেখে উঠে বসার চেষ্টা করে ও। টুম্পা বলে-
: ” এত রাত হয়েছে, এখনো ঘুমান নি কেন আপনি?”
: ” আজ সারারাত আমি জেগে থাকবো টুম্পা। আমার শান্তি, ঘুম, সব সাথে করে নিয়ে গেছে রাজিব”
: ” ভাইয়া কি প্রথমবার যাচ্ছে ইন্ডিয়া, এর আগেও তো কতবার গিয়েছে, এতে ঘাবড়ানোর কি আছে? ”
: ” রাজিব ইন্ডিয়া যায় নি, গিয়েছে মালদ্বীপ, সাথীকে সাথে নিয়ে, আর ওকে নিজ হাতে তৈরী করে দিয়েছি আমি”
সাথী নামটা প্রথম বারের মতো শুনলো টুম্পা। কিছু বুঝতে না পেরে চুপ থেকে মীরাকেই সুযেগ দিলো আরো কিছু বলবার। মীরা যেন তা বুঝতে পেরেই আবার বলতে শুরু করলো, ও যেন কলের পুতুল। যন্ত্রনা, কষ্ট,আবেগ, কিছুই যেন নেই সেই কথা বলবার ধরনে। সোজা বসে বাইরের জানালার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে মীরা বললো-
: “একটা মেয়ে কতটা অসহায় হলে স্বামীর গোপন প্রণয়ের কথা জেনেও তাকে তৈরী করে, তারই প্রণয়িনীর কাছে পাঠায়, টুম্পা তুই তো দেখেছিস কত কষ্টে গড়া আমার ব্যাবসা, আর এ সংসার। আজ আমি নিঃস্ব রে। আজ আমি এক্কেবারে নিঃস্ব। আমার আমি ছাড়া আর কিছুই নেই আমার”
: ” কি হইছে বলবেন আপু?”
: ” আড়াই বছর আগে রাজিব গোপনে ওর মামাতো বোনকে বিয়ে করেছে, কলাবাগানের একটা ফ্ল্যাটে
ওকে রেখেছে। এখানেই শেষ না, ও আমাকে আমার নিজের কষ্টে গড়া ব্যাবসা থেকে বের করে দিতে বহু আগেই প্ল্যান করে রেখেছে। পুরাতন কর্মচারী বাদ দেয়া, কারখানা বদলানো, জয়েন্ট একাউন্ট ক্লোজ, নতুন জমি ওর নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন, এ-সবই ওর সেই পরিকল্পনার অংশ”
টুম্পা যেন স্তব্ধ হয়ে যায় মীরার মুখে এসব শুনে। কিছু সময় মৌন থেকে অস্ফুটস্বরে বলে-
: ” ভাইয়া কেন করলো এমন? কিভাবে পারলো এমন করতে? ”
: ” তোকে বলা হয়নি, বলার প্রয়োজন হয়নি কখনো তাই- রাজিবকে বিয়ে করার আগে আবীর নামে একজনের সাথে বিয়ে হয়েছিল আমার। বিয়ের পরদিনই আমি পালিয়ে এসেছিলাম রাজিবের কাছে, কাগজে-কলমে বিয়ে ছাড়া কিছুই ছিলো না আমার আর আবীরের মধ্যে। কিন্তু রাজিবের ধারনা আমি ব্যাবহৃত । এত সুন্দর ও কেন একটা সেকেন্ড হ্যান্ড মেয়েকে বৌ হিসেবে মেনে নিয়ে জীবণ পার করে দিবে? তাইতো আনকোরা মেয়েকে বিয়ে করে মনের দুঃখ ঘুচিয়েছে ও”
: ” ছি আপু! কি বলছেন আপনি?
: ” হুম এটাই সত্য”
: ” আবীর! এই আবীর কি সেই আবীর যার সাথে ব্যাংকে আমাদের দেখা হয়েছিল একবার? ”
: ” হুম, ওই সেই আবীর, যার জীবণটাকে নিজ হাতে নষ্ট করেছি আমি, আমার পাপের খাতা অনেক ভারীরে টুম্পা, বাবা-মাকে কষ্ট দিয়েছি, নির্দোষ একটা মানুষকে কষ্ট দিয়েছি, শুধু কষ্ট দিয়েছি কিরে, তার জীবণটাকে ধ্বংস করে দিয়েছি। বেচারা লজ্জায়, ঘৃণায় এক মায়ের এক পুত্র হওয়া সত্ত্বেও আবার বিয়েটাও করতে পারে নি। সমাজ একটা নির্দোষ ছেলেকে বিবাহিতের তকমা লাগিয়ে ছোট চোখে দেখে, এই পাপের শাস্তি কি আমি পাবো না ভেবেছিস? দেখিস না কত্ত ভালো আছি আমি। চারদিক থেকে ধ্বংস ধেয়ে আসছে আমার দিকে। আমার ধ্বংস অনিবার্য। কেও ঠেকাতে পারবে না এটাকে। কেও না….
: ” চুপ করেন আপু, আর একটা কথাও না।
আপনি ছাড়া রাজিব অচল, ও যদি সব কেড়েও নেয় তাও ঠিক দাঁড়াতে পারবেন আপনি। সব শেষ হয়েছে কিন্তু যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা তো আপনার শেষ হয়ে যায় নি। তাছাড়া এত সহজে কেন তাকে ছেড়ে দিবেন আপনি?
মহাভারতে আছে- যুধিষ্ঠির বনবাস থেকে ফিরে এসে, দুর্যোধনের কাছে মাত্র পাঁচটা গ্রাম চেয়েছিল পাঁচ ভাইয়ের জন্য। উত্তরে দুর্যোধন বলেছিলো- “বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী”- এর মানে “সুক্ষ্ম সুচের অগ্রভাগে যতটুকু মাটি আটে, যুদ্ধ ছাড়া ততটুকু মাটিও যুধিষ্ঠিরকে দিবে না দুর্যোধন”
আর আপনি এত কষ্টে গড়া ব্যাবসা, সংসার সব থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বসে আছেন? এত সহজে হার মেনে নিয়েছেন। খেলা শুরুর আগেই পরাজয় মেনে নিয়েছেন? আমি যে মীরাকে চিনি সে দুর্যোধনের মতো বলিষ্ঠ। এত সহজে হার মানার মানুষ সে না।
কথাটা শুনে টুম্পার দিকে তাকায় মীরা। সে তাকিয়ে থাকায় কিছু একটা ছিলো। কি ছিলো তা জানে না টুম্পা, কারন মীরাকে এরকম ভাবে তাকাতে এর আগে ও দেখেনি কখনো।
চলবে…
প্রিয় ভুল
লেখাঃ মাহবুবা মিতু
পর্ব: ৩২
(অনুগ্রহ করে অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করবেন না)
পরদিন বেশ সকাল করেই ঘুম থেকে উঠে মীরা। উঠার কিছু পরই মাথায় ভোঁতা একটা যন্ত্রণা অনুভব করে ও। অসুস্থ হওয়ায় ওকে কেও ডেকে তুলে নি, মন আর মাথা দুটোর জন্যই ওর বিশ্রামের প্রয়োজন। কিন্তু জীবণ ওকে যেখানে এনে দাঁড় করিয়েছে বিশ্রাম বড় উঁচু দরের শব্দ। এখন ওর যুদ্ধ করার সময়, নিজেকে, নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার যুদ্ধ। বাড়িতে বসে বিশ্রাম করার মানে হচ্ছে যন্ত্রণার রোমন্থন করা। তাছাড়া এটুকু ক্ষত আর কি, কত্ত ক্ষত বুকে নিয়ে দিব্যি স্বাভাবিক থাকার অভিনয় করে ও আজকাল।
গায়ের চাদরটা সরিয়ে সটান নেমে পরলো মীরা। মন আর শরীর কিন্তু এক কথা বললো না। দাঁড়ানোর সাথে সাথে ঝিম ধরে গেলো মাথায়। ভোতা যন্ত্রণাটা তীক্ষ্ণ হতে থাকলো ক্রমশ। পাত্তা না দিয়ে বাথরুমের দিকে রওনা দিলো ও, হাঁটার প্রতিটি কদমের সাথে মাথার ক্ষত-স্থানটাতে টান পরতে লাগলো। বাথরুমের বেসিনের আয়নাটা ঘোলা হয়ে গেছে। হঠাৎ মীরার মনে পরে ও রাজিবকে বলেছিলো –
: ” আমার মন মেজাজ, শারীরিক অসুস্থতা বুঝার জন্য বাথরুমে ঢুকে এই আয়নায় তাকাবে”
: ” মানে! ”
: “যেদিন দেখবে এটা নোংরা আর ঘোলা হয়ে আছে তার মানে আমার মন, মেজাজ, শরীর তিনটাই খারাপ ”
: ” এর সাথে মন, মেজাজ, শরীরের সম্পর্ক? ”
: ” তুমি তো জানো আমার পরিস্কারের বাতিক আছে, এটা ঘোলা থাকা মানে আমার মন, মেজাজ, শরীর ভালো নেই”
কথাটা মনে হতে অনেক স্মৃতি মনে পরে মীরার। এ ঘর, এ ঘরের প্রতিটি কোণে কত কত স্মৃতি জমা আছে! আজ তারা যেন মীরাকে সেসব মনে করিয়ে দিয়ে ধিক্কার দেয়। মীরা বাথরুমের দরজা আটকে ওয়াল ক্যাবিনেট খুলে হ্যান্ড ওয়াশের বোতল রিফিল করলো, ওডোনিলের নতুন প্যাক ও রিফিল করলো, ও যেন নিজের মনোযোগটাকে রাজিব নামের দ্বীপ থেকে টেনে এই বাথরুমে নিয়ে এলো। অখন্ড মনোযোগ দিয়ে করতে লাগলো সব কাজ। তারপর ভাবতে লাগলো আজকের দিনের ওর কর্ম পরিকল্পনা। টুকিটাকি পরিষ্কারের কাজ শেষ করে বাথরুমে সাবধানে মুখ ধোয় ও। রান্নাঘরে গিয়ে সসপ্যানে পানি বসায় চা তৈরির জন্য।
বাসনপত্রের টুংটাং শব্দে মাজেদা খালার ঘুম ভাঙে। ততক্ষণে চা তৈরি করা হয়ে গেছে মীরার। মাজেদা খালা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখেন – তিনটা কাপে চা ঠালছে ও। কি অবস্থা শরীরের , কেন এ শরীর নিয়ে এসব করতে এসেছে তার কিছুই জিজ্ঞেস করলো না খালা, টুম্পাকে ডেকে মুখ ধুয়ে টেবিলে এলো চা খেতে। মীরা ততক্ষণে ফুড কনটেইনারের রাখা বাকরখানি সাজিয়ে নিয়েছে প্লেটে। ওদের চা গুলো ঢাকা দিয়ে রেখেছে গ্লাসের ঢাকনা দিয়ে । চোখেমুখে যে দুঃশ্চিতার ছাপ ছিলো গত রাত অবধি এখন তা নেই। যেটুকু অস্বাভাবিকতা চোখেমুখে তা কেবলই অসুস্থতাজনিত ক্লান্তি।
টুম্পা এবং মাজেদা খালা পরপর চেয়ার দুটি টেনে নিয়ে পাশাপাশি বসলো। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কাপ দু’টি তাদের দিকে এগিয়ে দিলো মীরা। এক এক করে যে যার কাপ টেনে নিলো। কাপ আর চামচের নিজেদের মধ্যে টুংটাং শব্দে বলা কথাবার্তা ছাড়া টেবিলে তখন জমাট বাঁধ নিরবতা। বাসাটা বেশ উচুতে হওয়ায় বাইরের কোলাহলের প্রবেশ নিষেধ এখানে। অনেক কিছু বলার এবং শোনার আছে প্রত্যেকের, এক একজনের মাথায় যেন প্রশ্নের ঝাঁপি। কিন্তু নিরবতা কে ভাঙবে তারই অপেক্ষা করছে যেন তারা তিন জনের প্রত্যেকে৷
বেশ কিছু সময় পর জমাট বাঁধা স্তব্ধতা ভাঙার দায়িত্বটা মাজেদা খালা নিজেই নিলেন। তিনি বললেন –
: ” খালা বাজার শ্যাস ট্যাকা দিয়েন বাজারে যাইতে হইবো ”
টুম্পা তাকিয়ে আছেন তার দিকে, আর কথা পেলো না খুঁজে উনি, অসুস্থ মানুষটা কেমন আছে, শরীরের অবস্থা কেমন তা জিজ্ঞেস না করে তিনি বাজারের খবরদারি করছে।
মীরা বললো-
: ” টুম্পা আমার ঘর থেকে পার্সটা নিয়ে আয় তো বুবু”
তীব্র অনিচ্ছা আর বিরক্তি নিয়ে টুম্পা মীরার ঘরে যায় ওর পার্স আনতে। এসে দেখে মীরা মাজেদা খালাকে বাজারের লিস্ট তৈরী করে দিচ্ছে। মীরা বলছে-
: ” বাজারের সবচেয়ে বড় মাছ আনবেন খালা, যত বড় পান, রুই, কাতলা, আইড়, বোয়াল, যেটা পান, সেটাই আনবেন তবে মাছ হতে হবে সবচেয়ে বড়”
: ” বড় মাছ কেন খালা? মেমান আইবো নি?”
: ” আরে না, বড় বড় মাছ কেটে হাত পরিষ্কার করেন খালা, কখন কোন কাজে লাগে বলা তো যায় না” বলেই কেমন একটা হাসি হাসে মীরা। হাসিটা কেমন যেন চোখে লাগে মাজেদা খালার। অশিক্ষিত খালা জানে না সাহিত্যের ভাষায় এ হাসিকে “অপ্রকৃতস্থ” হাসি বলে। যা পার্স হাতে দাঁড়িয়ে থাকা টুম্পা খেয়াল করে হতবাক হয়ে । মানসিক চাপ, তার উপর মাথার আঘাতে মাথা টাথা নষ্ট হয়ে গেলো নাকি মীরাপুর?
টুম্পার ভাবনাকে বেশীদূর এগুতে দেয় না মীরা। মুখ থেকে সেই হাসিটা মুছে মীরা টুম্পার দিকে তাকিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে ইশারায় বসতে বলে ওকে। টুম্পা ওর চোখ জোড়া মীরার দিকে নিবদ্ধ করেই চেয়ারটাতে বসে। বেখেয়ালে টুম্পার হাত লেগে পানির গ্লাস পরে যায় নিচে। সেটাকে টুম্পা তুলতে গেলে মীরা নিষেধ করে। মীরা নিজে এক একটা টুকরা পিরিচে যত্ন করে তুলে। মাজেদা খালা ঝাড়ু এনে কাঁচের গুড়ে গুলো তুলে নিয়ে রান্নাঘরে রাখা ডাস্টবিনে ফেলে আসে। তারপর আবারও চেয়ার টেনে বসে তিনজন, এবার মুখোমুখি বসেছে তারা। মীরা একদিকে, টুম্পা আর মাজেদা খালা দুজন নিজেদেরববিপরীতে বসেছেন। পাখির চোখে তাদের বসার ধরনাট অনেকটা ত্রিভুজাকৃতির দেখায়৷ তাদেরকে মুখোমুখি বসাতেই যেন গ্লাসটার নিজের এই আত্নত্যাগ।
বেশ সময় নিয়ে নাশতা সারে তারা। তেমন কথা হয় না তাদের। সবাই ব্যাস্ত একে অন্যের মনের গতিবিধি লক্ষ্য করতে।
খালা বাজার শেষে ফিরে আসলে মীরা মেয়েকে গোসল করিয়ে, খাবার খাইয়ে, আদর করে রেডি হয় কারখানায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। টুম্পা আর মীরা একটা রিকশা নিয়ে রওনা দেয়।
আধঘন্টার মধ্যে জ্যাম ঠেলে ওরা পৌঁছে যায় কারখানায়। এতদিন পর কারখানায় গিয়ে মীরার কেমন যেন বেখাপ্পা লাগে নিজেকে। কর্মচারীদের ছাড়া ছাড়া আচরণে নিজেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ক্যালেন্ডারের মনে হয়৷ আগের কর্মচারীরা সমীহ করার পাশাপাশি ভালো ও বাসতো মীরাকে। কিন্তু এখনকার সবাইও সমীহ করে তবে ছোঁয়াছুঁয়ির বাড়নে অদৃশ্য দূরত্ব রেখে চলে। মীরার বাবার বয়সী একজন ওকে আপনি বলে সম্বোধন করে। অথচ আগের কারখানার জলিল চাচা ওকে মীরামা বলে ডাকতো। একটু যারা ছোট তারা আপু ডাকতো, আর সমবয়সীরা তুমি করেই বলতো ওকে। ঐ লোকগুলো পরিবারের মতো ছিলো। অফিস রুমে বসে মীরা ভাবে- “ঐ লোকগুলোকে ছাড়িয়ে দেওয়ার সময় চুপ থাকাটা আমার বিরাট ভুল হয়ে গেছে। কলম মুখে দিয়ে কি যেন ভাবছে ও। কি আর ভাববে বেচারী? পেপার ওয়েটটা ঘুরাতে ঘুরাতে নিজেকে প্রশ্ন করে ও- “আর কত ভুল করবে তুমি মীরা? রাজিবকে তখন তোমার থামানো উচিত ছিলো”
অগত্যা স্বান্তনা দেয় নিজেকে, যা হয়ে গেছে তা ভেবে লাভ নেই, সামনে যাতে আর ভুল না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। অফিস ঘর থেকে ফোন বুকটা ব্যাগে ঢুকায় মীরা। কাজটা করতে গিয়ে নিজেকে চোর চোর লাগে ওর। সেখান থেকে বেরিয়ে সকলের সাথে আলাপ করতে বসে মীরা। একেক জনের কাজ ও দেখিয়ে দেয়। কোন কাজ কিভাবে কম কষ্টে সুন্দর করা যায় তাই শিখায় ওদের। মীরাকে কারখানার মেঝেতে বসতে দেখে অস্বস্তির শেষ নেই ওদের। মীরা যেন কোন পুতুল, একে সাজিয়ে রাখা চলে। মেঝেতে বসানো যায় না।
মীরা ওদের বেতন, বোনাস ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচলা করে। মোটামোটি পুরো কারখানাটার সামারী নিতে চাচ্ছে। কতটুকু পারছে তা জানছে না তবে চেষ্টার নেই।
কারখানার নতুন স্টাফরা দুপুরে বাড়ি যায় লাঞ্চ করতে। মীরা সবাইকে বললো আজ ও নিজে সবাইকে দুপুরে খাওয়াবে। তখন ঘড়িতে বাজে দুপুর সাড়ে এগারোটা। মাজেদা খালাকে বলে সকাল বেলা আনা কাতলা মাছটার পুরোটাতে লবন মেখে কড়া করে ভাজতে। আর বিশজনের আন্দাজে ভাত রান্না করতে। মাজেদা খালার মাথা গরম অবস্থা। বললেই হলো, এতগুলো মানুষের ভাত রাঁধা এত সোজা? এরচেয়ে বরং একশো জনের পোলাও রান্না সহজ। মীরা শুধু বলে-
: ” খালা আপনি পারবেন, এবং খুব ভালো ভাবেই পারবেন” মীরার এ কথায় তার মেজাজ আরো খারাপ হয়। গড়গড় করে কি বলে যেন খালা ফোন কেটে দেয় মীরার মুখের উপর। স্মিত হাসে মীরা ওর মুখের উপর ফোন কেটে দেয়া দেখে।
টুম্পা খালাকে ফোন করে বলে – খালা বসা ভাত বসিয়ে দেন। ভাতের মাড় ফেলার ঝামেলা থাকবে না। আমাদের গাইবান্ধায় আমরা ভাতের মাড় গালি না, বসা ভাত বসাই।
খালা টুম্পাকে বলে-
: ” পন্ডিতি না করে বাসায় আহ জলদি”
মীরা পরে টুম্পাকে বাসায় পাঠিয়ে দেয় খালাকে সাহায্য করতে, টুম্পার সাথে নাজমা নামের এক ষোড়শী ও যায় মীরাদের বাড়িতে।
এই ফাঁকে মীরা ম্যানেজারকে ডেকে কারখানার হিসাবপত্রের খাতা দেখে, কেমন যেন দেখায় ম্যানেজারকে। তিনি সম্ভবত মীরার এমন তদারকি পছন্দ করছেন না। মীরা বেশ সময় নিয়ে খাতা গুলো দেখে ম্যানেজারকে বলে-
: ” ম্যানেজার সাহেব, এখন থেকে প্রতিদিনের হিসাব প্রতিদিন করবেন। কেমন?”
মাথা ঝাঁকিয়ে তিনি সম্মতি জানান। মীরা বুঝেছে একে চার্জ করে লাভ নেই বরং ঠিল দিয়ে নিজের দিকে আনার চেষ্টা করাই ভালো হবে।
মাজেদা খালা দেড়টার মধ্যে রান্না তো করে ফেলেছে কিন্তু এত খাবার কারখানায় পাঠাবে কি করে? মীরা নিজের আহাম্মকি বুঝতে পেরে সবাইকে বলে তোমরা রিকশা করে আমাদের বাসায় চলে আসো। মুহূর্তেই কারখনায় যেন ইদের খুশি নেমে এলো। রাজিব ওদের সাথে ঠিকঠাক কথাই বলে না, যতটুকুও বলে তাও উঁচু মেজাজে। হয় ধমক, নাহয় গালাগাল। সেদিক বিবেচনায় তাদের বাড়ি গিয়ে খাওয়া তো এদের কাছে অলীক কল্পনা।
প্রতি রিকশায় তিনজন করে পাঠিয়ে মীরা কারখানার সুপারভাইজার শিউলী আপার সাথে এক রিকশায় রওনা করে। প্রথমে তো উঠতেই চান নি তিনি মীরার সাথে। গায়ে ময়লা কাপড়, আর নিজের আর মীরার অবস্থানের ফারাক বিচার করে। কিন্তু মীরা হাত ধরে তাকে রিকশায় তোলেন। সাথে ঘুচিয়ে ূদেয় দুজনকার মধকার দূরত্ব। রিকশায় উঠেছেন তিনি সত্যি তবে সংকোচে যতটুকু সম্ভব নিজের গা বাঁচিয়ে আড়ষ্ট হয় বসে আছেন জড় পদার্থের মতো।
তার আড়ষ্টতা দূর করতে মীরা এই সেই বলে। পরিবারের কথা, ভাইবোন , এটা সেটা জিজ্ঞেস করে। তবুও মীরার উষ্ণতা যেন শিউলীর আড়ষ্ঠতার দেয়াল ভেদ করতে পারে না। তবুও হাল ছাড়ে না মীরা। কারন ও জানে কারখানায় তার অবস্থা কত দৃঢ়।
অবশেষে বাড়ি পৌছায় সবাই। শোকেসে তুলে রাখা সব বাসন বের করে ডাইনিং স্পেসে সবাই একসাথে খেতে বসে৷ খাওয়া শেষ সুতা কাটে যে ছটফটে ছেলেটা সে জিজ্ঞেস করে –
: ” কি উপলক্ষে হঠাৎ খাওয়াইলেন আফা তা তো কইলেন না? এত মজার খাওন খাইয়্যা কি দুয়া করমু আমরা ? ”
মলিন হাসি হাসে মীরা বলে-
: ” আমার বাবা মারা গেছেন আজ চারদিন, আমাদের পরিবারে চারদিনর দিন আত্মীয় স্বজনদেরকে খাওয়ানোর নিয়ম আছে। আমার আত্নীয় বলতে তো তোমরাই, এটাকে আমার বাবার
চারদিনের খরচ ভাবতে পারো ”
মাজেদা খালার হাতে থাকা পানির জগটা পরে গেলো মীরার কথা শুনে। এ মেয়েটা কি হ্যা, বাপ ম’রছে চারদিন আর এ কথা এখন কয়?
টুম্পাও মীরার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আর মীরা ব্যাস্ত সবার থেকে নিজের দৃষ্টি লুকাতে। সবার সামনে আবার শেষবারের মতো বাবাকে না দেখতে পারার কষ্টটা পানি হয়ে গড়িয়ে না পরে সেই ভয়ে…
চলবে…..