Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"প্রিয় ভুলপ্রিয় ভুল পর্ব-১১+১২+১৩+১৪

প্রিয় ভুল পর্ব-১১+১২+১৩+১৪

#প্রিয়_ভুল
লেখা: #মাহবুবা_মিতু
পর্ব : ১১
(অনুগ্রহ করে অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করবেন না)

রাহাত দাঁড়িয়ে আছে মীরার অপেক্ষায়, অনেক শক্তি সঞ্চয় করে মীরা বললো-
: ” আমার ক্ষুধা নেই, আপনি খেয়ে আসুন আমি বরং অপেক্ষা করি আপনার জন্য ”
: ” না, না তা হবে না, চলো তো।” এমন আন্তরিক ভঙ্গিতে কথা বলছে যেন মীরা ওর খুব কাছের কেও।

: “এত ভয় কেন পাচ্ছে তুমি, নাশতা খেতে বলেছি , তুমি এমন ভাব করছো যেন…”
নিরুপায় মীরা পুরো কথা শেষ না করেই উঠে দাঁড়ার, টেবিল থেকে খামটা নিতে নিলে রাহাত বলে –
: ” উহু, ওটা ওখানেই থাক”

খামটাকে সেন্টার টেবিলে রেখেই মীরা পিছু পিছু চলে রাহাতের। এ বাড়ির খাবারের ব্যাবস্থা দোতলায়। মীরা ধীর পায়ে চললো ওর পিছু পিছু।

টেবিলটা খুব সুন্দর করে গোছানো। একটা চেয়ার টেনে দিলো রাহাত মীরাকে। ওকে বসতে দিয়ে ঠিক ওর বিপরীতে বসলো নিজে। খবারের প্লেট এগিয়ে দিয়ে একে একে সবগুলো খাবার নিজ হাতে বেড়ে দিলো। এসব খেয়াল করলো না মীরা কারন ওর মনে এখন অন্য কিছু চলছে। রাহাত যদি ওকে আটকে ফেলে তাহলে কি কি হতে পারে ওর সাথে তাই ভবছে ও।

হঠাৎ চামচ পরে যাওয়ার শব্দে মীরার যেন ধ্যান ভঙ্গ হয়। সামনে তাকিয়ে দেখে সুসজ্জিত খাবারের প্লেট। পরোটা, গরু গোশতের ভুনা, সবজি, ডাল আর ডিম। পাশে আছে জুসের গ্লাস । এমন খাবার ও অনেকদিন চোখেই দেখে না। সংসার জীবণের বয়স পাঁচমাস হতে চললো, গরুর গোশতের কেজি তিন’শ হওয়া সত্ত্বেও একদিনও গোশত রান্না হয় নি ওর ঘরে। প্লেট থেকে চোখ যখন রাহাতের দিকে গেলো। মিষ্টি হেসে ইশায়ার বললো শুরু করতে। মীরার কেমন সংকোচ হয় এত খাবার আর ওর ব্যাবহারে।

রাহাত নিজের মতো করে খেতে শুরু করে। মীরাও পরটার এক কোণ থেকে একটু ছিড়ে সবজির বাটিতে হাত বাড়ায়। প্রথমেই গোশতের বাটিতে হাত দিতে কেমন লজ্জা লাগে ওর। মনে হয় তিনি যদি কিছু ভাববেন।

মীরা পরোটা মুখে দিয়ে বুঝলো পরোটাটা ঘিয়ে ভাজা। মীরার ওর মায়ের কথা মনে পরলো। ওর মা বাড়িতে নশতা তৈরীর সময় সবার জন্য একটা করে পরোটা তৈরী করতো। সেটা তিনি গ্রাম থেকে আনা ঘি দিয়ে ভাঁজতেন। আর সেটা পরিবেশন করতেন গরম গরম। মীরা দেরি করে উঠতো। তাই ওর পরেটাটা ভাজা হতো ও ঘুম থেকে উঠার পরই। কত আদরে বড় হ’য়েছে মীরা। এসব এখন গল্প। সোনালী রূপকথার গল্প।

রাহাত হঠাৎ বলে উঠলে-
: ” বিফটা খাচ্ছে না কেন? বিফ খেতে কোন সমস্যা?
: ” না, তা নয়”
: “আমাদের বাবুর্চি খুব ভালো রান্না করে এটা, খেয়েই দেখো ”

মীরা ভীষণ ক্ষুদার্থ ছিলো। গতরাতের যা ভাত ছিলো তা দুজনের কম হবে, একজনের আবার বেশী। তাই ও না খেয়েই রওনা করে। তাছাড়া চিন্তায় ওর ক্ষুধাও লাগে নি তখন। কিন্তু খেতে বসে, সামনে এত খাবার দেখে ক্ষুধাটা ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির মতো জেগে উঠেছে। রাহাতের উষ্ণ আন্তরিকতায় মীরা কিছুটা স্বাভাবিক হলো। কারন মেয়েরা চোখের চাউনি দেখেই বলে দিতে পারে সেটা কৃত্রিম নাকি খাঁটি। মেয়েদের এ বিশেষ ক্ষমতাটা বিল্ড ইন। এজন্য বয়সের বিচারে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের ম্যাচুরিটি আগে আসে।

প্রথম পরোটাটা শেষ করে ও। আরেকটা পরোটা নিতে কেমন লজ্জা লাগে, তাই জুসের গ্লাসে চুমুক দেয়। রাহাত তাকিয়ে দেখে ওর প্লেটের পরোটা শেষ, দ্রুত ও আরেকটা পরোটা তুলে দিলো মীরার প্লেটে। মীরা কপট নিষেধ করলেও তা ধোপে টিকলো না। রাহাত ওর বাটিতে আরো গোশতের টুকরা তুলে দিলো। মীরা বাটিটা সরিয়ে নিলো, তা না হলে রাহাত দিতেই থাকতো। মীরা খুব তৃপ্তি করে খেলো। সত্যি গোশতের কারিটা খুব ভালো রাঁধেন তিনি। মনে মনে ভাবে মীরা। রাজিবটার কথা ভেবে কষ্ট হয় মীরার। ওকে রেখে এত ভালো ভালে খাবার খাচ্ছে ও।

এমন সময় হঠাৎ রাহাত পরোটার টুকরো দিয়ে গোশতো নিতে নিতে বলে-

: ” বুঝলে মীরা, আমরা যারা অনেক পেয়ে যাই, কিছুই না চাইতে, তারা তখন ভাবি যে কোন কিছু পাওয়া খুব সোজা ”
হঠাৎ এমন কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝলো না মীরা। কিছু সময় বিরতি নিয়ে রাহাত আবার বললো-
” যে দাওয়াতে আমরা গিয়েছিলাম, সেটা আমার প্রাক্তন প্রেমিকার রিসিপশন ছিলো”

মীরা ব্যাপারটা সেদিনই বুঝতে পেরেছিলো, লোরা মেয়েটার কথাতে। মনে মনে তা ভাবে মীরা।

: “একটা জিনিস হয়তে খেয়াল করো নি তুমি, ওর আর তোমার মধ্যে অদ্ভুত একটা মিল রয়েছে, তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম তখন আমার এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছে তুমি “নোভা”,

একটু থামলো রাহাত, জুসের গ্লাসটা হাতে নিয়ে একটা চুমুক দিলো ও। মীরা চোখ ফিরিয়ে নিলো ওর থেকে। মনে মনে ভাবলো মিল? কই আমি তো কোন মিল দেখলাম না।

বিরতির পর রাহাত বললো-

” তোমরা যখন এসে উঠলে আমাদের বাসায়, তখন আমি বিচ্ছেদের যে কষ্ট, যন্ত্রণা, তার সাগরে সাঁতার না জানা প্রাণের মতে ডুবছি, আর উঠছি। নোভা আমাকে ত্যাগ করেছে। কারন কি তা আমি তোমাকে বলবো না। তবে ব্যাপারটা আমাকে পোড়াচ্ছিলো। আর এদিকে তুমি আর রাজিব ভালোবাসায় ডুবে থাকা কপোত-কপোতীর মতো আমারি চোখের সামনে ঘুরঘুর করছো। রাজিবকে তুমি খাবার ঘরে নিয়ে খাওয়াচ্ছো, ওর গোসলের সময় কাপড় হাতে দাঁড়িয়ে থাকছো। এসব দেখে আমার অসহ্য লাগছিলো। আমার বাবার, আমার এত এত সম্পদ, টাকা পয়সা থাকা সত্ত্বেও কেন আমি সুখি হতে পারলাম না। আর রাজিব! রাস্তার এক ছেলে, যার বাবার ঠিক নেই পকেটে কানাকড়ি ও নেই। আমাদের একজন অধস্তন কর্মচারী যার বেতনের সংখ্যা মাত্র চার ডিজিটের। তার কেন এত সুন্দর স্ত্রী, তার জীবণে কেন এত সুখ?

মীরা নিজের স্বামী সম্পর্কে এমন বাজে কথা শুনে কাতর চোখে তাকায় রাহাতের দিকে। রাহাত বুঝতে পারে ওর এভাবে বলা উচিত হয় নি। তাই কথা থামিয়ে ছোট্ট করে বলে-
” সরি, এভাবে বলা ঠিক না হয় তো, কিন্তু তুমি কি জানো ‘রাজিব’ সম্পর্কে? কিচ্ছু না। কি দেখে ভালোবাসলে ওকে? ও সুন্দর রাজপুত্রের মতো তাই? জানো তো সুন্দর স্বামী পাশে দাঁড় করিয়ে শো-অফ করার জন্যই পারফেক্ট, আর কিছুর জন্যই না। যেসব মেয়েরা সুন্দর স্বামী নিয়ে শো-অফ করে, তারা ভিতরে ভিতরে মারাত্মক অসুখি। আমার দেখা বহু মেয়ে রয়েছে যাদের সুদর্শন স্বামী নিয়ে লোক সম্মুখে গৌরবের শেষ নেই, অথচ আড়ালে তারা কোন না কোন কারনে কাঁদে। হয় আর্থিক অস্বচ্ছতা, নয়তে স্বামীর চরিত্রে সমস্যা। এ দুটোর একটা তো থাকবেই। কারো কারো তো একসাথে দুটিও থাকে। হা.. হা… হা…..

আচ্ছা বাদ দেই সেসব কথা, ইউর লাইফ, ইউর চয়েস। পড়াশোনায় আমার সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং সাবজেক্ট কি জানো? এস্ট্রোলজি। একাডেমি সার্টিফিকেট না থাকলেও ইন্টারেস্ট থেকে বেশ কিছু পড়াশোনা আছে আমার এ বিষয়ে। এবং আমার সেই ক্ষুদ্র জ্ঞান বলে – তোমাদের….

মীরা কথাটা শেষ করতে না দিয়ে বলে-
” একটু পানি….”

রাজিবকে বিয়ে করে যে ও ভুল করেছে তা শুনতে শুনতে কান পঁচে গেছে ওর। রাহাতের কাছে নতুন করে আর শুনতে চায় না এ বিষয়ে। তাই পানির কথাটা বলে টপিক চেঞ্জ করলো মীরা।

রাহাত পানি এগিয়ে দিয়ে আবার বলতে শুরু করলো- কোথায় যেন ছিলাম? ও আচ্ছা –
তারপর ঐ যে সেদিন! তোমাকে চা বানিয়ে দিতে বললাম, বিচ্ছেদের কষ্ট ভুলতে সেদিন আমি ড্রিংকস্ করে বাড়ি ফিরে ছিলাম। ঐ সময়কার করা অভদ্রতার জন্য আমি দুঃখিত। আমি আসলে তুমি, বা তোমরা কত অসহায় তা নিয়েই খেলতে চেয়েছিলাম তোমাদের সাথে। তারপরও খেলাটা চালিয়ে গেলাম সুস্থ মস্তিষ্কেও। বাড়িতে তোমার সাথে, বাইরে রাজিবের। কি চেয়েছিলাম জানে? টাকা দিয়ে কিনতে তোমাদের।

কিন্তু সেদিন বিকেলের পর আমার ভাবনার জগতের একটা পরিবর্তন হলো লোরার ফোন কলে। ঐ যে যেদিন তুমি তোমার বন্ধু কে নিয়ে এসেছিলে যে আমার সাথে দেখা করতে, সেদিন।

লোরা জানতো, আমি মানসিক ভাবে কতটা ভেঙে পরেছি নোভার চলে যাওয়ায়। তাই ও সবসময় আমাকে সাপোর্ট করতো, মোটিভেট করতো ঘুরে দাঁড়াতে। সেদিন বিকেলের পর হঠাৎ ঘুম ভাঙলো যেন আমার। বুঝতে পারলাম আমি নোভার আমার সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি আমি তোমাকে দিতে চাচ্ছি। তুমি তো আমাকে ভালো বাসোই না, এবং কোন দিনও তা সম্ভব না। টাকা দিয়ে হয়তো তোমার মালিকানা পাবো, কিন্তু এই যে তুমি জিম্মি হচ্ছো আমার কাছে, তাও অন্য একজনকে ভালোবেসে। কত গভীর তোমার ভালোবাসা। ঘর ছেড়েছো, বাবা-মা ছেড়েছো, পড়াশোনার কথা তোমার জন্য ভাবা এখন পাপ, এত ত্যাগ করে যার হাত ধরলে তার পকেট শূন্য। তার উপর এত বড় রোগ ধরা পরলো হানিমুন পিরিয়ড শেষ না হতেই, আর নোভা এত ভালোবাসি ওকে, টাকা-পয়সার ও অভাব নেই আমার তবুও আমার হাতটা ছেড়ে দিলো মেয়েটা। নাক দিয়ে একটা শব্দ বের করলো ও। যাতে দুঃখ, যন্ত্রণা, হতাশা মিশে আছে। যদিও দীর্ঘশ্বাসটা গোপন করতে চাইলো রাহাত কিন্তু পারলো না। শেষে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে উঠে পরলো টেবিল থেকে। মীরা নিরব শ্রোতা, কিছুই বলার নেই যেন ওর। রাহাত হাত ধুয়ে আসতেই মীরা গেলো হাত ধুতে। রাহাত জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে বসলো দোতলার ড্রাইং রুমে। মীরাকে ইশারা করলো ওর সামনে বসতে।

মীরার ভয় কেটেছে এতক্ষণে। যা বলার তা তো বলেই দিয়েছে ও, ঐ খামে দুই লাখ আছে বাকীটা পরে দিবে ও জোগাড় করে। টাওয়ালে হাত মুছে রাহাতের বিপরীতে থাকা সোফায় বসলো মীরা।

রাহাত মীরার চোখে তাকিয়ে বললো-
” কেন এমন হলো আমার সাথে বলো তো মীরা?
মীরা কি বলবে বুঝতে পারলো না। এমন পরিস্থিতিতে কিই বা বলার আছে? তারচে চুপ থাকাই শ্রেয়। মীরা সে পথটাই বেছে নিলো…

চলবে….

#প্রিয়_ভুল
লেখা: #মাহাবুবা_মিতু
পর্ব: ১২

: ” কিরে ব্যাটা আছস কেমন? ”
: ” আলহামদুলিল্লাহ আপনাগো দোয়ায় ভালোই আছি চাচা ”
: ” তুই তো ব্যাটা চমতকারি দেখায়া দিলি, মার্কেটে আয়া সারা পারলি না, ধাপা ধাপ উইঠা গেলি। ক তো তোর কাহিনি কি?
বিনিত ভঙ্গিতে হেসে রাজিব বলে-
: ” কি যে বলেন , কই আপনি আর কই আমি? কিসের সাথে কিসের তুলনা। ”
: ” কথা প্যাচাইছ না, আজকে বাইছ বছর ধইরা এই ব্যাবছা করি আমি মুখলেছ ,পায়ের নিচের মাটি ছক্ত করতে বহুত টাইম লাগছে আমার। আর তুই!
: ” সবই আল্লাহর দয়া ”

মার্কেটের রাঘব-বোয়াল মুখলেস রাজিবকে এ কথা বলতে ডেকেছে তা ক্ষুণাক্ষরেও আশা করে নি রাজিব। একই মার্কেটে মুখোমুখি কারখানা ওদের। দুজনের কারখানাই রেডিমেড পেশাক তৈরীর।

রাজিবের প্রথমে শুরু ছিলো স্বনামধন্য ব্র্যান্ডের দেয়া কাপড় সেলাই করে। নিজ বাড়িতেই মাত্র তিনটি মেশিন দিয়ে শুরু করেছিলো ওরা। এত কিছু রেখে এ কাজ শুরু করার কারন হচ্ছে রাজিবের একমাত্র এই কাজের আদি অন্ত সম্পর্কে জানাশোনা আছে।
তখন পাশের কারখানার ভিয়া হয়ে কাজ পেতো ওরা। অতিরিক্ত লোড হওয়ায় প্রথমে কাজ গুলো রাজিবকে দিয়ে করিয়ে নিতো তারা। পরে অবশ্য নিয়মিতই কাজ দিয়েছিলো রাজিবকে। কারন স্বনামধন্য ঐ প্রতিষ্ঠানের কাজ সরাসরি পেতে লাখ খানিক টাকা জামানত দিতে হয়। সে টাকা আর পরিচিতি ছিলো না ওদের সেই সময়ে । তাই বাধ্য হয়েই ভিয়া হয়েই কাজ শুরু করে ওরা। তবে রাজিব জানতো প্রাপ্য টাকার চেয়ে অনেক কম পাচ্ছে ওরা। তবুও নিরূপায় ওরা মুখ বুজে পরিশ্রম করে গিয়েছে দিনরাত। ওরা দুজনেই বুঝেছিলো ভাগ্য পরিবর্তনের একমাত্র উপায় যদি কিছু থাকে তা হচ্ছে পরিশ্রম, তার সাথে মীরার ক্ষুরধার বুদ্ধি রাজিবকে এগিয়ে নিয়েছিলো কঠিন পরিস্থিতি উৎরে অনেক দূরে।

মীরা প্রথমে কোন কাজ পারতো না। সুতা কাটতো, আয়রন আর প্যাকেজিং এর কাজগুলো করতো। চারজন কর্মচারী ছিলো তখন। তাদেরকে তিনবেলা রেঁধে খাওয়াতো। সকালে উঠে নিজ হাতে বাজার করা, কাটা-বাছা রান্না সবই একা হাতে করতো মীরা। ওদের কর্মচারী চারজন রাতে ঘুমাতে করখানায় বিছানা পেতে। খাওয়া, থাকা যেহেতু ওরাই দেখতো তাই কম বেতনে ছেলে গুলোকে দিয়ে কাজ করাতে পারতো ওরা। এটা একটা এডভান্টেজ ছিলো ওদের নতুন ব্যবসা দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে।

মীরা কারখানার দেখাশোনা করতো আর রাজিব বাইরের সব কাজ মালপত্র আনা, পৌঁছে দেয়া৷ পরে অবশ্য মীরা দেখে দেখে অনেক কাজ শিখে। প্রায় তিন বছর ওরা নিজ বাড়িতেই কাজ চালিয়ে গেছে ভিয়া হয়ে। সেই অভিজ্ঞতায় ভ্যারাইটি কাপড়, ডিজাইন আর সময় ভিত্তিক মার্কেটে চাহিদার ব্যাপারটায় ওরা বেশ দক্ষ হয়ে ওঠে।

একদিন হঠাৎ রাতের খাবারের সময় মীরা বলে আমরা ইসলামপুর থেকে নিজেরা কাপড় কিনে কেন শুরু করছি না?
রাজিব চমকে উঠে ওর কথা শুনে। কারন কিছুদিন ধরে ও নিজেও মনে মনে এরকমই কিছু ভাবছিলো।
রাজিব মুচকি হেসে বলে-
: ” জানো এ কথাটাই ঘুরছিলো মাথায়, শব্দ হয়ে বের হয় নি শুধু, তোমার কি মনে হয় মীরা আমরা পারবো? ”
: ” অবশ্যই পারবো”
: ” তাহলে ওদের কাজটা বন্ধ করে দিই কি বলো?”
: ” আরে না, না, কোন তাড়াহুড়ো না। আপাতত আমরা অল্প পরিসরে শুরু করবো। তুমি মার্কেট খুঁজো আগে। যাদেরকে আমরা আমাদের তৈরী কাপড় গুলো বিক্রি করবো ”

রাজিব যেন অন্ধকারে দিশা পেলো। আর্থিক অপ্রতুলতার দরুন এসব ভাবনা প্রকাশের সাহস ও পাচ্ছিলো না এতদিন। তবে মীরা যখন নিজ থেকে বললো তাহলে অবশ্যই পারবে ওরা।

যে কথা সেই কাজ, রাজিব আরো দুটো মেশিন কিনে আলাদা করে ওদের কাজ অল্প পরিসরে শুরু করে।
মীরা মার্কেট ঘুরে ঘুরে কাপড়ের অনুসঙ্গ জিনিসপত্র কিনে। বিয়ের আগে ও কখনোই রেডিমেড জামা পরতো না। নিজে মার্কেট ঘুরে ঘুরে কাপড়, লেইস, পাইপিন, টারসেল কিনে ডিজাইনার ড্রেস তৈরি করতো। আত্নীয় মহলে সবাই ওকে বলতো ফ্যশন ডিজাইনার। সেই জ্ঞান ও প্রয়োগ করলো নতুন কাজে। তৈরী করা শুরু করলো পার্টি ড্রেস।

প্রথম প্রথম অন্যের তৈরী করা ট্যাগ যা রেডিমেড কিনতে পাওয়া যেত তাই জুড়ে দিতো কাপড়ে। মীরা বলেছিলো আমাদের কাপড়ের কোয়ালিটি, ডিজাইন তো অন্যদের চেয়ে আলাদা আর সুন্দর। আমরা কেন নিজের নামে ট্যাগ তৈরি করছি না। মীরার বুদ্ধিতে একটা ট্যাগ তৈরী করে ওরা। পরে ওরা তৈরি করে ওদের নিজের স্বতন্ত্র ক্ষুদ্র ব্র্যান্ড। মীরা বলেছিলো-
” আপাততঃ আমরা মার্কেট ধরবো, লাভ করবো অতি সামান্য। আমাদের টার্গেট বেশী লাভ করা না হবে বেশী বিক্রি। তাহলে কম লাভ করলেও বিক্রি বেশী হওয়ায় তাতে পুষিয়ে যাবে” সে অনুযায়ী কাজ শুরু হলো। রাজিব স্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা আর ভালেবাসা স্বরূপ তার ক্ষুদ্র সেই ব্র্যান্ডের নাম দিয়েছিলো “মীরা”।

তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি।
ধীরে ধীরে কাজের পরিধি বাড়ে। একটু গুছিয়ে উঠলো যখন বুদ্ধি করে দুজনে পাসপোর্ট তৈরি করে ইন্ডিয়ায় গেলো। ওখানকার কাপড়ের ডিজাইন, কোয়ালিটি, দেখতে। বেশ কিছু ড্রেস কিনে আনে ওরা এক্সপেরিমেন্ট এর জন্য। সে সব ড্রেস থেকে ডিজাইন হুবুহু কপি করে না ওরা। সেটাকে আরো মডিফাই করে নতুন কিছু তৈরী করে মীরা।
” Steal Like An Artist ” এর মতো। যদিও এই বইয়ের লেখক এ বইটা তখন অবধি লিখে নি।
প্রথম এক্সপেরিমেন্ট পিছ টা নিজের জন্য রাখতো মীরা। ততদিনে অনেকের দেখাদেখি ওরাও ওদের বিজনেস টাকে অনলাইনে মুভঅন করলো। ধীরে ধীরে নিজে ফটোসেশান করতে শুরু করে নিজের ব্র্যান্ড আর অনলাইন পেইজের জন্য। অপরূপ সুন্দরী মীরা হয়ে গেলো ওর নিজেরই ব্র্যান্ডের মডেল।

ওদের কারখনা ঢাকা থেকে একটু ভিতরে ছিলো।
পরিবহন সমস্যা হওয়ায় বাড়ি থেকে মার্কেটে শিফট করে ওর কারখানা। কারন মীরার অনেক পরিশ্রম হয়ে যায় বাড়িতে কারখানা থাকায়। তবুও মীরা বললো কারখানার কাছাকাছি বাসা নিতে, যাতে মীরা দিনে অন্তত একবার কারখানায় গিয়ে তদারকি করতে পারে। রাজিব তাই করলো। বাসা নিলো কারখনার কাছাকাছি। লোকাল মার্কেট গুলোতে ততদিনে ওদের কারখানায় তৈরি লেডিস শার্ট, টপস, কুর্তি আর পার্টি ড্রেসের চাহিদা বাড়ছে দিনে দিনে। অনলাইনে ও অর্ডার আসে টুকটাক। যদিও মানুষ ততদিনে অভ্যস্থ হয়ে উঠে নি অনলাইন কেনাকাটায়।
তবুও ভাল একটা অবস্থানে পৌঁছে যায় ওরা। এই হচ্ছে “মীরা” ক্লথিং ব্র্যান্ড এর পিছনের গল্প।

একই ফ্লোরের অপর পাশের মুখলেসের নিজস্ব ব্র্যান্ড রয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে। তার ব্যাবসায়িক ব্যাপ্তি বিশাল। বড় বড় মার্কেটে তার বাঁধা কাস্টোমার কয়েকশত। তার মাল যায় বিভাগীয় শহরগুলোতেও। সে হিসেবে রাজিব বিগেনিং স্টেজে। ও আপাততঃ ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটে ওদের কাপড় গুলোর সাপ্লাই দিচ্ছে। অনলাইনে বিক্রি খুবই কম। তিনি ওকে কেন এসব কথা বলছে তা বুঝতে পারছে না রাজিব।

মুখলেস বিকট হাসি হেসে বললেন –
: ” আমি সোজা মানুষ আমার সেজা কথা। তুই এখানে কারখানা রাখা পারবি না, আগামী মাছে কারখানা খালি কইরা দিবি। তুই যা ছুরু করছস ভবিছ্যতে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হইবার পারছ। সেই সুযোগ আমি তরে দিবার চাই না। তরে ভালোবাসি তাই ছুন্দর মতো কইয়া দিলাম”

কথাটা শেষ করে একটা অট্টহাসি হাসলো মুখলেস।
পান মুখে অট্টাহাসি হাসায় কিছুটা বিকট দেখালো তাকে। হান্টেড মুভির রাক্ষসের মতো লাগলো। যেন এ মাত্রই র*ক্ত খেয়ে এসেছেন তিনি।

রাজিব এ পরিস্থিতিতে কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না। রিজিক আল্লাহ নির্ধারিত, আরেক জন একই ব্যাবসা করলে তাকে শেষ করে দিতে হবে। এটা যে কত ছোট মানসিকতা তা মুখলেস নিজেও জানে না হয় তে। ও বললো- হুট করে কোথায় যাবে আমি, এত মালপত্র নিয়ে। আমি মীরার সাথে আলাপ করে দেখি।

ধীর চোখে চেয়ে তিনি বললেন-
: ” তুই কি বৌয়ের কথা ছাড়া চলস নারে রাজিব ?
বলেই আবারে হাসেন সে। তার সাথে যোগ দেয় তার পাশে বসা মানুষ গুলে। একটু বিরতি নিয়ে বলেন-
: ” যাক গা, দেখ আলাপ করে। আলাপ যা মন চায় কর, কিন্তু এখান থেইক্যা তোরে চইলা যাইতে হইবো এটা হলে ছেস কথা। ”

রাজিব কুর্তি, টপসের পাশাপাশি পার্টি ড্রেসের কাজ শুরু করেছে বছর খানিক হলো। জমানে সব টাকা ইনভেস্ট করেছে নতুন প্রোজেক্টের মালপত্র কেনায়। সমানে ইদ, পূজা এরি মধ্যে তার খারাপ নজরে পরে গেলো। এত এত কাপড়, মালপত্র কিনে রাখা। এগুলো নিয়ে জায়গা বদল করা খুবই কঠিন কাজ। তাছাড়া কারখানা মার্কেটে থাকার উপকার হচ্ছে নিত্য নতুন কাস্টোমার পাওয়া যায়। এখান থেকে হুট করে কোথায় যাবে ওরা? ভাবতে ভাবতে বাড়ি পৌঁছায় রাজিব।

মীরা একটু আগে ফিরেছে বাইরে থেকে। একটা অনলাইন ডেলিভারি ছিলো। যদিও কারখানার পলাশ যায় ডেলিভারি দিতে। আজ ওর শরীর খারাপ হওয়ায় আর মেয়ে কাস্টমার হওয়ায় নিজেই গলো ও। তবুও দুজনের জন্য শরবত করে এনে জিজ্ঞেস করলো রাজিবের মন খারাপের কারন।

শরবত হাতে নিয়ে রাজিব সব খুলে বললো ওকে। মীরা জানে এ মুহূর্তে জায়গা বদল ওদের ব্যাবসার জন্য ক্ষতিকর। এখন সময় অতিরিক্ত কাজ করে মালপত্র স্টক করে রাখার। আর এ সময়ই এমন ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পরেছে ওরা। তাছাড়া সময় চেয়ে নিবে তারও উপায় নেই। কারন মুখলেস মার্কেট সমিতির সভাপতি। তার উপর কথা বলার কেও নেই। গত ছ’বছর ওরা ব্যাবসা করছে। এমন পরিস্থিতিতে পরে নি এর আগে কখনো। মীরা বললো তুমি চিন্তা করো না। আমি একটু ভেবে দেখি। আল্লাহ সহায় হলে উপায় একটা ঠিক বের হয়ে যাবে।

চলবে…

প্রিয় ভুল
লেখা: মাহবুবা মিতু : Mahabuba Metu
পর্ব: ১৩

মীরাদের এখনকার বাসাটা বারো তলা। ওরা থাকে লিফটের নয় তলায়। বারান্দাটা দক্ষিণমুখী আর সামনে তিনতলা মসজিদ হওয়ায় আলো বাতাস পাওয়া যায় প্রচুর। কাপড় শুকাতে দিলে ঘন্টার কাটা না ঘুরতেই তা শুকিয়ে মচমচে হয়ে যায়।

বেখেয়ালি মীরা এতদিন কাপড় শুকাতে দিয়ে সারাদিনেও খবর নিতো না, পরদিন আবার যখন কাপড় শুকাতে দিতে আসতো তখন সেগুলো তুলে নিত। কত কত নতুন জামার রং যে জ্বলে গেছে অল্প দিনে তা খেয়ালই করে নি ও।

যদিও এখন হ্যাল্পিং হ্যান্ড রয়েছে কাপড় ধোঁয়া আর ঘরের কাজ করার জন্য। তাছাড়া কারখানার ম্যানেজার টুম্পাও মীরা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে ছোট ছোট কাজগুলো ও নিজের থেকেই করে দেয়। গাছে পানি দেয়া, কাপড় বারান্দায় থেকে এনে ভাঁজ করে জায়গা মতো রেখে দেয়া, বুয়ার অনুপস্থিতিতে রান্না ঘরের অলিখিত দায়িত্ব ওর। মীরা যে ওকে ভরসা করে ভুল করে নি তার প্রমাণ টুম্পা দিয়েছে বেশ কয়েকবার। ওদের বন্ডিংটা এত সুন্দর যে বাইরে থেকে কেও দেখলে ঠিক বলবে এটা মীরার বোন। টুম্পাকে একেবারে ছোট বোনের মতো ভালোবাসে মীরা।

টুম্পাকে এনে দিয়েছিলো মীরার চাচাতো বোন পিয়াসা। মীরার এ চাচাতো বোনের সাথে ওর দেখা হয়েছিলো ইন্ডিয়ায়। ট্রেনে করে কলকাতা থেকে দিল্লি যাওয়ার পথে। দীর্ঘ এই ট্রেন যাত্রাপথে দু’বোনের মধ্যে অনেক দিন পর বেশ কথা হয়। খোঁজ নেয় দু’জন দু’জনের। সেখানে গিয়েও ওরা একসাথেই ঘুরেছিলো। বিদেশ বিভুঁইয়ে নিজের লোক পেয়ে ভালো হয়েছিলো দুই পরিবারেরই। এরপর দেশে ফিরে নিয়মিত কথা হয় দুজনের। সেই পিয়াসা মীরাকে বলেছিলো টুম্পাকে একটা কাজ জোগাড় করে দিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে সিট পেয়েও মেয়েটা রাজনীতির বেড়া কলে পরে বিশ্রী ভাবে চলে এসেছে সেখান থেকে ।

পিয়াসাই টুম্পার একমাত্র পরিচিত এত্ত বড় শহরে। ওদেরও পরিচয় ট্রেন ভ্রমণের সময়। শ্বশুরবাড়ি গাইবান্ধা থেকে ট্রেনে করে ঢাকায় ফিরছিলো পিয়াসারা। পাশের সিটে গাইবান্ধা থেকে একাই ঢাকা যাচ্ছিলো টুম্পা। প্রথমে পিয়াসা দীনভাবাপন্ন এই মেয়েটাকে এড়িয়ে চললেও পিয়াসার ছোট ছেলেটা একটুর জন্য মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলো এই টুম্পার জন্য। পিয়াসা অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ টুম্পাকে বলেছিলো ঢাকায় ওর যদি কোন প্রয়োজন হয়, অবশ্যই যেন পিয়াসাকে নক দেয়।

সরল এই মেয়েটার জটিল এই শহরে এসেই যে পিয়াসাকে প্রয়োজন হবে তা হয়তো ভাবতে অবকাশ পেয়ে উঠে নি দুজনের কেওই । মাস দুয়েকের মধ্যেই সিনিয়রদের বুলিং এ
লাঞ্চিত হয়ে টুম্পা এক সকালে এসেছিলো পিয়াসার কাছে।

কতটুকু অসহায় হলে এমন অল্প পরিচিতের কাছে সাহায্য চাইতে আসে মানুষ। তবুও পিয়াসা আন্তরিক ভাবে দেখেছে ব্যাপারটা।

কিছুদিন পিয়াসার বাড়িতে টুম্পাকে রাখার পর ওর শ্বাশুড়ি পিয়াসাকে বলে “এমন শিক্ষিত মেয়েকে তো আর ঘরের কাজের জন্য রাখা যায় না। কোন কাজের হুকুম করতে চোখে ঠেকে, তুমি ওর অন্য ব্যাবস্থা করো মা”

পিয়াসা বুঝতে পারে শ্বাশুড়ির ওকে এ বাড়িতে রাখতে অনিহার কারন। পিয়াসার উঠতি বয়সের এক লাফাঙ্গা দেবর থাকায় ওর শ্বাশুড়ি টুম্পাকে রাখাতে অসম্মতি জানাচ্ছে তা না বললেও বুঝে পিয়াসা। নিরূপায় পিয়াসা তখন নক করে মীরাকে। ওর গার্মেন্টস ব্যাবসাটা ভালোই চলছে। অনেকগুলো ওয়ার্কার রয়েছে ওর কারখানায়। ও টুম্পাকে ঠিক একটা ব্যাবস্থা করে দিতে পারবে।

মীরার তখন একজন ওয়ার্কার দরকার ছিলো এটা সত্যি। কিন্তু মীরার শিক্ষিত কাওকে লাগবে না, ওর ওখানকার কাজ জানে এমন অভিজ্ঞ কাওকে দরকার।

পিয়াসা সব খুলে বলে, খুব করে অনুরোধ করে, যে কোন কাজের জন্য হলেও ওকে যেন মাথা গোঁজার একটা জায়গা ঠিক করে দেয়৷

রোগা, শুকানো হাড় জিরজিরে এক মেয়ে টুম্পা । কাপড় চোপড় আর শরীরে অভাবের ছাঁপ স্পষ্ট। অভাব অনটনে তরুণ বয়সের দ্যুতি তার রং ছড়াতে পারে নি, চাপা পরে আছে ঐ দুষ্ট গ্রহের তলে। মীরার মায়া হয় টুম্পা মেয়েরার জন্য। বিশ্বাস করতে কেন জানি দ্বিধা হয় না ওর। রেখে দেয় নিজের কাছে। কিছুদিন পর ওকে ভালোবাসে তুলে দেয় কারখানার ম্যানেজারের দায়িত্ব। বেতন ঠিক করে খাওয়া থাকার সব খরচ বাদে পাঁচ হাজার টাকা। টুম্পা যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না। থাকার জায়গাটাই ওর ভীষণ দরকার ছিলো। টাকাগুলো যেন ওর উপরি পাওনা।
মনে মনে ভাবে মীরার দয়ার এ ঋণ ঠিক শোধ করবে একদিন।

নতুন কাজ, নতুন পরিবেশে টুম্পা নিজেকে মানিয়ে নেয় খুব দ্রুত। এরিমধ্যে একদিন কারখানায় ছুটি হলে হঠাৎ টুম্পা এসে মীরার হাত ধরে বলেছিলো-
: ” এত ক্যান ভালোবাসেন আমারে আপা?
আমার প্রতি আপনার বিশ্বাস তো ভুলও হতে পারে, ঠকও তো হতে পারি ”
উত্তরে ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে টুম্পার ধরা হাতে, ওর হাত, চোখে চোখ রেখে মীরা বলেছিলো-

: ” ভালোবাসাটা আমার জীবণের জন্য কালরে টুম্পা। জীবণের সবচেয়ে বড় জায়গায় ভুল করে বসে আছি আমি, করা সেই ভুলটাকে ভুল জেনেও দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছি নিজের এই চিন্তাটাকে ভুল প্রমাণ করতে। যদিও দিনশেষে পারবো কি না তা জানি না। তাই বলে মানুষকে বিশ্বাস করতে ভুলিনি আমি। মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ, জানিস তো?
অপলক দৃষ্টিতে ক্ষণকাল চুপ থেকে মীরার থেকে দৃষ্টি
মুষ্টিবদ্ধ সেই হাতে নিয়ে টুম্পা বলেছিলো-

: “আপা আপনার বিশ্বাসের কোনদিন অমর্যাদা করবো না, আপনি আমার জন্য আশীর্বাদ ”

মনে মনে মীরা বলেছিলো-
: ” তুই ও ”

মীরার ঢাকায় আসার আগে টুম্পা কারখানার মেয়েদের সাথে ঘুমাতো। টুম্পার কাজের প্রতি একাগ্রতা, নিষ্ঠা আর সততা দেখে মীরা ওকে ঢাকায় বাসা নিয়েই রেখে দিয়েছে নিজের বাড়িতে। তাছাড়া মীরার ঘরে নতুন এক জনের আগমনের দিন ঘনিয়ে আসছে। এমন সময় আত্নীয়রা সবাই
কাছাকাছি থাকে, যত্ন নেয় হবু মায়ের। কপাল পোড়া মীরার তো সে ভাগ্য নেই। এরমাত্র পিয়াসা আসে মাঝেমধ্যে। তার উপর কত দিকে কত কাজের দেখভাল করা লাগে মীরার এ শরীর নিয়েও। রাজিবটা যে বড্ড বেখেয়ালি।

এ সময় এক জন কাওকে দরকার হয় পাশে । আগের বারের মি*সক্যা*রেজ ভীতির সঞ্চার করেছে মীরার মনে। টুম্পা তাই আগের চেয়ে বেশী খেয়াল রাখে মীরার। টুম্পা আগের বার থেকেই পড়াশোনা, কারখানার কাজকর্ম করেও বাড়ির কাজে হাত লাগাতো । যত্ন করতো মীরার। শরীরে, পায়ে, পেটে তেল মালিশ, করে দিতো নানি দাদীদের মতো করে। কাজ থেকে ফিরলে শরবত এনে দিতো সাথে সাথে। এবারও তার ব্যাতিক্রম হয় নি। বরংচ এবার ওর তদারকি বেড়েছে আগের বারের চেয়ে। মেয়েটা ওকে নিয়ে এমন ব্যাস্ত হয়ে পরে যে মীরার মাঝে মাঝে ভয় হয় ওকে নিয়ে। তবুও সে ভয় অমূলক প্রমাণিত হয় বারংবার। দিনশেষে টুম্পার মতো একজনকে পেয়ে মীরা খোদার কাছে কৃতজ্ঞতা জানায়।

মীরা দিনের একমাত্র চা টা নিয়ে ওর রুমের সাথের লাগেয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে। প্রেগ্ন্যাসির এ সময়টাতে চা খাওয়াটা বিশেষ তদারকি করে টুম্পা। ডাক্তার বলেছে না খেতে। অতি জরুরি হলে দিনে এক কাপ, তার বেশী না। এ মেয়েটার হাতের চা ছাড়া অন্য কোথাওকার চা মুখে রুচে না ওর, তাছড়া ওর তৈরী করা চা না খেলে মীরার ক্লান্তি নড়ে না শরীর থেকে। তাই লুকিয়ে-চুরিয়ে খায় না ও। দিন শেষে এই এক কাপই ভরসা।

চায়ে চুমুক দিয়ে চির পরিচিত এই চারপাশে চোখ বুলায় মীরা। এত আগ্রহ আর যত্ন নিয়ে দেখে যেন এবারই প্রথম দেখলো ও এ দিকটাকে। যদিও দৃষ্টিনন্দন কিছুই নেই দেখবার মতো। তবুও যা আছে তাকেই নিজের মতো করে নিয়েছে ও।
আশেপাশে সার দেয়া বিল্ডিং। একেকটা বিল্ডিং আরেকটার উচ্চতার সীমানাকে ভাঙতে ব্যাস্ত যেন।

চায়ের ক্যাফেইন অনান্য দিন ফাঁকা করে দেয় ওর মাথাটাকে। এই চা খেয়েই ঐ দিনকার মতো সব কাজের সমাপ্তি হয় যেন অঘোষিত ভাবে, এর পরই ঘুমুতে যায় মীরা। চা খেলে ঘুমের সমস্যা হয় অধিকাংশের। তবে এই চা পান ওর ঘুমের কোন ব্যাঘাত ঘটায় না। বরং ক্লান্তি দূর করে প্রশান্তি এনে দেয়।

চা প্রায় শেষ, তবুও মাথাটা ফাঁকা হচ্ছে না। চারদিক থেকে দুঃশ্চিন্তা জেঁকে আসছে যেন। শেষ চুমুক দিয়েও মাথাটা খালি হলো না। চা শেষ করে কোন কিছুই ভাবতে পারছে না মীরা। বারবার মীরার মনে পরছে বিকেলের রাজিবের বলা ঐ কথাগুলো। যদিও রাজিবকে ও যা বলেছিলো তা নিছক ওকে স্বান্তনা দিতে। ওর হার্টের কন্ডিশন ভালো না। অতিরিক্ত স্ট্রেস ওর জন্য ঝুঁকি। তাই মীরা ঢাল হয়ে আগলে রাখে রাজিবকে। যার উল্টো আগলে রাখার কথা ছিলো মীরাকে।

মীরা এ জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে আজকের এ জায়গায় পৌঁছেছে। দিনের পর দিন যে-সব কঠিন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে সে সময় গুলোতে মীরা অধৈর্যের মতো খোদাকে দুষেছে। কিন্তু এখন মীরা পিছন ফিরে তাকালে সাহস আর শক্তি পায়। ও মনে মনে বিশ্বাস করে ওর জীবণে যা খারাপ তা শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু ভালো কিছু হওয়া পালা। খোদা ওর বিশ্বাসকে সত্যি করে দিয়েছে। একটা সময় জীবণ যখন অতল সমুদ্রে ভাসিয়েছে ওকে, ভেসে থাকতে যাই ধরেছে তাই যেনো ক্রুর হাসি হেসে পালিয়েছে সাহায্য না করে। খোদাকে ভরসা করা মীরার সময় বদলেছে এখন। যদিও এই সবকিছুর একমাত্র কৃতিত্ব মীরা নামের ছোট্ট সে মেয়েটার। তবুও কখনোই তা ওর আচরণে প্রকাশ করে না ও। অনুগত স্ত্রীর মতো স্বামীর মতামতকে প্রাধান্য দেয়৷ রাজিবও তাই, ছোট থেকে ছোট সিদ্ধান্তও মীরাকে না জিজ্ঞেস করে নেয় না ও৷ এমনকি ওদের এ্যানেভার্সারির কেকটার বেলায় পর্যন্ত। বাসায় ফিরবার সময় ফোন করে জিজ্ঞেস করবে-
: ” মীরা কেকের উপর কি লেখা থাকবে?”
মীরা খানিকটা বিরক্ত হয়, এমন হাঁদারাম কেন ছেলেটা। এটুকু কাজও কি ও নিজ থেকে ভেবে করতে পারে না?

মাঝে মাঝে আবার হাসিও পায়। কিন্তু দু’জনে যখন ঝগড়া হয়, মীরা তখন রাজিবকে বলে-
” তুমি একটা বদের হাড্ডি, সব চিন্তা আমার মাথায় দিয়ে রাখো কোন কিছু না বোঝার বাহানায়, আর নিজে সব সম চিল মুডে থাকো”

উত্তরে রাজিব কি বলে তা এখানে অপ্রাসঙ্গিক। রাজিবের সব দায়িত্ব ওর কাঁধে চাপানোর ব্যাপারটা মীরা প্রথম প্রথম উপভোগ করতো। নিজেকে বিশেষ ভাবতো, স্বামীর এই কাজটাকে ভালোবাসা মনে হতো। কিন্তু যখন ব্যাবসার পরিধি বাড়তে থাকে তখন এটা বিরক্তির কারন হয়ে দাঁড়ায়। মীরা দিনরাত পরিশ্রম করে করে শেষ৷ রাজিবের যেন কোন হেলদোল নেই। সে ব্যাস্ত নতুন কোন মডেলের বাইক এসেছে, নতুন ফিচারের ফোন, বয়াবসায়ীদের সাথে প্রমোদভ্রমণে। অথচ মীরা এখনো একটা স্মার্টফোন কিনে নি। রাজিবের এতবার ফোন বদলালো কিন্তু কিনবার সময় ওর কি একটা বারও মনে হয় না মীরার জন্য নিই একটা। এসব ভেবে কষ্ট পায় মাঝে মাঝে। যদিও এসব বিলাসিতা ভেবে এড়িয়ে যায় মীরা ।

পৃথিবীর যত যা সৃষ্টি রয়েছে তা সবার আগে প্রসেস হয় মানুষের মস্তিষ্কে। পরবর্তীতে তা বাস্তবে রূপ পায়। মীরা মানসিক এ পরিশ্রম করতে করতে ক্লান্ত। সব কাজ ওয়ার্কাররা করে দিয়ে যায়। কিন্তু চিন্তার ভারটা তো কেও নেয় না। ওরা তো পর, নিজের মানুষটাই তো স্বার্থপর। তার সাথে যোগাযোগ ঐ বেডরুমের বিছানায়। মাঝে মাঝে এসব ভেবে মীরার মনে হয় সত্যি কি ও ভুল করলো ওকে জীবণসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়ে।

হঠাৎ সবার করা ভবিষৎ বাণী ভেসে উঠে চোখের সামনে। মস্তিষ্ক তখন ব্যাস্ত হয়ে যায় নিজের ভুলকে ভুল জানার পরও সবার চোখে ঠিক প্রতিষ্ঠিত করার কদর্য খেলায়। খেলাটা যে কতটা কদর্য তার পরিমাপ জানে মীরা। তবুও এমন ভাবে বুঝায় নিজেকে যেন সে সম্পর্কে ও অজানা।

মনে মনে খুব বিরক্ত হয় মীরা রাজিবের ওপর। ও কেন মুখলেছ চাচাকে বলেছে -যে মীরাকে জিজ্ঞেস করে নিই। ওর মাথায় কি কোন বুদ্ধি নাই। ও তখন যদি তাকে বলতে পারতো যে – ” এটা বললেই তো হয় না, সময় লাগবে, সময় দেন আমাদের ” তাহলে ব্যাপারটায় কোন আশা থাকতো। কিন্তু ওর ঐ বলা কথায় প্রকাশ হয় তার অন্যায় আদেশে নিরবে মৌনতা প্রদর্শন। এ ছোট্ট ব্যাপারটা কি বুঝে না রাজিব। ঘুরে বারান্দার চেয়ার টেনে বসে মীরা। পায় ঝিঁঝি ধরে গেছে। চেয়ারে বসে শরীরটাকে এলিয়ে দিয়ে চোখদুটো বন্ধ করে মীরা ভাবে তবুও কাল ও মার্কেটে যাবে মুখলেছ চাচার সাথে কথা বলতে। এ ছাড়া অন্য উপায় নেই আর। হঠাৎ চোখ গেলো বিছানায়। কেমন বিশ্রীভাবে শুয়ে আছে রাজিব। হাতপা ছুঁড়ে, যেন কোন মা’তাল নেশায় আছন্ন হয়ে শুয়ে আছে। অন্ধকার ঘর তবুও বারান্দার আলোয় দৃশ্যটা চোখে পরলো মীরার।

ঘড়িতে রাত সাড়ে বারোটা। আজ সন্ধ্যায় একটা হলুদের প্রোগ্রামের জন্য দেড়শো ড্রেসের অর্ডার আনতেই এ শরীর নিয়েই গুলশান গিয়েছিলো মীরা। জ্যামের কারনে বাসায় ফিরতে দেরি হয়েছিল মীরার। রাজিব তাই অসুস্থ স্ত্রীর বাড়ি ফিরবার অপেক্ষায় না থেকে মনোযোগ দিয়েছে নিজের ঘুমে। রাজিবের এই শ্রী হীন ঘুমটাই যেন প্রমাণ করে মীরার সুখে থাকার সঙ্গা।
ডানপক্ষ = বামপক্ষ (প্রমাণিত)

এসব চিন্তাকে ডালপালায় বাড়তে না দিয়ে মীরা দ্রুত ওঠে বিছানায় যায়। মুখে বালিশ চেপে কাঁদে, দুনিয়ার কেও জানে না মীরার এই অ’সুখের কথা। কাওকে কোন দিনও এটাকে জানতে দিবে না মীরা। শুধু নিরব সাক্ষী মীরার এই বলিশটা…

চলবে…

#প্রিয়_ভুল
লেখা: #মাহবুবা_মিতু
পর্ব: ১৪
(অনুগ্রহ করে অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করবেন না)

আজ সকালে অনেকদিন পর খাবার টেবিলে দেখা হয় রাজিবের সাথে মীরার, কারন গত রাতে অনেক দেরিতে ঘুম আসায় মীরার আজ ঘুম থেকে উঠেছে বেলা করে।

রাজিব চুপচাপ এমন ভঙ্গিতে নাশতা খাচ্ছে, যেন ও ছাড়া কেও নেই এখানে, কিংবা মীরা ওর অপরিচিত কেও। মীরা বসে আছে টেবিলের অপরপ্রান্তে। অবাক চোখে দেখছে রাজিবকে। অপরপ্রান্তে বসা লোকটা আর যেই হোক মীরার সেই রাজিব না যে মীরাকে না পাওয়ার আশঙ্কায় নিজের জীবণ রাখাকে অর্থহীন ভেবে আ’ত্নাহুতি দিয়েছিলো। ইশ্বর ঐ দিন রাজিবকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন, বাবা-মা’র অবাধ্য মীরাকে শাস্তি দিতে।

মীরা পরোটা রোল করে চায়ের মধ্যে ডুবাতে ডুবাতে
ভাবে রাজিব মীরার জীবনে শুধুমাত্র একটা শো-পিসের মতো। যার থাকাটা শোভা বাড়ায়, না থাকাটাও কোন সমস্যার না।

মীরা ভেবেছিলো রাজিবের এ গা বাঁচানো স্বভাব, দায়িত্বহীনতা, সংসারের প্রতি অবহেলা একটা বাচ্চা নিলে ঠিকঠাক হয়ে যাবে। কিন্তু মীরার গত মিসক্যারেজের সময় যখন যন্ত্রণায় ছটফট করছিলো মীরা, স্বামী নামের এ লোকটা কোন কিছুতেই পাশে ছিলো না। না ফিন্যান্সিয়ালি, না ফিজক্যালি। তিনি তখন তার ব্যাবসায়ী পার্টনারদেরকে নিয়ে দুবাই গিয়েছিলেন প্রথমবারের মতো। খবরটা শুনেও তিনি আসতে পারেন নি কারন পুরো ট্রাভেলিং প্রোগ্রামে তার অনেক দায়িত্ব। এ অবস্থায় তিনি কিভাবে এসব ফেলে চলে আসবেন। মীরা কষ্ট পায় নি ওর আচরণে। বরঞ্চ মনে হয়েছে ও এলেই ঝামেলা বাড়বে আরো। ওকে দেখলে রাগ বেড়ে যেতো মীরার। তখন মনে মনে ভেবেছে এবার ফিরলে আর বাড়িতে ঢুকতে দিবে না ওকে। পরোক্ষণে কি ভেবে যেন শান্ত হয়ে যায় মীরা। এ ছেলে জাদু জানে। অনেক কিছু বলবে ভেবে রাখলেও কিছুই বলতে পারে না ত রাজিব সামনে এলে। তার উপর জীবণে আফসোস রাখতে চায় না মীরা। তাই সুযোগের পর সুযোগ দিয়ে যায় ও।

স্ত্রীকে চেনা যায় স্বামীর অভাবের সময়, আর স্বামীকে চেনা যায় স্ত্রীর অসুখের সময়। মীরা ওর সংসার জীবণে রাজিবের অর্থনৈতিক দৈন্যতা, এবং অসুস্থতা দুটোর সাথে যুদ্ধ করা শুরু করেছে হাতের মেহেদীর রঙ না ফুরাতেই।
কিন্তু রাজিব…!
হঠাৎ কি ভেবে মীরা হেসে ফেললো। রাজিব চায়ের কাপ ঠোঁটে থাকা অবস্থায় তাকালো মীরার দিকে। কাপটাকে নামিয়ে জিজ্ঞেস করলো
: ” হাসলে যে…? ”
: ” এমনিই ”

উঠে চলে গেলো রাজিব। যে এ বিষয়ে জানবার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই ওর। বাসার রান্নার খালাকে বললো দড়জা লক করে দিতে। জুতার বেল্ট আটকাতে আটকাতে খালার অপেক্ষা করছে রাজিব।

একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ভিতর থেকে। বলবে না বলেও ঠিক করে মীরা রাজিবের উদ্দেশ্যে বললো-
: ” আজকে ডাক্তারের কাছে আপয়েনম্যেন্ট আছে সন্ধ্যে ছয়টায়”
: ” ওহ্,”
ঘড়িতে কি যেন ভেবে রাজিব মীরার দিকে তাকিয়ে বললো-
: ” টুম্পাকে নিয়ে যেতে পারবে না? ”
শান্ত চোখের দৃষ্টিটা চায়ের কাপ থেকে ফিরিয়ে নেয় রাজিবের দিকে। বলে-
: ” কিসের এত ব্যাস্ততা তোমার? কি করো তুমি?
কিছু বলে না রাজিব। মীরা এখন খুব কম কথা বলে ওর সাথে। উত্তর না পেয়ে মীরা আবার বলতে শুরু করে-
: “বলোতো- গত একমাসে সবচেয়ে বেশী মাল গেছে কোন মার্কেটে? সবচেয়ে বড় এমাউন্ট পাওনা আছে কার কাছে? আচ্ছা এটা বলো কারখানার কোন কর্মচারীটাকে বাদ দেয়া হয়েছে গত সপ্তাহে?

রাজিব নিশ্চুপ। কি একটা ভাবছে যেন।

: ” এ শরীর নিয়েও আমি মাত্র দেড়শ পিস ড্রেসের অর্ডার নিতে গুলশান গিয়েছিলাম কাল সন্ধ্যায়। কেন বলোতো…?
যাতে কাজের কোয়ালিটি দেখে ভবিষ্যতে তাদের পরিচিতদের থেকে আরো অর্ডার পাই আমরা। এটা শুধু প্রোডাক্ট সেলই না, ওয়ান কাইন্ড অফ মার্কেটিং”

: ” আমি কাল….

কথাটা শেষ করতে দেয় না মীরা। রাগত্ব স্বরে বলে –
: ” কাজের কাজ তো কিছুই করো না। ঝামেলা বাঁধিয়ে বসে থাকো। মোখলেছ চাচাকে কাল বলেছো- কথা বলে নিই মীরার সাথে। কেন এতটুকু কমনসেন্সে কি তোমার নাই। তুমি কি এটুকুও বুঝো না যে ঐখানে কি বলা উচিত। তুমি যদি তখন বলতা- বললেই তো চলে যাওয়া যায় না, সামনে ইদ-পূজার সিজন। সময় দিন আমাদের, আমরা কারখানা ঠিক করে চলে যাবো, এ কথাটা বলতে পারতে না?
: ” তুমি জানো মীরা তার সাথে পেরে উঠবো না আমরা, তিনি মার্কেট কমিটির সভাপতি”
: ” ন্যায়-অন্যায় বলতে পেরে উঠতে হয় না রাজিব, মেরুদণ্ডে জোর থাকা লাগে”

কথাটায় কিছুটা অপমানিত মনে হলো রাজিবকে । মীরার দ্রুতই বুঝলো এভাবে বলাটা ঠিক হয় নি। চেয়ার থেকে উঠে রাজিবের কাছে গিয়ে মীরা ওর হাতটা ধরে বলে-
: ” কোন সমস্যাকেই তুমি নিজের মনে করে সমাধান করছো না রাজিব। পিঠ বাচিয়ে চলছো তুমি, সব দায় আমার কাঁধে চাপিয়ে। কত কম্পিটিশন বর্তমানে তা তুমি ভালো জানো।
এত ব্যাস্ত থাকো তুমি যে – তুমি আসে পাশেই আছো আমার, কিন্তু আমি তোমাকে ছুঁতে পারছি না মনে হচ্ছে। আমাদের সম্পর্কটা এমন কেন হলো রাজিব?”
: ” সুযোগ পেলেই এই এক গান, এসব কথা আর ভাল্লাগে না। সব দায়িত্ব তো তোমার মীরা। কি করা লাগবে বলো তা করি কি না তা দেখো। প্রতিদিন তোমার এই একই অভিযোগ”
: ” সব কাজ কি বলে কয়ে করানো যায় রাজিব? কারখানার পিচ্চি ছেলে নাহিদও বুঝে কোনটার পরে কোনটা করতে হবে, আর তুমি এ প্রতিষ্ঠানের মালিক…! ”
: ” মালিক!
তাচ্ছিল্যের সাথে শব্দটা উচ্চারণ করে ক্ষণকাল চুপ থাকে রাজিব। তারপর কি যেন ভেবে বলে-
: ” তুমি তো জানো আমি বেখেয়ালি, এমনটা যে নতুন হচ্ছে তা তো না? ”
: ” ভুল হয়ে গেছে রাজিব, তোমার শারীরিক অসুস্থতার কথা ভেবে সব দিক সামাল দিতাম আমি। এখন আমি অসুস্থ এখনো কি সব তোমাকে বলে কয়ে করাতে হবে?
: ” উফ্ মীরা এসব আর ভাল্লাগে না আমার, তুমি কেমন যেন হয়ে যাচ্ছো”

এ কথা শুনে মীরা আর একটা কথাও বলে না। ধীর পায়ে চলে যায় সেখান থেকে। আর রাজিব অনেক শব্দ করে দরজাটা আছড়ে বেরিয়ে যায়। রান্নাঘর থেকে রাধুনি খালা বের হয়ে কিছু বুঝে না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে পরিস্থতি আঁচ করতে না পেরে দরজা আটকে আবার চলে যায় তার কাজে।

অনেক কাঁদে মীরা। টুম্পা বাসায় নেই। আজ ওর প্রথম বর্ষের ফর্মফিলাপের শেষ তারিখ। ও ভার্সিটিতে গেছে সকাল সকাল। তাই স্বান্তনা দেবার কেও নেই। কিছু সময় বসে থেকে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তৈরী হয় মীরা। কারখানায় যেতে হবে। মুখলেছ চাচার সাথে কথা বলতে হবে।

আলমারি থেকে সুন্দর একটা জামা বের করে পরলো মীরা। মুড ঠিক করার চেষ্টা করলো৷ এসব ভেবে বসে থাকলে চলবে না। ঐদিকে তাহলে সব পরে থাকবে। এ সময়টা হবু মায়ের শরীরে হরমোনের কত খেলা চলে। মনের অবস্থা এই ভালো তো এই মন্দ। এসব ব্যাপারে মনে হয় কিছুই জানে না রাজিব। ও এমনি, শুরু থেকে এটাকে ব্যাক্তিত্ব মনে হলেও মীরা এখন এই এক দিকটার জন্য অসহ্য বোধ করে। মীরার জীবণের একমাত্র লায়াবিলিটি রাজিবকে একপাশে সরিয়ে সোজা মার্কেটে গেলো ও। প্রথমে নিজের জন্য একটা সুন্দর স্মার্ট ফোন কিনলো মীরা। দেশী-দশে ঘুরলো একটু। এরকম প্রায়ই ঘুরাঘুরি করে মীরা মার্কেট এনালাইসিস করতে। এখন ও যে কোন ড্রেস দেখলেই বলতে পারবে কোনটা আড়ং এর ড্রেস, কোনটা রং এর, কোনটা অন্জনস্ এর, কোনটা সেইলরের, কোনটা ইয়েলোর।

আড়ং ঘুররার সময় সেখান থেকে দুটো ম্যাটারনিটি ড্রেস নিলো মীরা। এটা সুন্দর স্টিলের কৌটার মতো জিনিসটাকে হাতে নিয়ে সেলসম্যানকে জিজ্ঞেস করলো মীরা জিনিসটা কি? মুচকি হেসে মেয়েটি জানালো এটা পানদান। নানি-দাদিদের পানের বাটার ছোট্ট ভার্শন। সাজানো পান রাখা থাকে এখানে। সাথে আগেরকার বেবী ট্যাক্সির মিনিয়েচারটাও পছন্দ হলো মীরার, সেটাকেও নিলো ও। পেমেন্ট কম্পিলিট করে ফিরবার সময় সেখান দাঁড়িয়ে নতুন কেনা ফোন দিয়ে মিরর ক্লিক করলো একটা । এটা ওর একমাত্র ছবি প্রেগ্ন্যাসি জার্নির। মনে মনে ভাবলো এ সময়টাকে উপভোগ করা উচিত। এমন সময় তো বার-বার আসবে না।

সেখান থেকে বেরিয়ে রং থেকে ব্যাগ নিলো টুম্পার জন্য। ফুড কোর্টে গিয়ে হালকা স্ন্যাক্স খেয়ে একটা আইসক্রিম নিলো ও। সময় নিয়ে শেষ করলো সেটা। মনে মনে ভাবলো টুম্পাকে নিয়ে এসে একটা মুভি দেখতে আসবে সিনেপ্লেক্সে। তারপর ফুরফুরে মেজাজে গেলো ওদের করাখানায়। কি ভেবে যেনো ওদের কারখানায় না ঢুকে বামের মুখলেছ চাচার কারখানায় ঢুকলো মীরা। মীরাকে দেখে সবাই কাজ রেখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মীরাকে এ কারখানার সব ছেলেমেয়ে-ই লুকিয়ে চুরিয়ে দেখে। এত সুন্দর যে অনেক খুঁজে ও কোন খুঁত খুঁজে পায় না ওরা। দীন এ কর্মচারী গুলো ভাবে মানুষ এত সুন্দর হয় কিভাবে। এত সুন্দর নাক, এত সুন্দর চোখ, ঠোঁট, তেমনি চুলের গোছা। লম্বা চওড়া এত সুন্দর যে ঠিক যেন দেবী প্রতিমা। মাঝে মাঝে মেয়েগুলোর অসহ্য বোধ হয় মীরাকে দেখে। যাকে এত কষ্ট করে দেখতে হয় সবসময় সে এসেছে ওদের ঢেরায়, একটা চাপা উচ্ছাস সবার মধ্যে টের পেলো মীরা। মুচকি হেসে একজনকে জিজ্ঞেস করলো – মুখলেছ চাচা কোথায়?
মেয়েটা কাছে এসে বললো-
: “ভিতরের অফিস ঘরে আছে। আমি গিয়া বলে আসি আপনি আসছেন”
: ” থাক তোমার কষ্ট করে যাওয়া লাগবে না, আমিই যাচ্ছি”
বলে মীরা পা বাড়ালো অফিস ঘরের দিকে। যাকে বললো কথাটা সে তো আকাশে উড়ার মতো অবস্থা, তার সাথে কথা বলেছে মীরা। খুশিতে কুটকুট অবস্থা।

ঘড়িতে দুপুর তিনটা, এত সময় কেটে গেছে খেয়ালই নাই মীরার। মুখলেছ সাহেব বাড়ি থেকে আনা খাবারের টিফিন ক্যারিয়ারটা মাত্র খুলে সাজিয়েছেন এমন সময় মীরা ঢুকে বললো-
: ” ইশ্ অসময়ে এসে পরলাম চাচা”
কিছুটা বিরক্ত চেপে গিয়ে মুখলেছ বললেন-
: ” আরে অছময় বইলা কিছু আছে নিহি ব্যাবছায়ী জীবনে। তা কি মনে কইরা আইলা এই গরিবখানায়। বহো, বহো।
চেয়ারে বসে খাবারের দিকে তাকিয়ে মীরা বললো-
: ” চাচা আপনার খাবার দেখে তো ক্ষুধা লেগে গেলো”
: ” ছময় তো কম হয় নইক্যা, ক্ষুধা তো লাগবোই। ওই কুদ্দুস আরেকটা প্লেট লিয়া আয় মীরা মার লাইগ্যা ”
: ” আমি খেলে আপনার কম পরে যাবে না চাচা? ”
: ” মা রিজিক হইলো আল্লার দান, তোমার রিজিক এইখানে দুপুরে খাবা তাই লিখা ছিলো তাই হইলো। তাছাড়া তোমার চাচির দিলটা বহুত বাড়া, প্রতিদিনই ভাত বেছি হয়। খাওয়া ছেষ কইরা দিয়া দিই কাওরে। হাত ধুয়া আহ মা, কম পরবো না”
হাত ধুতে ধুুতে মীরা হাসিমুকে বলে-
: ” রিজিক আল্লাহর দান, তবুও মানুষ মানুষকে হিংসা করে। কত বোকা তারা তাই না চাচা!
অবাক চোখে তাকায় মুখলেছ। কথাটা যে মীরা তাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে তা ঠিক বুঝেছেন তিনি।

মীরা দুই প্লেটে খাবার বাড়তে বাড়তে বললো-
: “চাচীর মন এত বড়, সব বেশী বেশী করে দিয়ে দেয়, আর আপনি এমন কেন চাচা, রাজিব বললো আমাদের নাকি চলে যেতে বলছেন ” কথা বলতে বলতে ভাজি দিলো দুই প্লেটের এক কিনারায়, তার পাশে লেবু আর কাঁচামরিচ সাজিয়ে নিলো মীরা। সবগুলো কথা মীরা তার দিকে না তাকিয়েই বললো। সাজানো প্লেট তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো-
: ” চাচা আপনার তো চারটা ছেলে তাই না? ”
মাথা নিচু করে খাচ্ছে মুখলেছ, বাকপটু এ লোকটার কথার ডেরায় শব্দের টান পরেছে হয়তো। মীরা তার অস্বস্তি কাটাতে বললো-
: ” এটা কিসের ভাজি চাচা? ”

: “লাউয়ের খোছার ভাজি, মজা না? তোমার চাচীর রান্না বহুত মজা”
: ” চাচিকে জিজ্ঞেস করবেন আমাকে তার এ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে রাখবে কি না, বেতন দিতে হবে না, খওয়া আর কাপড় দিলেই হবে ” কথাটা সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো মীরা। ওর কথা বলার ভঙ্গি দেখে হেসে ফেললো মুখলেছ। তারপর বললো-
: ” তুমি মা যা পারো তা এ দুনিয়ায় খুব কম মানুছই পারে। তোমার অন্য দিকে মন দিয়া কাম নাই। বেছি বেতন দিয়া রান্নার লোক রাইখা নিবা। তুমি যেইটা করতাছো সেইটাতেই মনযোগ দাও।
: ” কি মনযোগ দিবো চাচা, এ অবস্থায় আপনি যদি উঠায়ে দেন আমাদের কোথায় যাবো তাই ভেবে দিশেহারা আমি”
: ” রাজিব হারামজাদারে দেখলে শরীল জ্বলে আমার, তোমার এ অবস্থায় ও গায়ে বাতাছ লাগায়া ঘুরে। ওর উপর বিরক্ত হয়া কথাটা বলছিলাম মা”
সর্ষে ইলিশ মাছের ঝোল দিয়ে ভাত মাখাতে মাখাতে মীরা বললো-
: ” চাচা রিজিক আল্লাহর দান, এটা যদি বিশ্বাস করেন তাহলে কখনোই আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাববেন না। আমি জানি আপনি আমাদেরকে ভালোবাসেন। কারখানা শুরুর সময় কত কত দিন সুতা, বকরোম আপনার কারখানা থেকে নিয়ে কাজ করেছি, ওভারলক মেশিন নষ্ট থাকায় কতদিন আপনার মেশিন গুলো ব্যাবহার করেছি। সেই আপনি যদি আমাদের মাথার উপর থেকে হাত সরিয়ে নেন তাহলে এ অবস্থায় কই যাবো আমরা। সবই তো জানেন আপনি। রাজিব শুধু নামেই মালিক। সব দিক দেখতে হয় আমাকে।
: ” আমারে আর লজ্জা দিও না মা, বাদ দাও ঐছব কথা, তোমারে আমি একটা পরামর্শ দিই- কারখানার কাগজপত্র গুলান তুমি তেমার নামে বদলায়া ফেলো। ওর মতিগতি ভালা না। আমার চারটা পুলা, কুন মাইয়্যা নাইক্ক্যা, তুমি আমার মাইয়্যার মতো, জানি ও তোমার ছামী, তবুও কথাটা গুরুজন ভাইবা বললাম তোমারে।

পাতের শেষ লেকমা খাবার মুখে পুরে মীরা বললো-
: ” অনেকদিন পর পেট ভরে মন ভরে খেলাম চাচা। চাচীকে সালাম দিবেন আমার। আর হ্যা ধন্যবাদ আপনাকে। আমিও ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছি ইদানীং”
: ” আরেকটা কথা মা, পলাশ গার্মেন্টস এর সেবাহান কিন্তু লোক ভালা না। ওর লগে রাজিবরে মিছতে না কইরা দিবা। হালার কিন্তু মইয়্যা মানুছ নিয়া ক্যালেঙ্কারীর বদনাম আছে। হুনি রাইতে রাইতে নাকি কেলাবে যায়, ছেখানে মদ-জুয়া-নারীর আছর বছে। রাজিবরেও নাকি দেখছে কেও কেও।
: ” আচ্ছা চাচা, বলে ভালো করেছেন। দেখবো আমি ব্যাপারটা। আজ আসি চাচা। আমাদের মাথার উপর থেকে হাত সরিয়ে নিয়েন না।
জিভ কামড় দিয়ে না সূচক ভঙ্গি প্রকাশ করে তিনিবললেন-
: ” যাও মা”

গেইটের কাছে এগিয়ে আবার ফিরে বসে মীরা। মুখলেছ তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে –
: “কি মা কিছু বলবা? ”
ব্যাগ থেকে পানের কেসটা বের করে এগিয়ে দিয়ে মীরা বলে-
: “এটা আপনার জন্য, ঘুষ না কিন্তু, ভালোবেসে এনেছি”
পান খাওয়া লাল দাঁত বের করে হাসিমুখে সেটা গ্রহণ করে মুখলেছ।

চলবে….

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ