#প্রিয়_বালিকা |১৭+১৮|
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি
আভা তখন থেকে আমতা আমতা করে যাচ্ছে।না কিছু বলছে আর না এখান থেকে যেতে দিচ্ছে।রৌদ্রের সারা শরীর রাগে ঘামতে শুরু করেছে।যা দেখে আভা আরো ভড়কে গেল।শুঁকনো ঢোক গিলে চোখ মুখ খিঁচে বড় একটা শ্বাস টেনে বুকের ভিতরই আঁটকে রাখল।তারপর এক নিশ্বাসে বলে উঠলো,
– দেখুন আমি সোজা কথার মেয়ে।আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কোনো কথা বলতে পারিনা।আর পেটের ভিতর কোনো কথা আঁটকেও রাখতে পারিনা।পেটের ভিতর কথা আঁটকে রাখলে আমার পেট গুড়গুড় করে।তাও তিনটা বছর পেটের ভিতর এই কথাটা অনেক কষ্টে আঁটকে রেখেছি।আমার আপনাকে খুব ভালো লাগে।আপনাকে ঐরকম ভালো লাগে।মানে আপনি যেমন ভাবছেন আর কি।আমি আপনাকে পছন্দ করি।আমি আপানকে ঐরকম পছন্দ করি মানে যে রকম প্রেমিকা প্রেমিককে করে।আপনি কি বুঝতে পারছেন আমি কি বলতে চাইছি?না আপনি বুঝতে পারছেন না।দাঁড়ান আমি আপনাকে বুঝিয়ে বলছি আমি আপনাকে ভালোবাসি!ওহ্ আপনি তো আবার বাংলা বুঝেন না দাঁড়ান ইংরেজিতে বলছি আই লাইক ইউ,আই ওয়ান্ট ইউ,আই নিড ইউ,আই লাভ ইউ,”ওয়া আয় নি”।ধুর বাবা চাইনিজ ঢুকিয়ে দিলাম কেন আবার!
আভা চোখ বন্ধ করে বিরতিহীনভাবে এইসব প্রলাপ বকে চলেছে।শেষের কথাটি বলে ঠোঁট উল্টিয়ে নিজের মাথায় একটি চাটি মেরে পিটপিট করে চোখ খুলে আভা।রৌদ্র তার দিকে জহুরি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এক ভ্রু উঁচু তার।বুকে হাত গুঁজে সে স্থির চিত্রের মতো দাঁড়িয়ে।আভা চোখ খুলে কাঁদো কাঁদো ভঙ্গিতে বলে,
– আপনি কি কিছু বুঝেছেন?প্লিজ আমাকে মারবেন না।
রৌদ্রের ভাবভঙ্গিতে কোনো পরিবর্তন এলো না।সে আগে থেকেই আশঙ্কা করেছিল আভা তাকে এমন কিছু বলার জন্য এমন হাঁসফাঁস করছে।আমার ভীত মুখটা দেখেই সে বুঝতে পেরেছিল আভা কি বলতে চায়।রৌদ্র দৃষ্টি একই রেখে শান্ত স্বরে ভঙ্গিতে বলে,
– আমি বাংলা বুঝি।ইন ফ্যাক্ট এখন একটু বেশিই ভালো বুঝি।
আবা শুঁকনো ঢোক গিলে যাচ্ছে সমান তালে।রৌদ্রের এমন শান্ত ভঙ্গি যেন তাকে আরো ঘাবড়ে দিচ্ছে।আভা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
– আপনি কি এখন আমাকে মারবেন?
রৌদ্র কিছু বলল না।আভা আবারো সভয়ে বলে উঠলো,
– আপনি এতো শান্ত কেন?আপনি অবাক হননি?আমি আপনাকে এসব কথা বললাম আপনার রাগ হচ্ছে না?
রৌদ্র থুঁতনিতে তর্জনি ঠেকিয়ে ভাবুক ভঙ্গিতে বলে,
– ফার্স্ট ওফ অল আমি কোনো টিনাজার নই যে কেউ আমাকে নিরিবিলি পার্কে এনে প্রপোজ করলে আমি তব্দা খেয়ে যাবো।আর আমি এমন কিছুই আশঙ্কা করেছিলাম তোমার গতদিনের আচারণে এবং এখানে আনার পর তোমায় খুঁতখুঁত করতে দেখে।তাই আনফর্চুনেটলি আমি একটুও অবাক হইনি।কিন্তু আমি সারপ্রাইজড তোমার সাহস দেখে।
শেষের কথায় আভার করুণ চাহনি আরো করুণ হয়ে যায়।নিজেকে সাতদিনের অভুক্ত কোনো প্রাণী মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে।কি করবে সে এখন?রৌদ্র তার আগের ভঙ্গিতেই পাশের বেঞ্চটিতে গা মেলে বসে।আভা করুণ চোখে তাকিয়ে তার দিকে।রৌদ্র আভাকে চোখের ইশারায় তাকে পাশে বসতে বলে।ভীত আভা ভয়ে বসতে সাহস পায় না।আভাকে বসে না দেখে ধমক দিয়ে ওঠে রৌদ্র,
– কি হলো বসো।
তড়িঘড়ি বসে পড়ে আভা।রৌদ্র আভার দিকে ঘুরে বসল।আভার চোখে নিজের শিকার চোখের দৃষ্টি গভীর করে।আভাও তার চোখে চোখ রেখে থমকে যায়।রৌদ্র শীতল কন্ঠে বলে,
– এখন আর এই চোখে চোখ রাখতে ভয় করে না?
আভা আনমনেই ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে “না” বোঝায়।রৌদ্রের চোখে মুখে হাসির ঝলক দৃশ্যমান হয় তবে ঠোঁট প্রসারিত করে না সে।কোমল কন্ঠে বলে,
– দেখ আভা তোমার জন্য আমি কিছু ফিল করিনা এই মিথ্যাটা আমি বলতে পারবো না।তবে!
আভা রৌদ্রের কথার প্যাচ উন্মুক্ত করে বাক্যটির আসল অর্থ বুঝতেই ঠোঁট প্রসারিত হয়।কিন্তু শেষের “তবে” টা তাকে এই মুহুর্তে ভাবাচ্ছে।আভা ভ্রুযুগল সংকুচিত করে।রৌদ্র সংকোচ নিয়ে বলে,
– তবে আমি আমার ফিলিং নিয়ে কনফিউজড।
চুপসে গেল আভার মুখ।মুখের সেই মৃদু হাসি মিলিয়ে গেল।মলিন মুখে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো রৌদ্রের দৃষ্টি থেকে।তীব্র অপমাননবোধ করল সে।শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বৃদ্ধি পেল।রাগ হলো নিজের উপর। কেন বলতে গেল সে মনের কথা।না বললে তো এভাবে অপমানিত হতে হতো না।গুম হয় বসে রইলো আভা।আভা দৃষ্টি সরিয়ে নিতেই রৌদ্র আহত দৃষ্টি ফেলল আভার দিকে।করুণ স্বরে বলল,
– আভা!
আভা তার দিকে তাকাল না।সে একদৃষ্টিতে মাটিতে তাকিয়ে আছে।রৌদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
– আভা আমরা এসবে না জড়াই?
গলা আঁটকে গেল আভার।চোখ জ্বলছে ভিষণভাবে।কিন্তু সে কাঁদল না।সে আর কোনো দূর্বলতা প্রদর্শন করতে চায় না এই লোকটার সামনে।আভা সেখা আর এক মুহুর্ত দাঁড়াল না।উঠে সোজা হাঁটা শুরু করল।আভা এতোটাই জোরে হাঁটল যে এক সেকেন্ডই অনেকটা দূরে চলে গেল।রৌদ্র সেখানে বসেই একটি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।তারপর উঠে নিজের আভার পিছন পিছন যায় সে।
বাসে পাশাপাশি বসে আছে আভা এবং রৌদ্র। আভা অনুভূতি শূণ্য হয়ে থম মেরে বসে আছে।রৌদ্র করুণ দৃষ্টি তাকিয়ে আছে তার দিকে।ছোট করে বলল,
– আভা!
আভার থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না।সে একই ভঙ্গিতে বসে রইলো।রৌদ্রও আর ঘাটাল না আভাকে।সেও মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইলো চুপচাপ।
সোনালি আলোর লাইটিং-এ মুন্সি বাড়ি জ্বল জ্বল করছে।বিয়ের ভেন্যুতে একের পর এক মিডিয়াম ভলিউমে গান বেজে চলেছে।চারিদিকটা একদম রমরমা পরিবেশ।মুন্সি বংশের বড় ছেলের বিয়ে বলে কথা সারা গ্রামের মানুষের মনে থাকবে না?কাঁচা হলুদ এবং সাদা রঙের আর্টিফিশিয়াল ফুলে গমগম করছে বিয়ের ভেন্যু।স্টেজে পাশাপাশি বসে আছে অভয় এবং অহনা।অভয়ের পরনে কাঁচা হলুদ রঙের পাঞ্জাবিতে সাদা সুতোর কাজ এবং সাদা পাজামা।অহনা পরেছে কাঁচা হলুদ রঙের বেনারসি শাড়ি।গায়ে কাঁচা ফুলের গহনা।সেই ফুলের সুবাস অহনার সারা শরীরে ছড়িয়ে পরেছে।অভয়ের মুখ থেকে হাসিই যেন সরছে না।সকলে একে একে অভয়ের মুখে হলুদ লাগিয়ে ক্ষীর খাইয়ে দিয়ে যাচ্ছে।কেউ কেউ ছোট খাটো উপহারও দিলো তাদের।অভয় সকলের চোখের আড়ালে অহনার কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
– কাল এমন সময় আমি আর তুমি এক কামরে মে বান্ধ অর চাবি খো যায়ে।
অহনা রাগি চাহনিতে চেয়ে দাঁত পিষে অভয়ের মতোই ফিসফিসিয়ে বলে,
– লজ্জা করে না আপনার সব সময় আমার সাথে লু’ইচ্চামো করতে থাকেন।আমি বলে কিছু বলি না।অন্য মেয়ে হলে কবেই গণ পিটানি খেয়ে পটল তুলতেন।
অভয় নির্লজ্জের মতো দাঁত বের করে হাসে।আগের মতোই নিচু স্বরে বলে,
– বউয়ের সাথে লু’চ্চামো না করলে বংশ বৃদ্ধি হবে কি করে গো জানু?
– ঐ জানু হলুদটা কি তোমার গালে লাগাবো নাকি জিহ্বায়?
আচমকা আভার এমন বক্তব্যে বিরক্ত হয় অভয়।অহনা ঠোঁট চেপে হাসে।অভয় শকুনি দৃষ্টিতে আভার দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে।আভা নিজের চকচকে দাঁতগুলো বেরিয়ে বিগলিত হাসে।ঘন পলক ফেলে মিষ্টি একটি ভঙ্গি করে।অভয় রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বিড় বিড় করে বলে,”এই মেয়েটা সবসময় আমার আর আমার বউয়ের কথার মাঝে ঠ্যাং ঢুকায়।কোনদিন ঘুম থেকে উঠে দেখবে ওর ঠ্যাং দু’টো নিখোঁজ সেদিন বুঝবে মজা।”
আভা এক খাবলা হলুদ নিয়ে অভয়ের সারা মুখে ঢলে দেয়।অভয় চোখ মুখ খিঁচে রাগে কটমট করতে থাকে।অহনা চাপা হাসি দেয়।চোখে মুখে হলুদের মাখামাখি দেখে অভয় দাঁতে দাঁত কামড়ে বলে,
– ওরে খ’য়রাতি…!
আভা অভয়ের কথায় পাত্তা না দিয়ে হবু ভাবি অহনার মুখে সামান্য হলুদ মাখিয়ে দেয়।হবু ভাবিকে আলতো আলিঙ্গন করে মিষ্টি হেসে বলে,
– মুন্সি পরিবারের নতুন সদস্য,তোমাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
অহনা মৃদু হেসে সামান্য হলুদ নিয়ে আভার ডান গালে লাগিয়ে দেয়।আভা নেমে আসে স্টেজ থেকে।তার পরনে একটি সাদা ও হলুদ মিশ্রণের গাউন।মুখে হালকা পাতলা সাজ।শরীরে কোনো গহনা নেই শুধু কানে একটি লাল আর্টিফিশিয়াল ফুলের অলংকার।বিয়ে এই ভেন্যুতে বউয়ের পর সে সকলের নজর কাড়তে সক্ষম।প্রথমত ভাইয়ের একমাত্র বোন।দ্বিতীয়ত দেখতে সোনালি বর্ণের হলেও নাক,চোখ,ঠোঁট, মুখ সব একদম নিখুঁত কাটের।আভা স্টেজ থেকে নেমে আসতেই রৌদ্রের মুখোমুখি হয়।রৌদ্র অভয়ের মতো একটি হলুদ পাঞ্জাবি এবং সাদা পাজামা পরে আছে।আভা রৌদ্রকে দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে চলে আসে।যা রৌদ্রের মোটেও পছন্দ হয় না।তার এখন রাগ লাগছে আভার উপর।তাকে এভাবে এড়িয়ে যাওয়ার মানে কি?সকালেই তো চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলছিল আমি আপনাকে পছন্দ করি, আপনাকে ভালো লাগে,আপনাকে ভালোবাসি এখন যেন দেখেও দেখছে না।চিনেও চিনছে না।বিষয়টা একদমই পছন্দ হলো রৌদ্রের।চাপা রাগের অস্তিত্ব পাওয়া গেল তার চোখে মুখে।অভয় স্টেজ থেকে রৌদ্রের উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়ে,
– রৌদ্র তাড়াতাড়ি আয় তোর ভাবির সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।
রৌদ্র চাপা রাগটা নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখে স্টেজে উঠে গেল।অভয়ের সামনে দাঁড়িয়ে কিছুটা হলুদ নিয়ে অভয়ের মুখে লাগিয়ে দিলো।অহনার দিকে তাকিয়ে নরম স্বরে বলল,
– আসসালামু আলাইকুম ভাবি কেমন আছেন?
অহনা হেসে মাথা নেড়ে সায় দিলো।অভয় রৌদ্রের হাত ধরে টেনে নিজের পাশে বসায়। গলা জরিয়ে অহনার দিকে তাকিয়ে বলে,
– ভালো করে চিনে রাখো এটা হলো আমার জিগারকা টুকরা। মাই ওয়ান এন্ড অনলি বেস্ট ফ্রেন্ড “আফসিন রৌদ্র”।
রৌদ্র ফিকে হাসে।এই মুহুর্তে তার মাথায় আভা ছাড়া আর কিছু চলছে না।রৌদ্র অভয়ের থেকে নিজে ছাড়িয়ে স্টেজ থেকে নেমে আসে।সঙ্গে সঙ্গে হলুদ ভরা একটি হাত এসে পড়ে রৌদ্রের গালে।সামনে তাকিয়ে সেহরিনকে দেখে প্রথমে ভ্রু কুঁচকে ফেলে রৌদ্র।সেহরিন হেসে বলে,
– কেমন আছেন রৌদ্র ভাইয়া?
কিছুক্ষণ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারে এটা সেই ছোট সেহরিন।অবাক হয় রৌদ্র ভাবে সেই গায়ে পড়া কীটটা তাকে ভাইয়া বলে ডাকছে।নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না সে।রৌদ্র মেকি হেসে বলে,
– জ্বী ভালো আছি ভাইয়া।তুমি কেমন আছো?
– জ্বী ভাইয়া ভালো আছি।আপনি আগের থেকে দ্বিগুণ সুদর্শন হয়ে গিয়েছেন।মুখে এতো গ্লো কিভাবে আনলেন ভাইয়া?কোন কোন প্রডাক্ট ইউজ করেন?বাংলাদেশ কি অস্ট্রেলিয়া থেকে সেগুলো ইম্পোর্ট করে?
এমন সময়ে সেহরিনের এমন বেহুদা প্রশ্নে চটে গেল রৌদ্র।সে যাচ্ছিল আভার সাথে একটু কথা বলতে।আভা তাকে ভালোবাসার কথা বলার পর থেকে তার আভার প্রতি পিপাসাটা তর তর করে বেড়ে উঠেছে।তবু সে মেনে নিতে পারছে না যে সে মানে ” আফসিন রৌদ্র” হাঁটুর বয়সী একটা মেয়েকে ভালোবাসে।তাই সে এই অনুভূতিগুলো থেকে একটু দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করে।কিন্তু সকালে আভার মুখে ভালোবাসার কথা শুনে অনুভূতিগুলো আরো সতেজ হয়ে উঠেছে।কিন্তু আভা সে তো তাকে পাত্তায় দিচ্ছে না।তাকে জিজ্ঞেসাবাদ করতে চলেছিল রৌদ্র।কেন সে রৌদ্রের সাথে কথা বলছে না।রৌদ্রকে এড়িয়ে চলছে।মাঝে এই মেয়ের এমন বেহুদা কথায় মস্তিষ্ক টগবগ করে ফুটতে শুরু করে তার।রক্তিম চোখে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত কামড়ে বলে,
– কি মাখি?
সেহরিন গদগদ হয়ে মাথা নাড়িয়ে সায় জানাল।রৌদ্র আগের ভঙ্গিতে বলে উঠলো,
– প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একবার ঘুম থেকে উঠে একবার আর গোসলের পর একবার তিনবেলা নিয়ম করে আলকাতরা মাখি।
সেহরিনের হাসি যেন ঠোঁটে আর ধরল না।সে এতো খুশি হয়েছে।রৌদ্র এক মুহুর্ত দাঁড়াল না সেখানে গটগট করে হেঁটে চলে এলো বাড়ির ভিতর কিছুক্ষণ আগে আভাকে বাড়ির ভিতরেই যেতে দেখেছে।সেহরিন কিছুসময় ভেবে মাথা চুলকে ভাবুক স্বরে বলে,
– আলকাতরা?আলকাতরা মানুষ মুখেও মাখে?হাউ ইন্টারেস্টিং!
আবার খুশিতে গদগদ হয়ে যায় সে।আজই তার বাবাকে আলকাতরা আনতে বলবে।তারপর সে বিদেশিদের মতো ঝকঝকে ফকফকে হয়ে যাবে।তখন নিজের রূপের আগুন কত এমন আফসিন রৌদ্রকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে কয়লা কয়লা করে ফেলবে।ভেবেই সেহরিনের গর্বে বুক ফুলে ওঠে।মাথা উঁচু করে অতি ভাবের সহিত হাঁটে সে।
– আপনার কি টাওয়াল লাগবে?
আভার কথায় পিছন ফিরে প্রান্তর নামের যুবকটি।অহনার খালাতো ভাই।মুখের হলুদ পরিষ্কার করতে ওয়াশরুমে এসেছে সে।আভার সাহায্যতেই সে ওয়াশরুমে এসেছে।এ বাড়ির মেহমান হিসেবে তার কারো সাহায্য দরকার ছিল ওয়াশরুম খুঁজে বের করার জন্য।সম্বন্ধ চলাকালীন আভার সাথে দু একবার কথা হওয়ায় সে আভার সাহায্য নিতেই সাচ্ছন্দ্যবোধ করে।তাই আভার সাথে আসে ওয়াশরুমে।আভা ওয়াশরুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর সে ওয়াশরুমের বেসিনে মুখ পরিষ্কার করছে।আভা কথাতে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় সে।অর্থাৎ তার টাওয়াল লাগবে।আভা তার জন্য টাওয়াল নিয়ে আসে।সারাবাড়ি ফাঁকা। বাড়ির সবাই বাইরে বিয়ের ভেন্যুতে।বাড়িতে শুধু প্রান্তর এবং আভা।এইমাত্র প্রবেশ করল রৌদ্র।আভাও নিজের মুখ পরিষ্কার করে নিয়েছে।তবে হলুদের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে তার ডান গালে।প্রান্তর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো।আভার হাত থেকে টাওয়ালেটা নিয়ে মুখ মুছলো।আভার দিকে দৃষ্টি গাঢ়ো হতেই দেখতে পেল আভার মুখে হলুদের অবশিষ্ট অংশ।ইশারায় মুখ পরিষ্কার করতে বলল সে।আভা ভ্রুকুটি করে মুখে হাত দিয়ে দু একবার ঘষে নিলো।এতে করে হলুদ আরো ছড়িয়ে গেল।তা দেখে প্রান্তর সামান্য হেসে উঠলো।এগিয়ে এসে হাতে থাকা টাওয়ালেটা দিয়ে আভার মুখের হলুদ মোছে সে।আভা অস্বস্তি বোধ করে সরে আসে।সহসা কোনো পুরুষ তার ভারি কন্ঠে কঠিন সুরে বলে,
– কি হচ্ছে এখানে?
কন্ঠের ধারে কেঁপে ওঠে আভা।প্রান্তর উঁকি দিয়ে আভার পিছনে তাকায়।দেখতে পায় একজন সুপুরুষ চোখ মোটা করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।প্রান্তর টাওয়াল আভার হাতে নিয়ে বলে,
– আমি যাচ্ছি তুমি এসো।
সাধারণ এই কথাটাও আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করল।রৌদ্র তেড়ে এসে প্রান্তরের গলা চেপে ধরল।সহসা রৌদ্রের এমন মেজাজ হারানোই আভা এবং প্রান্তর চমকিত হয়।আভা বড় বড় চোখ করে মুখে হাত চেপে ধরে।রৌদ্র প্রান্তরের গলা চেপে রেখেই তীব্র মেজাজ নিয়ে বলে,
– আমি আসছি তুমি এসো?তুমি এসো?তুই কি ওর আঁতুড়ঘরে গিয়ে ওকে বিয়ে করে এসেছিলি?এতো ক্যাজুয়ালি তুই ওর সাথে কথা বলিস কোন সাহসে?
আভা দৌড়ে গিয়ে প্রান্তরকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল।অনবরত বলল,
– রৌদ্র কি করছেন ছাড়ুন ওনাকে।ছাড়ুন বলছি।
আভা এবার নিজে সর্বশক্তি দিয়ে রৌদ্রের বুকে ধাক্কা দিলো।সঙ্গে সঙ্গে দূরে ছিটকে গেল রৌদ্র।আভা রাগে ক্ষোভে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
– অনেক হয়েছে কতক্ষণ থেকে বলছি থামতে?উনি আমাদের গেস্ট আপনার সাথে ওনার কোনো লেনদেন নাই বা থাকতে পারে কিন্তু আমাদের আছে।আপনি ওনার সাথে এমন ব্যবহার করতে পারেন না।আপনিও আমাদের গেস্ট।তাই গেস্টের মতো থাকুন।
আভা প্রান্তরের দিকে তাকিয়ে বলল,
– ক্ষমা করবেন ভাইয়া।দয়া করে বাইরে গিয়ে এ বিষয়ে কিছু বলবেনা।অনুষ্ঠান বাড়ি বুঝতেই তো পারছেন।
প্রান্তর শকুনি দৃষ্টিতে রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে নিজের কলার ঠিক ঠিক করতে করতে আভার উদ্দেশ্যে বলল,
– ইটস্ ওকে।তবে আমার মনে হয় তার মেন্টাল ট্রিটমেন্টের দরকার।
রৌদ্র আবার ধেয়ে আসতে চায়ল প্রান্তরের দিকে।আভা তার নাম ধরে চেঁচিয়ে উঠলো,
– রৌদ্র।
আজই প্রথম সে রৌদ্রের নাম ধরে ডাকল।রৌদ্র রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে আভার দিকে চেয়ে আছে।আভা আবারো একদফা প্রান্তরের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলো।প্রান্তর শকুনি দৃষ্টিতে রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে কাঁধ ঝাড়তে ঝাড়তে চলে গেল।আভা রাগি স্বরে রৌদ্র বলল,
– কি করছেন আপনি পাগল হয়ে গিয়েছেন?
রৌদ্র আভার দুই বাহু চেপে ধরল।তবে সহনীয় ভাবেই ধরল।দাঁতে দাঁত কামড়ে বলল,
– আগেও বলেছি আমার সাথে এই টোনে কথা বলবে না।তখন তো খুব বলছিলে আপনাকে পছন্দ করি,আপনাকে ভালোবাসি।যখনই আমি না করে দিলাম অমনি অন্য ছেলের সাথে গাল ঘষাঘষি শুরু করে দিলে!শেইমলেস গার্ল!
আভা বাহু থেকে রৌদ্রের হাত সরিয়ে আগের মতোই উচ্চ স্বরে বলল,
– তো কি করবো?এখন আপনার বিরহে আজীবন দেবদাসী হয়ে থাকবো?
রৌদ্র চোখ বন্ধ করে কপালে তর্জনি ঠেকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলে,
– টোন ঠিক করো আভা।এটা কিন্তু লাস্ট ওয়ার্নিং।
তৎক্ষণাৎ আভা নিজেকে সংযত করে।ঢোক গিলে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলে,
– আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না।তাহলে আমি কি করি না করি তাতে আপনার কি?
সঙ্গে সঙ্গে রকেটের গতিতে প্রস্থান করে রৌদ্র।অনেক হয়েছে এই চার আঙুল মেয়ের পাঁচ হাত লম্বা লম্বা কথা শোনা।কি ঠেকে যে সে এই চার আঙুল মেয়েটার সাথে কথা বলতে এসেছিল কে জানে?
চলবে…
#প্রিয়_বালিকা |১৯|
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি
বর যাত্রী নিয়ে ক্লাবে প্রবেশ করেছে অভয়।অহনার কোনো ভাই-বোন নেই।তবে চাচাতো-মামাতো ভাইবোনদের দাবি দাবা পূরণ করতে হয়েছে তাকে।একপ্রকার যুদ্ধ শেষ করে সে স্টেজে এসে বসেছে।কিছুক্ষণের মধ্যে অহনাও হাজির হয় লাল বেনারসি আর গহনা ভর্তি শরীরে।মুখে ভারি মেকআপ।অভয় তো প্রথমে অহনাকে দেখে চমকে ওঠে।চেনাই যাচ্ছে না তাকে।সোনালি পাঞ্জাবি পরিহিত রৌদ্র ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছে অভয় এবং অহনার।পাশে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার বিভিন্ন পোজে ছবি ওঠাচ্ছে অভয় এবং অহনার।রৌদ্র শখের বসেই তার ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছে।আশেপাশে সবকিছু ক্যামেরা বন্দী করে চলেছে সে।ফ্রেমে একজন যুবতীর মুখমণ্ডল ধরা দিতেই থমকে যায় রৌদ্র।হৃৎপিণ্ড শীতল হয়ে যায় তার।মেয়েটি তার দিকেই এগিয়ে এলো।গাঢ় নীল রঙের নেটের গাউন পরিহিত সে।রৌদ্রের সামনে এসে মেয়েটি হেসে বলে,
– আমার কয়েকটি ছবি তুলে দিবেন?
রৌদ্র ক্যামেরা দেখতে দেখতে গম্ভীর স্বরে বলে,
– দাঁড়াও।
মেয়েটি কিছুটা দুরত্বে মিষ্টি হেসে সুন্দর একটি পোজ দিয়ে দাঁড়ায়।রৌদ্র ক্যামেরার লেন্স ঠিক করে মেয়েটির সুন্দর একটি ছবি ক্যামেরা বন্দী করে।মেয়েটি এগিয়ে এসে উৎফুল্ল কন্ঠে বলে,
– দেখি কেমন হয়েছে।
রৌদ্র ক্যামেরা এগিয়ে দেয় মেয়েটির সামনে।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ছবিটি দেখে বলে,
– ভালোই তুলেছেন।আরো কয়েকটি তুলে দেন।
রৌদ্র তার আরো কিছু ছবি তুলে দেয়।সে এগিয়ে এসে বলে,
– আমাকে ডকুমেন্ট করে ছবিগুলো হোয়াটসঅ্যাপে দিবেন।আপনার বাংলাদেশি নম্বরটা দেন।
রৌদ্র ভ্রু কুঁচকে বলে,
– তুমি নিজের নম্বর বলো আমি পাঠিয়ে দিবো।
– ওকে টাইপ করুন। সেভ করুন “আভা” দিয়ে।
– তুমি যাও আমি বুঝবো কি নামে সেভ করবো।
আভা ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে চলে আসে।রৌদ্র কোণা চোখে তাকিয়ে দেখে আভা চলে গিয়েছে কিনা।আভা চোখের আড়াল হলেই মুখে মুচকি হাসির রেখা ফুটে ওঠে।বৃদ্ধ আঙুল নাড়িয়ে নম্বরটি সেভ করে “রৌদ্রাভা” নামে।নামটি ঠোঁট নাড়িয়ে বার বার উচ্চারণ করে আর কোমল হাসে সে।
অভয় পড়েছে বিপাকে।অহনার চাচাতো-মামাতো ভাইবোনেরা নিজে থেকে এসে তার ধুয়ে দিয়েছে।সে বার বার না করার শর্তেও কেউ তার কথা শুনেনি।সে কতবার বলেছে “আমি একাই হাত ধুতে পারব।”তবু সকলে মিলে তার হাত টেনে ধুয়ে দিয়েছে।সেধে এসে হাত ধুয়ে দিয়ে এখন টাকা চায়ছে তারা।খাবার টেবিলে এই নিয়েই তখন থেকে ঝামেলা চলছে।মেয়ে পক্ষ বলছে টাকা দিতে হবে আর ছেলে পক্ষ বলছে টাকা দিবে না।এদিকে অভয়ের পেটে ইঁদুর বেড়াল আন্দোলন শুরু করেছে।সামনে হরেকরকম খাবার থাকার পরও একটা খাবারও মুখে তুলতে পারছে না সে এই হাত ধোঁয়ার চক্করে।করুণ চোখে খাবারের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে অভয়।বিড়বিড় করে বলে,
– মনে হচ্ছে কাঁচা বাজারে ঢুকেছি।বস্তা ভরে টাকা নিয়ে এসে পকেটে করে বাজার দিয়ে যাচ্ছি।কি একটা অবস্থা এদিকে এতো খাবার চোখের সামনে থাকার পরও কিছু মুখে দিতে পারছি না।
অভয় রৌদ্রের পাঞ্জাবির নিচের অংশ ধরে টেনে রৌদ্রকে নিচু করে।কানে ফিসফিস করে বলে,
– যা চায়ছে দিয়ে দে না আমার অনেক খিদে পেয়েছে। প্লিজ…!
রৌদ্র মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।সোজা হয়ে গলা উঁচিয়ে বলল,
– আচ্ছা আচ্ছা যা চায়ছেন আপনারা তাই দেওয়া হবে।এখন ওর হাতটা ছাড়ুন।
সঙ্গে সঙ্গে আভা তেঁ তেঁ উঠে বলে বসলো,
– যা চায়ছে তাই দেওয়া হবে মানে?আমার ভাই কি টাকার গাছ নাকি যে নাড়া দিলেই ঝরঝর করে টাকা পড়বে?আমরা টাকা দিবো না।গেটে তো দিয়েছি।
আবারো শুরু হয়ে গেল তর্কাতর্কি।অভয় বেচারা সবার মাঝে অসহায় অভুক্ত হয়ে বসে রইল।তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে রৌদ্র নিজের মেজাজ হারিয়ে ফেলল।আভাকে টেনে ভীড় থেকে বের করে নিয়ে এলো।আভা ছটফট করে চলেছে ছাড়া পাওয়ার জন্য।রৌদ্র আশেপাশে চোখ ঘুরিয়ে কিছু খুঁজলো।টেবিলে প্লেটের পাশেই পেল বড়সড় রুমাল।সেখান থেকে দুইটা রুমাল তুলে নিলো।আভাকে ধরে একটি ফাঁকা জায়গায় নিয়ে এলো।আভা তখন থেকে চেঁচিয়ে যাচ্ছে,
– ছাড়ুন আমাকে।কি করছেন আপনি?ছাড়ুন আমাকে।
রৌদ্র কালবিলম্ব না করে আভার মুখে একটা রুমাল আর অন্যটি দুহাত এক করে বেঁধে দিলো।দাঁতে দাঁত পিষে শক্ত কন্ঠে বলল,
– তখন থেকে বলছি থেমে যাও।অভয় টাকা দিতে বলেছে।আর তুমি ঝগড়া করেই যাচ্ছো।এটা কি তোমার সেই পাকিস্তানি থ্রি-পিস নাকি হ্যাঁ?সবখানে বার্গেনিং করতে থাকো।মাথাটাই গরম করে দিলো!
আভা বড় বড় করে অস্পষ্ট শব্দে কিছু বলার চেষ্টা করল।কিন্তু কিছু বলতে পারে না।রৌদ্র আভার দিকে তাকিয়ে জোরে জোর শ্বাস টেনে অভয়ের কাছে চলে যায়।আভা হাতমুখ বাঁধা অবস্থায় চেঁচিয়ে যাচ্ছে তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য।রৌদ্র অভয়ের কাছে গিয়ে তাদের দাবি করা টাকাটি তাদের হাতে তুলে দেয়।অভয় স্বস্তির শ্বাস ফেলে।সে তো আরেকটু হলে খিদের জ্বালায় মাথা ঘুরে পড়ে যেত।রৌদ্র টাকা দিয়ে আভার কাছে ফিরে আসে।আভা চুপ করে সেখানে থাকা সোফায় নাক ফুলিয়ে বসে আছে।রৌদ্র হাসে।ধীর পায়ে এগিয়ে আসে।ধীর গতিতে আভার হাত খুলে দেয়।আভা রৌদ্রের দিকে তাকায় না।তবে বারবার আঁড়চোখে রৌদ্রের ভাবগতি দেখে।রৌদ্র মুখে বাঁধন খুলে নরম সুরে বলে,
– সরি।আসলে রাগটা আমার একদমই কন্ট্রোলে থাকেনা।রাগের বশে কি করি না করি কিছু মাথায় থাকে না।
আভা কড়া দৃষ্টিতে রৌদ্রের দিকে তাকায়।সে দৃষ্টি দেখে রৌদ্রের হাসি চওড়া হয়।মজার ছলে বলে,
– ওরে বাবা তোমার চোখ দু’টো থেকে মনে হচ্ছে এখনই অগ্নুৎপাত শুরু হবে।
আভা কোনো কথা না বলে উঠে চলে যায়।রৌদ্র শব্দ করে হাসে আভার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে।নিজে নিজেই বলে,
– বাবা এ তো দেখি একদম আমার উল্টো।আমি রাগ হলে সব বের করে দিই।আর এতো দেখি বোম হয়ে থাকে।একদম শান্ত হয়ে যায়।এই রাগ তো আরো ভয়ংকর!
ক্লাবের সম্পূর্ণ সময়টা একদম দম মেরে থাকে আভা।খাওয়া দাওয়া বিয়ে পড়ানো শেষে আসে বিয়ে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক সময়।মেয়ে বিদায়ের সময়।এই সময়টা মেয়ের বাবা-মায়ের সবচেয়ে কষ্টের সময়।জন্ম দেওয়া থেকে এতোটা বছর পেলে পুষে বড় করার পর মেয়ে হয়ে যায় বাবা মায়ের মেহমান।অহনা মাকে জরিয়ে অঝোরে কাঁদছে।তার বাবা টলমল চোখে সকলের আড়ালে দাঁড়িয়ে মেয়েকে নয়ন ভরে দেখছে।অহনার মা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দিয়ে চলেছে।অহনা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
– আম্মু আমি যাবো না।
পিলে চমকে ওঠে অভয়ের।কি বলে বউ তার?শ্বশুরবাড়ি যাবেনা তার বউ?তাহলে তো তাকে বিয়ে করেও আইবুড়ো হয়ে থাকতে হবে।না না এ অন্যায় তার সাথে তার বউ করতে পারে না।অভয় মেকি হেসে বলে,
– আমাদের সন্ধ্যার আগে বাড়িতে পৌঁছাতে হবে।
অহনা ছলছল দৃষ্টিতে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা বাবার দিকে চায়।বাবাকে ডেকে ফুঁপিয়ে ওঠে সে,
– বাবা।বিদায় দেবে না তোমার মেয়েকে?
অহনার বাবা টলমল চোখে ধীর গতিতে এগিয়ে এলো মেয়ে এবং মেয়ে জামাইয়ের কাছে।চোখের কোণায় জমা নোনাজল সকলের আড়ালে মুছে ফেলল।মেয়ের মাথায় হাত রেখে কাতর স্বরে বলল,
– ভালো থাকিস মা।আর কোনো প্রয়োজন অপ্রয়োজনে আমাকে জানাবি।তোর বাবা সবসময় তোর সাথে আছে।আর আর তোর বাবা তোকে খ..খুব ভালোবাসে।
কথাগুলো বলতে গিয়ে বার বার থেমে যাচ্ছিলেন অহনার বাবা।তিনি অভয়ের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলেন।অভয়ের মাথায়ও হাত বুলিয়ে দিলেন।এখন অভয়ের চোখ ভরে উঠলো।
এদিকে অঝোরে কেঁদে চলেছে আভা।বিয়ের এই পর্বে সকলের চোখে পানি দেখে নিজেকে আঁটকে রাখতে পারিনি সে।সেও পাল্লা দিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।সহসা তার সামনে কেউ রুমাল এগিয়ে দিলো।আভা সেটা নিয়ে সুন্দর করে চোখ মুখ মুছে নাক পরিষ্কার করে আবারো ফিরিয়ে দিলো যেদিক থেকে এসেছিল রুমলারটা।রৌদ্র নাক কুঁচকে রুমালটির দিকে তাকিয়ে আছে।কাউকে রুমাল ধরতে না দেখে পাশে তাকায় আভা।রৌদ্রকে নাক সিটিয়ে রুমালটির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সেটা রৌদ্রের আরেকটু কাছে এগিয়ে দিয়ে বলে,
– নেন।
রৌদ্র তর্জনি এবং বৃদ্ধ আঙুলের সাহায্যে রুমালের এক কোণা চিমটি দিয়ে ধরে।মেকি হেসে রুমালসহ হাতটা নিজের পিছনে নিয়ে আসে।আস্তে রুমালটা ছেড়ে দেয়।নিচে পড়ে যায় সেটা।আভার চোখ আবার ভরে উঠেছে।রৌদ্র আমতা আমতা করে বলে,
– আভা তুমি কাঁদছ কেন?
আভা সামনের দিকে চোখ রেখে নাক টেনে বলল,
– কাঁদব না?কত ইমোশনাল একটা সিন চলছে।
– সিন?এখানে কি কোনো ড্রামার শুটিং চলছে?
আভা রেগে বলল,
– ড্রামার শুটিং চলবে কেন?ভাইয়ার বিয়ে চলছে।আপনি এতো বোকার মতো কথা বলেন কিভাবে?আপনি নাকি আবার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েন।হুহ্!
চলবে…
#প্রিয়_বালিকা |২০|
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি
অভয়ের ঘরের সামনে দরজা আগলে দাঁড়িয়ে একঝাঁক তরুণ তরুণী।নিজেকে সর্দার দাবি করে সকলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আভা।তার ঠিক পিছনেই রৌদ্র।পাশে সেহরিন।যে কিনা কিছুক্ষণ পরপর রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।আর রৌদ্র?সে তো এক দৃষ্টিতে তার আভার দিকে তাকিয়ে আছে।ঠোঁটে মুগ্ধতার হাসি।আচমকা আভা গলা নামিয়ে সতর্ক সুরে বলে,
– এই এই আসছে আসছে।
সকলে নড়ে চড়ে দাঁড়ায়।ঘোর কাটে রৌদ্রের।সামনে তাকিয়ে দেখতে পায় অভয় বেশ ফুরফুরে মেজাজে হেলেদুলে ঘরের দিকে এগিয়ে আসছে।মুচকি মুচকি হাসি তার ঠোঁটে।দরজার আগলে সব ভাইবোনদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কদম থেমে যায় অভয়ের।ভ্রু কুঁচকে বলে,
– এখানে কিসের আন্দোলন চলছে?
আভা বুকে হাত গুঁজে অতি দাম্ভিকতার সাথে বলে,
– এখনো শুরু হয়নি।তবে তুমি যদি আমাদের দাবি না মান তো শুরু হবে।
অভয় সন্দিহান দৃষ্টিতে সকলের দিকে তাকিয়ে আছে।বোনের পিছনে নিজের প্রিয় বন্ধুকে দেখে তার কপালে আরো একটি ভাঁজ বৃদ্ধি পেল।সন্দিহান স্বরে বলে উঠলো,
– কিসের দাবি?
আভা আগের ভঙ্গিতেই জবাব দেয়,
– আমাদের বিশ হাজার টাকা দাও আর বাসর ঘরে যাও ব্যাস এটুকুই।
অভয়ের চোখ বেরিয়ে এলো।সে অবাক স্বরে বলে,
– কিহ্?বিশ হাজার টাকা?এখন আমাকে উল্টো করে ঝাঁকালেও এতো টাকা পাবি না।সব টাকা বউ আনতে গিয়ে ডাকাতি হয়ে গিয়েছে।
আভাসহ সকলে মাথা নাড়িয়ে প্রতিবাদী স্বরে বলে উঠলো,
– না না তা বললে তো চলবে না।শা’লা-শা’লিদের দিতে পেরেছ আমাদের পারবে না?আমাদেরকেও দিতে হবে।
অভয় কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
– আচ্ছা এখন পাঁচ হাজার দিচ্ছি।পরে সবাইকে নিয়ে ঘুরতে যাবো কেমন?
রৌদ্র নাকচ স্বরে বলে,
– না চলবে না।বিশ হাজার টাকায় দিতে হবে।
– তুইও ওদের সাথে গিয়ে ভীড়েছিস?তুই না আমার বন্ধু?
– হ্যাঁ আর তাই তো বন্ধু হিসেবে এটা আমার এবং আমাদের দাবি।
সকলে এক সুরে চেঁচিয়ে বলে,”আমাদের দাবি মানতে হবে। মানতে হবে।” অভয় একটি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
– আচ্ছা এখন দশ হাজার দিই।
সকলে নিজের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করল।আভা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।আপাতত এটা নিয়েই ভাগা ঠিক হবে।না হলে যদি চিল্লাচিল্লিতে তার বাবা একবার চলে আসে তাহলে আমও যাবে ছালাও যাবে।তার থেকে যতটুকু দিচ্ছে ততটুকুই নিয়ে নেওয়া যাক।আভা সন্দিহান স্বরে অভয়কে বলে,
– তুমি কিন্তু পরে আমাদের ঘুরতে নিয়ে যাবে বলেছ।
– হ্যাঁ হ্যাঁ নিয়ে যাবো।
অভয় টাকা দিতেই সকলে টাকা নিয়ে ছুটে পালায়।অভয়ও স্বস্তির শ্বাস ফেলে ঘরে প্রবেশ করে।সারাঘর কাঁচা ফুলে সজ্জিত।কাঁচা ফুলের সুবাসে হৃদয় হালকা হয়ে যায় অভয়ের।ফুলে সজ্জিত খাটে বসে তার বউ তার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।হয়তো ভয়ে।বউকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাসে অভয়।সে নিজেও ভীত।জীবনের প্রথম কোনো যুবতী নারীর সাথে একঘরে থাকবে সে।এর থেকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বোধহয় দু’টো নেই।অভয় ঘামতে শুরু করেছে।ধীরে ধীরে মস্তিষ্ক বিকল হয়ে চলেছে তার।নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে গলা ঝাড়ে সে।অহনা খাটে পা ঝুলিয়ে বসে থরথর করে কাঁপছে।সে শুঁকানো ঢোক গিলে অভয়কে সালাম জানাল।অভয়ও কোনো মতে উত্তর দিলো।এরপর কি বলবে দু’জনের কেউ ভেবে পেল না।আচমকা অভয় বলে উঠলো,
– গরম লাগছে না?
অহনা মাথা উপর নিচ মাথা নাড়ায়।অভয় তৎক্ষনাৎ কোনো কিছু না ভেবে বলে,
– তাহলে খুলে ফেল।
অহনা চোখ বড় বড় করে বলে,
– কিহ্!
অভয় ভড়কে যায়।তুতলিয়ে বলে,
– আ আই মিন জানালা।জানালাটা খুলে ফেল।
তপ্ত শ্বাস ফেলে অহনা।ঠোঁট চেপে হাসেও সে।ধীর পায়ে উঠে গিয়ে জানালা খুলে দেয়।সঙ্গে সঙ্গে শীতল বাতাসে ছেয়ে যায় চারপাশটা।নিজের পিছনে কারো অস্তিত্ব অনুভব করে কেঁপে ওঠে অহনা।ব্যক্তিটির একটি হাত তার পেটের এক অংশ স্পর্শ করে।অহনার শরীরের কম্পন বৃদ্ধি পায়।ব্যক্তিটি নিজের অধর ছোঁয়ায় অহনার মসৃণ কাঁধে।কাঁধ থেকে সে স্পর্শ ধীরে ধীরে স্থান পরিবর্তন করে গলদেশে প্রবেশ করতেই বিকট আওয়াজে দু’জনেই ছিটকে দূরে সরে যায়।দু’জনের শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বৃদ্ধি পায়।এতক্ষণ কোনো ঘোরের মধ্যে ছিল তারা।অভয় ঢোক গিলে আশেপাশে তাকিয়ে শব্দটির উৎস খোঁজার চেষ্টা করে।বিরক্ত স্বরে বলে,
– এটা কি তোমার ফোন?আজকে ফোনটা বন্ধ রাখতে পারতে। আসহ্য!
অহনা লজ্জায় অভয়ের দিকে তাকাতে পারে না।মাথা নত রেখেই নিচু স্বরে বলে,
– এটা আমার ফোন না।
কপাল কুঁচকে অহনার দিকে তাকায় অভয়।এটা তো তারও ফোন না।আবার অহনা বলছে তার ফোনও না।তাহলে এটা কার ফোন?অভয় অহনাকে বলল,
– খোঁজো তো কোথায় বাজছে।
অহনা এবং অভয় দু’জনে নেমে যায় ফোন খোঁজায়।ফোনটা অনবরত বেজেই চলেছে।কিছুক্ষণ খোঁজার পর খাটের নিচে ফোনটি পায় অহনা।অভয়কে ফোনটি দেখিয়ে বলে,
– পেয়ে গিয়েছি এই যে।
– রিসিভ করো।এতো রাতে ফোন করছে এমার্জেন্সিও হতে পারে।লাউডস্পিকারে দাও।
অহনা সায় জানিয়ে কলটা রিভিস করে লাউড স্পিকারে দিলো।সঙ্গে সঙ্গে মেয়েলি চিকন স্বর ভেসে এলো,
“দু’টির বেশি নয় একটি হলে ভালো হয়।এই চেতনাকে ধারণ করে জনস্বার্থে কাজ করে চলেছি আমরা।নব দম্পতির বাসর রাতে তাদের সতর্ক করায় আমাদের কাজ।আপনাদের বিবাহিত জীবন মধুর ও সুখময় হোক।তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে আপনাদের বিবাহিত জীবন যেন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সে বিষয়ে সচেতন থাকা আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য।ধন্যবাদ।”
খট করে ফোন কেটে দিলো আভা।বিছানায় মুখের ভিতর কাপড় ঢুকিয়ে গোড়াগুড়ি খাচ্ছে রৌদ্র।হাসতে হাসতে তার পেট ফেটে যাওয়ার জোগাড়।সে হাসতে হাসতে গড়িয়ে একবার বিছানার এপাশে যাচ্ছে তো ওপাশে।আভা কল রেখে নিজেও অট্টহাসি দিয়ে বিছানায় বসে পড়ল।মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রৌদ্রের দিকে।লোকটা কত হাসিখুশি। শুধু রেগে গেলে মাথা ঠিক থাকে না।রৌদ্র এবার হাসতে হাসতে উঠে বসল।হাসির দাপটে চোখে জল টলমল করছে তার।আভা রৌদ্রের ঠোঁটের দুইপাশের টোল দেখে আনমনে বলে,
– ডিম্পল?!
রৌদ্র ধীরে ধীরে হাসি থামিয়ে দেয়।আভার চোখে চোখ রেখে ঠোঁট প্রসারিত রেখেই প্রশ্ন করে,
– পছন্দ?
তৎক্ষনাৎ জবাব এলো,
– খুব।
কিছুক্ষণ থেমে আভা ঘুরে বসে।রৌদ্রের চোখ চোখের মণি রেখে বলে,
– গোটা আপনিটাই আমার খুব পছন্দের।কিন্তু দুঃখের বিষয় আপনি বুঝলেন না।
হতাশার শ্বাস ফেলে আভা।রৌদ্র দুই ঠোঁট চেপে কিছু বলার জন্য হাঁসফাঁস করে।আমতা আমতা করে বলে,
– আভা তোমাকে আমার অনেক কিছু বলার আছে।আমি আসলে তোমাকে খুব মানে..আব অভয়…!
দরজার দিকে চেয়ে চোখ বড় করে অভয়ের নাম উচ্চারণ করে রৌদ্র।অভয় রক্তলাল চোখে আভার দিকে তাকিয়ে আছে।রৌদ্র উঠে দাঁড়ালো।আভা শুঁকনো ঢোক গিলে দৌড়ে রৌদ্রের পিছনে চলে গেল নিজেকে বাঁচাতে।অভয় তেড়ে এসে রাগে কটমট করে বলল,
– আজকে ওর একদিন কি আমার একদিন।আজকে ওকে যদি পিটিয়ে ত’ক্তা না করছি তাহলে আমার নামও অভয় না।
আভা রৌদ্রের টিশার্টের পিঠের অংশ খামচে ধরে ফিসফিসিয়ে বলে,
– রৌদ্র প্লিজ আমাকে বাঁচান।
রৌদ্র অভয়কে বলল,
– অভয় দেখ শান্ত হ।ঘরে যা ভাবি একা আছে।ও জাস্ট একটু মজা করছিল।
অভয় আগের মতো উগ্র মেজাজ নিয়ে বলে,
– মজারও একটা লিমিট থাকা দরকার।এখন ও বাচ্চা নেই।একটা নতুন এসেছে এই বাড়িতে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার সাথে এসব কোন ধরনের মজা?আজকে তোর হাড্ডিগুড্ডি গুঁড়ো গুঁড়ো করে ফেলবো।বেয়াদ’ব বেরিয়ে আয়।
আভা রৌদ্রের পিছন থেকে উঁকি দিয়ে অভয়কে দেখল।অভয়কে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঢোক গিলল সে।রৌদ্র অভয়কে থামানোর জন্য এটা ওটা বলে চলেছে।একপর্যায়ে অভয় আভার হাত টেনে রৌদ্রের পিছন থেকে বের করে নিয়ে এলো।আভার চোখ থেকে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ে।সে শুধু একটু মজা করতে চেয়েছিল কিন্তু এই ছোট মজাটা এমন ভয়াবহ রূপ নেবে সে স্বপ্নেও ভাবিনি।অভয় আভাকে আঘাত করার জন্য হাত তুলতেই হুংকার দিয়ে ওঠে রৌদ্র।
– অভয়!
অগ্নিবর্ষণ দৃষ্টিতে অভয়ের দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত হয়ে যায় তার।আভাকে আবারও নিজের পিছনে আগলে রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলে,
– অনেক হয়েছে।কি শুরু করেছিস কি তুই?ও বাচ্চা মেয়ে না বুঝে একটা ভুল করে ফেলেছে তাই বলে তুই ওর গায়ে হাত তুলবি?তাছাড়া এটা ও একা করেনি আমিও ছিলাম ওর সাথে।কাল সকালে কথা বলবো এখন যা এখান থেকে।
অভয় দমে যায়।চোখ পাকিয়ে একবার আভার দিকে তাকিয়ে চলে যায় সে।আভা ভীত চোখে রৌদ্রের পিছন থেকে উঁকি দিয়ে নিজের ভাইকে দেখে।অভয় আবারও ফিরে আসে।সন্দিহান দৃষ্টিতে রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে,
– বাই দ্য ওয়ে ও তোর রুমে কি করে?এতো রাতে ও তোর রুমে কেন?
রৌদ্র এবং আভা দুজনই থমকে যায়।রৌদ্রের রাগি দৃষ্টি মিলিয়ে যায়।চিন্তিত ভঙ্গিতে ভাবে কি বলবে।কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
– বললাম তো ও একা করেনি এটা।আমিও ছিলাম।এখন যা।
অভয় সন্দিহান দৃষ্টিতে রৌদ্র এবং আভাকে কিছুক্ষণ দেখে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।স্বস্তির শ্বাস ফেলে রৌদ্র।আভা এখনো রৌদ্রের টিশার্ট খামচে ধরে ফুপিয়ে চলেছে।রৌদ্র পিছন ঘুরে আভার মুখোমুখি দাঁড়ায়।আভা মাথা নত করে নাক টানতে টানতে বলে,
– আমি তো শুধু একটু মজা করতে চেয়েছিলাম।
রৌদ্র সযত্নে আভার চোখের পানি মুছে দিলো।কোমল স্বরে আশ্বাস দিয়ে বলে,
– জানি তো।আমি অভয়কে বলবো তুমি আর কেঁদো না।গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
আভা ভীত চোখে মুখ তুলে বলল,
– ভাইয়া যদি আবার আসে?
রৌদ্র মসৃণ হাসে।এক হাতে আভার চোয়াল ধরে উপরে তুলে নিচু স্বরে বলে,
– আসবে না।আসলে দৌড়ে চলে আসবে আমার কাছে কেমন?
রৌদ্র পূর্ণ দৃষ্টি ফেলে আভার দিকে।চোখের ভেজা পাপড়িগুলো আভার চোখের মায়া আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।ডান চোখের নিচের ছোট তিলটা চক চক করছে।তপ্ত শ্বাস ফেলে রৌদ্র।আভা একহাত রৌদ্রের কাঁধে হাত রেখে বলে,
– ধন্যবাদ আমাকে বাঁচানোর জন্য।
রৌদ্র আভার হাতের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসে।আভার চোখে দৃষ্টি স্থির করে বলে,
– গুড নাইট।
– আপনাকেও শুভরাত্রি।
স্টেজে পাশাপাশি বসে আছে অভয় এবং অহনা।দুজনকে পাশাপাশি অসম্ভব সুন্দর লাগছে।দূরে পাংশুটে মুখে তাদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পূর্ণতা।সে আজ একপ্রকার জোর করেই এসেছে অভয়ের রিসিপশনে।তার মা আসতে চায়নি।কিন্তু সে জোর করে এসেছে।সে তার অপূর্ণতাকে স্ব চোখে দেখতে চায়।গলাটা আঁটকে আছে অপূর্ণতার দখলে।ভিতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসছে ক্ষণে ক্ষণে।সে জানত এই সুপুরুষ কোনোদিনই তার হবার নয়।এতো ভাগ্য নিয়ে সে এই পৃথিবীতে আসেনি।ফিকে হাসিতে এগিয়ে এলো পূর্ণতা।অভয় তাকে দেখে গম্ভীর ভঙ্গিতে উঠে চলে গেল।অভয়ের যাওয়ার দিকে চেয়ে চোখ ভরে উঠলো তার।তবু নিজেকে সামলে অহনার দিকে তাকিয়ে বলল,
– আসসালামু আলাইকুম ভাবি।কেমন আছেন?আমি আভার বান্ধবী।
অহনা মিষ্টি হেসে সালামের জবাব দিলো।পূর্ণতাকে ইশারায় তার পাশে বসতে বললো।পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল,
– গায়ে হলুদ, বিয়েতে আসোনি কেন?
পূর্ণতা মলিন হেসে জবাব দেয়,
– আসলে কিছু কাজে আঁটকে গিয়েছিলাম।
– আভার মুখে তোমার কত কথা শুনেছি।ও সবসময় তোমার জিকির করতে থাকে।তুমি বিয়েতে না আসায় ও কষ্ট পেয়েছে।ওই তো আমাকে বলল ওর ফ্রেন্ড নাকি বিয়েতে আসেনি তাই ওর মনটা খারাপ।
চলবে…