প্রিয় দেশবাসী – Sumaiya Afrin

0
517

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
চিঠি নং: ০২

প্রিয় দেশবাসী,
২০২০ সাল যেটা দেখলেই মনের ভিতর এক অজানা ভয় কাজ করে । কারণ এর শুরুটাই হয়েছিল নানা ভীতিকর পরিবেশের মধ্য দিয়ে । একদিকে অস্ট্রেলিয়ার ভয়ংকর দাবানল, হাজারো প্রাণীর পুড়ে যাওয়া দেহ, আগুনের লেলিহান শিখা অন্যদিকে ইরান ও আমেরিকার পাল্টা হামলার মধ্য দিয়েই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা । কিন্তু ঠিক সেই সময়ে অনেকটা আড়ালে আবডালে চিনে চলছিল এক প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিস্তার । যা পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা । আমাদের কয়েক প্রজন্ম এর আগে কখনো বিশ্বজুড়ে এমন ভয়াবহ কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি ৷ আমরা প্রতিনিয়ত নানা সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে গিয়েছি, যাচ্ছি ৷ কিন্তু কখনোই এমন কিছু আমাদের সবাইকে সমানভাবে প্রভাবিত করেনি যা আজকের এই বীভৎস ভাইরাসের হানা দেওয়ার ফলে হচ্ছে ৷

রোহিঙ্গা সংকট, রাজনৈতিক বিভেদ , ভারতে হিন্দুত্ববাদের উত্থান, মধ্যপ্রাচ্যে, বিশেষ করে ইয়েমেনের ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক মানবিক সংকট, ইউরোপে শরণার্থী সংকট এবং ডানপন্থি উগ্রবাদের উত্থান ৷ এতকিছুর পরেও এইসব ইস্যুকে আমরা বৈশ্বিক সংকট না ভেবে স্থানীয় সংকট ধরে নিয়ে দিনের পর দিন নির্বিকার থেকেছি ৷ কিন্তু এখন এমন এক বিপদের সম্মুখীন আমরা, যা আমাদের সবাইকে এক জোট হতে বাধ্য করেছে প্রায় ৷ বিশ্বজুড়ে এখন মানবজাতির একটাই শত্রু নোবেল করোনা ভাইরাস ।এটি এমনি এক ভাইরাস যে কোনো ধর্ম চেনে না, দল চেনে না, জাতীয়তা মানে না ৷

প্রিয় দেশবাসী, আপনারা হয়তো জানেন ইটালি, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, এস্তোনিয়াসহ ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশ হয় লকডাউনে আছে, না হয় জরুরি অবস্থা জারি করেছে , অথবা কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে৷ কারণ একটাই, সবাইকে নিরাপদে রাখতে বাধ্য করা৷

অথচ আজ আমি যখন এই চিঠি লিখছি, তখনও বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা হয়নি ৷ কিংবা হলেও যথোপযুক্তভাবে তা বাস্তবায়ন করা হয়নি বা হচ্ছে না । এছাড়া যখন বাংলাদেশ সরকার লকডাউন ঘোষণা করলেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলো, ঠিক তখনও আমরা কেউ সতর্কতা অবলম্বন করিনি বরং চাকরিজীবি যারা ছিলেন তারা গৃহবন্দি না থেকে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে বেড়ানোর জন্য হানা দিয়েছে যত্রতত্র । শিক্ষার্থীরা সাধারণ সতর্কতা অবিলম্বে মাস্কটুকু পর্যন্ত না পরে আড্ডাতে মশগুল থাকছে । অথচ চ্যান্সেলর ম্যার্কেল জাতির উদ্দেশে তার ভাষণে বর্তমান পরিস্থিতিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় দুর্যোগ বলে উল্লেখ করেন এবং তিনি যেকোনো খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন ৷ তবে সবচেয়ে বড় কথা, তিনি বলেছেন, “বিষয়টা খুব গুরুতর, আপনারা সিরিয়াস হোন ৷ গুজবে কান দেবেন না বরং সচেতনতা বাড়িয়ে দিন, বিজ্ঞানী ও ডাক্তারদের কথা শুনুন, সেই মোতাবেক কাজ করুন ।”

চারিদিকে এখন করোনা, করোনা গুঞ্জনে, আলাপে আলাপে মুখর শহর থেকে শহর, গ্রামের প্রতিটা প্রান্তর । তাই এই মুহূর্তে জনগণকে সবচেয়ে নিরাপদ রাখতে হবে আর তার জন্য সর্বপ্রথমে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপদে রাখতে হবে ৷ অথচ এখনো হাসপাতালগুলো প্রস্তুত নয় , ডাক্তারদের নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা৷ সর্বোপরি গাউন, মাস্ক, গ্লাভস সবকিছুরই যেন অভাব৷
তাই করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধ এবং এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে বিশ্ববাসীকে বেশ কিছু সাধারণ অথচ কার্যকর বিধি নিষেধ পালন করতে আহবান জানাচ্ছি ।
কারণ এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে সুস্থ ব্যক্তির দেহে অনায়াসে হাঁচি কিংবা কাঁশির মাধ্যমে এটি ছড়াতে পারে । কোনো সুস্থ ব্যক্তি যদি করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির সংস্পর্শে আসে আর সেই সুক্ষ্মকণা শ্বাসপ্রশ্বাস বা হাতের স্পর্শের দ্বারা মুখে যায়, তখন সেই সুস্থ ব্যাক্তির দেহেও ভাইরাসটি সংক্রমিত হতে পারে ।

এছাড়া করোনায় আক্রান্ত অনেকের মাঝে রোগের উপসর্গ প্রকাশ পাওয়ার পূর্বেই এসব রোগীর মাধ্যমেও ভাইরাসটি বিস্তার লাভ করতে পারে । কোভিড-১৯ ভাইরাস সম্পর্কে এখনো অনেক কিছুই অজানা রয়ে গেছে । তাই এই রোগীদের থেকে ভাইরাসটি সংক্রমণের ঝুঁকি ঠিক কতটা সেটা সঠিকভাবে এখনো জানা যায়নি।

তাই সকলের করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে হলে উক্ত ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকার উপায় যেমন জানতে হবে তেমনি স্বাস্থ্যবিধিও সঠিকভাবে মানতে হবে । এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে হলে যে সকল কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে তা নিচে উল্লেখ করা হলো_____

১. বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজের দুই হাত যতোবার সম্ভব পরিষ্কার করুন , স্বচ্ছ পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এরপর হাতে সাবান লাগিয়ে হাতের তালু এবং পৃষ্ঠতল ঘষে ফেনা তুলুন । আঙ্গুলগুলোর মাঝেও একইভাবে পরিষ্কার করুন । এরপর আবারও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন ।

২. হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলুন । এরপর সেই টিস্যু যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলে আবারও নিজের হাত পরিষ্কার করুন । এছাড়া মনে রাখতে হবে হাঁচি বা কাঁশি আটকাতে কখনোই নিজের হাত বা কনুই ব্যবহার করা যাবে না ।

৩. মুখে মাস্ক পড়া । কারণ করোনা ভাইরাসের তরল উৎস হাঁচি-কাঁশির ফোটা থেকে মুখমণ্ডলকে মাস্ক কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে । তবে এর মাধ্যমে ভাইরাসের অতি সূক্ষ্মকণা আটকানো সম্ভব নয় । এছাড়া, মাস্ক পড়লেও চোখ খোলাই থাকে। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু ব্যক্তির দেহে চোখের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে । তাই খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বাইরে অবস্থান না করা ।

৪. এই ভাইরাসের লক্ষ্মণ দেখা মাত্রই চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা । যদি জ্বর, কাশি এবং শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ।

৫. ভাইরাস আক্রান্ত অঞ্চলে জীবন্ত পশুবাজার এড়িয়ে চলতে হবে এবং পশুপাখিকে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে ।

৬. কাঁচা খাবার যথা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে ।

এছাড়া আক্রান্ত এলাকা থেকে ফিরে থাকলে ১৪ দিন নিজেকে জনসমাগম থেকে ‘বিচ্ছিন্ন’ রাখুন অর্থাৎ এই সময় কর্মস্থল থেকে শুরু করে অন্যান্য জনসমাবেশস্থল এড়িয়ে চলতে হবে ।

প্রিয় দেশবাসী, দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের কাছে চিঠির ইতি টানার এই শেষ ক্ষণে এসে একটাই অনুরোধ আপনারা স্ব স্ব জায়গায় অবস্থান করুন । ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন । একটা চিঠির দ্বারা হয়তো সবাইকে সম্পূর্নভাবে সচেতন করা যাবে না ঠিকই । কিন্তু চিঠির মর্মস্পর্শী কথাগুলো অনুধাবন করে যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাই সচেতনতার হাত বাড়িয়ে দেই । তবেই খুব দ্রুত পৃথিবী ফিরে পাবে নতুন রূপে তার পূর্ব সত্তা ।

ইতি,
সুমাইয়া আফরীন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে