প্রিয়া চন্দ্রিমা পর্ব-০২

0
588

#প্রিয়া_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#২য়_পর্ব
অনেক কষ্টে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কাঁথার ভিতরে থেকে মুখ বের করে দেখলাম একটা মেয়ে এতক্ষণ আমায় জাপ্টে ধরে ছিলো। আমায় দেখেই ভুত দেখার মতো চিৎকার দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
– আপনি! আপনি কে? এখানে কি করছেন?
– আমি এই বাসার গেষ্ট। আমাকে এই রুমে থাকার জন্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আপনি কে! এভাবে আমায় জাপ্টে ছিলেন কেন!
– আমি ভেবেছিলাম এটা বুঝি অবন্তী। মাঝে মাঝে ওকে এই রুমে পাওয়া যায় তো তাই এসেছিলাম।
– আপনার একবার সিউর হওয়া উচিৎ ছিলো। বাসায় একটা অনুষ্ঠান আছে চারদিন পরে এখন তো বাসাতে গেষ্ট আসবেই। তাই জন্য কারো মতো কাউকে মনে হলে আপনি তাকে জাপ্টে নিবেন এটা তো ঠিক না।
– হুম। আমি বুঝতে পারি নি।
– পরের বার থেকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।
– হয়েছে! হয়েছে! এতো জ্ঞান দিতে হবে না। কি একটু শান্ত গলায় কথা বলেছি জ্ঞান দেওয়া শুরু করছে। এই যে শুনুন আপনার ভাগ্য বুঝলেন যে চন্দ্রিমা আপনাকে জড়িয়ে ধরেছিলো নয়তো কতো ছেলে পিছনে পরে আছে আপনার মতো ছেলেদের দিকে ফিরেও তাকাই না। আসছে জ্ঞান দিতে।
আমি বিছানা ছেড়ে উঠে মেয়েটির কাছে গিয়ে বললাম – আপনার পিছনে যারা ঘোরে তাদের পছন্দ খারাপ এতটুকু বুঝে গেছি তাছাড়া তাদের ব্যাক্তিত্বেরও কোনো সন্ধান হয়তো পাওয়া যাবে না। আমি তাদের মতো না। ওহ হ্যাঁ! নিজেকে অভার সুন্দরী ভেবে আকাশ পাতাল কল্পনা করা বাদ দিন কেমন। আপনি অতোটা সুন্দরী না তবে চলে মোটামুটি।

কথাগুলো বলে আমি ওয়াশরুমে গেলাম। ছোট বেলা থেকেই যে মানুষটি যেমন ব্যাবহার ডিজার্ভ করে তাকে ঠিক তার যোগ্য ব্যাবহার দেওয়ার এক অভাবনীয় প্রতিভা আছে আমার মাঝে। এখানেও তার ব্যাতিক্রম কিছুই হলো না।

এখন সন্ধ্যা।
ঘুম থেকে জেগে যাওয়ার পর পেটের মাঝে ইদুর লাফালাফি শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এখানে তেমন কাউকে চিনি না। কাকে গিয়ে কি বলবো এটা ভেবেই রুম থেকে বের হওয়া হচ্ছে না।

যতোসব আকাশ পাতাল ভাবনা বাদ দিয়ে বের হয়ে রাফছিকে খুঁজতে শুরু করলাম। হঠাৎই চোখ পড়লো তখন যে মহিলা পানি দিয়েছিল তার দিকে। কিছুটা এগিয়ে গেলাম – এই যে শুনছেন!
উনি কিছু হাতের কাজ করছে। কাজ রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো- কিছু বলবা!
– আপনার সাথে আমার সম্পর্কের নামটা ঠিক আমার জানা নেই। যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলি!
– আমি তোমার বড় ফুপু। বলো কি বলবে।
– আমার প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে যদি খাবার মতো কিছু পাওয়া যেতো তবে ভালো হতো। না পাওয়া গেলেও সমস্যা নেই আপনি শুধু বলে দিন বাইরে কোথায় খাবারের দোকান পাওয়া যাবে আমি গিয়ে খেয়ে নিবো।
উনি আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে রইলো- তুমি এই বাড়ির ছেলে শুধু বাড়ির ছেলে না বাড়ির সব থেকে বড় ছেলে তুমি বাইরে খাবে এটা কি খুব ভালো দেখায়! তুমি টেবিলে বসো আমি খাবার দিচ্ছি।

আমি খাচ্ছি উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
– আর কিছু লাগবে তোমার!
– না ফুপু এতটাই আমার জন্য অনেক।
– তোমার বাসায় আর কোনো ভাই বোন নেই!
– না। আমি একাই। তবে আম্মু একটা মেয়েকে দত্তক নিয়েছিলো দু মাস আগে বিয়ে দিয়েছি।
– তুমি কিন্তু দেখতে একদম তোমার বাবার মতোই।
– হবে হয়তো। আম্মুও মাঝে মাঝে এমনটাই বলতো। কিন্তু আমার তো আর বাবাকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি।
– এসেছ যখন তখন অবশ্যই দেখা হবে। ভাইজান শপিং শেষ করে আসছে। হয়তো রুমে শুয়ে রেষ্ট করছে। তোমার কিছু দরকার হলে তুমি আমায় বলবে কেমন! একদম লজ্জা করবে না।
– আচ্ছা ।
খাওয়া শেষ করে আমি রুমে এসে শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করছি। দরজায় ঠকঠক শব্দে মাথা তুলে দরজার দিকে তাকালাম। রাফছি দাঁড়িয়ে আছে।
– কিছু বলবা!
– তোমায় ডাকে তাড়াতাড়ি ছাঁদে আসো। ভুলেও দেরি করবা না।
রাফছি দৌড়ে দিলো।
ছাঁদে আবার কি এমন জরুরি কাজ পড়ে গেলো যে এতো আর্জেন্ট যেতে হবে!

ছাঁদের রেলিঙের উপর বসে আছি। আমার সামনে রাফছিসহ পাঁচটা বাঘিনী দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে সুন্দর বনের আইনশৃঙ্খলা মেনে না চলায় সিংহ মামা তাদের সাজা হিসাবে সমাজবাস দিয়েছে।
– রাফছি আমায় ডেকে আনলে কেন!
– রাফছিকে ডেকে আনতে বলা হয়েছে জন্য ডেকে এনেছে। রাফছি তোর কাজ শেষ তুই এখন যা।
– আমিও থাকি আপু।
মেয়েটি এমন দৃষ্টিতে রাফছির দিকে তাকালো মনে হচ্ছে এখনই মনে হয় চোখ থেকে অগ্নি শিখা বের হয়ে রাফছিকে ঝলসে দিবে।

– রাফছি তো চলে এখন বলুন কি বলতে ডেকেছেন।
– আপনার সাহস হয় কি করে আমার বোনের মতো বান্ধবীকে অসুন্দরী বলার!
মেয়েটি অবন্তীর কাছে এসেছে তাহলে হয়তো এটাই অবন্তী। আমি কিছু না বলেই চুপচাপ অবন্তীর কথা শুনছি।
পাশে থেকে চন্দ্রিমা বললো- কি হলো এখন মুখে কোনো কথা আসছে না বুঝি। তখন আমায় একা পেয়ে যা নয় তাই শুনিয়ে দিয়েছে।
– তাছাড়া আপনাকে তো আগে কখনো আমাদের বাড়িতে দেখিনি। আপনি কে! কার কাছে এসেছেন! একজন গেষ্ট হয়ে বাড়ির মেয়েকে উল্টো পাল্টে কথা শোনানোর সাহস আসে কই থেকে!
অবন্তীর এই প্রশ্নটার উত্তর দিলাম – আমিও এই বাড়ির ছেলে হয়তো সাহস টা সেখানে থেকেই আসে।
অবন্তীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি এবার কথা বললো- আমি এ বাড়ির সব থেকে বড় মেয়ে আমি তো কোনো দিন আপনাকে দেখিনি। আপনি এই বাড়ির ছেলে হলেন কিভাবে!
– তুমি তাহলে রাদিয়া।
অবন্তীর রাগ মনে হচ্ছে আরও বেড়ে গেলো- আপনি আপুকে নাম ধরে তুমি করে বলছেন কেন! আপনি কি আপুর বড় নাকি! নাম কি আপনার বলুন ছোট চাচ্চুকে বলে তারপর আপনাকে মজা দেখাচ্ছি।
– আমি সুমন। আজ দুপুরেই ঢাকা থেকে এসেছি।
– তো কি হয়েছে! বিয়ে খেতে এসেছেন! বিয়ে হচ্ছে না। রাতের গাড়িতে আবার ফিরে যান।
অবন্তী রাদিয়ার হাত টেনে বললো- আপু চলো নিচে যাবো। এই চন্দ্রিমা চল। অধরা তুই ও চল।

অবন্তী হাত ধরে টেনে সবাইকে নিচে নিয়ে গেলো।
প্রায় ত্রিশ মিনিট হয়ে গেলো। আমি তখনও ছাঁদে সন্ধার ঝাপসা আলোয় চারদিকে কোথায় কি আছে সেটা দেখার চেষ্টা করছি।

কেমন আছো ভাইয়া! – কথাটা শুনে কিছুটা ভয় পেয়ে পিছনে তাকালাম।
– ওহ অবন্তী তুমি।
– কি করে বুঝলে আমি অবন্তী!
– তোমার নিরবতা।
– বড় মা কেমন আছে!
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর দিলাম – হয়তো ভালোই।
– ভাইয়া আমি যে তোমায় চিঠি দিয়েছিলাম সেটা তুমি প্লিজ আম্মুকে বলবা না। আম্মু জানতে পারলে আমাকে মেরেই ফেলবে।
– আচ্ছা ঠিক আছে বলবো না।
– একটা কথা বলি!
– হ্যাঁ বলো।
– আমাকে একবার জড়িয়ে ধরবে ভাইয়া!
পাগলী মেয়েটা কথাটা শেষ করেই আমায় জড়িয়ে ধরলো। এই মুহুর্তের অনুভবি না ভাষায় প্রকাশ করা যায় আর না লিখে তুলে ধরা যায়। মনের ভিতরে প্রশান্তির বাতাস বইছে।
– আজ থেকে আমি সবাইকে বলবো আমারও ভাইয়া আছে। আর হ্যাঁ আসার জন্য ধন্যবাদ। একটু পর খেতে এসো রাতে সবাই একসাথে খাই।
অবন্তী যাওয়ার আগে আবার মনে করিয়ে দিলো যাতে করে আমি কোনো ভাবেই না বলি চিঠির কথা। ছোট মা কি এতটাই বদমেজাজী! হয়তো এই জন্য বাবা কখনো আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। তবে চেষ্টা করলে হয়তো পেতো একটু খোঁজ নিতে মা কেমন আছে! সুমন কেমন আছে। কাছে থেকে আদর না পেলেও শব্দে আদরটা অনুভব করে নিতাম।
দুচোখের পাতা ঝাপসা হয়ে আসলো।

To be continue….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে