#প্রিয়াঙ্গন
#পার্ট_২৭
জাওয়াদ জামী জামী
” আমার হলদে পাখি । ” তাহমিদ আনমনেই বলে উঠল.
দেয়ালের গা বেয়ে বেড়ে উঠা হলুদ অলকানন্দা গাছের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে কুহু। গাছ ভর্তি হলুদ অলকানন্দার চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যও অতটা মোহিত করতে পারলনা তাহমিদকে, ও যতটা মোহিত হয়েছে তার শ্যামাঙ্গীনির রূপে। কুহুর পরনে কাঁচা হলুদ রংয়ের থ্রি-পিস। তাহমিদ বিমোহিত নয়নে দেখছে তার চঞ্চলা পাখিকে। যার প্রনয়ে সে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চায়। তার প্রনয়ের পরশ মাখতে চায় নিজের তনু-মনে। সেই প্রনয়কে নিজের অস্তিত্বে বেঁধে রাখতে চায় আজীবন।
কুহু দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। রায়হান আহমেদ সবাইকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন।
অনেকদিন পর বাড়িটা যেন প্রান ফিরে পেয়েছে। সোহানী পারভিন ছোট ভাইয়ের ছেলেমেয়েদের কাছে পেয়ে খুশিতে কেঁদে ফেললেন। রিশা, নিশো চুপটি মে’রে ফুপুর কাছে বসে থাকল।
সাইদ আহমেদের ছেলেমেয়ে সিহা আর সাদমানও এই বাড়িতে এসেছে। কুহুরা আসার পর থেকেই ওরা এখানে বেশি সময় কাটাচ্ছে। শিরিন আক্তার ওদের বাঁধা দিলেও, ওরা তার কোন নিষেধই মানছেনা। ওরা তাদের কুহুপু আর বড় ফুপুর আশেপাশেই থাকতে চায়।
গভীর রাত। ধরনীর বুকে আঁধার তার রাজত্ব শুরু করেছে। ধরনীও আঁধারকে শরীরে মেখে নিয়ে দিনকে ঘুম পারিয়েছে। চারদিকে সুনসান নীরবতা। কোথাও কোন শব্দ নেই। মাঝেমধ্যে রাতচোরা পাখি ডেকে উঠছে কোন গাছের শাখা-প্রশাখার আড়াল থেকে। থেকে থেকে ঝিঁঝিঁরা তারস্বরে গান শুনিয়ে রজনীকে শান্ত করছে।
অম্বরে রুপালী সুধাকর ধরনীকে সাজাতে তার আলোর পসরা উজার করে ঢেলে দিয়েছে।
তাহমিদ উঠানে পেতে রাখা মাদুরে সটান হয়ে শুয়ে উর্দ্ধাকাশে নিনির্মেষ তাকিয়ে দেখছে আলো-আঁধারির খেলা। থেকে থেকেই চাঁদকে ঢেকে দিচ্ছে এক টুকরো মেঘ। আবার পাগলা হাওয়ার দল হুট করেই মেঘেদের গায়ে আছড়ে পরে, তাদেরকে সরিয়ে দিচ্ছে। নিয়মিত বিরতিতে চাঁদ, মেঘ আর বাতাসের লুকোচুরি চলছে।
” নিন আপনার বিখ্যাত কালো কফি। ” হুট করেই কুহু এসে বসল তাহমিদের পাশে। ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে কফির পাত্র।
তাহমিদ যেন জানত কুহু উঠানে আসবেই। তাই ও কুহুর আগমনে কোনও প্রতিক্রিয়া দেখায়না। শুধু মৃদু হেসে শোয়া থেকে উঠে বসল।
” কালো কফি! তোমাকে যতটা চুপচাপ মনে করতাম, ততটা চুপচাপ তুমি নও। বরং একটু বেশিই চঞ্চল। তো, কালো কফি শুধু আমার জন্যই এনেছ? তোমারটা কই? ”
” আমি এসব খাইনা। কি তেঁতো। এসব গরু-ছাগলের খাবার। আমি বাপু সাধারন মানুষ। ”
” মানে পরোক্ষভাবে তুমি আমাকে গরু-ছাগল বলছ! আজকেই শেষ। এরপর জীবনেও আর কফি পান করবনা। এতবড় অপমান মেনে নেয়া যায়না। ” কথা বলতে বলতে তাহমিদ পাশ থেকে ডার্ক চকলেট বক্স হাতে নিয়ে কুহুর দিকে বাড়িয়ে দেয়।
কুহু অসময়ে চকলেট দেখে যারপরনাই অবাক হয়েছে।
” চকলেট কেন! আপনি কি চকলেট সাথে নিয়ে চলাফেরা করেন? ”
” উহু। একজনকে এখনও তার অর্জনের জন্য মিষ্টিমুখ করানো হয়নি। তাই এই সামান্য আয়োজন। সে যদি এই সামান্য উপহার গ্রহন করে তবে কৃতার্থ হই। ”
তাহমিদের কথার ধরনে কুহু হাসল। ডান হাত বাড়িয়ে চকলেটের বক্স নেয়।
” ধন্যবাদ। ”
” রাজশাহীতে কবে ফিরছ? ”
” চাচা যদি কালকে থেকে যায়, তবে পরশুদিন ফিরব। আপনি থাকবেননা? ”
” আমি সকালেই বেরিয়ে যাব। জরুরী কাজ আছে। ”
” ঢাকা ফিরে যাবেন? ” ম্লান গলায় বলল কুহু। চোখের কোনে চিকচিক করছে অশ্রু।
” নাহ্। চার-পাঁচদিন আছি। তারাতারি ফিরে যেও। পরশুদিন বেলা এগারোটার মধ্যে তোমাকে রাজশাহীতে দেখতে চাই। ”
তাহমিদের কথায় অধিকারবোধ স্পষ্ট। যা কুহুর কর্নকুহরে ঠিক পৌঁছে গেছে।
” চাচা যদি যেতে দেরি করে তখন আমি কি করব! আমিতো তাকে তারাতারি যাওয়ার কথা বলতে পারবনা। ”
” কোচিং বন্ধ আছে? নাকি ছেড়ে দিয়েছ? ” কুহুর কথার উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞেস করল তাহমিদ।
” ছেড়ে দেয়ার প্রশ্নই আসেনা, ছুটি নিয়েছি। ”
” কাল সারাদিন শান্তি করে ঘুরে বেড়াও। আত্মীয় স্বজনদের সাথে সময় কাটাও। ভার্সিটিতে ক্লাস শুরু হয়ে গেলে, আর সেসবের সুযোগ পাবেনা। ”
কুহু তাহমিদের কথা আপাতত শুনছেনা। ও তাহমিদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষটা আগের থেকে একটু যেন শুকিয়ে গেছে। গায়ের রংটাও কেমন মলিন হয়ে গেছে। তবে নিজেকে পরিপাটি করে রাখায় পরিবর্তনটা খুব একটা ধরা যাচ্ছেনা। হঠাৎ করেই কুহুর মনটা খারাপ হয়ে যায়। কি হয়েছে তার?
” আপনি কি অসুস্থ? ”
হঠাৎ অপ্রাসংঙ্গিক প্রশ্ন করায় তাহমিদ ভুরু কুঁচকে কুহুর দিকে তাকায়।
” হঠাৎ এমনটা মনে হলো কেন? যেখানে আমাকে দেখে মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পরে, ইভেন বাসে আসার সময়ও একজন এ্যাড্রেস নিয়েছে। সেখানে তুমি আমাকে অসুস্থ বানিয়ে দিলে! তাহমিদ সব সময়ই ফিট থাকে বুঝলে? কোন অসুস্থতা তাকে ছুঁতে পারেনা। সত্যি বলতে কি জানো, সুন্দর মানুষদের কখনো অসুখ হয়না। ”
তাহমিদের এমন আবোলতাবোল উত্তর শুনে কুহু রে’গে যায়। মানুষটা এমন কেন!
” যদি অসুস্থই না হবেন, তবে চেহারা এমন শুকিয়ে গেছে কেন? নিয়মিত খাওয়াদাওয়া করেননি? এবার সোজাসুজি উত্তর দেবেন। আমি কোন আবোলতাবোল উত্তর শুনতে রাজি নই। ”
” শুনেছি মেয়েদের সংসার করতে ইচ্ছে করলে, এমন অনেক জিনিসই আছে উল্টাপাল্টা দেখে। তাদের চোখে সংসারের স্বপ্ন এমনভাবে সেঁটে যায় যে সাধারণ জিনিসের মাঝেও খুঁত খুঁজে পায়। তোমার কি এখন সংসার করতে ইচ্ছে করছে? পাত্র দেখব? কেমন পাত্র পছন্দ? ”
” আবারও উল্টাপাল্টা বকছেন? আমি ঘরে গেলাম। আপনি এখানে একা একাই দেবদাসের মত শুয়ে থাকেন। ” কুহু বিরক্ত হয়ে গেছে।
” তো, আমি কোন রোমিও! আমিতো দেবদাসই। জীবনে কোন রং নেই। সাধ-আহ্লাদ নেই। একটা প্রেমিকা নেই, একটা বউ নেই। দুই গন্ডা ছেলেপুলে নেই। দুই-চারটা শালা-শালী নেই। একটা শ্বশুর বাড়ি নেই। আমি শুকিয়ে শুটকি হবনাতো কে হবে? বেঁচে আছি এই ঢের। জীবনে একটা বউয়ের বড্ড অভাব বুঝলে? বউ ছাড়া জীবনটা পানসে। একজন পুরুষের জীবনে বউই রং এনে দিতে পারে। কিন্তু আমার ভাগ্য দেখ। এই বয়সে এসেও বউয়ের জন্য হাহাকার করতে হয়। ”
তাহমিদের মুখভঙ্গি দেখে কুহু হাসতে থাকে।
” বউ ছাড়াই যখন এত বছর কাটিয়ে দিলেন। তবে এখন কেন বউয়ের জন্য হাহাকার করছেন? বাকিটা জীবন এইভাবেই কাটিয়ে দিন। স্বাধীনভাবে বউ শূন্য জীবন উপভোগ করুন। ”
” বউ শূন্য ব্যাক্তিরা কত যে অসহায় তা তুমি কিভাবে বুঝবে নিষ্ঠুর মেয়ে। বউ শূণ্য জীবন আমি কাটাবো কেন? এর থেকে বড় শাস্তি জীবনে আর দ্বিতীয়টি নেই। ঐটা আমার শত্রুর সাথেও যেন না ঘটে। বউয়ের উপকারিতা সম্পর্কে তোমাকে একটু ধারণা দেয়া দরকার। তবেই যদি তুমি বুঝতে পার। ”
” থাক, এত বুঝে আমার কাজ নেই। এখন ঘুমাতে যান। নাকি সারারাত মশাদের গান শোনার জন্য উঠানেই বসে থাকবেন? ”
” অন্য কেউ যদি আমার দুঃখের কথা না শোনে, তবে মশাদের গান শুনতে শুনতে নাহয় নিজের দুঃখের কথা শেয়ার করি। এখন মশারাই আমার বউ শূন্য জীবনের সঙ্গী। ” দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল তাহমিদ।
কুহুর এই মুহূর্তে আকাশপাতাল কাঁপিয়ে হাসতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু বাড়িতে এখন সবাই আছে। ওর হাসির শব্দে কেউ যদি বাহিরে আসে, তবে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। তাই অনেক কষ্টে হাসি দমিয়ে রাখল।
” রুমে গিয়ে মশাদের সাথে সুখ-দুঃখের গল্প করবেন। প্রয়োজনে মশারী খুলে রাখবেন। এখন রুমে যান। অনেক রাত হয়েছে। আর বাহিরে থাকবেননা। ”
” হাহ্ তাহমিদ ভাই, তোর আসলেই পো’ড়া কপাল। কেউই তোর দুঃখ বোঝেনা। কি আর করার, যাই ভেতরেই যাই। ” কথার মাঝেই তাহমিদ পকেট হাতড়ে কিছু একটা বের করল। আচমকা চেপে ধরল কুহুর হাত। চোখের ইশারায় ওকে শান্ত থাকতে বলল।
কুহু দেখল তাহমিদ একটা ছোট প্যাকেট বের করেছে। মেয়েটা স্থির চোখে তাকিয়ে দেখছে সামনের মানুষটাকে। চাঁদের আলো তার মুখাবয়বে আছড়ে পরেছে। আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছে তার সুন্দর মুখশ্রী। কুহু তাহমিদের মুখের প্রতিটি শিরা-উপশিরা মনযোগ দিয়ে দেখছে। হঠাৎই ওর চোখ পরল তাহমিদের ডানদিকের ভ্রুর নিচে। সেখানে একটা কা’টা দাগ স্পষ্ট। অথচ আগেও সেখানে কোন কা’টা দাগ দেখেনি কুহু। কি হয়েছিল তার? কুহু কেবলই জিজ্ঞেস করতেই মুখ খুলবে, ঠিক তখনই কুহু ওর পায়ে কোন কিছুর শীতল ছোঁয়া অনুভব করল। ভয়ে ভয়ে পায়ের দিকে তাকাতেই ওর দম বন্ধ হয়ে আসে। তাহমিদ যত্ন করে ওর পায়ে নুপুর পরিয়ে দিচ্ছে!
কুহু নিনির্মেষ নেত্রে চেয়ে দেখছে সামনের মানুষটাকে। মানুষটা ওকে এত বোঝে কেন! কেন এভাবে আগলে রাখে! আর কেনইবা ওর কথা ভাবে!
” শ্যামাঙ্গীনি তার অনেক বড় অর্জনের জন্য আমার কাছ থেকে ছোট একটা উপহার ডিজার্ভ করে। তার প্রতিটা অর্জনেই কিছুনা কিছু উপহার তার জন্য বরাদ্দ থাকবে। সে যেন নির্দিধায়, নিঃসংকোচে আমার উপহার গ্রহন করে। ”
তাহমিদের কথার প্রত্যুত্তরে কি বলবে কুহু। এমন কথার প্রত্যুত্তর ওর জানা নেই৷ ও নীরব হেসে তাকিয়ে থাকে সুদর্শন যুবকের দিকে। কিন্তু আবারও ওর চোখ যায় ভ্রুর নিচে কা’টা দাগের দিকে। নিমেষেই ওর মুখ কালো হয়ে যায়।
” ভ্রুর নিচে কি হয়েছে? কা’টা দাগ কেন? আগেতো এটা ছিলনা। ”
কুহুর কথা শুনে তাহমিদ মুখ তুলে তাকায় মেয়েটার দিকে। ওর চোখমুখ বিস্ময় খেলে যায়।
” তুমি আমার চেহারার দিকে তাকিয়েছ! মাই গড! আমার কি সৌভাগ্য। তারমানে আমি নিশ্চয়ই সুদর্শন। তাই তোমার দয়া হয়েছে আমার প্রতি। ”
” খবরদার কথা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেবেননা। কি হয়েছিল আপনার? সোজাসাপটা উত্তর দিন। “।
কুহুর কন্ঠে কিছু একটা ছিল, যা শুনে থমকায় তাহমিদ। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ভেতর থেকে উছলে পরা অনুভূতিদের সামাল দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করল।
” মাস খানেক আগে ছোট্ট একটা এ্যাকসিডেন্ট হয়েছিল। একটা সিএনজি ধাক্কা দিয়েছিল। রাস্তায় পরে গিয়েছিলাম। তখনই কিছু একটা লেগে কেটে গিয়েছিল। ”
তাহমিদের কথা শুনে কুহুর বুকের ভেতর ছলকে উঠে ব্যথারা। এতকিছু ঘটে গেছে তা-ও সে একবারও জানায়নি! এত চাপা কেন মানুষটা! সবাইকে ভালো রাখতে নিজেকে উজার করে। কিন্তু নিজের বেলায় কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। কেন এমন সে?
” কই আমাদের তো কিছুই জানাননি! খালাও নিশ্চয়ই জানেননা। এমন কেন আপনি? ” কুহুর গলা কাঁপছে।
” এই সামান্য বিষয়ে তোমাদের জানিয়ে কি নিজেই বিপদে পরতাম। খালাকে জানানোর সাথে সাথে সে কান্নাকাটি শুরু করত। আর তাকে শান্ত করতে আমাকেই রাজশাহী আসতে হত। নিজের কাজ ফেলে সেটা করা সম্ভব ছিলনা, তাই জানাইনি। ”
” আপনি ঘরে যান। অনেকক্ষণ ধরে বাহিরে আছি। কেউ দেখলে লজ্জায় পরে যাব। ” কুহু আর উঠানে থাকলনা। চোখ মুছতে মুছতে নিজের ঘরে চলে গেল।
তাহমিদ বুঝতে পারছে কুহু বেশ রা’গ করেছে। তাই এমনভাবে উঠে চলে গেল। সে-ও ম্লান হেসে রুমের দিকে পা বাড়ায়।
চলবে…
#প্রিয়াঙ্গন
#পার্ট_২৮
জাওয়াদ জামী জামী
” নানিমা, সারপ্রাইজের জন্য তৈরী থাক। তোমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সারপ্রাইজ আসতে চলেছে। নানা ভাইও তোমাকে এমন সারপ্রাইজ কখনোই দেয়নি। ” তাহমিদ ফাতিমা খানমের ডান হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে মৃদু গলায় বলল।
” বাপজান, তোমার নানা ভাই সারাজীবন চাকরি আর ছেলেমেয়েদের ভালো রাখবার জন্য খাইটা গেছে। তার কি সারপ্রাইজ দেওনের সুযোগ আছিল। ”
ফাতিমা খানম দু’জনের কথপোকথন শুনে হাসছেন। এই নাতিটিকে তিনি জীবনের অধিক ভালোবাসেন। ছোট থেকে কম কষ্ট পেয়ে বড় হয়নি ছেলেটা। তারপরও সে একজন আর্দশ মানুষ হয়ে গড়ে উঠেছে। এই নাতিকে তিনি বরাবরই গর্ব করতেন। আর এখনো করেন।
” ছেলেমেয়েদের জন্য পরিশ্রম করে সে কি পেয়েছে? আর নানিমা’ই বা কি পাচ্ছে! মেয়েরা যে যার মত সংসার করছে। ছেলে থেকেও নেই। একটা মেয়েরও সময় নেই মায়ের কাছে দুদণ্ড বসার। মা’য়ের ভালোমন্দ খোঁজ নেয়ার। কি লাভ হয়েছে সম্পদের পাহাড় গড়ে? যাহোক এখন এসব কথা থাক। খালা, তুমি নানিমাকে তৈরী করে রেখ। আমার নানিমাকে আজ হিরোইন লাগা চাই। ”
” আম্মারে নাহয় তৈরী করাইলাম। কিন্তু এই বয়সে কি তারে হিরোইনের মত লাগব! তুমি এখন নিজের হিরোইনের না ভাইবা নানিরে নিয়া মাতছো কেন? শ্বশুর বাড়ি থাইকা বেড়ায় আইসা, সেখানকার গল্প শুনাইলানাতো। আমার কুহ মা কেমন আছে সেটাও কইলানা। ”
” আগে বউটাকে ঘরে তুলি, তারপর নাহয় শ্বশুর বাড়ির গল্প শোনাব। তোমার মায়ের দিক থেকে যখন গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে গেছি, এবার আর দেরি করবনা৷ আজতো তোমার মা গ্রাম থেকে ফিরছে। তোমাদের জন্য নাকি সে কিসব নিয়ে আসবে। তার ফুপু বললেন, তিনি পিঠাপুলি পাঠাবেন তোমাদের জন্য। শোন তাকে বলো আজ যেন কোচিং-এ না যায়। আজকে ক্লাস না নিলেও তার চলবে। আমি বাহির থেকে এসে তাকে বাসায় দেখতে চাই। ”
” মা আসলে নাহয় তারে কইয়া দিমুনে। কিন্তু তুমি আবার কই যাইবা, বাপজান! কাইল গ্রাম থাইক আইসা সেই যে বাহিরে গেলা, আসলা কত রাইতে। আবার এখন কই যাইবা? কতদিন পর আসছো একটু আমাদের কাছে বসবানা। আর একটা শুইনা রাখ, বিয়া যখন করবাই, তখন দেরি করা চলবনা। যত তারাতারি পার বিয়া কইরা নিবা। ” রাজিয়া খালার গলায় অভিমান টের পায় তাহমিদ। সে স্মিথ হেসে খালাকে জড়িয়ে ধরল।
” খালা, আমি একটু কাজে যাচ্ছি। নানিমাকে সারপ্রাইজ দিতে হবে তো। ঘন্টা তিনেক পরই চলে আসব। তারপর তোমাদের সময় দেব। প্রমিজ করছি। আর দুইমাস পর তোমার বাপজান বিয়ে করছে, এটা মোটামুটি শিওর। এখন থেকে প্রস্তুতি নাও। নানিমা, তুমি কি বল? ”
তাহমিদের কথা শুনে বৃদ্ধা হাসলেন। তার সম্মতি বুঝতে বাকি থাকলনা তাহমিদের। কিন্তু রাজিয়া খালা তাহমিদের এই সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারলেননা। তিনি মুখ গোমড়া করে বললেন,
” বিয়া যখন করবাই, তখন এত দেরি করবা কেন? একটু আগে করলে কি হয়। ”
” খালা, সামনের সপ্তাহে আমি এস্তোনিয়া যাচ্ছি। সেখানের এক ভার্সিটিতে দেড়মাসের একটা কোর্স করতে। সেখান থেকে ফিরেই বিয়ের কাজ সারব। তবে তার আগে তোমার কথা বলতে হবে কুহুর অভিভাবকদের সাথে। যেহেতু আমার অভিভাবক তোমরা, সেহেতু কাজটা তোমাকেই করতে হবে। নানিনা সুস্থ থাকলে তোমাকে সাথে নিয়ে সে কাজটা করত। কিন্তু এখন তোমাকে একাই সব সামলাতে হবে। ”
তাহমিদের কথা শুনে রাজিয়া খালার ভ্রু কুঁচকে যায়।
” এসব কি কও, বাপজান! তোমার বিয়ার কথা কওনের জন্য তোমার খালারা আছে। তারা সব দেখব। এরমধ্যে আমারে জড়ানো ঠিক হইবনা। ”
” তুমিই আমার মা,বাবা আর খালা, যেটা মনে কর সেটাই। তাই আমার বিয়ের সকল ব্যপারে জড়ানোর অধিকার আমার আছে। আচ্ছা শোন, এই বিষয়ে পরে কথা হবে। আমি এখন বাহিরে যাচ্ছি। তোমার মা আসলে তাকে বাহিরে যেতে নিষেধ কর। আর শোন, আজকে নানিমাকে গোসল করিয়ে ড্রয়িংরুমে নিয়ে যাবে। হুইলচেয়ার ঠিক আছে তো? ”
রাজিয়া খালা জানায়, হুইলচেয়ার ঠিক আছে। তাহমিদ আর রুমে থাকলনা। তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে।
তাহমিদ বেরিয়ে যাওয়ার ঘন্টা খানেক পর কুহুরা বাসায় প্রবেশ করল। রাজিয়া খালা ওদেরকে দেখে খুশিতে এগিয়ে আসলেন। খালার সাথে কুশল বিনিময় শেষে কুহু একটা বড় ব্যাগ খালার কাছে এগিয়ে দিল। খালা ব্যাগ নিয়ে রান্নাঘরে চলে যান। কুহুও রুমে গিয়ে কাপড় পাল্টে নেয়।
বাসায় তখন নায়লা আঞ্জুম ছিলনা। রিশা মা’কে না পেয়ে ফোন করলে জানতে পারল সে শপিংয়ে গেছে।
কুহু ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে এসে দেখল খালা অবাক হয়ে ব্যাগ থেকে সবকিছু বের করছে।
” ও মা, তুমি এতকিছু আনছ! এত খাবার খাব কে! কত রকমের পিঠা আনছ। আবার মাংসও দেখতাছি। ”
” খালা, সব পিঠা আমি আর ফুপু মিলে বানিয়েছি। আমার কয়েকটা হাঁস, মুরগী প্রতিবেশি এক দাদির কাছে রেখে এসেছিলাম। কয়েকটা হাঁস-মুরগি থেকে অনেকগুলো হয়েছে। সেখান থেকেই কয়েকটা নিয়ে এসেছি। আজকে তুমি হাঁস আর মুরগী রান্না কর। আগামী কয়েকদিন এসব রান্না করে শেষ করবেন। আর পিঠা, পায়েস আপাতত ফ্রিজে রাখি। পরে সবাইকে দিলেই হবে। ”
” মাগো, তুমি আইজ কোচিং-এ যাইওনা। বাপজানে তোমারে যাইতে না করছে। তুমি বরং আমারে রান্নায় সাহায্য কর। ”
খালার কথা শুনে কুহু নিরবে হাসল। ও বাসায় ঢোকার পর কয়েকবার উঁকিঝুঁকি মেরে তাহমিদকে খোঁজার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওকে দেখতে পায়নি। কুহু আর কিছু না বলে কাজে হাত লাগায়। হাতের কাজ শেষ হলে, কুহু নানিমার কাছে যায়। ও একটা বাটিতে পায়েস নিয়েছে।
ফাতিমা খানম নিমিলীত চোখে হুইলচেয়ারে বসে আছেন। কুহু তার কাছে গিয়ে তাকে ডাক দেয়।
” নানিমা, এইযে দেখুন আপনারর জন্য কি এনেছি। এবার লক্ষ্মী মেয়ের মত হা করুন দেখি। আমি কিন্তু পায়েস রান্না করেছি। খেয়ে বলতে হবে কেমন হয়েছে। ”
কুহুর কথা শুনে ফাতিমা খানম হাসলেন। কুহু তার মুখে এক চামচ পায়েস তুলে দেয়।
” আপনাকে আজ এখানে দেখে আমার কিযে ভালো লাগছে। এখন থেকে প্রতিদিন আপনাকে ড্রয়িংরুমে নিয়ে আসব। মাঝেমধ্যে বাহিরেও নিয়ে যাব। ” কথা বলতে বলতে নানিমাকে খাইয়ে দেয়। এরপর ও বেশ কিছুক্ষণ নানিমার সাথে গল্প করে, রান্নাঘরে যায়।
নায়লা আঞ্জুম বাসায় এসে ফাতিমা খানমকে ড্রয়িংরুমে দেখেই খেঁকিয়ে উঠল।
” রাজিয়া আপা, আম্মাকে এখানে এনেছে কে? কার হুকুমে আম্মাকে রুম থেকে বের করা হয়েছে? ”
” বাপজানে কইয়া গেছে। তার কথামতই আম্মারে এখানে নিয়া আসছি। ” রাজিয়া খালা ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলেন।
” আমি যে সবাইকে বলে রেখেছি, আম্মাকে যেন রুম থেকে কোথাও বের করা না হয়। সেটাকি তোমার কানে যায়নি? এখন এই বাসায় কি হবে না হবে, সেটাওকি তাহমিদই বলে দেবে? ভুলে যেওনা এটা আমার বাবার বাড়ি, তাহমিদের বাবার বাড়ি নয়। ও এই বাড়িতে একজন অতিথি মাত্র। তাই ভালো হবে যদি আমার কথা মেনে চল। ”
রাজিয়া খালা নায়লা আঞ্জুমের কথা নিরবে শুনে গেলেন। কারন তিনি জানেন, এখন নায়লার সাথে কথা বলা মানেই ঝামেলা বাড়ানো। তাই তিনি নায়লা আঞ্জুমের কথায় পাত্তা দিয়ে চুপচাপ কাজ করতে থাকলেন। কিন্তু কুহু নায়লা আঞ্জুমের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছে। নিজের খালামনি হয়ে সে এসব কি বলছে! সে কি আদৌও তাহমিদের খালামনি!
কুহু খালা আর দুইজন আপার সাথে মিলে রান্না শেষ করে রুমে গিয়ে গোসল সেড়ে বেরিয়ে আসে।
ফাতিমা খানম চোখ ঘুরিয়ে সবাইকে দেখে যাচ্ছেন। আজ তার খুব ভালো লাগছে। কতদিন পর রুম থেকে বের করা হয়েছে তাকে।
চুল চিরুনি করা শেষ হতেই কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে কুহু প্রায় দৌড়েই রুম থেকে বেরিয়ে আসে। এসময় তাহমিদ ছাড়া কেউই আসবেনা।
দরজা খুলে তাহমিদকে দেখে কুহুর মুখে হাসি ফুটল। তাহমিদ ওর হাসির জবাবে মৃদু হেসে ভেতরে প্রবেশ করল।
কুহু অবাক হয়ে দেখছে তাহমিদের সাথে থাকা মানুষগুলোকে। তাহমিদের সাথে দুইজন পুরুষ-নারী এসেছেন। তাদের সাথে দুইটা বাচ্চা। একটা বাচ্চা তাহমিদের কোলে, আরেকজন আগত পুরুষের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
তাহমিদ নানিমাকে দেখে তার কাছে এগিয়ে যায়। ওর কোলে থাকা বাচ্চাটাকে নানিমার কোলে দিয়ে, হাসিমুখে বলল,
” সারপ্রাইজ। এই যে তোমার নাতিকে তোমার কোলে দিলাম। এবার তোমার ছেলে আর ছেলের বউকে দেখ। ” তাহমিদ সরে দাঁড়ালে ফাতিমা খানম দেখলেন তার ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।
এত বছর পর ছেলেকে দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারলেননা বৃদ্ধা। তিনি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। হাউমাউ করে কিছু বলার চেষ্টা করছেন।
মা’কে কাঁদতে দেখে তার কাছে এগিয়ে আসলেন সৈকত আহমেদ। কত বছর পর তিনি তার মা’কে দেখছেন। শেষবার যখন তিনি তার মা’কে দেখেছিলেন তখনও তার মা সুস্থ ছিলেন। দিব্যি চলতে ফিরতে পারতেন। আজ চোখের সামনে এ কাকে দেখছেন তিনি! তার মা একটা জড়বস্তুর ন্যায় পরে আছেন হুইলচেয়ারে!
সৈকত আহমেদ দৌড়ে এসে মা’য়ের পা জড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন। তার কান্না দেখে বৃদ্ধার কোলে থাকা বাচ্চাটাও তারস্বরে কাঁদতে থাকে। তাহমিদ এসে বাচ্চাটিকে নানিমার কোল থেকে নিয়ে তার মা’য়ের কাছে দেয়।
ড্রয়িংরুম থেকে শোরগোল শুনে নায়লা আঞ্জুম রুম থেকে বেরিয়ে আসে। তার সাথে রায়হান আহমেদও বেরিয়ে এসেছেন। চোখের সামনে ছোট ভাইকে দেখে সে রাগে দিশেহারা হয়ে যায়।সৈকত আহমেদের সাথে তাহমিদকে দেখে, সে সাথে সাথে বুঝে যায় এটা তাহমিদেরই কাজ।
” তাহমিদ, তোমার এতবড় সাহস! তুমি কার হুকুমে এই বেইমানকে বাসায় নিয়ে এসেছে? তুমি দিনদিন তোমার সীমা পার করে যাচ্ছ। মনে রেখ তুমি এই বাড়ির একজন অতিথি মাত্র। তোমার সব মাতব্বরি, দ্বায়িত্বগিরি নিজের বাড়িতে দেখিও। একটা কথা মাথায় ঢুকিয়ে রাখ, এটা তোমার বাবার বাড়ি নয়। তুমি এক্ষুনি এদেরকে বাড়ি থেকে বের কর। ”
নায়লা আঞ্জুমের কথা শুনেও ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। ওর ঠোঁটে ব্যঙ্গ খেলা করছে।
” এই বাড়ি যেমন আমারও নয়, তেমনি তোমারও নয়। আমার মত তুমিও এই বাড়ির অতিথি। এই বাড়িতে কোন অতিথি বছরের পর বছর যাবৎ থাকছে জন্য বাড়ির মালিককে নিয়ে আসলাম। এতদিন অতিথি বাড়ির দেখাশোনা করেছে, এবার বাড়ির আসল মালিকের দেখাশোনা করার সময় এসেছে। বাড়ির মালিক তার অধিকার বলে নিজের আবাসস্থলে ফিরে এসেছে। নানিমা, তুমিও কি চাও তোমার ছেলে বেড়িয়ে যাক? তুমি চাইলেই তবে মামা এখানে থাকবে। ”
ঘন ঘন মাথা নাড়িয়ে বৃদ্ধা বুঝিয়ে দিলেন তিনি তার ছেলেকে বাড়িতে চান। তিনি একহাতেই ছেলেকে জাপ্টে ধরে রাখলেন।
” আশা করছি তুমি তোমার উত্তর পেয়ে গেছ? মামা তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এখানেই থাকবে। কেউ যদি তাদের কিছু বলে তবে বিষয়টা কিন্তু খুবই খারাপ হয়ে যাবে। ” তাহমিদ আবারও বলল।
” তুমি চিন্তা করোনা, তাহমিদ। সৈকত তার অধিকার বলেই এখানে থাকবে। এবার আমাদের যাবার সময় হয়েছে। এতদিন আম্মাকে দেখার কেউ ছিলনা, সেই অযুহাতে এই বাসায় থেকেছি। এখন আম্মাকে দেখার জন্য তার ছেলে এসে গেছে। এবার আমরাও নতুন বাড়িতে শিফ্ট করব।”
রায়হান আহমেদের কথা শুনে নায়লা আঞ্জুমের চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম হলো। সে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছে।
” তুমি এসব কি বলছ! আমরা কোথায় যাব? এটা আমার আব্বার বাড়ি। আমি এই বাড়ি থেকে কোথাও যাবনা। ওরা যাবে এখান থেকে। ঐ ফকিন্নির মেয়ে কিছুতেই এই বাড়ির বউ হতে পারেনা। ওর কোন যোগ্যতাই নেই, এই বাড়ির বউ হওয়ার। ”
” তুমি যদি আর একটা কথা বল, তবে থাপড়িয়ে তোমার দাঁত ফেলে দেব। তাহমিদ যদি এই বাড়ির অতিথি হয়, তবে তুমি, তোমার ছেলেমেয়ে আর আমিও এই বাড়ির অতিথি। বিয়ের পর মেয়েদের আসল ঠিকানা হয় তার স্বামীর বাড়ি। কিন্তু সব সময়ই তুমি আমার বাড়ির চেয়ে বাবার বাড়িকে প্রাধান্য দিয়েছ। নিজের অহংকার বজায় রেখছ। তুমি যেমন আমার সংসারকে অশান্তিতে ভাসিয়েছ, তেমনি নিজের বাবার বাড়িতেও আ’গু’ন দিয়েছ। সৈকতের যাকে মনে ধরেছে তাকেই বিয়ে করেছে। ওর বউকে তুমি ফকিন্নির মেয়ে বলার কে? এই মেয়েটা নেহাৎই ভদ্র তাই এতক্ষণেও তোমাকে চুলের মুঠি ধরে বাড়ি থেকে বের করে দেয়নি। তাই ভালো হয় যদি নিজের মুখ বন্ধ রাখ। এখন থেকেই মানসিকভাবে নিজের সংসারে যাওয়ার প্রস্তুতি নাও। আমি যত তারাতারি পারি একটা ফ্লাট দেখব। ”
রায়হান আহমেদের কথা শুনে নায়লা আঞ্জুম নির্বাক চেয়ে থাকে।
” দুলাভাই, এসব কি বলছেন? আপনারা কোথাও যাবেননা। এতদিন আপনারাই আম্মাকে আগলে রেখেছেন। আমি তার কোনই খোঁজ নিইনি। আজ আমি আসাতে আপনারা চলে যাবেন, আমি এটা ভাবতেই পারছিনা। আপনারা কোথাও যাবেননা। আমরা একসাথেই এখানে থাকব। ” মা’য়ের কাছ থেকে উঠে এসে রায়হান আহমেদের পাশে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলল সৈকত আহমেদ।
” আমি আরও আগেই চলে যেতাম, সৈকত। শুধু আম্মার জন্যই এখানে থেকেছি। এখন আম্মার জন্য তোমরা আছ। এবারতো যেতেই হবে। এছাড়াও তোমার বোনকে সংসারের দায়-দ্বায়িত্ব বুঝতে হবে। সে এত বছর গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেরিয়েছে। তার নজর সব সময়ই উপরের দিকে ছিল। এবার তাকে নিচের দিকে তাকাতেই হবে। সে সময় এসে গেছে। ”
কুহু এই মুহুর্তে কারও কোনও কথা শুনছেনা। ও মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে তাহমিদের দিকে। কতশত গোপন কথা মানুষটা তার নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে। সবার কথার আঘাত সহ্য করে অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে সে তৎপর। তাকে দেখে কে বুঝবে, এক জীবনে কত ঝড় ঝাপটা তাকে সইতে হয়েছে! সে চিরদুঃখী একজন।
চলবে…