প্রিয়তার প্রণয় পর্ব-১২+১৩

0
1055

#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১২

সারাদিন পেরিয়ে রাত দশটা-

সারাদিন মাঝে মাঝে ইয়াশ এবং তার বাড়ির সবাই ফোন করে প্রিয়তার খবর নিয়েছে। ইয়াশ তো চলে আসতেও চেয়েছিল শুধুমাত্র নতুন কাজ আর প্রিয়তার মা নিষেধ করার কারণে আসতে পারে নি।

প্রিয়তা এখন একটু সুস্থ তবে জ্বর যায় নি। দুই একদিনে জ্বর যাবে বলে মনে হয় না। কারণ প্রিয়তার এই অসুস্থতার সাথে সবাই খুব ভালোভাবে পরিচিত, সবাই জানে এই জ্বর খুব সহজে যাবে না।

প্রিয়তার মা আর বুশরা বসে আছে প্রিয়তার কাছে। প্রিয়তার বাবা বাহিরে ডাক্তারের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
বাড়ি ফাঁকা থাকবে বলে বুশরার মা আসতে পারে নি। অফিস থেকে কল আসায় লুবনার বাবা মা সকালেই নতুন জায়গায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। তারাও সকাল থেকে তিন চারবার কল দিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছে।
ডাক্তারের সাথে কথা বলে প্রিয়তার বাবা এগিয়ে আসলেন।

— কি বললেন ডাক্তার?(মিসেস রমেলা)

— নিয়ে যেতে বলল। এখানে রাখার আর প্রয়োজন নেই। যা ওষুধ দিয়েছে ঠিকমতো খাওয়ালেই জ্বর ওঠানামা করতে করতে ঠিক হয়ে যাবে।

— আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি তাহলে গাড়ির ব্যবস্থা করো।

— হ্যাঁ আমি বাহিরে গিয়ে গাড়ি ঠিক করে ভেতরে আসছি, তুমি প্রিয়কে রেডি করে দাও। যেতে পারবি তো মা?(প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে)

— হ্যাঁ বাবা পারব। আমি তো সুস্থ হয়ে গিয়েছি।

— আগের মতো সুস্থ হতে হবে। রেডি হয়ে নে মা আমি গাড়ি ঠিক করে আসি।

— ঠিক আছে।

অতঃপর কিছুক্ষণের মধ্যে প্রিয়তাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়।

____________________________

প্রিয়তার মা খুব করে প্রিয়তার সাথে রাতে ঘুমোতে চাইলেও প্রিয়তা থাকতে দেয় না। অতঃপর আর কিছু বলতে না পেরে মিসেস রমেলা নিজের রুমেই চলে যান তবে খারাপ লাগলে ডাকতে বলে যান।

রাত এগারোটা বেজে গিয়েছে তবুও আজকে প্রিয়তার চোখে ঘুম নেই।
হঠাৎ করেই যেন জীবনে প্রেম আর অসুস্থতা বেড়েই চলেছে।

সারাদিন কিছু না খাওয়ায় রাতে প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়ে যায়। বিছানা থেকে উঠে বাহিরে এসে দেখে টেবিলে খাবার রাখা।
প্রিয়তার মা রুমে যাওয়ার সময় তার জন্য খাবার রেখে গিয়েছে। প্রিয়তা টেবিলে খাবার দেখে ভাবে মায়ের যত্নের আসলেই কোন তুলনা হয় না।

চুপচাপ খাওয়া শেষ করে আবার রুমে চলে যায় প্রিয়তা। রুমে এসে আর ঘুম ধরছিল না, একটা না বাজলে তো ইয়াশ ভাই ও অনলাইনে আসবে না। একবার কি ফোন দেওয়া উচিৎ? বেশি কিছু না ভেবে এবার প্রথম ইয়াশকে সাহস করে ফোন দিয়ে বসে প্রিয়তা। গতকাল রাতে ইয়াশ ফোন দিয়েছিল মনে আছে কিন্তু কি কথা হয়েছিল সেটা মনে নেই। রিং হচ্ছে আর প্রিয়তার হৃদস্পন্দন বেড়ে চলেছে। মনে হয় ফোন রিসিভ হলেই সব শেষ হয়ে যাবে। প্রিয়তা ভয়ে এবার ফোন কানে থেকে নামিয়ে বিছানার ওপর রেখে তাকিয়ে থাকে। ফোন ও রিসিভ হয়ে যায়, প্রিয়তা ধীরে ধীরে ফোন তুলে কানে নেয়।

— প্রিয়!

— হ্যাঁ ( ইয়াশের মুখে এই ডাক শুনতে প্রিয়তার যেন একটু বেশিই ভালো লাগে।)

— শরীর কেমন এখন?

— একটু ভালো।

— খাওয়া দাওয়া করা হয়েছে কি?

— ক্ষুধা লেগেছিল মাত্রই খেয়ে আসলাম।

— আপনি সুস্থ হলেই কিন্তু এখানে আসতে হবে। ভালো লাগবে তো এখানে?

— কিছুদিন হয়তো খারাপ লাগবে পরে ঠিক ভালো লাগবে। আপনি কি করছেন?

— এই তো কাজ শেষ হলো, এখন বাসায় যাচ্ছি।

— আপনিই ড্রাইভ করছেন?

— হ্যাঁ।

— তাহলে রাখছি।

— কেন?

— সমস্যা হচ্ছে তো। ঘুম ধরছিল না তাই কল দিয়েছিলাম।

— এখন রাস্তা ফাঁকা এখানে সমস্যা নেই বল।

— তেমন কিছু না এমনিই কল দিয়েছিলাম।

— এখন রাত জাগতে হবে না, ভালো মেয়ের মতো ফোন রেখে ঘুমাতে যা।

— গিয়েছিলাম ঘুমাতে, কিন্তু ঘুম আসছে না।

— কেন আসছে না?

— জানি না। ভাইয়া একটা কথা……

— হ্যাঁ শুনছি বল।

— কালকে রাতে আপনি কল দিয়েছিলেন তাই না?

— হ্যাঁ কেন তোর মনে নেই?

— আসলে আমি কখন ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম কি কথা বলেছিলাম কিছুই মনে করতে পারছি না।

— তেমন কিছু তো বলিস নি।

— কিছু বলি নি?

— না তো।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

— আচ্ছা শোন এখন ঘুমিয়ে যা, আমি বাসায় এসে গিয়েছি ফ্রেশ হয়ে ঘুম দেব।

— আপনিও কিন্তু রাত জাগবেন না।

— তোর কথা শুনে একটা প্রেমিকার অভাববোধ করছি।(ইয়াশ)

— কেন?

— এই যে ছোট হয়ে কেমন আমাকে আদেশ করছিস!

— এ্যাহ এটার জন্য প্রেমিকা খুঁজতে হবে না আমিই বলা বন্ধ করে দেব।

— বলা বন্ধ করলে তো জোরালো ভাবে প্রেমিকা বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে।

— আমার পড়াশোনা শেষ হলে আপনার প্রেমিকা খুঁজে দেব, দায়িত্ব নিলাম।

— ততদিনে আমার বিয়ের বয়স শেষ হয়ে যাবে।

— যাবে না।

— যাবে।

— শেষ হয়ে গেলে আমাকে বিয়ে করে নিয়েন।(প্রিয়তা কথাটা বলে সাথে সাথে জিহ্বায় কামড় খায়, ছিঃ এটা কি বলে ফেললো সে! এবার যদি ইয়াশ ভাই রেগে যায়!)

— তোকে বিয়ে করব আমি? দাঁড়া শহরে আয় একটা প্রতি°বন্ধী খুঁজে পেলেই বিয়ে দিয়ে দেব।

— সারাজীবন একা থাকব হুহ।

— তুই একা থাকলে ছেলেটার কি হবে?

— আরেকটা মেয়ে দেখে বিয়ে দিয়ে দিয়েন। আমি এখন ঘুমাবো।

— আচ্ছা ঠিক আছে ঘুমিয়ে পড়।

প্রিয়তা ফোন রেখে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ে।
ইয়াশ বাসায় ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিজেও গিয়ে বিছানায় শুয়ে ভাবতে থাকে ঘরে বউ থাকলে কত ভালো হতো! খাবার নিয়ে অপেক্ষা করতো, তার মন মতো কিছু না হলে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতো। প্রিয়তা শুধু এখানে আয়, খুব বেশি সময় পাবি না আমার থেকে দূরে থাকার।

_________________________________

দুইদিন পর-

— আচ্ছা শোন ওখানে গিয়েই কিন্তু তুই বাসায় ফোন দিবি, কোনরকম অসুবিধার মধ্যে পড়লে আঙ্কেলকে জানাতে ভুলবি না। ওখানে যাচ্ছিস পড়াশোনার জন্য, এটা ছাড়া আমি যদি অন্যকিছুতে বেশি গুরুত্ব দিতে দেখেছি তাহলে একদম বাড়ি নিয়ে এসে বিয়ে দিয়ে দেব বলে রাখলাম।(ইয়াশ)

— ভাইয়া, এরকম কিছুই হবে না। আমি ঠিকমতো পড়াশোনা করব আর ঠিকমতো চলাফেরা ও করব।(আরশি)

— হ্যাঁ আমার কথা মাথায় রেখে চলাচল করিস।

— আমি দেশে ফেরার আগে যদি শুনেছি তুই প্রিয়তাকে বিয়ে করেছিস তাহলে তোর খবর খারাপ আছে আমিও বলে দিলাম।

— এই তোকে এসব কথা কে বলল?

— তুমি ডুবে ডুবে জল খাবে আর আমি জানব না তাই না?

— কে বলল তোকে এসব?

— কেউ বলে নি আমি জানি।

— ডুবে ডুবে জল খাওয়ার মত কিছুই হয় নি।

— হয়েছে কি হয় নি সেটা আমি জানি, আমার সাথে এরকম সেরকম করবি তো আমি প্রিয়কে সব বলে দেব।

— তোকে আমি কি করব সেটা তুই ভাবতেও পারছিস না।

— আমি এতকিছু ভাবতেও চাই না।

— চুপ থাক, তোর ফ্লাইটের সময় হয়ে গিয়েছে, যা এগিয়ে যা এবার।

— ওই যে আমার প্রাণপ্রিয় বান্ধবী চলে এসেছে।

— আরে দোস্ত…….(শিমু)

— এত লেট কেন?(আরশি)

— বাহিরেই ছিলাম, ওখানে সবাই ছিল।

— আচ্ছা দুজন তাহলে সামনে এগিয়ে যা।

— এখনও প্রায় পনেরো মিনিট দেরি ভাইয়া।(আরশি)

— না ভাইয়া কিন্তু ঠিকই বলেছে, আমাদের একটু আগেই যাওয়া উচিৎ, চল আমরা এগিয়ে যাই।(শিমু)

— আচ্ছা ঠিক আছে।

— আরশি…..

— হ্যাঁ ভাইয়া।

— সাবধানে থাকিস, প্রতিদিন আমাকে কল দিবি।

— আমি প্রতিদিন কল দেব এটা নিয়ে ভাবিস না।

— অনলাইনেও সময় করে এক্টিভ থাকবি, কোনভাবেই যোগাযোগ যেন বিচ্ছিন্ন না হয়।

— ভাইয়া এমনভাবে বলছিস কেন, আমি প্রতিদিন কল দেব।

— আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে গিয়ে বস।

— ভাইয়া….

— হ্যাঁ।

— একবার জড়িয়ে ধরি তোকে?

— অনুমতি নিতে হবে আবার?

ইয়াশ দুই হাত তার বোন আরশির দিকে বাড়িয়ে দেয়। আরশিও আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ইয়াশকে জড়িয়ে ধরে৷ এই ভাইটা যে তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু।

অতঃপর ভাইয়ের থেকে বিদায় নিয়ে আরশি এগিয়ে যায় নিজের লক্ষ্যে, ইয়াশ এক নজরে তাকিয়ে থাকে বোনের দিকে। এই প্রথম আরশির জন্য ইয়াশের চোখ টলমল করে, এই প্রথম ভাইবোন এত দূরে!

চলবে……………..

#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৩

পরদিন রাত-

রাতে ইয়াশ শুয়ে শুয়ে ফোন ঘাটছে এমন সময় দরজায় নক করার শব্দ হয়। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে তার বাবা। ইয়াশ বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।

— হ্যাঁ বাবা কিছু বলবেন?

— আমি সপ্তাহখানেকের জন্য বাহিরে থাকব কাজের জন্য। তোমার ওই বাসায় না থেকে এই কয়েকটা দিন এখানে থেকো।

— ঠিক আছে বাবা। কিন্তু মা তো বলে নি আপনার যাওয়ার কথা?

— আজই যাওয়ার কথা হয়েছে, আসতে সপ্তাহখানেক দেরি হবে। আর এই সাত দিনের মধ্যে একদিন গিয়ে প্রিয় মাকে নিয়ে এসো।

— আচ্ছা ঠিক আছে বাবা।

— মাকে নিয়ে সাবধানে থেকো।

— জ্বী।

ইয়াশের বাবা চলে গেলে সে আবার ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আজকে কাজ হওয়ার কথা ছিল কিন্তু একটু অসুবিধার জন্য কাজ বন্ধ।
_____________________________

‘প্রিয়’ ডাক শুনেই প্রিয়তা তাকিয়ে দেখে বুশরা। হাতে ফোন নিয়ে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

— কিছু বলবি?(প্রিয়তা)

— এমনি এলাম।

— ওহ আচ্ছা, আয় বস এখানে। তোকে তো এখন খুঁজেই পাওয়া যায় না। মানুষ নতুন নতুন প্রেমে পড়েছে বলে কথা।

— তোকে বলেই ভুল হয়ে গিয়েছে আমার।(বুশরা)

— তুই না বললে আমি কি জানতাম না নাকি?

— কিভাবে জানতি?

— তোর নম্বরটা আমিই দিয়েছি।(প্রিয়)

— কি? তার মানে এসব তুই করেছিস?

— আমি ছাড়া আর কে আছে তোর!

— কি বাজে তুই!

— প্রেম ঠিকই করছো আর আমি খারাপ?

— প্রেম করছি কে বলল?

— প্রেমে তো পড়েছিস, প্রেম করতে আর কতক্ষণ!

— ধুর শোন না….

— ধুর বল না…..

— প্রিয়..

— এই তুই ছোট আমার, আবার আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছিস কেন?

— আমি কিন্তু আবার আপু বলা শুরু করে দেব।

— ঢং করিস না বল কি বলবি।(প্রিয়)

— হুমায়ুন ভাই কালকে দেখা করতে বলছে।

— ওওওও দেখা করা পর্যন্ত এগিয়ে গেল ব্যাপারটা! আমাকে কেউ দেখা করতে কেন বলে না?

— ইয়াশ ভাইয়াকে বলব নাকি?(বুশরা)

— বলে দেখ, যদি তাও কেউ বের হতে বলতো তার সাথে দেখা করার জন্য।

— আচ্ছা বলব, এখন বল আমি কি করব?

— দেখা কর।

— বাড়ির কেউ বা লুবনা আপু জানলে খারাপ ভাববে না বল?

— খারাপ কেন ভাববে? আর হুমায়ুন ভাই যথেষ্ট সিনিয়র। উনি ভালো মন্দ আমাদের থেকে বেশি বোঝেন, উনি নিশ্চয়ই সবকিছু জেনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

— তবুও…

— কি তবুও? দেখা করতে বলেছে দেখা কর।

— বাড়িতে কি বলে বের হব?

— কত কারণ আছে!

— তোর তো শরীর এখন অনেকটা ভালো, চল না আমার সাথে যাবি কাল।

— কাবাব মে হাড্ডি হতে?(প্রিয়)

— ধুর আমরা কি প্রেম করছি নাকি যে তুই হাড্ডি হবি!

— ইনডিরেক্টলি প্রেম করছিস তোরা।

— তুই জেনে বসে আছিস তাই না?

— হ্যাঁ আমি জেনে বসেই আছি।(প্রিয়)

— তুই না গেলে আমিও যাব না।

— বাবু তুমি না খেলে আমিও খাব না এমন একটা ব্যাপার হয়ে গেল না?

— ওরকম ব্যাপার হলে হয়েছে। তুই যাবি আমার সাথে আগামীকাল।

— কি দিবি আমাকে?

— আমি তোর ছোট প্রিয়, তুই আমার থেকে চাইবি কিছু, লজ্জা করবে না?

— আমি তোকে চিনি না যাহ।

— এরকম করছিস কেন?

— কে তুই? স্যরি কে আপনি?

— প্রিয়….

— আমার রুমে কি করছেন আপনি?

— আচ্ছা কি লাগবে বল?

— শাড়ি দিবি একটা।

— ইয়াশ ভাই না তোকে সেদিন দিয়েছে একটা। কত শাড়ি লাগবে আর?

— তুই দিবি কি না বল, না দিলে আমি যাব না।

— আচ্ছা দেব চল।

— যাওয়ার আগে বলিস।

— আচ্ছা আমি এখন যাই।

— হ্যাঁ খবর পৌঁছে দে যা।

— আবার শুরু করলি!

— যা যা তাড়াতাড়ি যাহ।

— যাচ্ছি।

বুশরা চলে গেলে প্রিয়তা বিছানা থেকে উঠে মায়ের রুমে চলে যায়। কিন্তু মাকে রুমে না দেখে বাহিরে চলে আসছিল এমন সময় তার মা রুমে ঢোকে।

— কি রে কিছু বলবি?

— হ্যাঁ

— বল

— আমার কিছু টাকা লাগবে।

— এখন আবার টাকা কেন?

— লাগবে।

— কত টাকা?

— তিন/চার হাজার হলেই হবে।

— এত টাকা দিয়ে কি হবে? এমন ভাবে বলছিস যেন টাকা খুব অল্প চেয়েছিস।

— বেশি কোথায় চাইলাম আম্মু?

— কম চেয়েছিস? কি কাজে লাগবে এতগুলো টাকা?

— নতুন জায়গায় যাব, প্রতিদিন ক্লাস করতে হবে কিছু নতুন জামা কিনতে হবে।

— বোরখা পড়ে চলে যাবি।

— বোরখা, জামা দুটোই লাগবে।

— তোর বাবার থেকে নিস আমি দিতে পারব না।

— লাগবে না তোমাদের টাকা যাও।

— না লাগলে আরও ভালো।

— লাগবেই না।

প্রিয়তা রুম থেকে বের হয়ে যায়। প্রিয়তার মা কিছু না বলে নিজেত কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
রুমে গিয়ে দেখে ফোন বাজছে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে তামান্না কল দিয়েছে, প্রিয়তা সাথে সাথে কল রিসিভ করে।

— হ্যাঁ তামান্না বল।

— তুই শহরে যাচ্ছিস কবে?

— এই তো দুদিন পরই চলে যাব।

— কালকে আসবি আমার বাসায়।

— কেন?

— কালকে আমাকে দেখতে আসবে।

— প্রিয়….(বুশরা)

ডাক শুনেই প্রিয়তা তাকিয়ে দেখে বুশরা।

— তামান্না একটু হোল্ড কর তো। হ্যাঁ বুশরা বল….

— কালকে বের হতে হবে না।

— কেন?

— উনার কাজ পড়ে গিয়েছে তাই না করে দিলেন।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

— হুম।

বুশরা চলে গেলে প্রিয়তা আবার কথা বলা শুরু করে।

— হ্যাঁ তামান্না বল, কি যেন বলছিলি?

— আমাকে আগামীকাল দেখতে আসবে।

— বিয়ের জন্য?

— হ্যাঁ নয়তো কি!

— ছেলের বাসা কোথায়?

— আমাদের এখান থেকে বেশি দূরে না।

— কি করে ছেলে? পরিচিত?

— না রে পরিচিত না। তবে ছেলের ছবি আছে আমার কাছে, উনাকে দেখেই তো প্রেমে পড়ে গিয়েছি। ওখানেই আটকে আছি।(তামান্না)

— এতকিছু আমি জানি না কেন?

— এই যে জানালাম।

— আমি এখান থেকে চলে যাচ্ছি আর এখন তোমার বিয়ে?

— বিয়ে না তো শুধু দেখতে আসবে।

— হুম বুঝেছি।

— কালকে তাড়াতাড়ি চলে আসবি।(তামান্না)

— কখন আসব?

— সকালেই।

— দেখতে আসবে কখন তোকে?

— বিকেলে।

— তাহলে আমি সকালে গিয়ে কি করব?

— আসলে ভালো লাগবে আর তুই তো চলেই যাচ্ছিস। একটা দিন আমার সাথে কাটিয়ে যা।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

— আচ্ছা অনেক রাত হয়ে গিয়েছে, রাখছি এখন।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

প্রিয়তা ফোন রেখে শুয়ে পড়ে। এখন একটু সুস্থ হলেও দুর্বলতা এখনও তেমন কাটে নি।
_________________________

ভোরবেলা-

ভোরবেলা ঘুম ভেঙে যায় প্রিয়তার। আজকে রাত একটায় তার ঘুম ভাঙে নি। সে জানেও না সময় কত! ঘুম ভাঙার সাথে সাথে ফোন হাতে নিয়ে দেখে চারটা বাজে। অনলাইনে চলে যায় তাড়াতাড়ি করে।
অনলাইনে গিয়ে দেখে ইয়াশ অনলাইনেই আছে। প্রিয়তা মেসেজ দেয় সাথে সাথে।
প্রায় কয়েক মিনিট হয়ে যায় মেসেজ সিন ও হয় না রিপ্লাই ও আসে না।
নম্বর বের করে ইয়াশকে কল দেয় প্রিয়তা কিছুক্ষণ পর রিসিভ ও হয়ে যায়।।

— হ্যালো..(ইয়াশ,ঘুম ঘুম অবস্থায়)

— আপনি আমাকে রাতে কল বা মেসেজ দেন নি কেন?

— মানে?

— বুঝতে পারেন নি আমার কথা?

— তোকে কেন রাতে কল বা মেসেজ দেব?

— আমার আজকে ঘুম ভাঙেনি আর আপনি আমাকে কল ও দেন নি।

— প্রিয়,,,

— আপনার সাথে কথা নেই যান।

— কি শুরু করলি প্রিয়?

— প্রতিদিন আমি নক দেই, আজকে আপনি একদিন দিলে কি হতো!

— আমিও ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। আর তুই প্রেমিকার মতো আচরণ কেন করছিস বলতো? ভুলে যাস না তুই….

— জানি জানি মনে করিয়ে দিতে হবে না আপনার। আমি রাখছি, আর কল দেব না। আর কখনও না।

— আবার কি শুরু করলি!

— কিছু না, রাখছি।

ইয়াশকে আর কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রিয়তা কল কেটে দেয়। আজকে আবার প্রিয়তার কি হলো বুঝতে না পেরে ফোন পাশে রেখে আবার ঘুমিয়ে যায়।

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে