প্রাপ্তির শহরে পর্ব -১২ সিজন ০২

0
1007

#প্রাপ্তির শহরে সিজন ০২
#পর্ব-১২
#তাহরীমা

আদ্র আবারো জিজ্ঞেস করে,
–“তুমি সত্যি তাহু নও?”
–“নাহ।আমি এ নামের কাউকে তো চিনি না।আর না এমন নামের কাউকে মনে পড়ছে।”

আদ্র অবাক হয়।তারপর ও নিজেকে সামলে নেয়।ঠিকই তো এটা তাহু হতে যাবে কেন?সে তো অনেক আগেই তাকে একা রেখে চলে গেছে বহুদূরে।যেখানে গেলে মানুষ আর ফিরে আসেনা।
.
প্রিয়া বই কিনে বের হয়ে যায়।আদ্র এখনো প্রিয়াকে দেখেই যাচ্ছে।অচেনা মেয়ে তাও কেন এত টান অনূভব করছে?তাহুর মতো দেখতে বলে?

আদ্র প্রিয়ার পিছন পিছন যায়।
প্রিয়ারা কয়েকদিন হলো এ নতুন শহরে উঠেছে।প্রিয়া একটা গাড়িতে উঠে আদ্র ও আয়াতকে নিয়ে প্রিয়াকে ফলো করে।যে বাসার সামনে নামে অই বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আদ্র একজনকে জিজ্ঞেস করে–“ডাক্তার মেয়েটির কি পরিচয়?
তখন একজন বলে–“ওরা নতুন এসেছে।তবে শুনেছি বাবা মার একমাত্র মেয়ে প্রিয়া।ভাল মেয়ে।”

আদ্র কিছুক্ষণ বাসার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।এটা তো তাহুর মত দেখতে তাহলে তাহু নয়।

আদ্র মন খারাপ করতে নিলে আয়াত বলে,
–“আন্টি টা কে বাবাই?”
–“আন্টি ই আরকি।”
–“তাহলে চলো আন্টির বাসায় যাই?”
–“নাহ অন্যএকদিন।”

প্রিয়া বাসায় ডুকে।কেমন যেন অস্থির লাগছে।কেন লাগছে তার অজানা।
প্রিয়ার মা এসে বলে,
–“কি হয়েছে তোর?”
–“কেমন যেন লাগছে আম্মু।”
তারপর প্রিয়া সব খুলে বলে।প্রিয়ার মা বলে,
–“ও কিছুনা মানুষ কি দেখতে এক হতে পারেনা?”

প্রিয়া ও নিজে আর এসবে মাথা ঘামায় না।
.
আদ্র বাসায় এসে তাহুর চাচিকে কল করে।পাশে আদ্রর মা বসে ছিল।চাচিকে সালাম দিয়ে আদ্র বলে,
–“মেজাম্মু একটা সত্যি কথা বলবেন?”
–“বলো না?”
–“তাহুর কি কোনো জমজ বোন ছিলো?”
–“হঠাৎ এ প্রশ্ন?”
–“বলেন না?”
–“নাহ।”
–“আজকে আমি তাহুর মত একজনকে দেখেছি।তবে মেয়েটি ফর্সা ছিলো।”

আদ্রর কথায় আদ্রর মা চমকে যান।কি বলছে ছেলে?
তবে কি তাহু?আশার আলো দেখতে পেয়ে তিনি খুশি হন।কিন্তু আদ্র গম্ভীর হয়ে কল কেটে মন খারাপ করে বসে থাকে।আদ্রর মা বলে,
–“তার মানে তাহু!”
–“ও তাহুর মত দেখতে কিন্তু আমার তাহু নয়।আমার তাহু হলে আমায় চিনতো না?”

আদ্রর মা আবারো দমে যান।


আয়াতকে স্কুলে ভর্তি করানো হয়।যে স্কুলে ভর্তি করানো হয় তার পাশেই প্রিয়ার মেডিকেল কলেজ।প্রায় সময় প্রিয়া মেডিকেলে থাকে।বাসায় কম থাকে।

আদ্র আয়াতকে দিয়ে যায়।আবার নিতে আসে প্রতিদিন।আয়াত স্কুল ছুটি শেষে আদ্রর জন্য অপেক্ষা করতে করতে আবার প্রিয়াকে দেখতে পেলো।প্রিয়া একটু রোগীর দরকারে বাইরে বের হয়েছিলো।
প্রিয়া আয়াতকে দেখে হাসলো।আয়াত এগিয়ে যায়,
–“তুমি সেই আন্টি না।কাল দেখেছিলাম?”

প্রিয়ার ও মনে আছে।থাকবে নাই বা কেন আদ্রকে প্রথম দেখায় তার কেমন যেন ভাল লেগেছিলো।
–“হ্যা।নাম কি তোমার?”
–“আয়াত আহমেদ”
–“মাশা আল্লাহ সুন্দর নাম।আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি?”
–“হ্যা।”
–“কালকে সেটা তোমার আব্বু ছিলো?”
–“হ্যা।বাবাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছি।”
–“ভাল তো।”
–“তুমি ও খুব ভালো।”

প্রিয়া চলে যায়।

আদ্র এসে আয়াতকে নিয়ে যায়।এভাবে প্রায় আয়াতের সাথে প্রিয়ার দেখা হয়।কয়েকদিন আয়াতের সাথে কথা বলেই প্রিয়া কেমন টান অনুভব করে।একদিন দেখা না হলে মনে হয় কি যেন শূন্যতা।তাই প্রিয়া প্রতিদিন আয়াতের সাথে দেখা করে কেমন যেন শান্তি অনুভূত হয় এতে।
আজকে প্রিয়া ও আয়াতের সাথে দাঁড়িয়ে ছিল।আয়াত প্রতিদিন আদ্রকে প্রিয়ার কথা বলে আদ্র কিছুই বলেনা।চুপচাপ ছেলের কথা শুনে।

আদ্র গাড়ি থেকে নেমে প্রিয়াকে দেখেই কিছুক্ষণ থেমে যায়।প্রিয়ার হাসি দেখে বুকটা ধক করে উঠে।এ বুঝি তাহু ই।এভাবে তাহু দাঁড়িয়ে থাকার কথা ছিল ছেলেকে নিয়ে।আদ্র আসতে দেরি করলে অসহায় হয়ে তাকিয়ে থাকত।আর আদ্র বুকে আগলে নিতো।কিন্তু সব এখন শুধু কল্পণা।

আদ্র বিড়বিড় করে,
–“দু চোখ ভরে দেখি শুধু তোমার হাসিমুখ,পড়ে মনে আমার ভালবাসার হারিয়ে যাওয়ার সুখ।কত স্মৃতি মনে আসে ক্ষণে ক্ষণে,ফিরিয়ে আর পাব না হারানো সেই দিন।”

আদ্র আবারো মনকে সান্তনা দেয়।তাহু নেই।নিজ হাতে তাহুকে অন্ধকার কবরে রেখে এসেছে সে।

আদ্রকে দেখে প্রিয়া হাসে।আর বলে,
–“কেমন আছেন?”
–“আলহামদুলিল্লাহ।”

আদ্র আর কথা বাড়ায় না।তাহু ছাড়া আর কারোর মায়ায় সে পড়তে রাজি না।আদ্র আয়াতের হাত ধরে চলে যেতে নিলে আয়াত বলে,
–“একদিন তোমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাব কেমন?”

প্রিয়া হাসে।
–“ঠিক আছে যাব।”
__________

প্রিয়া বাসায় গিয়ে মা কে বলে,
–“আম্মু তোমাকে একটা বাচ্চার কথা বলেছি না?ও বলেছে ওর বাসায় যেতে আমি কি যাব?”
প্রিয়ার মা বলে,
–“পিয়ু তুই আমাদের একমাত্র মেয়ে তোর চাওয়া পাওয়ার কখনো অপূর্ণ রাখিনি।তুই যা চাস তাই কর।তবে সাবধানে থাকতে হবে।”
–“তুমি খুব ভালো আম্মু।”

প্রিয়ার মা হাসে।
.
পরেরদিন আয়াত জোর করে প্রিয়াকে তাদের বাসায় নিয়ে আসে।বাসায় এসে প্রথমে আদ্রর মা চমকে যান।ভুলবশত বলে ফেলেন,
–“তাহু।তুই ফিরে এসেছিস?”

প্রিয়া একটু বিরক্ত হয় তাও বলে।
–“প্রিয়া।সবাই পিয়ু বলে।আপনি ও বলতে পারেন।”

আদ্রর মা হতাশ হন।তারপর আয়াত দাদুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।তিনি পরক্ষণে হাসিমুখে বলেন,
–“আসো বসো?”

আদ্র কিছু না বলে রুমে চলে যায়।মেয়েটা কে দেখলে তাহুর কথা মনে পড়ে।
আয়াত এটা সেটা বলে প্রিয়ার সাথে গল্প করছে।আদ্রর মা নাস্তা আনতে যায়।প্রিয়া আয়াত থেকে জেনে নেয় কে কে থাকে।সবার পরিচয় দিলে ও আয়াতের মায়ের পরিচয় দেয়না।
তখন প্রিয়া বলে,
–“তোমার আম্মু কই ডাকো তাকে?”

আলো ছিলো না বাসায়।কিছুক্ষণ আগেই আহানকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছে।আহিতাকে ভর্তি করানো হয়েছে অন্য স্কুলে।তাই আলোর হাসবেন্ড আহিতাকে আনতে গেছে।

আয়াত কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
–“আমার বাবাই ই আমার আম্মু”
প্রিয়া অবাক হয়,
–“এ আবার কেমন হলো?”

আদ্রর মা শরবত নাস্তা আনতে আনতে ছোট করে বলে,
–“আমার বউমা মারা গেছে।”

প্রিয়া কষ্ট পায় একটু।ইস এত কিউট একটা বাচ্চার মা নেই।আদ্র অনেক সুন্দর, নিশ্চয় আয়াতের আম্মু ও অনেক সুন্দর ছিলো।
আদ্রর মা শরবত এগিয়ে দিতে হাত ফসকে গ্লাস টা পড়ে যায়।আর শরবত নিচে পড়ে হাল্কা প্রিয়ার কাপড়ে লাগে।

প্রিয়া সরে আসে।আর হাসিমুখে ই বলে,
–“সমস্যা নেই আন্টি।”

কিন্তু পরক্ষণে তার অস্থির লাগে।কি যেন মনে পড়ে ও পড়েনা।প্রিয়াকে অস্থির দেখে আদ্রর মা বলে,
–“আমি আবার শরবত করে আনি।

প্রিয়া তখন মাথা চেপে ধরে।
–“আজ থাক আন্টি আমার বের হতে হবে।একটু অসুস্থ লাগছে।”

প্রিয়া আয়াতকে একটা আদর দিয়ে বেরিয়ে পড়ে।আয়াত আর আদ্রর মা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
________
মাহি মেঘাকে সেই কখন থেকে এদিক সেদিক দৌড়াচ্ছে। মাহি এখন চিপস খাবে অথচ মা নিয়েছে ভাত।যতক্ষণ চিপস তার হাতে না আসছে সে ভাত খাবে না।এদিকে মাহি আকাশকে ও সহ্য করছেনা।তার চিপস চাই ব্যাস।

মেঘা তাও মাহিকে জোর করে খাওয়াতে নিলে ই মাহি প্লেট ফ্লোরে ফেলে দেয়।আর মেঘার চুল টেনে ধরে।

মেঘা অনেক কষ্টে চুল ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
–“আমি তোমার মা না?সাহস কিভাবে হয় আমার চুল ধরার?”
মাহি চুপ করে থাকে।
মেঘা তখন মাহিকে শান্ত স্বরে বলে,
–“ছেলেমেয়েরা কথা না শুনলে মায়েদের কষ্ট হয় বুঝলে।খাবার খেয়ে নাও?

মাহি তারপর ও মাথা নাড়ায় সে চিপস ই চাই।নইলে শান্তি নেই।আকাশ অফিস থেকে এসে মাত্র শুয়ে ছিল মাহির চিৎকারে ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসে।

তারপর মাহির কাছে যায়।আকাশকে দেখে মেঘা বলে,
–“ঘরে চিপস শেষ।এখন মাহি চিপস খাবে।তুমি দোকানে যাও?”

আকাশ মনে মনে বলে,
–“বাবা মা হওয়া ও এত কষ্ট?ঘুম গিয়েও শান্তি পাইনা।”

যেতে যেতে আকাশ ভাবে,
‘মাহি মেঘার নিজের মেয়ে না হলেও চরিত্রের দিক দিয়ে অনেকটা মেঘার মতো ই। জীবন মানেই কঠিন।সহজভাবে কিছুই হয়না।সবকিছু ই কষ্টকর।যা ও ভেবেছিলাম একটা বাচ্চা নিয়ে আসলে সংসারটা ভরে যাবে।বাবা বাবা বলে আমাকে জড়িয়ে ধরবে।অথচ মেয়েটা কেমন যেন।আমাকে তো দেখতে পায়না যেটা চাইবে সেটাই এনে দিতে হবে।’

কথায় আছে ‘ যেমন কর্ম তেমন ফল’

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে