#প্রাণেশ্বরী
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
#পর্ব-২৬
সপ্তাহ খানেক যেতেই জেসিকার মৃ’ত্যু’র প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসে। অপরাধী সব ধরা পড়ে প্রকাশ্যে। যেহেতু সম্পূর্ণ বিষয় প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ায় সেহেতু জনসাধারণ খুব দ্রুত অবগত হয়ে যায়। যার দরুণ, ক্যাসটা চলে উচ্চ পর্যায়ে এবং কঠোর পদক্ষেপে। টাকার জোরে আর ছাড় পায় না অপরাধীরা। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সকল দোষীকে আটক করে নেয় পুলিশ। বর্তমানে জেসিকার কু’ক’র্ম,মৃ’ত্যু,প্রকৃত ঘটনা এসব নিয়ে নতুন গুঞ্জন তৈরি হয় চারদিকে। তবে কে এই তথ্য ফাঁস করেছে তা জানা যায় নেই। কিন্তু যেই বা করেছে, আড়ালে থেকে খুব সুক্ষ্মভাবে কাজটা করেছে।
প্রাণ এসবের খবরাখবর রাখলো ঠিকই। যথারীতি, প্রিয়মের নাম আসেনি কোথাও। যদিও এটা নিয়ে প্রাণের মধ্যে তেমন একটা ভাবান্তর সৃষ্টি হয়নি, তবে ভাবনা তার আঁটকে আছে অন্য এক জায়গায়। একটা হিসাব সে কোনভাবেই মিলাতে পারছে না। প্রশ্ন তার এখানে, “প্রিয়ম এসবে জড়ালো কিভাবে? ও কখন?” তার জানা মতে, প্রিয়ম বাংলাদেশ এসেছেই গত বছর। এতদিন দেশের বাহিরে থেকেই নিজের পড়াশোনা শেষ করেছে। সেহেতু দেশেই এই সার্কেলে ঢুকে পড়া মুখের কথা না। সে খোঁজ নিয়েছিল ঠিক, প্রিয়ম এসবে জড়িত কি-না। পেয়েছিলও জড়িত। কিন্তু এখন সেদিক তাকালে তা পাকাপোক্ত প্রমাণ লাগছে না। কারণ সেই রাতে প্রিয়ম উপস্থিত ছিল কি-না এটা নিশ্চিতভাবে জানতে পারেনি সে। উপরন্তু, কোথাও একটা ফাঁক আছে লাগছে৷ তখন সামান্য প্রমাণ পেয়েই নিহাল শিকদারের করা অতীতের কার্যক্রমের জন্য তার মাথা চাড়া দিয়ে উঠে, তাই কথা শোনানোর সুযোগ পেয়ে হাত ছাড়া করতে চায়নি। সবকিছু গভীরভাবে না ঘেটেই চলে যায় নিহাল শিকদারের নিকট। কিন্তু এখন লাগছে, আরেকটু যাচাই-বাছাই করা উচিৎ ছিল।
প্রাণ যখন এসব ভাবনায় মগ্ন তখনই আগমন ঘটে নিহাল শিকদারের। তিনি কোনরূপ শব্দ না করে সোজা ঢুকে পড়েন প্রাণের রুমে। অকস্মাৎ তাকে প্রাণ চমকায়। ক্ষণেই ইজি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, “এই অবেলায় আপনি?”
নিহাল বিছানায় গিয়ে বসে বলেন, “কথা আছে তোমার সাথে। দরজা লাগাও।”
মুহূর্তেই প্রাণের ভ্রু দুটির মধ্যকার দূরত্ব ঘুচে আসে। প্রশ্ন করতে গিয়েও নিহালের গাম্ভীর্যপূর্ণ চেহেরা দেখে আর করলো না। নিঃশব্দ পায়ে চলে যায় দরজা লাগাতে। দ্বারের কাছে যেতেই কয়েক হাত দূরে আশা বেগমকে লক্ষ্য করে সে,ভীতিগ্রস্ত নয়নে তাকিয়ে আছেন তিনি। প্রাণ ক্ষীণ হেসে চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করে তাকে, অতঃপর ভিড়িয়ে দেয় দরজা। এগিয়ে যায় নিহালের দিকে। জিজ্ঞেস করে, “বলুন।”
নিহাল শিকদার প্রাণের দিকে একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বলেন, “প্রিয়ম ওয়াস নট গিল্টি।”
কথাটা কর্ণগোচর হওয়ার পরও প্রাণ কোনরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায় না। নীরবে ফাইলটা হাতে নিয়ে দেখতে থাকে। নিহাল বলেন, “যেদিন জেসিকার খু’ন হয় সেদিন প্রিয়ম ঢাকায় ছিল না। বন্ধুদের সাথে খাগড়াছড়ি গিয়েছিল, ঘুরতে। ওর হাত ছিল না এসবে।”
প্রাণ পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়, “তাহলে ওর রবিন কর্মকারের সাথে এত উঠাবসা কেন? যেসব অনৈতিক কাজে রবিন কর্মকার জড়িত সেসবে প্রিয়মের নাম উঠেছে কেন? আমি খোঁজ নেওয়ার সময় ওর নাম কেন সামনে এসেছে?”
নিহাল বলেন, “প্রিয়ম মা’দ’কা’স’ক্তে’র সাথে জড়িয়ে গিয়েছিল। কবে কিভাবে আমার জানা নেই, খুব সম্ভবত বিদেশ থাকাকালীন এই নে’শা’য় জড়িয়ে পড়েছিল ও। আর এই বিষয়টা রবিন জানতো। ওই প্রিয়মকে প্রয়োজনীয় সব এনে দিত এবং নিজের সাথে সাথেই রাখতো তাই ওর নাম সব জায়গায় উঠেছে। আর এসবের পিছনে রবিনের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রিয়মকে হাত করে আমার থেকে সব কেড়ে নেওয়ার। কিন্তু প্রিয়ম রবিনের আসলরূপ জানতো না, ওর মতলব শুধু নে’শা’দ্র’ব্য পাওয়া থেকে ছিল। ওকে এতদিন জেরা করা পর ও সব স্বীকার করে। তার উপর জেসিকার ক্যাসটাও সামনেই ছিল, সব খুঁজে বের করতে সময় লাগেনি আমার।”
এবার পুরো বিষয়টা পরিষ্কার হয় প্রাণের নিকট। যে অংশটা শূন্য ছিল তা এখন পরিপূর্ণ হলো যেন৷ সে আলগোছে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে, “আমাকে এসব জানানোর কারণ? আমি যাতে আমার কথাগুলো ফেরত নিয়ে নেই তার জন্য? না-কি আপনার আদর্শে যে প্রশ্ন তুলেছিলাম, তা তুলে নেওয়া জন্য?”
নিহাল উঠে দাঁড়ান। ধীর গতিতে প্রাণের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলেন, “কোনটাই না। কারণ তোমার কোন কথা ফেলনা ছিল না। আমার আদর্শ তো হেরেই গিয়েছে। মানুষ হয়নি আমার ছেলে। কিন্তু তবুও কেন জানি এবার আমার আফসোস হচ্ছে না। তোমার থেকে জিতার আগ্রহ পাচ্ছি না।”
“কিন্তু তবুও, ছেলের নির্দোষিতা প্রমাণ করার জন্য উঠে-পড়ে লাগেন?”
নিহাল স্মিত হেসে বলে, “এর পিছে অন্যসব কারণও ছিল। ও তুমি বুঝবে না। হয়তো চাইবেও না। তাই বাদ দাও। কিন্তু একটা কথা, তোমায় এসব ডকুমেন্টস কে দিয়েছিল? আমার জানা মতে তোমার এত ভালো কানেকশন নেই যে এসব তথ্য তুমি নিজ থেকে করতে পারবে।”
প্রাণের সহজ স্বীকারোক্তি, “নয়ন দিয়েছিল এসব আমায়।”
নিহাল শিকদার ভ্রু কুঁচকে বলেন, “ভিতরে অনেক তথ্যই ভুল দেওয়া ছিল। এক্সট্রা ছিল বলতে। এসব আমি চেক না করালে বা তুমি আমাকে এসব না জানিয়ে পাবলিশ করালে খুব বাজেভাবে ফাঁসতে।”
নিহালের শিকদারের কথায় হঠাৎ নয়নের একটি কথা এখন টনক নাড়লো তার, সে বলেছিল তার পজিশন, পাওয়ার কিছুই নেই। তাই এই নিউজ পাবলিশ করা তার পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু কথা হচ্ছে, তার কিছু না থাকলেও তার বাবার তো ছিলই। নিহালের সমান নাহলেও একবারে কম যান না তিনি। কিন্তু তাও সে কিছু করেনি। কারণ এখানে আবার গভীর কোন ষড়যন্ত্র ছিল, সে সাথে আলাদা ফাঁদও। সুন্দর সাজানো প্র’তি’শো’ধ। মূলত, তাকে নিয়ে কাজ করানোর ছিল তা বেশ বুঝতে পারছে প্রাণ। যার জন্য এখানে প্রিয়মের নাম আসে। সে সাথে ভুল তথ্যও৷ যাতে সে নয়নের কথায় এসে সব করে ও জ্বালে ফেঁসে যায়। যার ফলে নিহাল শিকদারও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতো, প্রিয়মকে ভুয়া ক্যাসে ফাঁ’সা’নো’র জন্য। এটা নয়নের ভালো করেই জানা, সে ইন্ডাস্ট্রিতে সেফলি টিকে আছে একমাত্র নিহালের পাওয়ারের কারণ। তো নিহাল মুখ ফিরিয়ে নিলে তখন তার কাছে নিজেকে বাঁচানোর জন্য আর কোন পথ খোলা থাকতো না। উফফ! আগে এসব ঠান্ডা মাথায় কেন ভাবলো না সে। কেন নয়নকে এতটা হালকায় নিয়ে ফেলেছিল? ভুলে গিয়েছিল, “কু’কু’রে’র লেজ কখনো সোজা হয় না।”
প্রাণের এবার ক্ষোভে চোখ দুটো র’ক্তি’ম হয়ে আসে। সে দাঁতে দাঁত চেপে বিরবির করে উঠে, “দ্যাট বা’স্টা’র্ড!”
নিহাল রো’ষা’গ্নি কন্ঠে বলেন, “নয়নের ব্যবস্থা এবার আমি নিচ্ছি। ওর সাহস একটু বেশি বেড়ে গিয়েছে, আ’গু’ন নিয়ে খেলতে চাচ্ছে তো? বেশ! ওর অবস্থা এবার কি হবে আমি নিজেও জানি না।”
প্রাণ কথাটা শুনে তাকায় একবার। সে জানে, এবার তার পরিবারের উপর কথা এসেছে বলেই এতটা হিং’স্র হয়ে উঠেছেন নিহাল। অন্যথায় তিনি প্রত্যেকবারের মতই শান্ত থাকতেন৷ তার সো কলড সম্মান রক্ষার জন্য লোকদেখানো পদক্ষেপ বাদে কিছুই করতেন না। প্রাণ দৃষ্টি নত করে রাখে। এর মাঝে নিহাল ধাতস্থ কন্ঠে বলে উঠেন, “তুমি এখন আর বো’কা না প্রাণ। যে কারো কথায় গলে গেলে বা বিশ্বাস করলেই হবে না। আর না এত দরদী হওয়া উচিৎ তোমার। একা থাকো, একাই জীবনযাপন কর৷ তাই ভবিষ্যতে কিছু হলে এর দায় কেউ নিবেও না।”
প্রাণ শ্লেষের হাসি হেসে বলে, “আমার দায় কারো নিতেও হবে না। এট লিস্ট আপনাকে তো নাই-ই। তাই চিন্তামুক্ত থাকুন।”
নিহাল বলেন না কিছু। তিনি জানেন, প্রাণ প্রচন্ড বুদ্ধিমতি ও কঠোর। একাই সব সামলে উঠতে পারে সে। কিন্তু তবুও ভয় হয় তার, শুরু থেকেই প্রাণ ন্যায় বিচার করতে গিয়ে অনেক শত্রু তৈরি করে নিয়েছে নিজের বিরুদ্ধে। অনেকে আবার ওর সফলতার পিছনেও আছে। এখন এর মাঝে কে কোনদিক দিয়ে পিঠে ছুঁ’ড়ি চালিয়ে দেয় কে জানে? লম্বা নিঃশ্বাস ফেলেন তিনি৷
প্রাণ এবার নিজ ভাবনা থেকে জিজ্ঞেস করে, “প্রিয়ম কোথায় এখন?”
নিহাল নত দৃষ্টিতে শুধু বলেন, “রিহ্যাব সেন্টারে পাঠানো হয়েছে ওকে। অবস্থা খারাপ ওর।”
“অহ!”
নিহাল বলার মত কিছু খুঁজে পেলেন না আর। তাই মিনিট দুই-এক যেতেই বেরিয়ে গেলেন সেখান থেকে। প্রাণ তার যাওয়ার পাণে তাকিয়ে দূর্লভ হাসে। বাবারা বুঝি এমনই হয়? নিজের সন্তানের উপর আঁচ আসলে ঢাল হয়ে দাঁড়ায়? তবে তার বেলায় বাবার সংজ্ঞাটা এভাবে বদলে গেল কেন?
________
অপরাহ্ণের শেষভাগ তখন। অন্তরিক্ষ জুড়ে হলুদ, কমলা মেঘের হাতছানি। দমকা হাওয়ায় শ্বেত কাঞ্চন দুলছে মৃদু মৃদু। তা দেখে গাছের পাতার ফাঁকে স্নিগ্ধ হাসছে কামিনী। আড়ালে থাকতে চাইলেও মধুময় সৌরভ তার জানিয়ে দেয় উপস্থিতি। পরিবেশ যখন নিজেতে মত্ত তখন প্রাণের দুয়ারে কড়া নাড়ে আগন্তুক কেউ। পার্সেল নিয়ে এসেছে সে। পার্সেল বললে ভুল হবে, বৃহৎ আকৃতির বক্স এটি। প্রাণ বক্সটা হাতে নিয়ে নাম দেখে প্রথমে। উপরে ছন্দের নাম দেখতেই গ্রহণ করে নেয় সে। ভিতরে এসে বক্সটা খুলতেই খাঁচায় বন্দী একটি টিয়াপাখি দেখতে পায়। পাখিটি জীবন্ত। প্রাণ খাঁচাটি বের করতেই পাখিটি পাখা ঝাঁপটা দিয়ে উঠে৷ অতঃপর স্থির ভঙ্গিতে কতক্ষণ বসে প্রাণকে দেখতে থাকে৷ প্রাণ ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই সে বলে উঠে, “প্রাণপাখি! প্রাণপাখি! লেভিউ।”
#চলবে
#প্রাণেশ্বরী
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
#পর্ব-২৭
“প্রাণপাখি! প্রাণপাখি! লেভিউ।”
টিয়াটার কথা বোধগম্য হতেই প্রাণের চোখ দুটো গোলগাল হয়ে আসে, অদ্ভুত দৃষ্টিতে দেখতে থাকে। অধরযুগলে সৃষ্টি হয় কিঞ্চিৎ দূরত্ব। তোতাপাখিটা একটু থেমে আবারও বলে উঠে, “প্রাণপাখি! লেভিউ!”
প্রাণের এবার বিষম খাওয়ার মত অবস্থা। সে কস্মিনকালেও ভাবেনি এমনভাবে কেউ এরকম কোন বার্তা পাঠাতে পারে। তাও আবার ছন্দের মত কেউ?বিষয়টা তার কোনভাবেই হজম হচ্ছে না। এটা কি আসলেই কোন প্রপোজাল ছিল নাকি প্র্যাঙ্ক? তার ভাবনার মাঝেই আশা বেগম এসে পাশে দাঁড়ান। বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “ওমা! এটা তোকে আবার কে দিল?”
আশা বেগমের প্রশ্নের বিপরীতে প্রাণ কিছু বলার পূর্বেই তোতাপাখিটা পুনরায় নিজের বাণী বলে উঠে৷ আশা বেগম এবার আশ্চর্যান্বিত নয়নে তাকান, “পাখিটা কি তোকে আই লাভ ইউ বললো?”
ক্ষণেই প্রাণের গাল দুটো আ’র’ক্ত হয়ে উঠে। থতমত খেয়ে বলে, “তাই তো লাগে।”
আশা বেগম ঈষৎ হেসে কৌতূহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন, “তোকে এত সুন্দর করে প্রস্তাব দিল কে?”
প্রাণ কথা বলে না। বাহির দিয়ে তাকে শান্ত দেখালেও ভিতরে প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছে তার। নেত্রযুগল কয়েকবার বিরতিহীন ঝাপটে শুষ্ক-রুক্ষ ঠোঁট দুটো জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে নেয়। হঠাৎ করেই গলা শুকিয়ে আসছে কেন এত? এমনটা তো হওয়ার কথার না। উপরন্তু ছন্দ বলেছিল, সে তার মায়া পড়বে না। তাহলে এসব কি? প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেল না সে। তবে তার মধ্যকার অনুভূতি বেশ এলোমেলো। কখনো রাগ লাগছে আবার লাগছে না। কখনো আবার অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। যতবারই টিয়াটি তার নাম ধরে ডাকছে ততবারই হিম শীতল স্রোত বয়ে যাচ্ছে সর্বাঙ্গ জুড়ে। শান্ত মন হয়ে উঠছে অশান্ত৷ সে বুঝে উঠতে পারছে না হচ্ছেটা কি তার সাথে। এদিকে প্রাণকে কথা বলতে না দেখে আশা বেগম তার কাঁধে হাত রেখে বলেন, “মামনি, বললি না তো কে দিয়েছে।”
প্রাণ এবার বাধ্য হয় বলতে। মিনমিনে কন্ঠে বলে, “ছন্দ!”
আশা বেগম ভ্রু কুঁচকে তাকান। তবে ফের কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই প্রাণ উঠে পাখির খাঁচাটা নিয়ে রুমের দিক চলে যায়। আশা বেগম তার যাওয়ার পাণে তাকিয়ে মুচকি হাসেন। মেয়েটা তার পুনরায় নাজুক হচ্ছে বুঝি?
.
রুমে এসে প্রাণ ছন্দকে ফোন দেয়। কয়েকবার রিং হওয়ার পর ছন্দ ফোন রিসিভ করে। প্রাণ কোন ভণিতা না করে জিজ্ঞেস করে, “এসব কি মি. তুরহান?”
ছন্দ হতবাক কন্ঠে বলে, “কিসব কি?”
প্রাণ অতি শীতল কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,”পাখিটাকে কি শিখিয়েছেন আপনি?”
ছন্দ সংশয়িত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, “কোন পাখি?”
প্রাণের ভ্রু কুঁচকে আসে এবার, “একটু আগে যে টিয়াপাখি পাঠিয়েছেন সে-টা।”
ছন্দ হতাশাগ্রস্ত কন্ঠে বলে, “ওইটা আজ ডেলিভারি করে দিয়েছে তারা? আমি তাদের এতবার করে বললাম পরশুদিন যেন ডেলিভারিটা দেয়, তাও আগে কেন দিল? ”
“দিয়েছেন কেন?”
ছন্দ একটু থেমে বলে, “পরশু আপনার বার্থডে তাই, সেই উপলক্ষে দিয়েছিলাম। চেয়েছিলাম সারপ্রাইজ দিতে কিন্তু পারলাম না। যাই হোক, হ্যাপি বার্থডে ইন অ্যাডভানস মিস. ল্যাভেন্ডার।”
ছন্দের কথা শুনে প্রাণ থমকায়। পরশু তার জন্মদিন? তারিখ কি আজ? প্রশ্নটা মনের মাঝে আসতেই ফোনটা কান থেকে নামিয়ে তারিখে চোখ বুলায় সে। সত্যি তাই। পরশু তার জন্মদিন অথচ তারই মনে নেই। কি অদ্ভুত! যদিও এ নতুন কিছু না। কোন বারই তার নিজের জন্মদিন মনে থাকে না, বাকি আট-দশটা দিনের মতই ওইদিনও ব্যস্ততার মাঝে কাটিয়ে দেয় সে। অতঃপর যখন তারিখের দিকে নজর যায় তখন বোধ হয় আজ তার জন্মদিন। কখনো আবার হয়ও না। চলে যায় দিন। আর মনে থাকবেই বা কিভাবে? এইদিনটা সেভাবে কখনো উৎযাপনই করা হয়নি তার। এমনকি কেউ জানেও না তার জন্মদিন কবে। সোশ্যাল সাইটের কোথাও উল্লেখও নেই। জানায়নি কখনো। যদিও নয়ন,জেসিকা পর্যন্ত জানতো কিন্তু ব্যস্ততার মাঝে প্রায় ভুলে যেত। দুই-তিন গড়িয়ে যাওয়ার মনে পড়তো তাদের, তখন দু-চারটে গিফট নিয়ে এসে সরি বলে দিত। তবে ছন্দ কিভাবে জানলো, জানা নেই তার। কিন্তু জিনিসটা তার হৃদয়ের দুয়ারে কড়া নেড়ে গেল যেন। এভাবে কখনো কেউ তাকে সারপ্রাইজ করেনি বা করার কথা ভাবেনি তাই বলে হয়তো।
প্রাণ নিজেকে ধাতস্থ করার পথে পাখিটি কথা বলে উঠে। সেটা কর্ণগোচর হওয়া মাত্র কোমল তুলতুলে মনটায় পুনরায় ক্রোধের প্রদীপ ধপ করে জ্বলে উঠে। সে তী’ক্ষ্ণ কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, “আপনি কি শিখিয়েছেন পাখিটাকে?”
ছন্দ দ্বিধাজড়িত কন্ঠে বলে, “আপনার নাম কেন?”
প্রাণ থমথম মুখে স্পিকার বাড়িয়ে দিয়ে মোবাইলটা পাখির সামনে ধরে, কিয়ৎক্ষণ নীরবে কেটে যাওয়ার পর প্রাণ তী’র্য’ক দৃষ্টিতে তাকাতেই পাখিটি কথা বলে উঠে, “প্রাণপাখি! লেভিউ!”
টিয়া কথা বলা শেষ করতেই প্রাণ বলে উঠে, “তাহলে এটা কি? হাও উইল ইয়্যু এক্সপ্লেইন টু মি নাও?”
ছন্দের অভিব্যক্তি ক্ষণে বদলে যায়। বিস্মিত কন্ঠে বলে, “বিশ্বাস করুন আমি এটা শিখাইনি। আমি আপনার নাম আর ল্যাভেন্ডার বলা শিখাতে চেয়েছিলাম। তবে টিয়া আপনার নাম বলতে পারলেও ল্যাভেন্ডার বলতে পারিনি। অনেক কষ্টে শুধু ‘লেভে’ পর্যন্ত শিখাতে পেরেছিলা তবুও আধা-আধুরা। তাই হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। মাঝখান দিয়ে ও ‘লেভিউ’ বলা কিভাবে শিখলো জানি না। আই সোয়ের!”
ছন্দের কথাগুলো যুক্তিগ্রাহ্য ঠেকে প্রাণের নিকট। ‘ল্যাভেন্ডার’ উচ্চারণের সাথে পাখিটার বলার ধরণটা বেশ মিল আছে। পাখিটাই হয়তো নামটা উচ্চারণ করতে গিয়ে বি’কৃ’ত করে ফেলেছে। যার জন্য দ্বিতীয় কোন প্রশ্ন আসে না মস্তিষ্কে। প্রাণ স্বগতোক্তি কন্ঠে বলে, “আচ্ছা।”
“আই সোয়ের আমি ওই শব্দটা ওকে শিখাইনি।”
“বিশ্বাস করছি আমি আপনার কথা।”
ছন্দ কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু এর আগেই আশপাশ থেকে সুমধুর এক ধ্বনি ভেসে আসে। মেয়েলী কন্ঠে কেউ এনাউন্সমেন্ট দিচ্ছে। অকারণেই প্রাণ তা মনোযোগ দিয়ে শুনে, বুঝতে পারে ছন্দ এয়ারপোর্টে বসে। এনাউন্সমেন্ট শেষ হতেই ছন্দ বলে উঠে, “থ্যাংকস! বাট আমি আপনার সাথে পরে কথা বলছি। আমার ফ্লাইটের টাইম হয়ে যাচ্ছে।”
অকস্মাৎ প্রাণ জিজ্ঞেস করে উঠে, “কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”
প্রশ্নটা করে প্রাণ নিজেই আহাম্মক বনে যায়। অকারণে প্রশ্ন করা তার স্বভাববিরোধী। অথচ আজ সেই বিধি ভঙ্গ হয়ে গেল। ছন্দ মৃদু হেসে বলে, “নিউজিল্যান্ড! এবারের ম্যাচ ওখানে।”
প্রাণ ছোট করে ‘অহ’ বলে মৌন হয়ে গেল। ছন্দ নিজ থেকেই বলল, “বাংলাদেশে থাকবো না বলেই গিফটটা কুরিয়ার করা। সামনা-সামনি দিলে হয়তো এত গড়বড় হতো না। মাই ব্যাড!”
প্রাণ বলতে চাইলো কিছু, কিন্তু মৌনতারা কণ্ঠনালি আড়ষ্ট করে ফেলায় পারলো না। পিছন থেকে ছন্দের ডাক পড়তেই ছন্দ পুনরায় তাকে উইশ করে কল কেটে দেয়। প্রাণ কিয়ৎক্ষণ নীরব থেকে খাঁচার ভিতর বন্দী প্রাণীটার দিক তাকায়। কিছু একটা ভেবে উঠতেই তার ঠোঁটের কোণ আপনা-আপনি প্রসারিত হয়ে যায়।
.
ফ্লাইট ট্যাক অফ করতেই ছন্দ সিটের পিছনে মাথা হেলিয়ে দেয়। আঁখিপল্লব দুটো এক করে বিরবির করে বলে উঠে, “অবুঝ প্রাণীটাও আমার মনের কথা বুঝে গেল অথচ আপনি পারলেন না মিস. ল্যাভেন্ডার। আপনি শুধু আমার মিথ্যে শব্দগুলোই বিশ্বাস করে গেলেন।”
______
নয়ন নিখোঁজ আজ একমাস ধরে। রাতারাতি একটা মানুষ এভাবে উধাও কিভাবে হয়ে গেল জানা নেই কারো। প্রাণ নিজেও খোঁজ চালানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু তেমন একটা লাভ হয়নি। তবে সে আঁচ করতে পেরেছিল নয়নের নিখোঁজের কারণ, তাই বিষয়টা নিয়ে আর ঘাটেনি। নয়নকে নিয়ে সে আর দ্বিতীয় কোন ভাবনা ভাবতে চায় না। এদিকে নয়নের বাবা-মা পুলিশে জিডি করেছেন ঠিক কিন্তু কোন খোঁজ পাননি। উপরন্তু, খুব আশ্চর্যজনকভাবেই তাদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে এলো। দেউলিয়া হওয়ার পথে এমন। যার দরুণ টাকা দিয়ে বা পাওয়ার দিয়ে যে নিজের ছেলের খোঁজ চালাবেন তা আর সম্ভব হয়ে উঠলো না। যদিও এ নিয়ে বেশ কন্ট্রোভার্সি তৈরি হলো। প্রাণকে টানা হলো মাঝে। ধারণা করা হলো, প্রাণ হাত আছে এতে। কেন না, বর্তমানে নয়নের সবচেয়ে বড় শ’ত্রু সেই-ই। তবে এসব বেশিদিন চললো না। এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি থেকে এভাবেই প্রতিনিয়ত শতশত মানুষ হারিয়ে হয়ে যায়, আড়ালে-আবডালে। দুই-একদিন সবাই খোঁজ নিলেও সময়ের স্রোতে সাথে সাথে সবই ভুলে যায় মানুষ। এবারও তাই হলো। ঘটনা পুরোনো হতেই ভুলে গেল সবাই নয়নকে, মাতামাতি শুরু হলো অন্য কোন এক নিউজ নিয়ে। তাই হয়তো বলা হয়, “সময়ে সাথে মানুষও ফুরায়।”
.
.
আষাঢ়দিনের মত ঘন বাদল জমছে আসমানে। নিকষকৃষ্ণ আঁধার নেমেছে ধরিত্রীর বুকে। তীব্র বেগে বন্য হাওয়া ছুটছে। ফুল-লতাপাতা আঁচড়ে পড়ছে একে অপরের গায়ে, শুকনো পাতা সব ঝরঝর করে পড়ছে। পায়ের তলায় পিষতেই গুড়িয়ে যাচ্ছে। রাস্তার ধারে, ল্যাম্পপোস্টের হরিদ্রাভ আলো প্রায় নিভু নিভু হয়ে এসেছে। যেকোন মূহুর্তে ই’ন্তে’কা’ল করতে পারে। নিচেই বে’ও’য়া’রি’শ কু’কু’র দুটো বিরতিহীন ঘেউ ঘেউ শব্দ করে চলেছে। ফাঁকে ফাঁকে প্রয়াস দিতে গগনবিদারী চিৎকার করে উঠছে মেঘদূত। প্রাণ এমন পরিবেশ দেখে বিরক্তবোধ করলো। বৃষ্টি তার জীবনের চরম শ’ত্রু। সে সাথে এমন পরিবেশও। তার মতে, বৃষ্টি নামে সর্বদা অ’শু’ভ কিছু ঘটাতে। সুখকর এতে কিছুই নেই। তবে কে জানতো তার ধারণা পুনরায় সত্য হতে চলেছে?
কক্ষে বন্য হাওয়ারা হানা দিতেই প্রাণ বারান্দার দরজা ও জানালা লাগিয়ে দেয়। এসি ছেড়ে অরেঞ্জ ফ্রেগ্রেন্সে এয়ার ফ্রেশনার চারদিকে স্প্রে করে বিছানায় গিয়ে বসে। কোলে ল্যাপটপ নিয়ে কি-বোর্ডেে আঙ্গুল চাপতে থাকে, বহুদিন পর মুভি দেখার ইচ্ছে জেগেছে। তাই খুঁজছে। স্লাইডিং ডোরের পাশেই টিয়াপাখিটি ডানা ঝাপটাচ্ছে। মাঝে-সাঝে হুট করে সেই চিরচেনা বুলি আওড়ে উঠছে। প্রাণ কত চেষ্টা করলো তাকে এই কথা ভুলিয়ে নতুন কথা শিখাতে কিন্তু টিয়া মশাই বাধ্য হলে তো? সে কিছুতেই ‘লেভিউ’ শব্দটি ভুলতে রাজি না। কোন মধু মিশে আছে শব্দটিতে কে জানে? অবশেষে না পেরে প্রাণ হাল ছাড়লো।
মুভি দেখার এক ফাঁকে আশা বেগম এক কাপ কফি নিয়ে আসেন। তিনি প্রাণের পায়ের কাছে বসে কাপটা এগিয়ে দিতেই প্রাণ বলে, “তোমার না পায়ে ব্যথা? তাহলে এত দৌড়াদৌড়ি করছো কেন?”
“সার্ভেন্ট সবাই ছুটিতে, তো তোর কফি কে আনতো? হুম?”
প্রাণ ল্যাপটপের স্ক্রিন নামিয়ে বলে উঠে, “আমার দরকার পড়লে আমি নিজে করে নিতাম। তুমি কেন কষ্ট করতে যাও বল তো? রাতে খাবারের সময় মনে করে ঔষধ খেয়ে নিবে, নাহলে ব্যথায় সারারাত ঘুমাতে পারবে না।”
আশা বেগম প্রাণের মাথায় আদরমাখা হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন, “তোর জন্য এইটুকু করতে আমার কোন কষ্ট হয় না মামনি। আমি, আমার ভালো লাগা থেকেই সব করি।”
প্রাণ কাপটা নিয়ে সাইড টেবিলে রেখে আশা বেগমকে পাশ দিয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলে, “আই লাভ ইউ আশামা।”
আশা বেগমও প্রাণকে জড়িয়ে ধরে বলেন, “আই লাভ ইউ টু।”
শীতল, তরল কিছু উপলব্ধি হতেই প্রাণ আশা বেগমের দিক তাকিয়ে বলে, “এসি রুমে এভাবে ঘামছো কেন তুমি?”
আশা বেগম নিজের অস্বাচ্ছন্দ্য ভাব লুকাতে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেলেন। আঁচল টেনে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলেন, “রান্নাঘর থেকে আসলাম না মাত্র? ওইটার জন্যই হয়তো।”
প্রাণ দ্বিতীয় কোন প্রশ্ন করার আগেই আশা বেগম অস্ফুটস্বরে বলেন, “তাড়াতাড়ি কফিটা খেয়ে নে, ঠান্ডা হয়ে যাবে নাইলে। আমি একটু আসছি।”
প্রাণ মাথা দুলিয়ে সড়ে আসলো। আশা বেগমও কথা না বাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন, এগিয়ে গেলেন দরজার দিকে। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো ঠিক তখনই। অকস্মাৎ তার মাথা ঘুরে উঠলো, চোখের সামনে ছেঁয়ে গেল অন্ধকার। এতক্ষণ তার ভিতরে ভিতরে অস্বস্তি লাগলেও এবার বুকের বা-পাশটা ব্যথা করে উঠলো। দুঃসহ সেই ব্যথা। কিছু বুঝে উঠার আগাই জ্ঞান হারালেন তিনি, লুটিয়ে পড়লেন মার্বেল টাইস করা মেঝেতে। শব্দ হলো। নিস্তব্ধ রুমে শোনা গেল তীব্রভাবে। প্রাণ চমকে উঠলো, পাশ ফিরে আশা বেগমকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে তার পুরো দুনিয়া ঘুরে গেল যেন। হাতে থাকা কাপটা পড়ে গেল মেঝেতে, শত খ’ণ্ড’বি’খ’ণ্ড হয়ে। প্রাণ কিয়ৎক্ষণ নীরব থেকে “আশামা” বলে চেঁচিয়ে উঠলো। লাফিয়ে নামলো বিছানা থেকে, যার দরুণ বড় এক কাঁচের টুকরো আড়াআড়িভাবে বিঁধে গেল তার পায়ে। মুহূর্তে এক ফিনকি র’ক্ত বেরিয়ে আসলো পা গড়িয়ে। সাদা পাপোশটি ভিজে গেল লহু কণিকায়। পরক্ষণেই আ’র’ক্তি’ম দেখালো। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠার বদলে সে একটানে পা থেকে কাঁচটা বের করে ছুটে গেল আশা বেগমের দিকে। তার কাছে গিয়ে তার মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে প্রাণ অনবরত “আশামা” বলে ডাকতে থাকলো। দিগ্বিদিক ভুলে বদ্ধ উ’ন্মা’দে’র ন্যায় আচরণ করতে থাকলো। কাজলবিহীন টানা টানা চোখ দুটো হতে টুপ টুপ করে গড়িয়ে পড়লো অজস্র অশ্রুকণা, ভিজে গেল আশা বেগমের মুখশ্রী। তবুও কোন পাঠপ্রতিক্রিয়া দেখালেন তিনি। প্রাণের চি’ৎ’কা’র, আ’র্ত’না’দ সব ভাসতে থাকলো শূন্য রুম,বাড়ি জুড়ে। কিন্তু কোথাও যে কেউ নেই, শুনবে কে এই আ’র্ত’না’দ? ঘুরে-ফিরে যে ফিরবে সব তার সান্নিধ্যেই।
#চলবে