#প্রাণেশ্বরী
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
#পর্ব-১০
“আরেহ! আপনি মিস. ল্যাভেন্ডার না? ওইদিন আমার সাথে সুইমিংপুলের পাশে ছিলেন যে?”
প্রাণ নজর তুলে তাকায়, সম্মুখে সেদিনের শ্যাম পুরুষটি। লম্বাটে চেহেরায় সরু নাকটি উঁচু হয়ে আছে, ঠোঁটের কোণে মিহি হাসির রেখা। প্রাণ মানবটিকে চিনতে পেরে দৃষ্টি নামিয়ে ফেললো। স্মিত কন্ঠে বলে, “তাই তো মনে হয়।”
প্রাণের বাঁকা উত্তরে মানবটি ভ্রু কুটি কুঞ্চিত করে তাকায়। এই মেয়েটা কি কখনো সোজা,সাবলীল ভাষায় উত্তর দিতে জানে না? পেটে প্যাঁচ নাকি মাথায় কে জানে। সে থমথম মুখে বলে, “ইউ আর টু মাচ কমপ্লিকেটেড। স্বাভাবিকতা বোধহয় আপনার রক্তেই নেই মিস. ল্যাভেন্ডার।”
প্রাণ বুঝলো সেদিন সে ল্যাভেন্ডার কালারের ড্রেস পড়েছিল বিধায় তাকে সেই নামে ডাকছে মানবটি৷ বিষয়টা পছন্দ না হওয়ায় সে স্ক্রিপ্টের দিকে নজর বুলাতে বুলাতে বলে, “আ’ম নট এনি মিস. ল্যাভেন্ডার। নাম আছে আমার একটা।”
মানবটি ইচ্ছে করে ত্যাড়া উত্তর দিয়ে বলল, “নামটা বুঝি আমার জানার কথা?”
প্রাণ নয়নযুগল তুলে তাকায়, “নুসাইবা আরা প্রাণ, রিমেম্বার ইট।”
মানবটি টেনে একবার প্রাণের নাম উচ্চারণ করে ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বলে, “নাম প্রাণ অথচ কথাবার্তা এক্কেবারে নিষ্প্রাণ।”
কথাটা প্রাণ কর্ণগোচর হলো ঠিক কিন্তু সে কোনপ্রকার অভিব্যক্তি দেখালো না। মানবটি কিছু বলতে যাচ্ছিল তার আগেই সেখানে দীপক সরকার এসে হাজির হন। তিনি মূলত এই অ্যাডভার্টাইজমেন্টের ডিরেক্টর। কোনপ্রকার ভূমিকা ছাড়াই তিনি বলে উঠেন, “বাহ! তোমরা দেখছি সময়ের আগেই চলে এসেছ। আই লাইকড দ্যা স্পিরিট। তা তোমরা নিশ্চয়ই একে অপরকে চিনে থাকবে কিন্তু তবুও আমি একবার তোমাদের পরিচয় দিচ্ছি। প্রাণ ও হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন ফায়াজ তুরহান ছন্দ, আর ছন্দ ও হচ্ছে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পী নুসাইবা আরা প্রাণ। এই অ্যাডভার্টাইজমেন্টে তোমরা একসাথে কাজ করবে।”
প্রাণ প্রথমে কোন প্রকার প্রত্যুত্তর না করে শীতল দৃষ্টিতে একবার ছন্দের দিকে তাকালো, অতঃপর ঠোঁটের কোণে সৌজন্যমূলক হাসি ঝুলিয়ে বলল, “নাইস টু মিট ইউ মি. ছন্দ।”
ছন্দও বলে উঠে, “সেম হিয়ার মিস. প্রাণ।”
তাদের দুইজনের কথা শেষ হওয়া মাত্র দীপক বলে উঠেন, “তোমরা দুইজন স্ক্রিপ্ট পড়ে নিয়েছ না? সেট কি রেডি করতে বলল?”
প্রাণ প্রত্যুত্তরে বলে, “করতে পারেন, আমার কোন সমস্যা নেই।”
ছন্দ প্রাণের কথায় সমর্থন জানিয়ে বলে, “আমারও না।”
দীপক হেসে বলবেন, “বেশ! তাহলে দুইজন প্রস্তুতি নিয়ে নাও, কিছুক্ষণের মাঝেই আমরা শুট শুরু করছি।”
কথাটা বলেই দীপক সরকার জায়গাটি প্রস্থান করলেন। ছন্দ আড়চোখে একবার প্রাণের দিক তাকিয়ে গ্রিনরুমের দিকে চলে যায়। তার আরেকবার স্ক্রিপ্টটা দেখা প্রয়োজন।
_______
ইতিমধ্যে শুট শুরু হয়ে গিয়েছে৷ একজন প্রোফেশনাল আর্টিস্ট হওয়া সুবাদে প্রাণ চট করে নিজেকে সবকিছুর সাথে খাপ খায়িয়ে নিয়ে নিজের অভিনয় খুব নিপুণভাবে প্রদর্শন করল। তবে বাঁধা প্রাপ্ত হলো ছন্দ৷ এমন নয় যে সে এসবের সাথে পূর্বপরিচিত না বা অভিনয়ে অদক্ষ৷ আগে সে বেশ কয়েকটা সলো অ্যাডভার্টাইজমেন্ট করেছে। তবে এবার তার সমস্যা মূলত প্রাণ, কেন যেন প্রাণের সাথে স্বাভাবিক হতে পারছে না সে। যতবারই সে প্রাণের সামনে যাচ্ছে দ্বিধা,সংশয় কাজ করছে। গলা শুকিয়ে আসছে। এর একটি কারণ সেদিন রাতের ঘটনা, আরেকটি আগে কখনো কোন নারী চলচ্চিত্র শিল্পীর সংস্পর্শে কাজ না করার অভিজ্ঞতা। তার জন্য জিনিসটা বেশ জটিল মনে হচ্ছে। এদিকে দীপক সরকারও কোনভাবেই পার্ফেক্ট শর্ট পাচ্ছেন না, বার বার রি-টেক নিয়েই চলেছেন। এক সময় ত্যক্ত হয়ে তিনি ছন্দকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “ছন্দ তুমি এত নার্ভাস হচ্ছ কেন? এটা নরমাল একটা শুট। আমি টি-ব্রেক দিচ্ছি, তুমি নিজেকে ততক্ষণে শান্ত করে ঠিকঠাক মত প্রস্তুত করে নাও।”
ছন্দ মাথা দুলালো৷ এগিয়ে গিয়ে বসলো নিজের চেয়ারে৷ পাশে রাখা বোতলটা হাতে নিয়ে এক নিমিষেই সবটুকু পানি পান করে নিল। লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে হাতে স্ক্রিপ্ট ধরে নিজের লাইনগুলো আনমনে বার বার আওড়াতে থাকলো। সে বুঝে না বাকিরা কিভাবে স্বাচ্ছন্দ্যে নায়িকার সাথে সকল দৃশ্য ফটাফট করে ফেলে। এদিকে সে তো সাধারণ চার-পাঁচ লাইনেই ঠিক মত বলতে পারছে না, কি এক অবস্থা। তার মনে হলো, এই অভিনয় জিনিসটার চেয়ে ঢেড় গুণ সহজ হাতে ব্যাট উঠিয়ে মাঠে নেমে একের পর এক সেঞ্চুরির রেকর্ড করা। এই জীবনে আর সে অভিনয় করার মত পাপ করছে না। এই লাস্ট! নিজের ভাবনায় যখন ছন্দ মশগুল তখন তার পাশে চেয়ার টেনে বসলো প্রাণ। মন্থর কন্ঠে বলল, “আমার জন্য কি আপনার সমস্যা হচ্ছে? হলে বলব জড়তা কাটিয়ে উঠুন নাহলে নিজের বেস্টটা প্রেজেন্ট করতে পারবেন না আপনি।”
ছন্দ পাশে তাকিয়ে প্রাণকে দেখতে পেয়ে মনে মনে খানিকটা অবাক হলেও , অভিব্যক্তি স্বাভাবিক রেখে এক গাল হেসে বলল, “থ্যাংকস ফর দ্যা ক্যারেজ। আমি চেষ্টা করছি খাপ খায়িয়ে নেওয়ার। বাট…”
প্রাণ জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকাতেই ছন্দ বলে উঠে, “সরি ফর দ্যাট নাইট। আমার ওভাবে আপনাকে ধাক্কা দেওয়া ঠিক হয়নি।”
“সেখানে আমার সম্মতি ছিল, তাই গিল্ট ফিল করার কোন কারণ নেই৷ বি ইজি এন্ড ফিল ফ্রি৷”
ছন্দ মাথা নাড়িয়ে বলে, “আচ্ছা।”
প্রাণ আর কিছু সময় কথা বলে চলে গেল। ছন্দ সেদিক তাকিয়ে বিরবির করে উঠল, “যতটা অ্যারোগান্ট ভেবেছিলাম ততটাও নন আপনি।”
.
অতঃপর পুনরায় শুটিং চালু হতেই পরপর তিন টেক-এ ছন্দ আর প্রাণ মিলে পুরো অ্যাডভারটাইজমেন্টটা কমপ্লিট করে ফেললো। শুট শেষে প্যাক আপ হতেই ছন্দ প্রাণের সামনে এসে বলে, “আবারও ধন্যবাদ। তখন আপনার জন্যই কমফোর্টেবল হতে পেরেছিলাম আমি।”
প্রাণ এক ঝলক তার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল, “ধন্যবাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই, এটা আমার দায়িত্ব ছিল।”
কথাটা শুনে ছন্দের কপালে ভাঁজ পড়ে। আবার সেই প্যাঁচানো কথা? আর কিসের দায়িত্ব? মানে কি? ছন্দ কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই পাশ থেকে চৈতি উৎসাহ ভরা কন্ঠে বলে উঠে, “ছন্দ স্যার! আমাকে আপনার একটা অটোগ্রাফ দিবেন প্লিজ? আমার ছোট ভাই আপনার অনেক বড় ফ্যান, আপনাকে আইডল মানে সে। ও আপনার অটোগ্রাফ পেলে খুব খুশি হবে।”
ছন্দ মিষ্টি করে হাসতেই মুহূর্তে তার গালে গর্তের আবির্ভাব হলো। আকর্ষণ যেন বৃদ্ধি পেল কয়েক গুণ। সে খুব বিনয়ী কন্ঠে বলল, “অবশ্যই দিব। বলুন কোথায় অটোগ্রাফ দিতে হবে?”
চৈতি দ্রুত তার হাতে থাকা নোটপ্যাড আর কলম এগিয়ে দিয়ে বলল, “এখানে দিলেই হবে।”
ছন্দ হেসে নোটপ্যাডটা হাতে নিয়ে অটোগ্রাফ দিয়ে দিল। চৈতি পুনরায় একটা সেলফির জন্য রিকুয়েষ্ট করলে ছন্দ সেটাও তুললো। ছবি তোলা শেষে ছন্দ প্রাণের দিকে তাকালো। প্রাণ তার দিকে না তাকিয়ে চৈতিকে তাড়া দিল বের হওয়ার জন্য। চৈতি প্রাণের কথা অনুযায়ী দ্রুত সব গুছিয়ে নেওয়ামাত্র প্রাণ কোনদিক না তাকিয়ে নিশ্চুপ পায়ে হেঁটে বেড়িয়ে গেল। চৈতি ছন্দকে একবার ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে ছুটলো প্রাণের পিছু পিছু। ছন্দ প্রাণের যাওয়ার পাণে তাকিয়ে থাকলো। সে না কোন বিদায় জানালো, না কোন সৌজন্যতা দেখাল। মানে সে ভেবে পায় না এই মেয়েটা এমন কেন? সে কি এমনই অ্যারোগান্ট নাকি এটা তার স্বভাবই? কে জানে। তবে এই নারীকে বোঝা দূলর্ভ ব্যতীত কিছুই মনে হলো ছন্দের। সে বিরবির করে বলে, “আমি আমার আগের ভাবনা ফেরত নিলাম। আপনি মোটেও সুবিধার না।”
__________
পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে অরুণসারথি। আঁধারের সাথে শীতলতা মিশতেই স্বেদাক্ত নগরী শুষ্কতার আস্তরণে বন্দী হলো। হিম বাতাসের ছোঁয়া পেয়ে গুঞ্জন তুললো দোলায়মান গাছ-গাছালিরা। সুবাস ছড়ালো বেলি ফুলেরা। অজস্র নক্ষত্র টিমটিম করে জ্বলতে থাকলো কৃষ্ণবর্ণ অম্বরে। প্রাণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আজকের পরিবেশ উপভোগ করতে থাকলো। সে সাথে ভাবতে থাকলো নিজের পরবর্তী পদক্ষেপের কথা। হঠাৎ তার ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠতে মনোযোগ সেদিক চলে গেল। মুঠোফোন হাতে নিয়ে মেসেজ চেক করতেই ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা দেখা দিল। সবকিছু নিজের পরিকল্পনা মাফিক চলতে দেখে আলাদা শান্তি অনুভব করল অন্তঃকরণ জুড়ে৷ সে কিছুটা সময় নিয়ে ফোন লাগালো জেসিকাকে। কয়েকবার রিং হতেই জেসিকা ফোন তুললো। কুশল বিনিময় পর্ব শেষ হতেই প্রাণ বলে উঠল, “কাল ফ্রি আছিস কখন?”
জেসিকা ভেবে বলল, “দুপুরে আর সন্ধ্যার পরে৷ কেন?”
প্রাণ বলে, “তাহলে সন্ধ্যার পর পুরো টাইমটা আমার জন্য বুক করে রাখ। তুই কাল আমার সাথে শপিংয়ে যাচ্ছিস।”
জেসিকা জিজ্ঞেস করে, “হঠাৎ? দরকারী কিছু আছে নাকি সামনে?”
“আছে তো। কাল আয় আগে তারপর জানতে পারবি।”
জেসিকা ভেবে বলে, “আচ্ছা।”
প্রাণ আর কথা না বাড়িয়ে ফোনটা রেখে দেয়। অতঃপর প্রকৃতির অপার্থিব সৌন্দর্যের মাঝে আবার ডু’ব দিয়ে গুণগুণ করে গান গাইতে থাকে। অপেক্ষা এখন কালকের, কালদিনটা বেশ যাবে তার।
#চলবে
[কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।]
#প্রাণেশ্বরী
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
#পর্ব-১১
খামখেয়ালি ভাবনার মত লালচে-ধূসর মেঘবালিকাদের আনাগোনা, গোধুলির আলো মিইয়ে আসছে পশ্চিমাকাশে। আঁধারের আগমন ঘটছে উজ্জ্বল নক্ষত্রদের প্রদর্শন করতে। কৃত্রিম আলোয় টিমটিম করছে যান্ত্রিক নগরী৷ রাস্তার ধার ঘেঁষে চলছে যানবাহনের সেনাবাহিনী। ব্যস্ততা সব উপচে পড়ছে যেন। মাগরিবের আযানের পর পরই প্রাণ আর জেসিকা বের হয়েছে গুলশান-১ এর জন্য। যাওয়ার পথে জেসিকা অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে বিষয়টা কি? হঠাৎ তারা শপিংয়ে যাচ্ছে কেন? সে তো সহজতর শপিং করে না, দরকার পড়লেও অনলাইনে অর্ডার করে নেয়। আজ তাহলে? প্রাণ কোনটারই সোজা উত্তর দেয়নি, শুধু বলেছে ধৈর্য ধরতে। সে বলবে, আগে শপিং করা হোক। জেসিকাও শেষে হাল ছেড়ে মুখ ফুলিয়ে বসেছিল৷ মিনিট খানেক অতিবাহিত হওয়ার পর তারা এসে পৌঁছায় ঢাকার ওয়েল নোন ব্রান্ড ‘প্রেম’স কালেকশন’-এর সামনে। প্রাণ গাড়ি থেকে নামতেই জেসিকাও তার পিছে পিছে নেমে পড়ে। ভিতরে ঢুকে প্রাণ নিজের মত জামা দেখতে থাকে, জেসিকাও এদিক-সেদিক ঘুরে নিজের পছন্দ অনুযায়ী প্রাণকে পরামর্শ দিতে থাকে৷ প্রায় ঘন্টাখানেক যাচাই-বাছাই করার পর প্রাণের কয়েকটা জামা মনে ধরে। সেগুলো ট্রায়াল দিয়ে নিজের ফিটিংস বুঝে একটা স্টাফকে প্যাক করতে বলে দেয় প্রাণ। সামনের সোফায় জেসিকার পাশে এসে বসতেই জেসিকা বলে উঠে, “এবার তো শপিং-ও শেষ তোর। এখন বল উপলক্ষটা কি? পেটে ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি করছে খবরটা জানার জন্য।”
প্রাণ একদম শীতল কন্ঠে বলে, “এত অধৈর্য্য হওয়ার দরকার নেই বলছি আমি।”
জেসিকা এবার তুমুল আগ্রহ নিয়ে প্রাণের পাণে তাকায়, “বল! বল!”
প্রাণ হালকা হেসে বলে, “নেক্সট উইকে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল শুরু জানিসই তো, সে সাথে এওয়ার্ড ফাংশনও আছে। তা আমার করা প্রথম মুভি ‘নীলচে তারা’ এবার বেস্ট মুভি এবং আমাকে বেস্ট অ্যাক্ট্রেস আওয়ার্ডসের জন্য নমিনেট করা হয়েছে। কালই ইমেইল এসেছে।”
জেসিকা বুদ্ধিভ্রষ্ট,বিমূড়,বিক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো প্রাণের দিকে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে বিষয়টা সে হজম করতে পারেনি। দেহভঙ্গি তার স্থির,নি’সা’ড় কিন্তু মন? পুরোই উলোটপালোট। প্রাণ জেসিকার বাহুতে হাত রেখে বলে, “কি হলো?”
জেসিকা বোধশক্তি ফিরে পেল। আঁখিপল্লব বৃহৎ আকৃতির করে তাকালো প্রাণের দিকে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, “আর ইউ ফর রিয়েল?”
প্রাণ আশ্বস্ত কন্ঠে বলে, “হ্যাঁ,সত্যি!”
সে কোন কিছুর জন্য নোমিনেট হয়নি অথচ প্রাণ দুই জায়গায় হয়ে গেল? সে তো আদৌ এসবের যোগ্য না, তাহলে কিভাবে? জেসিকার মনে এসব প্রশ্ন উঁকি দিলেও সম্মুখে বলল, “কংগ্রেস! এত ভালো খবর তুই আমাকে এখন জানালি? দ্যাট ইজ নট ফেয়ার।”
কথাগুলো একটু খুশি হওয়ার ভাণ করে বললেও ভিতরে ভিতরে রা’গ’দ্বে’ষে ফেটে পড়ছিল জেসিকা। দৃষ্টিতে প্রতিহিংসার প্রতিবিম্ব স্পষ্ট। প্রাণ সেই দৃষ্টি উপলব্ধি করতে পেরে অন্তঃকরণের আনাচ-কানাচ পরিপূর্ণ হলো অবজ্ঞায়। কেন যে আগে এই দৃষ্টির অর্থ বুঝতে পারেনি, সব তো স্বচ্ছ জলের ন্যায় পরিষ্কারই ছিল। কপটতা এই মেয়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, সত্যতার কি দেখতে পেয়েছিল সে? কিভাবে এই কয়েকটা বছর তাকে নিজের বেস্টফ্রেন্ডের মর্যাদা দিয়ে আসলো সে? কিভাবে? প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রাণ খুঁজে পায় না। লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেলে প্রাণ হেসে বলে, “নয়নকেও বলিনি এখনো,তোকেই প্রথম জানাচ্ছি।”
জেসিকা প্রাণকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আমি অনেক খুশি তোর সাকসেসের জন্য। অনেক মানে অনেক। আর এই উপলক্ষে আজকে ডিনারের ট্রিট আমার পক্ষ থেকে। চল!”
প্রাণ বলে, “আরেহ না এসবের দরকার নেই।”
জেসিকা অতি আদর্শ বান্ধুবীর ভূমিকা পালন করে বলে, “এটা কোন কথা না। তুই যাবি আমার সাথে আর এটাই ফাইনাল।”
প্রাণ দ্বিরুক্তি করলো না, রাজি হয়ে গেল জেসিকার প্রস্তাবে। ড্রেস সব চলে আসতেই প্রাণ হিসাব-নিকাশের পর্ব চুকিয়ে বেরিয়ে পড়লো জেসিকার সাথে।
_____________
“তোর শুট কেমন গেল? বললি না যে?”
ছন্দ গার্লিক ব্রেডে কামড় বসিয়ে বলে, “আমার হাতে ব্যাটের বারি না খেতে চাইলে শুটের কথা উঠাস না জিহান। নাইলে তোর যে এই হ্যান্ডসাম চেহেরা আছে না, যার উপর লক্ষ মেয়েরা ক্রাশড তার নকশাই উড়িয়ে দিব আমি।”
জিহান বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আরেহ মামা করলামটা কি? এভাবে রাগছিস কেন?”
“রাগবো না তো কি ধরে তোরে আমি চুমু দিব? কার সাথে আমাকে শুট করতে পাঠিয়েছিলি আল্লাহ জানে। আগামাথাই বুঝিই না আমি তার।”
জিহান ভ্রু কুটি কুঞ্চিত করে বলে, “কার কথা বলছিস? প্রাণের?”
ছন্দ ব্রেড দাঁতের তলায় পি’ষে বলে, “নাইলে আর কার? অদ্ভুত ক্যারেক্টর একটা। চোখের পলক ফেলতে দেরি আমার কিন্তু তার মুড চেঞ্জ করতে দেরি নেই। সে সাথে এত অ্যারোগেন্ট। দুদণ্ড যদি স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারি।”
জিহান হেসে উঠে বলে, “তুই ভুল বুঝছিস। প্রাণ এতটা অ্যারোগেন্ট না, ওর স্বভাবই এমন। একদম চুপচাপ,শান্ত। চাপা স্বভাবেরও বলতে পারিস বা ইন্ট্রোভার্ট। কাজ ব্যতীত সহজতর কথা বলতে চায় না। যদিও বা আগে মোটামুটি টুকটাক কথা বলতো, এখন তাও বলে না। কি হয়েছে কে জানে।”
ছন্দ ব্যঙ্গ করে বলল, “হ্যাঁ! হ্যাঁ! খুব ভালো!”
জিহান হেসে বলে, “বিশ্বাস কর, সত্যি ভালো। আমি কাজ করেছি ওর সাথে আমি জানবো না? অন্যসব অ্যাক্ট্রেসদের তুলনায় ওর সাথে কাজ করে শান্তি আছে। কোন প্রকার ন্যাকামি নেই ওর, ডিমান্ডও নেই। প্রচন্ড সিরিয়াস,পাংচুয়াল আর হ্যাল্পফুল। যেকোন বিষয় হোক বা তুই শুটের মাঝে কোথাও আটকে গেলে নিজ থেকে এসে হ্যাল্প করবে তোকে।”
শেষের কথাটা শুনে ছন্দ দ্বিরুক্তি করলো না। কেন না, সেই কথার সত্যতা সে নিজেও পেয়েছে। জিহান স্প্যাগেটি মুখে পুরে নিয়ে পুনরায় বলে উঠে, “ওর ব্যাপারে একটা ফান ফ্যাক্ট বলি শুনি। ডিরেক্টর নিহাল শিকদারের নাম শুনেছিস নিশ্চয়ই? প্রাণ যে তার বড় মেয়ে তা আমরা ওর ডেবিউ করার আগপর্যন্ত জানতামই না। শুধু জানতাম তার একটা ছোট মেয়ে আছে, পিউ নামের।”
ছন্দ কন্ঠ এবার বেশ কৌতূহলী শোনায়, “এটা আবার হাইড থাকল কিভাবে? আমি যতটুকু জানি এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির ইট-পাথরের খবরও পাপাজারিদের থেকে আড়াল রাখা যায় না। তারা ঠিক পাহাড় খুড়ে পিঁপড়েও বের করে ফেলে।”
“সম্ভব কিভাবে হয়েছে তা জানি না। তবে শুরু থেকেই আমি প্রাণকে নিজের প্রোফাইল লো রাখতে দেখেছি। প্রাণ সবসময় নিজের পার্সোনাল লাইফ মিডিয়া থেকে হাইড করে চলে। এমনকি ওই তোর সামনে থাকলেও বুঝতে পারবি না ও পরবর্তীতে কি করতে চলেছে। শি ইজ লাইক আ মিস্ট্রি।”
ছন্দ আনমনে বলে উঠে, “আসলেই!”
জিহান ছন্দকে বাজানোর জন্য বলে, “কি আসলেই?”
ছন্দ সম্বুদ্ধ ফেরত পেতেই হকচকিয়ে বলে উঠে, “কি আবার কি? আজাইরা প্রশ্ন করবি না তো। আর তুই মীরজাফর হলি কবে? আমার বেস্টফ্রেন্ড হয়ে ওই নায়িকার পক্ষ নিচ্ছিস মানে কি? কিছু চলছে নাকি?”
নিজেকে ফেঁসে যেতে দেখে জিহান আঁতকে উঠে, “আস্তাগফিরুল্লাহ দোস্ত! কিসব নাউজুবিল্লাহ মার্কা কথা? ওকে নিয়ে কিছু ভাবাও আমার জন্য পাপ। মিশা যদি এসব শুনে ভাই আমাকে ধরে জুতাবে। তার উপর……”
জিহান নিজের কথা শেষ করার পূর্বেই তার দৃষ্টি যায় এন্ট্রেন্সের দিকে। প্রাণকে প্রবেশ করতে দেখে সে বলে উঠে, “প্রাণ!”
সম্মোধনটা শুনে ছন্দ চোখ তুলে তাকায়। জিহানের দৃষ্টি অনুসরণ করে পিছনে তাকাতেই তুষার শুভ্রে আচ্ছাদিত রমণীর দিকে আটকে যায়। চুলগুলো উঁচু করে বাঁধা হলেও সামনের দিক চুলগুলো কাটা কপাল জুড়ে খেলা করে চলেছে। মুখশ্রীর অর্ধেক জুড়ে হালকা রঙের একটি মাস্ক পরিহিত। ছন্দ দৃষ্টি সরিয়ে সামনে তাকায়। প্রাণ আর জেসিকা খালি আসনের খোঁজে ওয়েটারের পিছু পিছু এদিকটায় আসায় জিহান বলে উঠে, “হেই প্রাণ! কেমন আছো?”
কেউ তাকে ডেকে উঠতেই প্রাণ থমকায়৷ শীতল দৃষ্টিতে পাশ ফিরে তাকায়, জিহানকে দেখতে পেয়ে সে মন্থর কন্ঠে বলে, “আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি?”
জিহান কিছু বলার পূর্বেই জেসিকা বলে উঠে, “অহ মাই গড! ফায়াজ তুরহান ছন্দ, এম আই ড্রিমিং ওর হোয়াট?”
জেসিকার উৎফুল্লে ভরা কন্ঠ শুনে প্রাণ নজর ঘুরায়। পাশেই ছন্দকে দেখতে পেয়ে দৃষ্টি সরু হয়ে আসে৷ ছন্দ হেসে বলে, “আপনি চিনেন আমায়?”
জেসিকা আপ্লূত কন্ঠে বলে, “আপনাকে কে না চিনে? ইউ আর দ্যা স্টার এন্ড প্রাইড অফ আওয়ার ন্যাশনাল টিম। লাস্ট কয়েক ম্যাচ দেখেছি আমি, দুর্দান্ত খেলেন আপনি।”
ছন্দ প্রাণের দিকে একঝলক তাকিয়ে বলে, “ধন্যবাদ।”
“একটা সেলফি নিতে পারি আপনার সাথে?”
ছন্দ এবার অস্বস্তিতে পড়ে যেন। নাকচ করার সাধ্য না থাকায় অগত্যা সে জেসিকার সাথে ছবি তুলে নিল একটা। অতঃপর জেসিকা জিহানের দিকে তাকিয়ে বলল, “সরি জিহান! তখন ছন্দকে দেখে একটু বেশি এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম তাই তোমার দিকে অ্যাটেনশন দিতে পারি নি। কিছু মনে কর না প্লিজ। তা কেমন আছো?”
প্রত্যুত্তরে জিহান হেসে বলে, “কোন সমস্যা নেই জেসিকা। আমি ভালোই আছি।”
জেসিকা একবার ছন্দের দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি আর ছন্দ একসাথে যে? তোমরা কি পূর্ব পরিচিত?”
জিহান বলে, “হ্যাঁ! আমরা দুইজন ছোটবেলার বন্ধু।”
“অহ আচ্ছা। তাই তো বলি।”
জিহান ছোট করে “হু!” বলে। ছন্দ প্রাণের উদ্দেশ্য বলে উঠে, “হ্যালো মিস. ল্যা.. প্রাণ। নাইস টু মিট ইউ এগেইন।”
প্রাণ নিজের মাস্কটা খুলে সৌজন্যমূলক হাসি ঝুলিয়ে বলে, “সেম হিয়ার।”
অতঃপর দুইজন নীরব হতেই জিহান প্রাণের দিক তাকিয়ে বলে, “ডিনার করতে এসেছ নিশ্চয়ই? ওয়ানা জ’য়ে’ন আস?”
প্রাণ সরল কন্ঠে বলে, “আজ না, অন্য আরেকদিন।”
জিহান জোর কন্ঠে বলে, “আরেহ বসো না। আই ইন্সিস্ট।”
প্রাণ কিছু বলার পূর্বেই জেসিকা বলে উঠে, “তুমি এত জোর দিয়ে বলছ তাহলে না কিভাবে করি?”
জেসিকার সম্মতি পেয়ে জিহান তাদের আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। প্রাণ বিরক্তির সহিত একবার জেসিকার দিকে তাকিয়ে আনমনে ভয়ানক কিছু শব্দ আওড়ে নিল। এতটা হ্যাং’লা স্বভাব প্রাণের একদমই পছন্দ নয়। আর অন্যের প্রাইভেসি এভাবে নষ্ট করার মানেই হয় না। জেসিকা কি কোন আক্কেল-জ্ঞান নেই নাকি? আজিব! এখন হ্যাঁ বলে দেওয়ায় প্রাণ চেয়ে কিছু বলতে পারছে না। তীব্র অস্বস্তি কাজ করা সত্ত্বেও একপ্রকার বাধ্য হয়ে তাকে তাদের সাথেই বসতে হলো। সকলেই কিছুটা ফ্রি হয়ে কথায় মশগুল হলেও প্রাণ নিস্তব্ধতা বুজিয়ে রেখে খাবার আসার পর তাতে মনোযোগী হলো। জেসিকা তো অনবরত কথা বলেই চলেছে। যদিও বা কথার ছলে নিজেকেই হাইলাইট করছে বেশি। ছন্দ খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে প্রাণের দিকে তাকাচ্ছে বার বার। এতটুকু সময় যতটুকু বুঝেছে প্রাণ আসলেই অন্তর্মুখী। পেটে বোমা ফেলেও হয়তো বা তার মুখ দিয়ে কথা বের করানো যাবে কি-না বেশ সন্দেহ।
এর মাঝে জেসিকা বলে উঠে, “ছন্দ আপনি কি মুভি,ড্রামা দেখেন না?”
ছন্দ হেসে বলে, “তেমন একটা না। সময় হয় না আসলে।”
জেসিকা বলে, “অহ আচ্ছা৷”
জিহান জিজ্ঞেস করে, “প্রাণ তুমি ক্রিকেট দেখো?”
প্রাণ কা’টা চামচ ঘোরাতে ঘোরাতে বলে, “এককালে দেখতাম আরকি৷ এখন আর দেখি না।”
জিহান স্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, “এখন না দেখার কারণ?”
প্রাণের নির্লিপ্ত কন্ঠ, “কিছু মানুষের অপগমের পাশাপাশি জীবনচরিত,অভ্যাস বদলে যায়। উপরন্তু এখন খেলাধুলা বোরিং লাগে।”
ছন্দ প্রাণের পাণে নিষ্পলক চাহনি নিক্ষেপ করে। তার বুঝতে দেরিনি প্রথম উক্তি ভাটা দিতেই দ্বিতীয় উক্তির প্রয়োগ করেছে প্রাণ। এমন নিখুঁত গুছানো-সাজানো কথা বুনার ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ ছন্দ খুব কমই দেখেছে।
এদিকে জিহান বিষয়টা ধরতে না পেরে মুখ টিপে হেসে বলে, “ন্যাশনালের টিমের ক্যাপ্টেনের সামনে বসে বলছো ক্রিকেট বোরিং লাগে। তোমার সাহস আছে মানতে হবে৷”
প্রাণ দূর্লভ হাসে তবে কিছু বলে না। এদিকে ছন্দ জিহানের দিকে রো’ষা’ন’ল দৃষ্টিতে তাকাতেই জিহান ছন্দকে খোঁ’চা মারার উদ্দেশ্যে প্রাণকে পুনরায় জিজ্ঞেস করে, “ছন্দের ম্যাচ দেখেছ কখনো?”
প্রাণ মাথা তুলে ছন্দের পাণে দৃষ্টি বুলিয়ে জিহানের দিকে তাকিয়ে বলে, “নাহ! তবে শুনেছি বেশ ভালো খেলেন তিনি।”
ছন্দ প্রাণের দিকে তাকায়। প্রাণ তখনও ভাবলেশহীন। জেসিকা মাঝ দিয়ে নিজেই বলা শুরু করে সে কত খেলা দেখে। তার জীবন কেমন,কত কাজ করে। মূলত প্রিভ্যালেজ পাওয়ার যত চেষ্টা তার। ঘন্টা খানেক পর খাওয়া শেষে প্রাণ,জেসিকা জিহান ও ছন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে পড়ে। প্রাণ যেতেই ছন্দ আনমনে বিরবির করে উঠে, “ইউ আর কুয়াইট ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার মিস. ল্যাভেন্ডার।”
____________
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ক্লান্তি ভরা শরীর নিয়ে বিছানায় এলিয়ে দেয় প্রাণ। ফোন হাতে নিয়ে কাউকে কিছু বার্তা পাঠিয়ে পাশে রেখে দেয় সে-টা। কিয়ৎক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ডেস্কটপ থেকে ল্যাপটপ নিয়ে এসে বসে সে। চৈতিকে কয়েক ইমেইল সেন্ট করতে বলেছিল সে, সেগুলোই চেক দিতে বসেছে এখন। মিনিট ত্রিশের মত অতিবাহিত হতেই আশা বেগম আসেন তার রুমে। হাতে তেলের বোতল। তিনি প্রাণের থেকে ল্যাপটপ নিয়ে বজ্রাহত কন্ঠে বলেন, “সারাক্ষণ কাজ আর কাজ। একটু তো বিশ্রাম দে নিজের শরীরকে। তুইও মানুষই, কোন যন্ত্র না।”
প্রাণ হেসে বলে, “মাঝে মধ্যে তোমার ধ’ম’ক শুনতেই এক্সট্রা কাজ করি। তোমার ধ’ম’কেও না আদুরে আদুরে ভাব আছে।”
প্রাণের কথা শুনে আশা বেগম না হেসে পারেন না। ছোট থেকেই এমন করে আসছে মেয়েটা। তিনি প্রাণের পাশে এসে বলে, “এত সুন্দর চুলের কি হাল করেছিস। যত্নশীল কবে হবি তুই নিজের প্রতি?”
প্রাণ বিরাগপূর্ণ কন্ঠে বলে, “যত্ন নিয়ে আর কি হবে যেখানে আত্মাটাই মৃ’ত।”
আশা বেগম দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলেন, “তোর জন্য নিশ্চয়ই এমন কেউ আসবে যে তোকে আবার বাঁচতে শিখাবে। যত্ন নিতে শিখাবে। দেখে নিস।”
প্রাণ তাচ্ছিল্যের সহিত বলে, “এটা রূপকথা না আশামা, বাস্তবতা। যার আনাচ-কানাচ কটপতায় ভরা।”
আশা বেগম কথা বাড়ালেন না। প্রাণকে টেনে সামনে বসিয়ে মাথায় তেলের মালিশ করে দিতে থাকলেন।
____________
বহমান স্রোতে সাথে অতিক্রান্ত হয়ে গেল দু’দিন। সায়াহ্নের সময় তখন, প্রাণ নিজের রুমে ইজি চেয়ারে বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিল। এমন সময় ঘর কাঁপিয়ে তার মুঠোফোনটি বেজে উঠে। প্রাণ একবার ফোনের উজ্জ্বল পর্দায় চোখ বুলিয়ে ফোনটা ধরে, “হ্যাঁ বল। এনি আপডেটস?”
অপরপাশ থেকে কেউ বলে উঠল, “আপনি যেমনটা ধারণা করেছিলেন ঠিক তেমনটাই হয়েছে।”
প্রাণ বোধহয় এমনই কিছু একটা শোনার আশায় ছিল। তার মানে তার চালবাজি ভুল হয়নি, শিকার ফন্দিতে ফেঁসে গিয়েছে, “ভালো তো। তা তোমার কাজ কতদূর?
“কাজ হয়ে গিয়েছে ম্যাম।”
প্রাণ বিস্তৃত হেসে বলে, “প্রুফ সব কালেক্ট করেছ না ঠিক মত?”
“অল ইজ ডান ম্যাম। আমি রাতের মধ্যেই সব আপনাকে ইমেইলে পাঠিয়ে দিব, নিশ্চিন্তে থাকুন।”
“অনেক ভালো কাজ করেছ। থ্যাংকিউ!”
“ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবেন না। এটা আমার দায়িত্ব ছিল।”
প্রাণ কিয়ৎক্ষণ সময় নিয়ে বলে,”আচ্ছা কাল এসো, সামনা-সামনি কথা হবে নে।”
“জি আচ্ছা। এখন রাখছি।”
প্রাণ কথা না বাড়িয়ে কল কেটে দেয়। ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি। সে পিছনের দিকে মাথা হেলিয়ে দিয়ে আঁখিপল্লব এক করে ফেলে। তার অপেক্ষার খুব দ্রুতই অবসান হতে চলেছে, সব মিথ্যে,ছল’নাময় সম্পর্ক থেকে এবার তার মুক্ত হওয়ার পালা।
#চলবে