#প্রাণেশ্বরী
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
#পর্ব-০৯
রহিমের কল পাওয়ামাত্র নয়ন আর জেসিকা বিচলিত হয়ে পড়ল। চোখেমুখে তাদের আ’ত’ঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। এই বুঝি তারা ধরা পড়ে গেল, সব জল্পনা-কল্পনা বুড়িগঙ্গার তীরে ভেসে গেল। অকস্মাৎ প্রাণের আগমনে কিঞ্চিৎ সময়ের জন্য দুইজন দিগ্বিদিকশূন্য হয়ে পড়লেও পরমুহূর্তে হুলুস্থুল বেঁধে যায়। জেসিকা ব্যস্ত হলো নিজের কাপড় গুছিয়ে নিতে আর নয়ন ঘর-বাড়ী গুছিয়ে ফিটফাট হতে। সব গুছিয়ে নেওয়ার পূর্বেই কলিংবেল বেজে উঠলো। নয়ন আর জেসিকা মুখ এবার হয়ে উঠল পাংশুবর্ণ। নয়ন সারা রুমে এয়ার ফ্রেশনার স্প্রে করে জেসিকাকে ব্যস্ততা দেখিয়ে বলল, “তুমি সব গুছিয়ে দ্রুত পিছনের গেট দিয়ে বেরিয়ে চলে যাও। আমি পরে যোগাযোগ করব নে তোমার সাথে।”
জেসিকা তার কথা মত পিছনের গেটের দিক যায়, নয়নও তার পিছু পিছু যায় দরজা লাগিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু সেখানে গিয়ে শত চেষ্টা করেও যখন পিছনের দরজা খোলা গেল না তখন দুইজন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো। এই দরজা তো হরহামেশা খোলাই থাকে তাহলে আজ কি হলো কে জানে? নয়ন উপায়ন্তর না পেয়ে বলে, “তুমি আমার রুমে গিয়ে কোথাও লুকিয়ে পড়। তোমাকে প্রাণ এখানে দেখলে নির্ঘাত আজ এলাহিকান্ড বেঁধে যাবে।”
জেসিকা উৎকন্ঠিত কন্ঠে বলে, “রুমে কোথায় লুকাবো আমি?”
নয়ন পারে না তো এই মাথামোটা মহিলাকে ধরে একটা আ’ছা’ড় মা’র’তে। মানে সে এখন কই লুকাবে তাও তাকেই বলে দিতে হবে? মনে তীব্র বিতৃষ্ণা নিয়ে নয়ন বলে উঠে, “জা’হা’ন্না’মে গিয়ে লুকাও, তবুও দয়া করে প্রাণের নজরে পড় না।”
কথাটা বলে নয়ন চলে যায় মূল দরজার দিকে। নয়নের কথা শুনে জেসিকা ফুঁসে উঠে কিন্তু পরিস্থিতি প্রতিকূলে দেখে দমে যায়। আপাতত আপদ কাটুক, তারপর সে বোঝাপড়া করছে নয়নের সাথে।
.
এদিকে প্রাণ একটানা কলিংবেল বাজিয়েই চলেছে। বিরতি নেওয়ার নামগন্ধ নেই, যদিও বা সে পুরোটাই ইচ্ছে করে করছে। তাড়ার মধ্যে রাখতে চাইছে ভিতরে অবস্থানরত মানুষটাকে। মিনিট কয়েক গড়িয়ে যেতেই দরজা খুলে গেল, ভেসে উঠল নয়নের ক্লান্ত,ত্রাসিত মুখমণ্ডল। তার দিকে তাকিয়ে প্রাণ চট করেই বুঝে গেল ভিতরকার অবস্থা, চুপিসারে পৈশাচিক হাসি হাসলো। তবে সে-টা নিজের অভিব্যক্তিতে প্রকাশ করতে না দিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলল, “গেট খুলতে এত সময় লাগে? কি করছিলে এতক্ষণ? দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যথা হয়ে গেল আমার।”
নয়ন নিজের কন্ঠ যথেষ্ট শান্ত রেখে বলল, “ঘুমিয়ে ছিলাম তাই প্রথমে কলিংবেল শুনতে পায়নি।”
প্রাণ স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে, “অহ আচ্ছা। এখন কি আমাকে বাহিরেই দাঁড়া করিয়ে রাখবে, ভিতরে ঢুকতে দিবে না?”
নয়ন লাফিয়ে দরজা থেকে সরে এসে বলে, “কি যে বল না, এটা তো তোমারই বাসা৷ তোমাকে ভিতরে ঢুকতে না দেওয়ার দুঃসাহসিকতা কিভাবে দেখাতে পারি আমি? গ’র্দা’ন যাবে না বুঝি আমার?”
প্রাণ মনে মনে কথাগুলো ব্যাঙ্গাত্মক করলেও, সম্মুখে স্বল্প পরিসরে হেসে ভিতরে ঢুকল। জুতা খুলে পাশে রাখার আগে আশপাশ তাকালো, জেসিকার জুতা না দেখতে পেয়ে বুঝতে পারলো নয়ন,জেসিকা একবারেই কাঁচা খেলোয়াড় না। আলগোছে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে সাবলীলভাবে এগিয়ে গেল ড্রয়িংরুমের দিকে। নয়ন দরজা লাগিয়ে দিয়ে বলল, “তা ম্যাডাম আজ হঠাৎ আমার দুয়ারে, কি মনে করে?”
প্রাণ ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, “তুমিই না সেদিন বললে আমি তোমায় এখন আর সময় দেই না,কথা বলি না। তাই আজ অবসর পেতেই চলে এলাম তোমার কাছে। কেন খুশি হওনি আমায় দেখে?”
নয়ন প্রাণের সন্নিকটে এসে বলে, “সে-টা কি আর বলতে হয়? আ’ম ওয়ে দ্যান মোর হ্যাপি টু সি ইউ মাই লাভ।”
কথাটা বলে নয়ন এগিয়ে এসে প্রাণকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করতে চাইলে প্রাণ সরে যায়। অপ্রসন্ন কন্ঠে বলে, “শুট থেকে সোজা এখানে এসেছি, ফ্রেশ হয়নি এখনো। ধুলোবালি লেগে আছে তো।”
নয়ন বুঝলো বিষয়টা, চিন্তিত মুখে বলল, “আগে বলবে না? খিদেও পেয়েছে নিশ্চয়ই? আচ্ছা, যাও আগে ফ্রেশ হয়ে নাও আমি খাবার অর্ডার করছি৷”
প্রাণ মাথা নাড়িয়ে বলে, “আচ্ছা! আমি তোমার রুমে যাচ্ছি ফ্রেশ হতে।”
জেসিকা যদি ওয়াশরুমে থাকে কথাটা ভেবে নয়ন আঁতকে উঠে বলে,”এই না!”
হঠাৎ নয়নের কন্ঠস্বর উঁচু হওয়ার কারণ প্রাণের অজানা না হলেও সে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, “না মানে?”
নয়ন নিজেকে ধাতস্থ করে মাথার পিছনে হাত গলিয়ে বলে, “আমার বাথরুমের পাইপ লাইন নষ্ট হয়ে গিয়েছে,মিস্ত্রি ডাক দিয়েছি রাতের মধ্যে এসে ঠিক করে দিয়ে যাবে। তুমি আপাতত নিচের ওয়াশরুমটা ইউস কর।”
প্রাণ কথা বাড়ালো না। ছোট করে ‘আচ্ছা’ বলে চুপচাপ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো এর মাঝে নয়নও খাবার অর্ডার দিয়ে দিল। প্রাণ বলল, “আই নিড সাম রেস্ট, তোমার রুমে যাই চল।”
নয়ন ঘাবড়ে বলে, “আমার রুমে কেন? এখানে থাকি না আমরা।”
প্রাণ সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, “হুয়াই আর ইউ এক্টিং সো স্ট্রেঞ্জ টুডে?”
নয়ন পড়লো এবার বিপাকে। এতক্ষণ ওই রুমে জেসিকা ছিল এবং এখনো আছে। গর্দভ মেয়েটা আদৌ ভালোমত লুকিয়েছে কি-না তাও তার জানা নেই এর মধ্যে প্রাণ সেই রুমে গিয়ে কিছু একটা খেয়াল করলেই তো স’র্ব’না’শ। নয়ন শুকনো গলায় ঢোক গিলে বলে, “তেমন কিছু না। আসলে..”
নয়নের কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই প্রাণ বলে উঠে, “তুমি আমাকে বল আমি চেঞ্জ হয়ে গিয়েছি কিন্তু আমি তো এখন তোমার মধ্যে চেঞ্জ দেখছি। তোমার রুমে যাওয়ার পর্যন্ত অনুমতি দিচ্ছ না? কি মন উঠে গিয়েছে বুঝি আমার উপর থেকে?”
নয়ন পরিস্থিতি হাতের নাগাল থেকে ছুটে যেতে দেখে চটজলদি বলে উঠে, “কিসব বলছ তুমি? আমার লাইফে তুমি বাদে দ্বিতীয় কোন নারী নেই আর না থাকবে। আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি আর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমাকেই ভালোবাসবো। তুমি ক্লান্ত বলে ভাবলাম সিড়ি বেয়ে আমার রুম পর্যন্ত যেতে কষ্ট হবে, তাই বলছিলাম এখানেই বসতে। আর তুমি?”
প্রাণের কথায় বেশ আ’হ’ত হয়েছে এমন ভাণ করে নয়ন মুখ ঘুরিয়ে নিল। প্রাণ নয়নের মিথ্যে বলার ধরন দেখে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। ভাবে, এরকম কত মিথ্যেই না জানি বলে তাকে ফাঁসিয়েছিল সে। সেও বোকার মত তিনটে বছর ধরে তাই বিশ্বাস করে আসছিল৷ একটা বারের জন্য বুঝতে পারে নি এসব অভিনয়।কি অদ্ভুত! প্রাণ নয়নের দিকে অনিমেষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে, “সরি! তোমায় ভুল বোঝার জন্য। তুমি তখন এভাবে বললে যে…”
নয়ন বলে, “থাক বুঝেছি আমি, নিজেকে আর এক্সপ্লেইন করতে হবে না।”
প্রাণ কিছু বলল না, শুধু নয়নের রুমের দিকে এক ঝলক তাকালো৷ নয়ন প্রাণের দৃষ্টিতে অসন্তুষ্টভাব লক্ষ করে বলে, “আচ্ছা, রুমে চল। রেস্ট দরকার তোমার।”
প্রাণ যেন এই প্রস্তাবের অপেক্ষাতেই ছিল, নয়ন বলা মাত্র কোনপ্রকার দ্বিরুক্তি না করে সে চলল উপরের দিকে। সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে বলল, “ঠান্ডা পানি থাকলে দিও তো। পিপাসা পেয়েছে প্রচুর।”
নয়ন আগেভাগে রুমে গিয়ে সব ঠিক আছে কি-না তা নিশ্চিত করার জন্য এগুতে নিচ্ছি কিন্তু প্রাণের কথা শুনে স্থির হয়ে যায়। না চাওয়া সত্ত্বেও সে ‘আচ্ছা আনছি’ বলে রান্নাঘরের দিক চলে যায়। কথায় আছে, “বিপদে পড়লে স্রষ্টাকে মনে পড়ে।” নয়নের বেলায়ও তাই পরিলক্ষিত হলো, মনে মনে আল্লাহর এর নাম আওড়ে যাচ্ছে সে অনবরত। দোয়া চাইচ্ছে জেসিকাকে যাতে ভালো মত লুকিয়ে থাকে, সে যেন কোনভাবে প্রাণের নজরে না পড়ে। রুমে যেন এমন কিছু না যা দেখে প্রাণের মনে কোনপ্রকার সন্দেহ জন্মে। আরও কত কি!
প্রাণ দূর থেকে নয়নের অভিব্যক্তি লক্ষ করে নিভৃতে তার রুমের দিক চলে গেল। নয়নের রুমে এসে চারদিকে এক ঝলক নজর বুলিয়ে দ্রুত ফোন বের করে, মিউজিক এপসে গিয়ে নিজের ফোনের রিংটোনটা প্লে করলো। অতঃপর এমন ভাব করলো যেন, কারো সাথে কথা বলছে।
এর মাঝে নয়ন পানি নিয়ে আসতেই প্রাণকে ফোনে কারো সাথে কথা বলতে দেখলো, তাই সে তাকে বিরক্ত না করে ভালোমত চারপাশ পর্যবেক্ষণ করতে ব্যস্ত হয়ে গেল। সন্দেহজনক কিছু না পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সে। বিছানায় গিয়ে বসলো আরামদায়ক ভঙ্গিতে। প্রাণ, কথা শেষ হয়ে গিয়েছে এমন অভিনয় করে ফোনটা রাখলো। অতঃপর নয়নের দিক তাকিয়ে মিষ্টি এক হাসি উপহার দিল। নয়ন তা দেখে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার এত খুশি লাগছে যে? কে ছিল ফোনে?”
“গেস হোয়াট! ডিরেক্টর রাজ সেন আমাকে তার আপকামিং মুভির জন্য কাস্ট করতে চাইছেন।”
নয়ন কপালে ভাঁজ ফেলে বলে, “কোন রাজ সেন? উশা প্রোডাকশন হাউজের ডিরেক্টর রাজ সেন?”
প্রাণ মাথা নাড়িয়ে বলে, “হ্যাঁ!”
এবার নয়নের মুখটা র’ক্ত’শূ’ণ্য দেখালেও জোরপূর্বক ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে বলল, “এতো দারুণ খবর। কংগ্রেচুলেশন!”
প্রাণ প্রচন্ড খুশি হওয়ার ভাণ করে বলে, “আমি আজ অনেক খুশি। কিন্তু….”
নয়ন কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কিন্তু কি?”
প্রাণ বিছানার একপাশে বসে বলে, “আ’ম ফিলিং ডাউন। এত বড় প্রোডাকশন হাউজ, কাজের ধারাই অন্যরকম। আমি এখন ওভাবে খাপ খায়িয়ে চলতে পারবো কি-না কে জানে? তার উপর কয়েকদিন ধরে লাগছে আমার লুকসে চেঞ্জ এসেছে, ভালো দেখাচ্ছে না আমাকে।”
বেশ মন খারাপ করেই বলল কথাগুলো প্রাণ। নয়ন কথাগুলো শুনে একজন আদর্শ বাগদত্তা হয়ে উঠার মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করল না। সে প্রাণকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য বলল, “যা তা বল না। সব জায়গায় তোমার কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে, যেকোনো জায়গায় তুমি ইজিলি ফিট হতে পারো। সে সাথে তোমার এক্টিং স্কলিসও হাই স্ট্যান্ডার্ডের। তুমি ভালো করবেই নো ডাউট। আর রইলো লুকসের কথা? তোমাকে টেক্কা দেওয়ার মত ক’জন সুন্দরীই আছে এই ঢালিউডে? ইউ নো দ্যাট ভেরি ওয়েললি, ইউ আর দি বেস্ট ফ্রম রেস্ট অফ আদারস। সো কনফিডেন্স আপ রাখো।”
প্রাণের ঠোঁটের কোণে এবার হাসি ফুটে উঠে৷ নয়নের মুখ থেকে এই কথাগুলোই শুনতে চাইছিল সে। নাহ! ভুল বলল। কথাগুলোই সে অন্য কাউকে শুনাতে চাইছিল। যা ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে৷ প্রাণ ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে রেখে বলে, “একটু বেশি বাড়িয়ে বললে না?”
নয়ন নাকচ করে বলে, “বেশি কই বললাম? আমার তো লাগলো কম বললাম, আরও বেশি বলা উচিৎ ছিল। আর দেখো না, তোমাকে নিয়ে মানুষের কত টানাটানি। এভাবেই না-কি?”
প্রাণ বুঝতে পারলো নয়ন রিসেন্ট কন্ট্রোভার্সিগুলোর কথা টেনে আনছে। জিহানের বার্থডে পার্টিতে যাওয়ার পর থেকেই এন্টারটেইনমেন্ট নিউজ রিপোর্টার এবং নেটিজেনরা এই টপিক তুলেছে যে, “তার আর জিহানের মধ্যে কোন কানেকশন আছে যা তারা হাইড করে যাচ্ছে। নাহলে প্রাণ যেখানে নিজের কাজ ব্যতীত কোন সোশ্যাল গেদারিং, ব্যাংকুয়েটে অংশ্রগহণ করে না সেখানে সে জিহানের বার্থডে পার্টিতে গিয়েছিল। ভাবার বিষয় নয় কি?”
যদিও কথার বলার সুযোগ প্রাণই দিয়েছে। জিহানের বার্থডে পার্টিতে কি সে বিনা উদ্দেশ্য গিয়েছি না-কি? প্রাণ হালকা হেসে বলে, “অহ কামন! ডোন্ট বি জেলাস। জিহান আর আমি জাস্ট ফ্রেন্ডস। আসন্ন মুভির পাবলিসিটির জন্য ক্রিউ মেমবাররা এসব নিউজ ছড়িয়েছে। যাতে জিহান আর আমি হাইলাইটে থাকি আর সবার এট্রাকশন আমাদের মুভিটার দিকে যায়।”
প্রাণের কথা শুনে নয়ন বিষয়টা আর ঘাটলো না। প্রাণও মিনিট দুই-একের মাঝে কাজের বাহানা দিয়ে চলে আসার তাগিদে উঠে দাঁড়ায়। আ’গু’নে ঘি ঢালা হয়ে গিয়েছে এখন শুধু র’ণ’ক্ষে’ত্রে যু’দ্ধ লাগার পালা। তাই এখানে আর থেকে কোন লাভ নাই। নয়নকে বুঝ দিয়ে প্রাণ লীলায়িতভাবে নয়নের বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে আসে।
.
এদিক ওয়াশরুম থেকে জেসিকা প্রাণের প্রত্যেকটা কথাই শুনেছে। প্রাণ যেতেই জেসিকা বা’ঘি’নীর মত নয়নের উপর ঝাঁ’পি’য়ে পড়ে। এক তো প্রথমে নয়ন প্রাণের জন্য তার সাথে বাজে আচরণ করেছে তারপর আবার প্রাণ ‘উশা প্রোডাকশন’ থেকে অফার পেয়েছে আর নয়নও তা শুনে তারিফের ঝুলি নিয়ে বসেছিল। তার চেয়ে বেস্ট,সুন্দরী নাকি কেউ নেই। তাহলে জেসিকা কি হ্যাঁ? ও সুন্দরী না? দক্ষতাসম্পন্ন না? এটাই বুঝাতে চেয়েছে নয়ন? এসব নিয়ে কতক্ষণ তর্কাতর্কি চলার পর জীদে জেসিকা বেরিয়ে পড়ে। নয়নের উপর এখন তার অসীমান্ত ক্ষোভ কাজ করলেও প্রাণের ‘উশা প্রোডাকশন’-এর সাথে কাজ করার বিষয়টা কোনভাবেই নিতে পারছে না। এতটুকু সে বুঝে গিয়েছে নয়ন এখন আর তেমনভাবে তাকে কোন সাহায্য করতে পারবে না। সফলতার শীর্ষে পৌঁছে দিতে পারবে না। এখন থেকে যা করার তাকে নিজেরই করতে হবে। আর যাই হোক প্রাণকে সে কখনো নিজের থেকে এগিয়ে যেতে দিবে না। প্রাণের নাম সে নিঃশেষ করেই ছাড়বে। এখন এটা যেকোন কিছুর মূল্যে হোক।
__________
নভস্থল জুড়ে তুষার শুভ্র মেঘের দা’পা’দা’পি। প্র’খ’র তাপমাত্রায় খাঁখাঁ করছে আজকের মধ্যাহ্ন। বাতাসের অভাবে ত্যক্ত,স্বেদাক্ত মানবসমাজ। আরও বিরক্তি,ভোগান্তি বাড়াতে রাস্তার আঁকে-বাঁকে লেগে আছে ঢাকার বিখ্যাত সিগন্যালের জ্যামগুলো। যেই জ্যাম ছাড়ার কথা পাঁচ মিনিটে, সেই সময়কাল বর্ধিত হতে হতে মিনিট ত্রিশ পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তবুও যানযট ছাড়ার কোন নাম গন্ধ নেই৷ এর মধ্যে যেখানে সকলের অধৈর্য্যে সীমা তুঙ্গে উঠে গিয়েছে সেখানে প্রাণ শান্ত,নিবৃত্ত। নিষ্পলক চাহনি রোদ্দুর ভেজা আকাশে। ভাবনা তার কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করছে। পাশেই বসে চৈতি প্রাণকে পর্যবেক্ষণ করছে নিভৃতে। সে ভেবে কূল পায় না এই মেয়েটা এত চুপ থাকে কিভাবে? দরকার বিহীন নূন্যতম কথা পর্যন্ত বলে না। অদ্ভুত! অনুভূতি বলে কিছু নেই নাকি তার?
চৈতি নিজের চিন্তায় যখন মশগুল তখন তার ধ্যাণ ভেঙে দিতে প্রাণ জিজ্ঞেস করে উঠে, “নেক্সট সিডিউল কি?”
চৈতি ভড়কে উঠে বলে, “ইয়েস ম্যাম?”
প্রাণ নির্লিপ্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, ” নেক্সট সিডিউল কি?”
চৈতি চেক করে বলে, “আপনার এখন একটা অ্যাডভার্টাইজমেন্ট শুট আছে, প্রোডাক্ট ডেইলি ফার্ম নিয়ে।”
“শুট কি আমি একা করছি না-কি কেউ সাথে আছে?”
চৈতি চেক করে বলে, “হ্যাঁ একজন মেল লিড আছে।”
চৈতির কন্ঠটা হঠাৎ করেই বেশ উৎফুল্ল শোনালো। প্রাণ সেদিক তেমন একটা আগ্রহ না দেখিয়ে ছোট করে বলল, “আচ্ছা।”
______
সেটে আসতেই পোশাক-আশাক পরিবর্তন করে নিল প্রাণ। নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত করে হাতে স্ক্রিপ্ট নিয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়লো সে, মন দিয়ে স্ক্রিপ্ট পড়তে থাকলো। অকস্মাৎ এক পুরুষালি কন্ঠ ঝংকার তুললো তার কর্ণকুহরে, “আরেহ! আপনি মিস. ল্যাভেন্ডার না? ওইদিন আমার সাথে সুইমিংপুলের পাশে ছিলেন যে?”
#চলবে
[কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।]