প্রাক্তন 🖤
লেখাঃ সাকিব সাদমান
পর্বঃ ০৭
বসে বসে ভাবতে ছিলাম ছায়ার বাবার কাছে খবরটা পৌঁছাবো কিনা? কিন্তু ইতিমধ্যে সেও এসে হাজির হয়। অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ যে এতকিছু জানে অবশ্যই সে নজরটা বসিয়ে রেখে গিয়েছিল।
আবারও একজন নার্স আসে আমার কাছে।
নার্স এসে আমাকে বলে ভেতরে যাওয়ার জন্য। আমি অবাক না হয়ে পারলাম না। কারণ সচারাচর বাইরের কোন লোক অপারেশন থ্রিয়েটারে এলাউড নয়।
আমি প্রশ্নটা তাকে না জিজ্ঞেস করে পারলাম না,
আমি কেন? অপারেশন থ্রিয়েটারে তো কোন লোক আপনারা ঢোকার অনুমতি দেন না? (আমি)
রুগী নিজে থেকে আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে। তা নাহলে সে অপারেশন শুরু করতে দিতেছে না। (নার্স)
আপনারা তাহলে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে অপারেশন শেষ করুন। (আমি)
আমরা কি কম চেষ্টা করেছি? কিন্তু উনি তো সব চেষ্টাই বিফলে দিয়েছেন। তার উপর উনার কন্ডিশন এতটাও ভালো নয় যে জোরজবরদস্তি করবো। তাইতো বাধ্য হয়ে আপনার কাছে আসা। (নার্স)
আমিও আর কিছু বলতে পারলাম না। সবকিছু পরিস্থিতির উপর ছেড়ে দিয়ে উনাকে বললাম চলুন,
তারপর নার্সের পেছন পেছন গিয়ে নিজের কাপড় বদলে অপারেশন রুমের কাপড় সেদিকে যেতে লাগলাম।
প্রকৃতির লীলাখেলা বড়ই অদ্ভুত। এভাবেই পাশে থাকার স্বপ্নের সংসার সাজিয়েছিলাম। তবে হয়তো সংসারটা পূরণ হয়নি বরং বাকি সবটাই আসতে আসতে পূরণ হয়ে গেল।
আমি যে তাকে এ অবস্থায় দেখতে পারছি না। কেনই বা দেখতে পারছি তাও অজানা? তবে তার জন্য মনের অনুভুতিগুলোও কেমন হারিয়ে যাচ্ছে। বার বার লিলু নিরাশা ভরা চেহারাটাই ভেসে আসছে।
ভেতরে প্রবেশের পর আমাকে দেখে ছায়া এক বুক হাসি নিয়েই হাতটা বাড়িয়ে দিল। আজ যেন ইচ্ছে করছে না ঐ হাতটা ধরার। ঘৃণা বা অভিমানের জন্য নয় বরং কোন এক অদৃশ্য কারণ।
অনিচ্ছা থাকা স্বত্তেও তার হাতটা আজ আমায় ধরতেই হলো। তার হাত ধরার পর তার মুখে যেন বিজয়ী হাসি ছিল।
আড়াই ঘন্টা অপারেশন রুমে রাখা হয়। অবস্থা অনেকটাই সিরিয়াস ছিল। বাচ্চা ও মা দু’জনের অবস্থাই সূচনীয় ছিল। তবে সময়ের পরোয়া না করে ডাক্তারগণ ঠিকই সফল হয়েছে।
ছায়ার মতোই একটি ফুটফুটে মেয়ে সন্তান হয়েছে। ছায়ার বাবা তার মেয়ের পাশে বসে আছে। এখানে আর থাকতে ইচ্ছে করতেছিলো না।
খুবই ইচ্ছে ছিল যখন ছায়া মা ও আমি বাবা হবো। তখন ছায়ার কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে ধন্যবাদ দিব ওকে। সব ইচ্ছায় পূর্ণতা হয়।
যে সকল ইচ্ছার পূর্ণতা পাওয়ার কথা নয় সেগুলোও পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে পূর্ণতা পেয়ে গেল। আমি বাড়ি চলে আসলাম।
বাড়িতে আসার পর সবাই কাল রাতের বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে আসে আমার ঘরে। অবাক হই না বরং এরকম কিছুই তাদের থেকে আশা করেছি।
বাবা ক্ষমা করে দিও। আমার মেয়েটা এমনি। আমরা তোমাকে আগে জানাইনি তার জন্য ক্ষমা করে দিও। আমরা আমাদের মেয়েকে রাজি করাবো দয়া করে তুমি না করে দিও না। (লিলুর মা)
আমার সামনে সে হাতজোড় করে কথাটা বলে। কথাটা অসহায় হয়ে পড়লে বাবা-মা এমন কদম তুলে তা আমার জানা নেই।
তবে এখন তাদের অসহায়ত্বের মায়ায় জড়ালে চলবে না। তাই চড়া গলায় বললাম,
দেখুন আমি রাজি হই বা না হই সেটা কথা নয়!! বরং বিয়ে দিবেন আমরা করবো কিন্তু আমরা কি সুখী হবো? (আমি)
বিয়ের পর সবটাই ঠিক হয়ে যাবে। প্রয়োজন শুধু একটু সময়ের। (লিলুর মা)
আপনার কথা সম্পূর্ণ যুক্তিযুক্ত। তবে লিলুর পছন্দ অন্য কেউ আমি নই। সেখানে আমার সাথে তাকে বেঁধে দেওয়া ঠিক হবে কি? (আমি)
কিহহহ!! কিন্তু এতবার করে জিজ্ঞেস করার পরও তো ও আমাদের কিছু বলেনি!! (লিলুর বাবা)
বিষয়টা শুনে অবাক হচ্ছেন। ছেলে বেকার তাই মানবেন না বলে জানায়নি। আর কালকে আমি ওদের রেজিস্ট্রি অফিসে বিয়ে দিব। (আমি)
ওররর এত বড় সাহস? ও না জানিয়েই একটা বেকার ছেলেকে বিয়ে করবে? আজকে সবকিছুর হিসাব ওর থেকে নিতেই হবে। (লিলুর বাবা)
এটা তো মানা যায় না? যে মেয়ে অতীতে কেউ আছে বলে এত বিয়ে ভেঙে দিল আজ তারই সত্যিটা এভাবে সামনে এলো? লিলুর বাবা এইবার তো তোমাকে কিছু করতেই হবে। আর তো চুপ করে থাকা যাবে না। (লিলুর মা)
দেখুন শান্ত হউন!! (আমি)
কিহহ শান্ত হব? আমাদের বাড়ির মেয়েকে পালিয়ে বিয়ে করার ব্যবস্থা করে দিকে এখন শান্ত হতে বলছো? (লিলুর বাবা)
আরেহ পুরো কথাটা তো শুনবেন। আপনাদের একটাই সমস্যা পুরো কথাটা না শুনেই ঝগড়াঝাঁটিতে লেগে পড়েন। (আমি)
গোমড়া মুখ করেই বললো,
হুম কি বলবা বলো? (লিলুর বাবা)
এই যে লিলু কেন আপনাদের কাছে কথাটি বললো না? আমার কাছ থেকে কেন আপনারা কথাটা শুনলেন সেটা কি একবারও ভেবে দেখেছেন? সে কিন্তু একটা বারের জন্যও বাসায় জানায়নি বরং না জানিয়ে পালানোর প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। (আমি)
তাতে কি বুঝাতে চাচ্ছো? (লিলুর বাবা)
কি বুঝাবো আবার? আজ যদি আমি বেকার হতাম? এত আপ্যায়ন বা সমাদর করতেন? কিন্তু আপনার মেয়েকে এতই ভয় থাকতে শিখিয়েছেন যে সে সত্যিটা প্রকাশ করতে ভয় পায়। মানা না মানা সেটা পরের বিষয়। তবে কখনো কি কোন ভুল করলে ভালো ভাবে বুঝিয়েছেন? নাকি শুধু বকাবকিই করেছেন!!! আজ তার ফল এত বড় ভুল করতে যাচ্ছে সে। (আমি)
কথাগুলো শুনে লিলুর বাবা চুপ করে থাকে। লিলুর মা বলে,
এখন আমাদের কি করা উচিত? (লিলুর মা)
চিন্তা করবেন না। ছেলেটা বিয়ে করতে আসবে না। কারণ ছেলেটাকে দেখেই বুঝেছি সে শুধু ভোগপণ্যই মনে করতো। (আমি)
কিন্তু এতটা সিউর তুই কি করে হলি? ছেলেটা যদি কোর্টে কাল আসে। (মা)
মা শুনো, আমিও একটা ছেলে। একটা মেয়ের উপর একটা ছেলে কোন নজরে কিভাবে তাকায় সেটা অবশ্যই আমার জানা রয়েছে। এতটাও অবুঝ বাচ্চা রয়ে যাইনি। (আমি)
তবুও তো!!! (মা)
সেটা নাহয় কালই দেখবে। আজ এ বিষয়ে কোন প্রকার রিয়াকশন বা কথাবার্তা যাতে নাহয়!! সব যেন আগের মতোই স্বাভাবিক হয়ে থাকে। আর আমি তো সেখানে থাকবোই চিন্তা করবেন না। (আমি)
তারপর সবকিছুই ঠিকঠাক চলতে থাকে। রাতে ছায়ার বাবা আমাকে ফোন দেয়। কিন্তু আমি ফোন ধরেনি।
রাতে ঘুমিয়ে যাই। সকালে লিলু ঢেকে তুলে। সে হয়তো ভেবেছে আমি ভুলে গেছি। তবুও আমাকে ছোট্ট করে কথাটা বলে চলে যায়।
আমিও ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে গন্তব্যে পৌঁছে যাই। আমার প্রেডিকশন যদি কোন কারণে ভুল হয় সেজন্য বিয়ের ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছি। যদি ছেলেরা সত্যিই চলে আসে।
তবে আমি যে প্রেডিকশন করেছি তাতে ছেলেটার আজ আসার কথা নয়। তবে হাঁটতে হাঁটতে পার্কে গিয়ে অবাক হয়ে যাই। ছেলেটা এসেছে। তাহলে কি আমি ভুল ছিলাম?
সকল দিক বিবেচনায় আনলে তো আজ ছেলেটার আসার কথা নয়। তবুও নিজেকে উত্তেজিত না করে শান্তভাবেই সেখানে যাই।
সেখানে গিয়ে দেখি তার সাথো ছোট্ট একটা মেয়ে রয়েছে। আপাদত বিষয়টা বুঝার চেষ্টা না করে নিরব দর্শক হয়ে দেখতে থাকি৷
ছেলেটাই নিরবতা ভেঙে লিলুকে বললো,
আমাকে ক্ষমা করে দিও। এখানে আসতে চাইনি। কিন্তু সত্যটা লুকিয়ে গেলে হয়তো অপরাধী হয়ে থাকতাম। এমনিতেও কম অপরাধ করিনি। (রিফাত)
কিছুটা অবাক হয়ে,
মানে কি বলতে চাচ্ছো? (লিলু)
আমি যা আজ বলবো!! সম্পূর্ণ স্পষ্ট ভাষায় বলবো। এই যে মেয়েটাকে দেখছো এই মেয়ে আমার কোন আত্মীয় নয় বরং আমার রক্ত। আমার নিজের মেয়ে। (রিফাত)
লিলুর বিস্ময় যেন সাত আসমানে পৌঁছে গেল।
কি বলছো এসব? (লিলু)
যা বলছি একদম সত্য বলতেছি। আমি আমার স্ত্রীকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছি। আমাদের বিয়ের আজ নয় বছর হতে চললো। আর এ হচ্ছে আমার কন্যা সন্তান ইবনাত। (রিফাত)
তাহলে আমার সাথে বিগত ছয় মাসের সম্পর্ক কে কি নাম দিবে তুমি? (লিলু)
যদি সমাজের দেয়া নাম হিসেব কর তাহলে এটাকে স্পষ্ট ভাষায় পরকীয়া বলতে পারো। আমার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট। আমার চাহিদা মেটানোর জন্য তোমাকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম কিন্তু বিষয়টা এখন অনেকটাই বদলে গিয়েছে? (রিফাত)
লিলু সরাসরি রিফাতের কলার ধরে দুটা চড় মেরে বসলো। চড় যে বেশ জোরেই মেরেছে তা এর শব্দতেই বুঝা গিয়েছে।
তুই আমাকে এত দিন শুধু তর চাহিদা পূরণের জরিয়া ভেবেছিস? আর আমি কিনা তকে নিয়ে ভালোবাসার স্বপ্ন বুনেছি। (লিলু)
অদ্ভুত তাই না? আমিও আবেগি ছিলাম। বিয়ে করেও ভোগ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আজ রাতেই ভালোবাসার মর্যাদার জন্য আমরা পালিয়েছিলাম সে কথাটি মনে পড়লো। তাকে কখনো ধোঁকা দিব না এই ওয়াদা করেছিলাম। যখন এটা মনে পড়ে গেল তখন আর তোমার সামনে আসতে চাইনি। তবে সবটা না বললেও যে আমি ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যেতাম। তাই সব সত্যটাই বলতে আজ এখানে আসা। পারলে ক্ষমা করে দিও৷ (রিফাত)
লিলু যেন বিষয়টা মেনে নিতে পারতেছিলো না। বার বার মারতেছিল রিফাতকে। কিন্তু নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে সবটাই চুপচাপ সহ্য করতেছিল।
এক পর্যায়ে এতবড় ধাক্কা সামলাতে না পেরে জ্ঞান হারায় লিলু। রিফাতের থেকে বিদায় নিয়ে আমি লিলুকে বাড়িতে নিয়ে আসি।
আসার পথে মেয়েটার মুখের দিকে তাকি ভাবতে থাকি,ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের চেহারা যতটা নিষ্পাপ হয় জাগ্রত অবস্থায় তারা এত নিষ্পাপ হয় না কেন?
তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিতেই সবাই প্রশ্নের মধ্যে আঁকড়ে ধরে। তবে তাদের সবটা বলার আগেই ফোনে একটা কল আসে।
রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে পরিচিত একটা কন্ঠ ভেসে আসে। সে আমাকে হাসপাতালে যেতে বলে।
বাড়িতে শুধু বলি ছেলেটা সব সত্য স্বীকার করেছে। তাই ধাক্কা না সামলাতে পেরে জ্ঞান হারায়।
আমি হাসপাতালে পৌঁছে যাই। ছায়ার রুমে প্রবেশের সাথে সাথেই কেউএকজন আমার গাল দুটা লাল করে দিল।
চলবে……….
বিদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।