প্রনয়ের দহন পর্ব-৬+৭+৮

0
732

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৬

গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। তীর জড়োসড়ো হয়ে ইশানের পাশের সিটে বসে আছে। কারোর মুখে কোনো কথা নেই। তীর ভেবে রেখেছিলো ইশান হয়তো ওকে একটা রাম ধমক দিবেই দিবে। কিন্তু না তীরের ভাবনা সর্ম্পূন ভুল প্রমান করে দিয়ে ইশান কিছু বলে নি। চুপচাপ সামনের দিকে তাকিয়ে এক মনে ড্রাইভ করেই যাচ্ছে। তীর বার বার আড় চোখে ইশানের দিকে তাকাছে। তীরের ঠিক হজম হচ্ছে না ইশানের শান্ত হয়ে থাকা এই রুপটা। তাই মনে মনে ইশানকে নিয়ে নানা রকম চক কষছে।

রিকশা করে বাড়িতে গেলে পাচঁ থেকে দশ মিনিটের মতো লাগে কিন্তু গাড়ি করে বাড়িতে গেলে বিশ থেকে পচিঁশ মিনিট তো নিম্নে লাগবেই। রিকশা ছোট রাস্তা দিয়ে অনায়াসেই যেতে পারে কিন্তু গাড়ি তো আর যেতে পারবে না ওই ছোট রাস্তা দিয়ে। তাই গাড়িতে প্রায় পনেরা মিনিট যাবত বসে আছে তীর আর আড় চোখে বার বার ইশানের দিকে তাকাচ্ছে।‌ এক বার আড় চোখে ইশানের দিকে তাকাতে গিয়ে ইশানের সাথে চোখাচোখি হয়ে যায় সাথে সাথে তীরের বুকটা ধক করে উঠে ভয়ে। এরপর থেকে আর সাহস পাচ্ছে না তীর ইশানের দিকে আড় চোখে তাকাতে।

হঠাৎ করেই তীরের গা গুলিয়ে উঠে, পেটটা কেমন পাকিঁয়ে উঠছে বারং বার। মনে হচ্ছে যেন পেটের ভেতরের সব কিছু বের হয়ে যাবে এক্ষুনি। তীর সাথে সাথে মুখে চেপে ধরে। কিছুতেই গলার ভেতরের খাবার গুলা আটকিয়ে রাখতে পারছে না। ইশান তীরের এমন অবস্থা দেখে চিন্তিত স্বরে বলে।

–কি হয়েছে তীর? শরীর খারাপ লাগছে।

তীর কিছু বলছে না। শুধু হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। ইশানের আর বুঝতে বাকি রইলো না তীরের কি হয়েছে। সাথে সাথে গাড়ি সাইডে করে গাড়ি থামায়। গাড়ি থামনোর পরপরেই তীর গাড়ির দরজা খুলে গাড়ি থেকে নেমে গড়গড় করে বমি করে দিলো। একটু আগে পেটে যা যা পাচার করেছিলো সব নাক, মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে। গলা জ্বলে যাচ্ছে বমি করে। ইশানও সাথে সাথে তীরের কাছে আসে তীরর এমন বেহাল অবস্থা দেখে ইশানের মন চাইছে তীরকে ঠাটিয়ে একটা চড় মারতে তাহলে যদি শিক্ষা হয় মেয়েটার। তীরের শরীর দুর্বল হয়ে আসছে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে মনে হচ্ছে এখনেই কেউ ওকে না ধরলে পড়েই যাবে ধপাস করে।

তীরের বেহাল অবস্থা দেখে ইশান তীরের বাহু ধরে ফেলে। তীরও কারোর ভরসা পেয়ে চোখ বন্ধ করে সাথে সাথে মাথাটা হেলিয়ে দেয় ইশানের বক্ষ স্থলে। ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছি তীর। কিন্তু ওদিকে কারো মনে যে ঝড় উঠে গেছে সেটা তীর বুঝতে পারছে না। তীর এতটা কাছে আসাতে ইশানের হৃদস্পন্ধ বেড়ে গেছে, ভারি হয়ে আসছে নিশ্বাসের বেগ, এই ঠান্ডার মাঝে শরীর গরম হয়ে আসছে ইশানের। ইশান নিজের আবেগ গুলা কন্ট্রোল করার জন্য চোখ বন্ধ করে জোরে কয়েক দফা শ্বাস নিয়ে দাতে দাত চেপে বলে।

–ইচ্ছে করছে তকে মাথার উপর তুলে একটা আছার মারতে তাহলে যদি তর একটু শিক্ষা হয় বেয়াদব মেয়ে।

ইশানের বলা কথাটা শুনে তীরের আভিমান হলো সাথে কষ্ট হলো ওর এই অবস্থা আর লোকটা তীরকে এভাবে বকছে। নাক, মুখ কুচকে নেয়। তীরের নাকের কাছে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ এসে বারি খাচ্ছে। ঘ্রাণের উৎস কোথায় থেকে ভেসে আসছে বুঝার জন্য তীর নিভুনিভু চোখে তাকায়। যখন বুঝতে পারে ওর মাথা ইশানের বুকে উপর সাথে সাথে তীর তড়িঘড়ি করে ছিটকে আসে ইশানের কাছ থেকে। তীরের ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে এটা ভেবে এতক্ষন ও ইশানের বুকের উপর ছিলো কি বিচ্ছির একটা কান্ড ইস!

তীর নিচের দিকে তাকিয়ে ছটফট করছে। ইশানের দিকে তাকাতে পারছে না ইশান কি ভাবছে এটা ভেবে। তীরের ভাবনা বুঝতে পেরে ইশান বলে।

–গাাড়িতে গিয়ে বস আমি পানি নিয়ে আসি।

তীর দুর্বল পায়ে হেটে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। অন্য দিকে ইশান কিছুটা দুরে থাকা একটা দোকান থেকে পানি কিনে নিয়ে আসে। ইশান গাড়িতে বসে তীরের দিকে পানির বোতলটা এগিয়ে বলে।

–চোখে মুখে একটু পানি দিয়ে নে তাহলে ভালো লাগবে।

তীরও বাধ্য মেয়ের মতো গাড়ির দরজা খুলে চোখে, মুখে পানি দিয়ে কিছুটা পানি খেয়ে নেয়। পেট পুরাই খালি যা যা খেয়েছিলো সকাল থেকে এতক্ষন পর্যন্ত সব বের হয়ে গেছে। তীর মনে মনে নিজেকে হাজারটা খালি দিয়ে ঠিক করেছে আর জীবনে এসব ছাইপাশ খাবে না। যা খেলে পেটে সয় না বরং অসুস্থ হয়ে পড়ে তা আর কোনো দিনও খাবে না মরে গেলেও মুখে তুলবে না। তীর গাড়ির দরজা বন্ধ করে দিয়ে সিটে মাথাটা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। ইশানও গাড়ি স্টার্ট দেয়, এসি বন্ধ করে দিয়ে গাড়ির গ্লাস গুলা নামিয়ে দেয় যাতে তীরের ভালো লাগে।

কিছুক্ষন পরে গাড়ি এসে থামে ফরাজী ভিলার সামনে। ইশান সিট বেল্টটা খুলে তীরের দিকে তাকাতেই দেখে তীর চোখ বন্ধ করে রেখেছে। ইশান তীরকে ডাক দেয় কিন্তু সাড়া দেয় না তীর। ইশান বুঝতে পারে তীর ঘুমিয়ে গেছে। ইশান তীরের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। ছোট ছোট চুল গুলা গালের সাথে লেপ্টে আছে মুখে পানি ঝাপ্টা দেওয়ার জন্য। ইশান হাত বাড়িয়ে তীরের গালে লেপ্টটানো চুলগুলো আলতো হাতে সরিয়ে দেয়। ক্ষেপে উঠে তীর ইশান সাথে সাথে হাতটা সরিয়ে ফেলে।

এক ধ্যানে ইশান তীরের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজেকে খুব আলোমেলো লাগছে আজ। তীরের ডান গালে দুইটা তিল আছে তিল দুইটা পাশাপাশি। খুব ইচ্ছে করছে ইশানের তিলটা দুইটা ছোঁয়ে দিতে। হাত বাড়িয়ে তিল দুইটা ছুঁয়ে দেয় বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে। তীর সাথে সাথে ভ্রু-কুচ করে ফেলে। ইশান তীরের ভ্রু-কুচকানো দেখে হেসে দেয়। ইশানের মস্তিষ্কে এখন ঘুড়ছে অন্য চিন্তা তীরের তিল দুটো ছুঁয়ে দিয়ে মন ভরে নি ইশানের ইচ্ছে করছে তিল দুইটাতে নিজের ঠোঁটের ছোঁয়ে দিতে। ইশান মুখটা তীরের মুখের দিকে এগিয়ে নিতে যাবে পরক্ষনেই কিছু একটা ভেবে নিজের ইাচ্ছাটাকে সংযত করে তীরের থেকে দুরে সরে এসে বিরবির করে।

–কন্ট্রোল ইউর সেল্ফ ইশান ফরাজী কন্ট্রোল কর নিজেকে। নিজের আবেগটাকে কন্ট্রোল কর এভাবে দুর্বল হলে চলবে না।

ইশান জোরে কয়েকটা নিশ্বাস ছেড়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে তীরদের বাড়ির গেইটের সামনে আসে। তীরকে জাগাতে ইচ্ছে করছে না ইশানের কি সুন্দর ঘুমিয়ে আছে আরাম করে। আরামের ঘুমটা নষ্ট করতে চাইছে না। তাই নিজেই গাড়ি থেকে বের হয়ে তীরের সাইডের গাড়ির দরজাটা খুলে সিট বেল্টটা খুলে তীরকে পাজাকোলে তুলে নিয়ে এক পালক তীররের দিকে তাকিয়ে বাড়ির ভেতরে ডুকে পড়ে। সদর দরজা খোলাই ছিলো তাই ইশান সোজা ঘরে ডুকে পড়ে।

অভি ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিলো তীরকে ইশানের কোলে দেখে চিৎকার করে বলে উঠে।

–ইশান ভাইয়া আপুর কি হয়েছে?

ইশান সাথে সাথে বলে উঠে।

–আস্তে অভি আস্তে তীর ঘুমাচ্ছে।

অভিও ইশানের কথা মতো আস্তে আস্তে বলে।

–কি হয়েছে আপুর?

ইশানের ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠে অভির বাচামো দেখে। ইশান আর অভির কথাবার্তা শুনে আয়েশা সুলতানা রান্না ঘর থেকে এসে ইশানের কোলে তীরকে দেখে অবাক হয়ে যায়।

–কি হয়েছে ইশান তীর তোমার কোলে কেন?

–আন্টি পরে বলছি আমি সব, আগে তীরকে ওর রুমে রেখে‌ আসি।

ইশান সোজা সিড়ি বেয়ে তীরের রুমে তীরকে শুইয়ে দিয়ে আসে। আয়েশা সুলতানাও ইশানের পিছন পিছন তীরের রুমে যায়। মেয়েটার কি হলো বুঝতে পারছে না। এই মেয়েটাকে নিয়ে খুব চিন্তায় থাকে‌ সবসময় কথা একদম শুনেই না। আয়েশা সুলতানা ইশানকে আবারও প্রশ্ন করে।

–কি হয়েছে ইশান?

–আন্টি তীর ঘুমাক এতটা চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই। আপনি নিচে চলুন আমি সব বলছি আপনাকে।

–ঠিক আছে চলো।

ইশান নিচে এসে সোফায় বসার সাথে সাথে আয়েশা সুলতানাকে বলে।

–আন্টি এক গ্লাস পানি হবে।

আয়েশা সুলতানা তাড়াতাড়ি এক গ্লাস পানি এনে ইশানকে দেয়। ইশান পানি খেয়ে বলা শুরু করে।

–আসলে আন্টি তীরের সাথে দেখা হয়েছে আমার মাঝ রাস্তায়। রাস্তার পাশের দোকানে বসে ফুচকা আর চটপট খাচ্ছিলো।

আয়েশা সুলতানা ফুচকা আর চটপট খাওয়ার কথা শুনা মাএই রেগে যান।

–কিহ ও আজকে ফুচকা আর চটপটি খেয়েছে।

–জি আন্টি আর ওকে নিয়ে গাড়িতে উঠার পরপরেই বমি করে দেয় তাই এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। বমি করাতে ভালোই হয়েছে আন্টি পেট থেকে সব বের হয়ে গেছে। আর এখন ওকে ডাকার দরকার নাই ঘুমাক। ঘুম থেকে উঠার পর কিছু খাইয়ে দিয়েন আমি বরং আসি আন্টি।

–আচ্ছা বাবা। কি বলে যে তোমাকে ধন্যবাদ দিবো আমি বুঝতে পারতাছি না আর মেয়েটা এত অবাধ্য হচ্ছে দিন দিন যা বলার বাহিরে।

–আচ্ছা আন্টি আমি আসি তাহলে।

–আচ্ছা।

ইশান বের হতে হতে অভিকে বলে।

–অভি চলো আমার সাথে তোমার আপুর ব্যাগটা নিতে হবে।

অভিও নাচতে নাচতে ইশানের পিছন পিছন যায়।

#চলবে_________

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৭

তীর পিটপিট চোখে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে কোথায় আছে। চারিপাশে ভালো করে নজর বুলিয়ে বুঝে এটা তারেই ঘর। কিন্তু পরক্ষনে কিছু একটা চিন্তা করে শুয়া থেকে তাড়াহুড়ো করে উঠে বসে বিরবির করে বলে উঠে।

–এখানে! এখানে কি করে আসলাম? আমি তো গাড়িতে ছিলাম। তাহলে আমার রুমে আসলাম কি করে?

তীরের ভাবনার মাঝেই ছোট অভি রুমে ডুকে হাতে আপেল নিয়ে। আপেল আপেল খেতে খেতে বলে।

–আপু ঘুম থেকে উঠে পড়েছো তাহলে ফ্রেস হয়ে নিচে চলো মা খেতে ডাকছে তোমায়।

তীর আনমনেই বলে উঠে।

–হুম তুই যা আমি আসছি।

–আচ্ছা।

অভি রুম থেকে বের হতে যাবে ওমনি তীর পিছন থেকে অভিকে ডেকে ওঠে।

–অভি এদিকে আয় তো।

–কি হয়েছে বলো?

তীর ঢোক গিলে বলে।

–আমি এখানে আসলাম কি করে?

–ইশান ভাইয়ার কোলে চড়ে।

–ও! কিহ? কি বলছিস কি তুই আমি ইশান ভাইয়ার কোলে উঠে এসেছি।

–হুম। ভাইয়া তোমাকে তোমার রুমে শুইয়ে দিয়ে গেছে তুমি তো তখন চিৎপঠাং হয়েছিলে তাই ভাইয়া দিয়ে গেছে।

–সত্যি কথা বলছিস তুই!

–আমি তোমার মতো মিথ্যা কথা বলি না বুঝলে। আর তাড়াতাড়ি নিচে চলো মা তোমার বারটা বাজাবে তার জন্যই অপেক্ষা করছে।

তীর বেড থেকে নামতে নামতে বলে।

–মানে আমি কি এমন করেছি যে আমাকে বারটা বাজবে মা।

–আজকে ফুচকা আর চটপটি খেয়ে এসেছো তার জন্য।

–কি? মাকে লোকটা বলে দিয়েছে এই‌ কথাটা।

–হুম।

–ঠিক আছে তুই যা।

তীর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে ব্যাগের চেইন খুলতে খুলতে বলে।

–দজ্জাল বেডা! তর ভালো হবে না দেখিস মাকে কথাটা না বললে কি এমন ক্ষতি হতো। ইচ্ছে করে এটা বলেছে আমি জানি তো যাতে মা আমাকে বকাচকা করতে পারে।

বলতে বলতে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে দেখে দশ প্লাস ফোন করেছে ইশা। কিন্তু এর মাঝে একটা মেসেজও আছে। তীর মেসেজটা ওপেন করে দেখে ইশানের নাম্বার থেকে। তীর ভ্রু-কুচকে মেসেজটা পড়া শুরু করে।

“আমি চাইলেই আন্টিকে আজকের ঘটনাটা নাই বলতে পারতাম। কিন্তু আমার মনে হয় তর একটা শিক্ষা পাওয়া দরকার তাই বলে দিলাম। যাতে ভবিষ্যতে এইসব ফালতু জিনিস গুলা খেতে খেলে দ্বিতীয় বার ভাবিস”

তীর মেসেজটা পড়ে নাক ফুলিয়ে বলে।

–শয়তান বেডা! দেখিস তর ভালো হবে না। তর বউ তকে সারা বছর এগুলা গিলিয়ে খাওয়াবে। তখন না পারবি কিছু বলতে আর না পারবি সইতে। আমার কি শিক্ষা পাওয়া দরকার তর একটা শিক্ষা পাওয়া দরকার।

তীর ইশানকে অভিশাপ দিতে দিতে ইশাকে ফোন দেয়। ইশা ফোন ধরার সাথে সাথে তীর বলে উঠে।

–এত ফোন দিয়েছিস কেন? কি হয়েছে?

–তুই কোথায়?

–বাসায় কেন?

–ভাইয়ার সাথে কি তর দেখা হয়েছিলো!

–হয়েছে আর তার কোলে চড়েই আমি বাড়িতে এসেছি।

ইশা চিৎকার করে বলে উঠে।

–কিহ? তুই ভাইয়ার কোলে উঠে বাড়িতে এসেছি। ফাজলামি করছিস তুই তীর আমার সাথে।

–ফাজলামি করার কোনো মুড নেই আমার তর সাথে।

–তাহলে কেমনে কি দোস্ত? খুলে বল সবকিছু তাড়াতাড়ি।

তীর সবটা খুলে বলে ইশাকে। ইশা সবটা শুনার পর বলে।

–কয়টা কল করেছি আমি হুম। একটাও কি ধরার ইচ্ছে হয় নি তর যদি ধরতি তাহলে এমনটা হতো না।

–সাইলেন্ট ছিলো ফোন।

–ফোন না ধরাতে ভালোই হয়েছে। তুই ভাইয়ার কোলে ভাবা যায় উফ আমি তো সিনটা কল্পনা করছি। ইস কি রোমান্টিক সিন।

–তর কাছে এটা রোমান্টিক সিন মনে হচ্ছে।

–আবার জিগায়। আচ্ছা তর ফিলিংসটা কেমন একটু বলবি আমায়।

–ইশু তুই চুপ করবি।

–আরে বোন ঠান্ডা হ। দেখ ভাইয়া তো তকে মনে মনে পছন্দ করে তাহলে ভাব ভাইয়া হয়তো তখন আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছে তকে কোলে‌ নিয়ে।

–তুই ফোন রাখ না হলে তর খবর আছে।

বলে তীরেই ফোনটা কেটে। তীরের ইশানের কোলে উঠার কথা মনে নেই ঠিকেই কিন্তু এখন খুব অস্বস্তি লাগছে কি করে এখন সামনে যাবে ইশানের।

______

আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে ইশান বুকের বা সাইডটা ডান হাত দিয়ে ধরে। ঠিক এই সাইডে আজকে তার তীর মাথা রেখেছিলো ভাবতে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠছে। যখন তীর তার বুকে মাথা রেখেছিলো তখন কতটা প্রশান্তি লেগেছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না হয়তো ইশান। এই প্রথম তীর এতটা কাছে এসেছে ইশানের। ইশান চোখ বন্ধ করেই জোরে নিশ্বাস ছেড়ে বলে।

–অচেতন অবস্থায় আজকে আমার বুকে মাথা রেখেছিস তুই তীর। কিন্তু কবে তুই নিজ ইচ্ছেতে স্বজ্ঞানে আমার বুকে মাথা রাখবি কবে? আচ্ছা সেই দিনটা কি খুব তাড়াতাড়ি আসবে নাকি আরও দেরিতে আসবে।

চোখ মেলে তাকায় ইশান। ফোনটা পকেট থেকে বের করে তীরের ছবি বের করে বলে।

–সেই দিনের অপেক্ষা করতে করতে কি আমি বুড়ো হয়ে যাবো তীর। কিন্তু আমি যদি বুড়ো হয়ে যাই তাহলে তুইও তো বুড়ি হয়ে যাবি তাই না। তখন না হয় আমি আর তুই বুড়ো বয়সেই প্রেম করবো কি বলিস।

বলেই ইশান হেসে উঠে।

_______

তীর ফ্রেস হয়ে পা টিপেটিপে সিড়ি বেয়ে নিচে নামে। চারিপাশ ভালো করে চেক করে দেখে নেয় মা কোথায় আছে। রান্না ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখে আয়েশা সুলতানা কি যেন করছে। তীর ডায়নিং টেবিলে তাকিয়ে দেখে খাবার দেওয়া আছে। তীর পা টিপেটিপে ডায়নিং টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়। ভেবে রেখেছে খাবারের প্লেট নিয়ে সোজা রুমে ডুকে যাবে মার সামনে আর পরবে না। কিন্তু তা আর হলো কই অভি চিৎকার করে বলে উঠে।

–মা আপু এসেছে।

তীর সাথে সাথে অভির কাছে গিয়ে অভির মুখ চেপে ধরে বলে।

–ভাই আমার চুপ কর।

আয়েশা সুলতানা অভির চিৎকার শুনে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। মাকে দেখার সাথে সাথে তীর অভিকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। আয়েশা সুলতানা রাগী স্বরে বলে।

–চুপচাপ খেতে বস আর আমি যেনো কোনো আওয়াজ না শুনতে পাই।

তীরও বাধ্য মেয়ের মতো চুপচাপ খেতে বসে পড়ে। খাওয়া শেষে তীর রান্না ঘরে গিয়ে মায়ের পিছনে দাঁড়িয়ে বলে।

–কি করছো মা?

আয়েশা সুলতানা থমথমে গলায় বলে।

–দেখতে পাচ্ছিস না না কি করছি।

–ও মা এভাবে কথা বলছো কেন?

–তো কি ভাবে কথা বলবো আমি তর সাথে। যে মেয়ে মা-বাবার কথা শুনে না সে মেয়ের সাথে আর কিভাবে কথা বলবো!

তীর বুঝতে পারছে তার মা যে ভীষন রাগ করে আছে। তাই মায়ের রাগ গলানোর জন্য তীর এবার মাকে জড়িয়ে ধরে।

–ও মা আর খাবো প্রমিজ।

–সর তো আর এসব প্রমিজ তুই আরও অনেক করেছিস।

–এবার কসম করে বলছি আর খাবো সত্যি বলছি। এবার একটু হাসো না মা প্লিজ একটু হাসো। মুখটা এমন গোমড়া করে রাখলে আমার ভালো না প্লিজ মা হাসো।

আয়েশা সুলতানা মেয়ের কথা শুনে হেসে বলে।

–ঠিক আছে এবারের জন্য ক্ষমা করলাম কিন্তু পরের বার।

–পরের বার কিছু বলার সুযোগ দিলে তো তোমাকে।

–ঠিক আছে যা এখন আর পড়তে বস গিয়ে পরীক্ষার তো আর দেরি নেই।

–হুম যাচ্ছি।

তীর মায়ের গালে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে চলে যায়। মনটা এবার হালকা লাগছে তীরের মায়ের রাগ কমাতে পেরে। রুমে ডুকে সোজা বারান্দায় চলে যায় তীর। তীরের বারান্দায় অনেক ধরনের ফুল গাছ আছে। সকাল বেলায় পানি দিতে পারে নাই। তাই এখন গাছ গুলাতে পানি দিবে। তাই ছটপট ওয়াশরুম থেকে মগ ভর্তি পানি নিয়ে এসে ফুলের টবে পানি দিতে থাকে। এক সময় পানি দিতে দিতে চোখ যায় সামনের বারান্দায় যেখানে ইশান দাঁড়িয়ে আছে আর ওর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। সেই এক চাওনি এই চাওনির সাথে সচারচর পরিচয় নয় তীর তবে যখনেই এভাবে ইশান ওর দিকে তাকায় তখনেই তীরের কেমন যেন করে ওঠে বুকের ভেতরটা। খুব ইচ্ছে করছে তীরের বুকটা চেপে ধরতে কিন্তু ইশানের সামনে তা পারছে না। লোকটা এখনও তাকিয়ে আছে ওর দিকে এক ধ্যানে। তীর শুকনো একটা ঢোক গিলে তাড়াহুড়ো পায়ে কোনো মতে বারান্দা থেকে চলে যায়।

তীর চলে যেতেই ইশান হেসে উঠে শব্দ করে। ইশান বেলকনিতে এসেছিল একটা ফোন করার জন্য। কিন্তু বেলকনিতে এসেই চোখ আটকে যায় তীরের দিকে। খোলা চুলগুলা বাতাসে দোল ছিলো। বার বার মুখের সামনে চলে আসা চুলগুলা হাত দিয়ে তা কানের কাছে গুজে দিচ্ছিলো তীর বিরক্ত নিয়ে। সেই মিষ্টি মুহুর্তটাই ইশান মনভরে দেখছিলো। ইশানের খুব ইচ্ছে করছিলো হাত বাড়িয়ে তীরের রেশমি চুল গুলো কানে গুজে দিতে। কিন্তু তা তো আর হওয়ার নয়। ইশানও দীর্ঘ এক নিশ্বাস ছেড়ে ফোনে কারোর সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

রুমে ডুকেই তীর বুক চেপে ধরে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে শুরু করে। আর কিছুক্ষন থাকলে হয়তো ধম আটকে মেরেই যেত ও। তীর বিছানায় ধপ করে বসে বলে।

–কি হচ্ছে এসব আমার সাথে কেন হচ্ছে? কই আগে তো এমন লাগে নি তাহলে আজকে কেন? নাহ আজ থেকে এই‌ লোকের সামনে আমি আর যাবো না।

#চলবে_______

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৮

দুই দিন যাবত তীরকে না দেখে আছে ইশান। ওইদিন বারান্দায় দেখা হওয়ার পর থেকে তীর আর ইশানের একবারও দেখা হয় নি এই দুই দিনের মাঝে। মাঝে ইশান তীরকে শুধু এক বার দেখেছিলো তাও আবার ওর মুখ নয় জাস্ট তীরের অবয়বটা। বেলকনিতে তীর আসতে নিচ্ছিলো আর তখনেই ইশানকে দেখে ঝড়ের বেগে ঘরে ডুকে পরে। সেইসময়ই তীরের অবয়বটা দেখতে পায় ইশান। তীরের দেখা পাওয়া এখন যেন দুস্কর হয়ে পড়েছে। ইশা তীরকে ডেকে আনতে গিয়েছিলো দুই তিন বার কিন্তু নানান বাহানা দিয়ে ইশাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আর কয়েকদিন পরেই তো পরীক্ষা তাই আর ইশানের কাছে এখন ও পড়তে যাবে না।

এই দুই দিন তীরকে না দেখতে পেয়ে ইশানের খুব অস্থির লাগছে। কাজে মনযোগ দিতে পারছে না ঠিক মতো। এই শীতের মাঝেও বেলকনিতে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে তীরকে এক পলক দেখার জন্য। কিন্তু মেয়েটা কিছুতেই‌ তার চোখের সামনে পড়ছে না। প্রতিনিয়ত #প্রনয়ের_দহনে পুড়ে আসচ্ছে ইশান। আর ইশান সেই দহন এত দিন তীরকে দুচোখ ভরে দেখে সহ্য করে এসেছে। কিন্তু এখন আর থাকতে পারছে না তীরকে না দেখে। এক নজর দেখার জন্য ছটফট করছে মন। তাই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে। ইশানকে এত সকালে দেখে নেহা বেগম কিছুটা চমকে যায়। ইশান অফিসে যায় সাড়ে নয়টা তাই প্রতিদিন সাড়ে আটটার দিকে উঠে কিন্তু আজ জলদি উঠাতে একটু অবাক হয় নেহা বেগম। ইশাকে খাবার দিতে দিতে জিঙ্গেস করে।

–একি ইশান এত সকালে কোথায় যাবি?

ইশান চেয়ার টেনে বসে বলে।

–অফিসে জরুরি কিছু কাজ আছে তাই আজকে আগেই যেতে হবে।

–ও তাহলে ব্রেকফাস্ট দিয়ে দিবো তকে।

–হুম।

ইশানের পাশে বসেই ইশা পরোটা ছিড়েঁ ডিম দিয়ে খাচ্ছে। ইশান গলা পরিস্কার করে বলে।

–কোচিং কয়টার সময় তোর?

–এইতো আটটায়।

ইশান হাত ঘড়িতে নজর বুলিয়ে দেখে সাড়ে সাতটা বাজতে চলল।

–আমি তদের কোচিং এর রাস্তা দিয়েই যাবো তাই তদের আজকে আমিই কোচিং এ ড্রপ করে দিয়ে যাবো। বাড়ির গাড়ি নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই।

–আচ্ছা ভাইয়া।

ইশানকে খুব অস্থির লাগছে। তাই এক গ্লাস পানি খেয়ে পুনরায় বলে।

–তীর যাবে কোচিং এ।

ইশার খুব ইচ্ছে করছে হাসতে ভাইয়ের অস্থিরতার কারন বুঝতে পেরে। কিন্তু আপতত এখন হাসা যাবে না। তাই নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে।

–হুমম যাবে।

–ঠিক আছে আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি তরা আয়।

ইশান কিছু না খেয়েই চলে যায়। নেহা বেগম ছেলের কান্ড দেখে বলে উঠে।

–ইশান বাবা না খেয়ে চলে যাচ্ছিস কেন?

ইশা খাওয়া শেষ করে হাত ধুতে ধুতে বলে।

–মা তোমার ছেলেকে ডেকে লাভ নেই সে এখন আছে অন্য চিন্তায় আর অন্য কারোর চিন্তায়।

নেহা বেগম ভ্রু-কুচকে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে।

–মানে কার চিন্তায় আছে?

–সে তুমি সময় হলে ঠিকেই জানতে পারবে। এখন আমি আসি লেইট হয়ে যাচ্ছে।

বলেই ইশা কাধে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যায়। ইশা গেইটের বাইরে গাড়ির কাছে এসে দেখে ইশান স্টিয়ারিং এর উপরে কপাল ঠেকিয়ে বসে আছে। ভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে ইশার মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে যায় সাথে রাগও উঠে তীরের উপর। মেয়েটা কেন বুঝে না তার ভাইয়ের মনের কথা। এই দুইটা দিন ইশানকে কষ্ট দিয়ে কি মজা পেয়েছে সেটা আজকে ইশা তীরের কাছ থেকে জেনেই ছাড়বে।

–ভাইয়া!

ইশান মুখ তুলে তাকায় চোখ গুলা কেমন লাল হয়ে আছে দেখেই বুঝে যাচ্ছে ঘুম হয় নি। ইশা আতংকে উঠে ইশানের লাল চোখগুলা দেখে। ইশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইশান বলে উঠে।

–এসে পরেছিস চল তাহলে।

–ভাইয়া আরেকটু অপেক্ষা করি তীর আসুক।

ইশান বিরবির করলো।

–অপেক্ষা! ওর জন্য আর কত অপেক্ষা করবো আমি?

–কিছু বললে ভাইয়া।

–কিছু না! তুই গিয়ে ওকে নিয়ে আয়।

–আচ্ছা।

ইশা কাধের ব্যাগটা গাড়িতে রেখে তীরের বাড়ির দিকে যেতে নিলেই দেখে তীর মাথায় ওড়না পেচাতে পেচাতে গেইট দিয়ে বের হচ্ছে শীতে কাপতে কাপতে। ইশাকে দেখে তীর ওর কাছে এসে বলে।

–ইশু রে! ঠান্ডায় আমি জমে যাচ্ছি। আজকে একটু বেশিই ঠান্ডা লাগছে।

–হু চল এবার! না হলে লেইট হয়ে যাবে।

–হুম।

তীর এতক্ষনে লক্ষ্য করলো একটা কালো গাড়িটা দাড়ানো। এই গাড়িটা ইশানেই ব্যবহার করে। কোনো দিন এই গাড়িতে তীরের উঠা হয় নি। ইশাদের বাড়ির গাড়ি দিয়েই ও কোচিং এ যাওয়া আসা করে। আজকে হঠাৎ এখানে অসময়ে কালো গাড়িটা দেখে তীরের ভ্রু-কুচকে আসে এটা ভেবে গাড়ির ভেতর ইশান নিশ্চয়ই থাকবে। কারন ইশান নিজের গাড়ি নিজেই চালায় কাউকে চালাতে পর্যন্ত দেয় না। তীর ঢোক গিলে ও কিছুতে ইশানের সামনে যাবে না ইশানের সামনে গেলেই ওর সব কিছু কেমন জানি আল্টপাল্ট হয়ে যায় ইদানিং। কেন হয় কিসের জন্য এমন হয় ও ঠিক বুঝতে পারছে না।

ইশা তীর এমন পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে।

–কি হলো চল?

তীর একটা মেকি হাসি দিয়ে বলে।

–দোস্ত তুই চলে যা আমি রিকশা করে যাবো।

–মানে রিকশা করে যাবি কেন এত সুন্দর আরামদায়ক গাড়ি থাকতে।

তীর কিছু বলতে যাবে তার আগেই গাড়ির ভেতর থেকে ইশানের গম্ভীর কন্ঠ ভেসে আসে।

–ইশা ওকে বল এত ভাব না ধরে গাড়িতে উঠতে। সময় ওর জন্য বসে থাকবে না।

ইশা তীরের হাত চেপে ধরে বলে।

–চল তো। ভাইয়া কি তকে খেয়ে ফেলবে নাকি যে তুই দুই দিন যাবত ভাইয়ার সামনে পড়তে চাইছিস না।

ইশা তীরকে জোর করে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও বসে। আড়চোখে এক বার তীর ইশানের দিকে তাকায়। গ্রে কালারের জ্যাকেট পরিহিত লম্বা চাওড়া, সুদর্শন লোকটাকে দেখে বুকের ভেতরটা কেমন মোছরে উঠলো। এই বুকের ভেতরের মোছরা মোছরির জন্যই তীর ইশানের সামনে পড়তে চাইছে না কিন্তু শেষ মেষ তাকে ইশানের সামনে পড়তেই হলোই। অন্য দিকে ইশান লুকিং গ্লাস দিয়ে চোখ দুটো ছোট ছোট করে তীরকে পরখ করছে। কেমন জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে একবারও মুখ তুলে তাকাচ্ছে না সামনের দিকে। ইশান ঠিক বুঝতে পারছে না তীরের মতিগতি ওই দিনের পর থেকে কেমন যেন একটা হয়ে গেছে। ইশানের ভাবনার মাঝেই ইশা বলে।

–ভাইয়া চলো।

–হুম।

ইশান গাড়ি স্টার্ট দেয় কিন্তু দৃষ্টি তার তীরের দিকে। তীক্ষ্ম চোখে লুকিং গ্লাসের মাধ্যমে তীরকে দেখে যাচ্ছে। ইশানের মাথায় এখন একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে তীর কি ওকে ইকনোর করতে চাইছে কিন্তু কেন ওর জানা মতে তীরের সাথে এমন কিছু করে নি যার জন্য এমন ইকনোর করতে পারে। আগে জানতে হবে তীরের মনে কি চলছে।

_____

গাড়ি গিয়ে থামে কোচিং সেন্টারের সামনে তীর দ্রুত বেগে গাড়ি থেকে নেমে যায়। ইশাান তীরের এমন তাড়াহুড়ো দেখে কিছুটা অবাক হয়। মেয়েটা এভাবে পালাতে চাইছে কেন সেটা ও ঠিক বুঝতে পারছে না। তীর ছয় কদম বাড়াতেই ইশান পেছন থেকে ডেকে উঠে।

–তীর!

তীরের পা জোড়া আটকে যায়! গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠে তার নামটা শুনে। কারো মুখে যে ওর নামটা এতটা মাদকাসক্ত লাগতে পারে সেটা ইশান আজকে না ডাকলে বুঝতেই পারতো না। বুকটা কেমন ধুকপুক ধুকপুক করছে। ইশান সচারচর তীরের নাম নেয় না কিন্তু আজ হঠাৎ এভাবে ডেকে উঠার কারন কি। তীরের খুব ইচ্ছে করছে ফিরে তাকাতে কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে ফিরে তাকালেই কিছু একটা অঘটন ঘটে যাবে। তাই না তাকিয়েই তীর দ্রুত কদম ফেলে কোচিং এর ভেতরে চলে যায়। ইশা তীরের এমন কান্ডে প্রচন্ড অবাক হয়ে ভাইয়ের দিকে তাকায়। ইশান বোনকে ইশারা করে কোচিং এ যেতে বলে। ইশাও চলে যায় কোচিং এর ভেতরে। ইশান আরও অনেকক্ষন গাড়িতে বসে থেকে দীর্ঘ এক নিশ্বাস ছেড়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে অফিসের দিকে যাএ শুরু করে।

#চলবে_______

বানান ভুল হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে