#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪০
দশ দিন পার হয়ে গেছে তীর আর ইশার বোর্ড পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এই দশ দিনের মাঝে ফ্রেন্ডরা মিলে ঠিক করলো একদিনের ট্যুরে যাবে কারণ রেজাল্টের পরে কে কোথায় চলে যাবে কেউ তো জানে না তাই গ্রুপের সবাই একসাথে হয়ে মজা মস্তি করবে। যেহেতু একদিনের ট্যুরে যাবে তাই সবাই মিলে ঠিক করেছে “বালিয়াটি জমিদার বাড়ি” যাবে। ঢাকা থেকে “বালিয়াটি জমিদার বাড়ি” যেতে দুই আড়াই ঘন্টার বেশি সময় লাগে। তবে জ্যামের কথা মাথায় রেখে সকাল ছয়টার দিকে সবাই রওয়ানা দিবে। তারিখও ঠিক করা হয়ে গেছে মে’র পঁচিশ তারিখে যাবে মানে আগামীকাল রাওয়ানা দিবে সবাই মিলে “বালিয়াটি জমিদার বাড়ির” উদ্দেশ্যে। এ নিয়ে মেসেঞ্জার গ্রুপে কথাবার্তা হচ্ছে সকল ফ্রেন্ডদের মাঝে কে কি পড়ে যাবে তা নিয়ে।
ট্যুরে তো আর গার্জিয়ান ছাড়া যেতে দিবে না কারোর পরিবার। তাই ইশাও “ঝোপ বুঝে কো’প’টা মে’রে দিলো” ইশানের দিকে। ইশান কথা দিয়েছিলো বোনকে যদি তীরের জন্মদিনের দিন তীরকে ওর কাছে আনতে পারে তাহলে ইশান ইশার সব কথা মানবে। সেই কথা অনুযায়ী ইশানকেও বাধ্য হয়ে রাজি হতে হলো। প্রথমে তো ইশান রাজিই ছিলো না এই ট্যুরে যাওয়া নিয়ে কিন্তু বোন যখনেই এই শর্তের কথাটা মনে করিয়ে দিলো তখন রাজি হতেই হলো।
______
সকাল সকাল নীরা আর রাহুল এসে হাজির ফরাজী বাড়িতে। দশ দিন পর এক সাথে হয়েছে সকলে তাতে সবাই হই হুল্লোড় করে সারা বাড়ি মাথায় তুলে ফেলেছে এক প্রকার। কিন্তু এসবের মাঝে রাহুল তো ভ’য়ে ভ’য়ে আছে ইশানকে নিয়ে। ইশান না জানি আবার কি বলে দেয় ওই ঘটনাটার জন্য। যখন শুনেছে ইশান যাবে সাথে সাথে তখনেই না করে দিয়েছে ও যাবে কিন্তু পরে সবার কথা শুনে আসতে বাধ্য হলো।
মোট ছয় জন যাবে এই ট্যুরে। তীর, ইশা, নীরা, রাহুল, ইশান আর রিফাত। রিফাত নিজে থেকেই যাচ্ছে। যখনেই শুনেছে ট্যুরের কথা তখনেই খুশিতে লাফিয়ে উঠেছে যেমন। ইশানও মানা করে নি রিফাতকে না যাওয়ার জন্য। পিচ্চিদের মাঝখানে ইশান একা গিয়ে কি করবে তাই রিফাতকে সঙ্গি হিসেবেই নিয়ে যাচ্ছে।
ইশান শার্টের কলার ঠিক করতে করতে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। ইশানকে দেখতে পেয়ে রাহুল নিজেকে আঁড়াল করার চেষ্টা করে। ইশানও রাহুলের অস্বস্তি টের পেয়ে ওই বিষয়ে কিচ্ছু বলে না। রাহুলকে চটপট করতে দেখে ইশা রাহুলের কানে কানে বলে।
–কিরে এমন বাইম মাছের মতো চটপট করছিস কেন??
রাহুল ঢোক গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিসিয়ে বলে।
–তোর ছোট ভাই যদি আমাকে কিছু বলে ওই বিষয়ে তাহলে কিন্তু আমি রকেটের গতিতে এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবো এই আমি বলে দিলাম। পরে আর জীবনেও আর তোর ভাইয়ের মুখো হবো না।
ইশা এই কথাটা শুনে কুনুই দিয়ে রাহুলকে গু’তো মে’রে বলে।
–চুপচাপ বসে থাক ভাইয়া কিচ্ছু বলবে না।
–যদি কিছু বলে তাহলে।
–পরেরটা পরে দেখা যাবে এখন তুই তোর মুখটা বন্ধ কর।
ওদের দুজন এমন কানে কানে কথা বলতে দেখে নীরা প্রশ্ন করে।
–কিরে তোরা দু জন কি নিয়ে কথা বলচ্ছিস।
ইশা নীরার দিকে ফিরে বলে।
–ও কিছু না। এই গাদাটাকে বোঝাচ্ছি উল্টাপাল্টা কিছু যেন না করে।
রাহুল হতভম্ব হয়ে বলে।
–কিহ আমি গাদা।
–না তুই….
ইশানের কন্ঠস্বর শুনে ইশা থেমে যায়।
–তো কেমন আছো তোমরা?
নীরা মুচকি হাসি দিয়ে বলে।
–আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া আর এখন তো আরো বেশি ভালো কারণ সবাই মিলে ট্যুরে যাবো তার জন্য।
ইশান এবার রাহুলের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে।
–তা রাহুল তুমি ভালো আছো তো।
রাহুলের ভ’য়ে কলিজা শুকিয়ে আসছে। কোনো মতে তোতলিয়ে জবাব দেয়।
–জি… জি ভাইয়া আমি ভালো আছি।
–ওকে তাহলে বেরুনো যাক সময় তো বয়ে যাচ্ছে।
ইশানের মুখে এই কথাটা শুনার সাথে সাথে রাহুল কাঁধে ব্যাগ তুলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। রাহুলের কর্মকান্ডে সবাই অবাক হয়ে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। নেহা বেগম ইশার দিকে তাকিয়ে বলে।
–কিরে ছেলেটা এভাবে চলে গেলো কেন?
–ও কিছু না মা। ও ট্যুরে যাওয়ার জন্য খুব এক্সাইটেড হয়ে আছে তো তাই এমন চটপট করছে।
–ওও আচ্ছা। শোন এই ব্যাগে আমি খাবার দিয়ে দিয়েছে ক্ষিধে পেলে খেয়ে নিবি বাইরের খাবার খাওয়ার কোনো দরকার নেই।
ইশা নাক মুখ কুচকে বলে।
–উফফ মা তুমিও না বাইরে যাচ্ছি বেড়াতে আর বাইরের খাবারেই খাবো না এটা কোনো কথা হলো।
–একদম বাইরের খাবার খাবি না। পরে অসুস্থ হলে এর দায়ভার তো আমাকেই নিতে হবে তাই বাইরের খাবার খাবি না।
কথাটা বলে ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে।
–ইশান বাবা এই বি’চ্চু গুলোকে নজরে রাখিস যেন আজেবাজে কর্মকান্ড না করে বসে।
ইশান ব্যাগটা হাতে নিয়ে বলে।
–ঠিক আছে তাহলে আসি না হলে দেরি হয়ে যাবে।
–হুম সাবধানে যাবি।
______
সবাই গাড়িতে উঠে বসেছে কিন্তু এখনো দুজন এসে পৌঁছায় নি। একজন তো এতো কাছে থেকেও লেইট করছে আরেক জন পচিঁশ মিনিটের রাস্তা আসতে এক ঘন্টা লাগিয়ে ফেলছে। ইশা ভাইয়ের রাগ বুঝতে পেরে ফোন দিয়ে যাচ্ছে তীরকে আর ইশান দিচ্ছে রিফাতকে। কিন্তু কারোর কোনো রেসপন্স নেই। ইশানের মন চাইছে এই দুটোকে সময়ের মানে ঘাড় ধরে বুঝিয়ে দিতে। তীরের গতকাল রাতে লেইট হয়ে গেছে ঘুমাতে। কি পড়ে যাবে আর ওখানে গিয়ে কি কি করবে এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে দেরিতে ঘুমিয়েছে তার জন্য এখন এই বেহাল অবস্থা। ইশান রেগে গিয়ে ইশাকে বলে।
–ইশু মহারাণীকে ডেকে নিয়ে আয়। কি এমন সাজুগুজো করছে যে এতো দেরি হচ্ছে ওর।
ইশা ভ’য় পেয়ে যায়। না জানি কখন ইশান রেগে গিয়ে বলে তদের ট্যুরে যেতে হবে না যা। ইশা মনে মনে তীরকে বকতে বকতে গাড়ি থেকে নেমে তীরদের বাড়িতে যায় সাথে নীরাও পিছু পিছু যায়। নীরা আর ইশা চলে যেতে রাহুলের মনে আবারো ভ’য় হানা দিতে শুরু করে কিন্তু ভাগ্যক্রমে ভ’য়টা বেশিক্ষন ধরে রাখতে হলো না তার আগে রিফাত এসে হাজির। রিফাত রিক্সাওয়ালা মামার ভাড়ার মিটিয়ে দিয়ে দ্রুত পায়ে ইশানের কাছে এসে বলে।
–সরি দোস্ত লেইট হয়ে গেছে রে। প্লিজ রাগ করিস না। আসলে কি বলতো যখনেই বাসা থেকে বের হতে নিবো তখনেই ইয়ে ধরে ফেলে আর ইয়ে করতে গিয়েই লেইট হয়ে গছে। এটা কি আমার দোষ বল প্রকৃতিক ডাকে সাড়া না দিয়ে কি ভাবে থাকবো আমি বল।
ইশান গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে ফোন টিপতে টিপতে বলে।
–তোর কাছে কি আমি কোনরকম কৈফিয়ত চেয়েছি!
রিফাত মেকি হাসি দিয়ে বলে।
–না তুই তো কোনো কৈফিয়ত চাস নি আমার কাছে।
–তাহলে আমাকে এসব বলছিস কেন?
–আচ্ছা বাবা আর কোনো কৈফিয়ত দিবো না তোকে। এবার চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।
–আর একজন এখনো আসার বাকি আছে।
রিফাত গাড়ির ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখে শুধু রাহুল বসে আছে আর কেউ নেই। রিফাতের চোখে চোখ মিলতে রাহুল মুচকি একটা হাসি দেয়। রিফাতও মুচকি হাসি দিয়ে ইশানের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে।
–কই একজন বাকি আরও তিন বাকি আছে তো।
–ওই একজনকেই দু জন মিলে আনতে গেছে।
রিফাত কিছুটা ভেবে বলো।
–ও আপনার জনকে আনতে গেছে বুঝি।
ইশান রিফাতকে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় চোখের সামনে হেটে আসতে থাকা তীরকে দেখে। মনে হচ্ছে যেন সদ্য ফুটা নীল পদ্ম ফুলটা তার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে। মাথায় নীল ওড়না দিয়ে ঘোমটা টানা, ঠোঁটে লাজুক হাসি। তীরের একেকটা পায়ের ধ্বনি মনে হচ্ছে যেন ইশানের বুকে ধনুকের তীরের ন্যায় বিঁধছে। ইশান জিভ দ্বারা নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে ঘাড় বেঁকিয়ে চারপাশটায় কয়েক পালক তাকিয়ে তীরের দিকে আবারও তাকায়। আজকে এই মেয়েটা মনে হয় ইশানের সকল ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিবেই দিবে নিশ্চিত।
রিফাত নিজের কাঁধ দ্বারা ইশানের কাঁধে ধাক্কা দিতেই ইশান থতমত খেয়ে রিফাতের দিকে তাকাতেই রিফাত দু ভ্রু নাচিয়ে বলে।
–কি রে এবার কে দেরি করছে?
ইশান নিজেকে সামলিয়ে বলে।
–কে দেরি করছে মানে তোরাই তো এতক্ষণ দেরি করছিলি।
–হুম হুম সেটা তো দেখতেই পারছি। আচ্ছা যাই হোক এতো কথা বলে লাভ নেই সবাই গাড়িতে উঠো।
কথাটা বলে রিফাত ইশার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বলে।
–সুন্দর লাগছে ম্যাডাম আজকে আপনাকে।
ইশা লাজুক হাসি দিয়ে ইশারা করে ধন্যবাদ জানায় রিফাতকে। এক এক করে সবাই গাড়িতে উঠে বসে। ইশানও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
#চলবে_____
#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪১
গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। ইশান ড্রাইভ করছে আর তার পাশে রিফাত। পিছনের সিটে ইশা, তীর আর নীরা। ইশা আর নীরার মাঝখানে বসেছে তীর। তিন বন্ধবী নাকে মুখে কথা বলছে মনে হচ্ছে যেন হাজার বছর ধরে তাদের মাঝে কোনো কথা হয় না। আর অন্য দিকে রাহুল বেচারা পিছনে একা বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে।
অন্যদিকে ইশান বার বার লুকিং গ্লাসের উপরে তীরের প্রতিবিম্বর দিকে তাকাচ্ছে। ইশানের বার বার লুকিং গ্লাসের দিকে তাকানোটা রিফাত খেয়াল করে জোরেই বলে উঠে।
–ইশান বাবু। চোখ দুটো সামনে রেখে গাড়িটা মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করুন না হলে যেকোনো সময় এক্সিডেন্ট হয়ে যেতে পারে। পরে আর এই জীবনেও আর দেখতে পাবেন না।
রিফাতের কথার মানে বুঝতে পেরে ইশান রাগী চোখে রিফাতের দিকে তাকায়। রিফাতও ইশানের এই চাওনির সাপেক্ষে মেকি একটা হাসি দেয়। কিন্তু গাড়ির অন্য সদস্যরা রিফাতের কথার মানেটা বুঝতে আর পারলো না।
_____
“বালিয়াটি জামিদার বাড়ি” মানিকগঞ্জ জেলা থেকে প্রায় আট কিলো মিটার দুরে সাটুরিয়া উপজেলায় বালিয়াটি গ্রামে স্থাপিত এই জমিদার বাড়ি। সাতটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা নিয়ে বালিয়াটি জামিদার বাড়ি গৌরবের সাক্ষী হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এই বালিয়াটি জামিদার বাড়ি বালিয়াটি প্যালেস নামেও পরিচিত। ঊনবিংশ শতকে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী প্রসাদের চত্বরটি প্রায় ১৬ হাজার ৫৫৪ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত। জামিদার বাড়ির প্রবেশ ফটকের দুই পাশে রয়েছে দুই সিংহের মূর্তি। জমিদার বাড়ির মুল ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই সুপ্রশস্ত সবুজের ঢাকা আঙ্গিনা চোখে পড়ে। আঙ্গিনায় গড়ে তুলা হয়েছে নানা রকমের বাহারি ফুলের বাগান। আঙ্গিনার পরপরেই পাশাপাশি রয়েছে চারটি ভবনতল। এই ভবনগুলার পেছনেই রয়েছে চারটি পুকুর আর জামিদার বাড়ির অন্দরমহল। প্রাসাদে মোট কক্ষ সংখ্যা রয়েছে ২০০ টি আর সেই প্রত্যকেটা কক্ষই নিপুণ কারুকাজের নকশা দেখা যায়।
আড়াই ঘন্টা পরে “বালিয়াটি জামিদার বাড়িতে” এসে পৌঁছায় গাড়ি। আরো আগেই চলে আসতো কিন্তু রাস্তায় জ্যামে পড়ে যাওয়ার জন্য লেইট হয়ে যায়। একে একে সবাই নেমে গেলে ইশা ঘুমন্ত তীরকে ডাকার জন্য উদ্যত হতে নিলে এর আগেই ইশান বলে উঠে।
–ওকে ডাকার দরকার নেই ও ঘুমাক।
–কিন্তু ভাইয়া আমরা সবাই চলে গেলে ও একা গাড়িতে থাকবে কি করে?
–তোরা যা আমি আছি ওর সাথে।
–আচ্ছা।
ইশা নিজের কাঁধ থেকে তীরের মাথাটা সাবধানে সরিয়ে গাড়ির সিটে রেখে দিয়ে নিজে গাড়ি থেকে নেমে যায়। ইশানের কাছ থেকে এক এক করে সবাই বিদায় নিয়ে চলে যায় জমিদার বাড়ি দেখার উদ্দেশ্যে রয়ে গেলো শুধু ইশান আর তীর। ইশান আবারও গাড়িতে উঠে আস্তে করে গাড়ির দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে তীরের পাশে বসে তীরের ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকে। সারা রাত দু চোখের পাতা এক না করার কুফল হচ্ছে তীরের এই ঘুম। ইশান মুচকি হেসে তীরের কপালে পড়ে থাকা চুলে গুলা কানে গুজে দেয়। তীরের মাথাটা সিট থেকে পড়ে যেতে নিলে ইশান সাথে সাথে ধরে নিজের কাঁধে এনে মাথাটা রাখে। ঘুমন্ত তীর কারোর অস্তিত্ব টের পেয়ে নিজেকে আরো গুটিয়ে নেয় ইশানের বুকে। তীরের এমন বাচ্চামো দেখে ইশানের ভীষণ হাসি পাচ্ছে। একটা মানুষ বেড়াতে এসে এভাবে কি করে ঘুমিয়ে পড়তে পারে বুঝে আসছে না ইশানের।
এদিকে ইশা, রিফাত, নীরা আর রাহুল নিজেদের ইচ্ছে মতো সারা রাজ বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাহুল তো ক্যামেরা দিয়ে সারা রাজবাড়ি ফ্রেম বন্দী করে নিচ্ছে। ইশান সাথে না থাকাতে যেন ইশার জন্য ভালোই হয়েছে। রিফাতকে যেভাবে বলছে সেভাবেই চলছে।
৪০ মিনিট পর তীরের ঘুম ভাঙ্গে। আবছা নয়নে চোখ মেলে তাকিয়ে বুঝে এখনো ও গাড়িতেই আছে কিন্তু গাড়ি চলছে না আর গাড়ির সামনেও কেউ নেই। পাশে ফিরে তাকাতেই তীরের চোখ কপালে উঠে যায় ইশানকে দেখে। তীর দ্রুত বেগে ইশানের কাছ থেকে দুরে সড়ে যায়। তীরের হঠাৎ এমন করাতে ইশান ভ্রু-কুচকে তীরের দিকে তাকিয়ে আছে। তীর আঁড় চোখে ইশানের দিকে তাকায়। তীরের ভীষণ অস্বস্তি লাগছে এভাবে ইশানের বুকে ঘুমিয়ে ছিলো। ছিহ! কি লজ্জার বিষয়? তীরের মাথায় হঠাৎ করেই হানা দেয় অন্যরা সবাই কোথায় কাউকে তো দেখা যাচ্ছে না? গেলো কোথায় সবাই? তীর মাথা নিচু করেই বলে।
–ওরা সবাই কোথায়?
ইশানের শীতল কন্ঠ ভেসে আসে।
–কেন ওদের দিয়ে তোর কি দরকার?
তীর এবার ইশানের দিকে ফিরে বলে।
–মানে?
–মানেটা হলো! আমি হলে কি তোর চলবে না। নাকি ওদেরকেও প্রয়োজন তোর।
তীর মাথা নুইয়ে ফেলে। কিন্তু কিচ্ছু বলছে না দেখে ইশান আবারও বলে।
–কি হলো কিছু বলচ্ছিস কেন?
ইশা জিভ দ্বারা নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে বলে।
–কি বলবো?
ইশান বাঁকা হেসে বলে।
–কিছু বলতে হবে না তোকে। নে গাড়ি থেকে নাম।
তীর চুপচাপ গাড়ি নেমে দাঁড়ায়। ইশানও গাড়ি লক করে এসে তীরের পাশে এসে তীরের হাত ধরে রাজ বাড়িতে প্রবেশ করে। ইশান চাইলেই রিফাতকে কল করে জেনে নিতে পারতো ওরা কোথায় আছে? কিন্তু ইশান চায় তার একান্ত মানুষটার সাথে একান্ত ভাবে কিছুটা সময় কাটাতে। তীর বার বার ইশানের হাতে নিজের রাখা হাতটার দিকে তাকাচ্ছে। এই হাতটা কি সারা জীবন ধরে রাখতে পারবে তো নাকি অকালেই ছেড়ে যাবে। তীর কেঁ’পে উঠে মনে মনে বলে।
–এসব কি ভাবছি আমি। এমন কিচ্ছুই হবে না।
তীরের এভাবে কেঁ’পে উঠতে দেখে ইশান হাঁটা থামিয়ে অস্থির হয়ে বলে।
–কি হয়েছে এভাবে কেঁ’পে উঠলি?
–কিছু হয় নি তো।
–তাহলে কেঁ’পে উঠলি কেন?
–এমনি।
–এমনি কেউ কেঁ’পে উঠে!
–উফফ! আপনি এতো প্রশ্ন করেন কেন বলেন তো?
–আচ্ছা ঠিক আছে আর প্রশ্ন করবো না।
বলেই হাঁটা ধরে। সারা রাজ বাড়ি ঘুরতে ঘুরতে এক পর্যায়ে গিয়ে দেখা হয় ইশাদের সাথে। তারপর সকলে মিলে এক সাথে ঘুরাফেরা করে সন্ধ্যার দিকে রওয়ানা দেয় বাড়ির উদ্দেশ্যে।
বাড়িতে এসে একেক জন জন ক্লান্ত হয়ে বেডে শরীরের লাগাতেই দু চোখের পাতায় ভিড় জমায় রাজ্যের ঘুম।
______
দেখতে দেখতে আরো একুশ দিন পার হয়ে গেছে। আর কয়েকদিন পরেই পরীক্ষার রেজাল্ট বের হবে। তীর আর ইশা ট্যুর থেকে ফিরার পরের দিন গুলো অনেক ঘুরাফেরা করেছে। ঘুরাফেরা শেষ করে তীর বাড়িতে চলে আসলেও ইশার এখনো ঘুরা শেষ হয় নি। সে এখনও নানা বাড়িতেই পরে আছে। ইশা আজকে সন্ধ্যার দিকে আসবে যখনেই শুনেছে তীর ফিরে এসেছে বাড়িতে তখনেই নিজেও বাড়িতে আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। তীর দুই দিন আগেই ফিরেছে বাড়িতে মায়ের কথা শুনে। আর বাড়িতে এসেই শুনে দু দিন পর নাকি বাড়িতে মায়ের এক বান্ধবী সপরিবারের আসবে। তারেই আয়োজন চলছে আপাতত। কিন্তু তীরের মনে সন্দেহ জাগছে তাকে তার মা কোনো কাজেই করতে দিছে না বরং বার বার বলছে বিশ্রাম করার জন্য। তীরের আর কি করার মায়ের কথা মতো নিজের ঘরে শুয়ে ফোনে ড্রামা দেখছে। ইশানের সাথে তেমন একটা কথা হচ্ছে না কয়েকদিন ধরে কারণ ইশানের কাজের প্রে’সা’র’টা একটু বেড়ে গেছে একটা ডিলের জন্য। আজকে সেই ডিলের মিটিং টা শেষ হলে ইশানের কাজের চাপটা কমবে।
তিনটার দিকে মেহমানরা আসে আহমেদ ভিলাতে। তীর নিজের ঘরে বসে ফোন টিপছে এমন সময় আয়েশা সুলতানা হাতে একটা খয়েরি রং এর কাতান শাড়ি নিয়ে তীরের ঘরে আসে। মায়ের হাতে শাড়ি দেখে তীরে ভ্রু-কুচকে বলে।
–শাড়ি দিয়ে কি করবে মা?
আয়েশা সুলতানা শাড়িটা বেডের উপরে রেখে মেয়ের মুখে দিকে তাকিয়ে বলে।
–শাড়িটা পড়ে রেডি হয়ে নিচে চলে আসো।
তীর অবাক হয়ে মাকে প্রশ্ন করে।
–মানে! আমি এখন শাড়ি পড়বো কেন?
–পড়তে বলেছি পড়ো চুপচাপ এতো প্রশ্ন না করে।
তীর কন্ঠ নিচু করে বলে।
–মা তুমি কি কোনো রকম ভাবে আমাকে পাত্রী দেখাচ্ছো তোমার বান্ধবীকে।
আয়েশা সুলতানা কিচ্ছু বলছে না দেখে তীর মার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে।
–কি হলো মা কিছু তো বলো?
–এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না আমি। তবে এটা মনে রেখো যা করছি তোমার ভালোর জন্যই করছি। হাতে বেশি সময় নেই দশ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নিচে আসো।
বলেই আয়েশা সুলতানা চলে যায়। তীর মাকে পিছু ডেকেও লাভ হলো না। তীর কি করবে এখন কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। মাথা ভার হয়ে আসছে মা যে তাকে এভাবে নানা বাড়ি থেকে এনে এমন একটা সারপ্রাইজ দিবে কল্পনাও করতে পারি নি। এবার কি হবে? ইশানকে সবটা জানতে হবে যত সম্ভব তাড়াতাড়ি। কিছু করতে পারলে ইশানেই কিছু একটা করতে পারবে।
#চলবে______
#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪২
তীর লাগাতার কল দিয়ে যাচ্ছে ইশানকে। কিন্তু ইশান বার বার কল কেটে দিচ্ছে তাতে যেন তীরের মেজাজটা আরো বিগড়ে যাচ্ছে। লোকটা কি এমন রাজকার্য করছে যে একটু কলটা ধরতে পারছে না। কিন্তু শেষমেষ ইশান নিজের ফোনটা বন্ধ করে দিলো। ইশানের ফোন বন্ধ পেয়ে তীর ধপ করে বেডে বসে বলে।
–বন্ধ করে দিলো ফোনটা আমার কলটা ধরার প্রয়োজনবোধ করলো না। এতো ব্যস্ত এতো ব্যস্ত যে একটা বারও কলটা ধরে আমার কথা শুনার সময়টুকু নেই ওনার।
তীরের মনটা বিষন্নতায় ভরে গেলো। কিচ্ছু ভালো লাগছে না কি করবে না করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। ইশাকেও ফোন দিয়েছে কিন্তু ইশার ফোন বন্ধ। তীর রে’গে বিড়বিড়িয়ে বলে উঠে।
–বিয়ে করে নিবো আমি লাগবে ওনাকে আমার। ওনি ওনার কাজ নিয়ে পড়ে থাকুক। যখন আমার বিয়ে হয়ে যাবে তখন ওনি বুঝবে।
এমন সময় আয়েশা সুলতানা মেয়ের রুমে এসে মেয়েকে এখনো তৈরি হতে না দেখে বলে।
–তীর তুই এখনো রেডি হোস নি।
তীর নিচের ঠোঁট কিছুক্ষণ কাঁমড়ে ধরে বলে।
–তুমি কি আমার বিয়ে দিয়ে দিবে মা।
মেয়ের কথা শুনে আয়েশা সুলতানা মেয়ের পাশে বসে মেয়ের মাথা হাত বুলাতে বুলাতে বলে।
–মেয়ে কূলে জন্ম নিয়েছিস মা এক দিন না এক দিন তো বিয়ে দিতেই হবে। তোকে সারা জীবন তো আর নিজের কাছে রাখতে পারবো না। তাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আয় তোকে এক নজর দেখার জন্য তোর মালিহা আন্টি অপেক্ষা করছে।
–কিন্তু মা আমি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই না।
আয়েশা সুলতানা দু ভ্রু-কুচকে বলেন।
–কেন?
–আমার পড়া এখনো শেষ হয় নি মা। সবে ইন্টার দিয়েছি।
–বিয়ের পরেও পড়াশোনা করা যায়। তাই চুপচাপ যেটা বলছি সেটা করো। কোনো রকম সমস্যা সৃষ্টি করবে না।
আয়েশা সুলতানা কথাটা বলেই চলে যান। তীর তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে রেডি হতে চলে যায়। মা যখন চাইছে তাহলে তাকে এটা করতেই হবে। তার কিচ্ছু করার নেই।
_______
একটু আগেই তীরকে ছেলের বাড়ির লোকেরা পছন্দ করে রেখে গেছে আর এটাও বলে গেছেন খুব তাড়াতাড়ি তীরকে নিজেদের ঘরের বউ করে নিয়ে যেতে চায়। ছেলে লন্ডনে থাকে আর বিয়ের পরে তীরকে নিয়েও লন্ডনে চলে যাবে। ওখানে সেটেল হয়ে যাবে তীরকে নিয়ে আর তীর পড়াশোনা ওখানে থেকেই করবে। তীর যখন এই কথাটা শুনতে পায় তখন তীরের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। তার আগোচরে এতো কিছু ঘটে গেছে আর সে টেরও পায় নি। এই বিয়েতে বাড়ির সবাই রাজি শুধু তীরের দাদু ছাড়া। কিন্তু তীরের মা তীরের দাদুকে একটা কথা বলে আটকে দিয়েছেন। তাই তীরের দাদুও বাধ্য হয়ে সবটা মেনে নিয়েছেন। তীর বিয়ে করবে না বলে চিৎকার চেঁচামেচি করেও কোনো লাভ হলো না আয়েশা সুলতানাকে মেয়েকে এদিকে বিয়ে দিয়েই ছাঁড়বে তার একটা কারণ ওনি নাকি আগে থেকেই তার বান্ধবী অভিলাকে কথা দিয়ে রেখেছেন তার ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিবেন।
তীরের পরিবারের সকল সদস্যরা ড্রয়িং রুমে বসে আছে শপলা বেগমেই সবাইকে ডেকে পাঠিয়েছেন কিছু বলার জন্য কিন্তু এসবের মাঝে তীর নেই। তীর মায়ের উপর রাগ করে দরজা বন্ধ করে কান্না করতে ব্যস্ত আছে। শাপলা বেগম আয়েশা সুলতানাকে উদ্দেশ্য করে বলেন।
–এই বিয়েতে আমার মত নেই বউমা। আমার নাতনি এখনো আইএ পাসেই করে নি আর তুমি তার বিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছো কেন?
–আম্মা বিয়ের পরেও কিন্তু পড়ালেখা করা যায়।
–কিন্তু ও এখনো ছোট।
–ও ছোট নেই আম্মা ও যথেষ্ট বড় হয়েছে। আর এই বিয়েটা আগেই থেকে ঠিক করা ছিলো সেটা আপনি জানেন আম্মা।
আজিজুল আহমেদ মায়ের পক্ষ নিয়ে বলেন।
–তুমি মেয়েটার দিকটা একটু চিন্তা করো ও এখন বিয়ে করতে চাইছে না।
–কেন বিয়ে করতে চাইছে না তোমার মেয়ে তার একটা কারণ বলুক আমাকে। আর আমার বান্ধবীর ছেলে যথেষ্ট ভদ্র একটা ছেলে এমন ছেলে প্রত্যেকটা মায়েই তার মেয়ের জন্য চায়। তাই আমি কোনো কারণ দেখতে পারছি না বিয়ে না করার তোমার মেয়ের।
–কিন্তু বউ মা।
–আম্মা আমি আর এই বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। আমি আমার মেয়ের কোনটায় ভালোটা হবে সেটা আমি ভালো করেই জানি। তাই এই বিষয়ে আর কোনো কথা না হলে আমি খুব খুশি হবো। আর তীরকে বিয়েতে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার আমি জানি আমার মেয়ে আমার কথা ফেলতে পারবে না।
শাপলা বেগম কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না। ওনি যে তার নাতনির জন্য অন্য কিছু ভেবে রেখেছিলো কিন্তু ওনার সব ভাবনায় যে তার ছেলের বউ জল টেনে দিলো। শাপলা বেগম তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন।
–ঠিক আছে বউমা তোমার যা ভালো মনে হয় তাই করো আমি আর কিছু বলবো না। তবে আমার নাতনি যেন সুখী হয়।
বলেই ওনি চলে যান নিজের ঘরে। আজিজুল আহমেদ আর কি বলবেন ওনি এই বিয়ের ব্যাপরে আগে থেকেই জানেন আর স্ত্রীর সিদ্ধান্তে আগে থেকেই রাজি।
______
ইশান রাত সাড়ে সাতটার দিকে বাড়ি ফিরে অফিস থেকে। আজকে সারাটা দিন ইশান দৌঁড়ের উপরে ছিলো ইম্পরট্যান্ট একটা ডিল নিয়ে। যেই ডিলটা কোম্পানির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিলো আর সেটাতে সাকসেসফুলও হয়েছে ইশান। এখন চিন্তা মুক্ত হয়ে বাড়িতে এসে ফ্রেস হয়ে নিচে নামতেই কিছু একটা শুনে থমকে যায় পা জোড়া আপনাআপনি। ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে ইশান নিজের কানকে এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না। সারা রাজ্যে বিস্ময়, অবিশ্বাস তার সারা মুখশ্রীতে ফুটে উঠছে। কানে বেজে চলছে এখনো আয়েশা সুলতানার বলা কথাটা “তীরের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে”। তার তীরের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তাও আবার অন্য একজনের সাথে। তীরের বিয়ে ঠিক হওয়ার কথাটা শুনে কিছু সময়ের জন্য যেন ইশানের দেহ থেকে রুহটাই উঁড়ে গেছে। বাড়িতে এসে যে এমন একটা খবর তাকে শুনতে হবে কল্পনাও করতে পারে নি। আশেপাশে কি হচ্ছে সেটার কোনো ধ্যান নেই ইশানের। কিন্ত পরক্ষণে নেহা বেগমের কথায় ধ্যান ভাঙ্গে ইশানের।
–কি বলছেন আপা তীরের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে মানে।
–আসলে আপা তীরের তো আগে থেকেই বিয়ে ঠিক করা ছিলো আমার বান্ধবীর ছেলের সাথে। ছেলে লন্ডনে থাকে আর কয়েকদিন পরেই দেশে আসবে। আর আজকে এসে তীরকে অভিলার পরিবারের সকলে দেখে গেছে তাদের পছন্দও হয়েছে তীরকে। আর ছেলে তো তীরের ছবি দেখে তীরকে ভীষণ পছন্দ করেছে।
এসব কথা ইশান যেন আর সহ্য করতে পারছে না। মাথায় মনে হচ্ছে আগুন ধরে যাচ্ছে। ইশান কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে আয়েশা সুলতানার উদ্দেশ্যে রা’গে বলে।
–আন্টি এসব কি বলছেন আপনি তীর এখনো একটা বাচ্চা মেয়ে আর আপনি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন ওর।
হঠাৎ ইশানের মুখে এমন রা’গমিশ্রিত কথা শুনে আয়েশা সুলতানা অবাক হয়ে যান। তিনি ঠিক বুঝতে পারছে না ইশানের রে’গে যাওয়ার কারণটা কি? আয়েশা সুলতানা অবাক হয়ে বলেন।
–ইশান তুমি ঠিক আছো।
–এতক্ষণ ঠিকেই ছিলাম কিন্তু আপনার কথা শুনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছি না।
নেহা বেগমের বুঝতে আর বাকি নেই ছেলের রেগে যাওয়ার কারণ। কিন্তু এখন পরিস্থিতিকে সামাল দিতে হবে না হলে বড় কোনো অঘটন ঘটে যেতে পারে। নেহা বেগম সুযোগ বুঝে ইহানকে ইশারা করে বলেন ইশানকে এই মুহূর্তে এখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য। ভাগ্যিস ইহান আজকে বাড়িতে আছে এমন সময় না হলে একা নেহা বেগম সবটা একা সামলাতে পারতেন না। ইশান আরো কিছু বলতে নিবে তার আগে ইহান বলে উঠে।
–ইশান ভাই আমার! তোর সাথে আমার ইম্পর্টেন্ট কথা আছে তাড়াতাড়ি উপরে চল।
–ভাইয়া তোমার সাথে পরে কথা বলি আগে আমি…
–আগে তুই আমার কথাটা শুন।
বলেই ইশানের হাত ধরে টানতে টানতে উপরে নিয়ে যায়। আয়েশা সুলতানা হতভম্ব হয়ে দুই ভাইয়ের কান্ডকারখানা গুলো দেখে নেহা বেগমকে বলেন।
–ব্যাপারটা কি হলো ভাবি আমি তো কিছুও বুঝতে পারলাম না।
নেহা বেগম মেকি হাসি দিয়ে বলেন।
–বাদ দেন তো ভাবি ওরা দুই ভাই এমনেই।
–কিন্তু ইশান যে তীরের বিয়ের কথাটা শুনে হঠাৎ রে’গে গেলো বিষয়টা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
— আসলে ও হঠাৎ করে তীরের বিয়ের কথাটা শুনছে তো তাই রে’গে গেছে। আপনি চা খাবেন তো দাঁড়ান আমি চা করে নিয়ে আসি।
কথাটা বলেই নেহা বেগম রান্না করে চলে যান। আর রেখে যান ভাবুক আয়েশা সুলতানাকে। আয়েশা সুলতানার কেমন জানি সন্দেহ হচ্ছে ইশানের এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে তবে কি।
_____
ইহান ইশানকে ঘরে নিয়ে আসতেই ইশান বাজখাঁই স্বরে বলে।
–কি হচ্ছেটা কি ভাইয়া এসব? তুমি আমাকে ওখান থেকে এভাবে নিয়ে আসলে কেন?
–দেখ ইশান তোকে ওখান থেকে এখানে নিয়ে এসেছি তোর ভালোর জন্যই। আমরা জানি তুই তীরকে পছন্দ করিস কিন্তু।
ইশান অবাক চোখে ইহানের দিকে তাকাতেই ইহান বলে।
–এতো অবাক হওয়ার কিচ্ছু হয় নি তুই যে তীরকে পছন্দ করিস সেটা আমরা ভালো করেই জানি। কিন্তু আয়েশা আন্টি তো আর সেটা জানেন না আর তুই যদি এখন ওনার সামনে রা’গে কোনো রকম সিনক্রিয়েট করে ফেলিস তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ তীরের বিয়ে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছেন আয়েশা আন্টি। তাই যা করতে হবে ভেবে চিন্তে করতে হবে। যাতে সাপও মরে আর লাঠিও না ভাঙ্গে।
–কিন্তু ভাইয়া।
–দেখ ইশান বিয়ে ঠিক হলেই যে তীরের বিয়ে হয়ে যাবে এমন কোনো কথা নয়। আমরা সকলে মিলে আয়েশা আন্টিকে বুঝাবো। ওনাকে বুঝালে হয়তো ওনি বুঝবে তুই বরং তীরের সাথে কথা বল।
তীরের কথাটা ইশানের মাথা থেকে একদম বেরিয়ে গিয়েছিলো এত সবের মাঝ থেকে। মেয়েটা আজকে এতো গুলা কল করেছে তার মানে এটার জন্যই নিশ্চয়ই। কিন্তু ইশান মিটিংয়ে থাকার জন্য কল ধরতে পারে নি। ইহান ইশানকে চিন্তিত দেখে ইশানের কাঁধে হালকা চাপড় মেরে ঘর থেকে চলে যায়। ইহান চলে যেতেই ইশান তড়িঘড়ি করে তীরের নাম্বারে কল দেয়। কিন্তু রিং হয়ে কেটে যায়। ইশান ক্রমাগত কল দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তীর কল ধরছে না। বরং এক পর্যায়ে তীরের ফোন বন্ধ আসে। ইশানের আর বুঝতে বাকি রইলো না তীর যে তার উপর ভীষণ ক্ষেপে আছে। কিন্তু মেয়েটা কল না ধরলে ইশান তীরের সাথে কথা বলবে কি করে? ইশানের এবার তীরের উপর ভীষণ রা’গ উঠছে সে না হয় ব্যস্ত ছিলো তার জন্য তীরের কল ধরতে পারে নি তা বলে এখন তার ফোনটা ধরবে না এতো জেদ এই পুচকে মেয়েটার।
#চলবে______