প্রনয়ের দহন পর্ব-১৩+১৪+১৫

0
716

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১৩

সন্ধ্যার দিকে মেহেন্দী অনুষ্ঠান শুরু হয়। বাড়ির সব মেয়েরা হাত ভর্তি করে মেহেদি দিয়েছে। তীরও বসেছে হাতে মেহেদি দেওয়ার জন্য। তীর যখন হাতে মেহেদি দিচ্ছিলো তখন ওর নজর যায় অদুরে বসে থাকা সিঙ্গেল সোফাতে। পায়ের উপর পা তুলে ইশান বসে আছে আর ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শান্ত চোখে। তীর সাথে সাথে ইশানের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। ইশানের চোখের দিকে তাকালেই নিজেকে কেমন জানি পাগল পাগল লাগে, বুকের ধুকপুকানিটা বেড়ে যায় দ্বিগুন। কিন্তু মন চাইছে আবার ইশানকে দেখতে কি সুন্দর পিত্ত কালারের পাঞ্জাবি পড়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। তীর একটা শুকনো ঢোক গিলে মাথা নিচু করেই আড় চোখে আবার তাকায় ইশানের দিকে। ইশান এখনও তাকিয়েই আছে ওর দিকে তীর বিরবির করে উঠে।

–এভাবে তাকিয়ে তাকায় মানে কি? আমি কি একটু দেখতে পারবো না ওনাকে। সবসময় কি ওনিই চেয়ে থাকবে আমার দিকে। আচ্ছা ইশা যা বলছে সেটা কি সত্যি। কই কখনো তো এসে বলে নি ওনি যে আমাকে পছন্দ করে বা ভালোবাসে।

আবার আড় চোখে তাকায় তীর ইশানের দিকে। ইশান তীরের আড় চোখের চাওনি ধরতে পেরে সাথে সাথে ভ্রু নাচায়। তীর থতমত খেয়ে নজর সাথে সাথে ফিরিয়ে নেয়ে। ইশান ওর আড় চোখের চাওনি ধরে ফেলেছে ইস কি লজ্জাটাই না পেলো ইশানের কাছে তীর। তাই তীর মনে মনে প্রতিক্ষা করে আর তাকাবে না ইশানের দিকে। ইশানও মুচকি হেসে চলে যায় এখানে থেকে। ইশানের আর বুঝতে বাকি নেই তীরের মনের কথা লাজুক দৃষ্টি আর আড় চোখের চাওনি বার বার বলে দিছে তীরের মনে প্রনয়ের ফুল ফুটছে বলে।

_______

তীর ছাদ থেকে নামছে। এমন সময় ইশানও দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। ইশানকে দেখা মাএই তীরের আবার শুরু হয়ে গেল বুকের ধুকপুকানি। নিজেকে শান্ত করে কাচুমাচু হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামে আস্তে ধীরে। অন্য দিকে ইশানও তীরকে দেখার সাথে সাথে থমকে দাড়ায়। তীর সিঁড়ির খালি জায়গায় আসতেই ইশান হুড়মুড়িয়ে তীরের সামনে এসে দাড়ায়। হঠাৎ ইশানের এভাবে সামনে এসে দাঁড়াতে হচকিয়ে যায় তীর। ঢোক গিলে ইশানের পাশ দিয়ে চলে যেতে নিলে ইশান আবারও তীরের পথ আটকে দাড়ায়। অন্য পাশ দিয়ে যেতে চাইলে আবারও পথ আটকে দাড়ায় ইশান। এবার তীর কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না লোকটা কেন এভাবে তার পথ আটকাছে বার বার। কেউ দেখলে কি ভাববে। ভয়ে ভয়ে আশ পাশ চোখ বুলিয়ে কাপাকাপা গলায় বলে।

–প… পথ ছাড়ুন।

ইশান নিশব্দে হাসে তীরকে জ্বালাতে ভালোই লাগছে। গলা খাকরি দিয়ে বলে।

–একটু আগে আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে ছিলি কেন?

কথাটা শুনার সাথে সাথে তীর চোখ তুলে ইশানের দিকে তাকায়। মানে লোকটা তীরের পথ এর জন্য আটকে রেখেছে। তীর এক পলক ইশানের দিকে তাকিয়ে আবার নজর নিচু করে নেয়। তটস্থ গলায় বলে।

–কখন?

–মেহেদি দেওয়া সময়।

তীর কোনো কথা খুজে পাচ্ছে না তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ইশান নিজের কোমড় বাকিঁয়ে তীরের মুখোমুখি হয় কিন্তু তীর নিচের দিকেই তাকিয়ে আছে সাহস পাচ্ছে না ইশানের দিকে তাকাতে। ইশান তীরকে কোমল কন্ঠে ডাকে।

–তীর!

আবারও সেই ডাক। যেই ডাক শুনে তীরের সারা অঙ্গপতঙ্গ কেঁপে উঠে। শ্বাস ঘন হয়ে আসছে, বুকের কাপঁনও বেড়ে যাচ্ছে, সারা শরীরের অদ্ভুদ এক শিহরন বয়ে যাচ্ছে। কথা না বলতে চাওয়া শর্তেও অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠে।

–হু!

–তাকা আমার দিকে।

তীর তাকায় না চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। এ কোন পাগলের পালায় পড়লো আগে তো এমন করতো তাহলে আজকে কেন এই‌ লোক এমন করছে। তবে কি ইশার কথাই সত্যি। না আর ভাবতে পারছে না তীর পালাতে হবে এই‌ লোকের কাছ থেকে না হলে একটা অঘটন ঘটে যাবে কিন্তু পালাবে কি করে ইশান যেভাবে সামনে দাড়িয়ে আছে। ইশানের কন্ঠ পুনরায় শুনা যায়।

–কি হলো? তাকা আমার দিকে।

তীর মিনমিন করে বলে।
–কেন?

–একটু আগে তো আড়ঁ চোখে আমাকে দেখছিলে। তাই এখন সরাসরি দেখ তর চোখের কষ্ট কম হবে। তুই আমার দিকে না তাকানো পর্যন্ত কিন্তু এখান থেকে এক পাও নড়তে পারবি না।

তীর হাসঁফাস করছে। দু হাত সমান তালে কচলিয়ে যাচ্ছে। নাহ এখানে আর বেশিক্ষন থাকা যাবে না তাই তীর যেই দৌড় দিতে যাবে ওমনি খপ করে হাত ধরে ফেলে ইশান।

–আগে আমার দিকে তাকাবি তার পর যাবি এখানে থেকে নে তাকা আমার দিকে আমার চোখের দিকে তাকা। যত তাড়াতাড়ি তাকাবি আমার দিকে তত তাড়াতাড়ি এখান থেকে যেতে পারবি।

তীর চোখ বন্ধ করে রেখেছে কি করবে ভেবে উঠতে পারছে না। ইশান ধৈর্য হারা হয়ে নিজেই তীরের চিবুক ধরে মুখটা উচু করে মাতাল চোখে তাকিয়ে নেশালো কন্ঠে বলে।

–তাকা তীর একবার তাকা‌ শুধু একবার তাকা আমার দিকে।

তীর এবার নিজের চোখের পাতা মেলে‌ তাকায়। মেলে তাকাতেই দুজনের চোখ এক সাথে মিলিত হয়। ইশানের চোখে মুখে ফুটে আছে একরাশ মুগ্ধতা, চোখে মুখে অন্যরকম এক মাদকতাও প্রকাশ পাচ্ছে ইশানের। তীরের ছোট মনটা কেপে উঠলো, অন্তরে দোলা দেয় প্রনয়ের হওয়া, তীর নিচের ঠোট জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নেয়। আর তাকিয়ে থাকতে পারছে না ইশানের এই‌ চোখের দিকে। ইশানের হাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে দ্রুত পায়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায়।

ইশানের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে। এবার হয়তো তার অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে এটা ভাবতেই বুকের মাঝে অদ্ভুত এক প্রশান্তি কাজ করছে।

______

খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ এখন হবে গান-বাজনার আসর। তার জন্য ছাদে বড় পাটি পাতা হয়েছে, ছাদের চারিদিকে লাইটিং করা। সব কাজিনরা আর বন্ধুরা পাটিতে বসেছে কিন্তু ইহান আর ইশান মিসিং। ইশা রাগে গজগজ করতে বলে।

–যার বিয়ে তার খবর নাই পাড়াপড়শির হুস নাই। বরের এখনাে আসার নামেই নাই।

রিফাত বলে।
–ইশা তুই গিয়ে ইহান ভাইয়াকে নিয়ে আয় আর আমি ইশানকে নিয়ে আসি চল।

ইশা লাজুক দৃষ্টিতে তাকায় রিফাতের দিকে। ইশা তাকাতেই রিফাত চোখ টিপ মারে। ইশা বড় বড় চোখ করে তাকায় আর রিফাত মুচকি মুচকি হাসছে। রিফাত আবারও বলে।

–কি হলো চল?

ইশা কাপাকাপা গলায় বলে।
–হু….ম চলুন।

ইশা আর রিফাত ছাদের দরজা পার হতেই রিফাত ইশার বা হাত চেপে ধরে। ইশা ছটপট করে সিঁড়ির নিচের দিকে তাকিয়ে বলে।

–কি করছেন? হাতটা ছাড়ুঁন কেউ দেখে ফেলবে তো।

–দেখবে না চলো তো।

রিফাত ইশার হাত ধরেই‌ সিঁড়ি বেয়ে নামে। শেষের সিঁড়িতে আসতেই রিফাত ইশার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে।

–যাও।

ইশা মাথা নাড়িয়ে ইহানের ঘরে চলে যায়। ইশা ইহানের ঘরে ডুকতেই দেখে ইহান কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলছে ফোনে। ইশার আর বুঝতে বাকি রইলো না কার সাথে ইহান কথা বলছে। ইশা মুচকি হেসে বলে।

–ভাইয়য়য়া! কার সাথে কথা বলছো তুমি?

ইহান ইশার আওয়াজ শুনে চমকে উঠে। সামনে ফিরে ইশাকে দেখে কলটা কেটে বলে।

–একি তুই কখন এলি?

–মাএই আসলাম আর এসে দেখি তুমি কেয়া ভাবির সাথে প্রেমলাপ করছো।

ইহান মাথা চুলকিয়ে বলে।

–তেমন কিছু না।

–সে যেমন কিছুই হোক তুমি এখন চলো তো।

–কোথায়?

–কোথায় মানে? ছাদে যাবে ওখানে গান বাজনা হবে তোমার কি মনে নাই।

–ইসরে ভুলে গেছিলাম। তুই যা আমি এখনেই আসছি।

–তাড়াতাড়ি আসবে কিন্তু না হলে কিন্তু ভালো হবে না।

–আচ্ছা বাবা যা আসছি।

_____

রিফাত ইশানের ঘরে ডুকে দেখে ইশান রকিং চেয়ারে মাথা হেলিয়ে দিয়ে কপালে দু আঙ্গুল চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।

–কিরে ব্যাটা এভাবে বসে আছিস কেন?

রিফাতের কন্ঠস্বর শুনে ইশান চোখ মেলে তাকিয়ে সোজা হয়ে বসে বলে।

–এমনি!

রিফাত বেডে বসতে বসতে বলে।

–এমনি মানে কি? কিছু কি হয়েছে?

ইশান চুল গুলা নিজের হাত দ্বারা বেকব্রাশ করে বলে।

–কিছু হয় নি আমি ঠিক আছে।

–কিছু একটা তো হয়েছে তর আমি নিশ্চিত।

–কিছু হয় নি! চল তো।

ইশান আর রিফাত ছাদে যাওয়ার উদ্দেশ্য পা বাড়ায়। ছাদে আসার সাথে সাথে ইশানের নজর যায় তীরের দিকে। কেমন হেসে হেসে কথা বলছে সাবার সাথে আর মাঝে মাঝে বাতাসে দোল খাওয়া ছোট চুল গুলো কানে গুজে দিচ্ছে। খুব মায়াবী লাগছে মেয়েটাকে আজকে। চাঁদের আলো আর ছাদের লাইটিং করা আলো মুখের উপর পড়াতে খুব আবেদনময়ী লাগছে। ইশানের হাত নিশপিশ করছে তীরকে ছোঁয়ার জন্য, বুকের গতি বেড়ে দ্বিগুন হয়ে গেছে। জোরে শ্বাস নিয়ে মনে মনে বিরবির করে উঠে।

–এভাবে কেন নিজেকে আমার সামনে প্রেজেন্ট করছিস তীর? আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি না। তোকে খুব ছোঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। আচ্ছা তকে গভীর ভাবে ছোঁয়ে দিলে কি রাগ করবি।

এর মাঝে ইশার নজর যায় ইশানের দিকে ইশানকে দেখার সাথে সাথে বলে।

–এইতো ভাইয়া চলে এসেছে। ভাইয়া এসো তাড়াতাড়ি এসে বসো তোমার জন্য এতক্ষন অপেক্ষা করছিলাম।

ইশান নিজের কল্পনা জগত থেকে ফিরে আসে। তীর ইশানের দিকে এক নজর তাকিয়ে অন্য দিকে চোখ ঘুরিয়ে নেয়। কিছুক্ষন আগের ঘটনাটা মনে পড়তেই লজ্জা গাল দুটো লাল হয়ে আসছে। বারবার ইশানের মাদকতায় ভরা চোখ দুটো ভেসে উঠছে।

ইশা বসা থেকে উঠে এসে ইশানের হাত ধরে এনে তীরের মুখোমুখি বসিয়ে দিয়ে বলে।

–এবার ইশান ভাইয়া গান গাইবে?

সবাই ইশার গলায় তাল মিলিয়ে বলে।

–হে হে এবার ইশান ভাইয়া গান গাইবে।

ইশান তীরের দিকে তাকায় দেখার জন্য তীর কি বলে। কিন্তু তীর নিচ দিকে তাকিয়ে আছে। রিফাত ইশানের কোলে গিটারটা দিয়ে বলে।

–নে তাড়াতাড়ি শুরু কর আর চাইলে কাউকে ডেডিকেট করেও গাইতে পারিস।

ইশান পক্ষান্তরে একটা মুচকি হাসি দেয়। সেই হাসিটা তীর আড় চোখে দেখে। কিন্তু মাথায় ঘুড়ছে এখন রিফাতের বলা কথাটা এখানে কাকে ডেডিকেট করার কথা বলছে।

ইশান গিটার হাতে নিয়ে মাথা নত করে বাজানো শুরু করলো। গিটারের টুং টুং শব্দ ভেসে আসছে। তীর এবার চোখ তুলে তাকায় ইশানের দিকে মনে মনে অনেক এক্সাইটেড হয়ে আছে। এই প্রথম ইশানের গলায় গান শুনতে পাবে ভেবে বুকের ভেতরের ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে। মুহুর্তের মাঝেই পরিবেশ নিস্তদ্ধে পরিনত হয়েছে। সেই নিস্তদ্ধেতার পরিবেশর মাঝ থেকে ভেসে আসে গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠ।

“তুই হাসলি যখন
তোরই হলো এ মন
তুই ছুঁলি যখন
তোরই হলো এ মন

দু’চোখে আঁকছে শীত
বাহারি ডাকটিকিট
দু’চোখে আঁকলো শীত
বাহারি ডাকটিকিট
আলসে রোদের চিঠি পাঠালো পিয়ন

তুই ছুঁলি যখন
তোরই হলো এ মন
তুই হাসলি যখন
তোরই হলো এ মন”

#চলবে________

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১৪

আজ ইহান আর কেয়া’র বিয়ে। “ফরাজী” ভিলার চারিদিকে মানুষজন গমগম করছে আত্মীয় স্বজন আর পাড়া প্রতিবেশি দিয়ে। ছোট ছোট বাচ্চাদের চেঁচামেচির আওয়াজ, গানের আওয়াজ ভেসে বেড়াছে চারিদিক।

লিনা জেদ ধরেছে ইশান যে গাড়ি করে যাবে ও সেই গাড়িতে যাবে। কিন্তু তীর যখন থেকে জেনেছে লিনা ইশানকে পছন্দ করে তখন থেকেই প্ল্যান করে যাচ্ছে লিনাকে কি করে ইশানের কাছ থেকে দুরে দুরে রাখা যায়। মেয়েটা একটু বেশিই বেহায়াগিরি করে ইশানের সাথে। যা তীর মোটেও পছন্দ করছে না। তাই ইশা আর তীর লিনার ব্রেন ওয়াস করে অন্য গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছে। গাড়িটা যেতেই ইশা হাফ ছেড়ে বলে।

–উফফ! আপদ বিদায় হয়েছে।

–আপদ তো বিদায় হলো কিন্তু তর ভাই কই এখনো আসে না কেন? নাকি মেয়েদের মতো সাজুগুজো করতে ব্যস্ত এখনও।

ইশা তীরকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে।

–কি ব্যাপার দোস্ত! ভাইয়াকে চোখ হারাছিস যেন।

তীর আমতা আমতা করে বলে।

–তর ভাইকে চোখে হারাতে বয়ে গেছে আমার।

–হুম বুঝি বুঝি প্রেমের জ্বালা বড় জ্বালা।

–একদম বাজে কথা বলবি না।

এর মাঝেই ইহান গাড়ির ভেতর থেকে বলে উঠে।

–কি রে উঠছিস না কেন তরা?

ইশা বলে।
–ইশান ভাইয়া আসুক তারপর উঠছি।

এমন সময় তীরের চোখ যায় ইশানের দিকে ব্যস্ত পায়ে হেটে আসছে এদিকটাই হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে। ইশান যত তাড়াতাড়ি পায়ের ধাপ পেরিয়ে তীরের কাছে আসছে তত তীরের হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে ক্রমাগত।‌ কালো শার্ট, কালো কোর্ট, কালো প্যান্ট পরিহিত লোকটাকে একটু বেশিই হ্যান্ডসাম লাগছে। তীরের মনে হচ্ছে এই কালো রঙটা ইশানের জন্যই তৈরি হয়েছে। সবকিছু কালো হওয়াতে ফর্সা মুখশ্রীটা ফুটে উঠেছে। মসৃণ চুল গুলা কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ফর্সা গালে খোচাঁ খোচাঁ দাড়ি, গোলাপি রাঙা ঠোট। কেমন ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে তীর ইশানের দিকে। লোকটাকে ইদানিং তীরের কাছে একটু বেশিই সুদর্শন লাগছে। এটা কি লোকটার প্রেমের পড়ার জন্য নাকি লোকটা আগেই থেকেই সুদর্শন ছিলো। হয়তো মানুষ যার প্রেমে পড়ে তাকে পৃথিবীর সব মানুষের থেকেই একটু বেশিই সুন্দর লাগে। তীর লাজুক হেসে ইশানের দিকে থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়। গতকাল রাতের ঘটনাটা মনে পড়তে কান গরম হয়ে এলো তীরের। গতকাল রাতে ইশান যতক্ষন গান খেয়েছে ততক্ষন ওর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে ছিলো। তীরের কি হলো কে জানে ও ইশানের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে ছিলে। এখন লজ্জায় মন চাইছে মাটির নিচে চলে যেতে ইশানের দিকে বেহায়াত মতো তাকিয়ে তাকার জন্য। কিন্তু তীরের এখনও মন চাইছে সামনে থাকা সুদর্শন লোকটার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকতে কিন্তু কিছুটা লজ্জা, ভয় নিয়ে তাকিয়ে থাকা যেন মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর তার সাথে তো আছেই ইশানের মারাত্মক চাওনি। যে চাওনিতে তীর বার বার ঘায়েল হয়।

ইশান তীরকে দেখা মাএই ভ্রু-কুচকে নেয়। এতো সাজুগুজো করার মানে কি ভেবে পাচ্ছে না ইশান। তীরকে নিচ থেকে উপর পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নেয়। তীরের গায়ে ইশানের দেওয়া লেহেঙ্গাটা, হাতে চুড়ি, গাঢ় লিপস্টিক, গাঢ় কাজল, লম্বা চুল গুলা ছেড়ে দেওয়া আর তা বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে দোল খাচ্ছে তাতে কোনো অপ্সরার থেকে কম লাগছে না। হঠাৎ করেই রেগে যায় ইশান রাগে মাথা টগবক করছে তীরের এত ভারী সাজ দেখে। তার প্রিয়তমার এই সাজ শুধু সে দেখবে একান্তই সে দেখবে কিন্তু এখন বাইরের সবাই এই ভয়ংকর সুন্দর সাজ দেখছে। ইশান মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছে না কারন এখনও যে মুখ ফুটে কিছু বলার অধিকার পায় নি সে। তাই দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

–গাড়িতে উঠ তাড়াতাড়ি এভাবে দাড়িয়ে সো ওফ না করলেও চলবে।

তীর ইশানের এমন রাগী মিশ্রিত স্বরে শুনে বিচলিত হয়ে পড়ে। মনে মনে ভাবে লোকটা কি রেগে আছে কোনো কারনে কিন্তু কি কারনে। তীর আড় চোখে ইশানের দিকে তাকায় চোখ, মুখ শক্ত করে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। তীরের মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো এত সুন্দর করে সাজলো ও আর লোকটা কিনা তাকালো না পর্যন্ত।

তীর আর ইশা গাড়িতে উঠার সাথে সাথে ইশান ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে আর পাশে ইহান বসে আছে বর বেঁশে। ইশান ছোট থেকে একটা কথা বলতো “ভাইয়া যখন বিয়ে করে আমার জন্য ভাবি আনতে যাবে তখন আমি গাড়ি চালিয়ে ভাইয়াকে নিয়ে যাবো ভাবির বাড়িতে”। আর আজকে সেই কথাটা বাস্তবে রুপান্তরিত করতে নিজে ড্রাইভ করে ভাইকে নিয়ে যাবে ভাইয়ের শশুড় বাড়িতে। ইশান গাড়ি স্টার্ট দিবে ঠিক এমন সময় তীর বলে উঠে।

–ইশু রে কানের দুলের ভারে কানের লতি ব্যাথা করছে হালকা।

–লেহেঙ্গার সাথে বড় দুলেই পড়তে হয় না হলে ভালো লাগবে না একটু সহ্য করে।

তীরের কথা কর্নপাত হওয়ার সাথে সাথে চকিতে চমকায় ইশান। গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার পরির্বতে গাড়ি থেকে হুড়মুড়িয়ে নেমে যায়। ইশানের এমন ভাবে গাড়ি থেকে নামাতে সবাই আবাক চোখে ইশানের দিকে তাকায়। ইশান গাড়ি থেকে বের হয়ে দৌঁড় লাগালো। ইহান গাড়ি থেকে মাথা বের করে চিৎকার করে বলে।

–ইশান কি হলোটা কি তর?

ইশান দৌড়াতে দৌড়াতে চিৎকার করে বলে।

–ভাইয়া আমি এক মিনিটে আসছি একটু বসো।

ইহান তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে।

–ছেলেটার হলোটা কি?

তীর আর ইশা এক জন আরেক জনের দিকে আবাক চোখে তাকিয়ে আছে ইশানের এমন কান্ড দেখে।

_____

ইশানকে দৌঁড়ে আসতে দেখে নেহা বেগম আর বাকি সবাই আবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এভাবে দৌড়ে আসার মানে কি কেউ বুঝতে পারছে না। নেহা বেগম বিচলিত কন্ঠে সুধালো।

–ইশান বাবা এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন? আর তদের তো এতক্ষনে বের হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো।

ইশান মায়ের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের ঘরে ছুটে চলে যায়। ঘরে ডুকেই আলমারির দরজা খুলে হন্ততন্ত হয়ে কিছু একটা খুজছে আর বিরবির করে বলছে।

–কোথায় রাখলাম জিনিসটা? কোথায়?

কিছুটা সময় খুজাখুজির পর পেয়ে গেলে ইশান তার কাঙ্গিত জিনিসটা। হলুদ রঙ এর ছোট পকেট থেকে পাথরের মাঝারি সাইজের কানের দুল রে করে বলে।

–এট লাস্ট পেলাম।

এমন সময় ঘরের বাইরে থেকে বেহা বেগমের কন্ঠ স্বর ভেসে আছে। ইশান সাথে সাথে পেকেটে কানের দুলটা রেখে কোর্টের বুক পকেটে রেখে দেয় আর আলমারির দরজা লাগিয়ে বের হতে নিবে তখনেই নেহা বেগম ঘরে ডুকে বলে।

–কি হয়েছে ইশান তর? এমন আচরন করছিস কেন তুই?

–কিছু হয় নি মা আমার।

–তাহলে এভাবে দৌঁড়ে আসলি কেন?

–মা আমি এবার আসি দেরি হয়ে যাচ্ছে।

নেহা বেগমকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে যায় ইশান। নেহা বেগম ছেলের মতিগতি দেখে স্বাভাবিক ভাবে নিচ্ছে না কিছু একটা তো হয়েছে ইশানের এ কয়েক দিনে যা দেখে বুঝলো।

______

বর যাএীরা একটু আগে কনের বাড়িতে এসে পৌঁছেছে। এখন শুধু বরের আসারা পালা। প্রায় বিশ মিনিট পরেই বরের সাজানো গাড়ি এসে থামে তালুকদার বাড়ির গেইটের সামনে চারিদিকে হইহুল্লোড় শুনা গেলো বর এসেছে, বর এসেছে বলে চিৎকার করছে সকলে।

ইহানকে কনে বাড়ির লোকজন এসে সসম্মানে ভিতরে নিয়ে গেলে। সাথে ইশান, ইশা, আর তীরকে ভেতরে যেতে বলেছে। ইশা আর ইশান নেমে গেছে গাড়ি থেকে। কিন্তু বিপত্তি বাধলো তীরের গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে ভাঙ্গা এক ইটের উপর পা রাখতে পা মচকে পড়ে যায়। তীরকে এভাবে পড়ে যেতে দেখে ইশানের আত্মা কেঁপে উঠে। ইশান তাড়াতাড়ি করে তীরকে টেনে তুলে আবার গাড়িতে বসিয়ে দেয়। ইশা চিন্তিত স্বরে বলে।

–কিরে পড়ে গেলি কি করে? আস্তে ধীরে নামবি তো।

ইশান তীরের অসহায় মুখটার দিকে তাকায়। চোখ দুটো জলে টইটম্বুর একটু নাড়া দিলেই নোনা জলটা গড়িয়ে পড়বে গাল বেয়ে। তীরের এমন করুন চেহারা দেখে ইশানের বুকটা মুচরে উঠলো। মেয়েটা কি বেশি ব্যাথা পেয়েছে পায়ে। ইশান কোমল কন্ঠে শুধালো।

–তীর! পায়ে লেগেছে খুব।

ভালোবাসার মানুষটার মুখে এমন কোমল কন্ঠ শুনে তীর ফুঁপিয়ে উঠল। মাথাটা উপর নিচ করে বুঝায় যে সে খুব ব্যাথা পেয়েছে। ইশান হাটু গেড়ে নিচে বসে বলে।

–দেখি পা’টা।

তীর পা সরিয়ে নিয়ে না করে যাতে ইশান পাটা না দেখে। ইশান আবার বলে।

–না দেখলে বুঝবো কি করে কোথায় ব্যাথা পেয়েছিস?

ইশান এক প্রকার জোর করেই তীরের পা দুটো সামনে নিয়ে এসে বলে।

–কোন পায়ে ব্যথা পেয়েছিস ডানে নাকি বামে।

তীর কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে।

–বাম পায়ে।

ইশান বাম পা’টা টেনে নিয়ে তীরকে বলে লেহেঙ্গাটা উপরে তুলতে। তীরও বাধ্য মেয়ের মতো লেহেঙ্গা উপরে তুলে। লেহেঙ্গাটা উপর তুলতে ইশান ভ্রু-কুচকে নেয় তীরের পায়ের জুতো দেখে। ও পা থেকে থেকে ওর জুতো বড়। এই‌ এক রতি মেয়ের পায়ে কিনা এত বড় হাই হিল জুতো ভাবা যায়। এমনি এমনি তো আর পড়ে যায় নি। ইশান হুস করে শ্বাস ছেড়ে জুতো খুলে দেয় আর অন্য দিকে তীর চিৎকার করে বলে।

–প্লিজ প্লিজ ধরবেন না ব্যাথা পাই।

ইশানের ইচ্ছে করছে তীরের ওই নরম তুলতুলে গালে ঠাটিয়ে একটা চড় মারতে বেয়াদব মেয়ে। কে বলেছে এত বড় জুতো পরতে আর এই অঘটন’টা ঘটাতে। ইশান নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে বলে।

–আচ্ছা ধরবো না তুই শান্ত হ।

ইশান পা ধরবে না ধরবে না বলে পা ধরে দিলো এক মোচর। তীর সাথে সাথে গলা ফাটিয়ে দিলো এক চিৎকার। ইশান আর ইশা কান ধরে ফেলে তীরের এই চিৎকার শুনে। ইশান এবার ধমক দিয়ে বলে।

–এই চুপ! কে বলেছিলো এত উঁচু জুতো পড়তে তকে এখন বুঝ ঠেলা।

ইশা কোনো কিছু না ভেবেই ঠাস করে বলে উঠে।

–ভাইয়া লেহেঙ্গার সাথে হাই হিল না পড়লে ভালো লাগে না।

–একটা দিবো তকে। হাই হিল! এই তদের পা কতটুকু বড় যে হাই হিল জুতা পড়তে হয়।

ইশার মুখটা চুপসে যায় ইশানের রামধমক শুনে। ইশান তীরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে।

–নে নাম এবার।

তীরও বাধ্য মেয়ের মতো আবার জুতো পড়ে ইশানের হাত ধরে গাড়ি থেকে নামে। এবার ব্যাথাটা কম লাগছে কিন্তু খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছে। ইশান তা দেখে ফট করে তীরকে পাঁজা কোলে তুলে নেয় সবার সামনে। আচমকা এভাবে কোলে নেওয়াতে তীর ভড়কে যায়। এতক্ষন সবাই স্বাভাবিক চোখে তাকিয়ে থাকলে এবার সবাই বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে ইশান আর তীরের দিকে। সাথে তীরও ইশানের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। ইশান সেদিকে নজর না দিয়ে হেটে বাড়ির ভেতরে ডুকে পরে। তীর আশে পাশে চোখ বুলিয়ে দেখে মানুষজন কেমন করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে তীরের মন চাইছে লজ্জায় মরে যেতে। ইশা আশে পাশের মানুষের এমন অদ্ভুদ দৃষ্টি দেখে মেকি হেসে বলে।

–পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যাথা পেয়েছে তা তাই আর কি কোলে নিয়েছে।

ইশান ইশার এমন কথা শুনে ধমকে বলে।

–তকে কে বলেছে এতো ডাক’ঢোল পিটাতে। চুপচাপ হাট।

ইশা আর একটা টু শব্দও করলো না। মনে মনে ভাইকে একটা গালি দিলো। তীরকে ইশান একটা চেয়ারে এনে সাবধানে বসিয়ে দেয়।

#চলবে_______

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১৫

অনেকটা সময় রেস্ট করার পর তীরের পায়ের ব্যথাটা সর্ম্পূন ভাবে ভালো হলো। এখন সে চড়ুই পাখির মতো ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে ঘুরে বেড়াছে বিয়ে বাড়ির আনাছে কানাছে। আর এদিকে ইশান চোখ পাকিয়ে তীরের এসব নাচানাচি দেখে যাচ্ছে। ইশান ভেবে পাচ্ছে না একটু আগে যেই মেয়ে পায়ের ব্যথায় কাতরাছিলো আর এখন কিনা সেই মেয়ে নির্লজ্জর মতো এভাবে ডেং ডেং করছে।

তীর ইশাকে টেনে নিয়ে বিয়ে বাড়ির গেইটের সামনে আসে। গেইটটা খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হয়েছে। তীরের খুব ইচ্ছে করছে এখানে দাঁড়িয়ে ফটো তুলার জন্য। তাই ইশাকে টেনে নিয়ে আসা। তীর ইশার হাতে নিজের ফোনটা দিয়ে বলে।

–নে ছবি তোল তাড়াতাড়ি।

ইশা চারিপাশেটা চোখ বুলিয়ে দেখে কয়েকটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে আর সিগারেট খাচ্ছে। ইশা চাঁপা গলায় তীরকে বলে।

–এখানে ছবি তুলাটা ঠিক হবে না। চল ভেতরে চল।

–কিছু হবে না তুই এত কথা না বলে জলদি ছবি তুল।

বলেই তীর নানা রকম পোজ দেওয়া শুরু করে আর ইশা ছবি তুলছে। এমন সময় পাশে থাকা ছেলে গুলার মাঝে থেকে একজন উচ্চ স্বরে বলে উঠে।

–কি মামনি ছবি তুলচ্ছো। আসো আমাদের কোলে এসে বসে ছবি তুলো।

অন্য একজন ছেলে বলে।

–আমরা কিন্তু তোমার ওই হিরোর থেকে আরাম করে কোলে তুলবো। যাতে তোমার একটুও কষ্ট না হয় বুঝলে বেবি।

বলেই উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো। ইশা তীরের ডান হাত চেপে ধরে বলে।

–তীর ভেতরে চল এখানে আর থাকতে হবে না।

তীর আর ইশা চলে যেতে নিলে একটা ছেলে বলে।

–কি মামনি কোলে উঠবে না আমাদের।

তীর রাগী চোখে ছেলে গুলোর দিকে তাকায়। ইচ্ছে করছে সুঁই দিয়ে বেয়াদব গুলোর মুখ সেঁলাই‌ করে দিতে।

–আরে আরে দেখ দেখ মামনি রেগে আগুন হয়ে গেছে।

তীর আর ইশা ভেতরে চলে যায়। ছেলেগুলার মাঝে একটা ছেলে বলে।

–ভাই মালটা কিন্তু সেই রে একে বারে হট।

আড়াল থেকে রক্তচক্ষু নিয়ে ইশান সবগুলা দেখেছে এতক্ষন ছেলেগুলা কি কি বলেছে। ইচ্ছে করছে ছেলে গুলাকে মেরে মাটিতে পুঁতে দিতে কিন্তু এখন আপতত এই‌ ইচ্ছেটা মাটিচাপা দিয়েছে ইশান। আগে ইহানের বিয়েটা হোক সুষ্ট সুন্দর ভাবে তারপর দেখে নিবে এই বেয়াদবগুলাকে। ইশান নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে রাগী চোখে ছেলেগুলার দিকে তাকিয়ে এখান থেকে চলে যায়।

বাড়ির ভেতরে ডুকেই ইশা তীরের হাত চেপে ধরে বলে।

–দোস্ত ইশান ভাইয়া যদি জানতে পারে এই বিষয়টা তাহলে বিরাট জামেলা হয়ে যাবে।

–চুপ কর তো এমনেতেই আমার ভয় করছে। আমারেই ভুল হয়েছে বাইরে বের হওয়াটা।

–আমি তখনেই বলেছিলাম ওখান থেকে চলে আসার জন্য কিন্তু তর জন্য….

–উফফ চুপ করতো।

–দোয়া কর যাতে ভাইয়া এই বিষয়টা না জানতে পারে।

–ইশু রে! একটু ওয়াশরুমে দরকার রে আমার।

–কি? এমন একটা অবস্থাতে তর কিনা আগে বলেছি একটু কম করে খা কিন্তু তুই তো।

–উফ তর আজাইরা কথা বন্ধ কর তো। আমি এখন কি করবো বল প্রাকৃতিক কাজ ডাক দিয়েছে আমাকে আর তা আমি আগ্রাহ্য করি কি করে।

–হয়েছে বুঝতে পেরেছি। চল কেয়া ভাবির রুমে যাই।

–হুম।

_____

অন্য দিকে তীর আর ইশাকে খুজতে থাকে ইশান। ছেলেগুলাকে শিক্ষা দেওয়ার আগে তীর আর ইশাকে একটা শিক্ষা দিতে হবে না হলে এমন ঘটনাটা আবার ঘটবে। মেয়ে দুইটা ইদানিং একটু বেশিই উড়ঁছে তাই সময় থাকতেই ডানা ঝেঁটে দিতে হবে।

কিছুটা সময় খুজাখুজির পরেই ইশার দেখা মিলে নতুন বউয়ের পাশে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। কিন্তু আশেপাশে তীরকে দেখা যাচ্ছে না। মেয়েটা গেলো‌ কোথায় আবার? এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে না কেন এই মেয়ে? ইশান ইশার কাছে গিয়ে ইশাকে ডাক দেয়।

–ইশা এদিকে আয়।

ইশাও বাধ্য মেয়ের মতো ইশানের সামনে এসে দাড়ায়।

–কি হয়েছে ভাইয়া?

–তীর কোথায়?

–ও একটু ওয়াশরুমে গেছে।

ইশার মুখ থেকে এমন কথা শুনে ইশান রেগে বলে উঠে।

–তাহলে তুই‌ এখানে বসে আছিস কেন? ওর সাথে গেলি না কেন? অচেনা জায়গাতে ওকে একা ছেড়ে দিলি।

–না মানে ভাইয়া আসলে একটু পর‌ তো ভাইয়ার বিয়ে পড়ানো হবে তাই আর‌ কি যায় নি। আর আমি যেতে চেয়েছিলাম তখনেই ভাবিকে নিয়ে আসা হয় তো তাই আর ওর সাথে যাওয়া হয় নি।

–বিয়ে বাড়িতে এসে‌ খুব উড়ছিস না তরা দুজন।

–না ভাইয়া আসলে।

–চুপ আর একটা কথাও বলবি না। চুপচাপ গিয়ে বস ওখানে।

ইশা চুপচাপ গিয়ে কেয়া’র পাশে গিয়ে বসে পড়ে।

_________

এদিকে তীর‌ তালুকতার বাড়িতে ডুকে দেখে বাড়ি পুরাই খালি। কেউ‌ কেউ বিয়ের আসরে উপস্থিত আর কেউ বা খাওয়া দাওয়াতে ব্যস্ত আছে। তবে কিছু মানুষ আছে বাড়িতে হাতেগুনা। তীরের কিছুটা ভয় লাগছে বাড়িতে ডুকতে কিন্তু প্রাকৃতিক ডাকে তাকে এখন সাড়া দিতে হবে না হলে ইজ্জত কখন আবার প্লাস্টিক হয়ে যায় বলা যায় না। কিন্তু তীরের এখন মনে হচ্ছে একা আসাটাই ভুল হয়েছে ইশাকে নিয়ে আসা দরকার ছিলো। কিন্তু এখন আবার ইশাকে গিয়ে নিয়ে আসাও সম্ভব না। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়ে ভয়ে ভয়ে বাড়িতে ডুকে সোজা কেয়া’র রুমে ডুকে ওয়াশরুমে চলে যায়।

পাচঁ মিনিট পর ওয়াশরুম থেকে বের হয় তীর। বের হওয়ার সাথে সাথেই লাইট নিভে যায়। ভয়ে তীরের আত্মা কেঁপে উঠে। হঠাৎ করে লাইটের আবার কি হলো এতক্ষন তো ঠিকেই ছিলো আর বাইরেও তো লাইট জ্বলছে। হঠাৎই তীরের মনে হলো এই রুমে ও ছাড়া আরও কেউ একজন আছে যে কিনা ওর আশে পাশে দাড়িয়ে আছে। ঘরের মৃদু আলোতে একজন পুরুষের অবয়ব চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ভয়ে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে তীরের এটা ভেবে বাইরের ছেলেগুলার মাঝে কোনো ছেলে নয়তো আবার। তীর কাপা কাপা গলায় বলে।

–কে… কে… কে আছেন এখানে?

কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ পায় না তীর। ভয়টা যেন আরও বেড়ে যায় তীরের। নিজের প্রতি এখন নিজের খুব রাগ লাগছে কেন এখানে একা আসতে গেলো। তীর অন্ধকারের মাঝে হাতরে হাতরে বিছানার কাছে যায়। বিছানার কাছে গিয়ে নিজের ফোনটা খুজতে লাগে কিন্তু না ফোনের কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু তীরের স্পষ্ট মনে আছে ওয়াশরুমে রুমে ডুকার আগে বিছানাতে ফোনটা ছুড়েঁ ফেলেছিলো। তীরের গলা শুকিয়ে আসছে আজানা ভয়ে এখন তার কোনো সর্বনাশ হয়ে যাবে না তো এই বাড়িতে এসে। না তীর আর এসব ভাবতে পারছে মাথাটা ভার হয়ে আসছে। সময় থাকতে এই‌ ঘর থেকে বের হতে হবে না হলে বড়ো কোনো সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে।

তীর যেই পালাতে যাবে ওমনি কেউ ওর হাত ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে। তীর ভয়ে চিৎকার করতে নিলেই শক্তপোক্ত পুরুষালি একটা হাত ওর মুখ চেপে ধরে আর একটা হাত দিয়ে ওর কোমড় চেপে ধরে যাতে তীর পালাতে না পারে। তীর মুচরামুচরি করে ছাড়া পাওয়ার জন্য কিন্তু লোকটা আরও শক্ত করে ধরছে। হঠাৎ করেই তীর অনুভব করে তার কানের কাছে লোকটা মুখ নিয়ে চাপা কন্ঠে আর ফিসফিসিয়ে বলে।

–একদম চিৎকার করতে যাবে না তাতে কিন্তু তোমার সর্বাঙ্গেই সবাই কলঙ্গ লাগিয়ে দিবে আমার গায়ে কিন্তু লাগবে না। তাই চুপচাপ থাকো আমি চাই না তোমার দিকে কেউ বাজে আঙ্গুল তুলুক। আমি তোমার মুখ থেকে হাত সারাছি একদম চিৎকার করবে না কিন্তু।

তীর মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে ও চিৎকার করবে না। লোকটাও সাথে সাথে তীরের মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে নেয়। তীর জোরে শ্বাস নিয়ে তটস্থ গলায় বলে।

–কে আপনি?

লোকটা আবারও সেই চাপা গলায় আর ফিসফিসিয়ে বলে।

–তোমার প্রেমে মাতোয়ারা একজন পাগলা প্রেমিক।

–মানে।

–মানেটা সময় হলে ঠিক জানবে।

বলেই আরও ঘনিষ্ঠ হলো তীরের। তীর নিজের শরীরটা পিছনের দিকে হেলিয়ে দিলো। লোকটা কে হতে পারে ভেবে পাচ্ছে না ও? আবার বলছে পাগলা প্রেমিক কন্ঠস্বর কেমন চিনাচিনা লাগছে তীরের কিন্তু এত চাপা স্বরে আর ফিসফিসিয়ে কথা বলছে যে বুঝতেই পারছে না ঠিকমতো। কিন্তু লোকটার গা থেকে একটা সুগন্ধ আসছে যেটা তীরের খুব চেনা চেনা লাগছে কোথায় যেন এই ঘ্রান সে নিয়েছে কিন্তু কোথায় নিয়েছে তা মনে করতে পারছে না।‌ তীরের ধ্যান ভাঙ্গে নিজের পিঠের উপর কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে। লোকটা আবারও সেই একই ভঙ্গিতে বলে।

–এভাবে শরীর হেলিয়ে দিলে পরে যাবে তো জান।

তীরের সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠে এমন কথা শুনে বড় বড় চোখ করে তাকায় লোকটার দিকে কিন্তু দুঃখের বিষয়ে লোকটার মুখ দেখতে পারছে না। তীরের খুব ইচ্ছে লোকটার মুখ দেখতে কিন্তু লোকটা যে তাকে দেখানোর কোনো চান্সেই রাখে নি। লোকটা তীরের মনের কথা বুঝতে পেরে বলে উঠে।

–খুব দেখতে ইচ্ছে করছে না আমাকে। তুমি চাইলে আমাকে ছুঁয়ে দেখতে পারো আমি বারণ করবো না। বরং তোমার ওই নরম হাতের ছোঁয়া আমি গভীর ভাবে অনুভব করবো।

তীরের কি হলো ও নিজেও জানে না কাপাকাপা হাতে লোকটার ডান গাল ছুঁয়ে দেয়। ছুঁয়ে দিতেই তীর কেঁপে উঠে, শিরদাঁড়ায় অদ্ভুদ এক শিহরন বয়ে গেল। তীরের হাতের উপর লোকটাও তার হাত রাখল তীর চকিতে চমকে তাকায় কিন্তু কিছুই দেখতে পারলো না। তীর সাথে সাথে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে হাসঁফাস করতে লাগলো। লোকটাও তীরের এমন অবস্থা দেখে নিঃশব্দে হাসে। তীর কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই লোকটা তীরের কানে হাত দেয় তীর বুঝতে পারে ওর কানের দুল খুলছে লোকটা। লোকটার প্রত্যেকটা ছোঁয়াতে তীরকে বেসামাল করে তুলছে। লেহেঙ্গার কাপড় দু হাত দিয়ে ঘামছে ধরে। গলা উচিঁয়ে কথা বলতে চাইছে কিন্তু না গলা দিয়ে একটা রাও বের হচ্ছে না। তবে অনেক কষ্টে তীর কাপাকাপা গলায় বলে।

–কি.. কি… করছেন আপনি?

–হুসসসসস! কোনো কথা না।

তীর এতটুকু বুঝতে পারছে লোকটা তার কান থেকে তার ভারি ভারি কানের দুল গুলা খুলে ফেলেছে। এর কিছুক্ষন পরেই মনে হলো আবার কানে দুল পড়িয়ে দিচ্ছে। তীর এটা ভেবে পাচ্ছে দুল খুলার মানে কি আবার পড়িয়ে দেওয়ার মানে কি? লোকটা আবারও সেই আগের স্বরেই বলে।

–নাও পার্ফেক্ট।

তীর পিটপিট চোখে সামনে থাকা লোকটার দিকে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ করেই অনুভব করলো তার মুখে লোকটা ফু দিচ্ছে তীর অবেশেই চোখ বন্ধ করে নেয়। এই প্রথম কোনো পুরুষ তার এতটা কাছে এসেছে তাই নিজেকে কেমন যেন মাতাল মাতাল মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন অতল সাগরে ডুবে যাচ্ছে যেই সাগর থেকে উঠতে খুব কষ্ট হবে আজকে ওর। লোকটা ওর কানের কাছে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে।

–চোখ বন্ধ করে রাখবে একদম খুলবে না কিন্তু।

তীর লোকটার কথামতোই চোখ বন্ধ করে রাখলো। অনেকক্ষন হয়ে গেল লোকটার কোনো সাড়া শব্দ নেই। তীর আস্তে আস্তে নিজের চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে সারা ঘর আলোকিত। তীর চোখ দুটো বন্ধ করে নেয় আবার। এতক্ষন অন্ধকারে থেকে হঠাৎ করেই চোখে আলো পড়াতে চোখ দুটো আলো সইতে পারে নি। তীর চোখ দুটো কচলিয়ে আবার তাকায় কিন্তু না সামনে কেউ নেই। তীর সারা ঘরে ভালো করে চোখ বুলায় কিন্তু কারো কোনো অস্তিত্ব নেই। এতক্ষন কি তাহলে যা ঘটেছে সবটাই কি তীরের হেলোসিয়েশন ছিলো। তীর কিছু একটা ভেবে আয়নার সামনে দাড়ায়। দু কানের কাছ থেকে চুল সরিয়ে দেখে নতুন এক জোড়া কানের দুল তার কানে। তারমানে এতক্ষন যা ঘটেছে সবটাই বাস্তব কোনো হেলোসিয়েশন নয়।

#চলবে________

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে