#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পার্ট_২
–তুই পড়ালেখায় যেমন অযত্নশীল ঠিক তেমনি নিজের শরীরের প্রতিও অযত্নশীল। মানে কি ধাতু দিয়ে তৈরি তুই আমাকে একটু বলবি। মানুষের এক সাইড খারাপ হলে অন্য সাইড ভালো হয়। কিন্তু তর তো কোনো সাইডেই ভালো না।
গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে ইশান কথাটা আর তীর নিচের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেঙ্গাছে। মানে ইশানের কথাগুলো ওর এক কান দিয়ে ডুকছে আর এক কান দিয়ে বের হচ্ছে। এই লোকের কাছে তো ও পড়তে আসতেই চায় না নেহাতি বাবা-মায়ের ভয়ে পড়তে আসতে হয় ইশানের কাছে। না হলে ও ইশানের এিসীমানায় আসতো না বদ লোক একটা জ্বালিয়ে মারছে একে বারে।
ইশান রাগ মিশ্রিত কন্ঠে আবারও বলে
–এত মুখ ভেঙ্গাছিস কেন তুই? মুখ বেঁকে যাবে তো। পারিস শুধু মুখ ভেঙ্গাতে পড়াশুনার ‘প’ টাও তো পারিস না। পড়াশুনায় শুধু ফাকিবাজি না,,, ফাকিবাজি বের করছি আমি দাড়া। কালকে তরা দু জন এই অধ্যায়ের টেস্ট দিবে। যদি একটা অংকও ভুল হয় তাহলে তদের এমন শাস্তি দিবো যা সারা জীবন মনে থাকবে।
ইশানের কথাটা বলতে দেরি হয়েছে কিন্তু ইশা চিৎকার করতে দেরি হলো না।
–নাহ ভাইয়া! কালকে টেস্ট দিতে পারবো না।
ইশান ভ্রু কুচকে বলে
–কেন? কেন দিতে পারবি না?
–কালকে কোচিং এ পরীক্ষা আছে। তাই কোচিং এর পরীক্ষার পড়া পড়তে হবে।
–কালকে তো শুত্রুবার বন্ধের দিন তাহলে কোচিং কিসের?
–কালকে কোচিং এ শুধু পরীক্ষা নিয়ে ছুটি দিয়ে দিবে।
ইশান ছোট ছোট চোখে ইশার দিকে তাকিয়ে বলে
–সত্য কথা বলছিস তুই।
–সত্যি বলছি! তুমি চাইলে স্যারদের ফোন করে জেনে নিতে পারো।
ইশান এই দুইটাকে এক বিন্দুও বিশ্বাস করে না। এদের মতো ফাকিবাজ আর একটাও নেই পৃথিবীতে। ইশা ওর বোন হলে কি হবে ওকে এক পরিমানও বিশ্বাস করে না ইশান। তাই ইশান হাতে সেল ফোনটা নিয়ে বলে
–সত্যি ফোন করবো। যদি মিথ্যা কথা বলিস তাহলে কিন্তু…
–তুমি আমাকে অবিশ্বাস করছো ভাইয়া। নিজের বোনকে নিজের মায়ের পেটের বোনকে অবিশ্বাস করছো। ছিহ ভাইয়া..ছিহ এতটা অবিশ্বাস করো তুমি আমাকে। মানছি আমি পড়ালেখা ফাকি দেই তাই বলে তোমার সাথে মিথ্যা কথা বলবো।
–হয়েছে হয়েছে আর লেকচার দিতে হবে না। আমি বিশ্বাস করলাম যা। ঠিক আছে তাহলে রবিবারে টেস্ট দিবি তরা আমার কাছে। দুদিন বাড়িয়ে দিলাম।
–আচ্ছা ভাইয়া।
–মনে থাকে যেন কথাটা।
–আচ্ছা।
–এবার যা কোচিং এর পড়া পড় গিয়ে।
তীর আর ইশা বইপএ গুজিয়ে নিয়ে ঝটপট ইশানের রুম থেকে বের হয়ে যায়। ওরা বের হতেই ইশান বুক ভরে শ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে মাথাটা হেলিয়ে দেয় চেয়ারে। চোখ বন্ধ অবস্থায় কাতার কন্ঠে বলে উঠে
–এত পোড়াস কেন তীর তুই আমাকে? এই #প্রনয়ের_দহন আর কত সহ্য করতে হবে আমাকে। চার চারটা বছর ধরে তো পোড়ছি আর কত পোড়বো আমি এইদহনে। আর পারছি না সহ্য করতে এই দহন! তকে আমার চাই খুব তাড়াতাড়ি খুব।
_____
তীর মুখে ফুলিয়ে রেখেছে তা দেখে ইশা বলে
–মুখটা এমন বাংলার প্যাচের মতো করে রেখছিস কেন?
তীর ফুস করে উঠে
–তর ভাইয়ের সমস্যা কি হুম? সবসময় আমার সাথে এমন করে কেন? এত নাক গলায় কেন আমার ব্যাপারে? ইচ্ছে করে তো তর ভাইয়ের কাড়া নাকটা ঘুসি দিয়ে ভোঁতা করে দিতে। যাতে আমার ব্যাপারে আর নাক গলাতে না পারে।
ইশা তীরের কাধ জড়িয়ে ধরে বলে
–আরে বোকা মাইয়া! যাদের বেশি ভালোবাসে মানুষ তদের একটু বেশিই বকাচকা করে বুঝলি। ভাইয়া তো তকে ভালোবাসে তাই একটু বকাচকা করে ফেলে।
তীর ইশার হাতটা কাধ থেকে সরিয়ে বলে
–তর এই আবোলতাবোল কথা বলা বন্ধ করবি না হলে কিন্তু তর মুখ আমি সেলাই করে দিবো।
–ওকে ওকে আর বলবো না যা। তুই দাড়া আমি বইগুলো রুমে রেখে এসে তোকে এগিয়ে দিয়ে আসি।
–লাগবে না।
–আরে রাগ করিস ন! তুই এক মিনিট দাড়া আমি দুই মিনিটে আসছি।
বলেই দৌড় রুমের দিকে। তীর হেসে উঠে ইশার কথা শুনে মেয়েটা মাঝে মাঝে এমন কথা বলে যা শুনে হাসতে বাধ্য করে। তীর সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। তীর নামতেই ইশানের মা নেহা বেগমের সাথে দেখা হয়। নেহা বেগম তীরের দিকে এগিয়ে এসে বলে
–মুখটা এমন অন্ধকার করে রেখেছিস কেন? কিছু কি হয়েছে?
–কিছু হয় নি আন্টি।
–আজকেও কি ইশান বকাচকা করেছে।
এবার তীর মুখ খুলে
–আন্টি তোমার ছোট ছেলেটা খুব খারাপ, খুব বাজে, খুব নিষ্ঠুর সবসময় বকাচকা করে। তার কোন পাকা ধানে যে আমি মই দিয়েছি। যার জন্য আমার সাথে সবসময় এমন করে।
–মন খারাপ করিস না মা। ইশান এমনেই ওর কথা কানে তুলিস না।
তীর বিরবির করে বলে
–কানে তুলে কে?
এমন সময় ইশা সিড়ি দিয়ে দৌড়ে দৌড়ে নেমে তীরের পাশে দাড়ায়
–চল।
নেহা বেগম ইশার কান মুছরে ধরে বলে
–তকে কত বার বলেছি ইশা এভাবে ধপধপ করে সিড়ি দিয়ে নামবি না যদি সিড়ি থেকে পড়ে যাস তখন কি হবে। আমি কিন্তু তখন তর সেবা করতে পারবো না। এক কোনায় তকে ফেলে রাখবো।
–উফফফ! মা ছাড়ো তো এখন আমি বড় হয়েছি এভাবে আর কান ধরবে না।
নেহা বেগম ইশার কান ছেড়ে দিয়ে চলে যায় এই মেয়ে তার কোনো কথাই শুনে না। বড় ভাই আর বাবার আদর পেয়ে বাধর হচ্ছে দিন দিন। যেদিন ছোট ভাইয়ের হাত খাবে রামধমক সেদিন শুনবে। এক মাএ ইশানকেই এই মেয়ে যা একটু ভয় পায় আর বাকি সবাইকে বুড়ো আঙুল দিয়ে নাচায়।
_____
ইশা আর তীর সদর দরজা থেকে বের হয়। ইশার হাতে সেলফোন কাকে যেন বার বার ফোন করছে। তীর ইশাকে বলে
–কাকে এত কল করছিস?
–জানিস না বুঝি।
–জানি! কিন্তু তুই যদি একবার ধরা খাস তাহলে তর কপালে শনি আছে। বিশেষ করে তর ওই হিটলার ভাই যদি জানে তুই প্রেম করিস তাও আবার ওনার….
কথাটা শেষ করার আগেই ইশা তীরের মুখে চেপে ধরে বলে
–বইন দোহাই লাগে তুই চুপ যা দেয়ালেরও কান আছে।
–আচ্ছা চুপ করলাম।
ইশা তীরের মুখ থেকে হাত সরাতে সরাতে বলে
–পরের বার এই কথা আর বলবি না বাড়িতে।
–আচ্ছা বলবো না আর তকে প্রতিদিন শুধু শুধু ঘর থেকে বের হতে হয় এক মিনিটও লাগে আমার বাসায় যেতে। চাইলে তো ছাদ থেকেই লাফিয়েই যেতে পারি বাসায় কিন্তু ভয় লাগে যদি পড়ে যাই।
–ইশান ভাইয়ার কাড়া নির্দেশ তকে এগিয়ে দিতে হবে।
তীর থেমে যায় ইশার মুখোমুখি হয়ে বলে
–কেন কাড়া নির্দেশ কেন?
–আরে তকে যদি কেউ তুলে নিয়ে যায়। আমাদের একটা দায়িত্ব আছে না।
–এত টুকু রাস্তা পার হওয়ার সময় কে তুলতে আসবে আমাকে আর তা ছাড়া দাড়োয়ান চাচা তো আছেই।
–অতশতো বুঝি না আমাকে ভাইয়া বলেছে তকে এগিয়ে দিতে। কারন ভাইয়ার কাছে তুই পড়তে আসিস আর হে সাবধান ছাদ টপকাতে যাবি না।
–আচ্ছা জানটুস টপকাবো না।
ইশা গেইটের সামনে দাড়িয়ে তীরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তীর আর ইশাদের বাড়ি পাশাপাশি জাস্ট মাঝ খানে শুধু একটা ওয়ালের ব্যবধান। কিন্তু ইশাদের বাড়ি মানে “ফরাজি ভিলা” তীরদের বাড়ি থেকে অনেকটা বড়। যার কারনে ইশাদের বাড়ির গেইট থেকে তীরদের বাড়ির গেইট কিছুটা দুরে।
তীর গেইটের কাছে গিয়ে ইশাকে হাত উঠিয়ে টাটা দেয় ইশাও টাটা দিয়ে বাড়ির ভেতরে ডুকে যায়। বাড়ির ভেতরে ডুকতে ইশার ফোনটা বাইব্রেট করে। কাঙ্গিত মানুষটার ফোন পেয়ে ইশা মুচকি হাসি দিয়ে দৌড় লাগায় নিজের ঘরের উদ্দেশ্যে। ঝড়ের বেগে নিজের রুমে ডুকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ফোন কানে নিয়ে হাপাতে হাপাতে হ্যালো বলে। ফোনের ওপাশের লোকটা ইশার হাপানো শুনে বলে
–কি হলো জান! এভাবে হাপাছো কেন?
–আসলে দৌড়ে রুমে এসেছি তো।
–দৌড়ে এসেছো মানে! কুকুরে তাড়া করলো নাকি তোমাকে এই রাতবিরাতে।
–আরে না কুকুরে তাড়া করে নাই আসলে….
ইশার হাপানোর কারনটা লোকটাকে বলে। লোকটা মৃদু হেসে বলে
–আমার ফোন পেয়ে এভাবে দৌড়াতে হয় বুঝি।
–কখন থেকে ফোন করছি আপনি ফোন ধরছিলেন না কেন?
–সরি জান! ফোন সাইলেন্ট ছিলো আর বিজি ছিলাম তাই খেয়াল করি নাই। আর তুমি তো এমন সময় ফোন করো না হঠাৎ আজকে এমন সময় ফোন করলে।
–আসলে ইশান ভাইয়া আজকে তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে ফেলছে।
–তোমার ছোট ভাই যে হিটলার দেখলেই তো ভয় লাগে।
ইশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই লোকটা বলে উঠে
–আচ্ছা জান তোমার সাথে পরে কথা বলি একটা গুরুত্বপূর্ন কল এসেছে।
সাথে সাথে টুস করে ফোনের লাইনটা কেটে যায়। ইশা ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে ওকে কথা বলার সুযোগটাই দিলো না লোকটা তার আগেই কেটে দিলো। কি এমন গুরুত্বপূর্ন কল এসেছে যা ইশার থেকেও গুরুত্বপূর্ন। ইশার মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো।
#চলবে____