?প্রথম ভালোনাসার অনুভূতি?
লেখিকাঃ?হ্যাপী?
পার্টঃ১৫ এবং(শেষ)
জি আপু বলেন কী বলবেন,,
তুমি কী করো,,কোথায় থাকো,,তোমার আম্মুর কী হয়েছে,,,
আমি একটা এনজিও তে পড়াই আর আমরা ঢাকা উওরা থাকি,,আগে দেশের বাড়িতে থাকতাম,,বেশি লেখাপড়া করতে পারি নি,,অনেক কষ্টে ইন্টার পাশ করে এই চাকরিটা নিয়েছি,আমার মায়ের কিডনি দুইটাই নষ্ট হয়ে গেছে,,ডাক্তার বলেছে বেশিদিন বাচবে না তারপর ও মাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি,,মা ছারা আমার এই পৃথিবীতে কেউ নেই(হিমুর চোখে পানি)
শাহীন শুধু হিমুকে দেখছে,,
কে বলেছে কেউ নেই আমরা তো আছি,,(আমি নিশ্চিত এটাই ইমুর জমজ বোন),,(আমি)
কথা বলতে বলতে আমরা হসপিটালে চলে এলাম,,
হ্যাপী আমি কী একবার ওর মাকে দেখে যেতে পারি,,
আমি বুঝতে পারছি,,ভাইয়া হিমুর সাথে আরো কিছুক্ষণ থাকতে চাইছে,,তাই বললাম,,অবশ্যই,,
তিনজনে ভিতরে গেলাম,,
হিমু রক্ত নিয়ে ওর মায়ের কাছে গেলো,, আমি আর ভাইয়া ও ওর পিছনে গেলাম,,আমাদের দেখে অয়ন ও আমাদের সাথে আসলো,,
ডাক্তার এই নিন রক্ত,, আমার মা এখন কেমন আছে,,
সরি মিস হিমু আপনার মা,,আর নেই,,??
কী,,আমার মা আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারে না,,,(জোরে জোরে কান্না করে)
শাহীন যেন নিজেকে আর আটকে রাখতে পারছে না,তাই হিমুকে জরিয়ে ধরে, হিমু শাহীনের বুকে মাথা রেখে কান্না করতে থাকে,,
অয়ন আর হ্যাপী কিছু টা অবাক হলেও,,পরে সব বুঝতে পারি,,,ভাইয়ার মনে কোথাও হিমুর জন্য একটা জায়গা তৈরি হয়েছে,
অয়ন শাহীনের পাশে থাকে,,হ্যাপীর অপারেশন থাকায় হ্যাপী চলে যায়,,
এদিকে শাহীন আর অয়ন মিলে লাশকে কবর দেওয়ার ব্যাবস্থা করে,,
হ্যাপী অপারেশন শেষ করে এসে দেখে লাশ কবর দেওয়ার জন্য নিয়ে গেছে,, আর হিমু বসে কান্না করছে,,তাই হিমুর পাশে এসে বসলো,,
কান্না করো না,কেউতো সারাজীবন বেঁচে থাকে না,,,
আমি যে বড্ড একা হয়ে গেলাম,এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আমি একা কী ভাবে থাকবো,,,(কান্না করতে করতে)
অয়ন আর শাহীন পিছন থেকে সব শুনছিলো,,
হ্যাপী তোদের যদি কোনো আপওি না থাকে আমি আজই হিমুকে বিয়ে করতে চাই
আমরা সবাই অবাক হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম,,ভাইয়া,,কী বলছো,,(যেই ভাইয়াকে পাঁচ বছর যাবৎ বিয়ের জন্য রাজি করাতে পারলাম না,,সে আজ নিজের থেকে বিয়ের কথা বলছে)
ঠিক বলছি,,
ভাইয়া যা বলছে তাই হবে(কিছুটা ভেবে অয়ন)
হিমু কোনো কথা বলছে না,,
কিন্তু হিমুর তো একটা মতামত আছে,,যদি ও অন্যকাউকে পছন্দ করে থাকে,,(আমি)
আমি হিমুর সাথে কথা বলে আসছি,তোরা বাড়িতে গিয়ে সব ব্যবস্থা কর,
আচ্ছা ঠিক আছে,,
আমি আর অয়ন চলে গেলাম,,
শাহীন হিমুকে নিয়ে একটা পার্কে গেলো,,
হিমু আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই,,কিন্তু আমার এটা জানা দরকার তুমি কী কাউকে ভালোবাসো,,
ছোটবেলা থেকেই অভাবের মধ্যে কাটিয়েছি কাউকে ভালোবাসার সুযোগ টাই হয় নাই,,কিন্তু আপনি তো আমাকে ভালো করে চিনেন ও না তাহলে কেনো আমাকে বিয়ে করতে চান,,
আমি ইমু নামের একটা মেয়ে খুব ভালোবাসতাম,,ভালোবাসতাম বললে ভূল হবে আমি এখনো ইমুকে ভালোবাসি,আর ইমু ঠিক তোমার মতো দেখতে,,
আপনি এখনো ইমুকে ভালোবাসেন আর ভালেবেসে যাবেন, আমি ইমুর মতো দেখতে বলে আমাকে বিয়ে করবেন,,আমি অসহায় বলে নিজের স্বার্থের জন্য আমাকে ব্যবহার করবেন,,আবার ইমু যখন আপনার জীবনে চলে আসবে আপনি তখন আমাকে ছেড়ে দিবেন
তুমি ভূল ভাবছো,,ইমু কোনো দিন ফিরে আসবে না,
মানে,,,,
ইমু পাঁচ বছর আগে মারা গেছে,,,এই পাঁচ বছরে আমাকে অনেকে মেয়েকে বিয়ে করতে বলেছে কিন্তু আমি রাজি হয়নি,,তোমাকে দেখে মনে হলো,,আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারি,,আমি হয়তো ইমুর জায়গাটা তোমাকে দিতে পারবো না,,কিন্তু আমার মনে তোমার জন্য আলাদা একটু জায়গা তৈরি করতে পারবো,,এবার তুমি বলো,,আমাকে বিয়ে করবে,,
আপনি যদি বলতেন ইমুকে ভূলে আমাকে ভালোবাসবেন তাহলে হয়তো আমি রাজি হতাম না,,কারন ইমু না থাকায় যদি আপনি ইমুকে ভূলে যেতে পারেন তাহলে আমি যদি হারিয়ে যাই তাহলে আপনি আমাকেও ভূলে যেতে পারবেন,,
আমি আপনার ভালোবাসাকে সম্মান জানাই,,আমি ও ইমুর জায়গাটা চাই না,,,আপনার মনে একটু ঠাই দিলেই হবে,,,আমি বিয়েতে রাজি,,,
পারিবারিক ভাবেই হিমু আর শাহীনের বিয়ে টা হয়ে গেলো,,,
হ্যাপী হিমুকে শাহীনের রুমে দিয়ে এসে ছাদে যায়,
শাহীন ছাদে একা বসে আছে,,,
ভাইয়া এখানে কী করছিস,,
হ্যাপী আমি কী কোনো ভূল করেছি(আকাশের দিকে তাকিয়ে)
না ভাইয়া তুমি কোনো ভূল করোনি,,আমরা জানি হিমুই ইমুর জমজ বোন,,হিমু ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করেছে,,তাই তুমি যা করেছো ঠিক করেছো,,,ইমু আকাশ থেকে দেখছে তোমাদের,,,ও হয়তো খুব খুশি হয়েছে,,
আমি কী পারবো,হিমুর সম্পূর্ণ মর্যদা দিতে,,
পারবে ভাইয়া,,আল্লাহ যা করে সবার ভালোর জন্যই করে,,হিমু তোমার ভাগ্যে ছিলো,,তাই তুমি হিমুকে পেয়েছো,,,
ঠিক বলছিস,,আমি চেষ্টা করবো হিমুকে সুখে রাখার,,,আর হিমু যে ইমুর জমজ বোন হিমুকে কখনো বলিস না,,আমি চাই না হিমু আর কষ্ট পাক,,
তুমি চিন্তা করো না,,হিমু একা রুমে আছে,,যাও,,,
শাহীন রুমে আসার পর হিমু শাহীনকে সালাম করে,,তারপর দুজনে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে,,
শাহীন হিমুর গলায় একটা চেইন পরিয়ে দিয়ে কপালে আলতো করে চুমো দিয়ে বুকে জরিয়ে নেয়,,,
তারপর দুজনে ভালোবাসার সাগরে ডুবে যায়,,,
ঐদিকে
হ্যাপী আজ অনেক খুশি ভাইয়ার মুখে হাসি ফুটেছে আর ইমুর কথা রাখতে পেরেছে,
কী ব্যপার আমার বউটাকে আজ অনেক খুশি লাগছে,,
আজ ভাইয়ার জীবনের খুব খুশির একটা দিন তাই খুব খুশি আমি,,
আমার বউ সবার কথা ভাবে,,শুধু আমার কথা ছাড়া (মন খারাপ করে)
তাই এখন কী করলে বুঝবে তোমার কথা ভাবি আমি,,
আমাকে আদর করতে হবে,,বলেই ঠোঁট দুটি দখল করে নিলো,, দু’জনে চলে গেলো অন্য জগৎতে,,
১বছর পর,,
আজ শাহীন আর হিমুর বিবাহবার্ষিক,,বাড়িতে ছোট একটা আয়োজন করেছে,,
তাই সবাই নিচে,,
শাহীন ইমুর চিঠি টা নিয়ে ছাদে গেলো,,
চিঠি টা খুলে পড়তে শুরু করলো,,,
ভালোবাসার শাহীন,,
তুমি বলেছো তোমাকে ভূলে যেতে,,কিন্তু কী করে ভূলবো তোমাকে, তাই চলে গেলাম,,,আমি চলে গেলাম বলে পাগলামি করবে না,,আমি সব সময় ছয়ার মতো তোমার পাশে থাকবো,,
দেখবে তোমার জীবনে এমন একজন আসবে,,যে তোমাকে আমার মতো করে ভালোবাসবে,,খুব সুখী হবে তোমারা,,,তোমাকে আজ অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছে,,কিন্তু কিছু বলতে পারছি না,,আমাকে ক্ষমা করে দিও,,তোমার প্রথম ভালোবাসার অনুভূতি গুলো নিয়ে চলে গেলাম,,,
ইতি
?তোমার প্রথম ভলোবাসার অনুভূতি?
ইমু,,
চিঠিটা পরে নিরবে দুই ফোটা চোখের পানি ফেরলো,
তুমি ঠিক বলেছো হিমু তোমারই মতো,আমাকে খুব ভালোবাসে,,কিন্তু কখনো তোমার জায়গা টা নিতে চায় না,,তোমাকে খুব সম্মান করে,,
পৃথিবীতে প্রথম ভালোবাসা কেউ ভূলতে পারেনা,,প্রথম ভালোবাসা মানুষকে অনেক কিছু শিখিয়ে যায়,,আমি তোমাকে কখনো ভূলতে পারবো না ইমু,, সারাজীবন তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা হয়ে থাকবে,,
কী হলো তুমি ছাদে কী করছো, সবাই নিচে ওয়েট করছে(হিমু)
আসছি তুমি যাও,(মৃদু হাসি দিয়ে)
এভাবে,,ভালোবাসা চলতে থাকবে,,,,,সারাজীবন,,,,
((((((সমাপ্ত))))