প্রতিদিন তুমি আমার পর্ব-০৪

0
534

#প্রতিদিন_তুমি_আমার (০৪)
“কি? কেমন দিলাম নেতা সাহেব?”
শিখন যেন কথা বলার ভাষাই খুজে পাচ্ছেনা। অবাকের শীর্ষে পৌছে হা হয়ে পেছনে ফিরে অসিফার দিকে তাকিয়ে থাকে সে।

“ভাবিকে নিয়ে আমাদের বাসায় গিয়ে বেড়িয়ে আসবেন ভাই। আম্মা অনেক খুশি হবে।”

শিখন অবাক চোখে হৃদয়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে যেই কিছু বলতে যাবে, ওমনি জ্যাম ছেড়ে দিতেই হৃদয় বাইক স্টার্ট দিয়ে মুহূর্তের মাঝে দৃষ্টি ছাড়িয়ে বহুদূর চলে যায়। শিখন হা হয়ে এক ধ্যানে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। অসিফা শিখনের ঘাড় ধরে ঝাকি দিয়ে বলে ওঠে,

“শিখন ভাই! দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আমার লেট হয়ে যাচ্ছে তো!”

“একটু আগে কি বললি তুই?”

“কই কি বললাম আমি?”

“তুই আমার গার্লফ্রেন্ড কবে থেকে হলি?”
শিখনের কথায় শব্দ করে হেসে উঠে অসিফা বলে,

“আপনি আমাকে একটু আগে অ’প’মা’ন করলেন না? তার জন্য ছোট্ট করে একটু প্রতি’শো’ধ নিলাম আরকি। নিন এখন ঠ্যা’লা সামলান কিছুদিন। আর দ্রুত চলুন এখন। আমাকে নিশ্চিত আজকে মিস দাড় করিয়ে রাখবে ক্লাসের বাইরে।”

“তোকে তো আমি আজকে সন্ধ্যায় দেখছি। স্কুল থেকে আয় আজকে তুই।”
বলেই বাইক স্টার্ট দেয় শিখন।
———
“কিরে ব্যাটা জীবনেও প্রেম করবিনা বলতে বলতে শেষ পর্যন্ত একটা স্কুলে পড়া বাচ্চা মেয়ের সাথে প্রেম করা শুরু করেছিস? না একদিক দিয়ে ভালোই করছিস। আমাদের দেশের অধিকাংশ মেয়ের ফ্যামিলি ছেলের চাকরি পাওয়া পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করতে পারেনা। কেন ভাই দুইটা বছর অপেক্ষা করলে কি এমন সমস্যা হয়ে যায়? আমাকেই দেখ চাকরি পেতে এখনো দুই/তিন বছর সময় লাগবে শুনে আরশিকে বিয়েই দিয়ে দিলো। বেকার ছেলের সাথে মেয়ে বিয়ে দেবেনা তারা। কত করে রিকুয়েস্ট করলাম মাত্র দুইটা বছর অপেক্ষা করতে কিন্তু করলইনা। কি আর করার সব বাবা-মা-ই তো মেয়ের ভালো চায়। তবে তারা যদি একটু সাপোর্টিভ হয় তাহলে আমাদের মতো রাহাত-আরশিদের কি আর জিন্দা লা”শ হয়ে বেঁচে থাকা লাগে?”

রাহাতের কথায় শিখন কপাল চা’প’ড়ে বলে ওঠে,

“তোর ক’ষ্টটা তো বুঝিরে ব্যাটা। কিন্তু তোকে আমার প্রেমের কথা কে বলেছে? হৃদয়? কোথায় যে যাব আমি। আরে ওটা আমার গার্লফ্রেন্ড না। আমাদের বিল্ডিং এর দুইতলায় যে অসিফা থাকে ওকে দেখে হৃদয় ভাবছে আমার গার্লফ্রেন্ড।”

“মেয়ে তো খারাপ না। তা গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে ফেল!”

“তুই কি চাচ্ছিস আমার জীবনও তোর মতো হয়ে যাক? মেয়ের বাপ রাজনীতি পছন্দ করেনা। আমার সাথে মেয়ে দেবে বলে মনে হয় তোর? আমার আম্মুর তো বিশাল শখ অসিফাকে তার বড় ছেলের বউ বানাবে।”

“তাহলে আর চিন্তা কিসের? লেগে পড় ব্যাটা। মেয়ের বাপকে আমরা সামলাবো।”

“তুই চুপ কর তো। আমি যাচ্ছি আমার মিটিং আছে একটা।”

“তুই সারাজীবন মিটিং ই করে যা। তোর আর প্রেম বা বিয়ে-সাদি কিছু করার দরকার নেই।”

কলিংবেল বেজে উঠতেই শিখন উঠে গিয়ে সদর দরজা খুলে দেয়। বাহিরে অসিফাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শিখন গলা উচু করে বলে ওঠে,

“আম্মু তোমার হবু বড় বউমা এসেছে।”
অসিফা শিখনের এহেন কথা শুনে বিস্ফোরিত নয়নে তার দিকে চেয়ে বলে ওঠে,

“শিখন ভাই! কিসব বলছেন?”

“কেন তুই-ই তো সকালে বললি, তুই আমার একমাত্র গার্লফ্রেন্ড। তো সেই হিসেবে আমার হবু বউ এবং আম্মুর হবু বড় বউমা।”

“আরে আমি তো প্র’তি’শো’ধ নেওয়ার জন্য বলেছি। সত্যি সত্যি বলেছি নাকি? আপনি প্লিজ চুপ থাকুন।”

“কিন্তু আমিতো সত্যি হিসেবে নিয়েছি। ভেতরে এসো আমার একমাত্র গার্লফ্রেন্ড। আম্মু তোমার জন্য ভেতরে অপেক্ষা করছে।” বলেই অসিফার হাত টেনে নিয়ে সোজা ডাইনিংরুমে চলে যায় শিখন।”
লজ্জায় অসিফা মাথা নুয়ে হাটতে আরম্ভ করে।

“আম্মু দেখো এসেছে তোমার হবু বড় বউমা।”
শিখনের কথায় একগাল হেসে শিমু বেগম বলে ওঠেন,
“হ্যা এখন আমার বউমাকে আমার কাছে দিয়ে তুই যা গিয়ে তোর কপালে আবার একটু মলমটা লাগা।”
শিমু বেগমের কথা অনুসরণ করে শিখনের কপালের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে অসিফা।

“আন্টি তোমার বড় ছেলের কপালে কি হয়েছে। আজকে কি আবার বাইক এ’ক্সি’ডে’ন্ট করেছে নাকি?”

“তুই অ’ভি’শা’প দিয়েছিস তাই এ’ক্সি’ডে’ন্ট করেছি। বুঝেছিস তাহলে তুই কত বড় শাঁ’ক’চু’ন্নি?”

“বাবু! মেয়েটার সাথে ফা’ই’জ’লা’মি করিসনাতো। এমনিই অসুস্থ। তোকে যা বলেছি তাই কর। তুই তো জানিসই মা, তোর এই নেতা সাহেব সারাদিন বাইরে বাইরেই ঘুরে বেড়ায়! আজকে নাকি কাদের সাথে তুমুলভাবে বাধিয়েছে। এইযে দুপুরে কপাল ফা’টি’য়ে বাসায় ফিরেছে। আমাকে টেনশন দিয়ে দিয়ে মারবে এই ছেলে।”

“বাধিয়েছি কোথায় আম্মু? ভার্সিটিতে স্টুডেন্টদের মধ্যে মা’রা’মা’রি লেগেছিল। আর আমি কি ভার্সিটির ভিপি হয়ে তা বসে বসে দেখতে পারি? ঝামেলা থামাতে গিয়েই তো ভিড়ের মধ্যে কে যেন কপালে হঠাত একটা ইটের টুকরো মে’রে দিয়েছিল।”

“আন্টি তোমার ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়ে দাও তো। অন্তত তোমার টেনশন তো কমবে।”

“তোর বাপকে বল তোকে আর সাথে চল্লিশ লাখ টাকা দিতে তাহলে আমি কালকেই চলে যাই পারলে।”

“আন্টিইই।”
শিমু বেগম হাসতে হাসতে বলে ওঠেন,
“শিখন তুই তোর রুমে যা তো। মেয়েটাকে আর জ্বা’লা’স না। অসিফা এখানে এসে বস। ভাবি বলল তুই নাকি কিছু খাচ্ছিস না! বিরিয়ানি রান্না করেছি তোর জন্য। নে খেয়ে নে আয়।”

“মা কম কম দিয়ো। নাহলে ফুলে ওই বিরিয়ানির আলুর মতোই হয়ে যাবে।”

“শিখন ভাই!”
শিখন হাসতে হাসতে নিজের রুমে চলে যায়।
—-
কেটে গেছে কয়েকদিন। একদিন সন্ধ্যাবেলায় নিলুফা বেগম অসিফাকে নিয়ে হাজির হন শিখনদের বাসায়। এর মাঝে শিখনও মাত্র ফিরেছে বাসায়। অসিফাকে কাঁদতে দেখে শিখন বিচলিত হয়ে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
“কি হয়েছে আন্টি? অসিফা কা’দ’ছে কেন?”
মনমরা হয়ে নিলুফা বেগম বলে ওঠেন,

“এলাকার কোন ছেলেরা নাকি ওর চুলে চুইংগাম লাগিয়ে দিয়েছে। দেখো বাবা কোমর অবধি চুলগুলোর কি অবস্থা করে দিয়েছে। ওর আব্বু যদি শোনে এই কথা তবে যে কি কান্ড বেধে যাবে!”

“কারা করেছে এসব ক্ষে’পি?”

অসিফা টলমলে চোখে শিখনের দিকে চেয়ে বলে ওঠে,
“তামিম আর ওর বন্ধুরা।
অসিফার কথা শুনে এবং চুলের এহেন নাজুক অবস্থা দেখে শিখনের মাথায় ভয়ংকর রা’গ চড়ে যায়। রুমে গিয়ে কেচি নিয়ে আসতেই শেফা বেগম বলে ওঠেন,
“কেচি দিয়ে কি করবি? চুল কাটিস না। চুইংগাম তুলে ফেলা যাবে তো!”

“আমার ক্ষে’পির চুলে হাত দেওয়ার সাহস কোথায় পেয়েছে ওরা? চুলের যে পর্যন্ত ওদের হাতের স্পর্শ লেগেছে সে পর্যন্ত একদম কে’টে ফেলব আমি। আর ওদের হাতও আস্ত রাখব না আমি।” বলে ঘ্যাচাঘ্যাচ অসিফার কোমর অবধি চুল কেটে ঘাড় অবধি করে ফেলে শিখন।

“কি করলি তুই এটা? পাগল হয়েছিস?” (শিমু বেগম)

“না আমি ঠিকই আছি। আন্টি তুমি ওকে নিয়ে বাসায় যাও। সামনে পরীক্ষা না ওর? পড়তে বলো মন দিয়ে। চুল আবার বড় হয়ে যাবে।” বলে বাসা হতে হনহন করে বেরিয়ে যায় শিখন।”

পরদিন সকালে স্কুলের জন্য বের হতেই গলির মাথায় তামিম ও তার বন্ধুরা অসিফার পথ আটকে দাঁড়ায়। অসিফা তার চুলের দিকে একবার তাকিয়ে রা’গে-দুঃখে ঠকঠক করে কা’প’তে আরম্ভ করে। যেই কিছু বলতে নেবে ওমনি তাকে অবাক করে দিয়ে তামিম বলে ওঠে,

“ভাবি আমাদের ক্ষমা করে দেবেন। আর কোনোদিন ওমন ভুল হবেনা। আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন তবে যে ভাই আমাদের একদম মে’রেই ফেলবে।”
তামিমের হাতের দিকে তাকাতেই আ’ত’কে ওঠে অসিফা।

“আপনাদের হাতের এ অবস্থা কে করেছে?”

“ভাবি দরকারের বাইরে ভাই আপনার সাথে কথা বলতে মানা করেছে। আপনি প্লিজ আমাদের ক্ষমা করে দিন।”
“আমাকে ভাবি ডাকছেন কেন? আপনাদের ভাই-ই বা কে?
তামিম বাম হাত দিয়ে ইশারা করতেই অসিফা পেছনে তাকিয়ে দেখে শিখন ওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অসিফা হা হয়ে সেদিকেই তাকিয়ে থাকে। তামিম করুণ সুরে বলে ওঠে,
“ভাবি আমাদের ক্ষমা করেছেন তো?”
অসিফা ঘোরের মাঝেই বলে ওঠে,
“হু।”

তামিম ও তার বন্ধুরা এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে ছুটে পালিয়ে যায়। অসিফা বি’স্ফো’রি’ত চোখে শিখনের দিকে এগিয়ে যেতেই শিখন মৃদু হেসে বলে ওঠে,
“আমার একমাত্র গার্লফ্রেন্ডের কি স্কুলের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছেনা?”
চলবে…

#আফিয়া_অন্ত্রীশা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে