প্রতারক part 21

0
1465

প্রতারক part 21
#Roja_islam

ঐদিন এর পড় এক সাপ্তাহ অতিবাহিত হয়ে যায়। সব ঠিকঠাক থাকলেও রাহুলের ভূত আমার মাথায় চড়ে বসেছে!!! আমি না পারি ঐ গুন্ডার কথা ভাবতে না পারি ভুলতে এ কোন জ্বালা?? শিহাবের কাছে ছ্যাঁকা খেয়েও আমার এমন জ্বালা হয়নি। আমি কোন পথে হাটছি তা আল্লাহ জানে শুধু নিজেকে খুব বোকা মনে হয়। কি করছি তা নিজেই জানি না আশ্চর্য কথা।
.
সকাল সকাল ভাইয়ার রুমে ঢুকলাম দেখি আমার ভাই চকচক ঘুম দিচ্ছে!!সারা রাত নিশ্চয় পূর্নির সাথে টেম্পো চালিয়েছে।আর এখন এতো বেলা পর্যন্ত ঘুম দিচ্ছে। আহা আহা পূর্নির সাথে দেখা হওয়ার পড় থেকেই আমার ভাই হিরার চোখ – মুখ হিরার মত চকচক করে শুধু। কিন্তু আমি তো ঐদিন এর পড় থেকে বিপদে!! রাহুলের থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে থাকি না জানি কখন কি করে বসে। তার উপর গুন্ডাটার উত্তর চাই!! হুহ অসভ্য ছেলে বয়েই গেছে উত্তর দিতে আমার। ভেবে রেগেমেগে চিৎকার করে ভাইয়া কে ডাকদিলাম।
— ভাইয়া??? হিরায়ায়া। কি রে ভাইয়ায়ায়ায়ায়া উঠ বলছি ১০ টা বাজে!!
— হিরা লাস্ট চিল্লানীতে একপ্রকার লাফ দিয়ে উঠে বসে চোখ মুখ কুঁচকে বলে উঠে।সমস্যা কি তোর কেন ডাকলি???
— দেখ একদম দমকাবিনা। তোর আর পূর্নির জন্যই আমার যত জ্বালা আজ।
— হিরা বোকার মত মুখ করে বললো। আমরা কি করলাম তোর সাথে আজব!!
— তোদের জন্যই তো ……..! যা বাদ দে আমার টাকা লাগবে এক্ষুনি!!
— হিরা বিরক্তি নিয়ে বললো। বোন ঘুমাতে দে। ঐ যে। কাবার্ড দেখিয়ে। কাবার্ডের ড্রেয়েরে টাকা আছে যত ইচ্ছা নিয়ে যায়। বাট আমায় ঘুমাতে দে দুদিন বাদে বিয়ে চোখে কালি পড়লে বৌ আমায় ছেড়ে দৌড়ে পালাবে। বলেই হিরা আবার শুয়ে পড়লো কাথা নাখে মুখে টেনে।
— হীর ভেংচি কেটে বললো। ঢং তা কথা এক্টু কম বললেই পাড়িস। যত্তসব।
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


ড্রেয়ার থেকে টাকা নিয়ে হাটা দিলাম। ড্রইং রুমে।মাকে ও একপ্রকার চিল্লিয়ে ডাক দিলাম আজ আমার কি হলো আমি নিজেই জানিনা।
— আম্মু????? কই থাকো??
— হীরের মা হুবুজুবু হয়ে কিচেন থেকে ড্রইং রুমে এলো!তিনি বিস্ফারিত হয়ে বললেন! কি হয়েছে কি হয়েছে চিল্লাচ্ছিস কেনো এভাবে ??
— রাগ হলো মার কথা শুনে। মানে কি আম্মু এভাবে ডাকবোনা আমার নাস্তা কই? আমি ভার্সিটি যাবো নাস্তা করে জানো না তুমি????
— হীরের মা কপট রাগ দেখিয়ে বললেন। তা নাস্তা কি ড্রইং রুমে থাকে না। ডাইনিং এ থাকে??
— হীর বিরক্তি নিয়ে বললো। ওহ আম্মু তুমি জানো আমি ড্রইং রুমেই খেতে পছন্দ করি!! কথা না বাড়িয়ে খাবার দাও।
— হীরের মা ভেঙো করে বললো।ইশশ!! ড্রইং রুমে খাবার দাও। তা ড্রইং রুমে খাবার খাবি নাকি টিভি গিলে খাবি??
— মা তুমি ঝগড়া কম করো আমার সাথে!! চিল্লাবানা একদম ভালোলাগেনা।
— আমি ঝগড়া করি?? কত বার বলি এই সব তোর চলাফেরার ভঙ্গী বদলা হীর এভাবে টিভি দেখে খাওয়া ভালোনা।
তুই শুনিস আমার কথা???
— আচ্ছা মা টিভি অফ করে খাবো।এবার তো খাবার দাও??? ঝগড়া না করে। উফফ!!
— হ্যাঁ হ্যাঁ। যা গিয়ে বস আনছি।
.
হীরের মা তাড়াতাড়ি কিচেনে যায়। উনার চোখে পানি চকচক করছে।কিন্তু ঠোঁটে তার একরাশ প্রশান্তির হাসি। আজ কত দিন পড় সেই আগের মত ঝগড়া করতে পারলো হীরের সাথে। এই হীরকেই তো খুজছিলো হীরের মা। কতো কেঁদেছে আল্লাহ ওর কাছে তার মেয়েটা জেনো আগের মতো হয়ে যায়!! আল্লাহ এতোদিন পড় হয় তো উনার কথা শুনেছেন। হীরের মা ব্রেকফাস্ট বেড়ে চোখের পানিটা মুছে নেয়। তারপর হীরকে ড্রইং রুমে খাবার দেয়। সেখানেও একপাটি ঝগড়া করে নেয় মেয়ের সাথে। অদের ঝগড়ায় হিরার ঘুম ভেঙে যায়।আগে এমন হলে হিরা রাগ করতো মা বোনের ঝগড়া দেখে বিরক্ত হতো কিন্তু। আজ ওদের ঝগড়া শুনে ঘুম থেকে উঠে এসে ড্রইং রুমে সোফায় চুপটি করে বসে মা বোনের ঝগড়া উপভোগ করেছে। হিরাও যেমন রোজ সকালের এই যুদ্ধ খুব মিস করছিলো। ১৫ মিনিট তুমুলঝগড়ার পড় হীর রেগেমেগে ভার্সিটির জন্য বেরিয়ে যায়। হিরা তখনো ড্রইং রুমে বসে হীরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তখনি হীরের মা হিরার পাশে বসে বলে উঠে কান্নাজড়িত কণ্ঠে।
— দেখেছিস হিরা। আজ হীর..?
— হিরা মার আগে নিজেই মুচকি হেসে বললো। আজ হীর একদম আগের মতো করলো তাইনা।
— হীরের মাও এবার কেঁদেই দিলো। হ্যাঁ আমার মেয়েটা কতোদিন পড় আমার সাথে এভাবে কথা বললো। আমার মেয়েটা এবার নরমাল হবে তো হিরা। আমি আর পারছিনা ওকে এভাবে দেখতে। জানিস আজ কতদিন পড় ও সকালে নাস্তা করেছে?? মিনিমাম ৬ মাস পড়!! কি চেহারা হয়েছে মেয়েটার আমার চিনতে পারিনা ওকে আমি!!
— হিরা মাকে জড়িয়ে ধরে মাকে শান্ত করার চেস্টা করে বলে উঠে। মা কেঁদে ও না দেখবে আস্তে আস্তে হীর একদম ঠিক হয়ে যাবে।আগের থেকেও হাসিখুশী হয়ে যাবে!
— হীরের মা আচঁলে চোখ মুছে বলে উঠে। তাই জেনো হয় বাবা। আমার মা টা জেনো আগের মতো হাসে।
.
হিরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে রাহুল কে ধন্যবাদ দেয়। কারণ হিরা বুঝতে পারে রাহুল যদি হীরের পাশে না থাকতো তো আজ হীর ঠিক হওয়া তো দূর হয়তো আরো অন্ধকারে তলিয়ে যেতো। হারিয়ে যেতো সবার অজান্তেই হাসি খুশী তার বোনটা। আর কেউ জানতোইনা কিছু হীর কেনো অন্ধকারে তলিয়ে গেলো??হিরা ভাবে যা হয় ভালোই হয়। হয় তো শিহাবের থেকে রাহুলি ব্যাটার হীরের জন্য তাই তো আল্লাহ রাহুল কে পাঠিয়েছে হীরের লাইফে হীরকে আগলে রাখার জন্য!!ভেবেই হাল্কা হাসে হিরা। কারণ ভাই হিসেবে এই টুকু হিরা বুঝেছে রাহুলি হীরকে আবারো হাসি খুশী একটা জীবন দিতে পারবে।
.
.
.
বিল্ডিং থেকে বেড়িয়েই দেখি ড্রাইভার গাড়ী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একরাশ মহা বিরক্তি নিয়ে গিয়ে গাড়ীতে উঠে বসলাম।
মার সাথে ঝগড়া করে মুড খারাপ থাকলেও আশ্চর্য ব্যাপার কথায় জানি একটা শান্তি শান্তি লাগছে। কিন্তু এই গুন্ডাটার ঢং দেখলে বাঁচিনা। নিজে আমার তার সামনে পড়তে না করেছে। তাই নিজেও আমায় সামনে আসেনা হুহ। কিন্তু ঢং করে রোজ গাড়ী পাঠায় আমায় ভার্সিটি ছেরে আসতে। এবং ভার্সিটি শেষে আমার বাড়ী নিয়ে আসতে। আমি বাধ্য হয়ে বসি কারণ প্রথম দিন যেদিন ড্রাইভার আমায় দেখে বলে…….
— আপনি হীর ম্যাডাম????
.
মাত্রই বাসা থেকে বেরুই ভার্সিটি যাবো বলে। আর এর মধ্যে এক লোক এই প্রশ্নে পাশে তাকিয়ে দেখি ২৭/২৮ বছর এর এক লম্বা সম্বা লোক। আমায় ম্যাডাম বলায় অবাক হলাম কিন্তু। কিছু না ভেবেই বললাম।
— জ্বী আমি হীর কিন্তু কেনো??
— লোক টা হেসে বললো। স্যার পাঠিয়েছেন আমায় আপনাকে ভার্সিটি দিয়ে আসতে!!
— আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম। স্যার?? কোন স্যার??
— রাহুল স্যার ম্যাম? চিনেছেন?
— আমি চিনেও বললাম। না চিনিনি হয়তো ভুলে গেছি।
.
বলেই সামনে হাটা দিলাম।এর মধ্যে ফোন ভেজে উঠলো আমার। রাস্তায় তাই না দেখেই ফোন রিসিভ করলাম। আর ফেসে গেলাম।
— হ্যালো!!
— গাড়ীতে উঠো গিয়ে নাও!!
— এই বাজেকায় ধমক শুনেই চট করে ফোনের দিকে তাকালা রাহুল লেখাটা চকচক করছে তা দেখে রেগে বললাম। আমি বলেছি গাড়ী পাঠাতে?? আমি কেনো বসবো তাহলে??
— রাহুল উফফ বলে তার বিরক্তি প্রকাশ করে রেগে বলে উঠে। ওকে ফাইন তুমি উঠোনা গাড়ীতে তুমি ওয়েট করো আমি আসছি আমিই নিয়ে যাবো তোমায়। আর যেহেতু তোমার সাথে দেখা হচ্ছে তো আমার উত্তর ও চাই।আর উত্তর না দিলে তোমার ঠোঁটের বারোটা বাজাতে চাই। আচ্ছা আসছি………
— এই সব কথা কানে আসতেই দ্রুত বললাম। না না না নায়ায়ায়া আমি ড্রাইভার এর সাথেই যাচ্ছি যাচ্ছি!! প্লিজ আপনার আসতে হবে না।আমি যাচ্ছি।
— রাহুল বাঁকা হেসে বলে উঠে। গুড গার্ল টেক ক্যায়ার। বায় স্লিপিংকুইন।
.
বলেই কেটে দেয় রাহুল আর আমি বাধ্য হয়ে রাহুলের গুষ্টসুষ্টি উদ্ধার করতে করতে গিয়ে গাড়ীতে বসি। সেদিন থেকে এভাবেই আসছি। ড্রাইভার এর কথায় ভাবনায় ছেদ পড়ে আমার।
— ম্যাম আসছি!!
— জ্বী!!
.
বলেই নেমে ভার্সিটিতে ঢুকে গেলাম। ইদানীং সবাই তাকায় থাকে আমার দিকে অবাক হয়ে যারা ক্লাস মেট আমার।তার অবশ্য কারণ আছে। কারণ আমি হঠাৎ করেই এতো দামী গাড়ী দিয়ে ভার্সিটি আসি তাই। সবাই অবাক চোখে তাকায় ফ্যালফ্যাল করে। কিন্তু আমার কিছু করার নেই রাহুল এসব বললেও বুঝবেনা গাড়ী পাঠাবেই।তাই বলেও লাভ নেই। তাই বলিও নি। কিন্তু অস্বস্তি হয় খুব আমার। এসব ভাবনার মাঝেই আমার পথ আটকায় কেউ!! আমি মাথা তুলে উপর এ তাকিয়ে দেখি শিহাব করুণ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমার মায়া হলো কেনো জেনো হয় তো ভালো নেই শিহাব তা বুঝতে পেরে। এই কদিন শিহাব কলের উপর কল দিয়েছে আমায় কেনো জানি ধরিনি।হয় তো ঠিক করিনি ধরা দরকার ছিলো তাই আমি হাল্কা হেসে জিজ্ঞেস করলাম।
— কেমন আছো শিহাইব্বা??
— শিহাব অবাক হলো এতোদিন পড় সেই শিহাইব্বা ডাক হীরের মুখে শুনে। তাও করুণ কণ্ঠে বললো। ভালো নেই হীর আমায় কি ক্ষমা করা যায় না একবার????
— আমি মুচকি হেসে বললাম। চলো বসে কথা বলি??
— শিহাব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো। চলো।
.
দুজনে গিয়ে বট তলায় বসলাম।আমি এদিক সেদিক দেখছি অনেকদিন পড় শিহাবের সাথে এভাবে কলেজে বসা।আগেতো রোজ বসে প্রেম করতাম। বেশকিছুক্ষণ পড় শিহাব বললো।
— সাতদিন ধরে কল দিচ্ছি!! ধরোনি কেনো?? ভার্সিটি তেও দেখা মেলেনা কোন সময় আসো কোন সময় যাও!!
— আসলে………….
— হীর আমায় কি ক্ষমা করা যায় না??
— আমি একটা মুক্তশ্বাস নিয়ে বললাম। অবশ্যই ক্ষমা করা যায়।কেনো যাবেনা তুমি যা ঠিক মনে করেছো তাই করেছো।
.
.
.
চলবে!
[অনেকেই আজকের পার্ট পড়ে ভাববা। আমি হাবিজাবি বেশী লিখছি রাহুল নেই কেনো কোথাও। তাদের বলি!!গল্প কিন্তু হীরকে নিয়ে আর আমি এটাই বুঝাতে চাইছি গল্পে। আমারা একজন মানুষের কাছে ঠকি কষ্ট পাই। আবার একজন মানুষের সংস্পর্শ এই আমরা স্বাভাবিক জীবন পাই। জীবনে একবার ঠকে কাউকে বিশ্বাস না করা পাবলিক দের জন্য আমার এই গল্প। যেমন শিহাবের মতো নিতুর মতো মানুষ আছে। তেমনি খুব অপরিচিত রাহুলের মতো মানুষ ও আছে যাদের বিশ্বাস করতে ভয় করলেও। তারা খারাপ না!! নিশ্বার্থ ভাবেই ভালোবেসে যায় তারা!!তাদের একটা সুযোগ দেওয়াই যায়।
বিঃদ্র – আমি কত টুকু ঠিক লিখছি জানি না। ছোট মানুষ ভুল বললে ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য। আর হ্যা কাল গল্পে সারপ্রাইজ আছে একটা ?☺]
Roja Islam

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে