প্রণয়ে প্রলয়ের সুর পর্ব-০১

0
1317

#প্রণয়ে_প্রলয়ের_সুর ( পর্ব- ১ )
লেখা: জবরুল ইসলাম

‘ফেইসবুকে তো খুব চুম্মাচাটির গল্প লিখেন, এখন এতো লজ্জা পাচ্ছেন কেন?’

তরু জান্নাত বিস্মিত হয়ে নির্জন চৌধুরীর দিকে তাকায়। উনি তার লেখালেখির বিষয়ে জানলেন কীভাবে? নিশ্চয় কেয়া ফুপুর কাজ এটা? আদরের সৎ ছেলেকে সবকিছু বলে বেড়ানো শুরু করেছে। তাছাড়া উনি এভাবে তাচ্ছিল্য করে ‘চুম্মাচাটির গল্প’ বলছেন কেন?

– ‘কি সিদ্ধান্ত নিলেন? ভিজে ভিজে যাবেন?’ নির্জনের নীরস প্রশ্ন।

তরু ইতস্তত করছে। তার সঙ্গে ছাতা নেই। বাইরে তুমুল বৃষ্টি। ঘণ্টা দুয়েক থেকেই হচ্ছে। তাই হয়তো নির্জন সাহেব ছাতা হাতে বের হয়েছেন। স্টেশন থেকে বের হয়ে খানিকটা দূরে গিয়ে সিএনজিতে উঠতে হবে। যেতে হবে উনার সঙ্গে একই ছাতা দিয়ে, এটাই সমস্যা। সে শুধু আমতা-আমতা করে বলেছিল, ‘একই ছাতা দিয়ে দু’জন কীভাবে যাব?’

তাতেই উনি রেগে গেলেন। রাগ যেন নাকের আগায় নিয়ে ঘুরে বেড়ান। সে সৌজন্যের হাসি দিয়ে বললো, ‘স্যরি ভাইয়া, আপনি মনে হয় রাগ করেছেন। সমস্যা নেই চলুন যাই।’

নির্জন কেমন করে যেন তার দিকে তাকায়। চোখে চোখ পড়তেই তরু দৃষ্টি সরিয়ে নিল। উনার সঙ্গে তার তেমন একটা দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। কেয়া ফুপুর বিয়েতে হয়েছিল। অদ্ভুত একটা বিয়ে। নির্জন চৌধুরীর বাবা ইশহাক চৌধুরী বছর খানেক আগে রূপগঞ্জ গিয়েছিলেন। সেখানে তাদের গ্রামের বাড়ি। কেয়া ফুপুকে ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে গ্রামের রাস্তায় দেখে পঞ্চাশ বছরের বুড়ো প্রেমে পড়ে গেল। উথাল-পাতাল প্রেম। নির্জন চৌধুরীকে রেখে ওর মা অনেক আগেই মারা গিয়েছিলেন। তবুও বিয়ে করেননি ইশহাক সাহেব। কিন্তু কেয়া ফুপুকে দেখে এত বছরের বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত পালটে নিলেন। বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হলো। তরুর দাদা, বাবা সবাই রাজি হয়ে গেলেন। কীভাবে রাজি করা হয়েছে জানা নেই। তবে বিয়ের চার-পাঁচ মাস পর তরুর মেঝো চাচা ইতালি গিয়েছেন। টাকা-পয়সা সহ সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন ইশহাক চৌধুরী।
তাছাড়া ইশহাক চৌধুরী দেশের নামকরা একজন বিজনেসম্যান। জনশ্রুতি আছে রাজনীতিতেও যোগ দেবেন। দুইহাতে টাকা-পয়সা দান করেন। গ্রামে উনার একটা স্কুল আছে। মসজিদ আছে। রাস্তাঘাট করে দেন। ঢাকায় বিশাল বড়ো বাসা। সব মিলিয়ে কেয়া ফুপুও রাজি হয়ে গেল। তার চিন্তা-ভাবনা একটু অন্যরকম ছিল। ওইসব সুন্দর, কমবয়সি ছেলের টানাটানির সংসার থেকে টাকা-পয়সা, দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানো, শপিং, সোনা-গয়না, দামি মোবাইল, অভিজাত রেস্তোরাঁয় খাওয়া, সামাজিক মর্যাদা ইত্যাদির গুরুত্ব তার কাছে বেশি ছিল। তাই বয়স্ক বর নিয়ে মাথা ঘামায়নি। ব্যক্তিগতভাবে তরু পছন্দ করেনি এই বিয়ে। কিন্তু কাউকে কিছু বলেনি, তরু ফুপুকেও না। পরিবারের বিশেষ সকল বিষয়ে ভেতরে ভেতরে ছেলে-বুড়ো সবারই কিছু মতামত থাকে। কিন্তু প্রকাশ করে শুধু বড়রা। এটাই তো নিয়ম।
বিয়েটা এরপর হয়ে গেল। কেয়া ছিল ভাই-বোনদের মধ্যে সকলের ছোট। তরুর বাবা তাদের সকলের বড় ভাই। সে হিসাবে কেয়ার থেকে তরুর বয়সের ব্যবধান মাত্র বছর চারেক। এক সঙ্গেই তারা বান্ধবীদের মতো সব সময় থেকেছে। তরু একটা ব্যাপার বুঝতে পারছে না। নির্জন সাহেবের মতো নাক উঁচু বড়লোকের সন্তান প্রাইভেট গাড়ি ছাড়া তাকে নিতে এলো কেন? অতি সাধারণ বেশভূষা। পায়ে কালো স্লিপার। গায়ে ফুলহাতা কফি কালার গেঞ্জি কনুই অবধি গুটানো। লম্বা চুল। ফরসা মুখে চিকচিক করছে কালো খোচাখোচা দাড়ি।

– ‘নিন ছাতা নিয়ে আপনি পিছু পিছু আসুন। আমি যাচ্ছি।’ গম্ভীর গলায় নির্জন চৌধুরী কথাটি বলে ছাতা বাড়িয়ে দেয়।

তরু ভাবনা থেকে বের হয়ে ছাতা হাতে নিয়ে বললো, ‘না ভাইয়া, একসঙ্গেই যাব, বৃষ্টি পড়ছে, প্লিজ ছাতার ভেতরে আসুন।’

কথাটি যেন শুনতেই পেল না নির্জন। সে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে হাঁটতে শুরু করলো। তরু অবাক হয়ে পিছু থেকে তাকিয়ে রইল। উনি অকারণ তার সঙ্গে এত মেজাজ দেখাচ্ছেন কেন? খুব একটা কথাবার্তাও তো কখনও হয়নি তাদের। তরু ছাতা হাতে নিয়ে রাস্তায় এলো। নির্জন হাত তুলে একটা সিএনজি দাঁড় করিয়ে অপেক্ষা করছে। তরু কাছে যাওয়ার পর বললো, ‘ছাতা আমার কাছে দিয়ে উঠুন।’

তরু উঠে বসে। নির্জন সামনের সিটে বসতে যেতে চাইলে ড্রাইভার বললো, ‘সামনের সিটে বসলে সমস্যা আছে, পিছনে বসতে হবে।’

নির্জন ইতস্তত করে তরুর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘সেলিব্রিটি লেখিকা ম্যাডাম, আমি পাশে বসলে কোনো সমস্যা?’

– ‘তা কেন হবে আসুন।’

– ‘আমি তো ভেজা।’

– ‘কিচ্ছু হবে না, আসুন তো।’

নির্জন ছাতা গুটিয়ে নিয়ে এসে পাশে বসে। মিষ্টি একটা ঘ্রাণ পায় তরু। নির্জন কপালে আসা ভেজা চুলগুলো হাত দিয়ে উপরে তুলছে। তরু ব্যস্ত হয়ে বললো, ‘আপনি তো ভিজে একেবারে একাকার, জ্বর আসবে তো, এভাবে ভিজতে গেলেন কেন বলুন তো।’

নির্জন কোনো জবাব দিল না। সিএনজি চলছে। তরু ওর ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে বাড়িয়ে দিয়ে ইতস্তত করে বললো, ‘এটা দিয়ে চাইলে আপনি মাথাটা মুছে নিতে পারেন।’

– ‘না লাগবে না।’

তরুর এবার হাসিই পেল। সে মুচকি হেসে ক্ষীণ সময় তাকিয়ে থেকে বললো, ‘আপনি এরকম কথা বলছেন কেন বলুন তো?’

নির্জন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, ‘কিরকম বলেছি? আপনার সঙ্গে তো আমার তেমন কোনো পরিচয় নেই, তাই হয়তো কম কথা বলছি।’

– ‘আমি অপরিচিত আপনার?’

নির্জন খানিক সময় নিয়ে বললো, ‘এমনিতে আমাদের সম্পর্ক হয়তো ঘনিষ্ঠ। মামাতো বোন হোন। কিন্তু আদতে আমাদের তো সেরকম কথাবার্তা হয়নি। মানে নতুন সম্পর্কের মতোই তো..।’

তরু মুচকি হেসে বললো, ‘হ্যাঁ সেটাই, আমরা তেমন পরিচিত না। তাই অকারণ রাগ করার কথাও না। মানুষ মূলত রাগ করে খুবই চেনা মানুষের সঙ্গে, পূর্বের কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে। আপনার সাথে আমার কি পূর্বে কিছু ঘটেছে?’

– ‘ওরে বাবা, সিএনজিতে বসে লেকচার শুরু করলেন যে? লেখিকাগিরি ফলাচ্ছেন না-কি?’

এরকম কেউ কথা বললে তরু প্রচণ্ড রেগে যায়। নিজেকে তবু শান্ত রাখলো। বুকে হাত বেঁধে হেলান দিয়ে বসে বললো, ‘আমার প্রশ্নটার উত্তর দিন।’

– ‘কীসের প্রশ্ন?’

– ‘অকারণ রাগারাগি করছেন কেন?’

– ‘আমি রাগ করে আছি কেন মনে হচ্ছে? আমি তো স্বাভাবিকই।’

তরুর পুরো ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগছে। আগে কোনোদিন কথাও হয়নি, অথচ রাগারাগি করছে খুবই ঘনিষ্ঠ মানুষের মতো। পূর্বেজন্মে কি একসঙ্গে সংসার-টংসার করেছিল? না-কি তরুর ঝগড়াটে প্রেমিক ছিল? কথাগুলো ভেবে তরুর প্রচণ্ড হাসি পেল। হাসি আঁটকে রাখার চেষ্টা করছে সে। কিন্তু পারছে না। দুইহাতে মুখ ঢেকে শেষপর্যন্ত শব্দ করে হেসে ফেললো সে। নির্জন মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে অবাক হয়ে তাকায়।

*
বাইরে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। তবুও সিএনজিতে বসে ভীষণ ঘামছে কেয়া। মাথায় চিন্তার ঝড় বইছে। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। পুনরায় মোবাইলে মেসেজ টিউন বেজে উঠলো। তন্ময়ের মেসেজ, ‘এই বের হয়েছো?’

– ‘হ্যাঁ, সিএনজিতে আছি।’

– ‘শাড়ি পরেছো তো ম্যাডাম?’

এত দুশ্চিন্তার মাঝেও মুচকি হাসলো কেয়া। এই ছেলেটিকে সে এজন্যই এড়িয়ে চলতে পারে না। কতদিন ভেবেছে আর দেখা করবে না, আর না, আল্লাহ বরদাস্ত করবে না, এ পাপ, ভীষণ পাপ। তবুও কেয়া নিজেকে তন্ময় থেকে দূরে রাখতে পারে না। যখনই ডাকে, সকল প্রতিজ্ঞা ভেঙে ছুটে যায়।
কেয়া রিপ্লাই দিল, ‘তুমি একটা পাগল তন্ময়, কত ভয়ে ভয়ে বের হয়েছি জানো? এরমাঝে শাড়িও পরতে হয়েছে।’

– ‘আসো ম্যাডাম, সকল ভয় ভুলিয়ে দেবো। কি সুন্দর ওয়েদার। প্রকৃতি আমাদেরকে সঙ্গ দেবে আজ।’

– ‘সারাক্ষণ শুধু এসব ঘুরে মাথায় তাই না?’

– ‘ঘুরবে না বলো? সেই স্কুল জীবন থেকেই তো আমি মনে-প্রাণে তোমারই পুজো করে আসছি। আমার এই মাথা তো তুমি বহু বছর আগে থেকেই দখল করে আছো।’

কেয়ার ভয় খানিকটা কেটে গেল। মুচকি হাসছে সে। তন্ময়ের কথা শুনলেই বুকের ভেতর রক্ত যেন চলকে পড়ে। পুরো শরীরজুড়ে তখন সেই রক্ত ছড়িয়ে পড়ে আলোড়ন তুলে। এই আলোড়ন, শিহরণ কখনও জাগাতে পারেনি ইশহাক চৌধুরী। পুনরায় মেসেজ টিউন বেজে উঠলো, ‘কেয়াজান, জানো গতরাতে কি স্বপ্ন দেখেছি?’

– ‘এই, মেসেজে এত কথা বললে আমি যে আসছি তখন কি বলবে?’

– ‘তোমার সঙ্গে আমার কথা কখনও ফুরাবে বুঝি? তুমি সামনে এলেই তো আমি কবি হয়ে যাব।’

– ‘তাই?’

– ‘শুধু কি তাই? এত রূপ নিয়ে তুমি সামনে এসে দাঁড়ালে ফুল ভুল করে গাছ রেখে আমার বুকে ফুটে যাবে।’

কেয়া ফিক করে হেসে ফেলে। ড্রাইভার পিছু ফিরে তাকায়। কেয়া নিজেকে সামলে নিয়ে মেসেজ দেয়, ‘তুমি একটা পাগল, আমার সর্বনাশ করে ছাড়বে তুমি, ডুবিয়ে মারবে আমায়।’

– ‘হ্যাঁ, অবশ্যই ডুবিয়ে মারবো কেয়াজান। তোমার জন্য বুকের ভেতর কয়েকটি আটলান্টিকের সমান প্রণয়ের মহাসাগর পুষছি।’

– ‘দিন-রাত বই পড়ো না-কি এখনও? খুব তো মিষ্টি মিষ্টি কথা বলো।’

– ‘বই পড়ি ঠিক আছে, ছোটবেলা থেকেই পড়তাম তা তো জানোই, আমার স্কুল শিক্ষক বাবা বাসায় বই ঠেসে রেখেছিল। কিন্তু কেয়াজান, বইয়ের ক্রেডিট না। আমার মিষ্টি মিষ্টি কথা বলার ক্রেডিট কেবলই তোমার রূপ পাবে।’

কেয়া মুচকি হেসে কপালে হাত দেয়। সিএনজি এসে একটি নির্জন গলি দিয়ে ঢুকে হোটেলের সামনে থামে। কেয়া ভয়ে ভয়ে চারদিকে তাকায়। তখনই তন্ময়কে বের হয়ে আসতে দেখা গেল। একটা কালো টি-শার্ট আর জিন্স পরনে। পায়ে কেডস। এলোমেলো লম্বা চুল। এগিয়ে এসে বিদ্রুপ করে ছাতা মাথার উপর তুলে ধরলো। যেন সে রাণীর অনুগত কর্মচারী। চোখে-মুখে অর্থবহ হাসি।
ভাড়ার পর্ব চুকিয়ে কেয়া ওর দিকে তাকায়। হলকা-পাতলা একটি তরুণ। চোখে থেকে সারাক্ষণ কৌতুক যেন উপচে পড়ছে। পাতলা ঠোঁট, তার উপরে কোমল লোম। কিছু কিছু ছেলেদের একটু বেশি দেরিতেই বুঝি দাড়ি-গোঁফ গজায়। দু’জন সিঁড়ি বেয়ে উপরে একটি রুমে আসে। কেয়া বিছানায় ভ্যানিটিব্যাগ রাখে। তন্ময় পিছু ফিরে তাকিয়ে বললো, ‘দরজা আঁটকে দেই?’

মুচকি হাসে কেয়া। তারপর বিছানায় বসে বলে, ‘আঁটকে দিতে অনুমতি দেয়া মানে অন্যকিছুর অনুমতি না। এমনিতেই বসার জন্য আর কিছু না।’

তন্ময় দরজা বন্ধ করে এসে মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে কেয়ার কোলে মাথা রেখে বললো, ‘আর কিছু না মানে?’

কেয়া ওর চুলে আঙুল ডুবিয়ে বললো, ‘মানে আজেবাজে কোনো আবদার আজ করা যাবে না। আমার তাড়াতাড়ি আজ যেতে হবে। তরু আসবে, নির্জন ওকে রিসিভ করতে গেছে।’

তন্ময় মাথা তুলে তাকিয়ে বললো, ‘তুমি কোন আবদারকে আজেবাজে বলছো? একটু ক্লিয়ার করে বলো?’

কেয়া মুচকি হেসে বললো, ‘ভালো করেই বুঝেছো, আমার কাছ থেকে শোনা লাগবে না।’

তন্ময় পাশে বসে হাত ধরে বললো, ‘এটা আজেবাজে কাজ?’

কেয়া মুচকি হেসে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘না।’

তন্ময় ওকে পেছনের দিকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে বললো, ‘এটা?’

– ‘না।’

তন্ময় এবার পা তুলে বসে বললো, ‘আচ্ছা বিয়ের পর মেয়েরা কেমন বড়ো হয়ে যায় তাই না? তুমি আমার বয়সে তো ছোটই হবে। অথচ আমার কাছে বড়ো মনে হয়।’

– ‘কারণ শাড়ি পরেছি।’

– ‘কিছু মোটাও হয়েছো।’

– ‘তাই?’

– ‘হ্যাঁ।’

– ‘খারাপ লাগছে দেখতে?’

তন্ময় পা থেকে একেবারে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো, ‘ভালোই লাগছে, আর কোমরের দিকে খোলা পিঠ আমাকে আজেবাজে কাজের জন্য উসকানিও দিচ্ছে।’

কেয়া শাড়ি ঠিক করে চোখ পাকিয়ে বললো, ‘তুমি দূরে সরে বসো তো। আরেকটু দূরে যাও। এমনিতেই বৃষ্টির মধ্যে এনেছো।’

– ‘আচ্ছা থাক, আজেবাজে কিছু বলছি না। তুমি পা তুলে মুখোমুখি বসো। মনভরে দেখি তোমাকে।’

কেয়া উঠে আসন পেতে বসে। তন্ময় ওর হাত দু’টো নিজের হাতে নিয়ে বললো, ‘একদিন চলো দু’জন বেড়াতে যাই।’

– ‘কোথায়?’

– ‘নৌকা ভ্রমণে যাবে?’

– ‘ইশহাক জানলে দু’জনকেই গু*লি করে মা*রবে।’

তম্ময় মুখ অন্ধকার করে বললো, ‘বুড়োটাকে সামনে আনলে কেন? জানো না, আমি বিশ্বাস করি না তোমার একজন বর আছে..।’

কেয়া হাত বাড়িয়ে ওর গালটা ছুঁয়ে বললো, ‘আচ্ছা স্যরি, মন খারাপ করো না।’

– ‘তাহলে মন ভালো করে দাও।’

– ‘প্লিজ আজ এসব না, আমাকে যেতে হবে।’

– ‘কোন সব?’

– ‘তুমি ভালো করেই জানো।’

– ‘আমি তো চেয়েছি তুমি আমার বুকে পিঠ ঠেকিয়ে বসো। আমি জড়িয়ে ধরে বসে গল্প করবো। এটা করা যাবে না?’

কেয়া মুচকি হেসে তার কোল ঘেঁষে এসে বসে। তন্ময় ওকে বাহুডোরে বেঁধে থুতনি কাঁধে ঠেকিয়ে বললো, ‘তুমি বারবার কি করবে না বুঝাতে চাচ্ছ? চুমু খেতে পারবো না? এতক্ষণ হয়ে গেল একটা চুমুও খাইনি।’

কেয়া পিছু ঘুরে ওর গলা জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে কপাল বাড়িয়ে দিল। চুমু খেল তন্ময়। তারপর দীর্ঘ সময় দু’জন চোখে চোখে তাকিয়ে থাকলো। নিঃশব্দে কত সহস্র কথা কথা হয়ে গেল তাদের। তন্ময় এক সময় নীরবতা ভেঙে গাঢ় গলায় বললো, ‘আমাকে তুমি আজ একটু আদরও করছো না।’

কেয়া গালে একটা চুমু খেল তার। তন্ময় মুচকি হেসে লেকচারের ভঙ্গিতে বললো, ‘আচ্ছা একটা ব্যাপার কি জানো কেয়া? মানুষ মূলত নিজেকেই নিজে অপমান করে।’

– ‘কীভাবে?’

– ‘সে যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছে সেটাকে বলে ‘আজেবাজে কাজ’। এটা কিছু হলো বলো কেয়া? সবারই উচিত এটাকে পবিত্র কাজ মনে করা কিংবা ‘পবিত্র একটি খেলা’ বলা। এই খেলাকে উপেক্ষা করতে নেই, অশ্রদ্ধা করতে নেই।’

কেয়া হেসে তন্ময়ের বুকে মুখ লুকোয়। এই ছেলেকে নিয়ে যে কি করবে সে ভেবে পায় না। একদিকে সংসার, অন্যদিকে তন্ময়ের উত্তাল প্রেমের আহবান। এর শেষ কোথায়? সমাধান কি? কেয়া জানে না।

__চলবে___

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে