প্রণয়িনীর হৃদয়কোণে পর্ব-১৩+১৪

0
1803

#প্রণয়িনীর_হৃদয়কোণে
#আফসানা_মিমি
| তেরো তম পর্ব | + |চোদ্দ তম পর্ব |
❌ কোনভাবেই কপি করা যাবে না।❌

কিছু সময়ের ব্যবধানে পরিবেশ পরিবর্তন হয়ে গেল। কলেজের বাস মনে হয় এতক্ষণে সিলেটে পৌঁছে গেছে। শুধু আমি অবলা নারী সাদা কইতর এবং আবরারের ডাব্বার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। দুজনের সমনে এক বোতল বাংলা ম’দ। এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, আমি কীভাবে বাংলা ম’দ চিনি! বলছি, বাংলাদেশের সিনেমাতে প্রায়শই দেখা যায় ভিলেনরা প্লাস্টিকের বোতলে সাদা কি যেন খায়। আর টলতে থাকে। অনেক সিনেমাতে তো বলেই দেয় যে, ” মাদ খাবি, মদ! বাংলা মদ।”
আমি সেখান থেকেই শিখেছি। সাদা কইতর লোভাতুর দৃষ্টিতে ম’দ দেখছে। ম’দ যেন তাকে আহ্বান জানাচ্ছে কাছে আয় কাছে আয় বলে। সাদা কইতর মাথা চুলকে আবরারের ডাব্বাকে বলছে,

” খেলেই যা হবার তা হয়ে যাবে?”

ও মা! কচি আলুটা আমার। বাজে জিনিস খাবে এখন আবার জিজ্ঞেস করছে! বলি কী এসব লাউ কুমড়ো আনার আগে কী পড়াশোনা করে আনেনি! যে বাংলা ম’দ খেলে তা হবার তাই ই হয়ে যাবে। আমার মতো ইনোসেন্ট বাচ্চার সামনে ভালো সাজা হচ্ছে! আবরারের ডাব্বা হাসিমুখে উত্তর দেয়,
” আরে দোস্ত, ভাবছিস কেন? তোর সব সমস্যা আজ রাতেই সমাধান হয়ে যাবে। একবার খেয়েই দেখ।”

আমার ইচ্ছে করছে বলতে,
” আব্বায় বলেছে ভালো থাকতে,
আম্মায় বলেছে ভদ্র থাকতে।
কিন্তু সাদা কইতর,
টাল হুয়ে মাতাল হইতে চাইছে
কেউ তো ডাকো সুন্দরী আন্টিকে,
সাদা কইতরকে আমার সাথে বিয়ে দিতে।

বিয়ে করব তাও আবার সাদা কইতরকে? আমি তো বাংলা সিনেমায় এটাও দেখেছি। নায়করা ম’দ খেয়ে নায়িকাদের সাথে উলটা পালটা করে তারপর বিয়ে করে। সাদা কইতর যদি এমন কিছু করে। না, আমি সাদা কইতরকে মে’রেই ফেলব।
সাদা কইতর বোতল থেকে অল্প একটু ম’দ গ্লাসে ঢালল। গ্লাসের আঁকারটা ঐ যে বড়োলোকেরা পঁচা জায়গা অর্থাৎ ক্লাবে গিয়ে খায় যেমন ছোট ছোট গ্লাসে ঠিক তেমন। চোখ বন্ধ করে সাদা কইতর এক গ্লাস গপ করে গিলে ফেলল। এবার কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি। আমি অনুভব করতে পারছি সাদা কইতরের মাথা ঘুরছে সাদা কইতর এবার দাঁড়াবে আর টলতে থাকবে। এরপর এরপর আমাকে নাআআআআ
সাদা কইতর একটা ঢেকুর তুলে আমার দিকে ফিরল। মুখে পূর্বের বাঁকা হাসি এনে বলল,

” এবার তোমার পালা মনপাখি!”

শুরু, মাতালের মাতলামি এবার শুরু হবে। এর থেকে যে আজ কীভাবে নিজেকে রক্ষা করব কে জানে! আবরারের ডাব্বার দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম ব্যাটা শয়তানি হাসি হাসছে। ইচ্ছে করছে আবরারের ডাব্বাকে তুলে পুকুরে ফেলে দিতে।
আমরা বর্তমানে একটা ছোটখাটো রিসোর্টের মধ্যে অবস্থান করছি। সাদা কইতর বাস থেকে আমাকে নামিয়ে আনতেই তখন বাস ড্রাইভার আপনা জান বাঁচাতে ইঞ্জিন চালু করে পাড়াপাড় হয়ে যায়। আমি তখন ভিতু দৃষ্টিতে আশেপাশে ডাকাতদের খোঁজ করছিলাম। ঠিক তখনই অনেক মানুষের চিল্লানোর আওয়াজ শুনতে পাই যা আবরারের ডাব্বার ফোন থেকে বের হয়। তখনই আমার সমস্ত বিষয় পরিস্কার হয়ে যায়। সাদা কইতর সাউন্ড সিস্টেম চালু করে ডাকাতদের আওয়াজ বাজিয়ে গাড়ি দাঁড়া করায়। আর নিজের আত্মরক্ষার জন্য সাদা ধোঁয়ার তৈরি কর রক্ষা করে। কী দুর্দান্ত বুঝি এদের। নিশ্চয়ই বাস ড্রাইভারও এদের পরিচিত। এছাড়াও কলেজের কেউ এদের সাহায্য করেছে আমি নিশ্চিত। তাই তো এরা এখানে বসে বাংলা ম’দ খাচ্ছে।
দাঁড়িয়ে দাঁত দিয়ে নখ কেটে ভাবছিলাম তখনই সাদা কইতরের বাকবাকুম শুনতে পাই,
” আয়মান, তোমাকে কতদিন না করব দাঁত দিয়ে নখ না কাটতে। তুমি কী বাচ্চা?”

আজ আমার সব ভাবনা উলটা হচ্ছে কেন? আমি এতক্ষণ ভেবেছি সাদা কইতর মা’ল খেয়ে টাল হয়ে উলটা পালটা কাজ করবে। এখন দেখছি ব্যাটা উলটা কাজ করছে। আর তা হচ্ছে তুবার মাথা খাওয়া। মাতাল হয়েও আমাকে বকে যাচ্ছে? বাংলা ম’দের কি দুর্দান্ত পাওয়ার। এজন্যই বুঝি মানুষ এসব খায়! সাদা কইতর আবারও বলছে,
” উত্তর দিচ্ছো না কেন চঞ্চলপাখি!”

চঞ্চলপাখি? মা গো মা! কি সম্মোধন। কিছু হবে বলে নিজেকে ধাতস্থ করে বললাম,
” উত্তর দিয়ে কী আর করব। এখন যা হবার তোমার মর্জিতেই হবে। আমার বাঁধা কী মেনে নিবে?”
” মাথা ঠিক আছে তো! বাঁধা দিবে মানে? আর একা একা কোথায় যাচ্ছিলে? আমি না আসলে কী হতো!”

ইশশশ ছোট বাবু। যেন কিছুই বুঝে না। এখন যে সে উলটা পালটা কাজ করবে তাও কী ঢোল পিটিয়ে বলবে?

” কলেজের সবাই ছিল। তুমি আসলেই কী না আসলেই কী। তুমি তো আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছ।”

সাদা কইতর উঠে দাঁড়াল। ঘাড়ে হাত ঘষে আবরারের ডাব্বার উদ্দেশ্যে বলল,
” তুই সমস্ত ব্যবস্থা করে ফেল আবরার। আমি এই চঞ্চলপাখির চঞ্চলতা কমিয়ে আসছি।”

” ওরে ব্রো! আগে বল এখন তোর অবস্থা কেমন।”

আবরারের ডাব্বার কথা শুনে সাদা কইতর আমার দিকে ফিরে তাকাল এরপর সাদা কইতরের বিখ্যাত শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,

” এখন আমি অনেক ভাল আছি। কিছুক্ষণ পর আরো ভাল হয়ে যাব।”

কথায় কথায় হাত ধরে টানাটানি যেন এই সাদা কইতরর স্বভাব হয়ে গেছে। হাত ধরে টানতে টানতে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে। আমাকে ভালভাবে বললে কী সাদে যেতাম না? এভাবে টেনে নেওয়ার কী আছে। আমার এখন সিনেমার ডায়লগ দেওয়া উচিত। তাহলে আর অপেক্ষা কিসের? বলেই ফেললাম,

” সাদা কইতর ছেড়ে দে শয়তান! তোর মনের আশা কখনো পূরণ হবে না। তুই আমার দেহ কি নখের আগাও ছুঁতে পারবি না।”

সাদা কইতরের দৌঁড় থেমে গেল। আমিও খুশি হলাম আমার কথা কাজে দিবে ভেবে। আজ সাদা কইতরকে বাঁকা থেকে সোজা করেই ছাড়বো। শব্দ করে হাসছিলাম সাদা কইতরের কথা শুনে মুখ একটুখানি চুপসে গেল,
” কি বললে আয়মান? আমি শয়তান? আচ্ছা, তাহলে শয়তানের মত কিছু কাজ করি?”

আল্লাহ আমাকে কণ্ঠস্বর দিয়েছে ঠিকই কিন্তু আমি কণ্ঠস্বরের অপব্যবহার করি বেশি। যেমন: এখন এসব কথা বলার কোন দরকার ছিল? কিন্তু আমি বলেই ফেলেছি আর এখন শাস্তি পাচ্ছি। সাদা কইতর আমাকে কাঁধে তুলে নিয়ে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে। এত বাংলা সিনেমা দেখে কি হবে যদি সেটার অপব্যবহার না করি! সাদা কইতরের পাঠে ইচ্ছেমত কিল ঘুষি দিচ্ছি। আমার মতো পিঁপড়ের মার খেয়ে সাদা কইতর হাসছে।
রিসোর্টের এক পাশে এনে দাঁড়িয়ে যায় সাদা কইতর। আমাকে নামিয়ে পিছন থেকে এত হাতে জড়িয়ে ধরে হাঁটা শুরু করে। পুতুলকে যেমন ইচ্ছে তেমন নাচানো যায়। সাদা কইতর আমাকেও তেমন নাচাচ্ছে মানে হাটাচ্ছে। সাদা কইতর পাশে, নিশ্বাসের আওয়াজ বেড়ে যাচ্ছে। অপরিচিত অনুভূতি মনে জন্মাচ্ছে। হাঁটছি তো না! নড়াচড়া করছি বেশি। মূলত সাদা কইতরকে বিরক্ত করার চিন্তা। সাদা কইতর এক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে অতিষ্ঠ হয়ে বলে,
” কী সমস্যা তোমার?”

মাতালের মাতলামি শুরু। আমিও কম যাই না। চোখে চোখ রেখে বললাম,
” ঐ মাতাল, বাংলা ম’দ খেয়ে একদম মাতলামি করতে আসবে না। আমি নিজের আত্মরক্ষা করতে জানি। কাছে আসলে একদম,,,,

মুখের কথা মুখেই আটকে গেল। সাদা কইতর রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে যেন এখনই পাশের পুকুরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে।
“তুমি কি কখনো ভাল হবে না আয়মান? কি সুন্দর রোমান্টিক মুডে ছিলাম। আমার সুখ কী তোমার সহ্য হয় না? আর কে মাতাল শুনি?”

মাতালরা কখনো মাতলামির কথা মুখে স্বীকার করে? কখনোই না। সাদা কইতর যতই ভাব ধরুক না কেন আজ আমি এই সাদা কইতরের থেকে নিজেকে রক্ষা করেই ছাড়বো।

” আপনি মাতাল। আর এখন আমার সাথে ইয়ে করতে চাইচ্ছেন।”

সাদা কইতর মাথায় হাত চালিয়ে বলল,

” ওরে আমার চঞ্চল পাখি। তোমার এই চঞ্চলতার জন্যই তো আমি বেশি দুর্বল হয়েছি। এখন যে ঘরে থাকা দায় হয়ে গিয়েছে। এর দায়ভার কে নিবে শুনি? তুমি নিবে? নাকি পাগল প্রেমিকের মতো রাস্তায় রাস্তায় এভাবেই ঘুরে বেড়াতে হবে।”

” কি বলছেন? মাথা ঠিক আছে তো?”

” কিছুই ঠিক নেই আয়মান। আমি বেঁচে থেকেও মরে যাচ্ছি। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।”

গেল রে গেল সাদা কইতরের মাথাটা বুঝি এবার গেল। মাতাল হয়ে উলটা পালটা বকছে। একটু পর আসল কাজ শুরু করবে।

” আমাদের গলির হাতুড়ে ডাক্তারের নাম্বার আছে। তাকে কল করব? জিজ্ঞেস করব এই রোগের ঔষধ?”

“আরে বোকাপাখি, আর কত জ্বালাবি। আমি বুঝে গেছি তুমি ঠিক হবে না। উল্টাপাল্টা কাজ করেই যাবে। তুমি যত উল্টাপাল্টা করবে ততো আমি দিওয়ানা হবো। চলো আজ তোমাকে সারা জীবনের জন্য নিজের করে নেব।”

সাদা কইতর আগের মতোই আমার হাত ধরে টেনে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে। এদিকে আমি সমানতালে বকছি,
” আমি যাব না সাদা কইতর আমি যাব না না না না না, আমি যাব না। কে কোথায় আছো গো আমাকে বাঁচাও গো। সাদা কইতরের মাথা গেছে। এবার আমার সর্বনাশ করবেই করবে।”

এবার সত্যি সত্যি আমার সর্বনাশ হয়ে যাবে। কেননা সাদা কইতর আমাকে বিয়ে করার জন্য ধরে বেঁধে নিয়ে এসেছে। সাদা কইতরের চেহারা দেখে বুঝাই যাচ্ছে যে সে বাংলা ম’দ খেয়ে ভালই মাতাল হয়েছে। উল্টাপাল্টা কাজ করার আগে বিয়ে করে নিতে চাচ্ছে। আমি তো মনে মনে খুব খুশি। আমার কত ইচ্ছে ছিল একা একা পালিয়ে বিয়ে করার। আজ পূরণ হবে কিন্তু সাদা কইতর যদি পরে ভুলে যায়! সিনেমাতে যেমন হয়, নায়ক মাতাল অবস্থায় ঘুমিয়ে যায় কিন্তু সকালে ওঠার পর সবকিছু বুঝে যায়
তখন আমার কি হবে? না না কিছু একটা করতে হবে কিন্তু কি করব আমি? আমার সামনে তো কতগুলো ছেলে বসে আছে। হয়তো সাক্ষী দেওয়ার জন্য নিয়ে এসেছে। আবার সবগুলো কেমন রাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যেন আমি বিয়ে করার জন্য লাফাচ্ছি।

” বল মা কবুল!”

ওমা বিয়ের সব কথাবার্তাও শেষ। আর আমি কিছুই শুনতে পারানি! এজন্যই বলি কেন যে এত ভাবতে যাই! বেশি ভাবতে গিয়ে আজ আমি কিছুই শুনতে পেলাম না। আচ্ছা কাজি ভাইয়াকে যদি আবার বলি বিয়ে পড়াতে তাহলে কি সে রাগ করবে? বলেই দেখি না,

“কাজী ভাইয়া আবার বলবেন প্লিজ। আসলে আমি কি কি বলেছেন শুনতে পাইনি। এখন শুনতে না পেলে কবুল বলে লাভ আছে, আপনিই বলুন?”

আমার কথা শুনে কাজী সাহেবের হাত থেকে রেজিস্ট্রারের খাতা পড়ে গেল। সাদা কইতরের বন্ধুরা সবাই জোরে জোরে হাসছে আবরারের ডাব্বা রসিকতার স্বরে বলে,

” এমন কাজ তুবার দ্বারাই সম্ভব।”

কাজী সাহেব নিচ থেকে রেজিস্ট্রারের খাতা উঠিয়ে বলে,
” তুমি কোন দেশের মেয়ে? তুমি জানো না বিয়ের মধ্যে বেশি কথা বলতে নাই। যা বলতেছি তাই বল। বল মা কবুল!”

” আরে ধুর মিয়া আপনার কবুল। আমার তো পুরো কথা শুনতে হবে যে কি কি বলেছেন। না শুনলে আমি কাকে বিয়ে করব? আপনারা দু নাম্বারি করে যদি সাদা কইতরের নাম বলে আবরারের ডাব্বার সাথে আমার বিয়ে করে দেন তারপর?”

আমার কথা শুনে এবার সাদা কইতর আমার হাত শক্ত করে ধরে

” বেশি কথা বললে এখানে সবার সামনে যা ভাবছো তাই করে ফেলব বলে দিলাম আয়মান!”

সাদা কইতর মুখ খুলেছে। একপা প্রশ্ন না করলেই নয়,

” এই যে আমার হ্যান্ডসাম হবু বর। সত্যি সত্যিই কী আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?”

” লে পাগলা। তাড়াতাড়ি তোর বউকে বিয়ে কর।আর আমাদের মুক্তি দে। শা’লা গার্লফ্রেন্ডকে মাঝ রাস্তায় ফেলে তারপর এসেছি তোর বিয়ের সাক্ষী হতে।”

বেচারা সাদা কইতারের বন্ধুরা। কত কষ্ট করছে আর এদিকে আমি তাদের কষ্ট দিচ্ছি। আমি যাই খরি মানুষকে কষ্ট দিতে পারি না ভাই। যাক তিনবার কবুল বলে সাদা কইতরের হবু বর থেকে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের বউ হয়ে গেলাম। সাদা কইতরও তিনবার কবুল বলল। এরপর দুইজনে মিলে রেজিস্ট্রেশন প্যাপারে সাইন করে নিলাম।
বিয়ে শেষ এবার তো ঘুরতে যেতে নিষেধ নেই! সাদা কইতর আবার কখন যেন মাতলামি শরু করে দেয়। তাই আগে থেকেই বলে রাখি,

“এবার কোথায় যাব? চলো সাদা কইতর সিলেটে যাই। এখন তোর কোন বাঁধা নাই। এখন আমি আমার স্বামীর সাথে ঘুরতে যেতেই পারি।”

আমার কথা শুনে আবরার ডাব্বা উচ্চ স্বরে হাসছে। সাদা কইতরের কাছ থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বলে,

” নে ভাই তোর আর বাসরের চিন্তা করতে হবে না। তুই পেয়েছিস এমন এক পিস বউ, যে নাকি উঠতে, বসতে, শুইতে যেখানে যাবি সেখানেই তোকে বলবে,

সাদা কইতর ও সাদা কইতর। তুমি একটা ভালো কইতর। বিয়ে করেছে তবে, ঘুরবে এবার আমার সাথে।”

আমার সাথে থাকতে থাকতে আমার মত সবাই হয়ে গিয়েছে। সত্যি বিষয়টা খুবই গর্ববোধের। আবরারের ডাব্বাকে মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম। কেননা আমি এমন একটা কবিতা বলতে চাইছিলাম কিন্তু আর বলতে হল না। আর আগেই আবরারের ডাব্বা বলে দিল।

সবাই চলে গেছে। সাদা কইতর আমাকে ধরে রিসোর্টের একটা ঘরে নিয়ে আসে। আমাকে বিছানার উপর বসিয়ে নিজে বিছানার উপর শুয়ে পড়ে। তারপর একটা লম্বা নিশ্বাস ত্যাগ করে বলে,

” আজকে থেকে ভালো ঘুম হবে।”

ইশশশশ বললেই হল ভাল ঘুম হবে। এদিকে আমার যে সিলেটে যাওয়া হলো না সেজন্য আমার সারা বছরের রাতের ঘুম হারাম হবে সেপা কে দেখবে শুনি? আর এই লোকটার নাকি ঘুম হবে। মনে তো চাচ্ছে একদম কে’টে টুকরো টুকরো করে বুড়িগঙ্গায় ফেলে আসি অথবা আমাদের ছাদে কইতরের ঘর বানিয়ে সেখানে ঢুকিয়ে রাখি।

——————————–

সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে না জানি সিলেটে এখন সবাই কত আনন্দ করছে। হয়তো সবাই এক জায়গায় জড়ো হয়ে বসে গিটার বাজাচ্ছে আর গান গাইছে অথবা নাচছে
আমি আছি বদ্ধ ঘরে। সাদা কইতর সেই যে বাহিরে গিয়েছে! আসার খবর নাই। আমার মনে একটা প্রশ্ন জাগছে, সাদা কইতর আমাকে বিয়ে করেছে কীসের জন্য? নিশ্চয়ই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। এতদিন তো দূর থেকে প্রতিশোধ নিতে পারত না। এখন তো সময় অসময়ে যেকোনো সময় পরিশোধ নিতে পারবে। আল্লাহ আমার কি হবে? কে আমাকে বিয়ে করবে? আরে ধুর কি যাতা বলি। আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে সাদা কইতরের সাথে। আমার এক নম্বর শত্রুর সাথে। কিন্তু সে তো এখন আমার শত্রু না, বন্ধু।
স্বামী, স্বামী বলতে কেমন যেন লাগে। কি বলা যায় ভাবছি। হিন্দি সিরিয়ালের নায়িকারা একটু ঢং করে যেমন জামাই কে সাইয়া ডাকে আমিও ঠিক সেভাবে ডাকবো।
আমার ভাবনার মাঝেই সাদা কইতর দরজা খুলে প্রবেশ করে আর তখনই আমি গেয়ে উঠি,

“চলো সাইয়া সাইয়া সাইয়া সাইয়া
বাসর করবো ঘুইরা ঘুইরা।”

চলবে……………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে