প্রণয়িনীর হৃদয়কোণে পর্ব-২৯+৩০

0
1715

#প্রণয়িনীর_হৃদয়কোণে
#আফসানা_মিমি
| ঊনত্রিশ তম পর্ব|
❌ কোনভাবেই কপি করা যাবে না।❌

সকাল সকাল সাদা কইতরের বাসায় মানুষে গমগম। নতুন ভাবী বাবার বাড়ি না গিয়ে সুন্দরী আন্টির সাথে রান্নায় সাহায্য করছে। সোফার ঘরে বাবা, ভাইয়া,পেট মোটা আনারস আঙ্কেল বসে গল্প করছে। আমি হামির সাথে বসে ছবি আঁকছি। বলতে পারা যায়, সকলের সাথে অভিমান করেছি। কারণ, আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা ভেবেছিলাম আড়াল করা আছে। অথচ আমার অগোচরে বাবা, ভাইয়া, ভাবী তিনজনই আমার বিয়ের কথা জানতো। সাদা কইতর নাকি অনেক আগেই জানিয়েছে। আমার পরীক্ষার জন্য সবাই চুপচাপ ছিল।
” তুবা এদিকে আয় মা!”

বাবা ডাকছে কিন্তু আমি কাছে যাব না। কেননা বাবা সবকিছু মেনে নিয়েছে? একটু রাগ না করলে কি জমে? বাবার ডাকে কাছে যাচ্ছি না বলে সাদা কইতর কোথায় থেকে এসে আমাকে জোর করে সেখানে নিয়ে গেল এবং বাবার পাশে বসিয়ে দিয়ে বলল,

” তোমার কথা ভেবেই বাবা তোমাকে কিছু বলেনি। আর তুমি বাবার সাথে রাগ করছো, এটা ঠিক না আয়মান! বাবার সাথে কথা বলো।”

ইস বাবার সাথে কথা বলব! আমার সাথে তুই জীবনেও কথা বলবি না পঁচা কইতর। আহারে আমার ভোলাভালা সাদা কইতর! কই গিয়েছে সে! আমার এই পঁচা কইতর লাগবে না, সে ভাল না। আগে তো রাগই করতো না এখন এমনিতেই রাগে ফেটে যায়।
“আমার আম্মা কি বাবার সাথে খুব রাগ করেছে?”

বাবার কোথায় অভিমান করে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললাম,

“অনেক রাগ করেছে। এ রাগ ভাঙ্গার মত নয়।আমাকে যদি হাজার হাজার চিকেনের লেগ পিস এনে দাও তবুও ভাঙ্গবে না। তাহলে বুঝো!কতটুকু রাগ করেছি।”

” হুম বুঝলাম, অনেক রাগ করেছে আমার আম্মাজান টা।”

“হ্যাঁ অনেক।”
” কি করা যায় আমার আম্মার জন্য!”
” সাদা কইতরকে রেখে আমাকে নিয়ে বাড়ি চলো।”

এদিকে বাবা-মা মেয়ের অভিমানের পাল্লা শেষ হতে চলছে। তখনই কোথায় থেকে নতুন ভাবী এসে হাজির হয়ে বলে,

“ইশ এখন আমার বাবার আদর নেওয়া হচ্ছে! কত বড় সাহস না তোমার! আমার বাবার গলায় ঝুলে আছো! ছাড়ো আমার বাবাকে! খুব তো বরের গলায় জড়িয়ে ধরে ট্যান ট্যান করে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসছো এখন আবার অভিমান করা হচ্ছে?”

নতুন ভাবী এসেই হিংসা শুরু করেছে। হিংসুটে মেয়ে একটা। খুবই খারাপ মহিলা। আমি জানি ভাবী আমার সাথে দুষ্টুমি করছে। তাই ভাবিকে বললাম,

” তুমি তো মহা হিংসুটে নারী! নতুন আসতে না আসতেই ননদিনীকে হিংসা করছো? বলি তোমার জামাই কী তোমাকে কোন শিক্ষা-দীক্ষা দেয়নি? যাও এখান থেকে! আমার বাবা শুধু আমার বাবা আর কারো বাবা না।”

মান অভিমানের পাল্লা শেষ। আমাদের কথায় সকলেই হাসছে। ভাবীও আমার মাথায় চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,
” এই মিষ্টি পাখিকে আমি কিভাবে হিংসা করি! সকাল সকাল মন মানছিল না তাইতো চলে এলাম! এই মেয়েটা না থাকলে কি আর আমাদের স্বপ্ন পূরণ হতো! তবে একটা আফসোস রয়ে গেল, আমার এই জানটাকে কাছে পেয়েও পেলাম না। একটু দুঃখ সুখের আলাপ করতে পারলাম না তার আগেই স্বামী তুলে নিয়ে চলে এসেছে।”

” আফসোস করে লাভ নেই। শাস্তি দিয়ে আসো। যেমন মহৎ কাজ করেছে তেমন তাকে উচিত শাস্তি দিয়ে আসো। না হলে তোমার সাথে কথা নেই।”

” ককে শাস্তি দিবে শুনি?”

ভাবির কথায় আশেপাশে ভালোভাবে তাকালাম। সাদা কইতর নেই। মনের ভুল ভেবে তাই চট করে বলে ফেললাম,

” আমাকে তোমাদের সাথে নিয়ে যাও এটাই হবে সাদা জন্য মহা শাস্তি।”

বলে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। আকস্মাত পিছন থেকে সাদা কইতরের গলার স্বর শুনতে পাই সে বলছে,

” তোমাকে তুলে আনতে আমার কতগুলো হাড্ডি ভেঙেছে তার হিসাব নেই। কত মানুষের বকা খেয়েছি তা নাই বলি। আর এখন বলছো তুমি বাড়ি চলে যাবে? একদম ঠ্যাং ভেঙে এখানে বসিয়ে রাখবো। বাবা ভাইয়াকে দেখে পাখা গজিয়েছে তাই না?”

অবিশ্বাস্যকর! নিজের চোখে যা দেখছি সবই ভুল। আমার সাদা কইতর আজ সকলের সামনে আমাকে বকছে! এবার তো কনফার্ম আমি বাবা বাড়ি যাবোই যাবো। সাদা কইতর যা ইচ্ছে করুক।

” তুমি চলে গেলে ঘুমের ঘোরে আবার তোমাকে তুলে নিয়ে আসব তখন কি করবে ?”

সাদা কইতর নামক মানুষ বড্ড ভয়ানক। আমার আগের সাদা কইতর ই ভাল ছিল। আমার সাথে থেকে আমার কিছুই বুঝে ফেলেছে বদ কইতরটা। আমার ভাবনাটাও সে বুঝে ফেলেছে এটা কি মানা যায়!

” সাদা কইতর ঠিক হচ্ছে না কাজটা।”
” আমি সবসময় সঠিক কাজই করি। এখন চুপচাপ বাবার সাথে সময় দাও। একটু পরে তারা চলে যাবে এখন আর ধেইধেই করে এ পাড়া ঐপাড়া ঘুরতে পারবে না।”

অপমান! চরম অপমান। এর প্রতিশোধ আমি নিয়েই ছাড়বো। দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে বাবা, ভাইয়া, ভাবী আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। ভাবি আজ বাবার বাসায় যাবে। ভাবিদের রিসিপশনটা নাকি হবে না। বাবা নিষেধ করে দিয়েছেন। টাকা-পয়সার ঝামেলা আছে আর কি। তার উপর আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে! বাবা ভেবেছিল ঘরোয়াভাবে ছোট্ট আয়োজন করতে ভাবী তাও করতে নিষেধ করে। সবকিছু মিলিয়ে ভেবেছিলাম ভাবী মন খারাপ করেছে কিন্তু না! উনি জামাই পেয়ে খুশি, আর কি লাগে!

বিকেলবেলা কোন কাজ পাচ্ছি না। সাদা কইতর এবং নেংটি কইতর বাহিরে গিয়েছে খেলতে। আমি বাসায় একা। কি করি! উপায় খুঁজছি। ঘর থেকে বের হয়ে বারান্দায় পেট মোটা আনারস আংকেল শশুর আব্বাকে দেখতে পেলাম। যিনি তার গোনা কয়েক সাদা চুলে কালো রং লাগাচ্ছে। আমাকে দেখে হাসিমুখে বলে,
” দেখ তো মা! পিছনের দিকটা ঠিকমতো হয়েছে কিনা! আমি তো পিছনে দেখতে পাচ্ছি না।”

তুবা আজাইরা থাকার মানুষ? আপনাদের কি মনে হয়! অবশ্যই না। দুষ্টুমি ছাড়া আমার পক্ষে থাকা অসম্ভব। ছোট্ট একটি ব্রাশ পেট মোটা আনারস আংকেল আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। ব্রাশ হাতে নিয়ে ভাবছি কি করা যায়! অবশেষে বুদ্ধি মাথায় চলে আসলো। পেট মোটা আনারস আঙ্কেল শ্বশুর আব্বাকে সামনে তাকাতে বলে ঘরে চলে গেলাম। এরপর প্রয়োজনীয় জিনিস এনে আমি আমার বিশ্ববিখ্যাত একটি কাজ করে ফেললাম। এবার আমি মহা খুশি। আমার দ্বারা তো কিছু করা সম্ভব হয়েছে! আমার হাসি মাখা মুখ দেখে পেট মোটা আনারস আঙ্কেল শ্বশুর আব্বা হেসে দিলেন এরপর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

” আমার লক্ষী মা।”

পেট মোটা আনারস আঙ্কেলের সম্বোধন শুনে দাঁত বের করে হাসলাম। আমিতো জানি আমি কি করেছি! যখন নিজের অবস্থা দেখতে পাবে তখন লক্ষ্মী না অলক্ষী মায়ে আমাকে ডাকবে। শশুর আব্বার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দেখতে এলাম সুন্দরী শাশুড়ি আম্মা কি করছে। সব সময় মতো ওনাকে রান্নাঘরেই পেলাম। বিকালের নাস্তা বানাচ্ছে আমাকে দেখে বলে,

” তুবা আমাকে একটু সাহায্য কর তো?”
” কি করতে হবে?”
” শসা, গাজর, টমেটো চিকন করে কে’টে সালাদ বানিয়ে ফেল।”
শাশুড়িরা বিয়ের আগে থাকে ইনোসেন্ট মা কিন্তু বিয়ের পর হয়ে যায় জল্লাদের মা। প্রথমে আমি বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু আমার প্রতিবেশী মিতা ভাবীকে যখন দেখেছি তখন থেকে সতর্ক হয়ে গিয়েছি। ভেবে রেখেছি নিজের শাশুড়ি যতই মা ডাকুক আর আম্মাজান ডাকুক, আমি কাজ করে বুঝাবো না যে আমি কাজ পারি। কিন্তু কথা হচ্ছে সুন্দরী আন্টি তো জানে আমি কাজ পারি এখন কীভাবে কাজ থেকে রক্ষা পাই? মনে মনে কিছু ফন্দি এঁটে নিলাম তারপর বললাম,
” দাও দাও কেটে দেই। কিন্তু বলে রাখি আমি কিন্তু বাসায় শসা গাজর ও টমেটোকে গোল গোল করে কেটে সেখানে চিত্র এঁকে সালাদ বানাতাম আর সেটা বাবা এবং ভাইয়া তৃপ্তি সহকারে খেত। তোমাদের বাসায় কি করে জানিনা কিন্তু আমি কিন্তু ওইটাই পারি চিকন চিকন করে কাটতে পারি না।”

আমার কথা শুনে সুন্দরী আন্টি আড়চোখে তাকাল। ততক্ষণে আমি শসা ছিলে ফেলেছি। চাকুর সাহায্যে শসা গোল করে কা’ট’তে যাব তখনই বাহির থেকে নেংটি কইতরের চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পাই।

চলবে………

#প্রণয়িনীর_হৃদয়কোণে
#আফসানা_মিমি
|ত্রিশ তম পর্ব|
❌ কোনভাবেই কপি করা যাবে না।❌

চারজন বিচারকের সামনে আমি অভাগী দাঁড়িয়ে আছি। বড়ো তিনজন বিচারক মানা যায় তাই বলে ছোট জনও বিচারকের ভূমিকা পালন করবে! দুই ইঞ্চি ছেলে আমার দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে যেন আমি তার প্লেটের ভাত খেয়ে ফেলেছি।
আমার সাথেই কি সবসময় এমন হয়! একটু দুষ্টুমিই তো করেছি তাও বাবার সাথে। শ্বশুর তো বাবা ই তাই না! বাবার সাথে তো দুষ্টুমি করাই যায়।

পেট মোটা আনারস আংকেল দুই হাত মাথার পিছনে ধরে বসে আছেন যেন উনার মাথার পিছনের অংশ কেউ দেখতে না পায়। উনার দৃষ্টি আমার পায়ের দিকে নিবদ্ধ। সেই দৃষ্টিতে রয়েছে হাজারো ভাবনা। সাদা কইতর আর নেংটি কইতর পারছে না আমাকে কাচ্চা চিবিয়ে খেতে! নেংটি কইতর তো হাতে খেলনার পি’স্ত’ল নিয়ে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর পর আমার দিকে পি’স্ত’ল ধরে ঠুসঠুস করছে। আমার ভোলা ভোলা সুন্দরী আন্টির চেহারা দেখে ভাবগতি বোঝা মুশকিল। সুন্দরী আন্টি একটু রাগ করেছে কেননা কিছুক্ষণ আগে আমি মিথ্যা কথা বলেছিলাম।সেই চিন্তা বাদ দিলাম। আপাতত কিভাবে রেহাই পাবো সেই উপায় খুঁজছি। সাদা কইতর মুখ খুলে,

” বাবার সাথে এমন কাজ কীভাবে করলে আয়মান?”

সাদা কইতরের ধমকে আমি মুখ গোমড়া করে বলি,

” বাবার সাথে দুষ্টুমি করব না তো কার সাথে করব? পাশের বাড়ির রমিজ চাচার সাথে?”

” কথা বলবে না আয়মান। এখানে আসো, দেখে যাও কি করেছ! বাবার মাথার চুল একদম বেগুনি রং করে দিয়েছ।”

জামাই ডেকেছে কাছে তো যেতেই হয়। উনারা বসে কথা বলছে। সাদা কইতরের ডাকে সাথে সাথে পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। মাথার চুলের অর্ধেক অংশ বেগুনি রং করা। তবুও এই সেই রং না আমার নেলপলিশের রং। একদম মাথার চুলে জট বেঁধে আছে এটা কেরোসিন তেল না দিলে উঠবে না। পেট মোটা আনারস আঙ্কেলকে কিছুটা ভয় দেখানোর জন্য বললাম,

” ইস! কি করেছি আমি। এবার তো লাগবে কেরোসিন তেলের বাটি! কে কোথায় আছো কেরোসিন নিয়ে আসো! আনারস আঙ্কেল এর মাথার চুলে ডলো!”

আমার কথায় নেংটি কইতর আর সুন্দরী আন্টি হাসা শুরু করল। সাদা কইতরেরধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। আমার দিকে তেড়ে আসতে নিলেই পেট মোটা আনারস আঙ্কেল শ্বশুর আব্বা বলে,

” থেমে যা রাদ! তুবাকে আর কিছু বলিস না। আমি বুঝে গিয়েছি এখন থেকে আমার দিনে এবং রাতে দুইবার করে প্রেসারের ওষুধ খেতে হবে। নয়তো এই মেয়ে যা কান্ড করে! কবে যেন আমার প্রেশার হাই হয়ে আমি ম’রে যাই।”

সাদা কইতর আমার দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে এই বুঝি আমাকে খুব মারবে। আমি বুঝি না সাদা কইতর আমাকে দেখতে পারে না কেন? আমি তো এখন তার বউ। একটু আদর করলে কি হয়!

” আয়মান বাবার মাথার চুল ঠিক খরে দাও। নয়তো ত্রিশদিন বাপের বাড়ি যাওয়া বন্ধ।”

কপালের দুঃখ আছে বুঝতে পারছি। বাঁচার উপায়ও খুঁজে ফেলেছি। হুট করেই মরা কান্না শুরু করে দিলাম। আমার কান্না দেখে সুন্দরী আন্টি এবং পেট মোটা আনানোর আঙ্কেল অস্থির হয়ে পড়েন। আমার মাথায় এসে হাত বুলিয়ে বলেন,
“কি হয়েছে মা। রাদ তো সত্যি সত্যি বলেনি। আমার কথা মনে পড়েছে? কাঁদে না মা! আজ বিকালেই তোমাকে বাবার পাশে পাঠিয়ে দেবো।”

আমি থামছি না কান্না করেই যাচ্ছি। সাদা কইতর আমাকে ধরছে না দেখে আরো জোরে কান্না করা শুরু করেছি। আমার কান্নায় অতিষ্ঠ হয়ে লম্বা নিশ্বাস ত্যাগ করে সাদা কইতর আমাকে এসে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

” হয়েছে আর ঢং করতে হবে না। আগামীকাল নিয়ে যাব।”

মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে। সাদা কইতরকে আহ্লাদের সহিত বলি,
” পানি খাব।”

সাদা কইর ভাবতে পারেনি পানি খাওয়ার কথা বলে আমি এমন একটা কাজ করব। সকলকে বসিয়ে রেখে তাৎক্ষণিক দৌঁড়ে সাদা কইতরের ঘরে চলে আসি। নিচ থেকে নেংটি কইতরের চিৎকার শুনতে পাচ্ছি,

” তুবা আপু চালাকি করেছে। তোমাকে আবারও বোকা বানিয়েছে।”
এদিকে আমি ঘরে এসে বিছানায় ঘাপটি মেরে বসে আছি আর মিটিমিটি করে হাসছি। জীবনে আনন্দ না থাকলে কে হয়! নতুন বাড়িতে আমার আগমন ঘটেছে এটা জানানোর প্রয়োজন না! তাই তো কিছু কান্ড ঘটালাম। এখন শান্তি। যাই হোক আমি ঘুমাবো। দরজা আটকানো সাদা কইতর আর আমাকে শাস্তি দিতে পারবে না।
———————-

আমার ঘুম ভাঙ্গে সন্ধ্যায়। অভ্যাস মোতাবেক চোখ খুলে না তাকিয়েই বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছি। নাকে সুগন্ধিযুক্ত নানান ফুলের সুবাস আসছে। চোখ বন্ধ করে ভাবছি, আমি কি ফুলের বাগানে শায়িত আছি? ফুলের কড়া ঘ্রাণে বুঝাই যাচ্ছে ফুল আভার অতীব নিকটে আছে। পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালাম। ওমা! এ তো ফুলের বাগান। আর বিছানায় শত, হাজারো গোলাপ আর রজনীগন্ধা ফুল। তড়িঘড়ি উঠে বসার কারণে হাতে গোলাপের কাটা ফুটে। আহ করে আর্তনাদ করলে নেংটি কইতরের শান্ত স্বর শুনতে পাই,
“ব্যথা পেয়েছো? একদম ঠিক হয়েছে। তোমার জন্য ভাইয়া আমাকে একটা ফুল কি ফুলের কাটাও দেয়নি।”

নেংটি কইতর এতোটা নিষ্ঠুর হলো কবে থেকে? নিশ্চয়ই ভাইয়ের সাথে মিশে এমন হয়েছে! নেংটি কইতরকে নিজের দলে আনতেই হবে তাই আদুরে স্বরে বললাম,

” হামি সোনা! রাগ করেছ বুঝি? চকলেট খাবে?”

নেংটি কইতর তখন গোলাপ ফুলে স্কচটিভ প্যাঁচাচ্ছিল। আমার দিকে না তাকিয়েই প্রত্যুত্তরে বলে,
” আমি ছোট নই। চকলেটের লোভ দেখালেও লাভ নেই। আজ থেকে আমি ভাইয়ার দলে। তুমি আব্বুকে সরি বলো নাই।”

” পেট মোটা আনারস আঙ্কেল শ্বশুর আব্বাকে তো চুপি চুপি সরি বলে এসেছি।”

” তুমি মিথ্যে বলছো। সেই তখন থেকে তুমি ঘুমাচ্ছো।ভাইয়া চাবি দিয়ে দরজা খুলেছে এরপর থেকে তো আমি এই ঘরেই। কই তোমাকে তো একবারও বের হতে দেখি নাই।”

হামি এটা এত চালাক হয়েছে না! ঠিক আমার মতো। ঠিক আমার চালাকি বুঝে গিয়েছে। এখন আমি কি করি! নিজেকে তো বাঁচাতেই হবে তাই না! চট করে একটা বুদ্ধি বের করে বললাম,

” আমি তো ফোনে ক্ষমা চাইছি। তুমি শোনো নাই। তুমি তো নিচে বসে আছো। এবার তো চকলেট নিবা? না নিলে আমি পাশের বাড়ির রমিজ কাকার ছোট ভাইকে দিয়ে দিব।”

” তোমার এই রমিজ কাকাটা কে?”
ছোট মানুষ ছোট মানুষের মতো থাকবে তা না করে উল্টাপাল্টা শুধু প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। আমি এবার এক ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলাম এরপর ওর হাতে চকলেট ধরিয়ে দিয়ে কানে কানে কিছু বুদ্ধি শিখিয়ে দিলাম। আমার কথায় নেংটি কইতর মাথায় না বোধক ইশারা করে না করছে। আমি তখনই চোখ রাঙিয়ে বললাম,” করতেই হবে।”
” ভাইয়া রাগ করবে।”
” করলে আমার সাথে করবে। তোমার সাথে করবে না। হামি সোনা যাও! আমার ময়না পাখিটা।”

ছোট বাচ্চাদের ধমকে নয় আদর দিয়ে বললে কথা শুনে। হামি দৌঁড়ে ঘরের বাইরে চলে গেল। এই সুযোগে আমি পুরো ঘরটায় নজর ঘুরিয়ে নিলাম ।

গোলাপ ফুল এবং রজনীগন্ধা ফুলের সুবাসে চারিপাশ মৌ মৌ করছে। ফুল দিয়ে ঘর সাজানো এর মানে ব্যাপারখানা অন্য কিছু। সাদা কইতর উল্টাপাল্টা করতে চাইছে কিন্তু আমি যখন বলেছিলাম, “চলো বাসর করি।”
তখন তো সে জোর গলায় বলেছিল, ” এখন না আয়মান! তুমি তোমার মতো চলবে আমি আমার মতো।”
কিন্তু আজ তার সেই গলা কোথায় গেল? যাই হোক আজ উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো।
হামি আমার সামনে দুই কেজি কাঁচামরিচ নিয়ে হাজির হয়েছে। কাঁচামরিচ আনার কারণ হচ্ছে, আজ সারারাত এই কাঁচামরিচ বাছাই করব। আস্তে আস্তে একটা একটা করে বাছাই করব। যেন সময় অতিবাহিত হয়ে যায় আর সাদা কইতর বাসরের নামে ধোঁকা খায়। আমার সাথে নেংটি কইতরকেও বাছাই কার্যে লাগিয়ে দিয়েছি। দুজনে ফুলের পরিবর্তে কাঁচা মরিচ বাছাই শুরু করে দিয়েছি। প্রায় আধাঘন্টা পর সাদা কইতর ঘরে এসে উপস্থিত হয়। এতক্ষন হয়তো বাহিরে ছিল। হাতে কিছু শপিং ব্যাগও দেখতে পাচ্ছি সেদিকে পাত্তা দিলাম না। সাদা কইতরকে শুনিয়ে শুনিয়ে নেংটি কইতরকে বলছি,

” আরে এত তাড়াহুড়া করছিস কেন নেংটি কইতর! আস্তে আস্তে কর। আমাদের জন্য সারারাত পড়ে আছে।”

” কিন্তু আমার তো ঘুম পেয়েছে তুবা আপু?”

নেংটি কইতরের মুখে বর্তমানে আপু ডাকটা মানাচ্ছে না। ভাবছি আমাকে কি বলে সম্বোধন করবে। অনেক চিন্তা ভাবনা করে বের করলাম আমাকে ভাবিপু বলে ডাকলে সমস্যা হবে না। তাই তাকে বললাম,

” আপু না ডেকে ভাবিপু বলে ডাকো। বাইরে কারো সামনে আপু ডাকলে পরে আবার আমাকে কথা শুনতে হবে।”

” আচ্ছা ডাকবো এবার আমি যাই!”
নেংটি কইতর ঘর থেকে চলে গেলেই তো আমার সব প্ল্যান নষ্ট হয়ে যাবে। তাই একটু চিৎকার করেই বললাম,
” পাগল নাকি! চলে যাবে মানে? আমার সাথে থাকবে আমি না তোমার ভাবিপু।”

সময় অতিবাহিত হলেও সাদা কইতরের কোন সাড়াশব্দ পেলাম না। কোণাচোখে তাকিয়ে দেখতে পেলাম রাগে ঠাস করে বাথরুমের দরজা আটকে দিয়েছে সাদা কইতর। তা দেখে আমি মুচকি হাসি। সাদা কইতরকে আজকে ভালোই জব্দ করতে পারব ভেবেই আনন্দ হচ্ছে।

চলবে…………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে