#প্রণয়িনীর_হৃদয়কোণে
#আফসানা_মিমি
| আঠারো তম পর্ব |
❌ কোনভাবেই কপি করা যাবে না।❌
আমার পছন্দ অপছন্দের কথা সাদা কইতরের মা জানে। সোফার উপর ভদ্র বাচ্চা হয়ে বসে আপেল খাচ্ছি যা কিছুক্ষণ আগেই সুন্দরী আন্টি হাতে গুঁজে দিয়ে গেছে। আমার সামনেই পেট মোটা আনারস আঙ্কেল মুড নিয়ে বসে আছে যেন সে আগের মতোই আমাকে সহ্য করতে পারে না। আমি জানি বিষয়টা তেমন না। এতদিন আসিনি বলে একটু অভিমান করেছে। ব্যাপার না আমি একটু দুষ্টুমি করলেই ঠিক হয়ে যাবে। তবে আজ আমার মনে সংশয় কাজ করছে। চুরি করেছি ধরা পড়ে যাওয়ার ভয় তো থাকবেই। আমি তো এখন এই বাড়ির বউ।
” মন খারাপ নাকি প্রেশার বেড়েছে?”
পেট মোটা আনারস আঙ্কেলের কাছে বসে আস্তে করে জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু কোন প্রত্যুত্তর পেলাম না। পেট মোটা আনারস আঙ্কেলের কী মন অনেক খারাপ? কাছে গিয়ে শার্টের হাতা ধরে হালকা টান দিলাম। পেট মোটা আনারস আঙ্কেল মুখ ফুলিয়ে ভ্রু জোড়া নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে?”
আমি বত্রিশটা দাঁত দেখিয়ে বললাম,
” আমার কাছে পড়া পানি আছে। পাগলা হুজুরের থেকে এনেছি। হুজুর বলেছে, খেলেই নাকি মন খারাপ নিমেষেই দূর হয়ে যাবে। এক প্যাক চলবে?”
আমার কথায় পেট মোটা আনারস আঙ্কেল হু হা হা করে হাসছে। সুন্দরী আন্টি ফল কাটছিল। হিংসে যেন সুন্দরীর শরীর ফেটে যাচ্ছে। আমাদের দেখে ভেংচি কা’টে,
” এতো লোভ দেখাস না তুবা। তোর পেট মোটা আনারস আঙ্কেলের পেট কমার রোগ দেখা দিয়েছে। ডায়াবেটিস হয়েছে। এত করে বলি, বসে থেকো না। হাঁটাহাটি করো। না সে ঘরে বসে থেকে খালি ফুলের চাষ করে। এবার বুঝুক।”
” আহ বকছো কেন? আমি তো আছিই। প্রেশার মাপতে জানি, ডায়াবেটিস মাপাও শিখে যাব।”
কথা এমনভাবে বলছি যেন আমি এবাড়ির বউ। অবশ্য বউই তো। একজনের বউ। বউয়ের কথা মনে হতেই মনে পড়ে গেল, সাদা কইতরের আসার সময় হয়ে গিয়েছে। তখন ছলনা করে পাড় পেয়েছি। এবার যদি সামনে পড়ি তো আস্তো রাখবে না। এবাড়িতে এসেছি অনেকক্ষণ। নেংটি কইতরের কোন সাড়াশব্দ নেই।
” ও সুন্দরী আন্টি, তোমার ছোট ছানাটা কই?”
” উপরে। ডেকে আয় তো! কি জানি হয়েছে ছেলেটার। তুই এসেছিস শুনে এতক্ষণে তো কইতরের মতো উড়াউড়ি করতো।”
নেংটি কইতর বাসায় অথচ আমার কাছে এল না এত বড়ো স্পর্ধা? নেংটি কইতরের ঘরে গিয়ে দেখতে পেলাম এলাহী কাণ্ড। সারা ঘরে ছোট থেকে বড়ো কাপড় ছড়িয়ে রেখেছে। সেই কাপড়গুলো সোজা থাকলেও হতো সবগুলো কাপড় কুঁচকে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কারো পেট খারাপ হয়েছে। আশে পাশে উঁকিঝুঁকি মেরে নেংটি কইতর বলে ডাকলাম। নাহ্ নেংটি কইতর কোথাও নেই। বাথরুম থেকে পানির শব্দ কানে ভেসে আসে তারমানে নেংটি কইতর! হি হি সুযোগ পেয়ে গেলাম। দরজায় কান পেতে শুনতে পেলাম ভেতরের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। নাকে গন্ধ চলে এসেছে সারা ঘর গন্ধময় হয়ে গেছে। দুই একবার দরজায় কড়াঘাত করেও লাভ হলো না। শেষে অতিষ্ঠ হয়ে ডাকলাম,
” মা’ম’লা কী খুব সিরিয়াস মামু!”
ভেতর থেকে শুধু পানি ছাড়ার শব্দ ভেসে আসছে। প্রায় পাঁচ মিনিট পর দরজা খুলে নেংটি কইতর তার সাথে বস্তা বস্তা দুর্গন্ধ বের হয়ে আসে। আমি নাক টিপে দাঁড়িয়ে আছি। নেংটি কইতরের খুব খারাপ অবস্থা। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না বেচারা। কাছে গিয়ে ধরে বিছানার উপর শুইয়ে দিলাম। মায়া লাগছে প্রচুর। বাচ্চাটা বিছানায় পেটে চাপ দিয়ে পড়ে আছে।
কাপড় চোপড় গুছাতে নিলে বুঝতে পারি বেচারা নেংটি কইতরের পেট এতোটাই ডাইরেক হয়ে গেছে যে সে অধিকাংশ কাপড় নষ্ট করে ফেলেছে যা ঘরে এসেই দেখেছিলাম। কি করি কীভাবে চলি বুঝতে পারছি না। নেংটি কইতরের কাছে গিয়ে মাথায় হাত রেখে বললাম,
” হামি বাবু! কি খেয়েছিলে?”
আমি মুখ খুললেই সবাই কী স্তব্ধ হয়ে যায়? আপনারাই বলুন, তুবা কী ভাল কথা বলতে পারে না! নেংটি কইতর অবাক নয়নে তাকিয়ে হামি বলে এই প্রথম ডেকেছি বলে! থতমত খেয়ে চোরা চোখে এদিক সেদিক তাকাচ্ছি।
” বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে আখের রস খেয়েছিলাম।”
দেড় ইঞ্চি বাট্টুর কথা শোন! এই বয়সেই বন্ধুবান্ধব জুটে বাজি ধরা শিখে গেছে!
” কত গ্লাস খেয়েছিলি নেংটি কইতর?”
” দুই কেজি সেভেন আপের বোতলের আড়াই বোতল খেয়েছি।”
সাব্বাস ব্যাটা। এই না হলে পেট মোটা আনারস আঙ্কেলের ছোট ছেলে তুই! এখন কী হবে! নেংটি কইতরকে ভয় দেখানো উচিত যেন পরবর্তীতে এমন ভুল কাজ না করে।
” ভাল করেছিস নেংটি কইতর। এবার তৈরি হয়ে নে। তোকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব। সেখানে জল্লাদ নামক এক ডাক্তার মোটা, বড়ো সুই নিয়ে তোর পাছায় ঢুকিয়ে দিবে।”
ওমাগো বলে নেংটি কইতর বিছানা ছেড়ে ভোঁ দৌড়। বেচারা নেংটি কইতরের প্যান্ট হাঁটুতে এসে ঠেকেছে। হঠাৎ দৌড় দেওয়ায় আমি হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝতে পারছি না। এই সময়ে নেংটি কইতরের অবস্থা দেখে আমার কাদা উচিত। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি দেখে হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়েছি।
হঠাৎ দরজা লাগানোর শব্দে হাসি থামিয়ে দেই। মাথা একটু উপরের দিকে উঠিয়ে সাদা কইতরকে দেখতে পাই। সাথে সাথে দেয়াল ঘড়িতে নজর দেই। এই সময়ে সাদা কইতরের আসার কথা না। ব্যাটা এসেছে তো এসেছে দরজা বন্ধ করছে কেন?
” ঐ মিয়া, দরজা বন্ধ করলে কেন?”
” বউকে টাইট দেওয়ার জন্য। ভাষার এই অবস্থা কেন আয়মান? আর মিয়া কি? সম্মান করতে শিখো মনপাখি?”
মনপাখি! নিশ্চিত ব্যাটার মতলব খারাপ! নয়তো মাখোমাখো কথা বলছে কেন? শোয়া থেকে তড়িঘড়ি উঠে দূরে সরে দাঁড়িয়ে বললাম,
” মিয়া বলব না তো সাইয়া বলব? ডাক ঢোল বাজিয়ে সবাইকে বলব, ‘আমি সাদা কইতরের বউ। সাদা কইতর ভুলিয়ে ভালিয়ে ব্লেকমেইল করে আমাকে বিয়ে করেছে।”
” মাথা ঠিক আছে?”
” আলবাত ঠিক আছে। আমি সুস্থ, সরল মেয়ে। আমাকে একা পেলেই উলটি পালটা করার চিন্তা আসে।”
ঠিক বলেছি না বেঠিক জানি না। সাদা কইতর তেড়ে আসে আমার দিকে। হাত মুচড়ে ধরে ঠিক পিছনে। ইশ ছেলেটার মনে মায়া দয়া কিছুই নেই। সাদা কইতরের এক হাত আমার গালে শক্ত করে ধরে রেখেছে। চোখ থেকে তার আগুন ঝড়ছে।
” আমাকে জ্বালিয়ে খুব শান্তি পাও তাই না মনপাখি! এই দেখো, জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছি। কবে আমার চঞ্চলপাখি অন্তর নামক পিঞ্জিরায় ধরা দিবে! কবে আমার ছোঁয়ায় নিজের মনকে স্থির করে আমার বুকেই মুখ গুঁজবে।”
কি বলছে এসব? সাদা কইতরের কথায় শরীর কেঁপে উঠছে। এমন আবেদনময়ী কথা শুনে ঠিক থাকা যায়? হাতের ব্যথা ভুলে ছটফট কমে গিয়েছে প্রায়। চোখ বন্ধ করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। সাদা কইতর
তার মুখ আস্তে আস্তে আমার কানের কাছে নিয়ে আসে হালকা একটা কামড় দিয়ে বলে,
” এতোটুকুতেই জমে গেলে মনপাখি! যখন আমি তোমাকে ছুঁয়ে দিব তখন তো লজ্জায় নুয়ে পড়বে এবং প্রাণপণে পালাতে চেষ্টা করবে। যখন পালাতে পারবে না তখন এই আমাতেই বিভোর হয়ে যাবে।”
আবেগ মিশ্রিত কথা আমার হজম হয় না। সাদা কইতরের কথা শুনে ইচ্ছে করছে মাটি ফাঁকা করে একদম ভিতরে ঢুকে চুপ করে বসে থাকি কিন্তু এই সুযোগ পাচ্ছিনা। কেননা সাদা কইতর আমাকে জাপটে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষণ রাগের মাথায় কথা বললেও এখন মনে হচ্ছে সে অন্য এক দুনিয়াতে চলে গেছে। এই সুযোগ সাদা কইতরের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়ার। হাতের উপর আস্তে করে নিজের হাতটা রাখলাম এরপর বললাম,
” সত্যিই কি এমন হবে?”
সাদা কইতর যেন আরেকটি সুযোগ পেয়ে গেল। ফলস্বরূপ আমার হাত একটু আগলা করে ফেলে মাথায় অধর ছুঁয়ে দিলো,
” এর চেয়ে ভয়ংকর কিছু ঘটতে পারে মনপাখি! যা তোমার ধারনার বাহিরে।”
সাদা কইতরের কথা কানে আসেনি। ধাক্কা দিয়ে বিছানয় ফেলে দৌড়ে দরজা খুলে বের হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আবারো সাদা কইতরের ভাবভঙ্গি লক্ষ করার জন্য ঘরে উঁকি দিলাম। সাদা কইতর এখন হতবাক নয়নে দরজার পানে তাকিয়ে আছে। হয়তো আমার এমন কান্ড সে এই মুহূর্তে নিতে পারছে না। হাসতে হাসতে সাদাকইতরের উদ্দেশ্যে বললাম,
ও আমার সাদা কইতর রে!
যা যা তুই বাড়ি থেকে বের হয়ে যা!
চলবে…………
#প্রণয়িনীর_হৃদয়কোণে
#আফসানা_মিমি
| উনিশ তম পর্ব | +|২০তম পর্ব |
❌ কোনভাবেই কপি করা যাবে না।❌
হাসপাতালের বারান্দায় বসে মশা মারছি। আমার কারোর দুঃখ কষ্ট সহ্য হয় না। এখানে তো আমার প্রিয় দ্বিতীয় শত্রু ভর্তি। নেংটি কইতরকে দেখলে নিজেই কান্না করে দিব। তখন সাদা কইতর আবার আমার কাছে আসতে সুযোগ পেয়ে যাবে।
” বুড়িদের মতো বসে আছো যে? বাড়িঘর নাই? চলো বাসায় দিয়ে আসি।”
সাদা কইতরের কথায় একটা গান মনে পড়ছে। ঘুম ঘুম চোখে গেয়েই ফেললা,
” আমার নাই কোন নাম নাই,
ঘরবাড়ি নাই!
তোমার এত মাথা ব্যথা কেন
ও জামাই ভাই!’
আমি একদম প্রস্তুত পালটা থাপ্পড় খাওয়ার জন্য। সব সময় তো এমনই হয়, আমার উল্টাপাল্টা কথা শুনে সাদা কইতর আমাকে শাস্তি দেয় নয়তো মারতে আসে। গালটাও পেতে দিলাম মারার জন্য কিন্তু না অপর পাশ থেকে কোন শব্দ পাচ্ছি না। চোখ খুলে তাকাতেই, ওমা! আমি এ কি দেখছি! আমার চোখ সত্যি কি এমন কিছু দেখছে! আমার সামনে সাদা করেতর দাঁত বের করে হাসছে। হাসির চমকে আমার মুখেও হাসির রেখা ফুটে উঠলো। খেয়াল করে দেখতে পেলাম হাসলে সাদা কইতরের চোখের কোণের অংশ কুঁচকে যায় আর দেখতে অদ্ভুত সুন্দর লাগে। আমার সামনে এখন সিনেমার মতো নায়ক দাঁড়িয়ে হাসছে আর আমি সিনেমা নায়িকার মত অপলক দৃষ্টিতে নায়ককে দেখছি। নিজের মনে কেমন আলাদা অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে। ইচ্ছে করছে সামনে দাঁড়ানো হাস্যকর মানুষটাকে জড়িয়ে ধরতে।
নিজের পঁচা চিন্তাভাবনা মাথায় রেখে দিয়ে মাথায় হালকা আঘাত করলাম। নিজের মনকে বললাম, তুবা তুই সত্যি পাগল হয়ে যাচ্ছিস। কিন্তু মুখে সাদা কইতরকে বললাম,
” এমা! এভাবে কেউ হাসে। দেখে মনে হচ্ছে আশি বছরের বুড়া লোক হাসছে। এই খচ্চর ছেলে কতদিন ধরে ব্রাশ করো না হ্যাঁ! তোমার দাঁতগুলো দেখছি হলুদ হয়ে আছে। মনে হচ্ছে কেউ কাঁচা হলুদ ডলে ডলে তোমার দাঁতে লাগিয়ে দিয়েছে। তোমার এত সুন্দর নাম দিলাম! নামের সাথে মিলিয়ে তোমার সবকিছুই সাদা থাকবে কিন্তু হল কি! কালা।”
সাদা কই তোর আমার কথায় থমকে গেল যেন। কিছু ভেবে মুখে দুষ্টু হাসির রেখা টেনে বলল,
” তুমি আমার সবকিছু কবে দেখলে মনপাখি? আমি তো সবসময় নিজেকে ঢেকেই তোমার কাছে এসেছি দুষ্টুপাখি। তোমার মনে এত দুষ্টুমি যে এখনই সবকিছু,,,,,,,,
আর বলতে দিলাম না পাগলটাকে। কাছে গিয়ে মুখ চেপে ধরলাম। ছি ছি কী লজ্জার বিষয়! এখানে সেখানে, যেখানে যখন ইচ্ছে তখন যা ইচ্ছে তাই বলে ফেলে। চোখ রাঙিয়ে বললাম,
” সাদা কইতরের বাচ্চা! নাকে এমন এক ঘুষি দিব যে র’ক্ত বের হয়ে যাবে। আমি বাসায় যাব না। পেয়েছ উত্তর! এখন আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাও।”
” কে কাছে এসেছে আয়মান? আমি নাকি তুমি।”
সাদা কইতরের কথা শুনে থতমত খেয়ে পিছনে সড়ে দাঁড়ালাম। আমি নিজেই তো সাদা কইতরের কাছে এসেছি। খানিকটা লজ্জাও পেলাম। আড়চোখে সাদা কইতরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, সে দুষ্টু হাসি হাসছে। গা জ্বলে গেল, মুখ ভেংচি কেটে আবারো এসে আগের স্থানে ফিরে বসলাম।
কিছুক্ষণ পর সাদা কইতর আমার সামনে একটা মোবাইল এনে ধরে। আমি প্রশ্নবোধক চাহনিতে জিজ্ঞেস করলাম, কে?
” তোমার বাবা চিন্তায় হার্ট অ্যাটাক করে ফেলবে। নাওকথা বল।”
এই যা নেংটি কইতরের চিন্তায় আমি তো বাবাকে বলে আসতেই ভুলে গিয়েছিলাম। এখন নিশ্চিত বাবা আমাকে অনেক বকবে। কিন্তু আমি তো বাবার মা, কীভাবে বাবাকে চুপ করাতে হয় জানা আছে। আস্তে করে মোবাইল কানে নিয়ে নিজে বলতে শুরু করলাম,
” ও আব্বা গো! বইকো না গো! আর জীবনে এমন কাম করতাম না গো! এবারের মতো ক্ষমা করে দাও গো! তুমি ওষুধ খাইয়া ভালো হয়ে যাও, নাহলে হাসপাতালে চলে আসো তোমার সেবা করবো গো!”
” হয়েছে, আমার রাগ শেষ। কোথায় আছিস মা? আমি আসবো?”
” আসতে হবে না বাবা। সুন্দরী আন্টি আছে এখানে। তুমি তো জানোই নেংটি কইতরকে আমি কত ভালোবাসি। অনেক অসুস্থ বুঝলে! এখানে সবাই আছে। আমি ঠিক আছি তুমি ঘুমিয়ে যাও।”
বাবার সাথে আরো দুই একটা কথা বলে ফোন কেটে সাদা করইতরের দিকে এগিয়ে দিলাম। সাদা কইতরের সামনে যেন এলিয়েন দাঁড়িয়ে আছে। আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন আমি অন্য গ্রহের প্রাণী। ফোন হাতে নিয়ে পকেটে পুরে বলল,
” আমি ভাবতাম তুমি বাহিরের মানুষের সাথেই শুধু দুষ্টুমি কর আর উল্টাপাল্টা কথা বল। কিন্তু তুমি যে তোমার বাবাকেও এভাবে হানাস্তা কর তা আজ দেখতে পেলাম। তোমার মাঝে কি কোন সিরিয়াসনেস নেই আয়মান?”
” তোমারতোমার মত সিরিয়াসনেস নিয়ে যদি সারা জীবন পড়ে থাকতাম তাহলে আমার নাক থাকতো উঁচু চোখ থাকত বড়ো, আর বুকে থাকত আগুন আমি ভেবে চলতে পারি না। আমি হাসি হাসতে ভালবাসি এবং হাসাতে ভালবাসি।”
” আর আমি তোমাকে ভালোবাসি”
তিনটি শব্দের জাদুময়ী কথায় শরীর কেঁপে উঠল। এখানে আর থাকা যাবে না। সাদা কইতরের কথার আগুনে অঙ্গার হয়ে যাব। ‘হামিকে দেখে আসি’ বলে কেবিনের ভেতর প্রবেশ করলাম।
———————
নেংটি কইতর মোটামুটি সুস্থ। আমি বাসায় এসেছি কিছু রান্না করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। হাসপাতাল থেকে পেট মোটা আনারস আংকেল আর সুন্দরী আন্টিকে নড়াতেও পারিনি। তারা নাকি ছেলের কাছে থাকবে। আমি মোটামুটি সব কিছুই রান্না করতে পারি পেট মোটা আনারস আঙ্কেল ও সুন্দরী আন্টির জন্য ডিম ভুনা, ডাল, সবজি রান্না করেছি নেংটি কইতর তো আর এসব খেতে পারবে না। পাশের বাসার আমেনা আপার থেকে শুনেছি এই অবস্থায় আলু ভর্তা খেলে নাকি পেট টাইট হয়। কিন্তু তার আগে আমার আরেকটা কাজ আছে। সে কাজ পরে করব আগে রান্নাটা সেড়ে নেই। সাদা কইতর সেই সকালে কোথায় যেন গিয়েছে আসার কোন নাম গন্ধ নাই। সে না থাকলে তো ভালো আমি আরামে থাকতে পারি।
রান্নাঘরে এসে টুংটাং পাতিলের আওয়াজ করছি আর রান্না করছি। এক চুলায় ভাত আর এক চুলায় আলু সিদ্ধ বসিয়ে পেঁয়াজ কা’ট’ছি।
মা জাতিদের আসলে খুব ধৈর্য থাকে সব কাজ সুনিপুণভাবে সম্পন্ন করে থাকে। সকাল সকাল উঠে শীত গরমের কোন কিছু পরোয়া করে না। নিজের পরিবারের জন্য রান্না করে। আমিও বাসায় রান্না করি তবে কা’টা’কা’টি’র কাজ ভাইয়া করে। আজ অনেকদিন পর পিয়াজ কা’ট’ছি তো চোখের পানি নাকের পানি এক হয়ে যাচ্ছে।
“তোমাকে কি তোমার জামাই অনেক অত্যাচার করে? যেভাবে চোখের পানি নাকের পানি ফালাচ্ছ, মনে হচ্ছে আমি সারাদিন তোমার উপর অন্যরকম অত্যাচার করি। কাজ করতে জানো না, কাজ করতে এসেছ কেন?”
এই এক সাদা কইতর আছে। আমার আরাম নষ্ট করতে চলে এসেছে। আমার ভালো এই লোকটার সহ্য হয় না। পেছনে না ফিরে মুখে ভেংচি কেটে বললাম,
” মেয়ে হয়ে জন্মছি। রান্না পারব না তা তো হয় না! ছেলেদের কাজ তো শুধু বউদের দিনরাত খাটিয়ে মারা। কাজ করছি সাদা কইতর। এখানে যদি কোন কাজ না থাকে তাহলে খোপের মধ্যে গিয়ে বসে থাকো।”
” আমার তো অনেক কাজ আছে আয়মান! আমার বউকে জ্বালাতন করা এবং আমি এখন এই কাজটাই করতে চাচ্ছি।”
বউ! যেন একদম কিনে নিয়েছে আমাকে। আমি সবাইকে বলে দিব এই লোকটা আমাকে জোর করে ধরে বেঁধে বিয়ে করেছে। এরপর যখন উত্তম মাধ্যম ক্যালানি খাবে না! বাপের নাম ভুলে যাবে। তখন আমার মত সবাই ডাকবে পেট মোটা আনারস আঙ্কেলের বাবার ছেলে।
” একদম একদম কাজ করতে আসবে না সাদা কইতর। আমি কিন্তু সবাইকে সব বলে দেব।”
” কি বলবে যে আমি তোমাকে জ্বালাতন করি? আমি তোমাকে এইভাবে আদর করি? নাকি এভাবে গালে চুমু খাই।”
এতদিন মুখে করেছে। এখন প্র্যাকটিক্যাল করছে? এক একটা কথা বলছে না তো! আমাকে হেনস্তা করছে। এগুলো কি সহ্য করা যায়! গালে হাত দিয়ে স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এই মুহূর্তে আমার সাদা কইতরকে ইচ্ছে করছে পেঁয়াজের সাথে কে’টে কুচি কুচি করে আলু ভর্তা বানিয়ে দিতে। আমি নিতান্তই ভদ্র মেয়ে নয়তো এতক্ষণে জমের বাড়ি পাঠিয়ে দিতাম।
সাদা কইরতের দিকে তাকিয়ে দেখি সে নির্লজ্জের মত আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
এই সাদা কইতরের দিকে আর খেয়াল করা যাবে না। দেখা যাবে সাদা কইতরের দিকে খেয়াল করলে আমার সব কাজ বাদ হয়ে যাবে। সাদা কইতরের হাসি উপেক্ষা করে নিজের কাজ করে যাচ্ছি। সাদা কইতর ফ্রিজে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখছে। ঝুড়ির উপর থেকে একটা আপেল নিয়ে সেখানে কামড় বসিয়ে বলে,
“তোমাকে দেখতে একদম পাক্কা বউ বউ লাগছে আয়মান।”
” বাজে কথা না বলে তৈরি হয়ে আসেন। আমরা হাসপাতালে যাব।”
” ইস এভাবে বলে না বউ! একদম কলিজাই লাগে। আমি যাচ্ছি বউ! আমি এক্ষুনি যাচ্ছি আর এক্ষুনি আসছি।”
সাদা কইতর যে এমন ন্যাকামি ভর্তি কথা বলতে পারে ভাবতেই আমার মাথা জ্বলে যাচ্ছে। সবকিছু বাদ দিয়ে খাবার টিফিন বক্সে ঢুকিয়ে নিলাম। এবার যাব লুৎফা ভাইয়া গেন্ডারির গাড়ি খুঁজতে।
প্রায় বিশ মিনিট পর সাদা কইতর সাদা পাঞ্জাবি পরে নিচে নেমে আসে। আমি কবে যে জীবিত অবস্থায় হার্ট অ্যাটাক করে মরে যাই নিজেও জানিনা। এত নায়ক সেজে হাসপাতালে কেউ যায় নাকি! সাদা কইতরকে দেখে মুখ ভেংচি কেটে নিজের কাজের মনোযোগ দিলাম। আড়চোখে দেখতে পেলাম সাদা কইতর মুচকি মুচকি হাসছে। আমার কাছে এসে, খুব কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।
” ক্রাশ খেয়েছো বুঝি? জামাইকে আড়চোখে না দেখে সরাসরি দেখতে শিখ প্রিয়া। তোমার জন্যই ভালো হবে।”
আমাকে এক চোখ টিপে দিয়ে চোখে সানগ্লাস পরে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। প্রতিবারের মতো আমি থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম সাদা কইতরের কান্ড দেখে।
এখন এতকিছু ভাবার সময় নেই। এতক্ষণ হয়তো হাসপাতালে দুইজন না খেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে। বেচারা পেট মোটা আনারস আঙ্কেল না খেয়ে তো পেট কমে যাবে।
সাদা কইতরদের ছোট্ট গেট বন্ধ করে দাঁড়ালাম। ভাবছি এ লুৎফা ভাইয়াকে কোথায় খুঁজে পাই। এই লুৎফা ভাইয়াকে খুঁজে না পেলে তো আর আমার কাজ করা যাবে না। নিয়ত করলাম হেঁটে হেঁটে পথ কিছু আগাব।
আমাদের গলির দুই গলির পর লুৎফা ভাইয়ার দেকা মিলে। আমাকে দেখা মাত্রই সে উলটা পথে দৌঁড়াচ্ছে। জোরে ডাক দিলাম,” ও লুৎফা ভাই শুনে যাও না!”
লুৎফা ভাই শোনার পাত্র নয়। প্রতিবারের মতো যতটুকু পারছে নিজের শক্তি দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে। কিন্তু অত বড় গলি তো আর দৌঁড়ে শেষ করা যায় না এক জায়গায় গিয়ে তো থামতে হবে। তাই হলো, তিন নাম্বার গুলি পাড় হতেই জমিনে পড়ে গেল সে আমিও কাছে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলি,
” শুধু শুধু দৌঁড়াচ্ছ কেন তুমি? আমি কি আর আগের মতো দুষ্টু আছি! সেই কবে না ভালো হয়ে গেছি। এখন ভালো ভালো তিন কেজি আখের রস দাও তো। আমি পয়সা দিচ্ছি।”
তিন কেজি সেভেন আপে আখের রস নিয়েছি। এই সব নেংটি কইতরকে খাওয়াব। এই ভয়সে এত পেকেছে ছেলেটা! তিনটি বোতল হাতে নিয়ে হাঁটা তো অসম্ভব। একটা রিকশা ডেকে নিলাম। হাসপাতালে পৌঁছে ভাড়া দিয়ে নেমে পড়লাম।
আশেপাশে ভালভাবে উঁকিঝুঁকি মেরে সাদা কইতর আছে কি নেই দেখছি। ব্যাটা না থাকলেই আমি খুশি। কেবিনে প্রবেশ করেই দেখতে পেলাম নেংটি কইতর বসে বসে স্যালাইনের পানি খাচ্ছে। নেংটি কইতরের সুখ আমার সহ্য হলো না। কাছে গিয়ে চিৎকার করে বললাম,
” ওইটা কি খাচ্ছ গো ফেলে দাও, ফেলে দাও। এই যে আমি তোমার জন্য স্পেশাল শরবত নিয়ে এসেছি। আরো তিন বোতল খাও তাহলে আরো তিন বছর হাসপাতালে পড়ে থাকতে হবে।”
নেংটি কইতর অবশ্যই ভয় পেয়েছে তাই তো পেট মোটা আনারস আঙ্কেলের পিছনে গিয়ে লুকিয়ে আছে। আমিও দম ফেলানোর পাত্রী নয়। তিন বোতল আখের রস খাইয়ে ছাড়বো। পেট মোটা আনারস আঙ্কেলের ইয়া মোটা পেটের আড়াল থেকে টেনে বের করে নিয়ে আসলাম। উদ্দেশ্য তিন বোতল আখের রস খাওয়ানো নেংটি কইতর আমার ভাগবতি বুঝতে পেরে ওয়াক ওয়াক করে বমি করে সব ভাসিয়ে দিল। ভাগ্য ভাল আমি দূরে সরে গিয়েছিলাম নয়তো আমার শরীরে ভাসাতো।
” তুমি কি পাগল হয়ে গেছো আয়মান? ছোট বাচ্চাটাকে কেন জ্বালাচ্ছ?”
আমার কাজের মধ্যে সাদা কইতর যে আসবে না তা তো হয় না। আগে পিছে কিছু না জেনেই চলে এসেছে আমাকে বকতে এবং শাস্তি দিতে। আজ এই সাদা কইতরকে কোন সুযোগ দেওয়া যাবে না আরো কিছু বলবে তার আগে আমি বললাম,
” একদম আমাদের মাঝে কথা বলতে আসবে না সাদা কইতর। তোমার ভাই দেখতে দুই ইঞ্চি কিন্তু কাজ করে চল্লিশ ফুট মানুষের মতো।”
“কি করেছে শুনি?”
” এই যে অসুস্থ হয়েছে। কেন অসুস্থ হয়েছে তা কি তোমাদের বলেছে?”
“না বলেনি।”
“আমি বলছি। এই নেংটি কইতর চোখ বন্ধ করো নয়তো তোমার দিকে তাকিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।
তোমাদের আদরের বাঁদর বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে দুই বোতল মানে দুই কেজির মতো আখের রস খেয়েছে। এরপর থেকেই ডাইরেক হয়ে গিয়েছে। তাই তো তাইতো আমি তিন কেজির আখের রস নিয়ে এসেছি। এখন এগুলো খেতে বল। খেলে মহা ডাইরেক হয়ে যাক। আর হাসপাতালে পড়ে থাকুক।”
আমার কথা সবার সিরিয়াস নিয়েছে। এটাতেই আমি খুশি। এখন সবাই নেংটি কইতরকে অনেক বকা দিবে, বেশি করে বকা দিবে। ছোটবেলায় আমিও এমন অনেক বকা খেয়েছি। এখন বড় হয়ে সবার কাছ থেকে উসুল করে নিচ্ছি। সাদা কইতর কোমাড়ে হাত রেখে বলে,
” তোমার এসব ফালতু কাজ করার দরকার নেই যাও বাইরে যাও। হামি কে নিয়ে আমরা আজে বাসায় চলে যাব।”
হাপিয়ে গিয়েছি। আর ঝগড়া করার শক্তি অবশিষ্ট নেই। হাসপাতালে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দূর নীলিমার তাকিয়ে আছি। এখন বাসায় চলে যাব। বাবার সাথে গল্প করতে ইচ্ছে করছে। কেন যেন মনে হচ্ছে পরিবার থেকে আমি দূরে চলে যাবো। আমি জানি এমনটা হবার নয়। তবে সামনে আমার পরীক্ষা সাথে ভাইয়ার বিয়ে ভাইয়ার পাশাপাশি থাকতে হবে।
হাসপাতালের টেলিভিশনের নিচে হেডলাইন দেখতে পেলাম সেখানে লিখা ভাসছে,
“বাহিরের দেশ থেকে আসা কিছু লোক আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে। উদ্দেশ্য এ দেশ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া। তারা শহরের ধনী ব্যাক্তিদের টার্গেট করেছে। বিদেশী লোকগুলো এখন শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সবাইকে সাবধান হতে বলছে।”
এমন হাজারো খবর টেলিভিশনে, পত্রিকায় দেখা যায়। এগুলো সিরিয়াস নিলে সিরিয়াস না নিলে নাই। অবশ্য আমার জীবনে সিরিয়াস বলতে কিছুই নেই। যা আছে সব চাক্ষুষ চোখের সামনে যা ঘটে তাই রটে। দেশের অবস্থা দেখে আর কি হবে আমি কি আর অত বড়ো মানুষ নাকি? ছোট্ট একটা মানুষ আমাকে কে ধরতে আসবে।
সাদা কইতরের সাথে বাসায় ফিরে আসতে হবে কিন্তু আমি চাইছি না পাড়ার লোক আমাকে খারাপ বলুক বা ভাবুক। তাই সাদা কইতরের কাছে অনুরোধ করে একাই হেঁটে চলে আসার জন্য উদ্যোগ নিলাম।
প্রাণ পটেটো চিপস এবং ফ্রুটিকা খেতে খেতে রাস্তার পাশে হাঁটছি। কোথায় থেকে একটা গাড়ির হর্ণের আওয়াজ আমার কানে আসে। আমি তো প্রস্তুতি ছিলাম কিছু অঘটন ঘটার তার আগে কেউ একজন এসে আমাকে বাঁচিয়ে নেয়। অন্তর কাঁপছে, আমার কাছে মনে হচ্ছে আমাকে সাদা কইতর বাঁচিয়েছে। মনে মনে সাদা কইতরকে ধন্যবাদ জানালাম। এতক্ষণ চোখ বন্ধ করেছিলাম। চোখ খুলে তাকাতে দেখতে পেলাম আমার সামনে একজন জীর্ণশীর্ণ পুরাতন পোশাকে একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। দেখতে মনে হচ্ছে ছেলেটির বয়স ঊনিশ কি বিশ হবে। ছেলেটাকে দেখে খুব মায়া হল আমাকে প্রশ্ন করল,
“আপনে ঠিক আছেন তো?”
” হ্যাঁ ঠিক আছি। নাম কী?”
” আলাউদ্দিন শেখ করিমুদ্দিন আল হাফিজ রব্বানী কুদ্দুস শরীফ।”
এমন বড় এবং অসুন্দর নাম আমি আমার বাবার জীবনে দেখি নাই। ছেলেটাকে ধরে পাশে নিয়ে আসলাম। ছেলেটাকে দেখেই মনে হচ্ছে ক্ষুধার্ত। হাতে থাকা ফ্রুটিকা ছেলের হাতে ধরিয়ে বললাম,
” নে খা। তোর শরীর কাপছে। খেয়ে তারপর কথা বল।”
ছেলেটা তাই করলো। ঢক ঢক করে পুরোটা বোতলের জুস সাবার করে ফেলে বলল,
” আমি গরিব মানুষ, এতিম। ভাতের অভাবে রাস্তায় ঘুরি। আমাকে একটা কাজ দিবেন আপা?”
ছেলেটাকে দেখে খারাপ লাগছে না। এই ছেলেকে কাজে লাগানো যাবে। আর সামনে তো ভাইয়ার বিয়ে এটা সেটা কাজ করাও হয়ে যাবে। ছেলেটাকে সাথে নিয়ে নিলাম। হাঁটছি আর ভাবছি ছেলেটাকে একটা নাম দিতে হবে। তাই ছেলেটার উদ্দেশ্য বললাম,
” তোকে আমি একটা নাম দিব তুই কি রাগ করবি?”
” না করুম না।”
“তোকে আমার সাথে বাসায় নিয়ে যাব। তিন বেলা ভাত খাওয়াব, নতুন পোশাক দিব, যাবি?”
” হ যামু।”
” আজ থেকে তোর নাম হাবলু। কিন্তু তোকে আমি ডাকবো আবুলের ভাই হবলু। যখনই এই নামে ডাকবো তখনই আমার সামনে এসে হাজির হতে হবে পারবি তো?”
” হ পারমু।”
এই যে আমার একজন বডিগার্ড হয়ে গেল। এবার সাদা কইতর আমাকে জ্বালাতন করতে আসলে বডিগার্ডকে সামনে দাঁড় করিয়ে দেব। এরপর ব্যাটাকৈ ইচ্ছে মতো ক্যালানি দিব। আমার তো ভাবতে খুশি লাগছে আমার একটা বডিগার্ড আছে। বাড়ির দিকঃ রওনা দিলাম। আমি এখন খুশি, মহা খুশি সাদা কইতরকে উচিত শিক্ষা দিতে পারব বলে মহা আনন্দ হচ্ছে। মনের সুখে গান গাইছি,
” একখান পুলা পাইয়া গেছি ভুইলা সাদা কইতরকে রে সাদা কইতরকে,
সাদা কইতর এবার ব্যাকা হবে আমার জ্বালাতে রে আমার জ্বালাতে।
চলবে…………