পূর্ব-রোদ পর্ব-২৬

0
2331

@পূর্ব-রোদ?
#পর্ব_২৬
#লেখিকা_আমিশা_নূর

রোদের কথায় পূর্ব হাসতে হাসতে রাস্তা বসে পরলো।পূর্বের হাসি দেখে রোদ প্রথমে রাগ করলেও পরে সেও হেসে দেয়।রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে ওরা চাদের আলো’তে হেঁটে আসছে।দুজনে হাসতে হাসতে সামনে হাটা শুরু করলো।একে অন্যজনের হাত ধরে জোসনায় হাটছে।নিসন্দেহে যে কেউ দেখলে বলবে কতো সুখি দম্পতি!


সকাল হতেই নাবিলা,তিহান আর রাফিয়া পূর্বদের বাসায় উপস্থিত হলো।সামান্য নাস্তা করে সবাই বেরিয়ে পরলো ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশ্য।পূর্বদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি নদী ছিলো।সেই জায়গার সৌন্দর্য ছিলো অসীম।প্রথম বার দেখলো যে কেউ নদীটার প্রেমে পরতে বাধ্য।পূর্ব-রোদ একপাশে হাঁট ছিলো।তখন পূর্বের ফোন বেজে উঠে।পূর্ব স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার মায়ের কল।পূর্ব একটু দূরে গিয়ে কল রিসিভ করলো।

“হ্যালো মা?”
“হুম।কেমন আছিস?”
“এইতো ভালো।তুমি আর বাবা?”
“আলহামদুলিল্লাহ!তোকে একটা কথা বলার জন্য কল করলাম।”
“কী কথা?”
“ডিভোর্স পেপার র‍্যাডি করে রেখেছি তোরা আসলে শর্ত অনুযায়ী আমি আমার কথা রাখবো।”
“হুয়াট মা?তোমাকে তো একবারের জন্যও বলিনি ডিভোর্সের কথা।”
“সে কি?তুই যখন চলে যাওয়ার পর তো রোদ একা থাকবে না।ওর নতুন করে বিয়ে দিবো।তাহলে তো ডিভোর্সটা জরুরি।”
“মা আমি সেটা বলছি না।আমাদের ডিভোর্সের দরকার নাই।আমরা হ্যাপি আছি।কাল রাতে আমরা বাসায় যাচ্ছি।”
“হ্যাপি আছিস মানে?”
“বাড়িতে এসে বলছি।”
“ঠিক আছে।”

পূর্ব কল কেটে দিয়ে এক ধ্যানে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে।রোদ তাকে ছাড়া কিছুতেই থাকতে পারবে না।তার উপর যদি পূর্বকে ভূল বুঝে?পূর্ব অনুভব করলো তার পাশে এসে কেউ একজন দাঁড়িয়েছে।চোখ তুলে দেখলো নাবিলা এসেছে।

“কী হলো?মুখটা ফ্যাকাসে কেনো?”
“মা ফোন করেছিলো।বললো ডি..ডিভোর্স পেপার রেডি আছে।”
“পূর্ব তুই কী রোদ’কে সত্যি ভালোবাসিস?’
“কী বলছিস তুই নাবিলা?তুই নিজে আমাকে অনুভব করিয়েছিলি রোদকে কতোটা ভালোবাসি।আর এখন তুই?”
“উফ!দুই লাইন বেশি বুঝিস।রোদকে সত্যি ভালোবাসলে তো ও কে ছাড়া থাকতে পারবি না।তাহলে?”
“জানিনা।”
“রোদকে সবটা বলে দিলে ভালো হবে পূর্ব।”
“কীহ?না না কিছুতে বলতে পারবো না আমি।পাগল হয়ে গেছিস?রোদ শুনলে খুব কান্না করবে।”
“আচ্ছা তাহলে ঢাকায় গিয়ে ডিসিশন নিস।”
“হুম।”

রোদ রাফিয়া আর তিহানের সাথে কথা বলছিলো।তখন তার দৃষ্টি পরলো পূর্বের উপর।পূর্ব আর নাবিলাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব সিরিয়াস বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে।রোদ সেদিকে এগোতে গেলে তার পথ আটকিয়ে মেঘ তার সামনে আসে।মেঘকে এখানে দেখে রোদ যথেষ্ট অবাক হলো।রোদ নিজের অবাক কাটানোর জন্য মেঘকে জিজ্ঞেস করলো,

“তুমি এখানে?”
“হ্যা।নিলয়ের সাথে ঘুরতেছিলাম।কিন্তু তুমি এখানে কী করছো?”
“আমি একা না।নাবিলাপু,রাফিয়া,তিহান আর পূর্ব সবাই আছে।”
“ওহহ।”

রোদের অসস্তি লাগতে শুরু করলো।মেঘের সামনে এখন কেমন যেনো দাঁড়াতে কেমন যেনো লাগছে।রোদ পেছন তাকাতে দেখলো নিলয় এগিয়ে আসছে।তাকে দেখতে পেয়ে রোদ বললো,”নিলয় আগে কোথায় ছিলো?”
“গত ছয়মাস ইন্ডিয়া ছিলো।”
“ওহ।”

ততক্ষণে পূর্ব রোদকে মেঘের সাথে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসে।পেছন পেছন নাবিলাও আসছিলো কিন্তু হঠাৎ কেউ একজন হাত টান দিলো।পূর্ব রোদ-মেঘের সামনে এসে বললো,

“হাই মেঘ।”
“হাই!”
“আপনি এখানে?”
“জাস্ট ঘুরতে এসেছিলাম।”
“ওহ।”

পূর্ব মেঘের সাথে যথেষ্ট ভদ্রতা দেখিয়ে কথা বলছে।রোদ ভেবেছিলো মেঘকে দেখে হয়তো রাগারাগি করবে।কিন্তু পূর্বের ব্যবহার দেখে রোদ হা করে তাকিয়ে রইলো।


“ইউ ব্লাডি..”নাবিলা’র পুরাে কথা শেষ করতে না দিয়ে নিলয় তার মুখ চেপে ধরলো।নাবিলা অগ্নি দৃষ্টিতে নিলয়ের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।নিলয় একহাতে নাবিলা’র মুখ চেপে ধরে অন্য হাত নিজের বুকের বা পাশে দিয়ে বললো,” ইশ!পাখি তোমাকে এখন বেশি সুন্দর লাগছে!”নিলয়ের কথা শুনে নাবিলা’র সমস্ত রাগ হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।পাখি!নামটা তো আগের নিলয় ডাকতো।তাহলে কী নিলয় তাকে চিনতে পেরেছে?তাহলে প্রথমে না চেনার ভান ধরলো কেনো?

নিলয় তার মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললো,

“কাল রাতে মেসেজের রিপ্লে দিলে না কেনো?”
“ক..কী…মেসেজ?”
“পারসোনাল নাম্বার চাইলাম আর তুমি সিন করে রেখে দিলে।”
“তো?আমার মেসেঞ্জার আমার যা ইচ্ছে তাই করবো।তুমি বলার কে?”
“আ’ম ইউর বয়ফ্রেন্ড।ভূলে গেছো নাকি নিলয়কে?ওয়ান ইয়ার রিলেশন ছিল…”

নাবিলা’র বুকটা আরো একবার কেঁপে উঠলো।নিলয়ের সব কথা মনে আছে?তারমানে কি নিলয় তাকে সত্যি ভালোবাসে?তখনি নাবিলা’র কানে বাজতে লাগলো পূর্বের বলা কথাটি।”নিলয় প্লেয় বয়!”মুহুর্তে নাবিলা নিজেকে কঠোর রেখে বললো,

“জাস্ট শাট আপ!লজ্জা করে না শত প্রেম করে বেড়াও আবার নিজেকে বয়ফ্রেন্ডও দাবি করো।”
“ওহ।তাহলে তুমি আমার সম্পর্কে সব ইনফরমেশন পেয়ে গেছো?”
“কেনো?নিজের সত্যটা কি লুকাতে চেয়েছিলে?”
“লুকাতে চাইনি তবে জানাতে ইচ্ছে করিনি।”
“তুমি মেয়েদের লাইফ নিয়ে খেলা করো আবার সেটা বুক ফুলিয়ে বলছো?”
“স্ট্রেঞ্জ!হ্যা আমি মানছি আ’ম এ্য প্লেয় বয়।মেয়েরা নিজের ইচ্ছেতে আমার কাছে আসে আর ছেলে হয়ে তার সুযোগ নি মাত্র।”
“মাত্র?তুমি টাকা’র জন্য প্রেম করতে না অন্য কারণে?”
“আমার টাকার প্রয়োজন ছিলো তাই।”
“টাকার প্রয়োজন কার না থাকে?তাই বলে তোমার মতো পথ অবলম্বন করে না।”
“আমি মানছি সব আমার ভূল কিন্তু ট্রাস্ট করো গত ছয়মাসে আমি কারো সাথে প্রেম করিনি।”
“সেটা আমাকে কেনো বলছো?”
“বিকজ আই লাভ ইউ!”
“লাভ?হাহাহাহা।পাগল মনে হয় আমাকে তোমার?নাকি তুমি মেন্টালি সিক?”
“আমার অনেক মেয়ের সাথে প্রেম করেছিলাম তার মধ্যে তুমি নিজে একজন।কিন্তু তাদের কাউকে আমি ভালোবাসতাম না।তোমাকেও না।সেদিন তোমাকে পার্টিতে প্রথম দেখায় মনে হয়েছিলো তুমি আমার অনেক কিছু।নতুন করে তোমার প্রেমে পরে যায়।তোমাকে নিয়ে অনেক ভাবার পর মনে পড়ে যায় তোমার আসল পরিচয়।”
“আর কতো?কতো মিথ্যা বলবে?আমি তোমাকে ট্রাস্ট করি না।এসব বলে আমাকে আবার ফাঁসাতে চাইছো কারণ তুমি আগের বার আমার থেকে টাকা আদায় করতে পারোনি।”
“পাখ..”
“স্টপ।আমাদের সম্পর্ক এক বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে।সো প্লিজ স্টে এওয়ে ফ্রম মী।”
“বাট আই…”
“হেইট ইউ।”

নাবিলা তাকে ধাক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে আসতে পেছন থেকে শুনতে পেলো,”তুমি আমাকে এখনো ভালোবাসো।”

নিলয়ের কথায় নাবিলা পেছন মোড়লো না।নাবিলা’র চোখে জল টলমল করছে।বাসি স্মৃতিগুলা তাজা হয়ে যাচ্ছে।কেনো যে স্মৃতিগুলা নড়া দে?তাহলে যে নাবিলা আবারো ভূল করে বসবে।


“ইন্না-লিল্লাহ।নাবিলা কী হয়েছে?”
“কিছু না।”
“আরে বাবা কাঁদছিস কেনো?”

হুট করে নাবিলা শক্তভাবে পর্ব আর তিহানকে জড়িয়ে ধরলো।নাবিলা কেনো এভাবে কাঁদছে তা আন্দাজ করে পূর্ব তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,

“নিলয় কিছু বলেছে?”
“উহু।”
“নাবিলা?” (তিহান)

ওদের ছেড়ে দিয়ে নাবিলা চোখের জল মুছে নিয়ে তার বন্ধুদের উদ্দেশ্য বললো,

“নিলয় আমাকে চিনতে পেরেছে আর বলছে হি লাভ’স মী।”
“ইন্না-লিল্লাহ!”
“আর ওমনি তুই বিশ্বাস করে নিলি।”

নাবিলা শীতল চাহনিতে পূর্বের দিকে তাকালো।নিজের দুহাত দিয়ে মুখ মুছে নিলো।তারপর নিজেকে শক্ত রেখে বললো,

“নাহ!ফরগেট ইট।রোদ কোথায়?”
“রুমে।তোরা তিনজন থেকে যা আজ।”
“মা’কে বলতে হবে।” (নাবিলা)

রাতে ওরা সবাই এবাড়িতেই থেকে গেলো।বলতে গেলে পুরাটা সময় আড্ডার সাথে কেটেছে।সকালে দশ’টার সময় সবাই তৈরি তিহানদের বাসার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরলো।


“বাহ!অবশেষে তোমাদের দেখা মিললো আমার।ভিতরে আসো।”

তিহানের মা যথেষ্ট বন্ধুসুলভ।তাই ওদের দেখতে পেয়ে যেন সস্তি পেলো।ওনি বাড়ির প্রথম বউ।রাফিয়া’র ফুফি
ছোট।ওরা সবাই বাড়ির ভিতর যেতেই একটি ছোট ছেলে এসে রোদের পেছনে লুকিয়ে পরলো।তার পেছন পেছন আর একটা সাত-আট বছরের মেয়ে এসে বললো,

“নিরব এদিকে আসো।ভালো হবে না কিন্তু..”মেয়েটির ধমক শুনে ছেলেটি আরো কুঁকড়ে গেলো।রোদ এক হাত দিয়ে ছেলেটিকে আড়াল করছে।তখন একটি বড় মেয়ে এসে বাচ্চাদের উদ্দেশ্য বললো,
“নিরব তুমি আপুর চকলেট কেনো নিয়েছো?”

নিরব নামের ছেলেটি বড় মেয়েটির কাছে গিয়ে বললো,

“মাম্মা,আমি আপুর থেকে একটা চকলেট নিয়েছি।শুধু একটা।এএএকটা!”

ছেলেটির কথা শুনে সবাই এক ধপা হাসলো।হঠাৎ রাফিয়া’র দিকে চোখ যেতে ছেলেটি বললো,

“হাই কিউটি।তুমি রাত্তে কোথায় ছিলে?আই মিস ইউ না?”ছেলেটির আবেগ মিশ্রিত কথা শুনে রোদ,নাবিলা মুচকি হাসলো।তিহান বিড়বিড় করে বললো,” ইন্না-লিল্লাহ!এই পুচকো না জানি কখন আমার বউয়ের ভাগ চায়”।রাফিয়া ছেলেটার গাল টেনে বললো,” ওলে ওলে!”

তারপর তিহান নতুন তিন মূর্তিকে উদ্দেশ্য করে বললো,”আপু,ওরা হলো নাবিলা,পূর্ব,রোদ।আর উনি হলো আমার বড় আপু তানঞ্জু।নিরব আর নদী হলো ওর ছেলে-মেয়ে।”

সবার সাথে তিহান পরিচয় করিয়ে দিলো।তখন রাফিয়া’র ছোট ফুফি আর তিহানের মা রান্না ঘরে ছিলো।ওরা সবাই মিলে বারান্দার আড্ডায় মগ্ন হয়ে পরলো।

[চলবে]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে