@পূর্ব-রোদ?
#পর্ব_১২
#লেখিকা_আমিশা_নূর
পরক্ষণে নাবিলা আবার উদয় হয়ে গেলো।পূর্ব নাবিলা’র দিকে তাকিয়ে বললো,”ইন্টারেস্টিং!”
।
।
আজকে রোদ কম্পিউটার কোচিং শেষ করে পূর্বের আগেই বাড়ি ফিরেছে।তাই রাতের রান্না করার জন্য রোদ বাড়ির পেছনে গেলো।সবরকমের সবজি না থাকলেও এখানে চিচিঙ্গা,পটোল,ঝিঙ্গা,আছে।রোদের মনে হলো এখানে ঋতু দেখে সবজির চাষ করার হয়।রোদ ওখান থেকে কয়েকটা পটোল তুলে নিলো।এরপর পুকুরে গিয়ে দেখলো মাছেরা লাফালাফি করছে।দেখেই রোদ হাত তালি দিলো।রোদ মনে মনে ভাবলো তার কাছে বঁড়শি থাকলে নিশ্চিন্তে মাছ ধরতে পারতো।রোদের পুকুরে পানিতে পা ডুবুতে ইচ্ছে হলো।রোদের যখন যা মাথায় আসে তা করতে দুবার ভাবে না।অমনি রোদ পানিতে ডুবালো।
হঠাৎ রোদের প্রচন্ড একা অনুভূতি হলো।তার আশেপাশে কেউ নেই।জীবনটা হেসে-খেলা থেকে বিয়ের হয়ে গেলো।কিন্তু তবুও সে একা!কখনো পূর্বের কাছে স্বামীর অধিকার চায়নি।আর না পূর্ব চেয়েছে।কিন্তু তবুও এইটা ভেবে মনে প্রশান্তি আসছে যে তাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বপূর্ন হয়েছে।চোখ বন্ধ করতেই রোদের চোখের সামনে পূর্বের সাথে কাটানো মধুর মুহুর্ত ভেসে উঠলো।কেনো জেনো তার ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।তখনি কেউ একজন ওর পাশে বসলো।তা অনুভব করে রোদ চোখ বন্ধ করেই বললো,
“এতোক্ষণে আসার সময় হলো?”
“আরে বাহ!চোখ বন্ধ করেই বুঝতে পেরেছিস আমি এসেছি।”
রোদ চোখ খুলে পূর্বের দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“পারফিউমের গন্ধের জন্য চিনেছি।”
“ওহ।তাই বল।কী করছিস এখানে বসে?”
“পুকুরের পানি খেয়াল করেছিস?মাছ থাকা সত্ত্বেও কতো স্বচ্ছ!”
“পরিষ্কার করা হয় তাই স্বচ্ছ।”
“আমাদের জীবনেও প্রত্যেকের কষ্ট থাকে।শুধু তাকে পরিষ্কার করে হাসি-মুখে চলতে হয়!”
“কী ব্যাপার?মন খারাপ?”
“নাহ।শুধু ভাবছি আমাদের জীবনটা কেমন হয়ে গেলো।”
“কেমন?”
“আমাদের বিয়ে হলো যখন আমরা খুব ছোট ছিলাম।তারপর আমি তোদের বাড়িতে আসলাম।একেবারের জন্য!আর আজ আমরা দুজন সিলেট।তাও একা!কিন্তু বিষয় হলো…”
“আমরা কেউ বিয়েটা মানি না।”
পূর্বের শীতল কন্ঠ শুনে রোদ চোখে তুলে তাকালো।মুহুর্তে পূর্ব কঠিন কন্ঠ করে বললো,
“তাই আমরা আনম্যারিড বলি নিজেদের!”রোদ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“মানে?”
“কিছু না।”
পূর্ব উঠে চলে যেতে লাগলো।রোদ পিছু পিছু গেলো।রোদ কিছুতেই বুঝছে না হুট করে পূর্ব এই কথাটা কেনো বললো?
।
।
মাঝরাতে ফোনের রিংটোনে পূর্বের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।পাশ থেকে ফোন নিয়ে দেখলো আননোন নাম্বার।পূর্ব কল কেটে দিয়ে আবার চোখ বন্ধ করলো।কিন্তু ওপাশ থেকে বার বার কল করেই যাচ্ছে।এবার রোদেরও ঘুম ভেঙ্গে গেলো।রোদ চোখের পাতা হালকা খুলে দেখলো পূর্ব কল রিসিভ করছে।অজান্তেই রোদের মনে প্রশ্ন জাগছে “এতো রাতে কে কল করছে?”
“হ্যালো।কে বলছেন?এতে রাতে বিরক্ত কেনো করেন?”
“ও হ্যালো হ্যালো।আমি নাবিলা।তোমার ফিউচার ফ্রেন্ড।”
“ফিউচার?”
“হ্যা।তুমি তো আমাকে ফ্রেন্ড বানাওনি আজকে।কিন্তু আমি ফ্রেন্ড হবো।তাই ফিউচার।”
“উফ!”
“তুমি কী ঘুমাচ্ছো?”
এই প্রশ্ন পূর্ব খুব বিরক্ত হলো।মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে দিয়ে বলছে “ঘুমাচ্ছো?”। উফ!এই মেয়ের দলও পারে বটে।”
“পূর্ব বাই চান্স তুমি ঘুমিয়ে পড়ো নি তো?হাহাহাহা”
“তুমি আমার নাম্বার কোথায় পেলে?”
“বস আমি নাবিলা!রাত এগোরাটাই কলেজ গিয়ে দারোয়ান’কে শাসিয়ে,অফিস কক্ষে গিয়ে ফাইল থেকে তোমার আর তিহানের ইনফরমেশন নিলাম।”
“হুয়াট?আর ইউ ক্রেজি?”
পূর্ব কথাটা জোরেই বলে ফেললো।রোদ ভ্র-কুচকে মনে মনে ভাবলো,”হরিচন্দনের জন্য কে ক্রেজি হলো?”রোদ চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো পূর্ব ফিসফিস করে বলছে,
“তুমি এসব কেনো করলে?”
“যাহ বাবা!চ্যালেঞ্জ করেছিলে মনে নেই?তার চেয়েও বড় কথা আমি যেটা চাই সেটা চাই মানে চাই।তোমাদের দুজন’কে আমি ফ্রেন্ড বানাবোই।”
“ওকে ফ্রেন্ড।গুড নাইট।”
“গুড নাইট?মাত্র রাত ১টা!”
“সরি বাট গুড নাইট।”
পূর্ব কল কেটে দিয়ে পাশে দেখলো রোদ ঘুমিয়ে আছে।আজকে দুজনে বিছানায় ঘুমিয়েছে।একজন এক এক প্রান্তে ঘুমালেও রোদ এখন পূর্বের অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছে।রোদের চেহেরার দিকে তাকিয়ে পূর্ব চোখ বন্ধ করে নিলো।
।
।
রাফিয়া চুপিচুপি রুম থেকে বেরিয়ে তিহানের রুমের সামনে এলো।রাফিয়া কান পেতে শুনলো তিহান কারো সাথে কথা বলছে।
“ইন্না-লিল্লাহ!আপনি এতো রাতে কীভাবে কলেজ গেলেন?”
“বস নাবিলা পারে না এমন কোনো কাজ নেই।”
“কিন্তু তাও অফিস কক্ষের চাবি কোথায় পেলেন?”
“তালা খুলা কোনো কঠিন কাজ না।ওসব বাদ দাও আমি চ্যালেঞ্জ জিতেছি এখন ফ্রেন্ডশিপ করবে ব্যস।”
“ইন্না-লিল্লাহ!আমি আর পূর্ব কোনোদিন কোনো মেয়েকে ফ্রেন্ড বানাইনি।”
“ও মা!কেনো বস?”
“কারণ মেয়েরা দু’লাইন বেশি বুঝো।”
“কথাটা অবশ্য ঠিক।”
“ইন্না-লিল্লাহ!আপনি মেয়ে হয়ে বলছেন মেয়েরা বেশি বুঝে?”
“যেটা সত্য সেটা বলতে দ্বিধা নেই বস।”
“ইন্না-লিল্লাহ!”
“আচ্ছা তুমি ইন্না-লিল্লাহ কেনো বলো কথায় কথায়?”
“তুমি বস বস কেনো করো?”
“তুমি বুঝবে না বস!”
“গুড নাইট!”
“কী বস?তোমরা এতো জলদি ঘুমাও?”
“রাত ১টা জলদি না।ওকে গুড নাইট।”
তিহান কল কেটে দিতেই দরজায় কড়া নাড়লো কেউ।বিরক্ত হয়ে তিহান দরজা খুলে গেলো।দরজা খুলা মাত্র দেখলো রাফিয়া অগ্নি দৃষ্টিতে তার দিকে আছে।মেয়েটা যখন থেকে এসেছে তিহানকে জ্বালিয়ে মারছে।সারাদিন ক্রাশ ক্রাশ করে।আজ অবধি তিহানের উপর এই মেয়ে ছাড়া অন্যকেউ ক্রাশ খেয়ে কি’না সন্দেহ।তিহান দরজা খুলা মাত্র রাফিয়া রুমের ভিতর ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।তা দেখো তিহান বললো,
“আজব!এভাবে অভদ্ররে’র রুমে কেনো ঢুকে পরেছো?”
“আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই এসেছি।তুমি এতো রাতে কার সাথে টাংকি মারছিলে?”
“ইন্না-লিল্লাহ!টাংকি কী?”
“বিনাকারণে রাত অবধি কোনো মেয়ের সাথে কথা বলাকে টাংকি বলে।”
“আর যদি কোনো মেয়ে কোনো ছেলের সাথে কথা বলে?”
“টাংকা!হাহাহাহা”
“এখন টাংকা করছো তুমি।মাঝরাতে আমার রুমে এসে।”
“হ্যা।তাই তো।যা বলতে এসেছিলাম কালকে একটু রোদের সাথে দেখা করতে যাবো।”
“তো যাও।আমি কি না করেছি?”
“তুমি কেনো না করবে?রোদ’কে না জানিয়ে যাবো তাই তোমার হেল্প লাগবে।”
“আর যদি হেল্প না করি?”
“লিপকিস করবো।”
“ইন্না-লিল্লাহ!”
রাফিয়া আর এক সেকেন্ডও না দাড়িয়ে রুম ত্যাগ করলো।তিহান মনে মনে বললো,”ইন্না-লিল্লাহ!এমন দজ্জাল মেয়ে জীবনে দেখিনি!”
।
।
সকালবেলা রোদের ঘুম ভাঙ্গতেই দেখলো গত দিনের মতো পূর্বের বাহুতে আবদ্ধ হয়ে আছে।প্রথম বারের মতো রোদ অবাক হলো না।দুজন ব্যাক্তি এক বিছানায় থাকলে এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক ভেবে রোদ বিছানা ছেড়ে উঠতে গেলে খেলায় করলো তার ওড়না পূর্বের হাতের কাছে রয়ে গেছে।ওমনি রোদ ওড়না টান দিতে পূর্বের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।রোদ ক্রোধিত হয়ে বিড়বিড় করে বললো,”সারারাত মেয়েদের সাথে কথা বলবে আর আট টাই ঘুম ভাঙবে।যত্তসব!”
পূর্বের ঘুম ভাঙ্গতেই রোদের এমন চেহেরা দেখে ভ্যাচকা খেলো।রোদের ঠোঁট দেখে বুঝলো বিড়বিড় করছে।কিন্তু কী কারণে এতো রেগে আছে পূর্ব সেটাই বুঝছে না।
।
।
“রোদেলা কী হলো তোমার?আজকে মুখ এমন ভার করে রেখেছো?”
“তেমন কিছু না মেঘ।”
“আমাকে বলতে পারো।নো প্রবলেম।”
“আমরা বরং কাজে মন দিই।”
গত দুদিনে মেঘের সাথে রোদ অনেকটা সহজ হয়েছে।কিন্তু মেঘের এক্সট্রা অধিকার দেখানোটা রোদের পছন্দ না।রোদ মনে হয় ক্রাশ খাওয়া যায় এমন ছেলেদের অ্যাটিটিউড থাকতে হয়।মেঘের মতো গায়ে পড়া হলে ক্রাশ হওয়ার যোগ্যতাই হারিয়ে ফেলে।
রোদ কম্পিউটারে এনিমেশনের কাজ করছিলো।তখন তার খোলা চুল সামনে এসে পড়ছিলো।রোদ বিরক্ত হয়ে চুল সরিয়ে দেওয়ার পরও সামনে চলে আসে।তখন রোদ অনুভব করলো কেউএকজন তার চুলে হাত দিয়ে।রোদ পেছন ফিরতে গেলে চুলে টান পরলো।রোদ হালকা ব্যাথা পাওয়ায় রেগে গেলো।হঠাৎ পেছন থেকে একজন বললো,
“হয়েছে।চুল বেঁধে দিয়েছি।আর সামনে আসবে না!”
মেঘের কন্ঠ শুনে রোদের রাগ কমলো।অন্যকেউ হলে এতোক্ষণে নাক ফাটিয়ে দিতো।তবুও মেঘের উপর থেকে একেবারে রাগ কমলো না।রোদ ধপ করে আবারো চেয়ারে বসে পরলো।
।
।
“নাবিলা প্লিজ ইয়ার স্টপ।আর কতো বকবক করবে?”
“পূর্ব তুমি বিরক্ত হচ্ছো?”
“কালকে তোমাকে দেখে ভাবলাম তুমি ইন্টারেস্টিং।কিন্তু তুমি যে অভার ইন্টারেস্টিং তা জানতাম না।”
দাঁতে দাত চেপে কথাটি বললেও নাবিলা এতে বিন্দু মাত্র কর্ণপাত করলো না।বরং দাঁত দেখিয়ে হাসলো।পূর্ব আর তিহান নিজেদের কপালে হাত রাখলো।কোন দুঃখে যে এই মেয়েটার সাথে বন্ধুত্ব করছিলো কে জানে!ওরা তিনজন কেন্টিনে বসেছিলো।তখনি গেইটের দিকে তাকিয়ে তিহান বললো,
“ইন্না-লিল্লাহ!রাফিয়া চলে এসেছে।”
“কীহ?রাফিয়া কেনো এখানে আসবে?”
“আরে ইয়ার ক্যালেনকারি হয়ে যাবে।তাড়াতাড়ি চল।”
তিহান পূর্বের হাত ধরে কেন্টিন থেকে বেরিয়ে এলো।নাবিলা নিজের নিজের মতো বকবক করছিলো তাই সে খেয়াল করেনি যে তার সাথে থাকা দুটা ব্যাক্তি উধাও হয়ে গেছে।
“রাফিয়া বাইরে চলো।”
“আরে ব্যস!বাইরে কেনো যাবো?তোমাদের কলেজটা একটু দেখি।”
“ইন্না-লিল্লাহ! পরে দেখিয়েও।”
তিহান একহাতে রাফিয়া অন্যহাতে পূর্বের হাত ধরে কলেজ থেকে বেরিয়ে এলো।কলেজ থেকে কয়েক কদম দূরে আসতেই পূর্ব জিজ্ঞেস করলো,
“রাফিয়া আমাদের কলেজে কী করছো?”
“সেকি!মি.ক্রাশ আপনাকে আমার কথা বলেনি?আমি রোদের সাথে দেখা করতে যাবো।”
“কেনো?জাদুমন্ত্রী কী প্রেগন্যান্ট যে দেখা করতে হবে?”
“ইন্না-লিল্লাহ!পূর্ব মুখে একটু লাগাম রাখ।”
“লাগাম রাখবো কেনো?ঠিকই তো বল…”
পূর্বের মাথায় এলো সে কি বলতে গিয়ে কী বলে ফেলেছে।তাই কথায় বলে, “ভাবিয়া করিয়ো কাজ করিয়া ভাবিও না”
“আচ্ছা রাফিয়া চলো।সামনেই জাদুমন্ত্রীর কম্পিউটার কোচিং সেন্টার।এখনো ওর ক্লাস শেষ হয়নি।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
তিহান,রাফিয়া আর পূর্ব পায়ে হেঁটে রোদের কোচিং সেন্টারের সামনে আসলো।সেন্টারের ভিতর চোখ যেতেই দেখলো একটা ছেলে রোদের অনেকটা কাছাকাছি আছে। আর ছেলেটা রোদের চোখে হাত রেখে “ফুও” দিচ্ছে।ওমনি পূর্বের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।চোখে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে রোদের দিকে তাকিয়ে রইলো।
পরবর্তী পর্ব পড়তে পেইজটি তে লাইক দিন এবং গল্পের লিংক পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন। গ্রুপের লিংক কমেন্ট বক্সে দেওয়া আছে।।
[চলবে]