পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_৩৫

0
1007

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_৩৫
#লেখিকাTasneem Tushar

গোসল সেরে গায়ে তোয়ালে পেঁচিয়ে বের হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ব্যাক ব্রাশ করতে থাকে আদিল। ঠিক অমন সময় চাপানো দরজায় নক করে উকি দিতেই আদিলকে খালি গায়ে দেখে লজ্জায় পরে যায় তিয়াশা। তার হাতে থাকা ট্রাউজার আর টি-শার্ট কোনরকমে বেডের উপরে রেখে পেছন ফিরে বলে,

“এগুলো পরে নিচে আসুন। আমি নিচে যাচ্ছি।”

আদিল মুচকি হেসে কাপড় গুলো হাতে নিয়ে দুষ্টুমি করে বলে,

“তুমি চাইলে কিন্তু থাকতে পারো। আমার কোনো সমস্যা নেই।”

তিয়াশার ভ্রু কুঁচকে গেছে। মানুষটা বলে কি? নিজের চোখ দুটো হাত দিয়ে ঢেকে আদিলের দিকে ফিরে বলে,

“আপনার মাথায় আসলেই সমস্যা আছে। ডাক্তার দেখাতে হবে।”

আদিল হাসতে হাসতে বলে,

“হুম আছেই তো। সেই রোগের ঔষধও আমার জানা আছে?”

“তাই বুঝি?”

বলতে না বলতেই হঠাৎ তিয়াশা কোমরে টান অনুভব করে। ঘটনার আকস্মিকতায় হাত সরে যায় তার। তাকিয়ে দেখে আদিল ট্রাউসার আর টি শার্ট পরে দাঁড়িয়ে। আদিল তার তোয়ালে দিয়ে তিয়াশার কোমড়ে পেঁচিয়ে টেনে একেবারে তার কাছাকাছি নিয়ে আসে। সাথে সাথে লজ্জা পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে তিয়াশা। আদিল তিয়াশার চিবুক ধরে মাথা উপরের দিকে তোলে, তারপর তিয়াশার অধরে একে দেয় গাঢ় চুম্বন। তিয়াশা বিস্ময়ের সাথে আদিলের চোখ বরাবর তাকায়। আদিল হেসে বলে,

“হুম তাই। তুমিই আমার ঔষধ। বুঝলে পাগলী?”

“কি করছেন? ছাড়ুন।”

আদিল ছেড়ে দিতেই তিয়াশা চলে যেতে নিলে আবার হাতে টান অনুভব করে। আদিলের দিকে ফিরে তাকাতেই আদিল বলে,

“হাত ধরেছি, ছাড়ার জন্য নয়।”

*“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


পৌষী ও ইশরাক বাড়ি ফিরে এসেছে। পৌষী আদিলকে সোফায় বসে পত্রিকা পড়তে দেখেই দৌড়ে যায় তার কাছে। পাশে বসে কোনো কথা না বলে চুপচাপ আদিলকে দেখতে থাকে। আদিল পত্রিকা সরিয়ে তাকিয়ে বলে,

“কি দেখছো?”

পৌষীর চোখে পানি। আদিল একটু চমকে যেয়ে ব্যাস্ত হয়ে বলে উঠে,

“কি হয়েছে? কাঁদছ কেন?”

পৌষী চোখ মুছে বলে,

“কিছু সময়ের জন্য মনে হচ্ছিল বাবা বসে আছে। আপনার গায়ের যেই জামাটা এটা আমি আর আপি পছন্দ করে কিনে এনেছিলাম বাবার জন্য। বাবা এত পছন্দ করেছিল যে মাত্র একবার পড়েছিল।”

“কেন? একবার কেন?”

“কারণ বাবা চায়নি বারবার পরে পুরোনো করতে। এত বুঝিয়েছি আমি আর আপি বাবাকে, কিন্তু সে নাছোড় বান্দা কোনো ভাবেই এটাকে পুরোনো করতে দিবেনা।”

“উম, তাহলে তো আমার এগুলো পড়া ঠিক হয়নি।”

“উহু, বাবার জামা পড়ার জন্য আপনিই উপযুক্ত। আপনাকে বেশ মানিয়েছে। আপনার থেকে বাবার মতোই ঘ্রাণ আসছে। হয়তো আমার বড় ভাই থাকলে তার থেকেও এমন ঘ্রাণই আসতো।”

আদিল হেসে পৌষীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

“বাবা নেই তো কি হয়েছে, আমি আছি তো। আমি বড় ভাই হয়েই না হয় পাশে থাকবো।”

পৌষীর চোখ খুশিতে চকচক করে উঠে এবং আদিলকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,

“আপনি অনেক ভালো, ভাইয়া।”

তিয়াশা তাদের সব কথোপকথনই শুনতে পায় কাজ করতে করতে। ভাবে মানুষটা এত ভালো কেন? কত অল্পতেই আপন করে নেয়। কেন তার জন্য এত মায়া লাগে আমার? এটা যে ঠিক নয়। এসব ভাবতে ভাবতেই সবাইকে ডাক দেয় টেবিলে দুপুরের খাবার খেতে আসার জন্য।

টেবিলে দেয়া হয়েছে ভুনা খিচুড়ি, গরুর গোস্ত, বেগুন ভাজা, সালাদ আর আচার। আদিল টেবিলে বসতে বসতে বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে উঠে,

“ঘ্রাণেই তো অর্ধভোজন হয়ে গেল।”

তিয়াশা প্লেটে খাবার তুলে দিয়ে বলে,

“এবার খেয়ে দেখুন কেমন হলো?”

সবাই একসাথে খাওয়া শেষ করে উঠতে না উঠতেই আদিলের ফোনে একটা কল আসে। আদিল তার ফোন নিয়ে দূরে যেয়ে কথা সেরে তিয়াশার কাছে এসে বলে,

“একটি যুদ্ধে নামবো। তোমাকে পাশে পাবো তো?”

“বুঝলাম না।”

আদিলের মুখে বেশ চিন্তার ছাপ। তিয়াশা আদিলকে উদ্বিগ্ন দেখে জিজ্ঞেস করে,

“কি হয়েছে?”

“বলার মতো কিছুনা। আমি বরং আজ যাই।”

“আপনাকে কিছু বলার ছিল।”

“হুম, বলো।”

“শান্ত হয়ে বসুন আগে। তারপর বলছি।”

মুখোমুখি বসেছে দুজন। তিয়াশা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলা শুরু করে,

“আদনান কল দিয়েছিল আমাকে। আপনার কথা জিজ্ঞেস করছিল।”

“আদনান? কেন?”

“বলছি।”

“হুম, বলো।”

“আপনি বেশ কদিন ধরে কারো সাথে ঠিক মতো কথা বলছেন না। খাওয়া দাওয়া করছেন না। আন্টি আপনার চিন্তায় কান্নাকাটি করে অস্থির। আপনার ফোনে কল করে কেউ পাচ্ছেনা। পরিবারের সবচেয়ে ভালো ছেলেটা আজ সবার চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

“এসব আদনান বলেছে তোমাকে?”

“কেন কষ্ট দিচ্ছেন আপনজনদেরকে? আর আসলেই তো নিজের কি বেহাল অবস্থা করেছেন। কেনই বা নিজেকে এত কষ্ট দিচ্ছেন?”

“তুমি বুঝতে পারছনা? কেন এত পাগলামি করছি? পরিবারের সবচেয়ে বাধ্য, ভদ্র, শান্ত ছেলেটা আজ বেপরোয়া হয়ে গেছে। কিভাবে হলো? তুমি বুঝোনা?”

“মিঃ আদিল, প্লিজ শান্ত হোন। উত্তেজিত হওয়া আপনার জন্য ঠিক নয়।”

আদিল অস্থির হয়ে তিয়াশার হাত দুটো ধরে বলে,

“তিয়াশা, তুমি আমার পাশে থাকলে আমি আবার আগের মতো হয়ে যাবো। শুধু বলো তুমি আমার পাশে থাকবে।”

তিয়াশা হাত সরিয়ে নিয়ে বলে,

“বাস্তবতা এত সহজ নয়। আমি যদি আপনার পাশে থাকতেও চাই, একটা ডিভোর্সড মেয়েকে একটা উপযুক্ত ব্যাচেলর ছেলের পাশে সমাজ পরিবার পরিজন কেউ মেনে নিবেনা। বরং আমার জন্য আপনার আপনজনদের সাথে আপনার সম্পর্কের বিপর্যয় নেমে আসবে।”

তিয়াশা এবার চোখ সরিয়ে মাথা নিচু করে স্মিত হেসে বলে,

“আপনি… আপনি বরং আপনার বাবার পছন্দ করা মেয়ে সুহানিকে বিয়ে করুন। মেয়েটি যথেষ্ট যোগ্যতা সম্পন্ন। কিছুদিন পর সেও ডাক্তার হয়ে বের হবে। আপনার সাথে দারুন মিলবে।”

আদিল নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলে উঠে,

“আর তুমি? তুমি যোগ্য নও?”

“আমার যোগ্যতা এখন কেউ দেখবেনা। আমার যোগ্যতার আগে সবাই আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলবে আমি এক ঘর ভাঙা মেয়ে। আমার তো কোনো যোগ্যতাই নেই ঘর বাঁধার।”

“এই যুগের মেয়ে হয়ে তোমার মুখে এসব কথা মানায় না।”

“একটা জিনিস আমি এখনো বুঝতে পারছিনা। এত এত যোগ্যতা সম্পন্ন অবিবাহিত মেয়ে থাকতে, সুহানির মতো স্মার্ট মেয়ে থাকতে, কেন আমি? কেন?”

আদিল এবার তিয়াশার হাঁটুর কাছে মেঝেতে বসে তারপর বলে,

“ভালোবাসা, ভাললাগা কি বলে কয়ে হয়? তোমাকে দেখেই এক ধরণের ভালোলাগার সৃষ্টি হয়। কি যেন কি আছে তোমার মাঝে যা আমাকে ভীষণ ভাবে আকৃষ্ট করে। তোমাকে কেন ভালোলাগে তার কারণ খুঁজতে থাকি। শুনবে কেন? তোমাকে ভালোবাসার সবচেয়ে বড় কারণ তোমার ব্যাবহার। আমি ম্যাকডোনাল্ডে যতবার গিয়েছি, তোমার ব্যবহার দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। শুধু আমার সাথে নয়, সেখানে যাওয়া আসা করা প্রত্যেকটা কাস্টমারের সাথে তোমার অমায়িক ব্যাবহার আমাকে মুগ্ধ করেছে, হোক সে যুবক অথবা বৃদ্ধ। তারপর তোমাকে যত দেখেছি ততই তোমার বাচনভঙ্গি, বুদ্ধিমত্তা, সাহসিকতা, তোমার ছোট ছোট দুষ্টুমি, তোমার গান, তোমার কণ্ঠ সব আমাকে মুগ্ধ করেছে। আর তোমার ঠোঁটে লেগে থাকা সেই মারাত্মক হাসি, যা কোনো কিছুতেই ঠোঁট থেকে মুছেনা। আমাকে আকৃষ্ট করেছে। সেই হাসিতে খুন হয়ে গিয়েছি আমি। নিজেকে আটকানোর চেষ্টা করেছি বারবার, কিন্তু কখন যে ভালোলাগা ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে নিজেই জানিনা। এরপর তোমার সবকিছুই আমি ভালোবেসে ফেলেছি।”

তিয়াশার চোখ গড়িয়ে পানি পরে আদিলের হাতে। আদিল তিয়াশার চোখ মুছে দিয়ে বলে,

“কাঁদছো কেন?”

“এর আগে কখনো কেউ আমার সম্পর্কে এত সুন্দর করে বলেনি। আপনি আসলেই আজব এক ছেলে।”

“হুম, আজব ছেলেই তো, নাহলে কি খুঁজে খুঁজে আজব মেয়েকে পছন্দ করে?”

তিয়াশার হাত ধরে বলে,

“আমি তোমাকে আমার জীবনে চাই তিয়াশা। কথা দিচ্ছি, তোমাকে সর্বোচ্চ খুশি রাখার চেষ্টা করবো।”

“মিঃ আদিল, আপনি যদি আপনার পরিবারের সবাইকে খুশি রেখে আমার হাত ধরেন, আমি আপনার হাতটি তখন নিশ্চিন্তে ধরব।”

“সত্যি?”

“হুম সত্যি।”

আদিল পারবে তো সবাইকে মানিয়ে তিয়াশার হাত ধরতে?

চলবে…

আগের পর্ব: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/947465892350797/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে