পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_২৭
#লেখিকাTasneem Tushar
সকালের নাস্তা শেষে সবাই তৈরি হয়ে নেয়। উদ্দেশ্য আজ সারাদিন ঘুরাফেরা করবে, সাথে সি বীচে গোসল, প্যারা সেইলিং, জেট স্কি চালানো আর কায়াকিং। তাছাড়া আশেপাশের ছোট্ট শহরটাও ঘুরে দেখার ইচ্ছে তাদের। তিয়াশা খুব খুশি মনে আছে। গতকাল রাতের অন্ধকারে কোথায় উঠেছে, কতদূরে তা কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি তিয়াশা। দিনের ঝকমকে আলোয় বাইরে বেরিয়ে তিয়াশা ভালোভাবে ঘুরে দেখতে থাকে সব।
সি বীচের খুব কাছেই এই দোতলা বিশিষ্ট কটেজ। কটেজের ছাদটা গোলাকার, দেখলে মনে হয় ছনের তৈরি। দোতলায় যেতে হয় কটেজের বাহিরে থাকা একটি পেঁচানো সিঁড়ি দিয়ে। কটেজের সীমানায় রয়েছে জাকুজি ও একটি সুইমিংপুল। একপাশে নানা ফুলের সমারোহে একটি বাগান আর সেই বাগানের এক কোণায় রয়েছে একটি দোলনা। অন্যপাশে একটি হ্যামক ঝুলছে। তিয়াশা দৌড়ে যেয়ে বসে পড়ে সেই দোলনাটিতে।
এত সুন্দর পরিবেশ পেয়ে খুব খুশি লাগছে তিয়াশার। কল্পনাও করেনি এত সুন্দর জায়গায় তার জন্মদিন পালিত হবে। এর জন্য মনে মনে অসংখ্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে তিয়াশা তার পরিবার ও বন্ধুদের। কিন্তু মনে পুষে রয়েছে এখনো আদিলের প্রতি অভিমান। কাউকে সারপ্রাইজ দিতে গেলে বুঝি এত ভয়ঙ্কর প্ল্যান করতে হয়?
তিয়াশা যখন দোলনায় ঝুলছে, তখন আদনান সুযোগ পেয়ে তিয়াশার কাছে এসে বলে,
“বসতে পারি?”
“হুম বসুন না।”
“আজকের আবহাওয়াটা কিন্তু অনেক ভালো।”
“হুম, অনেক ভালো।”
হাতে থাকা আইসক্রিমের বার তিয়াশার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“নাও তোমার জন্য।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
তিয়াশা ভীষণ খুশি হয়ে যায়। আনন্দিত হয়ে আইসক্রিমের প্যাকেটটি সে হাতে তুলে নেয়।
“ওহ মাই গড। থ্যাংক ইউ। আমার আইসক্রিম অনেক পছন্দের।”
“তাহলে তো ঠিক বুঝেছি।”
আইসক্রিম খেতে খেতে তিয়াশা জিজ্ঞেস করে,
“আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আপনারা যা করেছেন, আমার এই জন্মদিনটি সারাজীবনের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
“তোমার ভালো লেগেছে?”
তিয়াশা চোখ বড় বড় করে বলে,
“হুম লেগেছে তো। কিন্তু এই কিলার সারপ্রাইজ প্ল্যানটা আপনার মাথা থেকে এসেছে?”
তিয়াশার কথায় আদনান হাসতে হাসতে শেষ। তিয়াশা অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,
“হাসছেন যে? এটা কি হাসির কথা।”
“সেটার ব্যাখ্যা তোমাকে আমার ভাইজান দিতে পারবে। প্ল্যানের সিকিভাগ আমার মাথা থেকে বেরিয়েছে। আর বাকি প্ল্যান তার।”
তিয়াশার চোখে মুখে ভাবনার ছাপ পরে। দেখে মনে হয় গভীর ভাবনায় ডুবে আছে। তারপর বলে উঠে,
“হুম। বুঝলাম, দুষ্টের শিরমণি লঙ্কার রাজা।”
ওদিকে আদিল হ্যামকে চোখবন্ধ করে শুয়ে মুখের উপর হ্যাট দিয়ে তিয়াশা ও আদনানের সব কথাই শুনতে পাচ্ছিল। তরাং করে উঠে বসে বলে,
“আমি কিন্তু, একা একা খাইনা চানাচুর ভাজা।”
*
সমুদ্র পারে এসেছে সবাই। তিয়াশা একটি বিচবেডে বসে আছে। বাকি সবাই পানিতে ঝাপাঝাপি করছে। একটু পর পৌষী ও প্যাট্রিসিয়া এসে টানতে টানতে নিয়ে যায় তিয়াশাকে। কি আর করা তিয়াশা সাঁতার জানেনা, নামতে চাইনি কিন্তু ওদের আগ্রহে সেও যোগ দিয়েছে সবার সাথে।
হঠাৎ একটা চিৎকার শুনতে পায় সবাই, কেউ একজন চিৎকার করছে,
“শার্ক, শার্ক।”
হাঙ্গরের দেখা নাকি পাওয়া গেছে এবং সেটা নাকি এদিকেই আসছে। সবাই ভয়ে পানি থেকে চিৎকার করতে করতে উপকূলের দিকে ছুটে আসতে থাকে। হঠাৎ পৌষী প্যাট্রিসিয়াকে ও ম্যাথিউকে অস্থির হয়ে ডেকে বলতে থাকে,
“তিয়াশা আপি কোথায়? ওকে তো দেখছিনা।”
দূরে দেখতে পায় তিয়াশা একা পরে গেছে এবং একটি হাঙ্গর খুব দ্রুত তার দিকেই ছুটে আসছে। তিয়াশা স্রোতের বিপরীতে দৌড়ে আসার চেষ্টা করছে, কিন্তু হাঙ্গরটি তিয়াশার প্রায় পায়ের কাছে চলে আসে। তিয়াশা প্রানপনে চিৎকার করে বলছে,
“বাঁচাও, বাঁচাও।”
তার শরীর যেন অসার হয়ে গেছে। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে সে। একটু পরেই চোখ খুলে হঠাৎ আদিলকে দেখতে পেয়ে তিয়াশা হকচকিয়ে একটি লাফ দিয়ে দূরে সরে যায়। দেখতে পায় আদিল হাঙ্গরের কস্টিউম পরে উঠে দাঁড়িয়েছে এবং সমানে হেসে চলেছে।
তিয়াশা এবার ভীষণ ক্ষেপে যায়, আদিলের টি-শার্ট খামচে ধরে কাছে টেনে নিয়ে বলে,
“ফাজলামি পেয়েছেন? মেরে ফেলবেন নাকি?”
আদিল মুচকি হেসে বলে গান ধরে,
“উহু, তোমার জন্য মরতে পারি
ও সুন্দরী তুমি গলার মালা।”
তিয়াশা প্রতিউত্তরে বলে,
“ধ্যাৎ, ঝামেলা।”
বলেই টি-শার্ট ছেড়ে আদিলের দিকে রেগে কটমট করে তাকায় তারপর হনহনিয়ে চলে আসতে নেয়। একটু থমকে দাঁড়ায়, কি যেন কি ভেবে আদিলের সামনে যেয়ে দাঁড়িয়েই আদিলের পায়ে তিয়াশা তার পা দিয়ে অনেক জোরে চাপা দিয়েই দৌড় দেয় উপকূলের দিকে।
আদিল ঘটনায় আকস্মিকতায় শুধু বলে উঠে,
“উহ।”
তারপর তিয়াশার পেছন পেছন দৌড়ে উপকূলের দিকে আসতে থাকে।
*
দুপুরের লাঞ্চ শেষ করে শহরে ঘুরতে এসেছে সবাই মিলে। একটি সুভিনিয়ার শপে ঘুরে ঘুরে দেখছে কি পাওয়া যায়। এদিকে আদিল একটি ফোনকলে ব্যাস্ত হয়ে যায়। ফিরে এসে আদনানের উদ্দেশ্যে বলে,
“আদনান, আমার যেতে হবে। একটা কাজ পরে গেছে।”
“হঠাৎ? কি কাজ পড়লো আবার তোর?”
“আছে একটু আর্জেন্ট।”
“ফিরবি কখন?”
“তা জানিনা। দেখি।”
“দেখি মানে কি? আগামীকালই তো ফিরে যাব। তুই তাড়াতাড়ি কাজ সেরে চলে আসবি।”
“চেষ্টা করবো। এখন বলতে পারছিনা।”
আদিল চলে যাচ্ছে দেখে সবারই ভীষণ মন খারাপ হয়। বেশি মন খারাপ হয় পৌষীর। সে বলে উঠে,
“ভাইয়া, আপনি প্লিজ যাবেন না। আপনি না থাকলে তো একটুও মজা হবেনা।”
আদিল পৌষীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“চেষ্টা করবো ছোট আপি। দেখি।”
তারপর তিয়াশার দিকে তাকিয়ে বলে,
“অনেকে হয়তো খুশিই হবে আমি চলে গেলে।”
বলেই আদিলের প্রস্থান ঘটে। তিয়াশা তাকিয়ে রয় আদিলের চলে যাওয়ার দিকে। কেন যেন মনটা খারাপ হয়ে গেল। মানুষটা সারাক্ষন তিয়াশাকে বিভিন্ন ভাবে জ্বালাতন করতো। মজাও লাগতো আবার বিরক্ত ও লাগতো। কিন্তু এখন মনটা বিষন্ন হয়ে যাচ্ছে।
*
সূর্যাস্তের সময় সমুদ্রকুল যেন অপরূপ সৌন্দর্যে পরিণত হয়েছে। আকাশে সূর্যের লাল আভা, সাথে সামুদ্রিক বাতাস, মনটাই ভালো করে দেয়। সবার সাথে তিয়াশা উপকূলে বসে আছে। পাশেই আদনান।
আদনানের সাথে তিয়াশার বেশ ভালোই বন্ধুত্ব হয়েছে। কথায় কথায় এখন তাদের কথাবার্তা আপনি থেকে তুইতে এসে পৌঁছেছে। আদনান ও মনে মনে বেশ খুশি। সে তো তিয়াশার ভালো বন্ধু হতে চেয়েছিল। তবেই না সে তার মনের কথা তিয়াশাকে জানাতে পারবে। তিয়াশা আদনানের সাথে গল্প করছে ঠিকই কিন্তু মনে এক শূন্যতা বিরাজ করছে। সব আছে তারপরেও কি যেন নেই।
তিয়াশা সুযোগ বুঝে তার ক্রসবডি ওয়ালেট থেকে ফোন বের করে এবং একটি টেক্সট পাঠায় আদিলকে যাতে লিখা,
“আপনি আসবেন কি?”
ঘণ্টা দুয়েক হয়ে গেছে সবাই কটেজে ফিরেছে।তিয়াশা ফোন চেক করে দেখে কোন উত্তর আসেনি। তিয়াশার একটু মন খারাপ হয়।
এখন রাতের ডিনার তৈরির কাজ চলছে। রাতের ডিনার তৈরিতে আছে আদনান ও ম্যাথিউ। তিয়াশাকে রান্নাঘরে যেতে দেয়নি। তাও সে টুকটাক সাহায্য করেছে। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষে এখন মুভি দেখার পালা।
সবার ইচ্ছা অনুযায়ী হরর মুভি “দা নান” দেখবে বলে ঠিক করেছে। স্ক্রিনে মুভি চলছে, তিয়াশাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে পৌষী। আরেক পাশে প্যাট্রিসিয়া। তিনজনই ভয়ে মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করে ফেলছে। এর মাঝেই হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায় আর মনে হয় পুরো বাড়িতে কেমন ঝুনঝুন ও মচমচ শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ভয়ে সবাই এক যোগে চিৎকার শুরু করে দেয়।
“আরে! কি হয়েছে? চিৎকার করছো কেন সবাই?”
কথা শুনে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে একহাতে চাবি আর অন্যহাতে ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আদিল। ততক্ষনে বিদ্যুৎ ও চলে আসে। আদিলকে দেখে যেন সবার দেহে প্রাণ ফিরে আসে।
নিজেদের কাণ্ডে নিজেরাই হেসে খুন হয়ে যায় সবাই।
চলবে…
আগের পর্বের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/947465892350797/