পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_২৪
Tasneem Tushar
হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে তিয়াশা। রাতের আলো আধারিতে নিয়ন আলোয় আরো ভুতুড়ে লাগছে জনমানবহীন এই পরিবেশ।
আদিল কেন আমাকে এখানে ফেলে রেখে গেল? কি ক্ষতি করেছি আমি তার। নাহ, এখন আদিলের কথাও চিন্তা করতে ইচ্ছে হচ্ছেনা। আগে এখান থেকে নিজেকে বাঁচাতে হবে।
তিরচিহ্ন অনুসরণ করে যেতে যেতে বহুদূর চলে এসেছে তিয়াশা। সামনে আর কতদূর যেতে হবে সেটাও বোঝা যাচ্ছেনা এই অন্ধকারে। হঠাৎ খেয়াল করে তিরচিহ্নের কোনো দিক নির্দেশনাও আর চোখে পড়ছেনা। এই নিয়ন আলোর দিক নির্দেশনাই ছিল একমাত্র ভরসা। দিশেহারা লাগছে এখন নিজেকে। মনে হচ্ছে সি-বীচের একেবারে শেষ প্রান্তে চলে এসেছে। যে পথ দিয়ে এসেছে সে পথেই ফিরে যাবে কিনা ভাবছে।
তিয়াশা কোনো কিছু না ভেবেই পেছনের দিকে ঘুরে যে পথে এসেছে সে পথে পা বাড়াতেই চমকে উঠে। একি! এখন তো কোনো নিয়ন আলোয় তিরচিহ্নের দিক নির্দেশনা দেখা যাচ্ছে না। সামনে পেছনে ভালোভাবে ঘুরে তাকিয়ে দেখে নেয়। না কোনো আলোই নেই।
দিক নির্দেশনা গুলো কোথায় মিলিয়ে গেল? মরীচিকা দেখেনি তো? উফ আল্লাহ কি করব এখন? এই অভিশপ্ত রাত কি শেষ হবে? আকাশ টাও কালো মেঘে ঢেকে আছে, তাই আরও বেশি অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে চারিপাশ টা। শেষ আশাটাও নিভে গেল।
তিয়াশার চোখে জল। এতক্ষন মনের জোরে সাহস করে এতদূর পর্যন্ত এসেছিল, কিন্তু এখন আর নিজেকে শক্ত রাখতে পারছেনা। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে তিয়াশা।
বাতাসের সাথে দূর থেকে গানের সুর ভেসে আসছে মনে হচ্ছে। আবার একটু সাহস পায় মনে। কেন জানি বার বার মনে হচ্ছে কেউ তাকে দেখছে। ভূত টুত নয়তো। এসব কি ভাবছি? মাথা থেকে বাজে চিন্তা তাড়াতাড়ি দূর করে ফেলে তিয়াশা। হঠাৎ চোখে পড়ে দূরে একটি বাতি জ্বলে উঠেছে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
তিয়াশা এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে আলোর উৎসের দিকে পা বাড়ায়। হেঁটে যেতে যেতে পৌঁছায় একটা বাড়ির সদর দরজার সামনে। অন্ধকারে খুব ভালোভাবে বাড়িটি বোঝাও যাচ্ছেনা।
তিয়াশা আন্দাজ করে বাড়িটি সমুদ্র পাড় থেকে খুব বেশি দূরে নয়। এখনো সামুদ্রিক বাতাস গায়ে এসে লাগছে ও সমুদ্রের গর্জন স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। তিয়াশা খুশি হয়ে যায় মনে মনে। এ বাড়িতে নিশ্চয়ই কেউ থাকে যার থেকে সাহায্য পেতে পারে তিয়াশা। কিন্তু কোনো বাতি জ্বলছে না কেন? যেই আলো দেখে এখানে এসে পৌঁছেছে সেটাও আর দেখা যাচ্ছে না। এখন কয়টা বাজে সেটাও ঠাহর করতে পারছেনা।
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে তিয়াশা বাড়ির সদর দরজায় নক করতেই, ক্যাক! শব্দ হয়ে দরজাটি আপনাআপনি খুলে যায়। একটু অবাক হয় তিয়াশা। কাঁপা গলায় আওয়াজ তুলে বলে,
“এক্সকিউজ মি! কেউ কি আছেন এখানে?”
কোনো সাড়া নেই। তিয়াশা আবার জিজ্ঞেস করে,
“এনি বডি হোম? ক্যান সামওয়ান হেল্প মি?”
একটু থেমে আবার বলে উঠে,
“আমার সাহায্য দরকার। আশেপাশের শহরের রাস্তাটা কেউ কি বলে দিতে পারবেন?”
নাহ এবারও কোনো সাড়া নেই। একবার ফিরে যাবে কিনা ভাবে। কিন্তু চারপাশে তাকিয়ে যখন ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখে তখন পা বাড়ানোর আর সাহস হয়না। কোথায় যাবে সে এই অন্ধকারে? বরং এখানে তো মাথার উপরে একটা ছাদ পেয়েছে। নাহয় এখানেই রাতটা কাটিয়ে দিয়ে সকালে সূর্যের আলোয় একটা উপায় খুঁজে বের করবে।
দাঁড়িয়ে আছে তিয়াশা। কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছেনা। কাঁধে কিছুর স্পর্শে তিয়াশা লাফিয়ে উঠে জিজ্ঞেস করে,
“কে…? কে.. এখানে…?”
হঠাৎ একটি কালো হাত তিয়াশার মুখ চেপে ধরে। কিছু বোঝার আগেই চোখে কাপড় দিয়ে বেঁধে দেয়।
তিয়াশা প্রাণপনে হাত পা ছুড়ছে। মনে হচ্ছে কেউ টেনে হিঁচড়ে তাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে। এবার বোধহয় জমেই টেনে নিবে। এ যাত্রায় তিয়াশা বোধ হয় আর বেঁচে বাড়ি ফিরবেনা। কেউ তাকে বাঁচাতেও আসবেনা। একেবারেই নিরাশ হয়ে যায় তিয়াশা।
কি হচ্ছে এসব? বিপদ কি কমবে না? আদিল কোথায়? তিয়াশা কি এ যাত্রায় আসলেই বাচঁবেনা?
চলবে…
আগের পর্বের লিংক:
পর্ব ২৩: https://www.facebook.com/107665540875368/posts/138551357786786/