পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_২২
Tasneem Tushar
তিয়াশার কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পড়লে, আনমনেই কাঁধের হাতটি ধরে সজোরে হু হু করে কেঁদে উঠে তিয়াশা।
ফোনটি বারবার বেজে উঠছে তিয়াশার, কিন্তু প্রতিবারই সে কলটি কেটে দিচ্ছে আর পার্কের বেঞ্চে বসে কেঁদেই চলেছে। তার মনে হলো কেউ যেন তাকে বলে উঠলো,
“ফোনটি ধরুন।”
তিয়াশা চোখের পানি মুছে ফোনটি ধরে। কণ্ঠে কান্নার রেশ স্পষ্ট,
“হ্যালো?”
“কি এত কষ্ট তোমার?”
তিয়াশা হকচকিয়ে উঠে এত কাছ থেকে গলার শব্দ শুনতে পেরে। হঠাৎ তার খেয়াল হয় সে নিজের কাঁধে অন্য কারো হাত ধরে আছে। খেয়াল হতেই সেই হাতটি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। তারপর মুখ তুলে তাকালে দেখতে পায় খুব পরিচিত একটি মুখ দাঁড়িয়ে।
তিয়াশা দ্রুত মুখ ফিরিয়ে চোখ মুছে মুখে হাসি হাসি ভাব আনার চেষ্টা করে। পরিচিত মুখটি এবার বেঞ্চে যেয়ে বসে। তারপর তিয়াশাকে বলে,
“বসুন।”
তিয়াশা চুপ করে থাকে, তার মুখে কোনো শব্দ নেই। ধীর পায়ে হেটে এসে বেঞ্চে বসে। হঠাৎ পরিচিত মুখ দেখে হকচকিয়ে উঠেছে সে, তাই থিতু হতে সময় লাগছে।
হুট করেই দুই হাত দিয়ে তিয়াশার গালে হাত রেখে তার মুখটা তুলে ধরে সেই পরিচিত মুখটি। কন্ঠে তার অধিকারের সুর, তিয়াশার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলে,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
“চোখের পানি খুব সস্তা হয়ে গেছে তোমার, তাইনা?”
তিয়াশা ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে। এখনো চোখে তার পানি ছলছল করছে। পরিচিত মুখটি এবার বলে বসে,
“জানি অনধিকার চর্চা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি নিরুপায়, আপনার এই কান্না মাখা চেহারা দেখাটা আমার জন্য ভীষণ কষ্টের হয়ে যাচ্ছে।”
বিবর্ণ মুখে বসে আছে তিয়াশা। তার স্পর্শে হঠাৎ অস্বস্তি হলেও এক ধরণের মায়ার অস্তিত্ব টের পায় সে। অনেকটা রাগ করেই বলে উঠে সেই মুখটি,
“কাকে দেখে এভাবে দৌড়ে পালালে? ভূত দেখেছ? আর কিসেরই বা এত কষ্ট তোমার?”
তিয়াশা হুট করেই জিজ্ঞেস করে বসে,
“আচ্ছা আপনি সবসময় কিভাবে আমার খারাপ সময়ে পৌঁছে যান?”
“সে আমার মন জানে। সব সঠিক সময়ে জানতে পারবেন।”
তিয়াশার কি যেন কি হয়, ফিক করে হেঁসে দেয়। ছেলেটি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে বলে,
“হাসছো যে?”
“এমনি।”
“না সত্যি বলো।”
“আপনি খুব মজার মানুষ, মিঃ আদিল।”
“তাই? মজার কি এমন করলাম?”
“এই যে আপনি কখনো আমাকে আপনি, কখনো তুমি করে সম্বোধন করেন। ব্যাপারটা বেশ মজা লাগে।”
আদিলও হেসে দিয়ে বলে,
“আমার যখন যেটা ভালো লাগে সেভাবেই তোমাকে সম্বোধন করবো। সেটা তুমি এখন বুঝবেনা।”
তিয়াশা আবার হেসে দেয়। আদিল বলে উঠে,
“তুমি হাসলে তোমাকে কতটা ভালো লাগে, সেটা কি তুমি জানো?”
তিয়াশা কথা এড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,
“আপনি এখানে কি করছেন?”
“আমি আশেপাশেই ছিলাম মিস টি।”
এই লোকালয়েরই কফিশপে সুহানির সাথে দেখা করতে এসেছিল আদিল। সে ইচ্ছা করেই এই লোকালয়ে দেখা করতে আসে সুহানির সাথে, যেন সুহানির সাথে কোনোরকম দেখা শেষ করেই তিয়াশার খোঁজ করতে ম্যাকডোনাল্ডে যেতে পারে। আর এরপরে তো একটা সুযোগ চলেই এসেছে তার হাতে। এতকিছু তিয়াশাকে না বলে শুধু জানায়,
“তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।”
“মানে?”
“মানে বুঝতে হবেনা। তোমার ফোনের অপেক্ষায় তো অনেকদিন বসে রইলাম। সেই যে বললে তুমি আমাকে ফোন দিবে। আমাকে খাওয়াবে রেস্টুরেন্টে, কই আর তো ফোন দিলেনা।”
তিয়াশা একটু লজ্জা পেয়ে যায়।
“আসলে, আসলে…।”
“থাক আসলে আসলে করতে হবেনা। এখন চলো আমার সাথে।”
তিয়াশার চোখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন। সেটা দেখতে পেয়ে আদিল মুচকি হেসে তিয়াশার হাত ধরে টেনে বলে,
“আবারও অনধিকার চর্চা করছি। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই আমার। যেতে হবে আমার সাথে। কেন? কোথায়? এসব জিজ্ঞেস করবেনা। উত্তর পাবেনা।”
“উম..কিন্তু বাসায় যেতে হবে..তো। আম্মুকে না জানিয়ে কোথাও যাইনা আমি।
আদিল তিয়াশার হাত ধরে টানতে টানতে বলে,
“আন্টির পারমিশন নিয়েই এসেছি আমি।”
তারপরও তিয়াশা দ্বিধা করতে থাকলে, আদিল মজা করে বলে উঠে,
“না আসলে কিন্তু আমি এবার আরেকটা অনধিকার চর্চা করবো।”
“জ্বি?”
“জ্বি জ্বি, বলে লাভ নেই। একেবারে কোলে তুলে নিয়ে যাবো।”
তিয়াশা লাফ দিয়ে পিছু হটে যায়,
“না না, থাক। ঠিক আছে, আমি আসছি। চলুন।”
আদিল হো হো করে হেসে দেয়। তারপরও তিয়াশার হাত শক্ত করে ধরে রেখে বলে,
“চলো।”
তিয়াশা বাধ্য মেয়ের মতই আদিলকে অনুসরণ করে। যদিও তার মনে অনেক প্রশ্ন জাগছে, তবুও মনে এক প্রশান্তি কাজ করে আদিলের সাথে থাকলে। সে মনে প্রানে বিশ্বাস করে যে আর যাই হোক আদিলের সাথে থাকলে তার কোনো ক্ষতি হবার শঙ্কা নেই।
কিন্তু আদিল কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তাকে? সত্যিই কি তিয়াশা নিরাপদ তার কাছে?
চলবে…
আগের পর্বের লিংক:
পর্ব ২১: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/943334306097289/