পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_১৪

0
1150

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_১৪
#লেখিকা_তাসনীম_তুষার

আদিলের গান শেষ হতেই, আদনান স্টেজ থেকে দৌড়ে নেমে চলে আসে সেই আলোর উৎসের কাছে। তার চোখে মুখে খুশির ঝলক। কিন্তু মুখ দিয়ে যে তার কোনো কথাই বের হচ্ছেনা। নিজেকে সামলাতে না পেরে জড়িয়ে ধরে।

“আরে…আরে করছো কি? আস্তে বন্ধু।”

হাসতে হাসতে কথাটি বলে নিজেকে আদনানের বাহু থেকে কোনরকমে ছাড়িয়ে নেয় প্যাট্রিসিয়া। প্যাট্রিসিয়ার পেছনেই তিয়াশা ঠোঁটে স্মিত হাসি নিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। আদনান উঁকি দিয়ে একবার তিয়াশাকে দেখে নিয়ে বলে,

“আমি ভীষণ খুশি হয়েছি তোমরা এসেছ।”

ম্যাথিউ পেছন থেকে বেরিয়ে এসে অল্প কেশে হাত তুলে বলে,

“দোস্ত আমিও কিন্তু উপস্থিত আছি। আমার হাগ টা কই?”

“অবশ্যই দোস্ত। আয় আমার বুকে আয় ভাই।”

তিনজনেই হো হো করে হেসে উঠে। তিয়াশা পেছন থেকে সরে প্যাট্রিসিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে আদনানকে বলে,

“কেমন আছেন আপনি?”

“জ্বি ভালো। তুমি কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।”

“ধন্যবাদ কষ্ট করে অনুষ্ঠানে আসার জন্য।”

ম্যাথিউ দুজনের কথা থামিয়ে বলে উঠে,

“ওর আবার কষ্ট কিরে? ওকে রাজি করিয়ে নিয়ে আসতে আমাদের জান বের হয়ে গেছে।”

“কেন? কি করলো আবার সে?”

“কি করেনি সেটা বল। ভীষণ নাছোড়বান্দা মেয়েরে বাবা। তো এখানে দাঁড়িয়েই সব বলবো নাকি বসতে দিবি?”

“উফ, ভুলেই গিয়েছিলাম। চল আমার সাথে।”

আদনান তিনজনকে সাথে নিয়ে স্টেজের সামনের সারির এক পাশে স্পেশাল রিজার্ভ করা টেবিলে তাদেরকে বসতে দিয়ে গল্প শুরু করে।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


কয়েক ঘন্টা আগের ঘটনা…

ম্যাথিউ যখন রাগ করে প্যাট্রিসিয়াকে নিয়ে চলে আসছিল তিয়াশার বাসা থেকে, তখন তিয়াশার টনক নড়ে। ওর তো এই দেশে সবচেয়ে আপন বন্ধু এই মাত্র দুজনই। যারা বিপদে আপদে সবসময় তার পাশে ছিল। রাগ করে যদি সত্যি ওরা কথা বন্ধ করে দেয় তার সাথে, তাইতো সে সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায় এবং অনুষ্ঠানে আসতে রাজি হয়।

তিয়াশা কোনোরকম একটা সালোয়ার কামিজ পরেই রওনা দিতে নিলে, তিয়াশার ছোট বোন পৌষী ও প্যাট্রিসিয়া দুজনে মিলে ধরে বেঁধে জোর করে শাড়ি চুড়ি পড়িয়ে একেবারে বাঙালিয়ানা সাঁজে সজ্জিত করে তাকে। মজার ছলে পৌষী বলে উঠে,

“আপি দেখিস, অনুষ্ঠানে গেলে তোকে দেখে সবার মাথা ঘুরে যাবে।”

তিয়াশার ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি। বহুদিন হলো তার সাজতে ইচ্ছে হয়না। আয়নায় নিজেকে একটু দেখেই চোখ সরিয়ে নেয় সে। পুরনো স্মৃতিগুলো যে নাড়া দিয়ে উঠে। ম্যাথিউ ও প্যাট্রিসিয়া তাড়া দিলে মা বোনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দেয় সে দাওয়াতের অনুষ্ঠানে।

*

বর্তমান…

আদিলের ভীষণ অস্থির লাগছে। গান গাওয়া শেষেই সে দ্রুত হেঁটে চলে যায় নিজের রুমে। নিজের চোখকে যে তার বিশ্বাস হচ্ছেনা। সত্যি সত্যি তিয়াশা এসেছে।

আদিল তার ঘরের জানালা দিয়ে দেখছে যে আদনান আড্ডা দিচ্ছে বন্ধুদের সাথে আর তিয়াশা মাথা নিচু করে চুপ চাপ বসে টেবিলে। আদিল আনমনে তাকিয়ে তিয়াশাকে দেখে ভাবছে যে আদনানের সাথে তিয়াশার কি সম্পর্ক। আদনানের কাছে তো কখনো তিয়াশার কথা শুনিনি। আচ্ছা আদনানের সাথে তিয়াশার মাঝে অন্য কোনো সম্পর্ক নেই তো? ধ্যাৎ কিসব ভাবছি? আদিল জানালার পাশে থাকা চেয়ারে বসে ধুপ করে বসে পরে।

কিছুক্ষন পর,

“ভাইয়া আসতে পারি?”

আদনানের গলার আওয়াজ শুনে আদিল ভাবতে থাকে আদনান হঠাৎ এখানে এলো কেন? তারপর বলে,

“হুম আয়।”

তিয়াশা, ম্যাথিউ ও প্যাট্রিসিয়াকে নিয়ে আদিলের ঘরে ঢুকে আদনান। তিয়াশা একেবারেই চুপচাপ ও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। একবারের জন্য ও সে আদিলের দিকে তাকায়নি। আদিল তাদেরকে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালে আদনান আদিলের পাশে যেয়ে তার পিঠে হাত রেখে বলে,

“আজকের এই অনুষ্ঠান কিন্তু আমার এই ভাইকে কেন্দ্র করে। আমার ভাই আদিল মুজদাহীর ডাক্তারি পাশ করে বের হয়েছে আমাদের ইউনিভার্সিটি থেকেই।”

একে একে সবাই আদিলকে যখন হ্যান্ডশেক করে কংগ্রাচুলেশনস জানাচ্ছে তখন তিয়াশার চোখ ছানাবড়া আদিলের নামটি শুনে। তাকিয়ে রয়েছে সে আদিলের দিকে। সে ভাবতেও পারেনি এখানে আদিলের সাথে এভাবে দেখা হয়ে যাবে।

“আই থিংক আই নো ইউ। আই স ইউ সাম হোয়্যার।” প্যাট্রিসিয়া ও ম্যাথিউ দুজনেই বলে উঠে, “আরেন্ট ইউ দ্যাট গাই হু…”

আদিল মাঝে তাদের কথা থামিয়ে আন্তরিক হাসি দিয়ে বলে উঠে,

“উই অল গো টু সেম ইউনিভার্সিটি, সো ইট ইস নট ইম্পসিবল টু সি ইচ আদার অন দা ওয়ে।”

আদিল তিয়াশার নার্ভাসনেস দেখে ধারণা করে যে আদনান তিয়াশার একসিডেন্ট এর ব্যাপারটা হয়তো জানেনা। আর সে নিজেও তিয়াশার নাম বলেনি আদনানকে ঘটনার বর্ণনার সময়। কথা যাতে না বাড়ে তাই সে তাড়াহুড়ো করে কথা কাটিয়ে নেয়।

“আমি খুব খুশি হয়েছি তোমরা এখানে এসেছ বলে।”

তারপর তিয়াশার দিকে এগিয়ে যেয়ে ডান হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেকের উদ্দেশ্যে বলে উঠে,

“আরেন্ট ইউ গোয়িং টু কংগ্রাচুলেট মি?”

তিয়াশা ঢোক গিলে ঠোঁটে আলতো হাসি ফুটিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে বলে,

“অভিনন্দন আপনাকে।”

“ধন্যবাদ।”

তিয়াশার হাতে থাকা একটি গিফট বক্স আদিলের হাতে দিয়ে বলে,

“আমাদের তিনবন্ধুর পক্ষ থেকে একটি ছোট্ট উপহার আপনার জন্য।”

আদিল গিফট বক্সটি হাতে নিয়ে ধন্যবাদ জানায়। আদনান আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে বলে উঠে,

“চলো চলো, এখনো আব্বু আম্মু আর আপি বাকি পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য।”

“আদনান, শোন।”

আদনান ম্যাথিউ, তিয়াশা ও প্যাট্রিসিয়াকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেই আবার আদিলের রুমে ঢুকে বলে,

“কি ভাইয়া, জলদি বল।

“তোর এই বন্ধুদের তো আগে কখনো দেখিনি।”

“ম্যাথিউ এর কথা তো তুমি জানতে। আর বাকিরা ম্যাথিউ এর বন্ধু, তো আমারও কিছুদিন আগে বন্ধুত্ব হয়েছে তাদের সাথে।”

“মেয়ে দুটোকে দেখলাম। শুধুই বন্ধু নাকি আর কোনো ব্যাপার আছে?”

“আরেহ নাহ ভাইয়া, আর কিছু নেই।”

“সত্যি?”

“ধুর, কিছু হলে তুমিই তো সবার আগে জানবে।আচ্ছা এখন যাই। ওরা বাইরে দাঁড়িয়ে। তুমিও এসে জয়েন করো আমাদের সাথে।”

“আসছি। তুই যা এখন।”

আদনান তাড়াহুড়ো করে ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে গিফ্ট বক্সটা বুকে জড়িয়ে চেয়ারে বসে পড়ে আদিল। ঘরে মিষ্টি একটি পারফিউমের ঘ্রাণে ভরে গেছে। বুক ভরে এক বুক নিঃশ্বাস নিয়ে আদিল অস্ফুট স্বরে বলে উঠে,

“ভালোবাসি, তিয়াশা!”

চলবে…

আগের পর্বের লিংক:

পর্ব ১৩: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/permalink/934878476942872/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে