পুতুল ছেলেটি পর্ব-১১

0
949

#পুতুল_ছেলেটি
#Part_11
#Writer_NOVA

আনজুম পরিবারে ছোটোখাটো একটা মিটিং বসেছে বলা যায়। মিস্টার তানজিল আনজুম সবার সাথে কি এক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে।সবার থেকে একটা বিষয়ে মত নিতে চায়।তাই রাতের খাবার খেয়ে সাহিয়া ও সাজিয়া তাদের বাবা-মায়ের রুমে এসেছে। রুম জুড়ে পিনপিনে নীরবতা।তানজিল সাহেব তার দুই মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

সাহিয়াঃ বাবাই, কি বলবে জলদী বলো। আমার ঘুমে ধরেছে।বেশি সময় এভাবে বসে থাকতে পারবো না।

নিশিতাঃ হিয়া, এসব কি?নিশ্চয়ই তোমার বাবা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলবে।তাই তোমাদের ডেকেছে।

সাজিয়াঃ আমিও তো বুঝলাম,বাবাই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে ডেকেছে। কিন্তু বাবাই তো কিছুই বলছে না।

তানজিল সাহেব দুই মেয়ের বিরক্তি দেখে ঈষৎ হাসলেন।তারপর শান্ত কণ্ঠে বললেন।

তানজিলঃ কিছু দিন পর আমার বড় মেয়ে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে।তার নিজস্ব একটা সংসার হবে।বিশাল বড় দায়িত্ব তোমার কাঁধে পরবে সাজিয়া।তাছাড়া তুমি হলে সংসারের বড় বউ।সবদিকে তোমার নিখুঁত নজর থাকতে হবে। মনে রেখ আমি শুধু তোমাকে নয় আমার কলিজার টুকরো কে বিদায় দিচ্ছি।প্রত্যেক বাবার কাছে তার বড় সন্তান প্রিয়।তবে সে যদি হয় বড় মেয়ে তাহলে তো কথাই নেই।কিন্তু তোমরা দুজনেই আমার কাছে সমান। তোমাদের জন্য সারাজীবন আমাদের দরজা খোলা থাকবে।তবে প্রথম প্রথম শ্বশুর বাড়ি গিয়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। কারো কোন অভিযোগ করার সুযোগ দিবে না। তুমি যদি সবাইকে নিয়ে ভালোমতো থাকতে পারো তাহলেই আমর ও তোমার মায়ের শান্তি।

সাজিয়াঃ হ্যাঁ বাবাই, আমি সর্বস্ব দিয়ে তা করার চেষ্টা করবো।তোমাদের কে নিয়ে যেনো কেউ কোন কটু কথা না বলতে পারে।বরং সবাই জেনো বলতে পারে আমার বাবা-মা আমাকে সঠিক শিক্ষা দিয়েছে। তোমাদের বদনাম হোক এমন কোন কাজ আমি কখনো করবো না।

নিশিতাঃ আমাদের বিশ্বাস আছে।আমরা জানি আমাদের মেয়ে কখনই তার বাবা-মায়ের সম্মানহানির কোন কাজ করবে না।

সাহিয়াঃ এই কথার জন্য ডেকেছিলে।আমি ভাবলাম কি না কি😕??

তানজিলঃ না, এই কথার জন্য ডাকিনি।আমি উত্তরায় ফ্ল্যাটের জন্য ৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে যে জমিটা কিনিছিলাম।এখন চিন্তা করছি সেটা আপাতত রেখে দিবো।ঐটা কমপ্লিট করতে আরো ১০-১৫ লাখ টাকা লাগবে।ফ্ল্যাট ও সাজিয়ার বিয়ে দুটো একসাথে সামলাতে পারবো না। তাই কাজ স্টপ রেখেছি।বড় মা-মণির বিয়ের পর ঐ কাজ শুরু করবো।

সাহিয়াঃ যেমনটা তুমি ভালো মনে করো তেমনটাই করো।আমি যাচ্ছি ঘুমাতে।আল্লাহ হাফিজ।

তানজিলঃ কোথায় যাচ্ছিস হিয়া মা-মণি?আমি তো এখনো আসল কথাই বলিনি।

সাহিয়াঃ তাহলে এতক্ষণ কি বললে?🙄

তানজিলঃ তোদেরকে বিষয়গুলো জানিয়ে রাখলাম।আসল কথা হলো—-(আমতাআমতা করে)

সাহিয়াঃ কি জলদী বলো?আমার ঘুমে দু-চোখ টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

তানজিলঃ তুই এখানে চুপটি করে আমার পাশে বস তো।তোর সাথে আমার জরুরি কথা আছে।

💗💗💗

সাহিয়া ভ্রু কুঁচকে তার বাবার পাশে বসলো।সে কিছুই বুঝতে পারছে না। তার বাবা আসলে কি জরুরি কথা বলবে।

তানজিলঃ আসলে হয়েছে কি মা-মণি।তোরাব তোকে অনেক পছন্দ করেছে।ওর বাবা-মায়ের ও তুই অনেক পছন্দের। তাই তারা চাইছে তাদের দুই ছেলের জন্য আমার দুই জান্নাত নিতে।আর তুরাগ ও সাজিয়ার বিয়ের দিনই তোর আর তোরাবের বিয়ে দিতে।তাতে এক খরচে দুটো বিয়ে হয়ে যায়।এখন আমরা সবাই রাজী।তোরাব ছেলে হিসেবে খারাপ নয়।তোর মতামত জানতে চাইছি।

সাহিয়া রেগে আইটেম বোম হয়ে গেলো।তোরাবের সাহস দেখে সে অবাক হচ্ছে। তলে তলে এতকিছু করে ফেললো আর সাহিয়া তা টেরও পেলো না। চোখ, মুখ শক্ত করে সাহিয়া বললো।

সাহিয়াঃ আমি তাকে বিয়ে করতে পারবো না বাবাই।(কঠিন গলায়)

তানজিলঃ কেন মা-মণি?

নিশিতাঃ ছেলে হিসেবে তোরাব খুব ভালো। ওকে বিয়ে করতে মানা করছিস কেন?তারা নিজ থেকে তোকে তাদের ছোট ছেলের বউ করতে চাইছে। আর তুই মানা করছিস।

সাজিয়াঃ তোরাব কোন দিক দিয়ে খারাপ হিয়া?তুই ওকে বিয়ে করতে মানা করছিস যে?

সাহিয়াঃ দিদিয়া, আমি কি বলেছি তোরাব খারাপ?

সাজিয়াঃ না বলিসনি।তাহলে বিয়ে করতে সমস্যা কি?

সাহিয়াঃ আমি একজনকে অনেক পছন্দ করি।বিয়ে করলে তাকেই করবো।অন্য কাউকে নয়।

সাহিয়া চোখ বন্ধ করে ওড়না খামচে ধরে সাহস করে একদমে তার মনের কথা বলে দিলো।সবাই অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

তানজিলঃ ছেলেটা কে,কি করে,তার পরিচয় কি?

সাহিয়াঃ আমি খুব শীঘ্রই তাকে তোমাদের সাথে পরিচয় করে দিবো।আমার বিশ্বাস তাকে তোমাদেরও পছন্দ হবে।সে তোরাবের থেকে দুই ডবল বেশি ভালো।তার পার্সনালিটি আমার অনেক ভালো লেগছে।সে সবার থেকে ভিন্ন।

তানজিলঃ এক দিন সময় করে তুমি তাকে নিয়ে এসো। আমি তার সাথে কথা বলবো।

সাহিয়া খুশিতে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।এখন তার নাচতে ইচ্ছে করছে। তার বাবা যে এত জলদী রাজী হয়ে যাবে তা সে কল্পনাও করতে পারেনি।তানজিল সাহেব ঠিক করে রেখেছেন। বিয়ের বিষয় নিয়ে তিনি তার মেয়েদের কোন জোর করবেন না। ওদের যেই ছেলেকে পছন্দ হবে তাকেই দেখে,শুনে, খবর নিয়ে ভালো মনে হলে তার হাতেই মেয়েকে তুলে দিবেন।তাইতো সাজিয়ার বিয়ে তার পছন্দের ছেলের সাথে দিচ্ছেন।মেয়েরা যার সাথে থেকে খুশি। তিনিও তাতে খুশি।কিন্তু তার মতো মন-মানসিকতার মানুষ খুব কম পাওয়া যায়। বেশিরভাগ বাবা তাদের পছন্দের ছেলের সাথে মেয়েকে বিয়ে দিতে অনেক জোর-জবরদস্তি করে।যেটা তানজিল সাহেবের পছন্দ নয়।তবে বাবা-মা যা করে অবশ্যই ভালোর জন্য করে।সবার বাবা এক নয়।

সাহিয়াঃ থ্যাংকিউ বাবাই।অনেক অনেক থ্যাংকিউ।

তানজিলঃ আমার মেয়েরা যার সাথে খুশি থাকবে।আমি খুশিমনে তার হাতেই তুলে দিবো।তবে তার আগে আমাকে ছেলেটাকে যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে। আমি তুরাগের পরিবারকে বিষয়টা জানিয়ে দিচ্ছি।

নিশিতাঃ কিন্তু উনারা যদি কোন ঝামেলা করে।মানে সাজিয়ার সাথে তুরাগের বিয়েটা না দিতে চায়।

সাজিয়াঃ তুমি চিন্তা করো না মা।আমি সবাইকে বুঝিয়ে বলবো কথাটা।আমার বোন যেখানে খুশি থাকবে আমরা সেখানেই তাকে দিবো।জোড় করে অন্য কোথাও নয়।

সাহিয়া এবার তার বাবাকে ছেড়ে বোনকে জড়িয়ে ধরলো। সে যে কি পরিমাণ খুশি। এখন ওর চিন্তা নীলাভকে রাজী করে বাসায় আনার।অবশ্য খুব জলদী সে এই কাজটাও সফল হয়ে যাবে।

💗💗💗

নীলাভ খুব মনোযোগ সহকারে কোলে ল্যাপটপ রেখে আপনমনে কাজ করছে।পাশে কফির মগ।আকিব বসে বসে ফেসবুকিং করছিলো। মাঝে মাঝে নীলাভের দিকে তাকিয়ে দেখছিলো।রাত ১২টা বাজতে চললো।সেই রাত ১০ টা থেকে ল্যাপটপে ডুব দিয়ে আছে নীলাভ।কিন্তু এখনো উঠেনি।এবার আকিব বেশ বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো।

আকিবঃ নীলাভ, এই নীলাভ।তুই কি ঘুমাবি না?

নীলাভঃ হুম,একটু কাজ আছে।সেগুলো সেরেই ঘুমিয়ে পরবো।তুই জেগে আছিস কেন?ঘুমিয়ে পর।

আকিবঃ ল্যাপটপের ঐ সামান্য আলোতেও যে আমি ঘুমাতে পারবো না। সেটা কি তুই জানিস না।তুই কি এমন কাজ করছিস রে?আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। দুই ঘন্টার ওপরে হলো ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছিস।নীলাভ, আমি তোকে কিছু বলছি।তুই কি আমার কথা শুনছিস।

নীলাভঃ হ্যাঁ, বল। আমি শুনছি।তুই যদি এভাবে ঘুমাতে না পারিস তাহলে আরেকটু ওয়েট কর।

ল্যাপটপে কাজ করতে করতেই নীলাভ আকিবের কথার উত্তর দিলো।আকিব জানে এখন এসব কথা বলেও কোন লাভ হবে না। তারপরেও বললো।রাগে হাতের মোবাইল রেখে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলো।কিন্তু ঘুম আসছে না। কাঁথার থেকে কচ্ছপের মতো মাথা বের করে বললো।

আকিবঃ ভাই,এবার একটু ঘুমা।আমাকেও একটু ঘুমাতে দে।বাকি কাজ সকালে করিস।এই নীলাভ, তুই কি ভুলে গেছিস।

আকিব এক লাফে উঠে বসলো।ও খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে শেষের কথাটা বলে উঠে বসেছে।নীলাভ কিঞ্চিত বিরক্তি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে মুখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ঝুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো।

নীলাভঃ কি ভুলে গেছি?

আকিবঃ সাহিয়া যে টাকার মধ্যে ওর মোবাইল নাম্বার লিখে দিয়েছিলো।রাতে যে তোকে কল করতে বলেছিলো।তুই কি তা ভুলে গেছিস।

আকিবের কথায় নীলাভের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। কাজের চাপে সাহিয়ার কথা মাথা থেকে পুরোপুরি বের হয়ে গিয়েছিল। এখন আকিব মনে করায় ওর মনে হলো।

নীলাভঃ এই রে আকিব😰!!!! আমি তো ভুলেই গেছিলাম ওর কথা।তুই তো জানিস, কাজের সময় আমার দুনিয়াদারিতে হুশ থাকে না।

আকিবঃ একদম ভালো হয়েছে। এবার বুঝবি মজা।সাহিয়া বলেছিলো ওকে কল না করলে তোর ৩৬০° বাজাবে।এবার সেই ৩৬০° এর জন্য তৈরি হো।তোর ব্যন্ড বাজালে আমি কিছু বলবো না। উল্টো ওর সাথে যোগ দিবো।তোকে তখন আমি চিনবোই না।

নীলাভঃ তুই তো ব্যাটা বন্ধু নামের শত্রু।তুই থাকলে আর আমার শত্রুর প্রয়োজন নেই। আচ্ছা, এখন কল করলে কি হবে?

আকিবঃ তোর বুদ্ধিসুদ্ধি কি সব লোপ পেয়েছে? রাত ১২ টা বাজে ওকে কল করবি?

নীলাভঃ তাহলে কি করবো🤢?

আকিবঃ তুই কি করবি আমি কি জানি?তোর বিষয় তুই দেখ।আমি ঘুমালাম। অনেক ঘুমে ধরেছে।

আকিব বেশ কয়েকবার হাই তুলে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলো।নীলাভের বারবার সাহিয়ার হুমকির কথা মনে পরছে।সেটা ভেবে আর কোন কাজে মনোযোগ দিতে পারলো না।তাই কাজ রেখে ল্যাপটপ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো।তারপরেও সারা মাথায় সাহিয়ার চিন্তা ভিরছে।কে জানে সামনে পেলে কি করবে ওকে।

অন্যদিকে আকিব মিটমিট করে হাসছে।যাক বাবা অবশেষে ওর বুদ্ধি কাজে লাগলো।এখন সে শান্তিতে ঘুমাতে পারবে।আকিব ভালো করেই জানে এখন কিছুতেই নীলাভকে দিয়ে ল্যাপটপ বন্ধ করাতে পারবে না। তাই বুদ্ধি খুঁজতে লাগলো।একসময় সাহিয়ার কথা মনে হলো।আর জলদী করে নীলাভের মনে সাহিয়ার চিন্তা ঢুকিয়ে দিলো।নীলাভ কিছু নিয়ে সিরিয়াসলি চিন্তা করলে কাজে মনোযোগ দিতে পারে না। সে কথা মনে হতেই আকিব এই ট্রিকটা কাজে লাগলো।

#চলবে

রি-চেইক দেওয়া হয়নি।তাই ভূল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। 🥰🥰

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে