#পুতুল_ছেলেটি
#Part_08
#Writer_NOVA
আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা। গুড়ুম গুড়ুম শব্দের সাথে ভারী বাতাস বইছে।সকাল থেকে রিমঝিম বৃষ্টি ঝরছে।যখন গরমে সবাই হাঁপিয়ে উঠছিলো।তখনি প্রকৃতিকে শান্ত ও ঠান্ডা করে দিতে বৃষ্টিকন্যার আগমণ। সময়টা এখন বাংলা মাসের আষাঢ়ের মাঝামাঝি। গ্রামে থাকলে হয়তো এই সময়টাকে অনেক সুন্দরভাবে উপলব্ধি করা যেতো।কিন্তু শহরে বৃষ্টি মানেই তো রাস্তা আটকে যাওয়া,কাঁদার ছড়াছড়ি, অসহ্যকর সবকিছু। তবে এমন দিনে ঘরে টেকা দায়।ইচ্ছে করে দুই হাত মিলে নিজেকে প্রকৃতির কাছে সঁপে দিতে।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছে নীলাভ।বৃষ্টির দিন তার কাছে খারাপ লাগে না। আর সেই বৃষ্টিটা যদি হয় অসহ্য গরম থেকে বাঁচার জন্য। তাহলে তো কথাই নেই। এই ভরদুপুরে খিচুড়ির সাথে মুরগির গোশত হলে খারাপ হতো না। কিন্তু আকিবকে এই কথা বললে আস্ত রাখবে না।রান্নার দায়িত্বে আজ আকিব আছে।ওরা প্রত্যেকটা কাজ ভাগ করে নিয়েছে। একদিন আকিব রান্না করবে আরেকদিন নীলাভ।
আকিবঃ আজ কি বৃষ্টি দেখেই পেট ভরবি নাকি?
নীলাভঃ বৃষ্টি দেখে যদি পেট ভরতো তাহলে পৃথিবীতে কোন মানুষ কাজ করতো না। সবাই বৃষ্টির অপেক্ষায় আকাশ পানে মুখ দিয়ে বসে থাকতো।
আকিবঃ আমার রান্না কমপ্লিট।খেতে আসতে পারিস।
নীলাভঃ গতকালও ঐ মেয়েটার সাথে দেখা হয়েছিলো?
আকিবঃ ঐ যে ঐ মেয়েটা!!! যে তোকে পুতুল ছেলে ভাবে।ওর হাত থেকে ছাড়া পেলি কিভাবে?
নীলাভঃ ওর সামনে পরলে আমি কিছু না কিছু একটা মিস করেই ফেলবো।মাস্ক পরলেও সানগ্লাসের কথা ভুলে গিয়েছিলাম।আমার চোখ দেখে সন্দেহ করে বসে।এগিয়ে এসে আমার মাস্ক খুলতে নিলে আমি উল্টো পথে দৌড় দিয়ে ওর হাত থেকে বেঁচেছি।বাপরে!!! কি ডেঞ্জারাস মেয়ে। আমার মাস্ক খুলতে চেয়েছে।সাহস দেখে আমি অবাক।
আকিবঃ আমি বুঝি না তুই ওকে দেখলে এমন পালিয়ে বেড়াস কেন?এতে তোকে আরো বেশি
সন্দেহ করে।
নীলাভঃ আমি জানি না কেন এমন করি।তবে ও আমার সামনে এলে আমার অন্যরকম কিছু ফিল হয়।সাথে প্রচুর অস্বস্তি ঘিরে ধরে।হার্ট খুব জোরে লাফানো শুরু করে। আমি নিজের মধ্যে থাকি না। সারা শরীর থেকে থেকে কেঁপে উঠে। সাথে ভালো লাগা ছেয়ে যায় সারা মন জুড়ে।
আকিবঃ বুঝছি।তোরে ভালোবাসার রোগে ধরছে।এই রোগের কোন ঔষধ আমার কাছে নেই। একমাত্র যাকে ভালোবাসছিস সেই তোর ঔষধ।
নীলাভঃ ধূর,কি যা তা বলিস।এমনটা কখনো নয়।আমার মনে হয় আমি অসুস্থ। তাই এরকম হয়।
আকিবঃ তুই কিসের অসুস্থ তাতো বললামই।ভালোবাসার রোগে আক্রান্ত হয়েছিস তুই। সেটা অবশ্য তুই আমার কাছে কখনো স্বীকার করতে চাইবি না।এটা তোর দোষ।
নীলাভঃ যা ভাগ এখান থেকে। (বিরক্তির সুরে)
আকিবঃ আগামীকাল যদি আবার তোর সাথে ঐ মেয়েটার সাথে দেখা হয়ে যায়।তখন কি হবে বলতো?
নীলাভঃ যদি সত্যি ওর সাথে দেখা তাহলে তোকে মেরে রোদে শুকাতে দেবো।কাজের কথা তো কখনো সত্যি হয় না।তোর যদি আকাইম্মা আর ফালতু কথাগুলো কাকতালীয় ভাবে সত্যি হয়ে যায়।বাই চান্স যদি কালকে মেয়েটার সাথে দেখা হয় তোকে সত্যি আমি মোয়া করে দিবো।
আকিব নীলাভের কথা শুনে বড়সড় ঢোক গিলে চুপ হয়ে গেলো। সত্যিই তো।ওর ভালো কোন কথা তো কখনো সত্যি হয় না।কিন্তু যেগুলোর কোন দরকার নয় ফালতু কথাগুলো সত্যি হয়।যাতে নীলাভকে বিপদে পরতে হয়।নীলাভ বৃষ্টি দেখতে মনোযোগ দিলো।বৃষ্টির ঝাপটা এসে ছিটেফোঁটা নীলাভের টি-শার্ট ভিজেয়ে দিচ্ছে। কিন্তু পরিবেশটা মন্দ লাগছে না। শীতল বাতাসের সাথে মনটাও শীতলতায় ছুটে উঠছে।তার মধ্যে সাহিয়ার মুখটা ভেসে উঠলো।নীলাভ আপন মনেই সাহিয়ার কথা ভেবে মুচকি হেসে উঠলো।
💗💗💗
পরের দিন……
বিগত পাঁচ মিনিট ধরে সাহিয়াদের বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নীলাভ।কিন্তু করলি বেল বাজানোর সাহস পাচ্ছে না। আজ আকিবের খবর নিয়ে ফেলবে।ওর ফালতু কথা এবারো সত্যি হয়ে গেলো।আজও নীলাভ পিৎজা ডেলিভারি দিতে এসেছে। বাসার ঠিকানা দেখে ও কিছুতেই আসতে চায়নি।কিন্তু অন্য কেউ না থাকায় ওকেই আসতে হয়েছে। আকিবকে মনে মনে হাজারটা বকা দিয়ে বিসমিল্লাহ বলে কলিং বেলের সুইচে টিপ দিলো নীলাভ।কলিং বেল বাজতেই চোখ মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে রইলো।
সাজিয়াঃ কে কে এসেছে? ওহ্ আপনি।পিৎজা ডেলিভারি দিতে এসেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।আপনি এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?আমাকে কি পিৎজার বক্সটা দিবেন না।
ভিন্ন গলার স্বর পেয়ে পিটপিট করে চোখ খুললো নীলাভ।তারপর কিছুটা ইতস্তত করে বললো।
নীলাভঃ সরি ম্যাম।এই যে আপনার পিৎজা। দয়া করে অর্ডারটা কনফার্ম করুন।
সাহিয়াঃ ইট’স ওকে।কাগজ,কলম দিন।আমি সাইন করে দিচ্ছি।
নীলাভের হাত থেকে পিৎজার বক্সটা নিয়ে কাগজে সাইন করে দিলো সাহিয়া।তারপর হাসিমুখে নীলাভকে বিদায় জানালো।নীলাভ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে বুকে ফুঁ দিলো।
নীলাভঃ আল্লাহ, তুমি আজ আমাকে বাঁচিয়েছো।ঐ মেয়েটা দরজা খোলেনি।
নীলাভ খুশিমনে সিঁড়ি দিয়ে যেতে লাগলো।গাতকাল বৃষ্টি হলেও আজ গরম কমেনি।তাই মুখের মাস্ক ও সানগ্লাসটা খুলে হাতে নিলো।এই দুপুর সময় মানুষ বেশি থাকবে না।যদিও বিকেল হওয়ার পথে।মেইন গেইট দিয়ে বের হওয়ার আগেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে কিছুটা ছিটকে পরে যেতে নিলে নিজেকে সামলে নিলো নীলাভ।সামনে তাকিয়ে চোখ চড়কগাছ। এ তো সেই মেয়েটা।
সাহিয়াঃ কে রে ধাক্কা দিলো?চোখ কি পকেটে করে হাঁটেন নাকি?আমি—–
আর কথা বলতে পারলো না। সামনে তাকিয়ে সাহিয়ার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো।কলেজ থেকে ফিরে বাসার মেইন গেইট দিয়ে ঢুকতে গিয়ে কারো সাথে ধাক্কা খেলো।না দেখেই তাকে বকতে আরম্ভ করেছিলো।কিন্তু নীলাভকে দেখে অবাক হয়ে গেলো।
ভুল দেখছে ভেবে চোখ দুটো ডলে নিলো।নিজের হাতে একটা চিমটি কাটলো।ব্যাথা পেয়ে সিউর হলো, সে সত্যি দেখছে।নীলাভের চোখে ধরা পরে যাওয়ার ভয় দেখা যাচ্ছে।
সাহিয়াঃ পপপপপুততততুল ছেলে!!!!
সাহিয়া তুতলিয়ে কথাটা বলে হা করে রইলো।ওর এই মুহুর্তে কি রিয়েকশন দেওয়া উচিত তাও ভুলে গেছে। হুশ ফিরতে কিছু সময় লাগলো।
সাহিয়াঃ আপনি কি ঐ শপিংমলের পুতুল ছেলেটি??
নীলাভঃ 😐😐
সাহিয়াঃ তার মানে আমার ধারণা ঠিক।ঐটা পুতুল ছিলো না।আপনি একজন মানুষ।আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না। আপনি একজন পুতুল মানুষ। আমি কি আপনাকে আলতো করে ছুঁয়ে দিতে পারি? প্লিজ পারমিশন দিন।আমি অবাকের চরম পর্যায় আছি।আপনাকে ছুঁতে পারলে আমি বিশ্বাস করবো আমি চোখের সামনে যা দেখছি তা সত্যি।
নীলাভ কি বলবো তা বুঝতে পারছে না। এতক্ষণ ভয় থাকলেও এখন সে অবাক চোখে সাহিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার মুখের অঙ্গিভঙ্গি গুলো মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে নীলাভ।সারাটা মন জুড়ে ভালো লাগার এক শিহরণ বয়ে গেলো।
সাহিয়াঃ কি হলো কথা বলছেন না কেন?আমি কি আপনাকে ছুঁয়ে দেখতে পারি?আমি আসলে অনেক এক্সাইটেড। আমি কখনো ভাবতে পারি নি কোন পুতুলের মতো দেখতে মানুষকে নিজের চোখের সামনে দেখতে পারবো। আমার যে কি খুশি লাগছে। তা আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না।
সাহিয়া কথাগুলো বলার সময় অনেক খুশি ছিলো।খুশিতে সে অনেকটা লাফাচ্ছিলো।আর নীলাভ মুচকি হেসে ওর গতিবিধি লক্ষ্য করছিলো।মেয়েটার মধ্যে বাচ্চামো ভাবটা বেশি। যেটাই নীলাভকে বেশি আকর্ষণ করছে।কিছুতেই মেয়েটার মুখ থেকে তার দৃষ্টি সরাতে পারছে না।
নীলাভঃ আমাকে দেখে তুমি এত খুশি হবে তা আমি কল্পনায়ও ভাবতে পারিনি।যদি আগে জানতাম তাহলে তোমার সামনে আরো আগে আসতাম।তোমার হাসির কারণ হতাম।তোমার বাচ্চামো কান্ডগুলো খুব করে তোমার কাছে টানছে।ইচ্ছে করছে দুই গাল টেনে দিতে।কিন্তু তোমার গাল টানতে গেলে আমার হাত কাঁপবে। তাই আমি পারবো না।
সাহিয়াঃ আপনি কি সত্যি পুতুল? মানুষ হলে আমার কথার উত্তর দিচ্ছেন না কেন?(ভ্রু কুঁচকে)
নীলাভঃ আপনি ছুঁয়ে দেখতে পারেন।
(কাঁপা কাঁপা গলায়)
নীলাভ হাত বাড়িয়ে দিলো।সাহিয়া কাঁপা কাঁপা হাত সামনে নিয়ে এক আঙুল দিয়ে আলতো করে নীলাভের হাতে ছুঁয়ে আবার তুলে ফেললো।তারপর একিভাবে আরো দুইবার কাজটা করলো।নীলাভকে ছুঁতে পেরে আরো বেশি খুশি হয়ে গেলো।আর নীলাভ ওর কান্ড দেখছে।একসময় খুশির ঠেলায় সাহিয়া সামনে এগিয়ে এসে নীলাভকে জড়িয়ে ধরলো।ও এখন নিজের মধ্যে নেই। নীলাভ তো অবাকের ওপর অবাক।ও এখন এমনটা কিছুতেই ভাবেনি।সাহিয়ার হুশ ফিরতেই সে লজ্জা পেয়ে গেলো।লজ্জায় নীলাভকে ছেড়ে বাসার দিকে দৌড়ালো।আর নীলাভ এখনো ঘোরের মধ্যে আছে।তাই সে ঠায় দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনা ছক আকারে সাজাতে লাগলো।কি থেকে কি হলো?তাই এখনো বুঝতে পারছে না নীলাভ।
#চলবে