#পুতুল_ছেলেটি
#Part_04
#Writer_NOVA
ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুললো সাহিয়া।তবে ঝামেলা বাঁধালো সিল্কের ওড়নাটা।দরজার ছিটকিনির সাথে বেজে গেল।মিনিট তিন পর অনেকটা টানাটানির পর ছুটাতে পারলো।কিন্তু সামনে তাকিয়ে সে অবাক হয়ে গেলো।কারণ পিৎজার বক্সটা নিচে রাখা।আশেপাশে কোন মানুষ নেই। বাইরে বেরিয়ে এদিক-সেদিক ডেলিভারি বয়কে খুঁজলো। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলো না।তাতে রাগ উঠে গেলো সাহিয়ার।জোরে চিৎকার দিয়ে সাজিয়াকে ডাকলো।
সাহিয়াঃ দিদিয়া,দিদিয়া।কোথায় তুমি?
সাজিয়াঃ কি হয়েছে? এমন ষাঁড়ের মতো চেচাচ্ছিস কেন?আসছি আমি।(কিচেন থেকে উত্তর দিলো)
সাহিয়াঃ কোন অনলাইন শপ থেকে পিৎজা অর্ডার করেছিলে?তাদের কি কোন কমন সেন্স নেই। নাকি খাবারের সাথে সব খেয়ে ফেলেছে।কেউ এরকম করে পিৎজা ডেলিভারি দেয়।যেই বয়কে পাঠিয়েছে নির্ঘাত আস্ত এক গাধা।হিতাহিত জ্ঞান না থাকলে কেউ কি এমন বেআক্কল মার্কা কাজ করে।এরকম ডেলিভারি বয় কাজে রাখে কেন তারা?(রেগে)
সাজিয়া কিচেন থেকে টিস্যুতে হাত মুছতে মুছতে সাহিয়ার সামনে এসে দাঁড়ালো।
সাজিয়াঃ কি হয়েছে? এত চেচামেচি করছিস কেন?
সাহিয়াঃ কি হয়নি তাই বলো?কেউ এরকম করে পিৎজা ডেলিভারি দেয়।দরজার বাইরে, নিচে বক্সটা ফেলে রেখে চলে গেছে। আমি আজই কোম্পানির নামে কমপ্লেন করবো।
সাজিয়াঃ অর্ডার কনফার্ম করেছে?
সাহিয়াঃ কি করে করবে?আমি তো কোন মানুষই দেখতে পেলাম না।দরজা খুলে দেখলাম পিৎজার বক্সটা নিচে রাখা আছে।এটা দেখেই তো মেজাজটা আমার গরম হয়ে গেছে।
সাজিয়াঃ মাথা ঠান্ডা কর তুই। নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে।তাই ডেলিভারি বয় এমন করেছে।
ওদের কথার মাঝখানে ১০ বছরের একটা পিচ্চি ছেলে আশিক হাতে অর্ডার কনফার্ম করার কাগজ নিয়ে ওদের সামনে দাঁড়ালো। আশিক ওদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকে।
আশিকঃ হিয়া ফুপ্পি,জিয়া ফুপ্পি। এই নাও ধরো।এই টিক চিহ্নের জায়গায় একটা সাইন করে দেও তো।
সাজিয়াঃ তুই এই কাগজ কোথায় পেলি আশিক?
সাহিয়াঃ অর্ডার কনফার্মের কাগজ ওর হাতে কি করে এলো দিদিয়া?(অবাক হয়ে)
সাজিয়াঃ আমারও তো সেইম প্রশ্ন।আশিক, তুমি এই কাগজ কোথায় পেলে?
আশিকঃ একটা ক্যাপ পরা সুন্দর চাচ্চু, আমার হাতে এই কাগজটা ধরিয়ে দিয়ে বললো তোমাদের বাসায় আসতে।তারপর তোমাদের দুজনের থেকে একজনের এই টিক চিহ্নে সাইন নিতে।আমি বললাম,তুমি করে নিয়ে আসো আমি পারবো না।সে বললো,তার নাকি একটু সমস্যা আছে।তাই যেতে পারবে না।
সাজিয়াঃ আচ্ছা দেও আমি সিগনেচার করে দিচ্ছি।
সাহিয়াঃ একদম না দিদিয়া।সিগনেচার করবে না। মগের মুল্লুক পেয়েছে নাকি।উনি দরজার সামনে পিৎজার বক্স ফেলে রেখে যাবে।আর আমরা তা মেনে নিয়ে অর্ডার কনফার্ম করবো।তা কখনও না।এই ডিলেভারি বয়ের নামে আমি অবশ্যই কমপ্লেন করবো।
সাজিয়াঃ বাদ দে তো।আশিক তো বললোই ছেলেটার সমস্যা আছে। এত ঝামেলা করার দরকার নেই।
সাজিয়া, আশিকের থেকে কাগজটা নিয়ে সাইন করে দিলো।এতে সাহিয়া রাগ করে মুখটা গোমড়া করে রাখলো।আশিক দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে চলে গেল।
💗💗💗
নীলাভ দেয়ালের আড়ালে দাঁড়িয়ে বারবার ঘড়ি দেখছে।এত সময় হয়ে গেল কিন্তু বাচ্চা ছেলেটা আসছে না।এতক্ষণে তো চলে আসার কথা।এখন বেশ বিরক্ত লাগছে তার।
সাহিয়া দরজা খুলতেই নীলাভ ওর মুখ দেখে ওকে চিনে ফেলেছিলো।কিভাবে সেখান থেকে পালাবে তার চিন্তা করতে লাগলো।কিন্তু এবারো আল্লাহ সহায় ছিলো।তাই সাহিয়ার ওড়নাটা দরজার ছিটকিনির সাথে বেজে গেল।আর সাহিয়া ওড়না ছুটাতে এতটাই ব্যস্ত ছিলো যে সামনের দিকে নজর দেয়নি।যার ফলে নীলাভকে দেখতে পায়নি।এই সুযোগে নীলাভ নিচে পিৎজা বক্স রেখে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে চলে এসেছে। কিন্তু নিচে আসার পর সিগনেচারের কথা মনে হয়েছে। তখনি আশিককে দেখতে পায়।অনেক বুঝিয়ে, শুনিয়ে, চকলেট দেওয়ার কথা বলে ওকে ওপরে পাঠায়।
নীলাভঃ বাচ্চাটা আসছে না কেন?এখানে বেশি সময় থাকা আমার জন্য রিস্ক। বুঝি না ঘুরে ফিরে ঐ বাচ্চা মেয়েটার সাথে দেখা হয়ে যায় কেন?আজকে গিয়ে আকিবকে মোয়া বানাতে হবে।ওর কথাই সত্যি হয়ে গেল।আমি যদি জানতাম এই বাচ্চা মেয়েটার বাড়িতে আমাকে আসতে হবে। তাহলে কখনি আসতাম না।যেখানে যাই সেখানেই এই মেয়েটাকে দেখতে পাই।ও সামনে এলেই আমি সবকিছু ভুলে যাই কেন?পুরো পৃথিবী অন্ধকার দেখি।হৃৎপিণ্ডটা অবাধ্য হয়ে যায়।নীলাভ, ডক্টর দেখা। তোর হার্টের প্রবলেম হয়েছে।
নিজের মনে বিরবির করতে লাগলো নীলাভ।পড়ন্ত বিকেলের আবছা আলো ওর মুখে পড়ছে।সবকিছু ঘোলাটে লাগছে।আশেপাশে কোন মানুষ না দেখে মাস্কটা খুলে চোখে সাধারণ চশমা পরলো।এটা ওর ব্যাগে থাকে।কিন্তু ঠিক সেই সময় পরলো আরেক বিপদে।বাজার থেকে ফিরছিলো মিজান সাহেব।তিনি সাহিয়ারা যেই দালানে ভাড়া থাকে সেই দালানের মালিক।তাকে দেখে নীলাভের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো।
নীলাভঃ এবার নিজেকে কিভাবে লুকাবো? যত চায় মানুষের সম্মুখে না থাকতে।তত তাদের সামনে পরে যাই।এখন তো আমাকে নিয়ে গবেষণা শুরু করে দিবে।কিছু একটা কর নীলাভ।মাথা খাটা তুই। আইডিয়া!!! পেয়ে গেছি।পুতুলের মতো ক্যাপ ধরে দাঁড়িয়ে থাকি।
যেমন ভাবা তেমন কাজ।কালো টুপি ধরে পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে রইলো।মিজান সাহেব অনেকটা কাছে চলে এসেছে। যার কারণে নীলাভ এখন ব্যাগ থেকে মাস্ক ও পকেট থেকে সানগ্লাস বের করে পরতে গেলে দেরী হয়ে যাবে। মিজান সাহেব গেইট দিয়ে প্রায় ভেতরে ঢুকে যাচ্ছিলেন।কিন্তু হঠাৎ মনে হলো তিনি কিছু দেখলেন।তাই পিছু ফিরে এগিয়ে সামনে চলে এলেন।
মিজানঃ এই পুতুল আনলো কেডায়?দেইখা তো জীবন্ত মানুষ মনে হইতাছে।ঐ আক্কাইসা? তোরে কি দিন দুপুরে ঘুমানের লিগা দারোয়ানের চাকরীতে রাখছি।এই পুতুল এইহানে রাখছে কে?তুইল্লা নিয়া ড্রেনে ফালায় দিয়া আয়।
নীলাভের সামনে এসে তার পান খাওয়া লাল দাঁতগুলো খিলাল করতে করতে চিৎকার করে কথাগুলো বললো মিজান সাহেব। পড়াশোনা বেশি জানে না। তবে ঢাকায় তার নিজস্ব দুটো দালান আছে।সেগুলোর ভাড়া দিয়ে তার বহু ইনকাম হয়।তার দালানের ৪র্থ তালায় সাহিয়ার পুরো পরিবার ভাড়া থাকে।
💗💗💗
নীলাভ পরে গেলো বিপদে।নিজের মনে বিরবির করে নিজেকে বকতে লাগলো।এখন বিরক্তিটা বেশ জড়ালোভাবে তাকে জেঁকে বসেছে।
নীলাভঃ যত চাই ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে।তত ঝামেলা বেড়ে যায়।আল্লাহ বাঁচাও। কেন যে সানগ্লাস আর মাস্কটা খুলতে গেলাম।ঐ পিচ্চি ছেলেটারও আসার কোন নাম নেই। এদিকে এই চাচাতো আমাকে পুতুল ভেবে বসে আছে। নাহ্, আমি এখন বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি। আল্লাহ, তুমি যখন আমাকে বাংলাদেশে রাখবে তাহলে কেন এইরকম পুতুলের মতো বানালে।যেখানে যাই বিপদে পরে যাই।(মনে মনে)
মিজানঃ ঐ আক্কাইসা।ডাকলে কি হুনোস না?তোর চাকরী নিয়া যামু।যদি আরেকবার ডাকতে হয়।
ছোট একটা রুম থেকে দৌড়ে ১৯ বছরের একটা ছেলে দৌড়ে বেরিয়ে এলো।নীলাভ সিউর হলো এটাই আক্কাস হবে।গেইটের দারোয়ান।
আক্কাসঃ জে চাচা বলেন।
মিজানঃ তুই কি মরছিলি?তোরে ডাইকা পাওয়া যায় না কে?এই পুতুল এইহানে রাখলো কে?জলদী কইরা এডারে সরা।আমি জানি ১০ মিনিট পর এডারে না দেহি।যদি পুতুল দেহি তাহলে তোরে এই বাড়িতে দেখতে চাই না।কারণ আমি দুই অকর্মা একসাথে দেখবার চাই না।
মিজান সাহেব চলে গেলেন।আক্কাস পরে গেলো বিপাকে।কারণ এত বড় পুতুল ওর মতো ছোকরা ছেলে উঠানোর মতো সামর্থ নেই। তাছাড়া এটা কোথা থেকে এলো তাও জানে না।খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নীলাভকে দেখতে লাগলো আক্কাস।ঘুরে ঘুরে দেখছে সে।
আক্কাসঃ আমার কাছে মনে হইতাছে এডা একটা জ্যান্ত মানুষ।কিন্তু বাড়িয়ালা চাচায় যহন কইছে, এডা পুতুল।তার মানে এডা পুতুলই।কিন্তু এই পুতুল আনলো কেডায়?আমি তো কাউরে দেখলাম না।পরলাম তো বিপদে।এই গাট্টা-গোট্টা পুতুলডারে আমি তুলমু কেমনে?আর ড্রেনে ফালামু কেমনে?আমি তো এডারে উঠাইতে গেলে নিচে চাপা পইরা চেপ্টা হইয়া যামু।এই চাচায় যত ভেজালে আমারে হালায়।
আক্কাস ক্লাশ ফোর পর্যন্ত গ্রামের স্কুলে পরেছিলো।তারপর অভাব অনটনের কারণে আর পড়ালেখা করতে পারেনি।বছর দুয়েক ধরে মিজান সাহেবের এই দালানের দারোয়ানের চাকরী করে।খুব সহজ সরল,বোকা ছেলে আক্কাস।প্যাঁচগোছ বোঝে না।
গালে হাত দিয়ে চিন্তা করার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো আক্কাস।তখনি সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেইটের সামনে, আশিক কাগজ সহকারে ছুটে এলো।
আশিকঃ সরি চাচ্চু।আম্মু ডাকছিলো।তাই আসতে এতো দেরী হয়ে গেলো।এই নেও তোমার কাগজ।এবার আমার চকলেট দেও।
আক্কাসঃ এই পুতুলের লগে কি কথা কস আশিক?
আশিকঃ কি বলো আক্কাস ভাইয়া?এটা পুতুল হবে কেন?এটা তো একটা মানুষ।
এবার নীলাভ মুচকি হেসে ক্যাপের থেকে হাত সরিয়ে আশিকের দিকে তাকালো।পকেট থেকে কতগুলো চকলেট বের করে আশিকের হাতে দিলো।তারপর কাগজটা নিয়ে গেইট দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো।তা দেখে আক্কাসের তো চোখ কোটর থেকে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। ভূত,ভূত করে চিৎকার করতে করতে নিজের রুমের দিকে দৌড় লাগালো।আর আশিক, আক্কাসের কাহিনি দেখে হাসতে হাসতে বসে পরলো।একটা মানুষকে দেখে আক্কাস ভূত বলছে।সেটা ভেবে ছোট্ট আশিক হেসেই যাচ্ছে। নীলাভ এক মিনিটও দেরী করলো না।মুখে মাস্ক ও চোখে সানগ্লাস পরে বাইকে বসেই চাবি ঘুরিয়ে স্টার্ট দিলো।
#চলবে
রি-চেইক দেওয়া হয়নি।ভূল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন🙃🙃।