#পিশাচ_পুরুষ
৬ষ্ঠ পর্ব
গ্রাম যখন মধ্যরাতের ঘুমে স্তব্ধ তখন সকিনা এক অচেনা পুরুষের সাথে জ্যোৎস্নার আলোতে ঢুকে পড়লো গভীর জঙ্গলে। মনে আশা সেই বৃক্ষের সন্ধান যদি সত্যিই লোকটা দিতে পারে, তার বাবা হয়তো সত্যিই আবার তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে। এই লোকটার সাথে গত দুই সপ্তাহ থেকে অন্তত এইটুকু বুঝতে পেরেছে সে লোকটার সাথে থাকলে তার কোনো ক্ষতি হবে না। বেশ অনেকক্ষণ শব্দহীন ভাবে চলল দুজনে। জঙ্গলের শুরুর দিকে গাছ-পালা, ঝোপ-যার কম থাকায় চলতে তেমন অসুবিধা হচ্ছে না। অবশ্য সে খেয়াল করলো না, জঙ্গলের ভেতরে ঢুকতেই যুবকের চেহারা কেমন যেন একটু কঠোর হয়ে এলো, শরীরের পেশীগুলোও শক্ত হয়ে আসছে,লোম কূপের ঘনত্বও বাড়ছে। সকিনা শুধু মুগ্ধ চোখে জঙ্গলের চারপাশ দেখতে দেখতে হাটছিল। ভেতর থেকে যে জঙ্গলটা এত সুন্দর আর ভয়ের তা বাইরে থেকে বোঝাই যায় না। নানান জন্তুর হাঁক ভেসে আসছে জঙ্গলের এদিক-সেদিক থেকে। ওগুলো কী রাতেও ঘুমায় না! ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ, পায়ের খসখস, এক সুদর্শন যুবকের সাথে পথ চলা তার মনকে রোমাঞ্চিত করে ফেলে।
সকিনা নিশ্চিত এই যুবক তার সাথে না থাকলে সে এতক্ষণে ভয়ে দৌড়ে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে যেত। অনেকটা পথ চলার পর ভাবলো, কোথায় যাচ্ছে তারা? আসলেই কী অমন কোনো গাছ আছে যার শিকড়ের রস মানুষকে দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিতে পারে! চাঁদের মিহি আলোয় লোকটাকে কেমন অদ্ভুত লাগছে। ওর গায়ে যে এত লোম তা সে এতদিন খেয়াল করেনি কেন! তার থেকে কয়েক কদম সামনে মানুষটা, সকিনার ইচ্ছা করছে তার শরীরটা স্পর্শ করতে।
হঠাৎ একটা গাছের গোড়ার কাছে গিয়ে বসে পড়লো যুবকটি। সকিনা অবাক হয়ে গাছের দিকে তাকিয়ে দেখল এটা খুবই ছোট একটা গাছ, লোকটার দেওয়া বর্ণনার সাথে মিল নেই। যুবক তার দিকে তাকিয়ে হাসলো, ‘এটা সেই গাছ নয়, ওটা আরো ভেতরে। তুমি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছ, একটু বিশ্রাম নাও।’ আসলেই ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল সে। তারপাশে গিয়ে বসে পড়লো সেও।
যুবকটি তার দিকে তাকিয়ে আছে, কী অদ্ভুত সুন্দর চোখ লোকটার। যুবকের শরীর কেমন কম্পিত হচ্ছে, সকিনার মনে হচ্ছে তার চোখে কোনো ভ্রম হয়েছে। লোকটার চোখগুলো লাল হয়ে আসছে, শরীরের লোম আর ঘন হয়ে উঠছে। এটা কী করে সম্ভব! লোকটা তার একটু কাছে এসে দুই হাত চেপে ধরল। বলল, ‘বাকিটা পথ তোমাকে একা যেতে হবে। তুমি এদিক বরাবর সোজা চলতে থাকবে। এখানে দুজন মানুষ পাশাপাশি চললে বিপদ হতে পারে। আমি ঐ ঝোপের আড়ালে আড়ালে তোমার পাশাপাশি চলবো। দুজনের কেউই কোনো কথা বলবো না। চলো!’
এই বলেই লোকটা দ্রুত ছুটে ঝোপের আড়ালে চলে গেল। হতভম্ব হয়ে গেল সকিনা। এর জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। একা একা সে কী করে চলবে। দুজন একসঙ্গে চললে কী বিপদ! সামনের পথে তাকাতেই বুকটার কম্পন বেড়ে গেল। ঘন ঝোপ-যার, ঘন গাছের সারি। সে কয়েকবার লোকটাকে ডাকলো। সাড়া পেল না। তারপর ভয়ে ভয়ে সামনের দিকে চলতে লাগলো। গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে যে জোৎস্নার আলো প্রবেশ করছে সেই আলোতে কোনোরকম ভাবে পথ চলা যায়। তার ডানপাশে বিশাল ঝোপ। তার ওপাশ থেকেই অন্য কারো পথ চলার খসখস শব্দ শোনা যাচ্ছে। অর্থ্যাৎ সেই যুবকটি তার পাশাপাশি হাঁটছে আড়ালে কথামত। কিন্তু পদশব্দ এত ভারী মনে হচ্ছে কোনো চারপায়া জন্তু হাঁটছে, ফসফস করে এত জোরে লোকটা শ্বাস নিচ্ছে কী করে!
দানা পাকানো ভয় নিয়েই প্রায় এক ঘন্টা একা হেটে চললো সে। ক্লান্তিতে শরীর অবশ হয়ে আসছে, কিন্তু থামবে কিনা সে বুঝতে পারছে না। এদিকে গাছ কম। কিন্তু ওই ঝোপটা এখনো তার থেকে যুবকটাকে আলাদা করে রেখেছে। দ্রুত হাঁটছে সে আর ছটফট করছে মন। কী জানি বিপদের গন্ধ নাকে এসে আঘাত করছে। তার ডানদিকে বড় ঝোপ। বা দিকেও কিছু ছোট ছোট ঝোপ রয়েছে। সেদিকে একমুহূর্ত চোখ পড়তেই তার শিরদাঁড়া বেয়ে বরফ শীতল বাতাসের একটা স্রোত বয়ে গেল। ঝোপের পেছন থেকে এক জোড়া জ্বলজ্বলে চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে। ওটা যে কোনো বন্য জন্তু তাতে আর কোনো সন্দেহ নেই। তারপাশ থেকে বেরিয়ে এলো আরো এক জোড়া চোখ, তারপাশ থেকে আরো এক জোড়া। মুহূর্তেই ঝোপের আড়াল থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে এলো তিনটি ভয়াল দর্শন বাঘ। হুঙ্কার ছাড়লো সকিনাকে উদ্দেশ্য করে।
পিছু ঘুরে দৌড় দেওয়ার শক্তিও তার মাঝে এখন অবশিষ্ট নেই। লোকটাকে উদ্দেশ্য করে শুধু বলল, ‘বাঁচাও!’ একটা বাঘ তাকে উদ্দেশ্য করে লাফ দিল, মুখ দিয়ে আর্তনাদ করে, দুই হাত দিয়ে মাথা ঢেকে চোখ বন্ধ করে মাটিতে বসে পড়লো সে। মৃত্যুর প্রস্তুতি। কিন্তু না, ওটা ওকে আঘাত করতে পারেনি। চোখ খুলে দেখল বিকট আকার একটা অদ্ভুত সাদা জন্তু বাঘটার ধড় কামড়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখ দিয়েই আছাড় মেরেই বাঘটাকে দূরে ফেলে দিল ওটা। আরেকটা বাঘও হুংকার ছেড়ে লাফিয়ে পড়লো জন্তুটার উপর। জন্তুটা মাথা দিয়ে আঘাত করলো ওটার পেট বরাবর,মাটিতে পড়ে যেতেই দুই পা দিয়ে চেপে ধরলো ওটার শরীর। ওটাও জ্ঞান হারালো। তৃতীয় প্রাণীটা এদের তুলনায় বেশ ছোট বাঘ। সে জন্তুটার এই লড়ার ক্ষমতা দেখে আড়চোখে একবার তার শিকার মেয়েটার দিকে তাকালো।। তারপরেই উল্টো ঘুরে ছুটতে লাগলো। জন্তুটা এবার ঘুরে সকিনার দিকে তাকালো। সে বুঝতে পারছে বাঘ গুলোর কাছ থেকে এই জন্তুটাই তাকে বাঁচিয়েছে, কিন্তু কোনো মহৎ উদ্দেশ্যে নয়। অন্যের শিকারকে শুধু নিজের খাদ্য বানানোর জন্য এই লড়াই। এমন বড় অদ্ভুত মাংসাশী জন্তুর সে জীবনে কখনো নাম শোনেনি। কিন্তু জন্তুটা তার উপর লাফিয়ে পড়ার কোনো লক্ষণ দেখালো না।
ওটা উল্টো ঘুরে হাটুমুড়ে বসে পড়লো। মুখ দিয়ে হালকা গড়ড়গড় আওয়াজ করলো। মাথা দিয়ে সকিনাকে ইশারা করে বলল যেন ওর পিঠে উঠে পড়তে। সকিনা ভয়ে ভয়ে চারদিকে তাকালো। সেই যুবকটিকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না, তার কী কোনো বিপদ হয়েছে! যুবককে কয়েকবার ডাকলো সে, কিন্তু ঝোপের ওপাশ থেকে কেউ সাড়া দিল না। জন্তুটা চোখ কেমন বাঁকা করে নাক কুঁচকে তার দিকে তাকালো, যেন মজার কিছু ঘটছে! সকিনা ধীরে ধীরে গিয়ে জন্তুটার পিঠের উপর উঠলো। শক্ত করে চেপে ধরলো ওটার পশম যাতে না পড়ে যায়। সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে তার কাছে। যা কিছু তার সাথে ঘটছে এর কিছুই তো বাস্তবে ঘটা সম্ভব না। এত বিকট একটা জন্তু কী করে তাকে এমন কাছে টেনে নিচ্ছে, সকিনার এক মুহূর্তে মনে হলো এই জন্তুটার সাথে থাকলে তার আর কোনো বিপদ ঘটবে না। অবশ্য যুবকটার জন্য তার মন কেমন কেমন করছে, কোথায় আছে সে!
তাকে পিঠে নিয়েই ছুটে চললো জন্তুটা ঝোপঝাড় পেরিয়ে, নানান গর্ত উঁচু ঢাল পেরিয়ে। প্রায় আধ-ঘন্টা পর একটা বিকট আকৃতির গাছের নিচে ওকে এনে ফেলল জন্তুটা। বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে গাছটার দিকে তাকিয়ে রইলো সে।। এতবড় গাছ, অথচ গাছে কোনো পাতা নেই, ছাল গুলোও কেমন অদ্ভুত রঙের। ঐতো গোড়ার দিকে একটা খুপরি দেখা যাচ্ছে। তাকে পিঠ থেকে একরকম ছিটকেই মাটিতে ফেলে দিল জন্তুটা। এরপর ছুটতে ছুটতে অদৃশ্য হয়ে গেল জঙ্গলের ভেতরে। হতভম্ব হয়ে এই ভয়ানক সুন্দর প্রকৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে রইলো এক কিশোরী মেয়ে। চোখমুখ ফুটে তার শুধু বিস্ময় , হাহাকার আর আতংক।
কয়েক মুহূর্ত পরেই পেছনে কারো পদধ্বনি শুনে ঘুরে তাকালো। ঐতো দাঁড়িয়ে আছে যুবকটি। দ্রুত ছুটে লোকটার কাছে চলে এলো সে, ‘কোথায় ছিলে তুমি? আমি ভাবলাম বড় কোনো বিপদ হয়ে গেছে। অদ্ভুত এক জন্তু আমাকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।’
‘আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তোমাকে অনুসরণ করছিলাম জঙ্গলের নিয়মানুসারে। হঠাৎ বাঘ গুলোকে দেখে চমকে উঠি। তখনই দেখি ওই জন্তুটা তোমাকে বাঁচালো। আমি আর দেখা করিনি। হয়তো জন্তুটা আমাকে দেখে আক্রমণ করে বসতো। পরে তোমাদের অনুসরণ করে এখানে এসেছি।’
‘জন্তুটা এত গতিতে আমাকে নিয়ে ছুটে এলো, তুমি পায়ে হেটে কী করে একসঙ্গে, একই সময়ে এখানে পৌঁছালে?’
‘আমি শর্টকাট রাস্তায় এসেছি।’
‘তাহলে আমাকে শর্টকাট রাস্তা দিয়ে নিয়ে এলে না কেন?’
‘আহা! তুমি দেখি অনেক খুঁতখুঁতে। গাছটার দিকে ভালো করে তাকাও।’
গাছটার দিকে তাকাতেই মনে আবার সেই ভয় ফিরে এলো। এর সামনে নিজেকে ক্ষুদ্র, অসহায় একটা মানুষ মনে হচ্ছে তার। যেকোনো মুহূর্তে যেন গাছটা নড়ে উঠবে। গাছের গোড়ালির সেই গর্তের দিকে আঙুল ইশারা করে সকিনা জিজ্ঞেস করলো, ‘ওখানে কী?’ যুবক বিস্মিত হয়ে বলল, ‘আমিওতো বুঝতে পারছি না। যাবে ওটার ভেতরে?’
আৎকে উঠলো সকিনা, ‘কখনই না! কী ভয়ঙ্কর লাগছে!’
‘তাহলে হাটু গেড়ে বসে গাছটার কাছে চোখ বন্ধ করে মন থেকে প্রার্থনা করো। বল প্রভু আমার মনের ইচ্ছা পূরণ করে দিন।’
সকিনা ভয়ে ভয়ে গাছটার একটু কাছে এগিয়ে গেল। হাঁটুমুরে বসে চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করতে লাগলো, ‘হ্যা প্রভু, মহা শক্তিশালী গাছ, আমার বাবার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিন।’ তার একদম ঘাড় ঘেষে দাঁড়িয়ে রয়েছে যুবকটি। চোখ জ্বলজ্বল করছে তার। যেন যেকোনো মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়বে সকিনার ঘাড়ে কামড় বসাতে। চোখ খুলে সকিনা পেছনে তাকালো, যুবক নিজেকে সামলে নিয়েছে। হাত ধরে সকিনাকে দাঁড় করালো। নিয়ে গেল বিশাল বৃক্ষের পেছনে। হাত ইশারায় দেখালো কয়েকটি কচি শিকড়। সকিনা ওগুলো তুলে নিল। যুবক এবার গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ‘এর রস তোমার পিতার চোখে দিলেই তিনি আবার দেখতে পাবেন।’
আনন্দে নেচে উঠলো সকিনার মন। বিশ্বাস করতে পারছে না মুহূর্তটাকে। যুবক বলল, ‘রাত প্রায় শেষের দিকে। যেই জন্তুটা তোমাকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে তা এই বৃক্ষের সন্তান। বৃক্ষের গোলাম। বৃক্ষ তোমাকে পছন্দ করেছে বলেই জন্তুটাকে তোমাকে রক্ষা করে এখানে আনতে পাঠিয়েছিল। আমার বিশ্বাস আমি আড়ালে চলে গেলেই জন্তুটা এসে হাজির হবে এখানে। তোমাকে পৌঁছে দেবে গ্রামে।’
বিচলিত হয়ে সকিনা বলল, ‘আর তুমি?’
‘আমি ছোট পথ দিয়ে ছুটবো। জঙ্গলের শেষ মাথায় গিয়ে আবার দেখা হবে আমাদের। জন্তুটা পুরুষদের পছন্দ করে না। আমাকে দেখতে পেলে বিপদ হবে। আমি চললাম।’
এই বলেই মেয়েটিকে আবার নিঃসঙ্গ করে জঙ্গলের ভেতর চলে গেল লোকটা। আশ্চর্য্যের বিষয় সকিনার জন্য!যেই পথ দিয়ে যুবকটি অদৃশ্য হলো সেই পথ ধরেই মুহূর্ত পরেই এসে হাজির হলো অদ্ভুত বৃহৎ সেই সাদা জন্তুটি। হাটু গেড়ে বসে তাকে পিঠে উঠতে ইশারা করলো। সকিনা জন্তুটার পিঠে উঠলো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ওটার গলা। কোমরের কাছে গিট দিয়ে রেখেছে শিকরগুলো। বাতাসের বেগে ছুটতে লাগলো জন্তুটা জঙ্গলের ভেতর দিয়ে।
জঙ্গলের শেষে এসে থামলো জন্তুটা। ঐতো দেখা যাচ্ছে গ্রাম। পিঠ থেকে ছিটকে পড়লো সকিনা। একবার সকিনার দিকে তাকালো জন্তুটা, তারপর মুহূর্তেই ঘুরে জঙ্গলের ভেতরে ছুটে চলে গেলো। তার একটু পরেই আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো সুদর্শন যুবকটি। সকিনার মাথায় কিছুতেই ঢুকে না লোকটা এত দ্রুত কী করে চলে এলো।
যুবকটি তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। সকিনার চিবুক স্পর্শ করলো তার হাত, ‘এবার আমাকে বিদায় নিতে হবে।’
সকিনা বিস্মিত হয়ে বলল, ‘মানে!’
‘তুমি আমার জন্য অনেক সেবা-যত্ন করেছ। আমি তোমার প্রতি সব সময় কৃতজ্ঞ থাকবো। কিন্তু আমাকেও আমার বাড়িতে ফিরে যেতে হবে। আমার মনে হয় এটাই সুন্দর সময়।’
চোখ ভিজে উঠলো মেয়েটার। কী বলবে খুঁজে পাচ্ছে না। যুবকই বলল, ‘রাত প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। তুমি বাড়ি চলে যাও। আমাদের আবার দেখা হবে। এই ঔষধেই তোমার বাবা সুস্থ হয়ে উঠবেন। তবে তোমাকে এর মূল্য দিতে হবে বৃক্ষের কাছে।’
‘কী! কী মূল্য? আগে বলো নি কেন?’
‘ভয় পেয় না। তোমার বাবা দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেলে সবাই জানতে চাইবে কী করে এটা হলো! তুমি তখন সবাইকে সত্যিটা বলবে, গ্রামের সবার কাছে ক্ষমতাবান গাছটার মহত্ব প্রচার করবে। আর বলবে তাদের যেকোনো সাহায্যে, বিপদে গাছটা তাদের উপকার করার ক্ষমতা রাখে। তারা যাতে গাছটার কাছে এসে নিজেদের প্রয়োজন উপস্থাপন করে। তবে কোনো পুরুষ যাতে এই জঙ্গলে প্রবেশ না করে। গাছের কাছে প্রার্থনা করতে দলবদ্ধ ভাবে নারীরাই শুধু যাতে আসে। কারণ ওই অঞ্চলে পুরুষ অপ্রয়োজনীয়। প্রয়োজনে তুমি তাদের পথ নির্দেশনা দেবে। শুধু আমার সাথে যে তোমার দেখা হয়েছে এই কথাটুকু বলবে না।’
‘এমন কথা শুনলে তো গ্রামের প্রায় সব নারী ওই গাছটার কাছে গিয়ে হাজির হবে। ওদের তো সমস্যার শেষ নেই আগেই তোমাকে বলেছি।’
‘এটাইতো আমরা চাই!’
‘মানে?’
‘কিছুই না। তাদের অবশ্যই রাতে ওখানে যেতে বলবে। দিনের আলোতে গাছটাকে ওরা খুঁজে পাবে না। তোমার কাজ কিন্তু তোমাকে করতেই হবে। বলো করবে?’
‘করবো।’
‘যাও, তাহলে। আবার দেখা হবে।’
লোকটা ধীরে ধীরে জঙ্গলের ভেতর চলে গেল। কী যেন এক অশুভ আশংকায় মনটা কেঁপে উঠছে সকিনার। লোকটা চলে যাওয়ায় মনটাও বিষাদে ভরে উঠেছে। রাতের শেষ অংশে সে ধীরও পায়ে রওনা দিল নিজে বাড়ির উদ্দেশ্যে চিন্তিত মন নিয়ে।………………………………………….
.
.
. . . . চলবে . . . .
.
.
লেখা: #Masud_Rana