#পিশাচ_পুরুষ
৪র্থ পর্ব
গ্রামে মধ্যরাত। সময়টায় রোজকার মতো সকলে ঘুমিয়ে আছে। শুধু মাঝেমধ্যে কয়েকটা কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ শোনা যাচ্ছে। গ্রামে পালিত কুকুরের সংখ্যা যেহেতু এখন শতাধিক। এমন সময়েই জঙ্গলের ভেতর থেকে ভেসে এলো সেই চিরচেনা বিকট হুঙ্কারটা। যে সেই শব্দ শুনেছে সেই জানে এই ধ্বনি কতটা অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিতে পারে। জন্তুটার হুংকার কানে যাওয়া মাত্র সব কুকুরগুলো নানান জায়গা থেকে একসঙ্গে ‘ঘেউ ঘেউ’ করে উঠল। ‘কুঁঊঊঊঊঊ!’ করে শেয়ালের মতো ডাক বেরিয়ে এলো কয়েক জায়গা থেকে। কুকুরগুলো ভয়ানক উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। তাদের ঘেউ ঘেউ এর শব্দ ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। কুকুর গুলো একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে, নিঃশ্বাসের গতি আর বুক ধকপকানি বেড়ে যাচ্ছে ওগুলোর, একই তালে নাচাচ্ছে লেজ। গ্রামের সবচেয়ে বড় কুকুরটা লিয়াকত ব্যাপারীর বাড়িতেই আছে। ওটা মাথা উঁচু করে ‘কুউউউউ!’ একটা ধ্বনি উচ্চারণ করলো। এরপরেই ছুটতে ছুটতে বেরিয়ে এলো গ্রামের শেষ সীমায়, জঙ্গলের দিকে।
ওটার ডাকে সাড়া দিয়ে গ্রামের সমস্ত কুকুর ছুটলো ওটার পেছনে। গ্রামের শেষ সীমায় পৌঁছে জড়ো হয়েছে এখন শ’খানেক কুকুর। উত্তেজনায় ছুটোছুটি করছে এদিক, সেদিক। ঘেউ ঘেউ করে নিজেদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে মনে হচ্ছে। গ্রামের মানুষ গুলোও ভয়ে ভয়ে আড়ালে এসে লুকলো কী হয় দেখার জন্য, সকলের কাছেই আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র, লাঠি আছে। যদিও জানে জন্তুটা আক্রমন করলে ওসব কোনো কাজেই আসবে না। শুধু দেখা যাক এতগুলো কুকুরের সাথে জন্তুটা কী করে!
রক্তহীম করা হুঙ্কার ছেড়ে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এলো জন্তুটা। হালকা চাঁদের আলোয় ওটার আকার এখন আগের চাইতে অনেক বড় মনে হচ্ছে। প্রায় ৪টা পূর্ণবয়স্ক বড় গরুর সমান হবে। কুকুরগুলো অদ্ভুত সাদা জন্তুটাকে দেখে কেমন দিশেহারা হয়ে গিয়েছে। গলার সর্বশক্তি দিয়ে জন্তুটাকে লক্ষ করে, ‘ঘেউ ঘেউ!’ করে যাচ্ছে। এতগুলো কুকুর একসঙ্গে দেখে জন্তুটাও কেমন ভড়কে গেল। কিন্তু পূর্ণ তেজ অনুভব করছে ওটা। জন্তুটা গজড়াতে গজড়াতে সামনের দিকে এগোতে লাগলো। কুকুরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় কুকুরটা সামনে চলে এলো। জন্তুটাকে উদ্দেশ্য করে গজড়াচ্ছে ওটাও। জন্তুটা তীব্র বেগে লাফিয়ে পড়লো কুকুরটার উপর, এক লাফেই কামড়ে ধরল ওটার গলার নরম অংশ, ক্রমশ ওটার দাঁত ডেবে যাচ্ছে নরম মাংসে। একটানে আলাদা করে ফেলল শরীর থেকে মাথা।
বড় কুকুরটার গলা ছিড়ে রক্ত ঝরছে একাধারে, মাথা ছিটকে গেছে দূরে। বাকি কুকুরগুলো এটা দেখেই মিউয়ে গেল হঠাৎ। কয়েকমুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে রইলো পরিবেশ।তারপরেই ঘেউ ঘেউ করতে করতে প্রায় একসাথে শতাধিক কুকুর লাফিয়ে পড়লো জন্তুটার উদ্দেশ্যে। ওটাও হুঙ্কার ছাড়লো। দ্রুত এদিক সেদিক ছুটছে, যেটার ধড় কামড়ে ধরতে পারছে ওটারই শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ছুড়ে ফেলছে। গলা ফেটে ফিনিক দিয়ে রক্ত ঝরছে ওগুলোর। সেই রক্তেই গোসল হয়ে যাচ্ছে ওটার। চার পা দিয়েও সমানে আঘাত করে চলেছে ওগুলোর মাথা লক্ষ করে, ধারালো নখ দিয়ে আঁচড় কেটে ছিন্নভিন করে ফেলছে ওগুলোর চোখ-মুখ, বিশাল শরীর দিয়ে আঘাত ঠেকাচ্ছে।
কুকুরগুলো চেষ্টা করেও কামড় বসাতে পারছে না ওটার বিকট শরীরে। শরীরে উঠলেই ওটার শরীর ঝাড়ার বেগে ছিটকে পড়ছে, জন্তুটার শরীর অসম্ভব পিচ্ছিল। ওটাকে কামড়াতে গিয়ে উল্টো ওটার শরীরের চাপে দম আটকে মারা গেল কয়েকটা কুকুর। জন্তুটার গায়ে কিছু আচর বসাতে পারছে বড়জোর ওগুলো।
জন্তুটা একসময় ক্লান্ত হয়ে উঠল ওগুলোর আক্রমন ঠেকাতে ঠেকাতে আর মারতে মারতে। ওটার সাদা শরীর মৃত কুকুরগুলোর রক্তে লাল হয়ে উঠেছে অনেক আগেই। মৃত কুকুরগুলোকে দেখে বাকি কুকুরগুলোর ভয় পাওয়ার কথা। কিন্তু উল্টো ওগুলো যেন আরো বেশি ক্ষেপে উঠছে, স্বজাতি হত্যার প্রতিশোধ ওদের নিতেই হবে! প্রায় ঘন্টামতো যুদ্ধের পর পঞ্চাশের অধিক কুকুরকে হত্যা করেছে জন্তুটা। এখন ভয়ানক হাপাচ্ছে , বুঝতে পাড়ছে আর তারপক্ষে কিছু সম্ভব নয়। তার শক্তি অনেকটাই কমে গিয়েছে।
কিন্তু বাকি কুকুরগুলোর তেজ যেন বেড়েই চলেছে। এখন শিকার না করে জঙ্গলে পালিয়ে যাওয়াই শ্রেয়। উল্টো ঘুরে জঙ্গলের দিকে তাকালো। শরীর দমে গেল ওটার। পুরো জঙ্গল যেন তাকে দেখে বিদ্রুপ করছে। সেই পিশাচ পুরুষ, তার সন্তান সকলে যেন কটাক্ষ দৃষ্টি নিয়ে তাকে দেখছে। যে কুকুরের তারা খেয়ে জঙ্গলে ফিরে যায় ওকে তারা ত্যাজ্য করবে, জঙ্গলের সন্তান হিসেবে ওকে আর মেনে নেবে না। ফিরে যাওয়া মানেই মৃত্যু। এই বোধ জন্তুটার মন উলট পালট করে দেয়, ভয়ানক শরীর কাঁপানো এক হুঙ্কার বেরিয়ে আসে ওটার গলা ছিড়ে, তা শুনে কাঁপতে লাগলো মাটি আর গাছ। আজ সমস্ত কিছু তছনছ করে দেবে সে এই গ্রামের প্রতিজ্ঞা করলো। রক্ত টগবগ করে ছুটছে ওটার শরীর জুড়ে।
ওটার অন্যমনস্কতার এই সুযোগে ওটার উপর ঝাপিয়ে পড়লো একটা কালো কুকুর, পিঠ বেয়ে ঠিক গলার কাছে লাফিয়ে কামড়ে ধরলো জন্তুটার ধড়, কুকুরটার ধারালো দাঁত ঢুকে গেল চামড়া ভেদ করে মাংসে, পেছন থেকে লাফিয়ে আরেকটা কুকুর ওটার পায়ের নিচে চলে গেলো। লাফিয়ে কামড়ে ধরলো ওটার অন্ডকোষ। ভয়ানক , বীভৎস আর্তনাদ বেরিয়ে এলো জন্তুটার কণ্ঠ থেকে। শরীর ঝাড়া দিয়ে উঠতেই ওটার পা, লেজ, উদ্দেশ্য করে লাফিয়ে পড়ছে একটার পরে একটা কুকুর, কামড়ে ধরছে শরীরের নানান অংশ, ছিড়ে ফেলবে যেন জন্তুটাকে টুকরো টুকরো করে। ব্যথায় কাতর হওয়ায় আক্রমণ ঠেকানোর শক্তি হারিয়ে ফেলেছে ওটা।
কুকুরগুলোও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। কাত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো, জন্তুটা। মাটি কেঁপে উঠল। ধুলো উড়ে অনেক আগেই এখানের পরিবেশ ঘোলা করে ফেলেছিল। জন্তুটা এবার আর ঘোলা দেখতে লাগলো চারপাশ, শরীরের সব শক্তি নিঃশেষ হয়ে এসেছে। কুকুরগুলো অবিরাম কামড়ে চলেছে, নড়ার শক্তি পাচ্ছে না ওটা, মুখ দিয়ে শুধু গোঙানি ছাড়ছে।
বুঝতে পারছে জীবনের অন্তিম সময়ে পৌঁছে গেছে সে, এরমধ্যেই গ্রামের দিক থেকে অনেকগুলো জ্বলন্ত আগুনের শিখা ভেসে আসতে দেখলো জন্তুটা, শরীর একেবারে অসাড় হয়ে গেল, চোখ বন্ধ হয়ে গেছে ওটার।
বনের এই ভয়ানক, দানব আকৃতির হিংস্র জন্তু, যে কুকুর দেখে এতটা ভয় পাবে, কুকুররা দলবদ্ধ ভাবে মিলে ওটাকে এমন শক্তভাবে প্রতিরোধ করবে তা গ্রামের মানুষগুলোর কাছে অভাবনীয় ছিল। কিন্তু বন্য জন্তুরা যে হাজার বছর ধরে একটা জিনিসকে সবচেয়ে বেশি ভয় করে সেটা তারা এতদিন ভুলেই গিয়েছিল। আগুন! বন্য জন্তুর জন্য এরচেয়ে ভয়ঙ্কর আতংক আর কিছুই হতে পারে না। দীর্ঘক্ষণ ধরে আড়ালে লুকিয়ে ভয়ে ভয়ে কুকুরগুলোর অসীম সাহস আর জন্তুটার ভয়ানক শক্তির দ্বন্দ দেখছিল গ্রামের লোকজন। একটা সময় সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেয় শুধু তামাশা দেখার দর্শক নয়, কুকুরগুলোকে সাহায্য করবে তারা জন্তুটাকে মারতে। জন্তুটাকে ভয় দেখাতে তাই সকলে মশালে আগুন জ্বালিয়ে অপেক্ষা করছিল, জন্তুটাকে কুপোকাত হতে দেখে তাই একে একে বেরিয়ে আসতে লাগলো সবাই।
একহাতে মশাল আর ওপর হাতে দাঁড়ালো অস্ত্র, লাঠি সবারই। চেঁচিয়ে একে অন্যের সাথে কথা বলছে, বুঝতে পারছে সকলেই আজই ওটাকে শেষ করে দিতে হবে, নাহলে আর সুযোগ পাবে না। ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওটার গলা কেটে ফেলতে পারলেই সমস্ত ঝামেলা শেষ। কুকুরগুলোর উত্তেজনাও মানুষ দেখে কিছুটা কমে এলো, তারা ভয়ানক আহত জন্তুটা থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে লাগলো।
এমন সময় বিকট একটা হুঙ্কার ভেসে এলো জঙ্গলের ভেতর থেকে। ভয়ানক ক্রোধে যেন জঙ্গল পুরোটা কেঁপে উঠছে। আৎকে উঠলো গ্রামবাসীরা, জন্তুটাতো এখানে পড়ে আছে তাহলে আর্তনাদ এলো কোথা থেকে। আর এত জোরে হওয়া হুঙ্কার এর আগে কখনো শোনেনি তারা। তাহলে কী এই জন্তুটার পরিবারের আরো কেউ জঙ্গলে রয়েছে! সর্বনাশ তাহলে! এটাকে উদ্ধার করতে এমন আরেকটা জন্তু এখন এলে তাদের সব শেষ! সর্বনাশই হলো!
ভূমিকম্পের মতো মাটি কেঁপে উঠলো। কিছু জায়গার মাটি অস্বাভাবিক ভাবে কেঁপে উঠছে উপরের মাটিগুলো কেমন ঝুরঝুরে হয়ে আসছে, মাটি ফুঁড়ে বের হতে চাচ্ছে যেন অনেকগুলো প্রাণী! আর্তনাদ করতে করতে মশাল,অস্ত্র ফেলে উল্টো ঘুরে লোকজন সবাই ছুটতে লাগলো গ্রামের দিকে। ভয়ানক কিছু একটা ঘটবে এখন! তাই ঘটলো!
কুকুরগুলো ভড়কে গিয়েছিল, স্তম্ভিত হয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। পালানোর কথা ভাবেনি, গলা দিয়ে চেষ্টা করেও যেন শব্দ বের করতে পারছে না ওগুলো। ওগুলোর শরীরও কাঁপছে মাটির সাথে। মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো একটা গাছের শিকড়, তার পাশে আরেকটা, তার পাশে আরেকটা, এমন করে প্রায় চারপাশ গিজগিজ করতে লাগলো মাটি ফুঁড়ে আসা শিকড়ে, কালো কুচকুচে রং ওগুলোর, সাপের মতো এঁকেবেঁকে ছুটছে এদিক সেদিক, সবগুলোর মাথাই সুচালো। কুকুরগুলোর চেহারায় এই প্রথম ভয় আর আতংক ফুটে উঠলো। শিকড়গুলো এবার ছুটতে লাগলো কুকুরগুলোকে লক্ষ্য করে ।
কাছের কুকুরটার গলা ফুঁড়ে একটা শিকড় এর মাথা ঢুকে ওটার পেট ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো। ছিন্নভিন হয়ে গেল ওটার শরীর। আরেকটা শিকড়ের মাথা পেট দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বের হয়ে আসলো আরেকটা কুকুরের, একটা কুকুরের হা করা মুখের ভেতর ঢুকে পেট ফুটো করে বের হলো, এফোর-ওফোর হয়ে যাচ্ছে ওগুলোর শরীর। রক্ত ছিটকে মেখে ফেলছে মাটি, পেট ফেটে হা হয়ে বেরিয়ে পড়লো নাড়িভুঁড়ি। ছুটে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো যেগুলো ওগুলোর পা পেঁচিয়ে ফেলল শরীর। এরপর দুই দিক থেকে টান দিয়ে শরীর ছিড়ে দুই ভাগ করে ফেলল।
কয়েক মিনিটের মধ্যে সবগুলো কুকুরের ছিন্নভিন্ন শরীর পরে রইলো শুধু ওখানে। গ্রামের লোকেরা কেউই এই দৃশ্য দেখার জন্য পিছু ফিরে তাকায়নি, এক ছুটে যে যার বাড়িতে চলে গিয়ে দরজা বন্ধ করে আতঙ্কে কাঁপতে লাগলো। ঘাম ঝরছে তাদের শরীর থেকে অনাকাঙ্খিত বিপদের গন্ধে। কী হলো এটা! এখন কী হবে!
খোলা প্রান্তরে এখন পরে রয়েছে শতাধিক মৃত কুকুরের ছিন্নভিন শরীরের অংশে, আর কিলবিল করে ছুটে বেড়াচ্ছে কুচকুচে শিকড়গুলো যেগুলোর পিতা কোনো প্রকৃত বৃক্ষ নয়। এক পিশাচ পুরুষ। ভয়ানক আহত জন্তুটা এবার একটু নড়ে উঠলো, তারপরেই শরীরে অবশিষ্ট থাকা কিছু শক্তির উৎস খুঁজে পেল। লাফিয়ে উঠে দাড়ালো ওটা। চারপাশের এই অদ্ভুত দৃশ্য দেখে চমকে উঠলো। পিশাচ পুরুষই তাকে রক্ষা করেছে! এর প্রতিদান তাকে দিতেই হবে। ওটার পুরো শরীর ব্যথায় জ্বলে যাচ্ছে, মাথা ঘুরাচ্ছে। জন্তুটা ছুটতে লাগলো। চোখে সব কিছু ঘোলা ঘোলা লাগছে। তার ফিরে যাওয়া উচিত জঙ্গলের দিকে। কিন্তু সে ছুটে যাচ্ছে গ্রামের ভেতরের দিকে। সে কী ভুল করে ব্যথার ঘোরে ছুটছে, নাকি কোনো হিংস্রক্রোধে জ্বলে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ছুটছে তা তার ছুটার গতি দেখে অনুমান করা যাচ্ছে না।
ঘরের বিছানায় গভীর ঘুমে শুয়ে আছে কিশোরী সকিনা। এই গ্রামের একেবারে শেষ মাথায় ওদের বাড়ি,জঙ্গল থেকে অনেক দূরে। তাই সেখানের গণ্ডগোলের কোনো শব্দই তাদের বাড়িতে এতক্ষণ এসে পৌঁছায়নি। ওখানে যে কী ঘটছে তার সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই তার। হঠাৎ করে তার ঘরের পেছনে ভারী কিছু একটা ধপাস করে পড়ার শব্দে বুকটা কেঁপে উঠলো তার। ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসলো সে। পাশের ঘর থেকে তার অন্ধ পিতা আতঙ্কে খেঁকিয়ে উঠলো, ‘কে? কে? কী হলো রে!’ সকিনা বলল, ‘যাই আমি, গাছ ভাঙছে মনে হয়!’ একটা গাছ সত্যিই বাড়ির পেছনে অর্ধেক হেলে পড়েছিল অনেক দিন।
তবুও ঘর থেকে বের হতে গিয়ে হঠাৎ সে অনুভব করলো, মনে কেমন একটা ভয় খেলা করছে তার। একটা ভয়ানক জন্তুর কথা সে গ্রামের লোকদের কাছে শুনেছে। একহাতে দা আর অন্য হাতে হারিকেন নিয়ে ধীরে ধীরে বাইরে বেরিয়ে এলো সে। বাড়ির পেছনে গিয়েই চমকে উঠলো। একজন মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে, পরনে কোনো পোশাক নেই, সারা শরীর রক্তে ভিজে আছে। একটু কাছে গিয়েই চিনতে পারলো যুবকটাকে। সেদিন ভোরে যে অপরূপ সুন্দর যুবকটিকে সে দেখেছিল এই সে। পুলকে কেঁপে উঠলো তার শরীর। ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল যুবকের কাছে। বোঝার চেষ্টা করছে কী ঘটছে! ……………………………………….
.
.
. . . চলবে . . . .
.
.
লেখা: #Masud_Rana